জ্বীনবর ৪,পর্বঃ১৩

0
1899

জ্বীনবর ৪,পর্বঃ১৩
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা

এভাবে শুয়ে থেকে কখন যে ঘুম এসে গেল টের ই পেলামনা। হঠাৎ অনুভব করলাম কারো গরম নিঃশ্বাস আমার নাক-মুখে ঠিকরে পড়ছে। চমকে চোখ মেললাম। আমার বরব্যাটা আমার দিকে ঝুকে আছে। এক ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে উঠে বসলাম। বেচারা ধাক্কা খেয়ে টাল সামলাতে না পেরে বিছানা থেকে মেঝেতে পড়ে চিৎপটাং। কোমড়ে হাত দিয়ে বলল,
— আমি কি আপনার শত্রু নাকি? এত জোরে ধাক্কা দেয় কেউ! উফফ, ব্যথায় নড়তে পারছি। কোমড় টা বুঝি ভেঙ্গেই গেল। আমি হাসতে হাসতে বিছানা থেকে নেমে বললাম,
— বেশ হয়েছে। লজ্জা করেনা ঘুমন্ত মানুষের দিকে বাজে নজর দিতে। আপনি তো ছেলে ভালোনা।
— কিসের বাজে নজর? আমি তো আপনার ঘুমন্ত চেহারা দেখছিলাম। নিজের বউকে দেখলে সেটাকে বাজে নজর বলে?
— ঘুমন্ত চেহারা দেখার কি আছে? আলগা পিরিত দেখাবেননা।
— আসলে ছোটবেলা মা আমাকে পেত্নীর গল্প শুনিয়েছিল। কখনো দেখার দুর্ভাগ্য হয়নি, তাই আপনার ঘুমন্ত চেহারাটা দেখে সেটার শখ মিটালাম।
— একদম বাজে কথা বলবেননা। লইট্টা শুটকি একটা।
— হুহ, মাসেল দেখেছেন। আপনার মত আটার বস্তা অবশ্য এসবের বুঝবে কি! এখন আমাকে উঠান তো।
মনে মনে ভাবলাম, আমাকে আটার বস্তা বলা তাইনা! দেখাচ্ছি মজা। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, নিন উঠুন।
উনি আমার হাত ধরে যেই উঠতে চেষ্টা করল, আমি উনার হাত ছেড়ে দিলাম। বেচারা আবার পড়ে গেল।
— আহহ! এটা কি হল?
— বেশ হয়েছে। আমার এত ঠ্যাকা নেই আপনাকে টেনে তোলার। এতক্ষণ মাসেল দেখাচ্ছিলেন না, ওইটা দিয়েই উঠে পড়ুন। এমনসময় সাহারা ভাবী ভাবী করতে রুমে ঢুকল। এসে উনাকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে হেসে বলল,
— ভাইয়া এভাবে পড়ে আছো কেন? ভাবী ফেলে দিয়েছে বুঝি!
— হুহ, তোর ভাবীর অত ক্ষমতা আছে নাকি! আসলে আমি আমার বইটা খুজছিলাম। খাটের নিচে রেখেছিলাম মনে হয়। সাহারা এবার আরো জোরে হেসে বলল,
— ভাইয়া বই তোমার শেলফে থাকে, খাটের নিচে নয়।
— আ.. আ.. জানি জানি। এদিকে আয়, আমাকে টেনে উঠা। সাহারা উনাকে উঠিয়ে বলল, খুব লেগেছে নারে!
— টেনে মারব এক চড়। বড়দের সাথে মশকরা করিস?
— সে তুই যা ই বল। তোকে কাত করার লোক এসে গেছে।
— ছাগী দিয়ে লাঙ্গল টানা হয়না জানিস না।
রেগে বিড়বিড় করে বলল, পাজি ছেলে।
সাহারা আমার কাছে এসে বলল, তোমার কিছু লাগবে কিনা দেখতে এলাম। তুমি এখনো ফ্রেশ হওনি, তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হও। তোমার বউভাত উপলক্ষে আজ অনেক রান্না করেছে মা। তাড়াতাড়ি নিচে এসো দেখবে। আমি যাচ্ছি।
আর ভাইয়া মিষ্টি ভাবিটাকে এত জ্বালিয়োনা।
সাহারা চলে যেতেই উনি আমাকে বললেন, আগে আপনি ফ্রেশ হবেন নাকি আমি?
