আকাশের চেয়েও বেশী তোমায় ভালোবাসি,চতুর্থ পর্ব

0
2492

আকাশের চেয়েও বেশী তোমায় ভালোবাসি,চতুর্থ পর্ব
লেখনীতে:Waziha Zainab (নিহা)

কফি হাউজের চারদিকে নানা মানুষের কোলাহল।সবাই নিজেদের কাজে ব্যাস্ত। স্বামী,স্ত্রী প্রেমিক,প্রেমিকা বা বন্ধুবান্ধব সহ পুরো কফিহাউজ জুড়ে নানা ধরণের মানুষের আনাগোনা। চারদিকে নানা শ্রেণির মানুষের ব্যাস্ততা। তাদের মধ্যে কোনো এক টেবিলে স্নেহা আর আবির একে অপরের হাত ধরে বসে আছে।।আবির হুট করে বলে উঠলো
“স্নেহা”
স্নেহা বেশ অবাক হলো কারণ এর আগে আর কখনো আবির স্নেহা কে নাম ধরে ডাকে নি। সবসময় জান বলে সম্বোধন করতো। স্নেহা ভ্রু কুচকে বললো
“তুমি আগের চেয়ে অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছো”
আবির স্নেহার কথার অর্থ বোঝার চেষ্টা করে বললো
“মানে”
স্নেহা কফির মগে চুমুক দিয়ে বললো
“এই যে দেশে এসে বিয়ে করার পর তুমি অনেকটাই চেঞ্জ হয়ে গেছো”
আবির ভ্রু কুচকে বললো
“যেমন”
স্নেহা হালকা হেসে বললো
“ফোন দিলে ঠিকঠাক মতো ফোন ধরো না। আমাকে ঠিক মতো সময় দাও না এসেই শুধু যাই যাই করো।”
আবির কোনো উত্তর দিলো না স্নেহা আবার বললো
“দেখো যেনো।পরে আবার তোমার বউ আঁচলের শাড়ীর আঁচলে নিজেকে জড়িওনা।”

আবির একটা ছোটো দীর্ঘশ্বাস ফেললো আর স্নেহা আর আঁচলের মধ্যে পার্থক্য গুলো খোজার চেষ্টা করছে। আঁচল সম্পুর্ণ বাঙালি মেয়ে আর স্নেহা বাঙালি হলেও তার মধ্যে বাঙালি মেয়ের কোনো চিহ্নই নেই। আবির আঁচলের স্বামী হওয়ার সর্তেও আঁচল সবসময় আবিরের সামনেও নিজের শরীর যথেষ্ট পরিমাণে ঢেকে রাখার চেষ্টা করে। আর স্নেহা নিজের বাঙালি কালচার ভুলে ছোটো খাটো পোশাকেই সাচ্ছন্দ্যবোধ করে।আঁচলের চুলগুলো কোমরের নিচ পর্যন্ত লম্বা আর স্নেহার চুলগুলো কাঁধ পর্যন্ত কাটা আর কালার করা। সবকিছু মিলিয়ে আঁচলের প্রতি আবিরের দুর্বলতা বেড়ে গেছে। আঁচল মধ্যবিত্ত ঘরের খুবই নরম স্বভাবের একটা মেয়ে আর স্নেহা অনেক অহংকারী মেয়ে। বলতে গেলে দুজনের মাঝে অনেক পার্থক্য।

স্নেহা আর আবিরের কথার মাঝেই আবিরের বেস্টফ্রেন্ড স্নিগ্ধ আর তিয়াশ এলো। ওরা আসা মাত্রই স্নেহা গিয়ে স্নিগ্ধ আর তিয়াশকে জড়িয়ে ধরলো।। যেটা আবিরের একদমই পছন্দ হয় নি। বাঙালি মেয়েরা আর যাই হোক কখনো পরপুরুষকে গায়ে হাত দিতে দেয় না। আর স্নেহা বিদেশে থাকতে থাকতে বিদেশের সংস্কৃতি অনুসরণ করে। বাঙালি মেয়ের কোনো চিহ্নই তার মাঝে নেই।পরনে শার্ট আর জিন্স।দেহের সব ভাজ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।আবির স্নেহাকে বারণ করেছিলো যেনো ছেলেদের সাথে মেলামেশা না করে কিন্তু স্নেহা অল টাইম ছেলেদের সাথে চলাফেরা করে।।

ভরদুপুর বেলা আঁচল গোসল করে আয়নার সামনে বসে আছে।।মাথার উপরে সিলিং ফ্যান ঘুরছে। আবির বিছানায় বসে ফোন টিপছে আর আড়চোখে আঁচলকে দেখছে। আঁচল নিজের কাজে ব্যাস্ত। লম্বা কোমরের নিচ পর্যন্ত পড়ে থাকা চুল থেকে টপটপ করে পানি ঝরছে। ড্রয়ার থেকে কাজল বের করে চোখে গাঢ় কাজল লাগিয়ে নিলো।আবির আড়চোখে আঁচলের মায়াবী মুখটা দেখছে।
আঁচল আবিরকে বললো
“খাবার টেবিলে সবাই অপেক্ষা করছে খেতে চলুন”
আবির মাথা নাড়িয়ে বলে
“তুমি যাও আমি আসছি। আমার একটু কাজ আছে সেটা শেষ করে আসছি।”
আঁচল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
“কাজ শেষ করুন একসাথে যাবো।আমি অপেক্ষা করছি। আমাদের সম্পর্ক টা কেমন সেটা আমরা জানি আর আমাদের ঘরের চারদেয়াল জানে কিন্তু মা বাবা তো জানেন না উনারা জানলে কষ্ট পাবে। তাই একসাথে চলুন”
আবির মোবাইলটা বিছানায় রেখে উঠে দাঁড়িয়ে বলে
“চলো”

