প্রাক্তন,১১+১২পর্ব

0
2855

প্রাক্তন,১১+১২পর্ব
Wendrilla Jahan Nira

সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি স্তব্ধ বাকরুদ্ধ। কেমন জানি লাগছে।বুঝতে পারছি না। কিন্তু কেনো লাগছে আমি তো এটাই চাইতাম তাহলে?

আন্টি আংকেল ও চলে এসেছে।হয়তো বিয়ের গল্প করবে।এখানে আমার থাকা ঠিক হবে না।তাদের পারিবারিক বিষয়ে আমার থেকা টা ভালো দেখায় না।আর হয়তো এখানে থাকতেও পারবো না।তার বিয়ের গল্প চুপচাপ দাড়ি শুনার ক্ষমতা আমার নেই।আমি চলে যাচ্ছিলাম আমার রুম এ বাধা সাধলো রাইসার বাবা “কি নীরা চলে যাচ্ছো যে? তুমি তো বাড়ীর মেয়ের মতো।তো সমুদ্র তো সে হিসাবে তোমার ভাই হয়।ভাইয়ের বিয়ের গল্প শুনবে না?? ভাইয়ের বিয়ে তে মজা করবে না?

__অবশ্যই সমুদ্রর বিয়ে তে মজা করবো।আচ্ছা আংকেল আপনার মেয়ে মানে রাইসা সে যদি এ বাসায় আসে সে ও তো এ বাড়ীর মেয়ে হয়ে যাবে।আমি ছিলাম মেয়ের মতো সে হয়ে যাবে মেয়ে।তাহলে কি সমুদ্র ও ওর ভাই হবে??

সে কি বলবে তা বুঝতে পারছে না।সে দাত কিরকির করছে।আমি একটা হাসি দিয়ে আমার রুম এ চলে আসলাম।

এসেই রুম এর দরজা বন্ধ করে দিলাম।ওয়াশরুম এ গিয়ে ট্যাপ জোরে ছেড়ে কিছুক্ষণ কাঁদলাম। কাঁদলে নিজেকে খুব হালকা লাগে।আর একা একা কাঁদলে নিজেকে অনেক শক্ত করা যায়। খুব ঘুম পেয়েছে।মাথা টাও ব্যাথা করতেছে।একটা এপিক্লন খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে গেছি।

ঘুম ভাংতেই দেখি সারা ঘর অন্ধকার হয়ে আছে। মনে মনে ভাবলাম আমি কি মরে গেলাম নাকি? তুরু একটা ওষুধ খেয়ে কে কবে মারা গেছে?? আমিও কি যে ভাবি?মাথা টে গেছে আমার।বিছানা থেকে উঠে লাইট দিতেই দেখি সমুদ্র চেয়ারে বসে আছে।দেখে বেশ চমকে গেছি।ভাগ্যিস চিল্লাই নাই।

তুমি?? এখানে??(আমি)

__অন্য কাউকে আশা করছিলে?

নাহ কাউকেই আশা করছিলাম না। আর তুমি ঘরে ঢুকলে কি করে? দরজা তো আমি ভেতর থেকে লাগিয়েছিলাম!

__বেলকনি দিয়ে এসেছি।

কিহ?? মাথা গেছে তোমার? শরীর এর এই অবস্থা নিয়ে তুমি বেলকনি দিয়ে এসেছো?

__নাহ মাথা আমার ভালোই আছে।মাথা তো তোমার গেছে।আমার বিয়ের কথা চলছে আর তুমি চুপচাপ আছো? কিছুই বলছো না?

আমি কি বলবো?তোমার বিয়ে তুমি করবে।তোমার বিয়ে কি আমি করবো নাকি?
__মানে টা কি? আমার বিয়ে অন্যকারো সাথে হবে নীরা।তুমি এটা কি করে মানতে পারছো?

