জ্বীনবর৩,পর্বঃ১৯,২০,২১

0
2089

জ্বীনবর৩,পর্বঃ১৯,২০,২১
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা

বৈশাখী হসপিটালের করিডরে এ মাথা থেকে ও মাথা পায়চারি করছে। ওয়াফাহকে ভেতরে ডাক্তাররা এখনো দেখছেন। ওয়াফাহর অবস্থা খুব সিরিয়াস। যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ আর টেনশানে এখন কোমায় চলে যাওয়ার অবস্থা। এখন আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। মেয়েটা আর শান্তিই পেলনা।
ওয়াফাহর মা চলে এসেছেন। উনিও এককোণে বসে কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছেন। মেয়ে যা ই করুক না কেন উনি তো তার মা। মেয়ের এমন অবস্থায় ছুটে আসাটা স্বাভাবিক। এক একটা মূহুর্ত এখন সহস্র বছরের সমান মনে হচ্ছে। আল্লাহ তুমি ওয়াফাহকে সুস্থ করে বলে কান্নায় ভেঙে পড়ল বৈশাখী। আল্লাহর বিচার এত নিষ্ঠুর কেন? এত ভালো মনের মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে যাচ্ছে।
ঘন্টাখানেক পর সিমরান তাওহীদের সামনে এসে দাড়াল। তাওহীদ পাগলের মত ছুটে এসে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় গিয়েছিলে তুমি? তুমি জানো এখনো বিয়ে পড়ানোটা বাকি। হুট করে কোথাও উধাও হয়ে গিয়েছিলে তুমি! চুপ করে আছো কেন? জবাব দাও।”
সিমরান নিষ্প্রাণদৃষ্টিতে তাওহীদের দিকে একবার তাকায়। তারপর কাজীর দিকে তাকিয়ে বলে, “কাজী সাহেব, রেজিস্ট্রি তো হয়ে গেছে। বাকিটা সেরে নিন।”
তাওহীদ আর সিমরান মুখোমুখি বসে। মাঝখানে পাতলা পর্দা টেনে দেওয়া হয়। কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করে। তাওহীদ বার বার সিমরানের দিকে তাকাচ্ছে। সিমরানকে কেমন মনমরা লাগছে। এতক্ষণ সিমরান ছিল ই বা কোথায়! তাওহীদ কবুল বলার পর কাজি সিমরানকে কবুল বলতে বলে। সিমরানের ঠোট কাপছে কবুল বলতে। কিন্তু সবকিছু এখন ওর হাতের বাহিরে চলে গেছে। অস্ফুটস্বরে বলে, কবুল হে।
সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে মোনাজাত ধরে।
বিয়ের সবকিছু সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পর সিমরান এক মূহুর্ত দেরী না করে রুমে চলে আসে। সবাইকে বিদায় দিতে দিতে রাত হয়ে যায়। সবাইকে বিদায় দেওয়া শেষে তাওহীদ রুমে ঢুকল। ঢুকে দেখে সিমরান এখনো রুমের আলো জ্বালেনি। ব্যালকুনির এক কোণে স্ট্যাচুর মত দাঁড়িয়ে আছে। তাওহীদ রুমের আলো জ্বালিয়ে দেয়। তারপর সিমরানের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
— আজকের দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন। তোমাকে নিজের করে পাওয়ার স্বপ্নটা আজ পূরণ হয়েছে। আজ থেকে আমাদের ভালোবাসা আর অবৈধ নয়, একটা পরিচয় পেল। তোমাকে স্পর্শ করতেও আর বাধা নেই।
বলে সিমরানের হাতে হাত রাখল তাওহীদ। সিমরান মুখ ঘুরিয়ে একবার তাওহীদের দিকে তাকাল, তারপর হাত সরিয়ে রুমে চলে এল।
তাওহীদ ভাবে, সিমরানের নিশ্চয়ই খুব মন খারাপ। আজকে ওর বিশেষ একটা দিনে ওর পরিবারের কিংবা আপন কেউ ই উপস্থিত নেই। তাদের শূন্যতা অনুভব করছে নিশ্চয়ই।
তাওহীদ এসে সিমরানের পাশে বসল। টেবিল থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে ভাত মাখতে মাখতে বলল, সারাদিন তো কিছু খাওনি, তাই তোমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি নিজহাতে খাইয়ে দিব বলে। সিমরান এই কথা শুনে কোমলদৃষ্টিতে তাওহীদের দিকে তাকাল। তাওহীদ ভাতের লোকমা সিমরানের মুখের কাছে এনে ধরে বলল, হা করো। তুমি তো নথ পড়ে আছো? খাবে কি করে!
দাড়াও আমি খুলে দিচ্ছি। তাওহীদ সযত্নে সিমরানের নাকের নথ খুলে দেয়। সিমরান চুপচাপ শুধু তাওহীদকেই দেখছে। মানুষটা কত্ত কেয়ারিং, অনেক ভালো।
তাওহীদের ডাকে সিমরানের ধ্যান ভাঙ্গে। “এভাবে চেয়ে থাকবে? নাও হা করো”
সিমরান হা করতেই তাওহীদের খুব যত্ন করে সিমরানকে খাইয়ে দিল। নিজের হাতেই পানি খাইয়ে টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে দিল। তারপর হাত ধরে বলল,
— সিমরান আমি তোমাকে ভীষণ ভালবাসি।
এতটাই ভালবাসি যে তোমাকে হারাতে পারবনা কখনোই।
এসো, আজ থেকে আমরা নতুন জীবন শুরু করি, টোনাটুনির মত ছোট্ট একটা সংসার করব আমরা। সেখানে থাকে তুমি, আমি আর ভালবাসা।
বলে সিমরানকে বুকে টেনে নিল তাওহীদ। সিমরান স্বস্তিতে চোখটা বুজল।
হঠাৎ তাওহীদ সিমরান থেকে দূরে ছিটকে পড়ল। অবাক হয়ে সিমরানের দিকে তাকিয়ে রইল সে। সিমরান তাকে এভাবে কেন ধাক্কা দিল?

