অপছন্দের জামাই,পর্ব:৪ অন্তিম পর্ব

0
7162

অপছন্দের জামাই,পর্ব:৪ অন্তিম পর্ব
লেখকঃরনি হাসান

রিমার সামনে খাবাবের প্লেটটি এগিয়ে বললাম ” কি ব্যাপার রিমা খাবার খাচ্ছো না কেন_?

ও আমার কথা তোয়াক্কা না করে বলল, আমি আমার বাসায় যেতে চাই,

রিমার কথা শুনে উপস্থিত মা রেগে আমার উদ্দেশ্য বলল” কিরে কিছুক্ষন আগে না তুই বললি যে বউমার সঙ্গে তোর কোনো ঝগড়াবিবাদ হইনি। তাহলে বউমা তার বাসায় যেতে চাচ্ছো কেন_?

–“ইয়ে মানে বা মানে ও কিছু না।

আমার তুতলিয়ে কথা বলাতে মা বুঝে গেলো যে আমাদের স্বামী স্ত্রীর পারসোনাল ব্যাপার, বলতে চাচ্ছি না, মা বুদ্ধিমাতার মতো চোখ ইশারা করে বলল , রিমার অভিমান ভাঙিয়ে খাবার টা খাইয়ে দিস। আমিও ইশারায় বললাম তুমি যাও আমি আছি, ব্যস মা চলে গেলো তারপর রিমার সামনে গিয়ে বসে বললাম,

–“আরে এটাই তো তোমার নিজের বাসা। প্রত্যেক মেয়ে তো তার স্বামী বাড়ি সে নিজের মনে করে, আর তুমি এখানে দুইটা দিন ও থাকতে চাও না কেন –

–“আমার এখানে ভালো লাগে না, তাই থাকতে মন চাই না (রেগে)

–“এখানে থাকতে মন চাই না কেন হুম_?

–“আপনাকে দেখলে –

–“আমাকে কি_?

–“ঘৃণা হই

–“আগে তো ঘৃণা করোনি, তাহলে আগে কেন যেতে চাইছো_?

–” নিশ্চুপ

–“স্বামী একটু কালো বলে এতটা অবহেলা করা কিন্তু ঠিক না, বুঝছো। আচ্ছা বাদ দাও এসব কথা, এখন খেয়ে নাও

–“আমি খাবো না (জিদ ধরে)

–“খাবার কি দোষ করছে, খাবারের সঙ্গে রাগ দেখাচ্ছো

–“নিশ্চুপ

–“রিমা প্লিজ খেয়ে নাও, তোমার জন্য আমিও এখনো খেতে পারিনি,

–“আপনি খেয়েছেন কিনা সেটা আমাকে বলে লাভ নেই। আমি খাবো না এটাই ফাইনাল-

–“হ্যা ঠিকই বলছো আমি খেলাম বা না খেলাম তাতে তোমার কিছুই যায় আসে না। কিন্তু আমার জন্য রাগ করে না খাইয়ে আছো, এর জন্য তো আমার খারাপ লাগছে প্লিজ খেয়ে নাও। আমি এখানে থাকতে যদি তোমার প্রবলেম হই তো বাহিরে গেলাম তবুও খেয়ে নাও প্লিজ

এ বলে ড্রয়িংরুমে এসে সোফায় আরাম করে বসলাম, কেন জানি বাসায় ভালো লাগছে না, মনে হচ্ছে বন্ধুদের সঙ্গে যদি টুরে যেতে পারতাম তাহলে মন টা হইত ভালো হত । আনমনে ভাবছি হঠাৎ নিলয় বন্ধুর ফোনে ভাবনার ঘোর কেটে গেলো ” কল রিসিফ করে বললাম

–“হ্যা বন্ধু কি খবর_?

–“এখন আগ বাড়িয়ে ফোন দিছি, এখন তো বলবি কি খবর, নিজে তো কখনো এই গরিব বন্ধুটার খবর নিলি না

–“সরি বন্ধু খুব ঝামেলায় আছিলাম। এরজন্য তোদের খুজ খবর নিতে পারিনি,যাই হক এখন কই আছিস_?

