জ্বীনবর৩,পর্বঃ১১,১২

0
2300

জ্বীনবর৩,পর্বঃ১১,১২
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা

কাধে পড়া থাকা শাড়িটা কিছুটা ভিজে আছে। হাত দিয়ে দেখলাম এটা উনার চোখের পানিতে ভিজে গেছে। ছেলেটা এত কাদছে কেন? কিসের এত কষ্ট তার? ভেতরটা কেমন ছটফট করতে লাগল। ভোর হয়ে আসছে উনি এখনো ফিরলেননা। মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছিলাম, উনি যেন তাড়াতাড়ি ফিরে আসেন। এমনসময় ফজরের আযান দিল।
এই কয়দিনে নামায পড়া কিছুটা আয়ত্ব করতে পেরেছি। উঠে ওযু করে নামায পড়লাম। মোনাজাতে আল্লাহকে বললাম,
” উনার সব কষ্ট দূর করে দিন আপনি। আপনি তো রহমতের মালিক, সবার সৃষ্টিকর্তা, আপনি চাইলে কিনা করতে পারেন। আমরা তো কেবল আপনার বান্দা। আজ আপনার কাছে হাত পেতে এক নিকৃষ্ট বান্দী তার স্বামীকে সহীহ সালামতে ফিরে আসার জন্য প্রার্থনা করছে। আপনি তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিবেন না। উনাকে নিরাপদে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন।”
মোনাজাত করতে করতে যখন যে চোখের পানি ঝড়ে হাতে পড়ল বুঝতে পারলামনা। এটাও বুঝতে পারলামনা, আমি কাদছি কেন? এই প্রথম মোনাজাতে কারো জন্য চোখের পানি ফেললাম। ভাবতেই সশব্দে কান্না পেয়ে গেল। কান্না চেপে রাখতে না পেরে সিজদায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম।
এমন সময় রুমের দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম। নিজের অজান্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠল। উনি ফিরে এসেছেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম।
উনি ঠিকিই বলেছেন, কেউ যদি আল্লাহর কাছে হাত পেতে কিছু চায়, উনি তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। শোকরানাস্বরুপ আরো দুই রাকাত নফল নামায পড়লাম।
তারপর উঠে ছুটে গেলাম শোবার রুমে। উনি ক্লান্তিমাখা মুখ নিয়ে বালিশে মুখ রেখে আড়াআড়িভাবে শুয়ে ঘুমাচ্ছেন। সেই মূহুর্তটা আমার জন্য যে কেমন আনন্দের ছিল, তা ভাষায় প্রকাশের নাহ। মানুষটার মুখ কেমন লাল হয়ে আছে, চোখটা ফুলে আছে, ক্লান্তিভরা আবেশ মুখে সবমিলিয়ে অন্যরকম লাগছিল তাকে। ইচ্ছে করছিল মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে একটা চুমু একে দেই।
ছি! ছি! এসব কি ভাবছি আমি। দিন দিন কি সব লজ্জা উঠে যাচ্ছে আমার।
ঘুমোন উনি, আমি বরং উনার জন্য একটা কফি বানিয়ে রাখি। উঠে খেলে ক্লান্তিটা কমে যাবে।
রান্নাঘরে চা-কফি বানাতে গেলাম। খুশি হয়েছি ঠিকিই তারপরো মনটা ভার হয়ে আছে। কাজ করতে করতে কেমন জানি অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছি, চোখের সামনে উনার কাদার দৃশ্যগুলো ভাসছে শুধু। উনি ঘুম থেকে উঠলেও উনাকে এসব জিজ্ঞেস করার সাহস আমার হবেনা, আর আমার-উনার এমন রিলেশান নেই যে উনি নিজে থেকে আমাকে কিছু বলবেন।
তবে কিভাবে জানব উনি কেন কেদেছিল? না জানা অবধি তো শান্তি পাচ্ছিনা। আসল ব্যাপারটাই বুঝতে পারছিনা আমি কেন উনার ব্যাপারে এত সেন্সিটিভ? উনি কাদুক বা হাসুক তাতে আমার কি এসে যায়?
তাহলে কেন এমন হচ্ছে? উনার কান্নার কথা মনে পড়লে মনে হয় কলিজাটা ফেটে বুক ছিড়ে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। আচ্ছা দাদু কি এসব ব্যাপারে কিছু জানেন? উনি কি বলতে পারবেন কেন কাদছে!
চা নিয়ে দাদুর কাছে গেলাম। উনি কুরআন তিলওয়াত করছিলেন, আমাকে দেখে সেটা গুছিয়ে রেখে চাটা হাতে নিলেন। আমাকে এমন অন্যমনস্ক দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে দাদু তোমার? এমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে যে?
— একটা ব্যাপার নিয়ে খুব চিন্তিত আমি দাদু। ব্যাপারটা মন থেকে কিছুতেই সরাতে পারছিনা। তাই একটুও শান্তি লাগছেনা।
— কি ব্যাপার? আমাকে বলতে পারো?
— কাল মাঝরাতে উনাকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে দেখলাম। কিন্তু হুট করে কিছু না বলে কান্নারত অবস্থায় ই বের হয়ে গেলেন। ভোরে নামায শেষ হওয়ার পর রুমে আসলেন। উনার কান্নাটা দেখে মনে হল উনি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছেন।
অনেক দুঃখ তার।
— আসার পর তুমি ওকে কিছু জিজ্ঞেস করেছো?
— না দাদুহ। আমার নামায শেষ হতে হতে উনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তাই আর বিরক্ত করিনি। আপনি কি জানেন এর কারণ কি?
দাদু কিছুটা আমতা আমতা করে বললেন,
— আর বলোনা, ও হয়ত কোনো বাজে স্বপ্ন দেখেছে। ও তো মাঝে মাঝে এমন করে। খারাপ স্বপ্ন দেখলে অনেক কান্নাকাটি করে, বাসা থেকে বেরিয়ে এদিক সেদিক উদ্দেশ্যহীনভাবে হাটতে থাকে। মন হালকা হলে বাসায় ফিরে ঘুম দেয়।
আমার মনে হয় তেমনি কোনো বাজে স্বপ্ন দেখেছে তাই এমন করেছে।
তুমি চিন্তা করোনা।
— আচ্ছা। বলে মাথা নাড়ালাম। দাদু বলাসত্ত্বেও আমার মনের খুতখুত টা যাচ্ছেনা। খারাপ স্বপ্ন দেখে কেউ এভাবে কাদতে পারে জানা ছিলনা।
দাদু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
— ওকে এসব নিয়ে আর কিছু জিজ্ঞেস করোনা। মনে পড়লে মন খারাপ করে থাকবে। আর আগেও বলেছি ও একটু অন্যরকম। সামান্য ব্যাপারগুলোতে ও খুব সিরিয়াস। যাই হোক, তুমি টেনশান করোনা।