সিমরান বিছানা থেকে উঠে এসে একপাশে দাড়াল। তাওহীদ অবাক হয়ে বলল,
— কি হয়েছে সিমরান? এভাবে ধাক্কা দিলে কেন?
সিমরান রূঢ়কন্ঠে তাওহীদকে বলল,
— আপনি আমার থেকে দূরে থাকুন। আমি চাইনা আপনি আমার কাছে আসুন।
— কেন? এসব বলার কারণ কি?
— কারণ আছে। আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠুক সেটা আমি চাইনা। লোকদেখানো ছাড়া আমাদের মধ্যে আর কোনো স্বাভাবিক স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক থাকবেনা।
— কেন থাকবেনা?
তাওহীদ সিমরানের কাধ দুহাতে চেপে ধরে বলল,
— তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না? সিমরান তাওহীদের হাত ঝটকা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলল, জ্বি নাহ।
তাওহীদ কান্নাজড়ানো কন্ঠে বলল, তবে বিয়ে করলে কেন?
— বুঝেননা কেন? আমার মত নিম্নশ্রেণীর কাজের লোকরা বিলাসিতা চায়, টাকা চায়। যেটা আপনার কাছে আছে, এগুলো পাওয়ার একটাই উপায় আপনাকে বিয়ে করে নেওয়া। আর আমি সেটাই করেছি, আপনাকে বিয়ে করে রাজরাণী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। আমার স্বার্থ এটাই, এর জন্য আপনাকে আমি স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারব। ক্ষমা করে দিবেন আমায়। আপনার সাথে ভালোবাসার মিথ্যে অভিনয় করে ছাড়া কোনো উপায় ছিলনা।
তাওহীদের পুরো থ হয়ে গেল। সিমরান এসব বলছে! চোখের সামনে পুরো দুনিয়াটা অন্ধকার হয়ে এল, মনে হচ্ছে ওর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে।
এত বড় বেইমানীর শিকার হয়েছে সে। মা-বাবার মত সিমরান ও ওকে দূরে ঠেলে দিল। কাদতে কাদতে বলল,
— তুমি চাইলে আমি তোমাকে সেগুলো এমনিতেই দিতাম। এমন ভাবে আমাকে না ঠকালেও পারতে। এভাবে আমার মন নিয়ে খেলে কি পেলে বলো?
— সারাজীবন তো আপনাদের মত বড়লোকরা আমাদেরকে নিয়ে খেলে। আজ আমি তার উল্টোটা করে আপনাদের মত বড়লোকদের উপর মনের ঝাল মেটালাম। আপনি আমাকে আর এসব বলে বিরক্ত করবেননা।
আপনার এসব ন্যাকামি দেখতে আমি ইচ্ছুক নই।
আমার ঘুম পাচ্ছে, বিছানার পাশ থেকে সরুন। আর বললেন না আপনি আমাকে এসব এমনিতেই দিতেন। আমি আপনার করুনা নিতে পারবনা, যেটা আমার চাই সেটা আমি এভাবেই আদায় করে নিই।
এখন যদি আপনার ন্যাকামিপনা শেষ হয়ে থাকে রুম থেকে বেরিয়ে আমাকে একটু শান্তিতে ঘুমাতে দিন। আপনার এসব আমার একটুও সহ্য হচ্ছেনা।

