রোমান্টিক ডাক্তার,পার্ট: ২৯
লেখিকা: সুলতানা তমা
আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকিয়ে চারপাশে চোখ বোলালাম, আমি তো হসপিটালে আছি। একটু দূরে একজন নার্সকে দেখে ডাক দিলাম।
নার্স: জ্বী বলুন।
আমি: আমাকে হসপিটালে কে নিয়ে আসলো?
নার্স: একটি মেয়ে।
আমি: ওহ, মেয়েটি কোথায়?
নার্স: পাশের কেবিনে, উনার আম্মু অসুস্থ সেখানেই আছেন।
আমি: হুম।
নার্স: দাঁড়ান আমি মেডামকে ডেকে দিচ্ছি।
নার্স বেরিয়ে গেলো। চুপচাপ শুয়ে আছি মেয়েটিকে ধন্যবাদ দিবো নাকি বকা দিবো বুঝতে পারছি না। মেয়েটি তো আমাকে বাঁচালো কিন্তু আমার তো বাঁচার ইচ্ছে ছিল না। কাব্য’কে অন্য মেয়ের সাথে দেখার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো ছিল। আমি কাব্য’কে আমার সবটুকু দিয়ে ভালোবেসেছি কিন্তু কাব্য আমাকে বারবার ঠকিয়েছে ওর এমন ভালোবাসার চেয়ে মৃত্যুই ভালো ছি…
নার্স: এইযে মেডাম পেসেন্ট এর জ্ঞান ফিরেছে। (নার্স এর কথা শুনে দরজার দিকে তাকালাম, ডাক্তারকে দেখে লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়লাম)
নার্স: আরে পাগল নাকি আপনি অসুস্থ আর লা…
আমি: আম্মু। (আমার মুখে আম্মু ডাক শুনে নার্স আর আম্মু দুজনই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি কাব্য’র আম্মুকে পেয়ে গেছি, আল্লাহ্ আমার হিয়াকে দেয়া কথা রাখার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাড়াতাড়ি ঘড়ির দিকে তাকালাম দুপুর দুইটা বাজে তারমানে হিয়ার বিয়েটা এখনো হয়ে যায়নি, আমার কথা রাখার সুযোগ সময় দুটোই আছে এখন)
আম্মু: মা তুমি ঠিক আছ তো? আম্মু কাকে ডাকছ? এখানে তো কেউ নেই। (উনি আমার কাছে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। উনার হাতটা আমার হাতের মুঠোয় এনে উনার চোখের দিকে তাকালাম)
আমি: আপনাকেই আমি আম্মু ডেকেছি।
আম্মু: কিন্তু কেন? (আমার দিকে বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন উনি)
আমি: কারণ আপনি কাব্য’র আম্মু আর আমার শাশুড়ি মা। (চমকে উঠলেন উনি, নিজের হাতটা এক ঝটকায় আমার হাতের মুঠো থেকে ছাড়িয়ে নিলেন)
আম্মু: কিকিকিকি ববললছ এসব?
আমি: আম্মু আমি সত্যি বলছি আমি আপনার ছেলের বউ আর আপনার হিয়ার আজ বিয়ে।
আম্মু: হিয়া বড় হয়ে গেছে? হ্যাঁ হবেই তো কতো বছর হলো ওদের দেখিনা।
আমি: আম্মু আপনি যাবেন হিয়ার বিয়েতে? (উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন তারপর বেশ কিছুটা রাগ নিয়েই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন…)
আম্মু: আজ হিয়ার বিয়ে অথচ তুমি এক্সিডেন্ট করে রাস্তায় পড়েছিলে কেন? (এখন কি বলবো আম্মুকে? কাব্য খারাপ এইটা জেনে বাসা থেকে চলে এসেছি? কিন্তু এসব বললে তো উনি কষ্ট পাবেন)
আম্মু: চুপ হয়ে আছ কেন? আর কাব্য কোথায়? বিয়ে করে ফেলেছে আর এইটা জানেনা এই সময় বউয়ের খেয়াল রাখতে হয়। রাস্তায় একা একা বেরুতে দিয়েছে কেন? (উনার কথা শুনে কেমন যেন লাগলো তাই আস্তে করে প্রশ্নটা করেই ফেললাম)
আমি: আম্মু এই সময় মানে?