হঠাৎ রিংটোনের শব্দে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই প্রিয় নাম “আম্মু” দিয়ে সেইভ করা নাম্বার ভেসে ওঠে। আঁচল প্রচুর আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ফোন রিসিভ করে সালাম দেয়

“আসসালামু আলাইকুম। আম্মু কেমন আছো”
ওপাশ থেকে মৃদু হেসে আঁচলের মা জবাব দেয়
“এইতো ভালো আছি। তুই কেমন আছিস? ও বাড়ীর সব ঠিকঠাক আছে তো”
আঁচল মুচকি হেসে বলে
“জ্বি আম্মু সব ঠিকঠাক আছে”
আঁচলের মা জিজ্ঞাসা করে
“জামাই কেমন আছে? তোকে মেনে নিয়েছে তো। শোন মা ভীষণ চিন্তা হয় তোকে নিয়ে। ঠিকভাবে মানিয়ে গুছিয়ে নিয়েছিস তো সব”
আঁচল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে
“তোমাদের জামাই ভালো আছে আম্মু আর সব ঠিকঠাক আছে।আচ্ছা আম্মু রাখছি রাতে ফোন দিবো এখন হাতে একটু কাজ আছে”
আঁচলের মা মৃদু হেসে বলেন
“আচ্ছা”
দূর থেকে দুটি চোখ অপলক দৃষ্টিতে আঁচলকে দেখছে। আর শুনছে আঁচলের কথাগুলো।ফোনের লাউড স্পিকার দেওয়া ছিলো তাই কথাগুলো আবিরের কান এড়ায়নি।আঁচল কাঁধ ঘুরিয়ে দেখে আবির ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আঁচল কিছু না বলেই রুমের বাহিরে চলে যায়। আবির আবারো নিজের কাজে মন দেয়।

আঁচল পা টিপে টিপে রান্না ঘরে প্রবেশ করে।আঁচল ও তার শাশুড়ী দুজন দুজনের কাজে ব্যাস্ত।আঁচলের মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে আছে মায়ের সাথে কথা বলার পর থেকে। আঁচলের শাশুড়ী আঁচলকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে
“তোমার কি কোনো কারণে মন খারাপ”
আঁচল হালকা হেসে বলে
“কই না তো”
আঁচলের শাশুড়ী আঁচলের চোখে চোখ রেখে বলে
“আমি তো তোমার মায়ের মতো। আমাকে বলতে পারো যদি কোনো কারণে মন খারাপ থাকে”
আঁচল মুখভার করে বললো
“না মানে ওই আরকি একটু মায়ের কথা মনে পড়ছে”
আঁচলের শাশুড়ী মৃদু হেসে বলেন
“বিয়ের পর তো এখনো তোমাদের বাড়ী যাও নি। কয়দিন গিয়ে থেকে আসো তোমারও মনটা ভালো থাকবে”
আঁচলের শাশুড়ীর কথায় আঁচল খুশিতে গদগদ করতে বললো
“কবে যাবো মা”
আঁচলের শাশুড়ী বললেন
“কাল সকালে যেও আজকে তো অনেক বেলা হয়ে গেছে”

ঘড়ির কাটা আপন গতিতে চলছে।রাস্তাঘাট সবকিছুর চারদিক ঘোর অন্ধকার হয়ে গেছে।প্রকৃতির আলো নিভে লাইটের আলোয় আলোকিত হয়েছে সবার বাড়ীঘর।
আবির কম্পিউটারে কাজ করছে আর আঁচল বিছানায় বসে ব্যাগ গোচাচ্ছে।আঁচলের দিকে আড়চোখে দেখছে আবির কিন্তু আঁচলের কাজের আগাগোড়া কিছুই তার মাথায় ডুকছে না। কিছু জিজ্ঞেস করার সাহসও পাচ্ছে না।সন্ধ্যা থেকে আঁচল যথেষ্ট পরিমাণে আবিরকে এড়িয়ে চলছে।আবির ভ্রু কুচকে আঁচলকে বললো
“কি ব্যাপার ব্যাগ কেনো ঠিক করছো? আমাদের বাড়ী থেকে কি আজই বিদায় হচ্ছো নাকি”
আঁচল ছোট্টো একটা শ্বাস ফেলে বললো
“হয়তো”
আবির বেশ অবাক হয়ে বলে
“মানে?”
আঁচল নিজের কাজে মন দেয় আবির আবারো জিজ্ঞাস করে
“ব্যাগ কেনো গোচগাছ করছো?”
আঁচল জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে
“কালকে সকালে আমাদের বাড়ী যাবো।তাই”

হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে সূর্যের উত্তপ্ত তাপে ঘেমে একাকার হয়ে আঁচল বাসার ভেতরে প্রবেশ করলো।আঁচলকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আবির চলে গেছে। আঁচলকে দেখে আঁচলের মা বেশ অবাক হলো। আঁচল গিয়ে মায়ের পা ধরে সালাম করলো।আঁচল তার মা কে জিজ্ঞাসা করলো
“কেমন আছো আম্মু। আব্বু কোথায়?”
আঁচলের মা অবাক চোখে বললো
“আমি ভালো আছি।তুই আসবি সেটা আগে জানালে তো পারতি”
আঁচল মুচকি হেসে বললো
“এখন তো জানলে নাকি। আম্মু প্রচন্ড খিদে পেয়েছে কিছু খেতে দাও”
আঁচলের আম্মু আঁচলের গালে হালকা করে একটা বারি মেরে বলেন
“পাগলি মেয়ে।তুই খাবার টেবিলে গিয়ে বস আমি খাবার দিচ্ছি”

চলবে
[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here