জ্বীনবর ৪,পর্বঃ০৮,০৯,১০

0
2296

জ্বীনবর ৪,পর্বঃ০৮,০৯,১০
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা

রাতে একা শুয়েছিলাম। সারাদিন জার্নি করার কারণে তাড়াতাড়ি ঘুম আসার কথা, কিন্তু কি কারণে জানি আসছিলনা। এপাশ ওপাশ করেই যাচ্ছি। হঠাৎ জানালার দিকে চোখ পড়তেই দেখি একটা কালো প্রতিবিম্ব আমার দিকে তাকিয়ে আছি। ধড়পড়িয়ে উঠে বসতে দেখি সেটা নেই। মনের ভুল ভেবে আবার অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ একটা অদ্ভুত আওয়াজ পেলাম, মমে হচ্ছে আওয়াজ টা খাটের নিচ থেকে আসছে। ভয়ে ভয়ে খাটের নিচে উকি দিলাম, সেখানেও কিছু দেখলামনা। সত্যিই কি আমার মনের ভুল এসব? ভাবতে ভাবতে রুমের জানালা আপনা আপনি জোরে জোরে খুলে বন্ধ হয়ে যেতে লাগল। ঘাবড়ে গিয়ে দরজা খুলতে গেলাম, কিন্তু খোলা যাচ্ছেনা। বারবার লক ঘুরিয়েও কোনো কাজ হচ্ছেনা। পায়ের নিচে তরল কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করতেই তাকিয়ে দেখি ফ্লোর রক্তে ভেজা। ভয় পেয়ে লাফিয়ে সরে গেলাম।
রুমের মধ্যে ল্যাম্পের আলো একবার নিভছে আর জ্বলছে। তাকে সাজিয়ে রাখা বইগুলো সব নিচে পড়ে যাচ্ছে ঝাকুনিতে। অনুভব করলাম, ঘাড়ের উপর কারো গরম নিঃশ্বাস পড়ছে। পিছনে তাকাতেই দেখি বিভৎস চেহারার একজন লোক আমার পাশে তাকিয়ে আছে। চোখ দুটো ঠেলে বের হয়ে আসছে, কন্ঠনালী ছেড়া সেটা বের হওয়া আর তা থেকে রক্ত ঝড়ছে। পা দুটো উলটো, হাতে একটা কাটা মাথা ঝুলছে। বিড়বিড় করতে বলতে লাগল,
— চলে যা এখান থেকে।
বাচতে চাইলে এক্ষুনি চলে যা। নাহলে তোর হাল আমার মতই হবে। ভয়ের চোটে আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছেনা, পুরো শরীর প্রচন্ড কাপছে। কোনোমতে বললাম, কেন চলে যাব? না গেলে কি হবে?
লোকটা অট্টহাসি দিয়ে বলল, শয়তানের কাছে এলে কি হয় জানিসনা! তুই তো শয়তানের আস্তানায়। ভয়ংকর শয়তানের হাত ধরে এসেছিস, এবার তো তোর নিস্তার নেই। তোর কাউকে বাচতে দেয়নি, তোকেও দিবেনা।
বলে লোকটা আমার গলা চেপে ধরল শক্ত করে। দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম আমার। নিঃশ্বাস ছেড়ে দেওয়ার মূহুর্তে সে আমাকে ছেড়ে দিল। আমি মৃতের মত ফ্লোরে পড়ে রইলাম। সে লোকটি জানালার দিকে চলে যাচ্ছিল, হঠাৎ থেমে শরীর না ঘুরিয়ে শুধু মাথা ঘুরিয়ে বলল, চলে যা এখান থেকে।
আমি আর সজাগ থাকতে পারলামনা, মূহুর্তেই জ্ঞান হারালাম।

চোখ খুলে দেখি তাসবীন আমার পাশে বসে আছে আমার হাত শক্ত করে ধরে। আমার কপালে হাত ছুয়ে বলল,
— কি হয়েছে আপনার?
কাল রাতের ঘটনাগুলো এক এক করে আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল। ধড়পড়িয়ে উঠে বিছানা থেকে নেমে নিজের কাপড়চোপড় গোছাতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। উনি আমার এমন আচরণ দেখে বলল,
— আপনি কাপড়চোপড় গোছাচ্ছেন কেন?
— আমি এখানে থাকবনা।
— কেন? আপনি কি থাকার ব্যবস্থা করে ফেলেছেন?
আমি একবার তাসবীনের মুখের দিকে তাকালাম। লোকটি বলেছিল, আমি শয়তানের হাত ধরে এখানে এসেছি। তার মানে সে তাসবীনকে শয়তান বলেছে। তাসবীন কি আসলেই কোনো শয়তান? উনার অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে আমাকে এখানে আনার পিছনে!
