তুমি অন্য ধর্মের,পর্ব -৬(অন্তিম পর্ব)
রোমান্টিক থ্রিলার
শাহরিয়ার আবিদ
শফি নাকে রুমাল দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আবিদ আর জিহাদ আগে থেকেই মাস্ক পরা। কারণ সম্প্রতি একটি ভাইরাসের নাম শোনা যাচ্ছে তাই তারা নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য এ ব্যবস্থা। যাই হোক।
ভেতরে দেখল তারা রায়হান হাতের রক্তের সিরাটা কাটা। এছাডা তার সারা শরীরে চুরির আঘাত। এমন এক অবস্থা যা কোনো সাধারণ মানুষ দেখলে তারর হুস থাকবে না কিছুক্ষন। আবিদ আর জিহাদের এধরনের প্রশিক্ষণ থাকায় তাদের তেমন অসুবিধা হচ্ছে না।
তখনও রায়হান বেঁচে আছে। এদিকে শফি হোটেল স্টাফদের ডাকতে গেছে। রায়হান বললো আবিদের কানে ফিসফিস
–এখান থেকে ঠিক উত্তরে ৫ কিলোমিটার যাবে। সেখানে একটা জঙ্গলের ভেতর দিয়ে রাস্তা চলে গিয়েছে। সেটা দিয়ে কিছক্ষন গেলে একটা ৩ তলা সাদা বিল্ডিং চোখে পরবে ওখানেই তোমার বন্ধুদের পেতে পারো। এই ঠিকানা রাখো। এটা আমার বাড়ির ঠিকানা। তোমার সাথে আমার যোগাযোগের খবর ওরা জান,নতে পারে। ওরা তোমাদের ট্র্যাক করছে প্রতিমুহূর্ত। তোমার সাথে যোগাযোগের কথা জানতে পারলে তানিয়া আমার এ অবস্থা ক……
(শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।)
শফি হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করে। সাথে কয়েয়কজন স্টাফ।
শফি এসে দেখে আবিদ আর জিহাদ দুজুনেই স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।শফিকে অনেক বিচলিত দেখাচ্ছে। তার কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। আবিদ তার এ অবস্থা দেখে জানতে চাইল।
-কি হয়েছে?(আবিদ)
-আমি যখন নিচে যাই। তখন দেখি একটি লোক আমাাের গাড়িতে এটি রেখে যায়। তাই এটি নিয়ে এলাম। (শফি)
বলে একটি খাম এগিয়ে দিল আবিদের দিকে।
আবিদ খামটিি খুলল ভেতরে একটি কাগজ। কাগজে লেখা আছে।
“ওহে, ইয়াংম্যান তুমি এই অবদি আসতে পারবে তা ভাবি নি। এখনো আসল চিত্র বাকি। নিজের দেশে ফিরে যাও। আর চাইলে কিছু টাকা দিতে পারি যা দিয়ে তোমার পুরো জীবন চলে যাবে। বন্দ্ধূুর জন্য মরে কোনো লাভ নেই।
আবিদের মুখে চিন্তার ভাজ পড়েছে। তার মাথায় গভীর ভাবনা চলছে। এখন তার মাথায় একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। রায়হানের বলা মতো কি তারা যাবে?
শেষে চিন্তার অবসান ঘটিয়ে। আবিদ, শফি,জিহাদ নিচে গাড়িতে এসে বসল।
-কই যাবো?(শফি আবিদের দিকে তাকিয়ে বলল)
– এখান থেকে ঠিক উত্তরে ৫ কিলোমিটার। (আবিদ)
-কি বলিস। আমার জানামতে ওখানে তো ছোট একটা ফরেস্ট। আর ওখানে তেমন কোনো মানুষের যাতায়ত নেই ওই রাস্তায়। আর ওখানে ফরেস্টে যাওয়া কি আমাদের ঠিক হবে আবিদ?
– আবির আর প্রিয়ন্তি ওখানে আছে?আমরা না গেলে ওদের কে ছাড়িয়ে আনবে? আমাদের এখানে আসার উদ্দেশ্য এটাই। আর আমার প্রথম মিশন। তোর ইচ্ছা না হলে তুই যাইচ না।
-কি আর করা।
-শফি পরিচিত কোনো পুলিশের নাম্বার আছে যে আমাদের মিশনটির সম্পর্কে বলবি। তারা যদি আমাদের সাহায্য করে।
-হ্যা আছে। কিন্তু ওনি তো এখানে নই আসতে সময় লাগতে পারে। জানাবো তাকে?