তাওহীদ পুরো হতভম্ব হয়ে গেল। এভাবে ঠকে যাবে কখনো ভাবেনি, সবার মত শেষ পর্যন্ত সিমরানও তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল। এক পা এক পা করে পিছিয়ে কাদতে কাদতে তাওহীদ রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
সিমরান দরজা লক করে শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।
ডাক্তার হাতে থাকা রিপোর্টে চোখ বুলিয়ে বলল,
— পেশেন্টের অবস্থা অত ভালোর দিকে নেই। একটু খেয়াল রাখবেন। আর উনি মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছেন, দু-তিন সপ্তাহের বেশী হয়ত কারো সাথে কথা বলবেননা। চুপচাপ নিজের মত থাকবেন। এসময় তাকে কোনো কিছু জবরদস্তি করবেননা। ভুল করেও আগের কোনো কথা তার সামনে উঠাবেননা।
আল্লাহ অশেষ দোয়ায় উনি কোমা যাওয়ার পথ থেকে ফিরে এসেছেন।
অতএব, একটু সর্তক থাকবেন। যতটা সম্ভব হাসিখুশি রাখার ট্রাই করবেন।
বৈশাখী গলা কেশে বলল, আজ কি ওকে রিলিজ করিয়ে নিয়ে যেতে পারব?
— হ্যাঁ, পারব। আপনি আমার সাথে আসুন, কিছু ফর্মালিটি সম্পন্ন করতে হবে।
ওয়াফাহর মা তার কেবিনে ঢুকল।
ওয়াফাহ নিষ্প্রাণ চাহনী মেলে তাকিয়ে আছে। মুখটা শুকিয়ে আছে, চোখের নিচে গর্ত হয়ে গেছে। এত চিন্তা করলে মানুষ বাচে? আমার কথা শুনে যদি রাফিকে বিয়ে করতি, কতই না সুখে থাকতি।
আমারো চোখের সামনে মেয়ের এমন অবস্থা দেখতে হত। আল্লাহ এবার তো আমার মেয়ের উপর একটু রহম করো।
একটু শান্তি দাও ওকে। মুহিবকে ওর কাছে ফিরিয়ে দাও। এভাবে আমার মেয়েটা আর বাচবেনা।
বৈশাখী এসে ওয়াফাহর মায়ের কাধে হাত রেখে বলে, চিন্তা করোনা খালা। আল্লাহ সব কিছু দেখছেন, উনি ওয়াফাহর কপালে আবার সুখ ফিরিয়ে দিবেন।
উনি এতটা নিষ্ঠুর হতে পারেননা।
.

(চলবে)