আমি ছোট মুচকি হেসে দাদুর রুম থেকে বেরিয়ে পড়লাম। এতক্ষণে বোধহয় ঘুম ভেঙ্গে গেছে। সেই ভেবেই কফি নিয়ে রুমে ঢুকলাম। উনি তো এখনো ঘুমাচ্ছে। রাতে ঘুম ভালো হয়নি নিশ্চয়ই। কফিটা ঢাকা দিয়ে বেডটেবিলের পাশে রেখে চলে যাচ্ছিলাম। এমন সময় দেখি উনি বিড়বিড় করে কি যেন বলছেন।
উনার মাথার পাশে বসে শোনার চেষ্টা করলাম।
উনি বিড়বিড় করে বললেন, মাথায় একটু হাত বুকিয়ে দিবা?
শুনে চমকে গেলাম। এই প্রথমবার আমাকে উনি তুমি বলে সম্বোধন করলেন। জানিনা কথাটায় কেমন টান ছিল। সে টান উপেক্ষা করতে না পেরে হাত দিবনা দিবনা ভেবে দিয়ে ফেললাম। হাত দিয়ে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি।
একি জ্বরে তো উনার গা পুড়ে যাচ্ছে। এত জ্বর নিয়ে উনি এভাবে শুয়ে আছেন?
দেরী না করে উনার গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিলাম। জলপট্টি এনে মাথায় লাগালাম।
কিন্তু জ্বর একটুও কমল না বরং তার হাত-পা সব ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল। উনি জ্বরের ঘোরে খুব ফোপাচ্ছিলেন। দেখে আমার ভীষণ খারাপ লাগছিল। ইচ্ছে করছিল কোনো ম্যাজিক করে উনাকে এক্ষুনি সারিয়ে তুলি।
দাদু এসে উনার এ অবস্থা দেখে ডাক্তার ডাকলেন। ডাক্তার এসে দেখে কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে চলে গেলেন। তাও অবস্থার তেমন উন্নতি হচ্ছিলনা।
সারারাত উনার মাথার পাশে বসে ছিলাম। কিছুক্ষণ পর পর মাথায় জলপট্টি দিলাম, ওষুধ খাওয়ালাম। একমিনিটের জন্যও চোখের পাতা এক করিনি।
রাতে হঠাৎ উনি আমার হাতটা উনার উষ্ণ বুকের সাথে জোরে চেপে ধরে বললেন,
— ওয়াফাহ ভালোবাসা কি সেটা আমি জানিনা। কিন্তু তোমাকে আমার ভালোলাগে, অনুভব করি। আমার প্রতিটা নিঃশ্বাস, সুখ-দুঃখের অংশীদার তোমাকে করতে চাই। আচ্ছা তুমি অনুভব করো আমাকে?