— আপনি হয়ে নিন। আমি ব্যাগ থেকে শাড়ি বের করে গুছিয়ে রাখি।
— ঠিক আছে। আর শুনুন, আলমিরার নিচের পার্ট আমি খালি করে রেখেছি। ওখানে আপনার সব কিছু রাখুন। উপরের পার্ট ভি.আই.পি। ওইটা ঘেটে এলোমেলো করবেননা। বলে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।
কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে আলমিরার উপরের পার্টে নিজের কাপড়-চোপড় খুজতে লাগল। আমি হেসে বললাম, খুজে লাভ নেই। আপনার জামা-কাপড় নিচের পার্টে আছে।
টেনশান নিবেননা, সব সুন্দর করেই গুছিয়ে রেখেছি।
উনি কোমড়ের হাত দিয়ে আমার দিকে অন্যলুক নিয়ে তাকিয়ে রইলেন। আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,
— আর কতক্ষণ তোয়ালে পড়ে ঘুরবেন?
নিজের জামা-কাপড় বের করে পড়ে নিন। বলে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। চোখে-মুখে পানি দিয়ে শাড়ি পালটে বের হয়ে হয়ে গেলাম। উনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছিলেন। ভেজা চুল আর ফিটিং টি-শার্টে দেখতে বেশ ভালোই লাগছে উনাকে। অনেকক্ষণ একপলক তাকিয়ে আছি দেখে উনি বললেন, বরকে এভাবে লুকিয়ে দেখার কি আছে? দেখতে হলে সামনাসামনি এসে দেখুন।
— আমার আর কাজ নেই, আপনাকে দেখতে যাব। সাইড দিন, আমি রেডি হয়ে নিই।
উনি একপলক আমার দিকে তাকিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। আমি কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করলাম,
— হাসছেন কেন?
— আপনি শাড়ি পরতে পারেননা? আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। সত্যিই তো আমি শাড়ি পরতে জানিনা। কখনো পরিওনি, আজ নিজে নিজে চেষ্টা করে পড়লাম। নিশ্চয়ই পরা হয়নি তাই উনি এভাবে হাসছে।
আমি মাথা নিচু করে বললাম, উহু। কখনো পরিনি একা একা।
— আপনার শাড়ির কুচিগুলো ভাজ হয়নি। শাড়ির আচল সরে কোমড় দেখা যাচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি শাড়ি ঠিক করতে শুরু করলাম। উনি বললেন, হচ্ছেনা, আপনি পারবেননা।
— তাহলে সাহারাকে ডাকি? আমাকে থামিয়ে দিয়ে নিজেই কুচির ভাজ ঠিক করতে বসে গেলেন। আচলটা টেনে নিয়ে সেফটিপিন লাগিয়ে দিলেন। আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম, না পারছি বাধা দিতে আর না পারছি কিছু বলতে। তারপর আমাকে আয়নার মুখোমুখি দাড় করিয়ে পিছন থেকে বললেন, আমি চাইনা কেউ ভাবুক আমার লাল টুকটুকে বউটা শাড়ির ভাজ ও ঠিক করতে জানেনা। তাকে ছোট করে দেখার সুযোগ কাউকে দিবনা। তারপর পিছন থেকে শাড়ির আচল উঠিয়ে ঘোমটা দিয়ে বললেন,
— কচি কলাপাতা রঙ্গের শাড়িতে আপনাকে বেশ সুন্দর লাগছে। ঘোমটা দেওয়াতে.. বলে থেমে গেলেন।
— কি?
— কিছুনা।
— অর্ধেক কথা বলা উচিত না।
— আমার বউ বউ লাগছে। আমি কিছু না বলে চুপচাপ উনার দিকে তাকিয়ে নিচে নেমে এলাম। মানুষটার প্রতি আমি কোনো অনুভূতি আনতে চাচ্ছিনা, নিজেকে যতটা সম্ভব শক্ত রাখতে হবে। আমাকে রান্নাঘরে দেখে শ্বাশুড়িমা খুব খুশী হলেন। খেতে খেতে অনেক গল্প করলাম সবাই মিলে। আমার জীবনে আমি এত মিশুক মানুষ কখনো দেখিনি। উনাদের আচরণ আমাকে একমূহুর্তের জন্য ভাবায়নি, আমি এই বাড়ীতে নতুন।
রাতে রুমে ঢুকে দেখি খাট সুন্দর করে সাজানো আছে। এমন সাজ দেখে কেমন যেন চুপসে গেলাম। সাহারা পিছন থেকে বলল, ভাবী কেমন হয়েছে বলো ত!