উনি আমার হাত ছুয়ে বলল, কেউ কি আপনাকে কিছু বলেছে? আমি শান্তভাবে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,
— আপনি আসলে কে? উনি চোখ মুখ অন্যরকম হয়ে গেল। আমতা আমতা করে বলল, আমি কে মানে?
— আপনার আসল পরিচয় কি?
— আপনি কি ঠিক আছেন? শান্ত হয়ে বসুন তো। আমার সন্দেহ টা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। উনি এভাবে ভয় পাচ্ছেন কেন? কেন ই বা প্রশ্নটা বার বার এড়িয়ে যাচ্ছেন?
আমার হাত থেকে ব্যাগ কেড়ে নিয়ে বলল,
— আপনি এখান থেকে কোথাও যাচ্ছেন না। এখানেই থাকবেন। বলে চলে গেলেন। আমি বেড়ের উপর বসে মাথা চেপে ধরে ভাবছি, তাসবীনের মধ্যে কোনো না কোনো রহস্য অবশ্যই আছে। উনি আমাকে না যেতে দেওয়ার পিছনে কারণ তো রয়েছে। কিসের এত ঠ্যাকা উনার যে আমাকে জোর করে হলেও রাখতেই হবে? তাসবীন কি আসলেই কোনো মানুষরুপী শয়তান?

আমি স্থির করে নিলাম, এই বাড়ীতে আমি থাকবনা। তাসবীনকে আমার সন্দেহ হচ্ছে। উনার আচরণ, আমার উপর জোর খাটানো সব ই আমাকে সন্দেহ করতে বাধ্য করছে। নিজের সন্দেহটার যুক্তি খুজতে লুকিয়ে লুকিয়ে উনার বেডরুমে ঢুকলাম। ঘরটা বেশ সুন্দর করে সাজানো, ওয়ালে আল্লাহর কালামের প্রিন্টিং। একপাশে জায়নামায, তসবীন, কুরআন শরীফ। পুরো রুমটায় মিষ্টি আতরের গন্ধ।
তেমন খারাপ কিছু চোখে পড়লনা, তাই সন্দেহটা আস্তে আস্তে কমতে শুরু করল। শয়তান নিশ্চয়ই আল্লাহর কালাম কিংবা এসব নিজের রুমে রাখবেনা।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজের ঘরের দিকে যেতেই উনার স্টাডি রুম চোখে পড়ল। একটু উকি মেরে দেখতে গেলাম উনি আদৌ ওখানে আছেন কিনা! দরজা হালকা খুলে পুরো রুমটায় চোখ বুলিয়ে নিলাম, উনি নেই এখানে। দরজা বন্ধ করে চলে যাব এমনসময় কৌতুহলবশত উনার স্টাডি রুমে ঢুকতে ইচ্ছে হল। ধীরপায়ে ঢুকলাম, কয়েকটা সাজানো গোছানো বইয়ের তাক আর একটা টেবিল-চেয়ার আছে। আমার নিজেরও বই পড়তে খুব ভালোলাগে। দু-একটা বই ঘেটে ঘেটে দেখলাম। কারো পায়ের আওয়াজ শুনে তাড়াহুড়ো করে বই রাখতে গিয়ে কয়েকটা বই ফেলে দিলাম। সেগুলো উঠাতে গিয়ে দেখি তাকের কর্ণারে একটা ছোট্ট সুইচ। এটা কিসের সুইচ? ভাবতে ভাবতে চাপ দিতেই তাক টা সরে গেলাম আর একটা খোলা গুপ্তদরজা দেখতে পেলাম। কেউ স্টাডি রুমের দরজা খুলছে টের পেয়ে তাড়াতাড়ি গুপ্তঘরটাতে ঢুকে গেলাম। সাথে সাথে দরজা বন্ধ হয়ে গেল। আমি চুপচাপ আবছা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে রইলাম।

অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর বের হতে চাইলাম। কিন্তু বের হব কি করে? এইদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে বের হওয়ার উপায় খুজছি। ঘরটায় বেশ ভারী কিছু জিনিসপত্র আছে, সবগুলোই সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। একটার সাদা কাপড় সরিয়ে দেখলাম এটা একটা বইয়ের তাক। অনেক পুরোনো, ছেড়া বই দিয়ে ভর্তি। বইগুলো থেকে ভ্যাপসা গন্ধ বের হচ্ছে। একটা হাতে নিয়ে নিলাম, কাভারের উপরের ধুলো ছেড়ে বইয়ের নাম টা পড়ার চেষ্টা করলাম। “শয়তানের উপাসনা” নামটি পড়েই ঘাবড়ে গেলাম।
একে একে আরো কয়েকটা বই নামিয়ে দেখলাম, সবগুলোই শয়তান ও তার সন্তুষ্টি লাভ সম্পর্কিত। উনার স্টাডির গুপ্ত ঘরে এসব বই কেন? ব্যাপারটা দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে গেল।
ভাগ্যক্রমে এখানেও তাকটার সাথে একটা সুইচ পেয়ে গেলাম। সব গুছিয়ে রেখে সেটায় প্রেস করলাম। দরজা খোলার পর স্বাভাবিক ভাবেই বের হয়ে আসলাম। কেমন যেন ঘাপলা লাগছে। যাক, ওইসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই তাসবীন চলে এসেছে। আমাকে রুমে না দেখলে জেরা করবে। তাড়াতাড়ি নিচে চলে এলাম। ঠিক যে ভয়টা পাচ্ছিলাম তাই ই হল। তাসবীন আমার বেডের উপর বসে আছে। আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করল,
— কোথায় ছিলেন?