না মানতে পারার কি আছে? এই দাওয়াত দিবা তো আমাকে? দাওয়াত না দিলে বিয়ে খাবো না কিন্তু!!

সে আর কিছুই বললো না সে দরজা খুলতে যাচ্ছিলো। আমি ভাবলাম চলে যাবে।তাহলে আমি যাই ফ্রেশ হয়ে নেই।যেই না ওয়াশ রুম এ যাবো।সে পিছন থেকে এ হাত কোমড় এর সাথে টেনে ধরলো।

আ আ আ আমার লাগছ তো।ছাড়ো আমার হাত!!
__লাগুক।এই তুমি এত্ত পরিবর্তন হলে কি করে??এত্ত জেদ কেনো তোমার? আমার অন্যকারো সাথে বিয়ের কথা চলছে আর তুমি কি না বিয়ের দাওয়াত খাওয়া দিয়ে চিন্তিত?

আমি তো কোনো পরিবর্তন হই নাই।আমার কোনো জেদ ও নেই।আর বিয়ের দাওয়াত না দিলে যাবো কেম্নে??
__নীরা!!!! আচ্ছা আমার দোয়াপরায় আসবা? দাওয়াত পাইলে?

কিহ? বিয়ের কথা বলছি। মরতে বলি নাই।হাত ছাড়ো আমার লাগে।
সে হাত ছেড়ে দিলো।আমি বললাম “তো বিয়ে কবে? কবে আনছো রাইসা কে?”সে আমার দিকে একরাশ রাগ নিয়ে তাকিয়ে আছেন। আমি আবার হেসে বললাম জনাব সমুদ্র বিয়েতে কিন্তু আমার এক্সট্রা এটেনশন চাই।প্রাক্তন বলে কথা। সে আর এবার সহ্য করতে পারলো না আয়নায় এক ঘুশি মেরে ভেঙে দিলো। ৫সেকেন্ড পর হাত দিয়ে রক্ত পরা শুরু হলো। আমি তো হা হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি।সে দরজা খুলে বরিয়ে গেলো।জানি না কই গেলো। ৩০ সেকেন্ড কর তার রুম থেকে জিনিষ পত্র ভাঙার শব্দ শুরু হয়ে গেলো।ইয়া আল্লাহ্‌ সমুদ্র আর না আর পারছি ও না মনে মনে বলে তার রুমে ছুটলাম। এক মিনিটে রুমটাকে প্রায় মেরেই ফেলেছে। আন্টি কি করবে বুঝতে পারছে না। আমি এক দুবার তাকে আটকানোর চেষ্টা করলাম কাজ হলো না।উপায় না পেয়ে তার বুকে মাথা রাখলাম খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।সে খুব ছাড়াণোর চেষ্টা করছে কিন্তু শেষ মেষ আবেগের কাছে রাগ হার মেনে গেলো। সে শান্ত হয়ে গেলো।এই কয়েক মিনিটে বেশ বুঝেছি আমি তার কাছে থাকলে আমার ও সে হারে হৃদ স্পন্দিত হয় তার ও সেই হারেই হয়। কিছুক্ষন পর ছেড়ে বললাম এই গুলা করবা না একদিকে তোমার শরীর খারাপ অন্যদিকে আন্টি আংকেল এর বয়স হয়েছে উনারা এত্ত চাপ নিতে পারবেন না।রোজ ওষুধ খায়ে ঘুমায়।আমি আন্টি কে বললাম “আন্টি ও আর পরে কিছু খেয়েছে?”
__নাহ খায় নি।

চলো কিছু বানিয়ে দেবে।
সে বলে উঠলো “আমি খাবো না”
__খাবে কিনা পরে দেখা যাবে।আন্টি চলো।

