জ্বীনবর৩,পর্বঃ২৮,২৯

0
2191

জ্বীনবর৩,পর্বঃ২৮,২৯
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা

ওয়াফাহ ঘরের কোথাও নেই। কয়েক মূহুর্তে পুরো বাড়ি তন্নতন্ন করে খোজা হল। কিন্তু কোথাও ওয়াফাহকে পাওয়া গেলনা। সালেহা খাতুন মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। রিতা আর বৈশাখী অবাক হয়ে বলল, মাত্র কয়েক মূহুর্তে ও কি করে পালাল? পালালেও তো বেশি দূর যাওয়া সম্ভব নয়।
সালেহা খাতুন কান্না করতে করতে বললেন, এবারো মুখপুড়ি আমার মুখে চুনকালি দিল? বিয়ে যখন করবি ওয়াদা কেন করলি! আজ থেকে তুই আমার কাছে মৃত। সব শোরগোল, ব্যস্ততা একনিমিষে থেমে গেল। কিন্তু ওয়াফাহ কোথায় গেল, কেন গেল সেটা সঠিকভাবে কেউ ই জানলনা। মূর্তির মত অবশ হয়ে বসে থাকা ওয়াফাহর মনে কি চলছিল কে বা জানত!

প্রাসাদ থেকে বের হয়ে হাটতে লাগলাম। অবশেষে তলোয়ারটা হাতে পেয়ে কি যে শান্তি লাগছে, ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। এখন জ্বীনটাকে উদ্ধার করলেই আমার দায়িত্ব শেষ। কিন্তু তারপর কি হবে? আমি কি আমার তাওহীদের কাছে ফিরে যেতে পারব? আমাদের দূরত্বের অবসান হবে! ভাবতে ভাবতে চোখের কোণে পানি জমা হল। সামনে তাকিয়ে দেখি জুহানী পথ আটকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম, তারপর ও কাছে ডাকলাম। ও এল না বরং কান্না জুড়ে দিয়ে বলল, আমাকে লুকিয়ে এভাবে চলে গেলা?
— কিছু করার ছিলনা। আমার যে বিশাল কাজ ছিল।
— কি কাজ?
— আমার উপর দায়িত্ব ছিল সোনা, তলোয়ার নিয়ে একটা ভাল জ্বীনকে দুষ্ট দের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। এই জন্যই আমি প্রাসাদে গিয়েছিলাম সোনা।
বুবুর উপর আর রাগ করে থেকোনা।
— তোমার তো কাজ শেষ। এবার আমার সাথে থাকতে পারোনা?
কি বলে বুঝ দিব বুঝতে পারছিলামনা। ততক্ষণে খালা আর জুরাইন জুহানীর পাশে এসে দাড়াল। খালা শুকনো মুখে বলল,
— কোন পাষন্ডের কাছে আবদার করছিস? ও প্রয়োজন ছিল তাই আমাদের কাছে ছিল, মিশেছে। এখন প্রয়োজন নেই তাই চলে গেছে। জুরাইন বাধা দিয়ে বলল,
— আম্মি, এভাবে কেন বলছেন? এটাই পুরো জগতের নিয়ম।
এ নিয়ে উনাকে কথা শুনাবেন না। উনার কি দোষ এতে?
আমি খালার হাত জড়িয়ে বললাম, আমাকে ভুল বুঝোনা খালা। আমি যে কতটা যন্ত্রণায় আছি তা বুঝতে পারলে তোমরা আমাকে অপরাধী ভাববেনা। বিয়ের পর সব মেয়েরা স্বপ্ন দেখে স্বামীর সাথে সুখে সংসার করবে। কিন্তু বিয়ের পর ই জানতে পারি আমি মানুষের দুনিয়ায় পালিত এক জ্বীন। আমাকে আমার স্বামী থেকে দূরে থাকতে হবে। লড়তে হবে পদে পদে।
আমি কোনো সাধারণ জ্বীন নই। জুহানী বলল,
— এই জন্যই তোমাকে দেখে আমার খাদিমা মনে হয়নি।
— হ্যা সোনা। তুমি ঠিক ই ধরেছো। খালা, এবার তুমিই বলো আমার কি সম্ভব ছিল তোমাদের সাথে থেকে তোমাদের উপর বিপদ ডেকে আনা।
খালা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, তুই আসলে কে?