— তেমন কোথাও না, আশে পাশেই।
আমার হাতের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার হাতে এত ধুলো কেন? ভিমড়ি খেয়ে গেলাম এমন প্রশ্নে।
হাত ঝেড়ে বললাম, জানিনা কিভাবে লেগেছে? কয়েকটা জিনিসপত্র নেড়েচেড়ে দেখেছিলাম।
উনি একপলকে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
আমি মনে মনে ভয় পাচ্ছি উনি বুঝে ফেললেন নাকি আবার।
.
(চলবে)

জ্বীনবর ৪
পর্বঃ০৯
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা

উনি আমাকে আর কিছু বললেননা। আমি উনার চেহারার দিকে তাকিয়ে ভাবছি, এত ভালো একটা ছেলে কি করে আমাকে ধোকা দিতে পারে! এত সুন্দর করে আল্লাহর বাণী বলে বেড়ানো মানুষ কি করে শয়তান হয়!
এমনসময় সানজানা আর আন্টি আমার রুমে আসল। আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এতক্ষণ কোথায় ছিলে? তোমাকে খুজছিলাম। আমি উনার মুখের দিকে তাকালাম, উনিও আমার উত্তরের জন্য আগ্রহচিত্তে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। দুজনকে দুইরকম কথা বললে প্যাচে পড়ে যাব। এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বললাম,
— আন্টি আমাকে খুজছিলেন কেন?
— সবাই মিলে সন্ধ্যে বেলা একটু বের হব। তোমাকেও আমাদের সাথে নিতে চাই। রেডি হয়ে থেকো কেমন?
— কোথায় যাব আন্টি?
— আমার বান্ধবীর মেয়ের আকদ, সবাইকে স্বপরিবারে দাওয়াত করেছে।
আমি একটু চুপ থেকে বললাম, আন্টি আমি যাবনা। আন্টি কিছু বলার আগে সানজানা আমাকে নিজের দিকে টেনে এনে বলল, যাবেনা কেন? তোমাকে আমাদের সাথে যেতেই হবে।
— আসলে আমার শরীরটা একটু খারাপ। আমি এখন বের হলে আমার কাছেই বেশী খারাপ লাগবে। তারচেয়ে বরং আমি বাসায় রেস্ট করি। তাসবীন আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, আপনার শরীর খারাপ বলেননি তো!
— তেমন কিছু না। মাইগ্রেনের পেইন হালকা। একটু ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে।
আন্টি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, তোমাকে বাসায় একা ফেলে কিভাবে যাই?