হুম আয়।
রান্না ঘরে আন্টি গেলো।আমি ফ্রেশ হয়ে গেলাম দেখি রান্না করছে। দুজন ই বেশ চুপচাপ অনেক্ষন কি বলবো আমি বুঝতে পারছিনা।কথা শুন্যতায় ভুগছি।আন্টি ও হয় তো তাই। পরে আন্টি বলে উঠলো “নীরা সমুর বিয়ে নিয়ে কথা চলছে রাইসার বাবা তাড়াতাড়ি বিয়ে টা দিয়ে দিতে চায়।”
__হুম ভালো তো। করিয়ে দাও ছেলে কে বিয়ে।দাওয়াত দিবে তো আমায়?না বলবে যে নীরারারারা আমার ছেলে জীবন থেকে চলে যা!!!(বেশ ড্রামাটিক ভাবে বললাম)
__না রে মা। যদি বলি আমার বাড়ির মেয়ে হয়ে যা।আমার বাড়ির বউ হয়ে যা? হবি তুই?আমার ছেলে টা সত্যি ই তোকে ভালোবাসে।বুঝি কিন্তু আমি তো কিছুই জানি নে তোদের ছাড়াছাড়ি কেনো হয়েছিলো।তাই কিছু বলতে পারি না কাউকে।সম্পর্ক গড়া খুব কঠিন রে মা।ভাঙা খুব সহজ।

শুনতে চাও?তাহলে আজ রাতে আমার রুম এ এসো সব বললো।তখন তুমি ই বলো আমি ভুল না ঠিক!!

আন্টি আর কিছু বললো না শুধু বললো খাবারটা দিয়ে আয় গিয়ে।
__হ্যা দাও।
যদি না খেতে চায়?
__আমি খাইয়ে দিবো চিন্তা করো না।
নীরা??
__হুম।

আমার ছেলেটা কি সত্যি ই দোষি রে?
__না গো আন্টি দোষ তো আমার ভালোবেসেছিলাম তোমার ছেলে কে।

বলেই চলে এলাম সমুদ্রর রুম এ দেখি ও ফোন ঘাটছে। আমাকে দেখে ফোন টা বন্ধ করে বললো “আমি খাবো না নীরা”।
__কেনো খাবে না?

এমনি খাবো না.
__সমুদ্র আমার ইচ্ছে নেই তোমার সাথে খাওয়া নিয়ে যুদ্ধ করার।একটু খেলে কি খুব অসুবিধা হবে??

তোমার স্পর্শ কল করেছিলো।
__কখন?

একটু আগে।
__অহহ তুমি খেয়ে নাও আমি কথা বলে আসছি।

সে হাত টা ধরে ফেললো আর বললো।”আমার সামনে কথা বলো ”
__কেনো?

আমি বলেছি তাই
__তুমি বললেই বুঝি আমাকে শুনতে হবে?

নীরা কথা বাড়িয়ো না।আমার সামনে যা বলার বলবা।সে নিজেই স্পর্শ নাম্বার ডায়াল করে কল লাউডে দিয়ে দিলো।

হ্যালো নীরা?
__হ্যা জ্বী বলুন।

কেমন আছেন?
__ভালো আছি।কিছু বলার ছিলো কি?

হ্যা।কিছু না,অনেক কিছু বলার ছিলো।
__জ্বী বলুন।

দেখা করা যাবে??।
এই প্রশ্ন এ সমুদ্রর দিকে তাকালাম।
সে হয়তো স্পর্শ কে সমনে পেলে খেয়ে ফেলতো।

আমি বললাম আজ তো রাত হয়ে গেছে কাল দেখা করি?
__না বেশি ক্ষন লাগবে না।আমি আপনার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি।যদি একটু নিচে আসতেন?

