আকাশের চেয়েও বেশী তোমায় ভালোবাসি,ষষ্ঠ পর্ব
লেখনীতে:Waziha Zainab (নিহা)
সূর্যটা পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ছে। আকাশে সাত রঙের রংধনুর রশ্মি দেখা যাচ্ছে।চারদিক থেকে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে।গাছগুলো এদিক ওদিক দোল খাচ্ছে।দূরের মসজিদ গুলো থেকে ভাসা ভাসা অস্পষ্ট মাগরিবের আজানের শব্দ কানে আসতেই আঁচল ওড়নাটা ঠিক করে মাথায় ঘোমটা দেয়।
ঘড়িতে সকাল দশটা কিংবা তার বেশী বাজে।মলিন হয়ে আছে কোনো এক সুন্দরী রমণীর মুখ। তার মন খারাপের কারণ হলো প্রায় নয়দিন বাবার বাড়ীতে হাসি ঠাট্টা ও বাবামায়ের আদরে থাকার পর আজ আবার তাকে ফিরে যেতে হচ্ছে শ্বশুর বাড়ীতে।আঁচলের বাবা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আঁচলের জন্য অপেক্ষা করছে।মেয়েকে শ্বশুর বাড়ীর সামনে নামিয়ে দিয়ে উনি অফিসে যাবেন। আঁচলের মা তার মেয়ে আঁচলের কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলেন
“মন খারাপ করিস না মা।এটা তো নিয়ম মেয়ে দের একদিন না একদিন তো বাবার বাড়ী ছেড়ে শ্বশুর বাড়ী যেতে হবে।এটা শুধু তোর ক্ষেত্রে না এটা সকল মেয়েদের ক্ষেত্রে”
আঁচল চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি ফেলে বললো
“আসছি”
আঁচলের মা করুণ স্বরে বললো
“কান্না জড়িত অবস্থায় বিদায় নিতে নেই এতে অমঙ্গল হয় রে মা”
আঁচল এক হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে হেসে বললো
“হুমম”
ঘাম মুছতে মুছতে রান্নাঘর থেকে বের হচ্ছেন আঁচলের শাশুড়ী রাহেলা বেগম। আঁচলকে দেখে উনি মুচকি হাসলেন।আঁচলও মুচকি হেসে ধীরে পায়ে এসে শাশুড়ীকে সালাম করে হাল্কা গল্প করে ঘরে গেলো।
স্নেহা আবির বসে আছে পার্কে। স্নেহা আবির কে বললো
“তুমি কি আদোও আমাকে ভালোবাসো?”
স্নেহার এমন প্রশ্নে আবির খানিকটা চমকে বললো
“মানে?”
স্নেহা কড়া গলায় বললো
“যেটা জিজ্ঞাস করেছি সেটার উত্তর দাও”
আবির ভ্রু কুচকে বললো
“আমি তোমাকে ভালোবাসি কি না সেটা তো তুমি জানো”
স্নেহা হালকা হেসে বললো
“জানি। তুমি আমাকে ভালোবাসতে কিন্তু এখন বাসো না সিম্পল”
আবির অবাক চোখে বললো
“মানে?”
স্নেহা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো
“মানে টা খুবই সিম্পল।তুমি আমাকে নিজের স্বার্থ স্বিদ্ধির জন্য ব্যাবহার করেছো”
আবির ভ্রু কুচকে বললো
“কি যা তা বলছো”
স্নেহা আবিরের হাতের উপর নিজের হাত রেখে বললো
“কেনো করলে বলো আমার সাথে এমন।বিয়ে যখন অন্যকাউকেই করবে তবে কেনো ভালোবাসলে। আর ভালোবাসা টা যখন মিথ্যা ছিলো তখন তিনবছর ধরে এমন নাটক না করলেও পারতে”
এইটুকু বলে স্নেহা থামলো। আবির কিছু বললো না স্নেহার দিয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো স্নেহা আবার বলতে শুরু করলো
“আবির তুমি আমার সাথে বেইমানি করেছো।প্রতারণা করেছো এর জন্য ক্ষমা তুমি কখনো পাবে না।তুমি একটা বেইমান।আর ভয় নেই মিস্টার আবির আমি আবার লন্ডনে ব্যাক করবো আর কখনো তোমার লাইফের চৌকাঠে পা ও রাখকবো না মরে গেলেও না”
আবির খানিকটা তোতলিয়ে বললো
“কককি যযা ততা ববললছো ততুমি”
স্নেহা হালকা হেসে বললো
“ডু ইউ নো মিস্টার আবির,আপনি দূর্বল হয়ে পড়েছেন ইয়েস আপনি আপনার ওয়াইফের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছেন,এতোটাই দূর্বল হয়েছেন যে তিনবছরের ভালোবাসাও আপনি ভুলে গেলেন”
স্নেহার কথাগুলো আবিরের মনে একএকটা যেনো কাটার মতো গেথে গেলো।আবির ওখান থেকে উঠে বাসায় চলে গেলো।আবির যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই আড়াল থেকে স্নিগ্ধ বেরিয়ে এসে বললো
“উফফ সুইটহার্ট ফাটাফাটি acting করেছো।আমি নিজে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কথা বলে তোমাকে হিরোইন বানাবো”
স্নেহা মৃদু হেসে বললো
“উফফ বাদ দাও তো ফাজলামো। আমি কথাগুলো বলার সময় নিজের হাসি চেপে রাখতে কষ্ট হচ্ছিলো ওই থার্ডক্লাস ছেলের ইমোশন দেখে।”
স্নিগ্ধ স্নেহাকে একহাতে জড়িয়ে বললো
“এই জন্যই তো তোমাকে এতো ভালোবাসি সুইটহার্ট। এবার আবিরের বুকের ভেতর উতাল পাতাল ঢেউ শুরু হবে”
স্নেহা স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে বললো
“আমরা কবে বিয়ে করছি?”