— চিন্তা করবেন না আন্টি। আমি ঘুমিয়ে থাকব। সমস্যা হবেনা, আপনারা বরং তৈরি হয়ে নিন।
তাসবীন তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলল, আম্মু তাহলে তোমরা যাও। আমি বাসায় ই আছি।
— তুইও যাবিনা? ফারজানা যে এত করে তোকে যাওয়ার জন্য বলে গেল।
— উনাকে অসুস্থ অবস্থায় একা ফেলে কিভাবে যাই বলো তো? উনি যেহেতু এখন আমাদের বাসায় ই আছেন, উনার ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব তো আমাদের।
আমি উনাকে সরাসরি বললাম, আমি সত্যিই ঠিক আছি। আপনি এভাবে জেদ করবেননা।
— মুসকান আপনাকে এভাবে ফেলে আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব না। আন্টির ডাক এল বাহির থেকে, উনি আমাকে বললেন,
— দেখোনা, এর মধ্যে যদি শরীর ভাল হয়ে যায় তবে আমাদের সাথে যাবে। একটু রেস্ট করো।
আর যদি না ভাল হয় তবে সানজানা তোমার সাথে থাকবে।
আর তাসবীন ফারজানা কিন্তু খুব করে বলে গেছেন, তুমি না গেলে ব্যাপারটা বাজে দেখাবে। দরকার হলে বেশীক্ষণ থেকোনা, দেখা সাক্ষাত করে চলে এসো।
এসব বলে আন্টি আর সানজানা চলে গেলেন। আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— আপনি কিন্তু এভাবে আমাকে ছোট করছেন। আপনি যদি এমনটা করতে থাকেন, তাহলে আমার এখানে থাকা সম্ভব হবেনা। অনুরোধ করছি, আপনি আন্টিদের সাথে যান। আমার কোনো অসুবিধা হবেনা।
উনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
— আচ্ছা।
তবে আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরব, ততক্ষণ অবধি নিজের খেয়াল রাখবেন।
— ধন্যবাদ অনুরোধ রাখার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
ওরা চলে যাওয়ার পর আমি দরজা লক করে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। পরপর সব ঘটনা মিলানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু একটা ঘাপলা রয়েই গেছে। এতসব করার পরও তাসবীন কেন ভালো মানুষ সেজে আছে? আর কালকে রাতের লোকটাই বা কে যে আমাকে সাবধান করতে এসেছিল? এই সবকিছুর উত্তর তাসবীন নাহলে ওই লোকটিই দিতে পারবে।
কিন্তু এখন আমার কি করা উচিত? এখান থেকে চলে যাওয়া নাকি ওনার মুখোশ সবার সামনে টেনে ছিড়ে ফেলা? এমনসময় লোডশেডিং হয়ে গেল। একটু ঘাবড়ে গেলাম। উঠে মোম বা টর্চ খোজার চেষ্টা করছি। রান্নাঘরে নিশ্চয়ই থাকবে, আবছা অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে রান্নাঘরে গেলাম। ভাগ্যক্রমে মোমবাতি পেয়ে গেছি। সেটা জ্বালিয়ে ফেরার সময় জানালা দিয়ে রাস্তার দিকে চোখ পড়ল। সেখানে এখনো ল্যাম্পপোস্ট জ্বলছে, কিছুটা দূরের আশেপাশের বাসার আলো জ্বলছে। মোটকথা, শুধু এই বাড়ীতেই লোডশেডিং। ব্যাপারটা কেমন জানি রহস্যজনক।
মোমবাতি নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে রইলাম। নিজের রুমে একা যাওয়ার সাহস পাচ্ছিনা। হঠাৎ বিকট শব্দে সদর দরজা খুলে গেল। লম্বামতন কেউ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মোমবাতি উচিয়ে ধরে বোঝার চেষ্টা করলাম মানুষটা কে!
পরক্ষণেই চেচিয়ে বললাম, কে ওখানে? সামনে আসুন বলছি।
ছায়ামানুষটা আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। হঠাৎ আবার চোখের সামনে মিলিয়ে গেল। মোম হাতে নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম দেখতে আসলেই কেউ আছে কিনা। কেউ যেন আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, আমায় খুজছো? চমকে গিয়ে মোম সেদিকে ঘুরিয়ে দেখি তাসবীন আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
তার চোখ দুটো ভীষণ লাল, সাদা শার্ট পুরো রক্তে লাল হয়ে আছে। এক হাতে শান দেওয়া ছুরি চকচক করছে।
আমতা আমতা করে বললাম,
— আপনি? কখন এলেন? এই অবস্থা কেন আপনার?
উনি ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ থাকার ইশারা দিলেন। হাত দিয়ে ছুরিটা নাড়তে নাড়তে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। আমি বুঝতে পারছিনা উনি কি করতে চাচ্ছেন?
ভয়ে এক পা এক পা করে পিছিয়ে যেতে লাগলাম। পিছুতে পিছুতে দেয়ালের সাথে গিয়ে ঠেকলাম। উনি হিংস্রভাবে আমার কাছে এসে আমার চুল চেপে ধরে ছুরিটা আমার গলা বরাবর তাক করলেন। ফিসফিস করে বললেন,
— আমার ব্যাপারে সব জেনে গেছিস তাইনা?