কিহ আপনি নিচে?কতক্ষন যাবত? আমি আসছি ১মিনিট
__হলো বেশ কিছুক্ষন।আচ্ছা আসেন।

আমি যাচ্ছিলাম বাধ সাধলো সমুদ্র।সে বললো,
তুমি যাচ্ছো মানে? রাত দেখেছো? মানুষ কি বলবে? আর তুমি যাবে না।(হাত ধরে বসে আছে)
__বাসার সামনে একজন ওয়েট করছে না দেখা করলে অভদ্রতামী দেখায়।হাত ছাড়ো যেতে হবে আমায়।

দেখাক।আমি যেতে দিবো না তোমাকে।ছাড়বো ও না।
__আমাকে তো ছেড়ে দিয়েছো ২বছর ৩মাস ১৭ দিন আগেই।ঘন্টা টা হিসাব করা হয় নি।এসে হিসাব করছি।
বলে হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে নিচে এলাম।এসে দেখি স্পর্শ গাড়ির সামনে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমাকে দেখে এগিয়ে এলেন।
হাই(আমি)
_হ্যালো

নীরা সরাসরি কথায় আসি।ভালোবাসি আপনাকে।বিয়ে করবেন আমায়?
(কি বলবো বুঝতে পারছিনা)
কি হলো নীরা কিছু বলুন?
__আপনি তো সব জানেন। তারপরেও কেনো আমাকে??

আমার তাও আপনাকে ই চাই।আমি সব মানতে রাজি আছি।যত দিন আপনি চাইবেন না আমি কাছে আসবো না।কোনো অধিকার ও চাইবো না।
__কিন্তু আমি তো…..

কিন্তু তুমি তো কি নীরা?ভালোবাসো আমায় তাই তো?(সমুদ্র)
পেছোনে দেখি সমুদ্র আসছে।
তুমি এখানে কি করছো?
__আমার বাড়ির সামনে আমি আসতেই তো পারি তাইনা?কি বলেন স্পর্শ?

হ্যা তা তো অবশ্যই।আপনার বাড়ি আপনি যখন ইচ্ছা আসতেই পারেন (স্পর্শ)
__হ্যা।তো কেমন আছেন?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনি?
_____আমিও।
তো নীরা বলো ভালোবাসো আমায় তুমি।বলো?(সমুদ্র)
__সমুদ্র কি হচ্ছে এগুলো? সিন ক্রিয়েট কেনো করছো?

আমি সিন ক্রিয়েট করছী?আজব..ভালোবাসো সেটা স্বীকার করতে কি সমস্যা?
__তুমি যাবে? প্লিজ।প্লিজ যাও সমুদ্র।

আচ্ছা যাচ্ছি।এই শুনো তাড়াতাড়ি এসো আমাকে খাইয়ে দিতে হবে।
__হুম যাও আমি যাচ্ছি।

সরি স্পর্শ মানে বুঝতে পারি নি ও চলে আসবে (আমি)
__ইটস ওকে নীরা।উনার মধ্যেও আমার মতোই একটা এনছিকিউরিটি কাজ করছে।ভালোবাসি তো,ভালোবাসে তো উনিও।

আমার কিছু বলার নেই।আর আমার সময় লাগবে ভাবার জন্য।
__নিন।খালি ফিরিয়ে দিয়েন না।

আচ্ছা আসি।সবধানে থাকবেন।
__আপনি ও।
ঘরে এসে দেখি সমুদ্র ঘরে নেই।আন্টি কে জিজ্ঞাস করলাম বললো ছাদে।ঘরে দেখি খাবার টা আছেই।খাবার টা নিয়ে ছাদে গেলাম।দেখি উনি সিগারেট খাচ্ছেন।

সিগারেট খেলে কি পেট ভরবে?(আমি)
(সে চুপ করে আছে)
বলো?সিগারেট খেলে কি পেট ভরবে?
__তোমায় না পেলে যে জীবন টা সুখ দিয়ে ভরবে না।সেটার?