আমি ফ্যালফ্যাল করে উনার মুখের দিকে তাকালাম। কি নিষ্পাপ চেহারা! নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম, হ্যা করি। ভালোবাসি কিনা জানিনা তবে আমার প্রতিটি মোনাজাত আপনাকে ঘিরে। সব ভাবনা আপনার ভালো-খারাপ নিয়ে।
— আমাকে ছেড়ে যাবেনা তোহ?
— কখনোই নাহ। বলে উনার প্রশস্ত কপালের চুল সরিয়ে কাপা কাপা ঠোট দিয়ে ছোট একটা চুমু দিলাম। আস্তে আস্ত্র তার জাপটে ধরে রাখা হাত আলগা হয়ে আসছে। বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছেন।
হয়ত জ্বরের ঘোরে উনারা এসব কথা বলা। কিন্তু আমি সব মন থেকেই বলেছি। সত্যিই উনাকে নিয়ে আমি প্রচন্ড ভাবি, আমার প্রতিটা মোনাজাতে উনি থাকেন। উনাকে ছাড়া আমার সময়গুলো অচল। পুরো একটা দিন ঝগড়া করিনি, উনার মুখে গুন্ডি ডাক শুনিনি, উনার রেগে যাওয়া লাল টমেটো চেহারাটা দেখিনি তাতেই মনে হচ্ছে আমি প্রচন্ড রকমের রিক্তশুন্য। নিজের পৃথিবীতেই নেই।
চোখ আর টলছেনা। মনে হচ্ছে আমি অনেকদিন ঘুমাইনি। কিছুতেই খোলা রাখতে পারছিনা। ২দিন না ঘুমিয়ে থেকে কেমন জানি শরীর ম্যাজম্যাজ করছে। বেশিক্ষণ আর চোখ খোলা রাখতে পারলামনা।
ঘুম ভাঙ্গতেই আমি নিজের উনার বুকে আবিষ্কার করলাম। উনার ঠোটজোড়া আমার কপালের সাথে লাগোয়া, এক হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছেন।
আমি উনার বুকে মাথা গুজে আছি।
আস্তে করে উনার হাত সরিয়ে দ্রুত উঠে পড়লাম। ঘুমের মধ্যে কি করে ফেললাম নিজেও বুঝতে পারলামনা। উনি যদি দেখতেন কি ভাবতেন।
তাড়াতাড়ি শাড়ি পালটে নিচে চলে গেলাম উনি উঠে পড়ার আগেই। উনার সামনে পড়লে লজ্জার শেষ থাকবেনা।
.