এখন তো তাহলে তোকে মরতে হবে। তোর রক্ত আমি শয়তানের উদ্দেশ্যে ভোগ দিব। বলে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।
এত তাড়াতাড়ি তাসবীনের আসল রুপ আমার সামনে চলে আসবে সেটা আমি ভাবতেও পারিনি। এর হাত থেকে যে করে হোক আমাকে বাচতে হবে। বিড়বিড় করে আয়াতুল কুরসি পড়তে শুরু করলাম। তাসবীন দুহাতে কান চেপে ধরে আমার থেকে দূরে সরে গেল। এই সুযোগ আমার পালানোর।
দৌড়ে দরজার বাহিরে এসে দোয়া পড়ে দরজা বাহিরে থেকে বন্ধ করে বেরিয়ে এলাম। জানিনা এটা আদৌ কাজ করবে কিনা? কতক্ষণ সে ভিতরে আটকে থাকবে? কিন্তু এটা জানি এখান থেকে যত দ্রুত সম্ভব আমার পালাতে হবে।
রাস্তায় এসে এদিক ওদিক তাকালাম। কোথায় পালাব বুঝতে পারছিনা! নিজের উপর ভরসা রেখে উলটো দিকে দৌড়াতে লাগলাম। খালি পায়ে দৌড়াতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, পায়ের কোথাও হয়ত ছড়ে গেছে। কিছুটা দৌড়ে আসার পর দেখি বিপরীত দিকে তাসবীন ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
ছুটে আসছে আমার দিকে। প্রাণপণে আবার দৌড়াতে লাগলাম।
ধরতে না পেরে সে আমার দিকে ছুরি ছুড়ে মারল। আল্লাহ সহায় ছিল বলে অল্পের জন্য গায়ে লাগেনি। তবে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কিছুটা ছড়ে গেছে পিঠ। প্রচন্ড ক্ষোভে সে আমাকে আবার তাড়া করতে শুরু করল। রাস্তায় কত গাড়ি, থামানোর কত চেষ্টা করলাম কিন্তু একটা গাড়িও থামলনা। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে এতক্ষণ দৌড়ে। কিন্তু নিজের উপর ভরসা করে যতটা পারি ছুটতে লাগলাম। ছুটতে ছুটতে বড় একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খেলাম। চোখ বুজে আসার মূহুর্তে দেখলাম তাসবীন এগিয়ে আসছে ছুরি নিয়ে। মুখে ভয়ংকর হাসিটা।
আমার মৃৃত্যু আমার সামনে উপস্থিত, আর বাচার কোনো উপায় নেই। আল্লাহ আপনি আমাকে রক্ষা করুন। যেভাবেই মরি আফসোস নেই, কিন্তু কোনো শয়তানের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে চাইনা।
.
(চলবে)

জ্বীনবর ৪
পর্বঃ১০
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা

আস্তে আস্তে চোখ মেলে চারপাশে তাকালাম। বুঝার চেষ্টা করলাম আমি আসলে কোথায় আছি! মার্বেল পাথরের প্রশস্ত ঘর, সাজানো দেয়াল, নরম বিছানা কিছুই আমার চেনা নয়। উঠে বসে মনে করার চেষ্টা করলাম আমি এখানে এলাম কি করে? উহু কিছুতেই স্মরণ করতে পারছিনা। তবে এটুকু মনে পড়ল কাল তাসবীন আমাকে ধাওয়া করেছিল। শেষে আমার তার নাগালের মধ্যে পড়ে গেছিলাম। শান দেওয়া ছুরিটা নিয়ে সে আমার দিকে এগিয়ে আসছিল, তারপর কি হল আমি জানিনা। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আমি এখনো বেচে আছি।
কিন্তু আমি এখানে কি করে এলাম? আর তাসবীন ই বা কোথায়? হাতের নাগালে পেয়েও সে আমাকে ছেড়ে দিল! অদ্ভুত লাগল। বিছানা থেকে মেঝেতে পা নামিয়ে রাখতে একজন আধবয়স্ক লোক ছুটে এল আমার কাছে। আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, মা তুই ঠিক আছিস তো? কে কোথায় আছিস দেখে যা আমার ত্বোহা মায়ের জ্ঞান ফিরেছে।
আমার অস্বস্তি লাগল। কে ত্বোহা? আমি তো মুসকান! আর উনি ই বা কে? আমি নিচুকন্ঠে বললাম,
— বুঝতে পারলাম না আপনি কার কথা বলছেন!
দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি আরো দুজন মহিলা, একটা মেয়ে আর একজন আধবয়স্ক লোক এসে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটি এগিয়ে এসে উনাকে বলল,
— ভাইয়া শান্ত হও। ত্বোহা এখন সুস্থ আছে। তুমি চিন্তা করোনা। আমি জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে লোকটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। মহিলাদের মধ্যে একজন এসে আমার চুমু একে দিয়ে বলল, আপনাকে বলেছি না ভাইয়া আমাদের ত্বোহা ঠিক একদিন আমাদের কাছে ফিরে আসবে।
লোকটা খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলল,
— তুমি ঠিকি বলেছিলে সামিয়া। দেখো মেয়েটার মুখ কেমন জানি শুকিয়ে গেছো। কেউ টেবিল সাজাও, আজ আমি আর আমার মেয়ে একসাথে বসে খাব। কিরে মা বাবার সাথে বসে খাবিনা?