স্নিগ্ধ স্নেহার দিকে তাকিয়ে বললো
“আগে তুমি ঠিকভাবে ওই আবিরের সব টাকাপয়সা আর সম্পত্তি হাতিয়ে নাও তারপর আমরা বিয়ে করবো”
আবির বারান্দায় ফ্লোরে বসে একের পর এক সিগারেট ধরাচ্ছে। চুলগুলো উষ্কখুষ্ক এলোমেলো হয়ে কপালে পড়ে আছে চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারণ করেছে।চোখের কোনে পানি জমে আছে।আর নিজে নিজে বলছে
“আমি এতোটা নিচে কি করে নামতে পারলাম কি করে? আজ আমার নিজের উপরই ঘৃণা হচ্ছে ছিহ। আমি কয়েকদিনের উড়ে এসে জুড়ে বসা একটা মেয়ের প্রতি এতো দূর্বল হয়ে পড়লাম কি করে৷ কিছুদিনের একটা মেয়ের জন্য আমি আমার তিনবছরের ভালোবাসাকে এতো অবহেলা করছি। আমার নিজের ভালোবাসার সাথেই বেইমানি করছি।এখনতো আমার নিজের উপরই ঘৃণা হচ্ছে।ওই মেয়ের উপর আমি এতোটা দূর্বল হয়ে পড়লাম কিভাবে। না আমাকে এতো দূর্বল হলে চলবে না। আমি এতোটা দূর্বল নই।আমি আবির আহমেদ আমি এতোটা দূর্বল নই।দূর্বল হওয়া আমার সাজে না। আমাকে স্টং থাকতে হবে। আমি কালই স্নেহাকে বিয়ের কথা বলবো। আমি নিজের ভালোবাসার সাথে এতো বড় বেইমানি করতে পারবো না।”
আবিরের কথার মাঝে ধীরে পায়ে বারান্দায় প্রবেশ করলো আঁচল। পরনে একটা সাদা আর নীলে মিশ্রণ করা শাড়ী চুল গুলো সাইডে সিথি কাটা খোলা। ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক লাগানো।।আঁচল ধীরে পায়ে গিয়ে আবিরের সামনে দাড়ালো।বেশ খানিকটা অবাক হলো আঁচল কারণ আবিরের চোখ দুটো লাল হয়ে আছে চুলগুলো অগোছালো কপালে পড়ে আছে। ফ্লোরে ৫/৬ টা সিগারেটের শেষ অংশ পড়ে আছে আর আবিরের হাতে একটা জলন্ত সিগারেট আবিরের নাক মুখ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।ধোঁয়া আঁচলের নাকে মুখে ডুকে আঁচল কাশি দিতে লাগলো।আবিরের হুস ফিরলো আঁচলের কাশির শব্দে।
আঁচল আবিরকে উদ্দেশ্য করে কাশতে কাশতে বললো
“স্মোকিং ক্যান্সারের কারণ সেটা জানেন তো?এটা হাত থেকে ফেলুন”
আবির কিছু বললো না শান্ত ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো।আঁচল আবার বললো
“প্রাক্তনের কথা চিন্তা করা বাদ দিন তো নিজের ভবিষ্যতের কথা ভাবুন আর এটা হাত থেকে ফেলুন।আর সমস্যা কি অসময়ে স্মোক করছেন কেনো?প্রব্লেম কি?”
আবির আবারো কোনো রিয়েক্ট করলো না আঁচল আবিরের হাত থেকে সিগারেট টা নিয়ে নিচে ফেলে দেয় আবিরের এতোক্ষণ জমে থাকা কষ্টগুলো রাগে পরিণত হয়ে যায়।
আবির আঁচলকে একটানে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে আবির চিৎকার করে বলে
“কেনো এসেছো আমার লাইফে বলো?টাকা পয়সা লুট করতে তো সব নিয়ে যাও তবুও আমাকে মুক্তি দাও এই মিথ্যে বিয়ের নাটক থেকে আমাকে মুক্তি দাও
আমি মুক্তি চাইছি।”
আঁচলের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে আবিরের কথা শুনে ছলছল চোখে আঁচল বললো
“কিভাবে মুক্তি দেবো বলুন?”
আবির আঁচলের হাত আরো শক্ত করে চেপে ধরে বললো
“ডিভোর্স চাই আমি। তোমার থেকে মুক্তি চাই।চলে যাও আমাদের বাড়ী থেকে”
আঁচল হালকা হেসে বললো
“ওকে চলে যাবো বাট আই হ্যাভ এ কন্ডিশন”
আবির ভ্রু কুচকে বললো
“কি সর্ত তোমার?”
আঁচল হালকা হেসে বললো
“একুশে জুন আপনার বার্থডে আর আজকে উন্নিশে জুন তাই এই দুইদিন আমি থাকতে চাই। প্রমিস আপনার জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষ হলেই শুধু আপনার বাড়ী ছেড়ে নয় আপনার জীবন ছেড়েও চলে যাবো”
আবির কিছু বল্লো না আঁচলেকে ছেড়ে আঁচলের থেকে দূরে গিয়ে দাড়ালো। আঁচল দৌড়ে ঘরে এসে বিছানায় শুয়ে উপুড় হয়ে কান্না করতে লাগলো।আবির সব দেখছে কিন্তু ও রিয়েক্ট করছে না।
চলবে