জ্বীনবর৩
পর্বঃ২০
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা

সিমরান আস্তে আস্তে পাশের রুমে ঢুকল। দেখল তাওহীদ গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে, কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে গেছে বেচারা। তাওহীদের এমন অবস্থা দেখে তার বুক ফেটে কান্না আসছে। কিন্তু সে নিরুপায়, এমন বিহেভ করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলনা। তাওহীদের গায়ে চাদর টেনে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে চলে আসে সিমরান। চোখের পানি মুছে ভাবতে থাকে সে মূহুর্তের কথা, যে মূহুর্ত তাকে এই পরিস্থিতিতে টেনে আনতে বাধ্য করেছে।
আয়নায় নিজেকে যখন নিজেকে দেখছিলাম আমার পিছনে একটা কালো ছায়া দৌড়ে চলে যেতে দেখে। হয়ত মনের ভুল এটা। এমনটা কয়েকবার হল আমার সাথে। তখনি উকিল বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার নিয়ে আসে, আমি সাইন করার সময় দেখি ছায়াটা আমার সামনে বৃত্তাকারে ঘুরছে। ঘুরে ঘুরে একটা সুড়ঙ্গ তৈরী করছে। উকিল সাহেবকে দেখে মনে হলনা, উনি এটা দেখছেন।
সাইন করা শেষে উনি পেপারটা নিয়ে চলে গেলেন। ছায়াটা তাকে নির্দেশ করল,
— এই সুড়ঙ্গে ঢুকো।
— কে আপনি? এসব কি হচ্ছে আমার সাথে?
— ঢুকো এই সুড়ঙ্গে। সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে।
আমি ভয়ে ভয়ে সে সুড়ঙ্গে ঢুকলাম। সরু কালো একটা সুড়ঙ্গ, হালকা আলোতে হেটে যাচ্ছি। কিছুটা যাওয়ার পর একটা বড় আলোকিত গর্ত দেখতে পেলাম। অদৃশ্য আওয়াজ আসল, প্রবেশ করো।
ধীরে ধীরে গর্তে প্রবেশ করলাম। এই গর্তের চারদিকে আয়নায় লাগানো। আমার সামনে একটা বড় রাজকীয় আয়না। কিন্তু সেটায় আমি দেখা যাচ্ছেনা। অদ্ভুত লাগল, ভয় ও করতে লাগল। এই কেমন লীলাখেলা চলছে আমার সাথে! আল্লাহ আমাকে রক্ষা করো। ভাবতে না ভাবতে একটা দাড়িওয়ালা নূরানী মুখ আমার সামনে ভেসে উঠল। মিহি কন্ঠে আমাকে বলল,
— আসসালামু আলাইকুম জ্বীনকন্যা মুসকান।
— কে জ্বীনকন্যা? কে মুসকান?
— তুমি।
— এসব কি বলছেন কি আপনি??
— ঠিক বলছি। তুমি কোনো সাধারণ মেয়ে নন। তুমি জ্বীনবংশের একজন উত্তরাধিকারী। তুমি নাম সিমরান নয় মুসকান।
— বিশ্বাস করছি না আমি। আপনি কে? এমন গোলকধাঁধায় কেন এনে ফেলেছেন আমাকে?
— এটা গোলকধাঁধা নয়। এটা জ্বীনরাজ্যের আয়নামহল। আর আমি তোমার বংশীয় জ্বীন। তোমার ছোট দাদা। তোমার বাবার চাচ্চু।
— কে আমার বাবা? আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন এসব আজগুবি গল্প শোনাতে?
— আজগুবি নয়। তুমি একটু ভাবো, তুমি বিবাহযোগ্যা হওয়ার পর অব্ধি তোমার সাথে ঘটে যাওয়া কাহিনী। আগুনের সাথে খেলতে ইচ্ছে করে তোমার, আগুনে তোমার কিছু হয়না। জ্বীনরা আগুনের তৈরী, আর তুমি জ্বীন বলে তোমার আগুনের আচে কিছু হয়না। উলটো আগুন নিয়ে খেলতে ভাললাগে।
তুমি মারামারির কোনো কিছুই জানোনা, কিন্তু সেদিন অই বখাটেদের তুমি একাই কাবু করেছো। বিয়ের আগে তোমার বাগদত্তা তোমাকে পূর্ণাঙ্গ ভাবে স্পর্শ করায় তুমি শক খেয়েছিলে।
মনে করে দেখো, ঘটনা গুলো কেবল মাত্র একটা জ্বীনকন্যার সাথেই ঘটতে পারে।
এরপরো যদি বিশ্বাস না হয় তোমার হাত দিয়ে একটা আয়না হালকা আচড় কাটো। তুমি যদি সাধারণ মেয়ে হও এই আয়নায় একটু দাগ ও লাগবেনা।
উনার কথা শুনে কাপা কাপা হাতে আমি আয়নায় আচড় কাটলাম। আয়না দুভাগ হয়ে গেল। অবাক হয়ে গেলাম আমি।
— এবার তুমি আবার হাত লাগাও।
লাগানোর সাথে সাথে আয়না জোড়া লেগে গেল। সাথে সাথে একটা মুখ ভেসে উঠল যেটা অবিকল দেখতে আমার মত। আমি ভয়ে দুপা পিছিয়ে গেলাম। এই কেমন তেলেসমতি।
— এই জ্বীনকে একমাত্র তুমিই উদ্ধার করতে পারো।
সে বড্ড বিপদে আছে। আর যতদিন না তুমি তাকে খুজে উদ্ধার করতে পারছো, ততদিন তুমি তোমার স্বামীকে কাছে আসতে দিবেনা। যদি সে তোমার পূর্ণাঙ্গ কাছে আসে, তবে তুমি তোমার জ্বীনি শক্তি হারাবে হয় যাবে এক সাধারণ কন্যা। তোমার স্বামী ও তখুনি মারা যাবে এবং তোমার রুহ শরীর ছাড়া হয়ে দুনিয়ায় ঘুরতে থাকবে কেয়ামত অব্ধি।
পদে পদে তোমার লাঞ্চনা, গ্লানি আর কষ্ট থাকবে। না পারবে মুক্ত হতে আর না পারবে সইতে।
— কিন্তু এই জ্বীনটা কে?
— আমাকে ফিরে যেতে হবে মুসকান। আমার না বলা অব্ধি নিজের পরিচয় তুমি কাউকে দিবেনা। এতে তোমার প্রাণহানির আশংকা রয়েছে।
তোমার জ্বীনিশক্তি অপ্রয়োজনে ব্যবহার করবেনা। সেটা ক্ষয় হলে পূর্ণ করতে সময় লাগবে। এখন অদৃশ্য হয়ে আগের স্থানে ফিরে যাও।