আম্মু: বোকা মেয়ে এইটাও বুঝনা তুমি তো মা হবে। (কথাটা শুনে পাথরের মূর্তির মতো বসে আছি। আজকের এমন পরিস্থিতে এমন একটা খবর শুনতে হবে আমাকে কখনো ভাবিনি)
আম্মু: বৌমা কি হলো তুমি কি খুশি হওনি? (আম্মুর ধাক্কায় উনার দিকে তাকালাম উনি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। ঝাপটে ধরলাম আম্মুকে)
আম্মু: আরে পাগলী মেয়ে কাঁদছ কেন? এইটা তো খুশির খবর আমি দাদি হবো।
আমি: আম্মু আমার আগের বাচ্চাটা পৃথিবীতে আসার আগেই মারা গিয়েছিল আর এখন এমন খুশির খবরটা শোনার জন্য আপনার ছেলেই আমার পাশে নেই।
আম্মু: পাশে নেই মানে?
আমি: এসব অনেক কথা পরে বলবো আপনি হিয়ার বিয়েতে যান প্লিজ। আমি হিয়াকে কথা দিয়েছিলাম আপনাকে আর আব্বুকে খুঁজে বের করবো আর ওর বিয়েতে আপনারা দুজনই থাকবেন, আল্লাহ্ যখন আমার দেয়া কথা রাখার সুযোগ করে দিয়েছেন তাহলে আপনি যান প্লিজ।
আম্মু: হ্যাঁ যাবো আমি অনেক খুঁজেছি ওদের কিন্তু তার আগে আমাকে জানতে হবে আমার বউমা এক্সিডেন্ট করে রাস্তায় পড়েছিল কেন।
আমি: আম্মু বললাম তো এসব অনেক কথা পরে বলবো সবকিছু আপনি এখন যান আমি বাসার ঠিকানা বলে দিচ্ছি।
আম্মু: এক মেয়ের ইচ্ছে পূরণ করার জন্য অন্য মেয়েকে আমি এখানে এই অবস্থায় ফেলে রেখে যেতে পারবো না। তুমি আমাকে সবকিছু বলো তারপর আমি যাবো।
আমি: ঠিক আছে।
আম্মুকে একের পর এক ঘটে যাওয়া সবগুলো ঘটনা বললাম। আম্মু সবকিছু শুনে চুপচাপ বসে আছেন, আমি আম্মুর কাধে মাথা রেখে বসে আছি।
আমি: আম্মু সব তো শুনলেন তারপরও কি আপনি চাইবেন আমি আপনার ছেলের কাছে ফিরে যাই?
আম্মু: তোমার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে কাব্য তোমাকে অনেক ভালোবাসে আর যে এতো ভালোবাসে সে কখনো এভাবে নিজের ভালোবাসার মানুষকে ঠকাতে পারে না, কিছু তো একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে তোমাদের মধ্যে।
আমি: আম্মু আমি নিজের চোখে ডাক্তারবাবু কে আরশির সাথে দেখেছি।
আম্মু: হয়তো তোমার চোখের দেখার মধ্যেও কোনো ভুল ছিল।
আমি: এইটা কিভাবে সম্ভব?
আম্মু: দুজনই তো দুজনকে ভালোবাস তাহলে কথা বলে সব ভুল বুঝাবুঝি মিটিয়ে নিচ্ছ না কেন? এভাবে একে অন্যের থেকে দূরে সরে যাচ্ছ কেন?
