অপছন্দের জামাই,পর্বঃ৩

0
5194

অপছন্দের জামাই,পর্বঃ৩
লেখকঃরনি হাসান

রাত করে বাসায় ফিরায়, মা রাগান্বিত হয়ে বলল, তোর কি জ্ঞান বুদ্ধি উন্নতি হবার থেকে অবনতি হচ্ছে, ঘরে নতুন বউ রেখে। রাত বিরাতে এত কীসের ঘুরাঘুরি_?

–“না মা তেমন কিছু নাহ। অনেকদিন পর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিলাম তো এরজন্য একটু লেট হয়ে গেলো

আমার মিথ্যা কথা বলার ধরন শুনে, মা কিছুটা আচ করতে পেরে বলল” আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তুই কোনো সমস্যায় পড়েছিস। নইত বউমার সঙ্গে কোনো ঝগড়াঝাটি হয়েছে। এরজন্য তোর চেহারাটা বিষন্নতা দেখাচ্ছে

পৃথিবীতে মা একজন যে ছেলের সমস্যায় পড়লে, তার মলিন চেহারা দেখে অতি সহজেই সমস্যাটি উপলব্ধি করতে পারে, আমি যে বিবাহিত জীবনে রিমাকে নিয়ে ভালো নেই। মা সেটা খুব সহজেই ধরে ফেলেছে। এটাই হইত মার অদ্ভুত এক অনুধাবন শক্তি, মা যদি ও আমার বিষয়টা উপলব্ধি করতে পেরেছে, তারপর ও বিষয়টাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বললাম ”

–“মা কিযে বলো না, রিমার সঙ্গে আমার কেন ঝগড়া লাগতে যাবে, ও তো অনেক ভালো যা বলি তাই শুনে, সুতরাং ঝগড়াঝাটি হবার কোনো সুযোগ নেই

মা আমার কথা শুনে কিছু একটা ভেবে বলল” তাহলে তো ভালোই, আর হ্যা টেবিলে খাবার রেডি করা আছে, খেয়ে নিস কেমন

–“ওকে

পেটে ক্ষুধা থাকায় আর লেট করলাম না, মার কথা শুনে টেবিলে বসে পড়লাম। খাবারের পর্ব শেষ করে, নিজের রুমের দিকে যায়, দরজায় একটু হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো, অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট অন করে, ইলেকট্র ডিপ বাল্প জ্বালিয়ে দিলাম, পুরো রুমে ঝাপসা আলোকিত হওয়ায় লক্ষ্য করলাম, রিমা বিছানার মাঝে খানে কোলবালিশ রেখে বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার বর্ডার বানিয়ে রেখেছে।ওর কান্ড দেখে আনমনে হেসে উঠলাম, ইলেক্ট্রিসিটির ডিপ বাল্পের ঝাপসা আলোয় রিমার চেহারাতে প্রতিফলিত হওয়ায় ওর রূপবতী রুপটা আরও স্পষ্ট ফুটে উঠেছে, খুব ইচ্ছা করছে স্বামীর অধিকার টা খাটিয়ে একটু ভালোবাসতে। কিন্তু ওর কঠোর নিষেধ থাকায় অদ্ভুত এক অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা আমাকে বার বার আত্মা সম্মানের কথা ভাবিয়ে পিছিয়ে দিচ্ছে

বিছানায় এসে গা এলিয়ে দিতেই ইলেক্ট্রিসিটি লাইন চলে গেলো, হঠাৎ ঝনঝনিয়ে বৃষ্টি নামবে তা আমি কল্পনা ও করেনি, আচমকাই বৃষ্টি নামার কারনে কেমন জানি একটা রোমাঞ্চকর মুহুর্তে সৃষ্টি হয়েছে। নিজের অজান্তেই কোলবালিশ সরিয়ে কখনো যে রিমার সংস্পর্শে গিয়েছি, তা আমি নিজেও জানি না, কেমন জানি একটা ঘোরের মাঝে দুইজনেই পড়ে গেছি। রিমা আমাকে আটকানোর চেষ্টা করলেও পরক্ষণে আমাকে আটকাতে পারিনি,

তারপর রাতে কি হয়েছে তা আমার খেয়াল নেই। ফজরের আযান শুনে ঘুম ভেঙে গেলো, চোখ মিলে পাশে লক্ষ্য করি, রিমা হাটু মোড়ে চাপা সুরে কান্না করছে। ওর কান্না দেখে পরক্ষণে রাতের কথা ভেবে নিজের মাঝে অপরাধবোধ জেগে যায়, অনুশোচনায় মাথায় নিচু করে রিমার উদ্দেশ্য বললাম, সরি আমি আসলে

বাকি কথা টুকু রিমা আমাকে উচ্চারণ করতে দিইনি, ও কান্না করে বলল” আপনি প্লিজ চুপ করেন, আপনি এখন আমাকে কি বলে শান্তনা দিবেন তা আমি খুব ভালো করে ই বুঝতে পারছি।

–“নিশ্চুপ

–“পরিশেষে আমাকে ধর্ষণ করে ফেললেন, এ ধর্ষণে হইত আমি সমাজে চোখে ধর্ষিতা নই। কারণ আপনি যে আমার কাগজে কলমে লিখিত স্বামী। এখন আপনার মনে যা ইচ্ছা সেটাই করতে পারেন তাই না-

রিমার কান্না জড়িত কন্ঠে কথা গুলো শুনে নিজের অপরাধবোধ টা আর ও দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।বাকরুদ্ধ যেন হারিয়ে ফেললাম, আমার নিরবতা দেখে রিমা বলল” কি হলো এখন বোবা হওয়ার অভিনয় করছেন কেন কিছু তো একটা বলুন-

–“অপরাধী সুরে বললাম” এইটা ধর্ষণ না, তুমি ভুল ভাবছো_!!