–“তোদের বকশীগঞ্জে আসছি দুই দিন হই –

–“আরে দুই দিন হই বকশীগঞ্জে আইছোস আমারে জানাবি না –

–“সে যাই হক এখন তুই কলেজ মাঠে চলে আই

–“ওকে বন্ধু আসতাছি

বাইক করে মাত্র ৫ মিনিটে কলেজ মাঠে পৌছালাম, নিলয় সঙ্গে তানবীরেও মাঠে দাড়িয়ে আছে, আজ দুই বছর পর হারামি গুলো রে দেখলাম, মন টা প্রফুল্ল হয়ে গেলো, ফাজলামো করে বাইকের গতি বাড়িয়ে পায়ের গুড়ে ব্রেক চেপে ধরলাম, আর ওরা এক লাফে সরে গিয়ে বলল

–“আরে মেরে ফেলবি নাকি

–“না একটু বাজিয়ে দেখলাম কেমন লাফাতে পারিস (হেসে)

–“হ্যা তা আমরা ভালোই পারি চল রেস্টুরেন্টে বসে আড্ডা দেওয়া যাক

–“ওকে

তারপর রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবার খাওয়ার মাঝে হঠাৎ তানবীর বলে উঠল” রনি তোর কপাল টা সত্যিই অনেক ভালো রে,

–“আমার কপাল ভালো, কই ভালোর তো কিছু জীবনে পেলাম না, আর তুই কপাল ভালো বলছিস ছে-

–“আরে তোর কপাল যদি ভালো নাই হইত তাহলে কি এত সুন্দরী বউ ঘরে পাইতি বল, আর আমাদের দেখ এত ভাব মেরে ঘুরাঘুরি করি তবুও কোনো কালো মেয়ে জুটে নাহ (হেসে)

কথাটি শুনে খাবার গিল গিয়ে গলায় আটকে গেলো, নিলয় পানির বোতল এগিয়ে বলল” দোস্ত ঠিক আছিস তো

পানি খেয়ে তারপর একটু স্থির হয়ে নিলয়ের উদ্দেশ্য বললাম” আমার ঘরে সুন্দরী বউ আছে, এরমানে আমি খুব হ্যাপি আছি এটাই তো ভাবছিস নাকি_?

–“হ্যা অবশ্যই তুই সুখে আছিস

–“মানুষের হাসি উজ্জ্বল চেহারা দেখে সবাই ভাবে যে, লোকটি মনে হই অনেক হ্যাপি আছে এরজন্য তার চেহারায় হাসি উজ্জ্বল দেখা যায়, লোকটির সম্পর্কে না জেনে এরকমটা ভাবা অনেক বড় একটা ভুল, দুই একবার তার জীবন গল্প শুনে দেখ, লোকটি প্রকৃত পক্ষে হ্যাপি নাহ। তার হাসি টা শুধু কষ্টকে চেপে রাখার একটি দেয়াল মাত্র”

নিলয় আমার সেড মুডে কথা গুলো শুনে থতমত খেয়ে বলল” বন্ধু এ কথা বলার উদ্দেশ্য কি_?

–“ওই তো কিছুক্ষন আগে বললি নাহ, কপাল গুনে সুন্দরী বউ পেয়েছি, অইটা আসলে আমার কপাল না, বরং দুর্ভাগ্য_!!

–“দোস্ত তোর ঘটনাটা কি একটু ক্লিয়ারলিভাবে বলবি_?

–“শুন তাহলে….

তানবীর নিলয়কে শুরু থেকে এ পযন্ত যা ঘটনা ঘটেছে তা সংক্ষেপে বলে পরিশেষে বললাম ” রিমাকে বিয়ে করে আমার লাইফ টা সত্যিই নরকে পরিনত হয়েছে, যদি কালো মাইরে বিয়ে করতাম তাহলে হইত আমার বিবাহিত জীবন সুখের হত, তোরা হইত আমার হাসি উজ্জ্বল চেহারা দেখে আন্দাজ করছিস যে হ্যাপি আছি, But আমি হ্যাপি নেই

এ বলে নিলয় তানবীর থেকে কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে যায়, ওদের সঙ্গে আড্ডা দিতে ভালোই লাগছিল কিন্তু মাঝখানে রিমার কথা উল্লেখ করে আড্ডা দিবার মন মানুষিকগতা খারাপ হয়ে গেলো,