-হ্যা।
তারপর শফি কল দিল কথা বলছে পুলিশ ইন্সপেক্টর লিউক এর সাথে কথা বলছেন তাদের ঘটনা পুরো বলেছেন। লিউকের সাথে শফির ভালো সম্পর্ক।তাই লিউক আর মানা করতে পারল না। তারা জানাচ্ছে তাদের আসতে একঘন্টার মত লাগবে।
শফি কথা শেষ করে সব আবিদ আর জিহাদকে জানালো।
তারা গাড়িতে বসে আছে। তখন গাড়ির গ্লাসে কি যেন আঘাত হানল। সাদা। আবিদ হাতে রিভলবার নিয়ে বের হল। দেখল সামনে একটি সাদা কাগজ মোড়ানো পাথর দেখল। সেটি সে তুলে নিল। তারপর কাগজটিতে খুলে দেখল। সেখানে স্পষ্ট বাঙলায় লেখা আছে
“তোমার সাহসিকতা দেখে আমার ভালো লাগল। আমি এরকম সাহসি ছেলেদের অনেক পছন্দ করি। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে সাহস দেখানোটা আমার এক্কেবারে পছন্দ না। এখনও সময় আছে ফিরে যাও। যদি তা না করো। আজকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত শেষ সময়।
দেখা হবে খুব শীঘ্রই।
– ডার্ক ফরেস্ট কিং”
এতক্ষনে আবিদের পেছনে এসে জিহাদ আর শফি এসে দাঁড়িয়েছে। তারাও পড়ল। তাদের বুঝতে বাকি রইল তাদের বন্দ্ধুকে বাঁচাতে হলে ৫ টার আগে যা করার করতে হবে।
-জিহাদ কয়টা বাজে?(আবিদ)
-স্যার ১.২৭। (জিহাদ)
-শফি তারাতারি গাড়িতে ওঠ। চল। আর বেশিক্ষন নেয়।(শফির দিকে তাকিয়ে বলল আবিদ।)
– হুম চল।(শফি)
– আর শোন লিউককে বলে দে। সে যেন তারাতারি ফরেস্ট হাউজে পৌঁছে যায়।
-আচ্ছা আমি এখনি বলছি।
– হ্যা।
তারপর তারা লিউককে বলে গাড়ি চালিয়ে সামনের দিকে যাচ্ছে। গাড়ি চলছে ১১০ কিলোমিটার বেগে। কারণ ফ্রান্সেতো এখানের মতো এত জ্যাম নেই তারপর ওরা যে রাস্তায় যাচ্ছে সেখানে যাতায়াত কম মানুষের।
আবিদ বাইরে লুকিং গ্লাসে দেখল তাদের পিছন থেকে একটা কালো গাড়ি ফলো করছে সকাল থেকে। আবিদ সেটি দেখে বলল
-শফি এই রাস্তা ছাড়া অন্য কোনো পথ আছে যাওয়ার। (আবিদ)
-আছে তবে একটু রিস্কি কিন্তু এর চেয়ে অনেক তারাতারি পৌঁছানো যাবে। (শফি)
-তবে চল ওই রাস্তা দিয়ে।
– কেন?
-এখন প্রশ্ন করিস না যা বললাম তাই কর।
-আচ্ছা।
তারপর গাড়ি অন্যদিকে মোড় নেওয়ার পর। দেখল কালো গাড়িটি আর নেই। তারা এখন যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে সে রাস্তাটা জঙ্গলের ভেতর দিয়ে চলে গেছে।
তারা সে রাস্তা দরে এগিয়ে গেল। হঠাৎ করে আবিদ লক্ষ্য করল তাদের পেছনে কালো গাড়িটা আসছে। জিহাদ বলল
-স্যার সামনে আরো দুটো গাড়ি।
এর কয়েক মিনিট পর গাড়িগুলো তাদের ঘিরে ফেলল। তারপর ঘিরে থাকা গাড়িগুলো থেকে হাতে
A K 47 নিয়ে তাদের গাড়ির দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। আবিদদের গাড়ির দিকে বন্দুক তাক করিয়ে বলল সবাই যেন বেরিয়ে পড়ে তারা করল তাই। কিন্তু নামার সময় আবিদ তার গুলিটি লুকিয়ে নিল। আবিদের প্যান্টের ভেতরে হাটুর পেছনটায় । তারপর তারা বেরিয়ে পড়ল। আপোষের ভঙ্গিতে। জিহাদের রিভলবারটি তারা নিয়ে ফেলল আবিদেরটাও খোঁজে পেল কারণ অল্প সময়ের মধ্যে কোথায় লুকাবে। তাদের একটি গাড়িতে করে নিয়ে গেল। তারপর গাড়িগুলো এসে থামলো একটি সামনে। বাড়িটি দুইতলা। বাড়ি মনেহয় পুরোনো আমলের।দেখলেও ভয় লাগে।