— সেটা আমিও জানিনা খালা। আমার আসল পরিচয় কি? কেন আমি সাধারণ কেউ নই? কেন ই বা আমি মানুষের দুনিয়ায় ছিলাম? কিছুই জানিনা।
আমাকে মাফ করে দাও খালা। কিন্তু একটা কথা ই জানি, তোমাদেরকে আমি কখনোই ভুলতে পারবনা। তোমরা আমাকে মনে যে স্থান দিয়েছো তা আমি কোনোকিছুর বিনিময়ে শোধ করতে পারবনা।
খালা আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
— ভালো থাক মা। আল্লাহ তোর প্রতিটি কাজের সহায় হন।
আমাকে মাফ করে দিস, আমি তোকে যা তা বলে ফেলেছি না জেনেই।
— কি বলো এসব? তুমি আমার মায়ের মত। আমার অন্য একটা আম্মি। এসব বলে আমাকে কষ্ট দিওনা। আমাকে যেতে হবে খালা।
আবার যদি পারি তোমাদের এসে দেখে যাব।
জুহানীর কপালে চুমু দিয়ে বললাম, আম্মির সব কথা শুনবে বুঝেছো। হাত ছেড়ে ভীড়ের মধ্যে ঢুকবেনা কিন্তু। আমি আসি সোনা।
— আবার আসবে তো বুবু?
— হ্যা আসব সোনা। বিদায় নিয়ে আবার হাটতে লাগলাম। খারাপ লাগছে, আসলেই একটা পরিবার পেয়েছি। আল্লাহ উনাদেরকে ভালো রাখুন, হেফাজতে রাখুন। ব্যাগ থেকে আয়নাটা বের করে জ্বীনদাদুকে ডাকলাম।
— দাদু।
— আমি খুব ই খুশি রে দাদু। তুই আমার মৃত্যুর শোধ নিয়ে দিয়েছিস।
— এটা ওর প্রাপ্য দাদু। তুমি কেদোনা।
তলোয়ারটা আমি উদ্ধার করতে পেরেছি দেখো।
— তুই যে পারবি জানতাম। এখন ওই জ্বীনকে উদ্ধার করতে হবে তোর।
তুই ছায়াটার পিছু পিছু আবার সে জগতে ফিরে যা। বাকিটা পরে হবে। তলোয়ারটা নিজের কাছে গোপনে রেখে দিস।
— আচ্ছা দাদু।
ছায়াটার পিছু পিছু আয়নায় দিয়ে আবার সেই চিরচেনা আমার আর তাওহীদের রুমে চলে আসলাম। রুমে কেউ নেই, পুরো রুম ই এলোমেলো। ও কি অফিসে চলে গেছে? এতক্ষণে ওর অফিস তো ছুটি হয়ে যাওয়ার কথা। নিচে গিয়ে কেয়ারটেকার চাচাকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, তাওহীদ কোথায়?
— তুমি এতদিন কোথায় ছিলে?
— সে সব পরে বলব। তাওহীদ কোথায়?
অফিস থেকে ফিরেনি?