চোখ বুজতেই আমি আগের রুমে চলে আসলাম। ভাবনায় পড়ে গেলাম আমার সাথে যা হল তা কি আসলেই কল্পনা নাকি বাস্তব। বিয়ে পড়ানো শেষ হওয়ামাত্র আমি উপরে চলে আসলাম। ড্রায়ার থেকে দিয়াশলাইয়ের কাঠি নিয়ে নিজের আঙ্গুলে আগুন ধরিয়ে দিলাম। সত্যিই আমার কিছুই হচ্ছেনা।
আমার আঙ্গুল সম্পূর্ণ অক্ষত।
বিশ্বাস করতে দেরী হলনা, লোকটা যা বলল সবি সত্যি।
তখন থেকেই আমার চিন্তাভাবনা বেড়ে গেল। কাকে উদ্ধার করতে হবে আমার? কিভাবে করব আমি? তাওহীদের বুকে মাথা গুজতেই আমার সেই সর্তকবাণী মনে পড়ল। তাই আমি এমন খারাপ ব্যবহার করতে বাধ্য হলাম।
নিজের ভিতরে আরো ভয় কাজ করছে যে দিন তাওহীদ আমার আসল পরিচয় জানবে তখন কি হবে? আমাকে আর ভালবাসবেনা।

ওয়াফাহ একা একা বাহিরে বসে আছে। আগের থেকে অনেকটা সুস্থ হয়েছে সে। মুহিবের জন্য এখনো ভেতরটা অস্থির হয়ে থাকে। বিশ্বাসটা এখনো মুছে যায়নি। এমন সময় তার সামনে এক প্রকান্ড ছায়া এসে দাঁড়ায়। ভয় পেয়ে আতকে উঠে বললাম,
— কে?
— ভয় পেওনা নাতবউ। আমি তোমার দাদু।
হালকা চাদের আলোয় মুখটা আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল। মূহুর্তে ভয় ভুলে গিয়ে খুশি হয়ে উঠলাম জেনেও তিনি অনেক আগেই গত হয়েছেন। উনি একটু হেসে বলল, অত উদ্বিগ্ন হসনা, তোর কষ্টের দিন শেষ। তোকে যারা তোর দুঃসময়ে শ্বশুড়বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে তারা নিজেদের শাস্তি পেয়েছে। ওরা বড্ড লোভী ছিল৷ আমার মেয়ে হয়েও সে এত নীচ চরিত্রের জানা ছিলনা।
— দাদু আমার শ্বশুরবাড়ি, ধনসম্পদ কিচ্ছু চাইনা।
আমার মুহিবকে আমার কাছে ফিরিয়ে এনে দাও।
— তোর বিশ্বাস সত্যি হয়েছে তোর মুহিব এখনো বেচে আছে। খুব তাড়াতাড়ি সে তোর কাছে ফিরবে।
— আল্লাহর অসীম কৃপা।
ভিতর থেকে মায়ের গলা,
— কার সাথে কথা বলছিস ওয়াফাহ?
মা এসে ওকে ধরে ঘরে নিয়ে গেল। কুয়াশার মত মিলিয়ে যেতে লাগল দাদুর রুহ।
তাওহীদ সকাল থেকে আমার সাথে কোনো কথা বলল না। ব্যাপারটা আমার কাছে খুবি কষ্টকর। যতবার কথা বলতে যাচ্ছি ততবার ই ও আমাকে রেডি হওয়ার বাহানায় এড়িয়ে যাচ্ছে।
মন খারাপ করে রান্নাঘরে চলে এলাম।
এসে দেখি নাস্তা আমার জন্য রেডি করা আর একটা চিরকুট রাখা আছে পাশে।
তাতে লেখাঃ

” তুমি আমাকে যেই কারণেই বিয়ে করো না কেন তুমি আমার বিয়ে করা বউ। তোমার সর্বোচ্চ যত্ন আমি নিব আর সারাজীবন তোমাকে ভালবাসব।
ভালোবাসি বউ।”

(চলবে)