আমি মাথা নাড়িয়ে হুম বললাম। পাশের লোকটা বলে উঠল, চল ভাইয়া। ও বরং ফ্রেশ হয়ে আসুক। আমরা টেবিলে গিয়ে বসি।
— ত্বোহা মা, তাড়াতাড়ি আয়। বাবা আজ তোকে খাইয়ে দিব। সবাই আস্তে আস্তে ঘর ফাকা করে দিয়ে বের হয়ে গেল। চিন্তিত হয়ে বিছানায় বসে পড়লাম। কে এরা? আমাকে ত্বোহা বলেই বা সম্বোধন করছে কেন? কিছুই বুঝতে পারছিনা। সব জানতে হবে আমাকে। এখন এরা যা বলছে তাই করি। ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে এলাম। লোকটি আমাকে তার পাশে বসাল। স্যুপের বাটি থেকে স্যুপ নিয়ে আমাকে খাইয়ে দিতে লাগল। জানিনা কেন আমার চোখ বেয়ে বেয়ে পানি ঝড়তে লাগল। খুব কম ই আমি বাবার আদর পেয়েছি, স্পষ্ট করে মনেও নেই মা-বাবার কথা। তারপর থেকে কেউ আমাকে এভাবে আদর করে খাইয়ে দেয়নি। এত বছর পর বাবার বয়সী কারো থেকে এমন আদর পেয়ে আনন্দে-বিরহে চোখে পানি চলে আসল।
লোকটা আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল, খাওয়ার সময় কাদতে আছে পাগলি! বাবা পাশে আছি তো তোর।
ত্বোহা মা, আমাকে একবার বাবা বলে ডাকবি?
কতদিন তোর মুখ থেকে বাবা ডাক শুনিনি বল তো।
আমি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলামনা। লোকটাকে জড়িয়ে ধরে কেদে কেদে বললাম, বাবা, খুব ভালোবাসি তোমায়। আমাকে ছেড়ে আর কোথাও যেওনা।
লোকটা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, কোথাও যাবনা আর তোকেও যেতে দিবনা। তোকেও আমি খুব ভালোবাসি।
খুব শান্তি লাগছিল ওই মূহুর্তে। মনে হচ্ছিল আমি সত্যিই আমার বাবাকে ফিরে পেয়েছি। অনেক হালকা লাগছিল ভেতরটা। নিজেকে আর অসহায়, এতিম মনে হলনা। বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছিল, ইনি আমার বাবা।
কিন্তু মানুষ যা চায় তা তো সবসময় হয়না। উনার মেয়ের জায়গা আমি নিজেকে বসিয়েছি ঠিক ই কিন্তু আদৌ উনার মেয়ে হয়ে উঠতে পারব তো! এসব কি ভাবছি আমি? কারো দূর্বলতা কাজে লাগিয়ে আমি নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে পারিনা। এটা অন্যায়। ভেবেই উনাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে চলে এলাম।
ছাদে উঠে বসে আছি। হালকা বাতাসে কপালের সামনের চুলগুলো নড়ছে, বার বার সরাতে খুব একটা খারাপ লাগছেনা। উঠে রেলিং এর গা ঘেষে দাড়ালাম। যতদূর চোখ যায়, আবছা জ্যোৎস্নাভেজা অন্ধকার। এই বাড়ীটা অনেক বিশাল, মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবার বলা চলে। প্রতিটা মানুষও অনেক ভালো। কপালের জোরে এখানে এসে পড়লাম। নিজেকে কেমন জানি হাওয়ায় ভাসা খড়কুটা মনে হচ্ছে, হাওয়ার টানে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে পড়ছি।
এমনসময় কেউ আমার পিছনে এসে দাড়াল। চমকে উঠে বললাম, কে? লোকটি উত্তর দিল, আমি। তোমার তথাকথিত চাচ্চু। আমি আস্তে করে বললাম,
— কিছু বলবেন?
— হ্যা বলার জন্য ই এসেছি।
— জ্বি বলুন।
— তোমার মনে অনেক প্রশ্ন তাইনা? তুমি এখানে কি করে এলে? আমার ভাই তোমাকে নিয়ে এত উতলা কেন? তোমাকে অন্য নামে সম্বোধন করছে কেন?