— কাল থেকেই তাওহীদ বাবা নিখোঁজ। কোথাও খুজে পাচ্ছিনা ওকে।
কয়েকদিন ধরে অফিসেও যায়নি, সারাদিন বাসার ভিতর ই থাকে। কাল দুপুরের খাবার দিতে গিয়ে দেখি ও নেই। ফোন ও তো নেয়নি সাথে।
আমি ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলাম। হঠাৎ করে কাউকে কিছু না জানিয়ে কোথায় চলে গেল ও। কোনো অঘটন করে ফেলল না তো! কিছুই ভাবতে পারছিনা। কোথায় খুজব ওকে? কিছুই ভাললাগছেনা। নিঃস্ব মনে হচ্ছে নিজেকে।
কপালে হাত দিয়ে বিছানায় বসে পড়লাম। কখন যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল খেয়াল ই করিনি। রুমের আলো ও জ্বালানো হয়নি। অন্ধকারে বসে থাকতে ভালোই লাগছে। এমনসময় টের পেলাম আমার ঘাড়ের উপর গরম নিঃশ্বাস ফেলছে কেউ। সেই পুরোনো গোঙানীর শব্দ। কিছু বুঝে উঠার আগেই এক বিচ্ছিরি গন্ধ নাকে আসল। চোখ খোলা রাখার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিনা। এক ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম।

কারো হাসির প্রচন্ড আওয়াজ পেলাম। আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখি আমি মাটিতে পড়ে আছি গুহার মত একটা জায়গায়। চোখ খুলে উঠে বসে চারিদিকে তাকালাম। তাওহীদের হাত-পা বাধা একটা গুড়ির সাথে, ওর দিকে তাকাতেই ও আমায় ডাক দিল। অন্যদিকে ওয়াফাহ বুবু ও একিভাবে বাধা আছে। আমার দিকে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওদের কাছে যাওয়ার আগেই এক বুড়ো বয়স্ক লোক, উদ্ভুত পোশাক পড়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— জ্ঞান ফিরেছে তাহলে?
স্বাগতম তোকে শয়তানের দুনিয়ায়। চারদিকে বিভৎস চেহারার শয়তান গুলো দাঁড়িয়ে আছে। মাঝখানে গোলক আকা, তার মধ্যে যজ্ঞের মত আগুন জ্বলছে। ঠিক বুঝতে পারলাম না এ কে? কেন ই বা তাওহীদ আর ওয়াফাহ বুবুকে এভাবে বেধে রেখেছে? আসল উদ্দেশ্যটা কি?
— কে আপনি?
— শান্ত! আস্তে আস্তে সব জানতে পারবে। ২১বছরের সব রহস্য আজ ই উন্মোচন হবে জ্বীনকন্যা।এ বলে হাতের তালি দিল। দাঁড়িয়ে থাকা শয়তানদের মধ্যে দুজন পাথর ভেদ করে ভিতরে চলে গেল। বেরিয়ে এল এক যুবককে নিয়ে। যার হাত-মুখ কাপড় দিয়ে বাধা। লোকটা আমাকে দেখিয়ে বলল,
— চিনিস ওকে?
— কে উনি?
— যাকে উদ্ধার করতে ছুটছিস সে ই। তোরা দাড়য়ে আছিস কেন?
মুখ খুলে দে।
মুখ থেকে কাপড় সরানোর পর আমি অবাকদৃষ্টে তাকিয়ে রইলাম। এ কি আসলেই গোলকধাধা নাকি সত্যি। ওয়াফাহ চিৎকার করে উঠল, মুহিব।
আমি একবার ওয়াফাহর দিকে তাকিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালাম। কি হচ্ছে আসলেই বুঝতে পারছিনা।
— উনি আসলেই কে?
আপনি কি আমার সাথে গোলকধাঁধার খেলা খেলছেন??
— মোটেও না। তোর সাথে এসব খেলা খেলব না আমি। খেলব প্রতিশোধ আর ক্ষমতাপরায়ণের খেলা। বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল লোকটা।
আমি একপলকে ছেলেটার দিকেই তাকিয়ে রইলাম।
তাওহীদ অবাক হয়ে বলল, এটা কি করে সম্ভব সিমরান?
— আমিও সেটাই ভাবছি।
— এ বাজে লোকটা নিশ্চয়ই কোনো বাজে খেলা খেলছে।
ছেলেটার ও জ্ঞান ফিরে এল ততক্ষণে। সেও আমার দিকে চোখ পড়তেই অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে রইল। ওয়াফাহ বলল,
— বাজে খেলা কিনা জানিনা! তবে উনি আমার স্বামী মুহিব।
.

(চলবে)

জ্বীনবর৩
পর্বঃ২৯
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা

লোকটা হেসে হেসে বলল,
— ছেলেটা আর তোর একি চেহারা দেখে অবাক হচ্ছিস, তাইনা?