— এসব কেন?
— ওমা, আজ তোমাদের বাসর রাত না? বরাবর দেখে এসেছি এই দিনে এভাবেই খাট সাজিয়ে রাখে। আর নানী ই তো বলল তোমাদের খাট টা সাজিয়ে দিতে।
এমনসময় নানুজান উনাকে নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। আমার হাতে উনার হাত দিয়ে বললেন, আমার নাতীটাকে তোমার কাছে দিয়ে গেলাম। দেখে রেখো কিন্তু।
উনি ইশারা করলেন, নানীকে সালাম দেওয়ার জন্য। একসাথে সালাম করলাম। নানী দোয়া করে বললেন,
— সুখী হও। আজীবন একসাথে থেকো।
সাহারা, চল আমরা ঘরে যাই।
— আসি ভাবী। বলে দরজা দিয়ে চলে গেল। আমি দরজা খোলার চেষ্টা করলাম, খুলল না। যা সন্দেহ করেছি তাই ওরা বাহিরে থেকে লক করে দিয়েছে। ভয়ে শাড়ির আচল টা খামচে ধরে উনার দিকে তাকালাম।
উনি এক পা আগালে আমি দুইপা পিছাচ্ছি। উনি থেমে গিয়ে বললেন, ভয়ের কিছু নেই। আমি জানি আপনি আমাকে এখনো স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেননি। আপনার ব্যবহার, ভাবভঙ্গি সবসময় সেটাই প্রকাশ করেছে।
তাই আমি আপনার উপর কোনোপ্রকার অধিকার খাটাবনা। যেদিন স্বামী বলে স্বীকৃতি পাব, সেদিন আপনার কাছে স্ত্রীর ভালোবাসা চাইব। এখন আপনার যদি আপত্তি না থাকে একসাথে শোকরানার নামায টা পড়ে নিই।
পরেও পড়া যায়, কিন্তু ভাগ্য যদি সহায় না হয়। তাই এখনি পড়ে নিব। আপনি অযু করে আসুন।
আমি চুপচাপ অযু করে আসলাম, তারপর দুজন একসাথে নামায পড়লাম। উনি বিছানার এক অংশে শুয়ে পড়ে বলল,
— লাইট নিভিয়ে অন্যপাশে শুয়ে পড়ুন। আমি মাঝখানে বালিশ দিয়ে দিচ্ছি। আর আপনার বালিশের পাশে মোহরানার সম্পূর্ণ টাকা খামে ভরে রাখা আছে।
— আপনি তো আমাকে স্পর্শ করেননি তবে মোহরানা টাকা নেওয়ার প্রশ্ন আসবে কেন?
— এটা আপনার হক। শুভ রাত্রি।
আলো নিভিয়ে আমিও অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম। উনার কথাবার্তায় একরকম চাপা অভিমান স্পষ্ট। আমারো এমন করা হয়ত উচিত হচ্ছেনা কিন্তু কি করব? আমার একটু সময় প্রয়োজন। মনে অন্য কাউকে রেখে মুখে মুখে কাউকে মেনে নিতে পারবনা। চেষ্টা করছি অতীতকে ভুলে বর্তমান আকড়ে ধরে বাচার। যেদিন সফল হব, সেদিন না হয় উনাকে মেনে নিব।

আযান দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই উনার ডাকে জেগে গেলাম। উঠে বসতেই বললেন, নামায পড়ে নিন। তারপর না হয় আরেকটু ঘুমাবেন। ঘুম ঘুম চোখে উঠে নামায পড়ে নিলাম। উনি সব গুছিয়ে রেখেছিলেন তাই আর খুজতে হলনা।
নামায পড়ে উঠতেই উনি বললেন, চলুন একটু প্রাতভ্রমণ করে আসি।
— জ্বী চলুন। গায়ের উপর ভালো করে ওড়না জড়িয়ে উনার সাথে হাটতে বের হলাম। সূর্য এখনো পুর্ব আকাশে উকি মারছে, গাছে গাছে পাখি ডাকছে। অনেকদিন পর এত সুন্দর সকাল দেখার সুযোগ হল। উনি একটা দীঘির পাড়ে নিয়ে এসে বসালেন। খুব ভালোলাগছিল এত সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে। উনি কিছুক্ষণের জন্য বসিয়ে রেখে কোথায় যেন চলে গেলেন। একটু বাদে ফিরে এসে হাতে মাটির ভাড়ভর্তি চা ধরিয়ে দিলেন।
— এখানকার বিখ্যাত চা। খেয়ে নিন।
— এত সকালে চা পেলেন কোথায়?