সিগারেট টা ওর হাত থেকে নিয়ে ফেলে দিলাম।
ও মুচকি একটা হাসি দিলো আর বললো এখনো আমার হাতে সিগারেট দেখলে খারাপ লাগে না?? সহ্য করতে পারবো না তাই না??
__নাহ সেরকম কিছু না।আমার সিগারেটের গন্ধ ভালো লাগে না তাই ফেলে দিয়েছি।

তাই??(হেসে হেসে)
__হুম।খাও খাবার টা খেয়ে নাও।

খাইয়ে দাও।
__হুম নাও।দিনে কয়টা সিগারেট খাওয়া হয়?

হিসাব নাই।
__অহ কেউ একজন আমাকে ছুয়ে বলছিলো ২টার বেশি খাবে না।

কেউ একজন ও তো বলছিলো আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না।গেলো তো?
__কেনো গেছে তা তো খুব ভালো করেই জানেন।

হুম সব ই তো জানি।
__জানলে ভালো।এই নাও ওষুধ নাও।

নীরা??
_হুম।আজকের পর থেকে তোমাকে আর বলবো না ভালোবাসি।আমার যা সে টা আমি নিবো।যদি জোর খাটানোর দরকার হয় তাহলে তাই ই করবো।কাছে টেনে কপালে চুমু দিয়েই সে নিচে চলে গেলো।

(চলবে…..)

প্রাক্তন
দ্বাদশ পর্ব
Wendrilla Jahan Nira

নীরা??
_হুম।আজকের পর থেকে তোমাকে আর বলবো না ভালোবাসি।আমার যা সে টা আমি নিবো।যদি জোর খাটানোর দরকার হয় তাহলে তাই ই করবো।
বলেই সে নিচে চলে গেলো।

কিছুই বুঝলাম না।সে কি এখন আমার উপর জোড় খাটাবেন? আল্লাহ্‌ জানে উনার মাথায় কি চলতেছে!

নিচে নামলাম দেখি উনি রুম এ বসে কাকে জানি কল করতেছে আর বলতেছে দরকার পরলে নিজেকে শেষ করবো কিন্তু ওকে অন্য কারো হতে দিবো না।
আমি কিছুই বললাম না আমার রুম এ চলে আসলাম।
আন্টি রুমে এলো বললো এই নীরা খেতে আয়।
__খাবো না গো।তোমরা খাও ক্ষিদে নেই।

আয় খেয়ে নে। না খেয়ে ঘুমাতে নেই।
__কিছু হবে না।তোমরা খাও।আর আন্টি শোনো আমি ভাবছিলাম আমি বাড়ি টা ছেড়ে দিবো।

কিহ?তুই বাড়ি ছাড়বি? কিন্তু কেনো?
__আন্টি দেখছো ই তো সমস্যা হচ্ছে।আর তোমার ছেলের বিয়ে সামনে আমি চাই না কোনো ঝামেলা হোক।

নীরা? আচ্ছা বলবি তোদের মধ্যে কি হয়েছিলো? আমার ছেলেটার কি দোষ ছিলো?
__আন্টি তুমি ই মনে হয় প্রথম মা হবে যে তার ছেলের প্রাক্তন প্রেমিকার কাছে তার আর তার ছেলের প্রেমের গল্প শুনতে চাইছে।(হেসে হেসে বললাম)

বল না মা।
__আচ্ছা শুনো তাহলে,
আমি কেমল ইন্টার এ ভর্তি হয়েছি।সে তো আমাদের ওখানকার ভার্সিটি তে পরে।আচ্ছা ছেলে কে এত্ত দূর পাঠিয়েছিলে কেনো?এখানেই পড়াতে।
__চাঞ্চ পেয়েছে তাই গেছে।