তাদের বাড়িটিতে ঢুকানো হলো। দুইতলায় নিয়ে গেল। সেখানে একটি রুমে ঢুকিয়ে তাদের চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে ফেলল। হাতে বন্দুকধারি লোকগুলো বেরিয়ে গেল। দরজা বন্ধ করে দিল
– কে জানে এখন আমাদের কি হবে?(শফি)
আবিদ তার কথায় শুনলো না মনে হয়।সে গভীর চিন্তায় মগ্ন। এমন সময় দরজা খোলে গেল। তখনি একজন ব্যক্তি ভেতরে প্রবেশ করল। আবিদ দেখেয় চিনে ফেলল। কারণ আবিদ আবিরের বাবার অফিসে অনেকবার গিয়েছে। সেখানেই দেখেছে এই ব্যক্তিটাকে। আবিদ বলে ওঠল।
-মি.ইমন আপনে?(আবিদ)
-হ্যা, আমি। দেখে অবাক হলে মনে হয়?(একটা হাসি দিয়ে বলল মি.ইমন)
-অবাকতো হয়েছি বটে। কিন্তু আবির আর প্রিয়ন্তিকে আটকে রাখার ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না।
-বলছি এত তারা কিসের। আর কিছুক্ষন তো বেঁচে আছো। ঠিক ৫ টা।
আবার বলতে শুরু করল মি.ইমন
-আবিরের বাবার সাথে আজ ১০ বছর ব্যবসা করে আসছি। আমাদের মধ্যে অনেক ভালো সম্পর্ক। কিন্তু কিছুদিন আগে আবিরের বাবা আমার আসল পরিচয় সব কুকর্মের কথা জেনে যায়। আমার কিছু অবৈধ ব্যবসা সে জেনে যায়। আর আমাকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিতে চাই। আর কিছু ব্যবসার চুক্তি সাথে বাতিল করে। যার ফলে আমার অনেকটাকা ক্ষতি পূরণ হয়। তাই আমি তার থেকে ক্ষতিপূরণ স্বরুপ তার ব্যংক একাউন্ট হ্যাক করি আমার একাউন্টে ট্রান্সফার করি। তাই সে আমার নামে মামলা করতে যায়। তার ফলে তাকে জব্দ করার জন্য এ ব্যবস্থা।
আবার বলতে শুরু করল মি.ইমন
-আবিরের বাবার সাথে আজ ১০ বছর ব্যবসা করে আসছি। আমাদের মধ্যে অনেক ভালো সম্পর্ক। কিন্তু কিছুদিন আগে আবিরের বাবা আমার আসল পরিচয় সব কুকর্মের কথা জেনে যায়। আমার কিছু অবৈধ ব্যবসা সে জেনে যায়। আর আমাকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিতে চাই। আর কিছু ব্যবসার চুক্তি সাথে বাতিল করে। যার ফলে আমার অনেকটাকা ক্ষতি পূরণ হয়। তাই আমি তার থেকে ক্ষতিপূরণ স্বরুপ তার ব্যংক একাউন্ট হ্যাক করি আমার একাউন্টে ট্রান্সফার করি। তাই সে আমার নামে মামলা করতে যায়। তার ফলে তাকে জব্দ করার জন্য এ ব্যবস্থা।
-কিন্তু আমাকে হ্যাক করলেন কিভাবে?আমি তো সব আমার ল্যাপটপ থেকে পেনড্রাইভে কপি করে নিয়ে ল্যাপটপ থেকে সব ডিলেট করে দেয়
– শুনো ডিরেক্টিভ। তোমার সব ঠিক ছিল। তুমি ছোট্ট একটি ভূল করলে তুমি তোমার জি -মেইল আইডিটা বদলাউনি। তাই তোমার একাউন্ট হ্যাক করতে বেগ পেতে হয়নি।
আবিদ বুঝতে পারল সে কত বড় ভূল করেছে।আবিদ বলল
-কিন্তু যে নাম্বার থেকে রায়হানকে মেসেজ দেয়া হতো ওটাতো আমেরিকান নাম্বার কিন্তু লোকেশন ফ্রান্স হওয়ার মানে কি?
-মেসেজটা আমার আরেকটা পার্টনার সে দিত আমেরিকা থেকে।কিন্তু ভিপিএন এ লোকেশনটা আমি এখানে সেটিং করি। এটা আমার জন্য তেমন কোনো আহামরি কাজ নই। আর একটা প্রশ্ন তোমরা রিভলবার গুলো আনলে কি করে?