— মানিক কাকা খুব ভোরেই দোকান খুলে। জানে আমি চা খেতে আসব। আমার তো প্রায় প্রতিদিন ই এখানে চা খাওয়া পড়ে। চা খাওয়া শেষে রাস্তাঘাটে মানুষ বাড়ার আগেই আমরা ফিরে এলাম বাসায়। খুব ফুরফুরে লাগছে নিজেকে। অনেকদিন পর একটা অজানা শান্তিতে মনটা ভরে উঠেছে।
সবটা হয়ত উনার ই জন্য।
রান্নাঘরে ঢুকে দেখলাম চা-নাস্তা বানানো আছে। অবাক লাগল এত সকালে তো এখনো বাড়ির কেউ জাগেনি। তাহলে বানালো কে! উনি রান্নাঘরের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন, আমি বানিয়েছি। নতুন এসেছেন এই বাড়ীতে, সবকিছু বুঝে উঠতে একটু বুঝে নিতে সময় লাগবে। তাই এসব আমি বানিয়ে দিলাম।
— ধন্যবাদ। যদিও আমি করতে পারতাম।
— তাহলে তো ভাল। রোজ রোজ আমি কিন্তু এসব করতে পারবনা, আর একদিন করেছি বলে ভাববেন না প্রতিদিন করব। ঘরে বউ রেখে নিজে গাধার মত খাটার কোনো মানে আছে!
— এত কথা শুনাচ্ছেন কেন? এসব আমি করতে পারি। আপনার সাহায্যের কোনো প্রয়োজন ছিলনা।
— আটার বস্তা কাজকর্ম করতে পারে তাহলে! তা সেগুলো খাওয়া যাবে তো?
— ভালো হচ্ছেনা কিন্তু।
উনি আমার এই কাদো কাদো মুখ দেখে হাসতে লাগলেন। রেগে গিয়ে বাটির সব মেয়োনিজ উনার মুখে ছুড়ে মারলাম। হাসতে হাসতে বললাম,
— আমার ভুত দেখার শখ মিটে গেছে।
উনি ফুসতে ফুসতে বললেন, আমি ভুত হলে আপনি ভুতনী। সাহারাকে রান্নাঘরের দিকে আসতে দেখে উনি দৌড়ে পালালেন। মনে মনে স্বস্তি পেলাম উনাকে কথার জবাব দিতে পেরে।
গভীর রাতে খবর এলো, বাবা মারা গেছেন। সকাল হতেই পাগলের মত ছুটে যাই সে বাড়ীতে। শেষবারের মত বাবার মুখটা দেখে তাকে বিদায় জানালাম। সারাদিন কিছু মুখে তুলিনি, কাদতে কাদতে হেচকি তুলে ফেলেছি।
বাবাকে জানাযার জন্য নেওয়ার পর বাবার রুমে ঢুকলাম। সবকিছু একি রকম আছে, শুধু আমার বাবা ই নেই। এখন আর ডাক ভেসে আসেনা, ত্বোহামা, এদিকে আয় তোকে খাইয়ে দিই। বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। এখন আর মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু দিবেনা। মা মা বলে ডাকবেনা। লামিয়া এসে খাওয়ার জন্য ডাকল।
— আমি খাবনা এখন। তুই যা।
চোখ মুছে নিয়ে বললাম,
আর শুন, বাবার একটা ছবি স্মৃতি হিসেবে আমার সাথে নিব। কোথায় আছে ছবির এ্যালবাম? লামিয়া অনেক খুজে ধুলোমাখা একটা ছবির এ্যালবাম বের করে দিয়ে বলল,
— বর্তমানে জেঠু কোনো ছবি তুলেনি। আগের গুলো দেখতে পারিস। আমি যাচ্ছি।

ছবির এ্যালবাম ঘেটে দেখতে বাবা আর এক মহিলার ছবক পেলাম। তাদের সাথে একটা ফুটফুটে ছোট্ট বাচ্চা। অনুমান করে দেখলাম, এটাই ত্বোহা। মাঝের পৃষ্ঠা উল্টাতেই দেখলাম ত্বোহার ৩-৪ বছর বয়সের ছবি। যেটা দেখতে আমার ছোটবেলার ছবির মত। দাদীমার কাছে আমি আমার এমনই একটা ছবি দেখেছিলাম। লামিয়াকে ডাকলাম সাথে সাথে।
— কিরে ডাকছিস কেন?