(চলবে)

জ্বীনবর৩
পর্বঃ১২
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা

সন্ধ্যার দিকে জ্বর সারতেই উনি একটু বের হলেন। সারাটাদিন আমার সাথে তেমন কথা বললেননা, ঝগড়াও করলেননা। কেমন জানি থ মেরে আছেন। আমি সেধে সেধে কতবার কথা বললাম। হু, হ্যা,ওহ ছাড়া কোনো প্রতিউত্তর করলেননা। শুধু তার উপর আমার রাগ ই হলোনা, প্রচন্ড অভিমানও হচ্ছিল।
কেন উনি এমন করছেন বুঝতে পারলামনা? উনি কি তবে কাল রাতে আমার বলা কথাগুলো শুনে রিয়েক্ট করলেন।
হুট করে কিছু না বলে অসুস্থ শরীর নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। খুব ছটফট করছি ভিতরে ভিতরে। কখন ফিরবেন উনি? সময় যেন কাটছে ই না। ব্যালকুনিতে দোলনায় বসে দোল খেতে খেতে ২দিনের প্রতিটা ভালো মূহুর্তগুলো স্মরণ করছি। কত ভালো ছিল সময়গুলো! যদি যেকোনো মূল্যে আবার ফিরে পেতাম।
ভাবতে ভাবতে গাল বেয়ে পানি ঝড়ছিল।
এমনসময় ফিল করলাম কেউ আমার গলার খুব কাছাকাছি আছে। তার উষ্ণ নিঃশ্বাস আমার গলায় এসে পড়ছে। প্রতিটা নিঃশ্বাস আমাকে ছুয়ে দেওয়ার সাথে সাথে আমি কেপে কেপে উঠছি। চোখ খুলতে যাব তখনি সে ফিসফিস করে বলল, একদম চোখ খুলোনা। অনুভব করো।
আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত তার নিঃশ্বাস ফিল করছি। খানিকটা পর, সে আমার হাত ধরে উঠাল। চিরচেনা কন্ঠে গুনগুন করে বলল, আমি বলা ছাড়া চোখ খুলবেনা।
হাত ধরে আমাকে নিয়ে চলল সে। কিছুক্ষণ পর বলল,
— আস্তে আস্তে চোখ খুলো।
আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখি রুমের মেঝেতে গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো, সারি সারি রঙ্গিন মোমবাতি দিয়ে “ভালোবাসি” লেখা। অবাক হয়ে মুখে হাত দিতেই আমার গায়ের উপর বিভিন্ন ফুলের পাপড়ি ঝরতে লাগল। খুশি হয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই উনি সামনে দাঁড়িয়ে আমার হাত তার হাতে রেখে ৩বার ভালোবাসি বলল। আমি শুনে খুশিতে কেদে দিলাম, উনার বুকে মুখ গুজলাম।
উনি আমার থুতনিটা হাত দিয়ে তুলে বলল, আমায় ভালোবাসো গুন্ডি?
উনার বুকে মাথা রেখে বললাম, প্রচন্ড ভালোবাসি। আপনি আমাকে চিমটি কাটুন প্লীজ।
— চিমটি কাটব কেন? আমি মাথা তুলে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
— আমার সবটা খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন মনে হচ্ছে। ভয় হচ্ছে, কিচ্ছুক্ষণ পর ঘুমটা ভেংগে গেলে স্বপ্নটা আর দেখতে পাবনা।
— এটা স্বপ্ন নয় একদম সত্যি। কাল রাতে আমি কোনো কথাই জ্বরের ঘোরে বলিনি শুধু তুমি কি উত্তর দাও সেটা জানতেই বলেছি। তোমার ঝগড়া, ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চামীর প্রেমে পড়ে গিয়েছি আমি। বিশ্বাস করো, মন থেকে টান অনুভব করি তোমার জন্য। কখন যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি সেটা সত্যিই জানিনা।