সত্যি ই তাই। ওয়াফাহর স্বামী মুহিবের চেহারা আর আমার চেহারা হুবহু এক ই। কিন্তু বুঝলাম না এটা কি করে সম্ভব! মুহিব ও মুসকানের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুই বুঝতে পারছেনা।
লোকটা যজ্ঞের জায়গায় বসে আবার আগুনে কিসব ছিটাল। তারপর শয়তানগুলোকে ইশারা করল আমাদেরকে বেধে রাখার। আমি চুপচাপ করে রইলাম। এক্ষুনি কিছু করে পরিস্থিতি গুলিয়ে ফেলতে চাচ্ছিনা। আমাকে বুঝতে হবে আসল রহস্যটা কি! লোকটা তার মস্ত দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
— তোরা নিজেদের আসল পরিচয় জানিসনা। আমি বলছি তোরা কে?
তোরা দুজন যমজ ভাই-বোন। জ্বীন মেহরাব আর মানুষকন্যা মুশায়রার যমজ ছেলে মুহিব আর মেয়ে মুসকান।
শুনে অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকালাম। এটাই তবে আমাদের আসল পরিচয়। আরেকটু জানতে হবে। লোকটা একটু থেমে বলল,
— তোরাই জ্বীনবংশের যোগ্য উত্তরসূরি। তোদের জন্মের পর তোদের মা-বাবার ইচ্ছে ছিল তোদের নিয়ে জ্বীনরাজ্যে ফিরে যাওয়ার। কিন্তু আমি তা করে হতে দেই? তাদের জন্য তো আমি সব হারিয়েছি, পালিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছি।
রাগে-কষ্টে চরম প্রতিশোধ ঝেকে বসল।
যে করে হোক, তাদের পুরো বংশ আমি শেষ করে ছাড়ব। এ কাজে সফলতা পাওয়ার জন্য আমি শয়তানের আরাধনা শুরু করি। ব্ল্যাকমাজিক করা আয়ত্ব করি। অবশেষে শয়তান আমাকে শক্তি দেয়, আর তক্ষুনি তোর মা-বাবাকে মারার জন্য ছুটে যায়।
বাধ সাধল মেহরাবের চাচা হামনাদ খালিদ। সে জানতে পেরে তোদের নিয়ে পালায়। দুজন কে দুজায়গায় দিয়ে দেয়, যাতে তোদের খোজ আমি না পাই। তোদেরকে না পেয়ে সেদিন ধারালো নখ দিয়ে তোদের মা-বাবার শরীরের সব মাংস বের করে নিয়েছিলাম। কিন্তু আমার রাগ কমলনা।
আমার প্রতিশোধ আরো তীব্র হয়ে গেল। তাতে ঘি ঢালল শয়তান। সে আমাকে শর্ত দিল, ২১বছর বয়সে তোদের দুজনের আত্মা যদি তাকে দিয়ে দেই, তবে সে আমাকে গোটা পৃথিবীর সাম্রাজ্য দিবে। এতবছর ধরে তোদের আমি খুজে আসছি। মুহিবকে যখন পেয়েছিলাম তখন সুলাইমানের ক্বারিন জ্বীনরা তাকে পাহাড় থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিচ্ছিল। আমি তাকে এনে এখানেই বন্দি করি।
নিয়মিত আমার ক্ষোভ ওর শরীরের উপর অত্যাচার করে মিটাই।
আর তোর সন্ধান পাওয়ামাত্র তোকে আঘাত করার জন্য শয়তান গুলোকে পাঠাই। জানি তোর কাছে শক্তি আছে, ওদের সাথে লড়াই করে তোর শক্তি শেষ হয়ে যাবে। তখন তোকে আমার বশে নিয়ে আসব।
এইজন্য তোদের দুজনের দূর্বলতাদের ও আমার আস্তানায় নিয়ে আসি।
আজ তোদের দুজনকেই আমি শয়তানের নামে জবাই দিব আর পেয়ে যাব গোটা পৃথিবীর মালিকানা।
মা-বাবার এমন নৃশংস মৃত্যুর কথা শুনে রাগেকষ্টে আমার শরীর ঘিরঘির করে উঠল। এত কিসের রাগ ছিল শয়তানটার? কেন এমন করল?
মুহিব রেগে বলে উঠল,
— কে তুই?
— ওহহো আমার পরিচয় দেওয়া হয়নি তাইনা?