আমি: এতোকিছুর পর আর একসাথে থাকা সম্ভব না আম্মু। এখন আমাদের আলাদা হয়ে যাওয়াটাই ঠিক হবে।
আম্মু: কথাটা বলা সহজ কিন্তু আলাদা হয়ে বেঁচে থাকাটা খুব কঠিন। খুব সহজেই প্রিয় মানুষদের ছেড়ে যাওয়ার কথাটা বলা যায় কিন্তু তাদের ছাড়া বেঁচে থাকাটা এতটুকুও সহজ না।
আমি: আম্মু আমি পারবো না ওর সাথে থাকতে।
আম্মু: কাব্য’র প্রতি অভিমান জমেছে তো তোমার মনে যখন অভিমান চলে যাবে তখন বুঝবে কি হারিয়েছ। জানো তো মা অভিমান জিনিসটা খুব অদ্ভুত, এইটা দুজন মানুষকে খুব কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে আবার এই অভিমানই দুজন মানুষকে আলাদা করে দিতে পারে। একজন অভিমান করলে অন্যজন সেটা যত্ন করে ভালোবাসা দিয়ে ভাঙিয়ে নিলে তবেই দুজন মানুষ কাছাকাছি আসতে পারে আর দুজন মানুষই যদি অভিমানটা মনের মধ্যে পুষে রাখে তাহলে দুজনকে আলাদা হয়ে যেতে হয়। এখন তুমি ভেবে নাও কি করবে।
আমি: (নিশ্চুপ)
আম্মু: মনে রেখো ছোট একটা ভুল সিদ্ধান্ত জীবনের সবকিছু উলটপালট করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভাবা উচিত এই কাজটা ঠিক হবে কিনা বা এই কাজের পরিণতি পরবর্তীতে কি হবে। এই আমাকেই দেখো না নিজের কাজ কাজ বলে পরিবারের মানুষ গুলোকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম। কাব্য’র বাবাকে ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তখন অবশ্য বিষয়টা নিজের কাছে খুব তুচ্ছ মনে হয়েছিল কিন্তু সবকিছু হারানোর পর বুঝেছিলাম সামান্য একটা ভুল সিদ্ধান্ত যে আমার সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। আর এই একটা ভুল সিদ্ধান্তের কষ্ট আমি আজো বয়ে বেড়াচ্ছি।
আমি: আর কষ্ট পেতে হবে না আম্মু। আব্বুকে তো পেয়েছি আপনি বাসায় যান সবাইকে পেয়ে যাবেন। আবার নাহয় নতুন করে আপনার সংসার সাজাবেন।
আম্মু: আমার ভাঙ্গা সংসারটা জুড়ে দিলি মা? (মৃদু হাসলাম)
আমি: আমার ডাক্তারবাবুকে দেখে রাখবেন আম্মু।
আম্মু: এখনো সময় আছে মা পরে কিন্তু দেরি হয়ে যাবে।
আমি: বাসার ঠিকানা দিচ্ছি আপনি চলে যান।
আম্মু: হুম যাচ্ছি কিন্তু একটা কথা মনে রেখো যে আমার ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়া সংসারটা জুড়ে দিয়েছে তার সংসার আমি কিছুতেই ভাঙতে দিবো না। (আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলেন)
চোখ দুটু বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে আছি। মাথায় ভালোভাবেই আঘাত লেগেছে উঠে যে চলে যাবো এই শক্তি টুকু নেই তাছাড়া আম্মু একজন নার্সকে আমার কাছে রেখে গেছেন। কাব্য’র কাছে আর ফিরে যেতে চাই না একটু সুস্থ হলেই এখান থেকে আমাকে চলে যেতে হবে।
নার্স: এইতো উনি এসেছেন, এই মেয়েটিই আপনাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছিলেন। (নার্স এর কথা শুনে চোখ খুলে সামনে তাকালাম। চমকে উঠলাম শুভ্রাকে দেখে, শুভ্রা আমাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে কিন্তু…)
শুভ্রা: তিলোত্তমা উঠো না তুমি অসুস্থ।
আমি: তুমি?
শুভ্রা: অবাক তো হবারই কথা তোমার শত্রু তোমাকে বাঁচালো।
আমি: (নিশ্চুপ)
শুভ্রা: শেষ পর্যন্ত আরশির কাছে হেরেই গেলে, ওর কাছে তোমার ডাক্তারবাবুকে তুলে দিয়ে আসলে?
আমি: মানে?
শুভ্রা: আমি জানতাম তুমি খুব চালাক মেয়ে কিন্তু আরশির ছাল ধরার মতো এতোটা চালাক তুমি নও।
আমি: কি বলতে চাইছ?
শুভ্রা: বলতে চাইছি এটাই কাব্য তোমাকে ঠকায়নি ও তোমাকে সত্যি ভালোবাসে। তুমি যা দেখে কাব্য’কে ভুল বুঝেছ এসবকিছু আরশির ছাল ছিল।
আমি: তুমি জানো কিভাবে আর তুমি হঠাৎ আরশির বিপক্ষে কথা বলছ যে?
শুভ্রা: পাপ করেছিলাম তো তাই শাস্তি পেয়েছি, আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আর তাই আমি চাই না আরশির জন্য তোমার আর কাব্য’র সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাক। আরশি তোমাকে ভুল বুঝিয়েছে যেন তুমি কাব্য’কে ভুল বুঝে ডিভোর্স দিয়ে দাও।
আমি: আমি সবকিছু নিজের চোখে দেখেছি আর গতরাতে তো তুমিই পিক দিলে।
শুভ্রা: হ্যাঁ দিয়েছিলাম কিন্তু পিক গুলো দেওয়ার পর আর কিছু বলতে পারিনি তোমাকে, আরশির লোক এসে আমার ফোন কেড়ে নিয়েছিল আর আম্মুকে…
আমি: কি করেছে আন্টিকে?