হুম ভালো করেছে।তো কলেজ এর ক্লাস শুরু হলো কলেজ যাচ্ছিলাম রেগুলারলি।সে ওই এরিয়ার বড় ভাই টাইপ্স একজন।তো রেগ দেওয়ার একটা প্রথা আছে তোমার ছেলে ও আমাদের ফ্রেন্ডস গুলোকে রেগ দিচ্ছিলো।তো ওই রাস্তা দিয়ে আমি যাচ্ছিলাম সাথে আর ও অনেক জন ছিলো।তোমার ছেলের এক বন্ধু আমাকে বাজে কথা বলেছিলো।বলা যায় বাজে ভাষায় টিজ করেছিলো আর আমি মনে করেছিলাম তোমার ছেলে টিজ করেছে। ওই এরিয়ার বেশ প্রভাবশালী লোকের মেয়ে আমি তাই আমার রাগ ও আকাশ এর উপর দিয়ে যায়।কেউ কিছু বললে নাক ফাটায় দেই।তো ছেলের ভাগ্য ভালো নাক ফাটাই নাই তবে হ্যা কোষে একটা থাপ্পড় মারছিলাম আর বলছিলাম মেয়েদের সম্মান এর কথা বলবো না বলবো মানুষকে সম্মান করতে শিখেন।সে হা করে তাকিয়ে আছে।আমি চলে আসি।৩/৪ দিন পরে শুনি তোমার ছেলে না অন্য কেউ আমাকে টিজ করেছিলো বেশ লজ্জা পেয়েছিলাম।পরে অনেক খোজ করে তোমার ছেলের হোষ্টেল বের করলাম তারপর তাকে সরি বলে আসলাম।
সে শুধু হেসেছিলো।
আমি অবশ্য মন থেকেই সরি বলেছিলাম যাকে আমি সরি বলি তার জন্য আমি একটা বই নিয়ে যাই।তার জন্য ও নিয়ে গেছিলাম হুমায়ূন আহমেদ এর নির্বাসন বই টা।
তারপর এক সপ্তাহ পর দেখি Somudra Ahmed নামের একটা আইডি থেকে ফেসবুক এ রিকুয়েস্ট আসেছে।প্রোফাইল ঘেটে দেখি যাকে আমি থাপ্পড় মারছিলাম সে।একসেপ্ট করলাম।টুকটাক চ্যাটিং হইতো। তারপর সেটা আর টুকটাক না বেশ অনেকটাই ছিলো।বুঝতে পারলাম দূর্বল হয়ে যাচ্ছিলাম দুজন দুজনের প্রতি আমি সরে আসতে চাচ্ছিলাম।২/৩ দিন কথা হয় নি ওর সাথে। পরের দিন দেখি কলেজে আছে।আমি এভোয়েট ই করছিলাম।তাই কথা বলি নাই।ক্লাসে ঢুকে গেছি।২টায় রুম থেকে বের হয়ে দেখি ও ওখানেই বসে আছে, তখন দাড়িয়েছিলো এখন বসে আছে।দেখেও না দেখার ভান করে চলে আসছিলাম আমার বাড়ির গোলিতে কেউ একজন পিছন থেকে হাত টেনে ধরেছে পিছনে ঘুরে দেখি তোমার ছেলে।হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।সে বললো “সমস্যা কি ইগনোর করছো কেনো?”
__কোনো সমস্যা নেই।হাত ছাড়ুন।