আচ্ছা দিচ্ছি। আমি হচ্ছি মুশায়রার চাচা। যাকে মুশায়রা আর মেহরাব মিলে উম্মের হাতে মারতে চেয়েছিল। কেড়ে নিয়েছিল মুশায়রার বাবার থেকে জোর করে আদায় করে নেওয়া সব সম্পত্তি।
আমার সবকিছু মাটিতে মিশিয়ে দিল। দিনের পর দিন জ্বীন উম্মের হাত থেকে বাচার জন্য পালিয়ে পালিয়ে বেরিয়েছি। তিল তিল করে সাজানো সব প্ল্যান নষ্ট করে দিল।
রাগে আমার গা ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছি। আজ এই শয়তানটাকে মেরে নিজের মা-বাবার মৃত্যুর শোধ নিব।
মুহিব ভাইয়া কেদে ফেলেছিল এসব শুনে। তাকে চোখ দিয়ে শান্ত্বনা জানালাম। এতবছর পর দুই ভাই-বোন একসাথ হয়েও একে অপরকে জড়িয়ে ভাই-বোন ডাকতে পারছিনা। ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে শক্ত হয়ে নিলাম।
শয়তান টা তপজপ শুরু করেছে। কোমড়ে আচল দিয়ে গুজে রাখা তলোয়ারের দিকে তাকালাম। আনতে ভুলিনি, এবার ওর খেলা শেষ করব।
শক্তি ব্যবহার করে পাশের শয়তান দুটোকে দূরে সরিয়ে দিলাম। শক্তি যেন অবশ হয়ে আছে, ঠিকমত ব্যবহার করতে পারছিনা। ঠিকি শয়তান দুটো ছিটকে পড়ে কাতরাচ্ছে।
শয়তানটা উঠে দাঁড়িয়ে অগ্নিচোখে তাকিয়ে বলল, জানতাম এমন ই কিছু হবে। তাই গুহাটা শয়তানের দ্বারা বন করে রেখেছি। শুভ শক্তি এখানে ক্ষীণ কাজ করবে। আর দেরী নয়, এক্ষুনি তোদের জবাই করব।
আমাদের আরো শক্ত করে বেধে নিল। ওয়াফাহ বুবু রীতিমত কেদে দিল, তাওহীদ নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
হাত এত শক্ত করে বেধেছে তলোয়ার হাতে নেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা, আমার শক্তি তো কাজ ই করছেনা। মুহিব ভাইয়া আমার ব্যাপারটা বুঝতে পারল। নিজের শক্তি কাজে লাগানোর চেষ্টা করে আমার হাত খুলতে চাইল।
কয়েকবার চেষ্টার পর আমার হাতের বাধন আলগা হয়ে এল। পাশের শয়তানকে লাথি দিয়ে উঠে দাড়ালাম। তাড়াতাড়ি তলোয়ার টা হাতে নিয়ে এলোপাথাড়ি কোপানো শুরু করেছি চেলাগুলোকে।
এমন অবস্থা দেখে শয়তানটা দিশেহারা হতে গেল। নিজের শক্তি ব্যবহার করতে লাগলাম, কিন্তু কিছুতেই আমাকে বন্দি করতে পারছেনা।
অবশেষে ব্যর্থ হয়ে মুহিব ভাইয়াকে আঘাত করল। ভাইয়া ব্যথা পেয়ে মাটিতে বসে পড়ল। জেদ উঠে গেল আমার।

তলোয়ারের থেকে সবুজ রশ্মি বের করে তাকে আঘাত করতে চাইলাম। পারলামনা, সে অদৃশ্য হয়ে হাসতে লাগল। হাসির আওয়াজ শুনে আঘাত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু বরাবরের মত ব্যর্থ হচ্ছি।
ক্লান্ত হয়ে মাটিতেই বসে পড়লাম। শয়তানের হাসি যেন আর থামছেইনা। চারিদিকেই হাসির আওয়াজ। এভাবে আমাকে কুপোকাত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
তলোয়ারের উপর নিজের প্রতিবিম্ব ভাসতে দেখে জ্বীনদাদুর কথা মনে পড়ল। উনি নিশ্চয়ই কোনো সাহায্য করতে পারে এই ব্যাপারে।
মনে মনে স্মরণ করতেই জ্বীনদাদুর প্রতিবিম্ব ভেসে উঠল।
— দাদু!