-আমি আমার সহকারি জিহাদকে যে জায়গায় চেক করা হয়। সেখানে তাকে আগে পার করিয়ে দেয়। সে কোনো এক চলে গার্ডকে মনোযোগ সরিয়ে ফেলে ঐ মুহূর্তে আমি ঢুকলে রেড সিগন্যাল দেয় দেয়ার সাথে পেকেট মোড়ানো রিভলবারটি তার হাতে দিয়ে দেয়। তারপর গার্ড আমার দিকে থাকালে আমার চাবির গোছা আর বেসলাইটটি দেখায় তাই সন্দেহ করেনি।
-নিঃসন্দেহে তোমাকে যত চালাক ভাব চিলাম তুমি তারচেয়ে বেশি চালাক। তোমার প্রশংসা না করে পারি না।
-আরেকটা কথা প্রিয়ন্তি আর তানিয়ার ব্যাপারটা বুঝলাম না?
-প্রিয়ন্তি আনা শুধু একটু নাটক সাজানো সে প্রিয়ন্তিকে নিয়ে পালিয়েছে। তুমি তোমার বন্ধু শত্রু হয়ে যেতে।
আর তানিয়া মেয়েটা আবিরের কিডন্যাপের বিষয়টি জেনে যায় সেটা আমি জানি না। কিন্তু সে এসে আবিরকে উদ্দার করতে চেয়ে ছিল। আমি তার চাল বুঝে যায়। বেচারিও আটকে আছে এখন।এবার সৃষ্টি কর্তার নাম নাও। হাতে আর বেশি সময় নেই বলে বেরিয়ে গেলেন মি. ইমন।
আবার দরজা বন্ধ হয়ে গেল। আবিদ বলল,”আমাদের বেরুতে হবে এখান থেকে। জিহাদ আমি কোনো রকমে তোমার পিছনে আসছি আমার জুতার তলা থেকে চুরিটা বের কর স্প্রিনের চুরিটা। তলা হাল্কা ফাঁক করলেই পাবে।”
ঠিক যে বলা সে কাজ। তারপর তারা চুরিটা দিয়ে কষ্ট করে জিহাদ নিজের বাঁধন কাটে তারপর তিনজনেই মুক্ত হয়। জিহাদ জানায় তার কাছে আরেকটি চুরি আছে আর শফি জানায় তার কাছে সাইলেন্সার আছে।
তখন একজন ব্যক্তি তাদের জন্য কিছু ফল আর পানি দিতে আসে সুযোগ বুঝে তাকে গায়েল করে আবিদ। তারথেকে রিভলবার আর রাইফেলটি নিয়ে নেই তারা তিনজন। সাইলেন্সারর লাগিয়ে দরজার যে পাহারা দিচ্ছিল থাকে শেষ করে।। তার সব অস্ত্র নিয়ে নেই তারা। এবার সবাই এরকম করে মারতে মারতে মোট সাতজনকে মারে। শেষ রুমটাতে যেখানে আবিররা বন্ধি। সেই রুমে গিয়ে দেখে আবিরের মাথায় রিভলবার করিয়ে রেখে বসে।
দেখে আবিদরা ভয় পেয়ে যায়। মেয়েদুটো অপর পাশে চেয়ারে বাঁধা রয়েছে।
মি.ইমন আবিদদের ইশারা করে সব অস্ত্র ফেলে দিতে বলে। তারা অস্ত্র সব ফেলে হাঁটু গেড়ে বসে আছে।
আবিদের দিকে রিভলবার তাক করিয়ে যখন গুলি ছুড়তে যাবে ঠিক তখনি একটা গুলি অপর পাশ থেকে ইমনের হাতে লাগে। গুলিটা করে লিউক। তারপর আরেকটি গুলি চালাই ইমনের পা বরাবর। ইমনকে এরেস্ট করা হয়। আর সবাই লিউককে অনেক ধন্যবাদ দেয়।সবার চোখে কান্না কিন্তু মুখে হাসি। হাসিটা বিজয়ের ফিরে পাওয়ার। তারপর আবিদ দুরে গিয়ে প্রিয়ন্তির কাছে গেল।তাকে একেবারে জড়িয়ে ধরল।
প্রিয়ন্তিকে বলল আবিদ। এবারতো বিয়ে পাকা।
-কিন্তু তুমি অন্য ধর্মের বাবা কি মেনে নিবে?(প্রিয়ন্তি)
-মনের মিল থাকলে সব চেয়ে বড় মিল।(আবিদ)
এদিকে আবির আর তানিয়াও মিলে গেল। আরকি…
সমাপ্ত