— হ্যা, আমি এসব জানতে চাই। দয়া করে আমাকে বলুন।
— আমার ভাই একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ছিল। এক মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে বেশ সুখেই ছিল। কোনো এক দুর্ঘটনায় ভাবী আর আমার ভাগ্নি মারা যায়।
তারপর থেকে শুরু হয় ভাইয়ার পাগলামী। যখন এসব ঘটে, আমি বিদেশে ছিলাম। তাড়াহুড়ো করে আমার স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে এখানে চলে আসি। ভাইয়া এমন বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে তার ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করি।
কিছুটা ভালো হওয়ার পর তার আবার পাগলামী বেড়ে যায়। ও বিশ্বাস করে ওর মেয়ে বেচে আছে, উনার কাছে ফিরে আসবে। এইরকম পাগলামী দেখে আমরা তাকে আশ্বাস দেই তার মেয়েকে তার কাছে এনে দিব।
এভাবে শান্ত্বনা দেওয়ার মধ্যেই কয়েকটা বছর কেটে যায়। কিছুদিন ধরে ওর পাগলামীটা আবার চড়া হয়েছে। আর কিছুতেই ও বুঝ মানছেনা।
এসব টেনশান নিয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে তোমাকে ধাক্কা মেরে দিই। অত রাতে দূরের হাসপাতালে না নিয়ে তোমাকে বাড়ীতে নিয়ে আসি। পার্সোনাল ডাক্তার দেখাই, উনি আশ্বাস দিলেন ভয়ের কিছু নেই। তোমার তেমন আঘাত লাগেনি। ভেবেছি তোমার জ্ঞান ফিরলে তোমাকে তোমার বাড়ীতে ছেড়ে দিয়ে আসব।
মাঝরাতে ভাইয়া হঠাৎ তোমার রুমে ছুটে এসে বলে, এটাই তার ত্বোহা। অনেক বুঝিয়েও লাভ হয়নি। সে মানতে নারাজ তুমি অন্য কেউ। সারারাত তোমার মাথার পাশে বসে তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছে। ভাইয়ার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কথা ভেবে তোমাকে ত্বোহা বলে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি।
এবার বলো তুমি কে? কোথায় থাকো?
চোখের পানি আড়াল করে বললাম,
— আমি মুসকান। কাকা-কাকী আর দাদীমার সাথেই থাকতাম। বেশ কিছুদিন আগে উনারা সবাই মারা গেছেন। তাই নিজের ব্যবস্থা করতে এখানে চলে এসেছি।
উনি একটু চুপ থেকে বললেন,
— তোমার কাছে একটা অনুরোধ করব।
— কি অনুরোধ?
— আপাতত আমার ভাই সুস্থ হওয়া অবধি তুমি এখানে ত্বোহা পরিচয়েই থাকো। দেখছোই তো তুমি আসার সময় ও কেমন হাসি-খুশি থাকছে, কোনোরকম পাগলামী করছেনা।
— কিন্তু এটা তো উনাকে ঠকানো হবে।
— এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তুমি আর না করোনা। ভাই ভালো হলে তোমার ইচ্ছে হলে চলে যেও।
এর জন্য আমি পেমেন্ট করতেও রাজি।
— সবকিছু টাকা দিয়ে হয়না আঙ্কেল। আপনি যেহেতু আমাকে এত করে বলছেন ঠিক আছে আমি আপনার কথা রাখব। ভরসা রাখতে পারেন।
— আল্লাহ তোমার ভালো করুন।
বলে উনি নিচে চলে গেলেন। আমি একা দাঁড়িয়ে রইলাম একরাশ নিস্তব্ধতার মাঝে। একটু পর লোকটার মেয়ে আসল। এসে জিজ্ঞেস করল, কেমন আছো আপু?
— হ্যা ভাল, তুমি?
— হ্যা ভাল। অনেকক্ষণ একা ছাদে আছো দেখলাম তাই গল্প করতে চলে আসলাম। মেয়েটির দিকে একনজর তাকিয়ে দেখলাম। শ্যামলা বর্ণের মেয়েদের মধ্যে আলাদা একটা মায়া থাকে। মেয়েটির মধ্যেও তাই, প্রায় সমবয়সী ই মনে হল। মেয়েটি একটু থেমে বলল,
— কিছু ভাবছো?
— না তেমন কিছু না। তোমার নাম কি?
— লামিয়া। আচ্ছা আমরা তো সমবয়সী, তাছাড়া তুমি আমার বোনের মত। তোমায় তুই করেই বলি?