জ্বীনবর৩
পর্বঃ২১
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা

ছেলেটা পারেও বটে। এত ভালবাসা কি আমার কপালে সইবে? যেদিন ও জানবে আমি একটা জ্বীন, সেদিন ও এত ভালবাসবে আমায়? নাকি ভয়ে দূরে ঠেলে দেবে? ভয়টা ভীষণ ঝেকে বসল। তাওহীদকে আমি হারাতে পারবনা। কিন্তু আমরা দুজন ই দুই জগতের বাসিন্দা। আদৌ আমাদের একসাথে সম্ভব! সেটা তো দুনিয়ার নিয়মের বাহিরে। ভাবতে ভাবতে চোখে পানি চলে এল।
কিচেন থেকে বের হতেই দেখলাম তাওহীদ টাই বাধছে, কিন্তু পারছেনা ঠিক মত বাধতে। আমি এসে ওর টাই ঠিক করে দিলাম। ও একবার চোখে চোখ রেখে চোখ সরিয়ে নিল। অভিমানটা এখনো ধরে বসে আছে। টাই বেধে দেওয়ার পর ও সরে যাওয়ার মূহুর্তে আমার গলার হার ওর বোতামে আটকে গেল। ও আমার দিকে না তাকিয়ে ওটা খুলতে ব্যস্ত হয়ে গেল। আমি অপলক ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
কত্ত কাছে আমরা চাইলে একে অপরকে নিঃশ্বাস দিয়েই ছুতে পারব কিন্তু দূরত্বটা অনেক আমাদের।
চাইলে সম্ভব নয় এই দূরত্ব কাটিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলা, “আমিও তোমায় ভীষণ ভালোবাসি তাওহীদ।” ভাবতে ভাবতে দেখি ও খুলে ফেলেছে। আমার দিকে একপলক তাকিয়ে সরে চলে যেতে চাইল। আমি ওর হাত টেনে ধরলাম। ও ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, কিছু বলবেন?
আমি এগিয়ে এসে ওর মানিব্যাগ আর রুমালটা হাতে দিয়ে বললাম, ফেলে যাচ্ছিলেন। ও পকেটে ঢুকিয়ে বলল, ধন্যবাদ।। আসি।
— শুনুন।
— জ্বি। আমি শাড়ির আচল টেনে ঘোমটা দিয়ে ওর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলাম। এটা কালকে করার কথা ছিল। মাথা থেকে সব বেরিয়ে গিয়েছিল তখন। সালাম শেষ করে আয়াতুল কুরসি পড়ে ওর গায়ে ফু দিয়ে দিলাম। ও তখনো অবাকদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
— মন থেকে যখন স্বামী ভাবেন না, তখন চার দেয়ালের মধ্যে স্ত্রীর কর্তব্য পালন করতে হবেনা। আর কখনোই এসব করবেন না, আমার কষ্ট হয়। খুব তাড়াতাড়ি আমার সব সম্পত্তি আপনার নামে হস্তান্তর করে দেব। তারপর আপনি চাইলে কাগজে-কলমে তালাকের কাজ টাও সেরে ফেলব। আসি।
বলে হড়হড় করে বেরিয়ে গেল। আমি পাথরের মত সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম। সত্যি ই আমাদের এক হওয়া আর সম্ভব হবেনা। আমার জগত ইতিমধ্যে আমাদেরকে আলাদা করে এক এক প্রান্তে ছুড়ে ফেলেছে।
চোখের পানি মুছে কিচেনে চলে এলাম। শাড়ির আচল কোমরে গুজে রান্না করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। বার বার ভাবতে লাগলাম, একটা জ্বীনকে আমার সাহায্য করতে হবে কেন? আর যদি করতেই হয় তবে আমি কেন? তবে কি সে জ্বীন আমার বংশোদ্ভুত কেউ যাকে আমি ছাড়া আর কেউ ই সাহায্য করতে পারবেনা।
আমার উপর যখন দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে তবে আমি নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করব।
সবজি কাটার সময় মনে হল আমার পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে গো গো আওয়াজ করছে। চমকে উঠলাম, এই সময় বাসায় আমি ছাড়া কেউ নেই তবে কে এমন আওয়াজ করছে। গো গো শব্দ টা আরো নিকটতর হচ্ছে। এক্ষুনি হয়ত ঝাপিয়ে পড়বে আমার উপর। সাথে সাথে সরে পড়লাম আমি। পচা মাংসগলিত একটা হাত এসে টেবিলে পড়ল। অইখানে আমি থাকলে নিশ্চিত বড় নখ গুলো আমার শরীর ভেদ করত। তাকিয়ে দেখি একটা লোকাকৃতি মানুষ, সারা গা থেকে পচামাংস গলে গলে পড়ছে। বাজে গন্ধ আসছে তার থেকে। চোখগুলো প্রচন্ড কালো, যেন ঠেলে বেড়িয়ে আসছে।