শুভ্রা: মাথায় আঘাত করেছিল আম্মু পাশের কেবিনে আছেন। তিলোত্তমা প্রত্যেক মানুষেরই কিছু অতীত থাকে, কারো ভালো আবার কারো খারাপ। কাব্য’র অতীতটা খারাপ ছিল আর সেটা আরশির জন্য। যে ছেলে ছোটবেলা থেকে বাবা মায়ের মধ্যে জামেলা দেখেছে তাদের ভালোবাসা পায়নি সে ছেলে তো একটুখানি ভালোবাসা পেলে অন্ধ হবেই। আরশির ভালোবাসা কাব্য’কে অন্ধ করে দিয়েছিল তাই কাব্য আরশির কথামতো চলতো। এখন তুমি যদি কাব্য’র অতীত নিয়ে ভেবে ওকে ছেড়ে চলে যাও তাহলে কাব্য কার কাছে যাবে? কাব্য কিন্তু ওর নোংরা অতীত গুলো তোমাকে পেয়ে ভুলতে বসেছিল এখন তুমি ওকে ছেড়ে চলে গেলে তো ও আবারো খারাপ…
আমি: খারাপ তো ও হয়েই গেছে রাতে যা দেখেছি তারপর আর সম্ভ…
শুভ্রা: ভুল দেখেছ, তুমি রাতে যা দেখেছ সব মিথ্যে ছিল।
আমি: মানে?
শুভ্রা: আরশি গতরাতে আমাকে ফোন করে যা যা বলেছে সবকিছু আমি রেকর্ড করেছি তুমি একবার শুনো তাহলেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে তোমার কাছে। (শুভ্রার দিকে তাকালাম কি বলতে চাইছে ও)
শুভ্রা: তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না জানি কিন্তু অনুরোধ করছি প্লিজ একটা বার আমার কথা শুনো। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি আমি চাই না আরশির মতো খারাপ মেয়ের কাছে তোমাদের ভালোবাসা হেরে যাক।
আমি: আমি কাব্য’কে নিজের চোখে অনেক বার আরশির সাথে দেখেছি।
শুভ্রা: তুমি আগে ওকে কিভাবে দেখেছ সেটা তো আমি জানিনা তবে তুমি রাতে যা দেখেছ সব মিথ্যে ছিল। আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলতো, তুমি যখন ওদের একসাথে দেখেছিলে তখন কি কাব্য’র নড়াচড়া দেখেছ?
আমি: নাতো।
শুভ্রা: দেখবে কিভাবে কাব্য’কে তো আরশি অজ্ঞান করে দিয়েছিল। কাব্য এসব কিছুই জানতো না, ও হসপিটালের ফোন পেয়েই ছুটে গিয়েছিল। ইমারজেন্সি থেকে যখন ফোন আসে কোনো পেসেন্ট এর অবস্থা খারাপ তখন একজন ডক্টর কখনোই বসে থাকতে পারে না। কাব্য তো জানতো না ফোনটা আরশি করিয়েছিল তাই কাব্য না বুঝে আরশির ফাদে পা দিয়েছে। আর তুমি বোকার মতো ওকে আরশির কাছেই রেখে আসলে। (শুভ্রার কথা শুনে মাথা ঘুরছে, সত্যিই তো কাব্য’র হাতটা পর্যন্ত একবারের জন্য নড়েনি। আমি অয়নের সাথে ফোন নিয়ে এতো চেঁচামেচি করলাম তাও কাব্য কেন কোনো সাড়া দেয়নি এই প্রশ্নটা একবারো আমার মনে জাগলো না, আমি এতোটাই বোকা)
আমি: শুভ্রা তোমার ফোনটা দাও না কাব্য’কে ফোন করবো।
শুভ্রা: কিন্তু কাব্য তো এখন হিয়ার বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত ফোন কি রিসিভ করবে?
আমি: তাহলে আমি বাসায় চলে যাই।
শুভ্রা: আরে শান্ত হও এই অবস্থায় বাসায় যেতে পারবে না, তুমি বরং ফোনই করো দেখো রিসিভ করে কিনা।
আমি: হুম।
কাব্য’কে বারবার ফোন করে যাচ্ছি কিন্তু রিসিভ করছেই না। আম্মু ঠিকি বলেছেন আমার চোখের দেখায়ও ভুল ছিল। আমি আমার কাব্য’কে এতো খারাপ ভাবলাম কিভাবে? এইতো কাব্য ফোন রিসিভ করেছে…
কাব্য: শুভ্রা কি হয়েছে তোমার এতোবার ফোন দিচ্ছ কেন?