— হ্যা অবশ্যই। তুই শব্দ টা আমারো খুব আপন লাগে।
অনেকক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পর নীচে চলে এলাম। বাবার সাথে খেতে বসলাম, খাওয়া শেষে উনি উনার কোলে আমার মাথা রেখে হাত বুলাতে বুলাতে কতশত গল্প করল। নিজেকে ভীষণ সুখী মনে হচ্ছিল। এমন একটা বাবার ছায়া যদি মাথার উপরে থাকে শত তাসবীন ও সামনে আসার সাহস করবেনা।

বাবার ঘুম চলে এলে আমি আস্তে করে নেমে নিজের রুমে চলে এলাম। দরজা লক করে শুয়ে পড়ব এমন সময় দেখি ব্যালকুনিতে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। আতঙ্কে মুখ শুকিয়ে গেল, তাসবীন আমার পিছু নিয়ে এখানেও চলে এসেছে। আজ ওর নিস্তার নেই আমার হাত থেকে। বেডটেবিল থেকে ভারী ফুলদানিটা নিয়ে আস্তে আস্তে ব্যালকুনির দিকে যেতে লাগলাম। তার পিছনে দাঁড়িয়ে সবে মারার প্রস্তুতি নিচ্ছি। লোকটা আমার হাতটা খপ করে ধরে মুখ চেপে ধরে। তার এমন কাজে আমার হাত থেকে ফুলদানি পড়ে উচ্চশব্দে ভেঙ্গে গেল। আমি কিছু বলার চেষ্টা করছি কিন্তু শক্ত হাতটার জন্য কোনো কথা ই বের হচ্ছেনা। পুরুষকন্ঠটা ফিসফিসিয়ে বলল, মারতে আসছেন কেন?
এভাবে পিছনে আঘাত করাটা কি ঠিক? যদি ব্যথা পেতাম।
আমি বড় বড় চোখ করে তার দিকে তাকিয়ে আছি। অন্ধকারে তার মুখ দেখা যাচ্ছেনা, তার উপর মাথার উপর হুড তুলে আছে। সে আবার বলা শুরু করলেন,
— এভাবে বড় বড় চোখ করে কি দেখছেন? আমি আপনাকে ভয় পাচ্ছিনা।
দাত দিয়ে তার হাতে ছোট করে কামড় দিতেই তার হাত সরিয়ে নিলেন। তাড়াতাড়ি উবু হয়ে হাতড়ে ভাঙ্গা ফুলদানির এক টুকরো অংশ হাতে নিয়ে তার দিকে উচিয়ে বললাম, ব্যথা পাওয়ার জন্য ই তো মারতে চেয়েছি। কে আপনি হুম? এভাবে লুকিয়ে অন্যের রুমে ঢুকতে লজ্জা করেনা। দাড়ান লাইট জ্বালিয়ে এক্ষুনি সবাইকে ডাকছি।
সে আমার হাতটা উলটো করে মোচড়ে ধরে বলল,
— আমি কি জানি এটা আপনার মত বদরাগী মেয়ের রুম?
ভুল করে চলে এসেছি। কাউকে ডাকতে হবেনা আমি চলে যাচ্ছি।
— আমি বদরাগী। ছাড়ুন বলছি , আমি ব্যথা পাচ্ছি।
— ব্যথার পাওয়ার জন্য ই তো ধরেছি।
এমনসময় বাহিরে থেকে দরজায় কেউ কড়া নাড়ল। সে আমার হাত ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথে ছুটে গিয়ে দরজা খুলে আলো জ্বালালাম। লামিয়া ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললাম,
— কিছু একটা ভাঙ্গার শব্দ পেলাম। কি ভেঙ্গেছে?
আমি ওর কথার উত্তর না দিয়ে ব্যালকুনির দিকে গেলাম। ওখানে কেউ নেই, ফুলদানিটা আগের মত ওখানে পড়ে আছে। কিছুক্ষণ আগে তো এটা ভেঙ্গে গেছিল, জোড়া লাগল কি করে!
লামিয়া আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
— কি হল? উত্তর দিচ্ছিস না যে! ব্যালকুনিতে কে আছে?
— কেউ নেই। ফুলদানিটা হাত থেকে পড়ে গিয়েছিল ভাগ্যিস ভাঙ্গেনি।
— ওহ আচ্ছা। তুই ঘুমাসনি?
— এইতো ঘুমাব।
— আচ্ছা আসিরে। আমারো বড্ড ঘুম পেয়েছি।
— ঠিক আছে আয়। আল্লাহ হাফেজ।
লাইট অফ করতেই আবার সে পুরুষকন্ঠ,
— ঘাবড়ে গেছেন মনে হয়?
— মোটেও নাহ। আপনি আসলে কে বলুন তো?
এভাবে রাত-বিরাতে আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন? অই সময় কোথায় ই বা পালালেন?
— এত প্রশ্নের উত্তর একসাথে কিভাবে দেই বলুন তো!
আপনি এখন ঘুমান। আমি আসছি।
মাঝে মাঝে ভয় দেখানোর জন্য আসব।
বলে চুপ মেরে গেল। বুঝলাম, সে চলে গেছে। মনের মধ্যে আতঙ্ক ঢুকে গেছে। এটা তাসবীন নয় তো, আমাকে ফাদে ফেলার নতুন কোনো ষড়যন্ত্র না তো?
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here