রিমার সঙ্গে দম্পত্য জীবন আমার অবহেলিতভাবেই কিছুদিন কেটে গেলো, এরমধ্যে রিমাকে অনেক ভাবেই মন জয় করার চেষ্টা করছি, কোনো লাভ হইনি, আমার প্রতি ওর যে অপছন্দ ঘৃণা জমে ছিলো, তার এক বিন্দুমাত্র কমাতে পারিনি, ও ওর জায়গায় অটুট ছিলো, কখনো আমাকে বুঝতে চাইনি,তবে রিমা আমাকে সবচেয়ে বেশি অপমান অপদস্ত করেছিলো, রিদিতার বিয়ের ফাংশনে, চারপাশে আত্নীয়স্বজনদের অভাব ছিলো না,

সব কাপল রাই এক সঙ্গে বসে গল্প সল্প করছিলো আর আমি একাই সোফায় বসে ফেসবুক ঘাটতেছিলাম, হঠাৎ লক্ষ্য করি, ওর কাজিন সবুজের সঙ্গে হেসে খেলে কথা বলছে, দেখে তো পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেলো, নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে রিমার সামনে গিয়ে বললাম”

–“কি হাসবেন্ড হ্যান্ডসাম দর্শন না বলে, কাজিনের সঙ্গে গল্প সল্প করতে খুব মন চায় তাই না (রেগে)

–“বাজে বকা বন্ধ করুন-

–“তাহলে আমার সঙ্গে কথা বলতে সমস্যা টা কোথায়_?

–“আমি কার সঙ্গে কথা বলবো না বলবো তা একান্তই আমার ব্যাপার, এখানে আপনাকে ইন্টারফেস করার কোনো প্রয়োজন নেই-

এক দুই কথায় বিষয়টা বড় হচ্ছে দেখে ওর হাত ধরে বললাম” রিমা চলো বাসায় ফিরে যাবো,

–“না আমি যাবো না (চিৎকার মেরে)

রিমার রাগান্বিত হওয়া দেখে আমার ও রাগ দ্বিগুন বেড়ে গেলো , রেগে ওর হাতটি শক্ত করে ধরে বললাম “কথা না বাড়িয়ে বাসায় চল সিনক্রিয়েট করো না-

ও আমার হাতটি ঝটকানি মেরে ছাড়িয়ে রাগান্বিত হয়ে উচ্চ গলায় বলল, আমার প্রতি আপনার এত অধিকার আসে কই থেকে, আমি তো আপনাকে স্বামী বলে মানি না। আপনি কেন আমার পিছনে ছ্যাবলাদের মতো পরে থাকেন, আপনাকে আমার আগেও পছন্দ হইনি আর বাকি জীবনে হবে না। নিজের চেহারাটা একবার আয়না সামনে দাঁড়িয়ে ভালো ভাবে দেখবেন, আপনাকে কেনো যে অপছন্দ করি, তার উত্তর আপনি পেয়ে যাবেন, আর হ্যা পারলে আমাকে মুক্তি দিন প্লিজ

রিমার এসব কথাতে চারপাশে আত্নীয়স্বজনরা ঘিরে ধরেছে, অনেকজনই আমার কালো রঙের চেহারা নিয়ে কটু কথা বলাবলি করছে, আর এইদিকে ওর অপমানজনক কথা গুলো শুনে, আত্ন সম্মানে তীরের মতো আঘাত লাগছিলো, একপর্যায়ে রাগান্বিত হয়ে বললাম ” মুক্তি চাস তো , যা সারাজীবনের জন্য তোকে মুক্তি দিলাম,

এক তালাক, দুই তালাক, আর বাকি এক তালাক ডিভোর্স পেপারে সাইন করার সময় পেয়ে যাবি

এ বলে বিয়ে বাড়ি থেকে রাগে হনহন করে বাসায় চলে আসি। উপস্থিত আত্নীয় স্বজনরা সবাই সার্কাস খেলা দেখার মতো আমার আর রিমার দিকে তাকিয়ে ছিলো,রিমা তো আমার দিকে ওর চোখজোড়া বড় বড় করে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো, এত দুরুত্বই যে তালাক নামক শব্দ মুখে উচ্চারণ করবো তা ও কল্পনা করেনি।

______________ সমাপ্ত ______________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here