— এই গুন্ডিটাও আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছে।
— কতটা?
— তার গুন্ডামির চেয়েও বেশি। শুনে মুক্তঝরা হাসি দিয়ে আমাকে কোলে তুলে ঘুরাতে লাগলেন উনি। আমি ভয় পেয়ে উনার গলা শক্ত করে জড়িয়ে বলল,
— নামান আমাকে!
— কেন?
— যদি আছাড় মেরে ফেলে দেন?
— পাগলীটাহ। অহ হ্যা, তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
— কিহ সারপ্রাইজ?
— দেখবে?
— হুম দেখান। উনি আমাকে কোল থেকে নামিয়ে ব্যালকুনির দরজা লক করলেন, তারপর রুমের দরজা লক করে আমার পাশ ঘেষে দাড়ালেন। কি করবেন উনি দরজা লক করে? আমার কেমন জানি শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে, হাত-পা কাপাকাপির পর্যায়ে চলে গেছে। এটা ভয় নাকি শিহরণ বুঝতে পারছিনা! একটা মোম জ্বালিয়ে রেখে বাকি মোমগুলো সব নিভিয়ে দিলেন। আমি চুপচাপ উনার কর্মকান্ড দেখতে লাগলাম।
আজ উনি স্বামীত্ব ফলাতে চাইলেও আমি বাধা দিবনা। আমার সম্পর্ক টা খুব পবিত্র, আমরা একে অপরকে খুব ভালোবাসি। ভীষণ শিহরণ কাজ করছে আমার মধ্যে কেন জানি আমিও চাচ্ছি আমাদের সম্পর্ক টা পাঁচ-দশটা সাধারণ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে পরিনত হোক।
এই প্রথমবার আমাকে উনি খুব আদুরে গলায় বউ ডেকে বললেন, তাকিয়ে দেখো। বউ শব্দটা শুনে সেদিনের মত চমকে উঠলাম, আজ সেদিনের মত অবাকতা নয় ভীষণ ভালোলাগা কাজ করছে।অতিরিক্ত শিহরণ আর উচ্ছ্বাসে চোখ বন্ধ করে রেখেছিলাম। উনার কথা শুনে সাথে সাথে চোখ মেলে দেখি, সারারুমে জোনাকি পোকা উড়ছে। হলদে আলোয় পুরো রুমটাকে তারা ভরা আকাশ মনে হচ্ছে। ঘুরে ঘুরে শুধু জোনাক গুলো দেখছিলাম, মিছে মিছে ছুতে চেষ্টা করছিলাম।
উনি আমার কাছে এগিয়ে এসে বললেন, পছন্দ হয়েছে তোমার?
— ভীষণ। বলে উনার দিকে তাকালাম, উনি হাতের কোষে একটা জোনাকি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমার হাতে ওটা দিয়ে দিলেন।
আমার ঘোর যেন এখনো কাটছেনা।
উনি হালকা রোমান্টিক সুর ছেড়ে দিলেন রেকর্ডারে। আমার দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিলেন, আমি হাত রাখতেই এক টানে তার বুকের কাছে নিয়ে আসলেন। আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।
আমি আমার কাপা হাতে তার গলা জড়িয়ে ধরলাম। উনি উনার মুখ আমার মুখের আরো কাছে নিয়ে আসলেন। এতটাই কাছে যে উনার লোম খাড়া হয়ে যাওয়ার নিঃশ্বাস আমার মুখে পড়ছে, শুনতে পাচ্ছিলাম তার নিঃশ্বাসের শব্দ, অনুভব করতে পারছিলাম তার বুকের ধুকপুকানি।