–“ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে সেটা ধর্ষণ করা হই। আর আপনি আমাকে ধর্ষণ ওই করেছেন। আগে আপনাকে আমি পছন্দ করতাম না ঠিকই। কিন্তু চরিত্রহীন ভাবতাম না। আপনার কৃতকর্মের জন্য আপনি নিজেই তা প্রকাশ করলেন, আজ থেকে আপনি আমার কাছে শুধু একজন ঘৃনিত ব্যাক্তি।পৃথিবীতে সবচাইতে যদি বেশি কাউকে অপছন্দ ঘৃণা করে থাকি, সে তালিকায় আপনিই একজন

রিমা এ বলে বালিশের মাঝে মুখ ডুবিয়ে কান্না করতে লাগলো, ওর কান্নায় অনুশোচনায় নিজেই নিজের মাঝে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। কোনো কথা না বলে সকালে ছাদে চলে যায়, আকাশে দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে দিয়ে আনমনে ভাবতে লাগলাম

আজ আমি যদি কালো না হয়ে হ্যান্ডসাম সুদর্শন হতাম, তাহলে হইত নিজের স্ত্রীরের কাছে এতটা অপছন্দ কিংবা অবহেলার পাত্র হতাম না। চেহারাটা কালো রঙের হওয়ায় জীবনটা এতটা যে অসম্মান আর অবহেলার হয়ে দাঁড়াবে তা আমি কোনো দিন কল্পনা ও করেনি। আনমনে এসব ভাবতে কখন যে দিনের আলোয় আকাশ ফর্সা হয়ে উঠেছে, তা খেয়াল ওই করেনি, পাখিদের চেচামেচি শব্দ শুনে হঠাৎ ভাবনার ঘোর কেটে গেলো, ছাদ থেকে নেমে রুমে গিয়ে লক্ষ্য করি রিমা উদাসীন হয়ে আয়নার সামনে বসে আছে।রুমে হঠাৎ আমাকে দেখে কিছুটা নড়েচড়ে বসল। এবং ঘৃনায় মুখ ফিরিয়ে নিলো।

দৃশ্যটি দেখে বাসায় আর মন টিকলো না, সকালের খাবার না খাইয়ে বাহিরে বের হয়ে যায়। বাসায় থাকলে রিমার কান্না জড়িত চেহারা দেখলেই নিজের অপরাধ বোধ জেগে যায়। অনুশোচনায় ভোগতে হই দেখে, বাইকে করে দশআনি ব্রীজের উদ্দেশ্যে চলে যায়। আগে যখন মন খারাপ হত, তখন দশ আনি ব্রীজে চলে যেতাম, আজ সেখানেই যাচ্ছি। আমাদের বাসা থেকে বেশি একটা দূরে না মাত্র ১৪ – ১৫ কিলোমিটার দূরত্ব হবে আর কি। তবে এ দশআনি ব্রীজে দাঁড়িয়ে হিম শীতল বাতাসে যখন জেলেদের চক্রি জালেতে মাছ ধরা, ছোট বড় এক দুইটা নৌকা নদীতে ভেসে থাকা, ছোট পোলাপানদের নদীতে লাফালাফির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখলে মনটা অটোমেটিকলি প্রফুল্ল হয়ে যায়, আজ প্রিয় স্থানে গিয়ে কতটা ভালো লাগা কাজ করবে তা সঠিক বলতে পারছি না,

মাত্র ৪৪ মিনিটে দশআনি ব্রীজে চলে আসি, সকালের ঠান্ডা আবহাওয়ায় মনটা সত্যিই ফুরফুরে হয়ে গেলো। কিছুক্ষন সময় এখানে ঘুরাঘুরি করার পর ঘড়ির দিকে লক্ষ্য করলাম , ৯;৩০ সময়টা দেখে যেনো পেটের ক্ষুধা নড়া দিয়ে উঠল, তারপর বাইক্টা ঘুরিয়ে বাসায় চলে আসি, মা আমাকে দেখেই বলল,

–“কিরে বউমার মার সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ করেছিস নাকি হ্যা, সে কখন থেকে খাবার খেতে বলছি খেতেই চাচ্ছে না,

–“না মা তেমন কিছু না, তবে অভিমান হইত করেছে, তুমি বরং খাবার টা রুমে পাঠিয়ে দাও বাকি টা আমি দেখছি, এ বলে রুমে চলে যায়। কিছুক্ষন পর মা ও খাবার নিয়ে রুমে আসে । তারপর খাবারের প্লেটটি রিমার সামনে এগিয়ে দিয়ে বললাম, কি ব্যাপার রিমা খাবার খাচ্ছো না কেনো_?

রিমা আমার কথা তোয়াক্কা না করে যা বলল মা শুনে থতমত খেয়ে রেগে, আমার উদ্দেশ্য বলল

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here