ধারালো নখ গুলো তুলে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আবার আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ল, আমি সাথে সাথে সরে পড়লাম। এভাবে এর হাত থেকে বেশিক্ষণ বাচা যাবেনা। লড়াই করতে হবে ওর সাথে, কিন্তু আমার কাছে পূর্ণ শক্তি নেই। যা শক্তি আছে তা এক্ষুনি ব্যবহার করলে আমি জ্বীনটিকে সাহায্য করব কি করে?
হাতে থাকা সবজি কাটার ছুরিটা ছুড়ে মারলাম। অইটা ওর শরীর ভেদ করে চলে গেল। কিচ্ছু হলনা তার। এভাবে হবেনা, এ নিশ্চয়ই খুব শক্তিশালী আর অভিশপ্ত শয়তান। টেবিল হাতিয়ে কাটাচামচ পেয়ে হাত নিলাম।আয়াতুল কুরসী পড়ে কাটাচামচটা শয়তান দিকে ছুড়ে মারলাম। নিশানা গিয়ে ঠিক বুকে পড়ল। প্রচন্ড জোরে আর্তনাদ করতে করতে শয়তানটা অদৃশ্য হয়ে গেল।
চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম সবকিছু স্বাভাবিক। কে সে যে আমাকে পিছন থেকে আক্রমণ করতে চাচ্ছে? জ্বীনজাতির কেউ? কিন্তু আমি তো তাদের বংশের মেয়ে তবে আমাকে কেন আঘাত করবে?
কেউ কি চায়না আমি কিছু করি? তাই এভাবে মারতে পাঠাল। একবার যখন আমার উপর আক্রমণ হয়েছে নিশ্চয়ই সে আবার আমার উপর আক্রমণ করবে। সর্তক থাকতে হবে অনেক। দুশ্চিন্তা হচ্ছে অনেক। মনে হচ্ছে আবার খুব খারাপ কিছু ঘটবে। এমনসময় কলিংবেলটা বেজে উঠল। এই সময় আবার কে আসল?
ধীরে ধীরে গিয়ে দরজা খুললাম।
— আরেহ বৈশাখী বু।
— কেমন আছিস?
— হ্যা ভাল, এসো ভেতরে এসো।
— এই নে ধর। কিছু মিষ্টি নিয়ে আসলাম।
— কেন যে এসব আনতে গেলে? এখানে বসো।
বলে বৈশাখীবু কে ড্রয়িংরুমে নিয়ে বসালাম।
— বিয়েতে তোমাকে আর তোমার সখীকে দাওয়াত পাঠিয়েছিলাম। এলেনা কেন?
— আসতাম কিন্তু ওয়াফাহ অনেক অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। প্রায় কোমায় চলে যাওয়ার অবস্থা। এখন সুস্থ হতেই আসলাম। অবাক হয়ে বললাম,
— এমন অবস্থা হল কেন? দেখে তো অনেক স্ট্রং আর হাসি-খুশি মনে হয়েছিল।
— অতিরিক্ত মানসিক চাপ আর টেনশানে।
— কিসের টেনশান?
— ওর স্বামীকে নিয়ে। সে অনেক কথা।
— ওনার বিয়ে হয়ে গেছে? স্বামী কোথায় উনার?
— সবাই জানে মারা গেছে। কিন্তু ও বিশ্বাস করেনা, ওর বিশ্বাস ওর স্বামী আবার ওর কাছেই ফিরে আসবে।
— অনেক বেশি ভালোবাসে। ওনার জন্য মায়া হচ্ছে।
— মেয়েটা আগে গুন্ডি ছিল, স্বামীর ভালোবাসায় সম্পূর্ণ ভাল হয়ে গেছে। পর্দাশীন, নামাযী। সেদিন নাকি তার স্বামীর মত কাউকে দেখেছে, তারপর থেকে ওর অস্থিরতা বেড়ে গেছে। সারাদিন বস্তিতে ঘুরেও ওর স্বামীর মত কাউকে পাইনি।
— তুমি কি ওর স্বামীকে দেখেছো?
— না। ওর বিয়ে হওয়ার আগেই আমার এখানে চাকরী হয়ে যায়। চলে আসি, কাজের চাপে যাওয়া হয়নি ওইদিকে।
— খারাপ লাগছে উনার জন্য। তো উনাকে আনোনি কেন? একটু ঠিকমত কথাও হয়নি উনার সাথে।
— ও তো এখন আমার কাছে থাকেনা। মায়ের কাছে ফিরে গেছে। যাওয়ার আগে বলে গেছে ওর স্বামীকে পেলে যেন ওকে খবর দেই।
— কত্ত ভালোবাসা থাকলে এমন করতে পারে বল।
— হ্যা, অনেক ভালোবাসে নিজের স্বামী। তোর কি খবর বল? সুখে আছিস তো স্বামীর সাথে?
— হ্যা অনেক সুখে আছি।
মনে মনে ভাবলাম, সুখ আমার কপালে কবে ছিল? না জুটল মা- বাবার স্নেহ আর না স্বামীসুখ।
— কি এত ভাবছিস?
— তেমন কিছু না।
— আজ উঠি।
— একি! দুপুরে আমার সাথে খেয়ে যাও।
— না বোন, আমার অফিসে যেতে হবে আবার।আসি।
— আবার এসো।