— আসল সত্য আর শত্রুটার মুখোমুখি হয়ে গেছিস তাহলে
— হ্যা, এখন কি করে একে শেষ করব বলো।
কিছুতেই পারছিনা। উলটো হেরে যাচ্ছি বার বার।
— এভাবে ওর সাথে পেরে উঠবিনা। তুই আয়াতুল কুরসি পড়ে তলোয়ারটা ওর দিকে ছুড়ে মারবি যখন মহররমের নতুন চাঁদ মেঘ থেকে বেরিয়ে আসবে। একমূহুর্ত যাতে এদিক ওদিক যাতে না হয়।
তোরা দুজন দুবার ওকে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করবি পর পর।
আমি গুহার ফাক দিয়ে আকাশের দিকে তাকালাম। চাদটা মেঘে ঢেকে যাচ্ছে, ততক্ষনে শয়তানটাও দৃশ্যমান হল। হয়ে বলতে লাগল,
— পারবিনা আমার সাথে।
২১বছরের সাধনা আমার, তোদের মত পুচকুদের কাছে হেরে যাওয়ার জন্য না।
আমি মুহিব ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ও ততক্ষণে পায়ে ব্যথা নিয়েও উঠে দাড়িয়েছে। দুজনেই আয়াতুল কুরসি পড়ে নিলাম।
আড়াল করা মেঘটা আস্তে আস্তে করে চাঁদ বেরিয়ে আসছে। এখন ই সঠিক সময়।
একলাফে শয়তানটার উপর ঝাপিয়ে পড়ে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করেই তলোয়ারটা মুহিব ভাইয়ার দিকে ছুড়ে দিলাম।
ভাইয়াও ছুটে এসে শয়তানটার বুক বরাবর তলোয়ার বসিয়ে দিল। শয়তানটা উচ্চস্বরে গোঙ্গাতে শুরু করল। তার চোখের ভেসে উঠল দুটো সুন্দর মুখ। হ্যা চিনতে পেরেছি আমাদের আম্মি-আব্বুর চেহারা। তাদের মুখে উজ্জ্বল হাসিটা লেগে ছিল। আস্তে আস্তে অদৃশ্য হয়ে গেল তাদের মুখ দুটো।
তাওহীদ আর ওয়াফাহকে বাধন মুক্ত করে দিলাম।
মুহিব ভাইয়া আমাকে ডেকে বলল, কাছে আয় বোন।
পরমতৃপ্তিতে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম। দুই ভাই-বোন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাদছি। অনেকদিন পর ভীষণ শান্তি লাগছে।

ব্যালকুনির দোলনায় বসে আছে তাওহীদ। আজকের রাতটা ভীষণ সুন্দর, চাদের জোৎস্না লুটোপুটি খাচ্ছে ব্যালকুনিতে থাকার ফুলের গাছগুলোর উপর।
তার কোলে মাথা রেখে চোখ বুজে শুয়ে আছে ওয়াফাহ। হঠাৎ ধড়মড়িয়ে উঠে বলল, কত রাত হয়ে গেল। তুমি খাবেনা?
— বেশ তো ঘুমাচ্ছিলে। উঠলে কেন?
তোমাকে না বলেছি একদম আমাকে নিয়ে ভাববেনা। আমাকে এখন তোমায় নিয়ে ভাবতে দাও।
— ফাজলামি রেখে এসো খাবে। আমি টেবিল সাজাচ্ছি। চুলে বান করতে করতে ওয়াফাহ ভিতরের ঘরে ঢুকে যায়। তাওহীদ চাদটার দিকে তাকিয়ে হাসি দেয়। ভিষণ মিষ্টি বাতাস বয়ছে, রাতে নিশ্চয়ই হালকা বৃষ্টি হবে। ভিতর থেকে ওয়াফাহর গলা ভেসে আসল, কিগো, আর কতক্ষণ?
তাড়াতাড়ি এসো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাওহীদ উঠে ভেতরের দিকে যায়।সময়মত না গেলে বাসায় গুন্ডামি শুরু হয়ে যাবে।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here