মুহিব তার ঠোট টা আমার ঠোটের কাছে এনে আলতো করে ছুয়ে দিলেন।
আমার শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল। তার শার্ট এর পিছনের অংশ শক্ত করে চেপে ধরলাম। উনি আস্তে করে ছোয়াছুয়িটা তীব্র করে তুললেন। আমি তার গলার নিচে মুখ লুকিয়ে ছোট্ট একটা চুমু খেলাম। উনি আমার ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দিলেন। হারিয়ে গেলাম এক অজানা শিহরণে।
ব্যালকুনিতে বসে একসাথে দোল খেতে খেতে চাঁদ দেখছি। ও সযত্নে আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে, মাঝে মাঝে চুলে, কপালে চুমু খাচ্ছে। আমি তার আঙ্গুলের ফোকরে আঙ্গুল ঢুকিয়ে শক্ত করে ধরে রাখলাম।
নিজেক্স ভীষণ সুখী মনে হচ্ছে। এত ভালোবাসে ছেলেটা আমায়! কি ছিলাম আর আজ কি হয়ে গেলাম। আগে পরিচয় ছিল এক গুন্ডি, এখন পরিচয় মুহিবের বউ। এক গুন্ডির জীবন বদলে দিল ছেলেটা।
শাড়ির আচল থেকে সিগারেট টা বের করে হাতে নিলাম। মোমবাতির আগুনে জ্বালিয়ে নিলাম। ও হাল্কা কপাল কুচকে বলল,
— তুমি এসব খাও?
— উহু।
— তাহলে এটা তোমার কাছে কেন?
— আমার বান্ধবীরা বলত এটা খেলে নাকি ডিপ্রেশন কমে। তুমি বাসায় ফিরছিলেনা তাই খুব ডিপ্রেশনে পড়ে গিয়েছিলাম। ঠিক করেছিলাম খাব।
আমার হাতটা জ্বলন্ত সিগারেট টা কেড়ে নিচে ফেলে দিয়ে এক টানে কাছে টেনে বলল, তোমার ডিপ্রেশনের কারণ ও হব, ওষুধ ও হব। এসব আর চলবেনা বুঝচ্ছো।
বলে ঠোটে ঠোট ছুয়ে দিল। সে কখনো জানবেনা, এমন একটা স্বপ্ন আমি দেখেছিলাম। কেউ একজন আমার হাতের জ্বলন্ত সিগারেট ছুড়ে ফেলে বলবে, এসব আর চলবেনা বুঝচ্ছো! স্বপ্নটা পূরণ হবে কিনা জানতেই প্রথমবার সিগারেট হাতে নিলাম।
জ্বলতে থাকা সিগারেট ছাই হয়ে নিভে যায়, আর চাদটা আমাদের দেখে লজ্জা পেয়ে মেঘের আড়ালদ মুখ লুকালো।

ভোররাতে উঠে দেখি বরটা আমার আচল জড়িয়ে ঘুমোচ্ছিল, মুচকি হেসে আচল ছাড়িয়ে নিচে নেমে এলাম। পানির তৃষ্ণা পেয়েছে খুব, টেবিল থেকে পানি নিয়ে খেলাম। ফিরে আসব তখনি দেখি দাদুর রুমের আলো জ্বলছে। এখনো তো আযান দেয়নি তাহলে দাদুর রুমের আলো জ্বলছে কেন?
দাদু কি এখনো ঘুমায়নি! আমি নিঃশব্দে দাদুর রুমের পাশে এসে উঁকি মারলাম।
যা দেখলাম তাতে আমি ভীমড়ি খেয়ে পড়লাম। কি করব বুঝতে পারছিনা।
.

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here