ওয়াফাহ বুর জন্য কেমন জানি টান অনুভব করলাম। বেচারীর সাথে কেমন অবিচার হয়ে গেল। মারা গেছে জেনেও স্বামীকে এত ভালোবাসে, আর আমি স্বামীর কাছাকাছি থেকেও তাকে ভালোবাসতে পারছিনা। নিজের জন্য করুণা হচ্ছে। এমন হবে জানলে কখনোই তাওহীদকে নিজের সাথে জড়িয়ে ওকে কষ্ট দিতামনা।
সকাল থেকে মনে হচ্ছে আমি ছাড়াও বাসায় কেউ আছে। কারো অস্তিত্ব টের পাচ্ছি মূহুর্তে মূহুর্তে। আমি হাটলে অন্য কারোও হাটার আওয়াজ পাচ্ছি। ঘাড়ের কাছে গরম নিঃশ্বাস অনুভব করছি। অন্য রুমে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ পাচ্ছি। কিন্তু সেই রুমে গিয়ে কিছু দেখিনা। কি হচ্ছে আমার সাথে?
এসব আমার মনের ভুল নয় মোটেও। কেউ আমার উপর আক্রমণ করার অপেক্ষায় আছে। সন্ধ্যায় কিচেনের লাইট অফ করতেই দেখি সেখানে একটা ছায়া দাঁড়িয়ে আছে। লাইট জ্বালাতেই সেটা উধাও। আবার লাইট অফ করতেই সেটা দেখা যাচ্ছে। আর লাইট অফ করলামনা, কেমন জানি ভয় ভয় করতে লাগল। মনে হচ্ছে খুব খারাপ কিছু হবে আমার সাথে। তাওহীদ এখনো কেন অফিস থেকে ফিরছে না? এমনসময় লোডশেডিং হয়ে গেল।
মনে মনে যা ভাবছিলাম তাই। সুযোগের অপেক্ষা করছিল কেউ। অন্ধকার নামতেই আমার গায়ে ঝাপিয়ে পড়ল। অনেকক্ষণ ধস্তাধস্তি করলাম। শেষ পর্যায়ে একটা হাত আমার গলা চেপে ধরল শক্তভাবে।
মনে হচ্ছে এক্ষুনি মারা যাব। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। আর কয়েক সেকেন্ড এভাবে থাকলে আমি মারা যাব।
আর একটাই পথ আছে এর থেকে বাচার।
নিজের শক্তি ব্যবহার করা। এই মূহুর্তে শক্তি ক্ষয়ের চিন্তা না করে নিজেকে বাচাতে হবে। কাপা কাপা হাতে বিসমিল্লাহ পড়ে শয়তানকে একটা জোরে ধাক্কা দিলাম। সেটি আমার গলা ছেড়ে দূরে ছিটকে পড়ে আর্তনাদ করতে লাগল।
এমনসময় কারেন্ট টাও চলে এল।রুমের সবকিছু স্বাভাবিক। গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বসলাম। সারা শরীর প্রচন্ড ব্যথা। কিছু স্থানে কেমন একটা জ্বালা করছে।
আরো কিছুক্ষণ আগে কারেন্ট আসলে শক্তি টা খরচ করতে হতনা।
কলিংবেলটা বেজে উঠল। উঠার মত শক্তি পাচ্ছিনা। এই শয়তান টা প্রথমটার চেয়ে আরো বেশি শক্তিশালী।
কাবু করা কষ্টসাধ্য। অনেক কষ্টে উঠে দরজা খুললাম। তাওহীদ ঘরের দরজায় দাড়িয়েই আমাকে ঢ্যাপড্যাপ করে দেখতে লাগল। ওর এমন চাহনী দেখে আমি হকচকিয়ে উঠলাম।

ও কি আমাকে চিনতে পেরেছে? জেনে গেছে আমি জ্বীন। ভয়ে মুখ শুকিয়ে গেল।ও তাড়াতাড়ি আমার হাত চেপে তালু দেখে বলল,
— আপনার হাতে এত রক্ত এল কোথা থেকে? সারাশরীরে এমন আচড়ের দাগ কিসের? এখন বুঝলাম এতক্ষণ জ্বলছিল কেন?
আমার একটু সর্তক থাকা উচিত ছিল।
আমি হাত সরিয়ে নিয়ে বলল,
— ও কিছুনা। মাংস কাটছিলাম তখন একটা বিড়াল আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। এভাবে আচড় কেটে দেয়। তাই ওকে কাটাচামচ দিয়ে আঘাত করেছিলাম।
— বিড়াল এমন করেছে?
— হ্যা। বোধহয় জঙলা বিড়াল।
আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন, আমি খাবার দিচ্ছি।
চলে গেলাম ওর সামনে থেকে। বড্ড বাচা বেচে গেছি আজ।
.

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here