ভালোবাসি তোমায়। সোজা ভাষায় বলছি। সোজা ভাবে আমার হয়ে যাও।

__আমি ভালোবাসি না আপনাকে।আমিও সোজা ভাবে বলছি আপনি ও বুঝে যান।

আমি কিন্তু বাকা ও হতে পারি।বাকা হতে বাধ্য করিও না।

সে দিন আর কিছুই না বলে চলে এসেছিলাম।
তারপর কি করে জানি কি হয়ে গেলো সম্পর্ক শুরু হয়ে গেলো।একবছর খুব ভালো যাচ্ছিলো।কিন্তু সম্পর্কর বয়স ৯মাস ৯ দিন তখন ই খুব ঝামেলা শুরু হলো দুজন এর।তোমার ছেলে ব্যাস্ত ছিলো আগেও কিন্তু তখন আর ও বেশি ব্যস্ত হয়ে গেলো পরে শুনলাম আমাদের এক ফ্রেন্ড এর সাথে ওকে প্রায় ই দেখা যায়।ওকে কিছু বললে এমন একটা বিহ্যাভ করতো যে থাকলে থাকো না থাকলে চলে যাও তুমি থাকা বা না থাকাতে আমার কিছু যায় আসে না।এভাবেই চলে যাচ্ছিলো আর দিন দিন ওর ব্যস্ততা ও অনেক বেড়ে যাচ্ছিলো।সময় আমি তার কাছে পেতাম ই না।একদিন দেখি আমার ফ্রেন্ড মানে রাহার সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ ভাবেই পার্ক এর দোলনায় দোল খাচ্ছে।আমি ওকে দেখিয়ে দেখে চলে আসি আমি আমি ওকে দেখিয়েছি আমি তোমাকে অন্য কারো সাথে দেখেছি।রাতে ফোন দিচ্ছিলাম ১১টা থেকে ১টা পর‍্যন্ত তার কল ওয়েটিং সেদিন আর কল দেই নি।সকালে কল দিয়ে বলেছিলাম দেখা করতে পারবা? কলেজে?
সে বলছিলো পারবে না সে ব্যস্ত আছে।কিন্তু সে দিনেই সে রাহার সাথে ঘুরতে গিয়েছিলো কাকতালীয় ভাবে আমি আর আমার কিছু ফ্রেন্ডস ও সেখানে যাই।বেশ ঘনিষ্ঠ অবস্থাতে তাদের আবার দেখলাম এইবার তোমার ছেলে রাহার শাড়ির কুচি আর হাতে চুড়ি পরিয়ে দিচ্ছিলো।