— ত্বোহা কত বছর বয়সে হারিয়ে গিয়েছিল?
— বাবা বলেছিল ৩-৪বছর বয়স হবে তখন ওর।
এটা তো ত্বোহার ই ছবি। জেঠু আমাকে দেখিয়েছিল। বাবা বলেছিল, যখন জেঠু পাগলামী শুরু করেছিল তখন নাকি আমাকে দেখিয়ে বলা হয়েছিল আমি তার মেয়ে ত্বোহা।
কিন্তু জেঠু বলেছে,
আমি তার মেয়ে নই। তার মেয়ের বাম হাতের বুড়ো আঙ্গুলে একটা তিল আছে। কনুইতে একটা কালো রঙ্গের গোলাকৃতির জন্মদাগ আছে। ওর কথা শুনে চমকে উঠলাম। সত্যিই আমারো এগুলো আছে। তার মানে উনিই আমার আসল বাবা ছিল। আমি উনি ঠিকই চিনতে পেরেছিল।
ভেবে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম। কিন্তু কিছু প্রশ্ন মাথায় গেথে গিয়েছিল। আমি হারালাম কি করে? হারিয়ে যদি থাকি দাদীমা আমাকে কজ করে পেল? এত বছর ই বা কেন সত্যটা বললনা!! কাকা-কাকীও কি জানতনা আমি যে তাদের কেউ নই?
যারা আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারত তারা কেউই আজ বেচে নেই। সারাজীবন এই প্রশ্নগুলো প্রশ্ন ই থেকে যাবে।
উনি ঘরে ঢুকে আলো জ্বালাতে গেলেন, আমি বারণ করে বললাম, আলো জ্বালাবেননা প্লীজ।
— ত্বোহা এভাবে অন্ধকারে বসে থাকবেননা, সারাদিন কিছু খাননি। আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি, আসুন খেয়ে নিবেন।
— আমি খাবনা। আমাকে একা থাকতে দিন।
— আপনি এমন করলে বাবার রুহ তো কষ্ট পাবে। আর উনি আপনার দায়িত্ব আমাকে দিয়ে গেছেন, সেটা আমি কি করে অবহেলা করি বলুন।
নিজেকে শক্ত করুন, একদিন সবাইকেই এই দুনিয়া ছেড়ে যেতে হবে। এখন এভাবে কান্নাকাটি না করে বাবার আত্মার মাগফেরাতের জন্য দোয়া করুন। বলে আমার মাথায় হাত রাখলেন। আমি হাত ছুড়ে সরিয়ে দিলাম,
— স্বামীত্ব ফলাতে এসেছেন তাইনা?
আমি কতবার বলছি আমাকে একা থাকতে দিন। আপনার সহমর্মিতার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি কাগজে-কলমে আমার স্বামী আছেন, থাকুন। এর বাহিরে বেশী কিছু করতে আসবেনা। এখন এই রুম থেকে বেরিয়ে যান প্লীজ।
উনি কিছু বলতে চাইলেন। আমি বলার সুযোগ না দিয়ে উনাকে ঘর থেকে বের করে দিলাম। ভালোলাগছেনা কিছু, সবকিছু অসহ্য লাগছে।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here