আমি: ডাক্তারবাবু আমি।
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: আমাকে বাসায় নিয়ে যাও প্লিজ।
কাব্য: চলেই যখন গেছ তখন আর ফিরে আসতে চাইছ কেন?
আমি: মানে?
কাব্য: তোমাকে আমি একটা কথা বলেছিলাম চোখে সবসময় যা দেখা যায় তা সবসময় সত্যি হয় না কিন্তু তুমি আমার কথাটা শুননি বিশ্বাস করনি আমাকে, আমার ভালোবাসার প্রতি তোমার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই, থাকলে তুমি আমাকে এতোটা খারাপ ভাবতে না। হ্যাঁ আমি আগে খারাপ ছিলাম কিন্তু সেটা আমার অতীত ছিল, এখন আমি তোমাকে ভালোবাসি তিলো। তুমি ভাবলে কিভাবে আমি আরশির সাথে… ছিঃ
আমি: আমার কথাটা শুনো…
কাব্য: কিছু শুনার নেই তুমি আমাকে অবিশ্বাস করেছ এটাই সত্যি, তুমি চোখের দেখাটাকে সত্যি ভেবে আমাকে অজ্ঞান অবস্থায় আরশির কাছে ফেলে এসেছিলে, পিক তুলে অয়নকে দিয়েছ আর ও বাসায় সবাইকে এসব দেখিয়েছে। আমি অতীত ভুলে গিয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমার অতীত গুলো টেনে এনে আমার পরিবারের সামনে তুলে ধরেছ। পিক গুলো দেখে আমার মতো ভাইয়ের বোন হওয়াতে হিয়ার মনে ঘৃণা জন্মেছিল আর সে কারণে হিয়া সুইসাইড করতে গিয়েছিল। হিয়ার এই অবস্থার জন্য তুমি দায়ী।
আমি: কি? হিয়া ঠিক আছে তো?
কাব্য: আর আমাদের নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। তোমার ডাক্তারবাবু খারাপ খুব খারাপ এই ধারণা নিয়েই তুমি দূরে থাকো আমি তোমার মুখও দেখতে চাই না।
ফোনটা কেটে দিলো কাব্য। কাব্য তো আমায় ভুল বুঝেছে এখন আমি কি করবো?
শুভ্রা: সবকিছুর জন্য আমি দায়ী আমাকে ক্ষমা করে দিও।
আমি: তুমি তো সবকিছু করোনি করেছে আরশি।
শুভ্রা: আমি তো কিছুটা অন্যায় করেছি।
আমি: যে নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয় তাকে ক্ষমা করে আরেকবার সুযোগ দেওয়া উচিত, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।
শুভ্রা: হিয়ার এমন অবস্থা তো তাই কাব্য’র মাথা ঠিক নেই দেখো ও তোমার কাছে ছুটে আসবেই। কাব্য তোমাকে সত্যি ভালোবাসে।
আমি: আন্টির কাছে যাও খেয়াল রেখো আন্টির।
শুভ্রা: হুম।
বালিশে হেলান দিয়ে চুপচাপ বসে আছি কাব্য আমাকে ভুল বুঝেছে ভেবে খুব কান্না পাচ্ছে। কাব্য’কেও তো দোষ দিতে পারছি না, হিয়ার এমন অবস্থায় কাব্য’র মাথা ঠিক আছে নাকি? আমারই বা দোষ কোথায় চোখের সামনে যা যা দেখেছি তাতে তো কাব্য’কে খারাপ ভাবাটাই স্বাভাবিক। কাব্য আমাকে বারবার বলেছিল ও শুধু আমাকেই ভালোবাসে কিন্তু আমি ওকে শুধু ভুল বুঝে এসেছি আর আজ কাব্য আমার মুখও দেখতে চায় না। আমি তো আর কাব্য’র কাছে ফিরে যেতে পারবো না কাব্য আমাকে ফিরিয়ে নিবেও না। কাব্য’কে তো আমাদের বাচ্চার কথাটাও বলতে পারলাম না। প্রথম বাচ্চাটা নিজেদের ভুলে হারালাম আর এখন কাব্য পাশে নেই।
পেটে হাত রেখে ডুকরে কেঁদে উঠলাম, পৃথিবীতে আসার আগেই আমার সন্তানকে বাবার পরিচয় হারাতে হবে নাতো…
চলবে?