আমি চলে এসেছিলাম।কারন আমি এগুলো দেখতে প্রস্তুত ছিলাম না।সে কপালে চুমু দিতেও বাকি রাখে নি। সেদিন আমার রাতেও ফোন দিয়ে দেখি ওয়েটিং।১১টা থেকে ১;২৩ পর‍্যন্ত।আমি কল দিলাম রিসিভ করে গালি দিলো বললো দেখছো না ব্যস্ত আছি।আমি বেশ ঠান্ডা গোলায় বললাম। আচ্ছা আর ফোন দিবো না।কিন্তু এতক্ষণ কার সাথে কথা বলছিলে। সে বললো “সব তোমাকে বলতে হবে? তুমি কি আমাকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছো? আমি আর কিছু না বলে কল রেখেদিলাম।সেদিন রাতে অনেক কেঁদেছিলাম রোজ রাতেই চোখ গরিয়ে জল পরতো কিন্তু সে রাতে কেনো জানি বেশি ই পরেছিলো।তবে সেরাতের কান্না টা অনেক শক্ত করেছিলো আমায়। এভাবেই ১মাস কেটে গেলো।কথা হয় না বললেই হয়।দিনে হয় ১০মিনিট ও আমাদের কথা হয় না।কিন্তু সে রোজ রাহা কে নিয়ে বের হয়।আমার ফ্রেন্ড রা কল দিয়ে যানায় অনেকে তো ছবি ও পাঠায় দেয়।১বছর হয়ে গেছিলো সম্পর্কর আমাদের।বেশ বুঝতে পারলাম সে আমার আমাকে চায় না।আমার সরে আসা উচিৎ তাই চলে গেছিলাম।এখন ওকে তো আর অন্য কারো সাথে দেখেতে পারবো না তাই ভাইয়া ভাবিকে বললাম আমাকে তোদের সাথে নিয়ে আয়।পড়াশুনা টা এখানেই করি পরিক্ষা টা ওখানে দিবো।বাবা মা ও বুঝতে পারছিলো তাদের মেয়ের কিছু একটা হয়েছে।
তাই তারা ও আর বাধা দিলো না।চলে এলাম।তাই তারা ও আর বাধা দিলো না।চলে এলাম।তাই তারা ও আর বাধা দিলো না।চলে এলাম।আইডি ডিলিট করে দিলাম, নাম্বার চ্যাঞ্জ করে ফেললাম।ভাস্তি,ভাই, ভাবি আর বই নিয়ে ভালোই দিন যাচ্ছিলো।ফাইনাল এক্সাম চলে এলো গেলাম আবার ওখানে গিয়ে বেশ অবাক হলাম শুনালাম সমুদ্র নাকি রাহাকে সবার সামনে প্রপোজ করেছে।অনেকের সামনে রাহাকে বউ বলে পরিচয় দিয়েছে।পরিক্ষা দিচ্ছিলাম শেষ পরিক্ষার দিন সমুদ্রর সাথে দেখা হয়ে গেলো।হেসে হেসেই জিজ্ঞাস করলাম কেমন আছেন?সে বললো ভালো।আমিও আর কথা বাড়ালাম না।চলে আসছিলাম কিন্তু খুব ইচ্ছা করছিলো ওর কাছে থাকতে।আবার পিছনে ঘুরে দেখি রাহা আর ও হাত ধরে আসছে।আমাকে দেখে সমুদ্র হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।আমি একটা হাসি দিয়ে চলে এসেছিলাম আর মনে মনে বলেছিলাম “ভালো থেকো মশাই”।তারপর প্রায় ২বছর পর দেখা তোমাদের বাসায় এই তো।আর ও অনেক কিছু আছে যেগুলো তোমাকে বলতে পারবো না।দেখাতেও পারবো না।
লক্ষ করলার আমার চোখ বেয়ে পানি পরছে আন্টির ও।উনি ইমোশনাল মানুষ তো তাই।
আর চাই না গো কিছু বলতে আমি ঘুমোবো।যাও তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে যাও।
ঘুমিয়ে গেছিলাম হঠাত করেই ৩টায় ঘুম টা ভেঙে গেলো দেখি গ্লাস জগ সব ফাকা।পানি ও খেতে ইচ্ছে করেছে।তাই উঠে কিচেনে যাচ্ছিলাম দেখি সমুদ্রর ঘরের লাইট জ্বলছে। কি করছে ও?
রুম এ গিয়ে দেখি সে বিয়ারের বোতল নিয়ে বসেছে। এক হাতে সিগারেট অন্য হাতে বিয়ার।আল্লাহ্‌ আন্টি দেখলে তো কষ্ট পাবে।আমি রুম এ ঢুকেই ওর দরজা বন্ধ করে দিলাম।
সে তাকিয়ে আছে আর বললো
কেনো জানি মনে হচ্ছিলো তুমি আসবে।
__আপনার কি মাথা খারাপ হয়েছে? আপনি বাসায় ড্রিংক করছেন?

হুম করছি তো (উঠে আসতে আসতে বলছে ভালো করে দাড়াতেও পারছে না।পরে যেতে ধরছিলো আমি গিয়ে ধরলাম)
__হুম তা তো দেখতেই পাচ্ছি।আন্টির কথা তো একবার ভাবতে পারতেন।
সে আমাকে বুকের মধ্যে টেনে বলবো “নীরা আর পারছি না”
__আর পারতে হবেও না।আমি খুব তাড়াতাড়ি আপনাদের বাসা ছেড়ে দিবো।
সে আর ও শক্ত করে জরিয়ে নিয়ে বললো।আমাকে কি মেরে ফেলতে যাও তাহলে একবারেই মেরে ফেলো।
আমি জবাব না দিয়ে ওনাকে শুইয়ে দিলাম।সে ঘুমিয়ে ও গেলো।
রুম টা পরিষ্কার করে দিলাম।দিয়ে লাইটস অফ করে দিয়ে বের হতে যাবো এমন সময় সে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বললো “নীরা ভালোবাসি।”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here