ডেবিল লাভার (পর্ব ০৪)

0
1755

ডেবিল লাভার (পর্ব ০৪)
Labiba Islam Roja
·
·
·
হুম আমি নিশ্চয়ই আশা করিস নি!! বাবা তুমি বিয়ের আয়োজন করো আমি নাদিয়াকে বিয়ে করবো।
.
মামিঃতুই এটা কি বলছিস নাহিদ!!শেষ পর্যন্ত এইরকম একটা খারাপ মেয়েকে বিয়ে করতে চাস তুই…?একে তো এতিম তার উপর না না এটা আমি মানবো না।
.
মা তুমি থামো তো!!কে কোথা থেকে এসে নাদিয়া সম্পর্কে দুইটা মিথ্যা কথা বলে গেলো আর তুমিও বিশ্বাস করে বসলে।আমরা তো জানি নাদিয়া এমন নয় খুব ভালো মেয়ে।
.
না না এটা হতে পারে না!!উনাকে তো আমি নিজের ভাইয়ের মতো ভাবি তাহলে এখন উনাকে কি করে…. না না ভাইয়া এটা হতে পারে না।আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।আমাকে মাফ করবেন।
.
কেন পারবি না মা!!নাহিদ অযোগ্য কোথায়..?সব দিক থেকে তোর জন্য পারফেক্ট।নাহিদ আমিও জানি আমার নাদিয়া কোনো অন্যায় করবে না।আর ওর জন্য আমি একজন যোগ্য ছেলে খুঁজছিলাম এখন আমি নিশ্চিত যে তুই ওকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিস তোকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেব জানা নেই আমার।
.
উফ বাবা কেন এসব বলছো!!নাদিয়া যেমন তোমার ভাগ্নী তেমনি আমারও কাজিন।ওর প্রতি আমাদেরও অনেক দায়িত্ব আছে।তাছাড়া নাদিয়ার কাছে কৃতজ্ঞ আমরা।তাই ওর লাইফ আনন্দে ভরিয়ে তোলার জন্যে হলেও এটা করবো আমি।
.
তুই আমায় বাঁচালি বাবা!!তবে সবাই তো তোর মতো নয়। কিছু কিছু লোক আছে ওর ভালো চায় না তারাই এসব বলে থাকে।আর সাথে আমার মান সম্মানও ধুলোয় মিশিয়ে দেয়।
.
বাবা তুমি কি কথাগুলো আমাকে মিন করে বললে ।কোনো ব্যাপার না বলতে থাকো।তবে যাই করো না কেন…?পরে কিন্তু এসবের জন্য পস্তাবে খুব পস্তাবে তুমি।
.
তখনের টা তখন দেখা যাবে!!তাহলে এটাই ফাইনাল নাহিদের সাথে তোর বিয়ে দিচ্ছি আমি।আর হ্যাঁ এই ব্যাপারে কারো কোনো জ্ঞান শুনতে চাই না আমি।যেখানে ছেলে ছেলের বাবা রাজি সেখানে কারো কথা বলা মানায় না।
.
ওকে বাবা বলবো না কথা।তোমাদের যা ইচ্ছা হয় তাই করো।এমনিতেও এখন তোমাদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়ে গেছি আমি।তাই কোথায় কি করবে সেসব আমায় না জানালেও চলবে।
.
নাদিম কি বলতে চাইছো তুমি..?
.
না থাক কিছু না!!তোমাদের যা ইচ্ছা হয় করো… আমার কথাগুলো আবার সহ্য হবে না তোমার।
.
তাহলে নাহিদ আমরা আগামীকালই তোমার আর নাদিয়ার বিয়ের ডেইট ফিক্সড করবো বলেই একে একে বাবার পিছু পিছু উপরে চলে গেলো সবাই।আমি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছি কি হতে যাচ্ছে এসব।নাদিম ভাইয়া বসে বসে এটা ওটা খেয়ে চলেছেন এখনও।উনাকে এখন মাথার উপর তুলে আছাড় মারতে ইচ্ছা করছে আমার।যদিও তা পসিবল নয় তবুও কল্পনায় ভাসতে মানা কোথায়।উনাকে দেখে রাগে পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছে আমার।আজ উনার জন্য সব টা ঘটলো।যদি ওই ছেলের সাথে আমার বিয়েটা না ভাঙ্গতো তাহলে আজ নাহিদ ভাইয়াকে এমন ডিসিশন নিতে হতো না।আমি কিছুতেই উনাকে বিয়ে করতে পারি না।এটা কখনও হওয়ার নয়।রাগী ফেস নিয়ে নাদিম ভাইয়ার দিকে এগিয়ে গেলাম আমি।দুহাতে কোমড় চেপে বলে উঠলাম আমি….
.
এটা আপনি কেন করলেন…?কি পেলেন এটা করে..?আজ আপনার জন্য ভাইয়াকে এতবড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে হলো।কেন করলেন আমার সাথে এটা কি ক্ষতি করেছি আমি…
.
আমাকে এভাবে দেখে কিছুটা ভ্রু কুঁচকে এলো উনার!!ওলে বাবালে!!আমাদের নাদু জানে না কি ক্ষতি করেছে আমার।আমার ক্ষতি তুই ছাড়া কেউ করতে পারে না।আজ এত কাঁদছিস কেন..?এতদিন তো এটাই চেয়ে এসেছিস কিন্তু করতে পারিস নি ফাইনালি আজ আমার জন্য করতে পারছিস তাহলে চোখ থেকে পানি পরছে কেন…?
.
আমি এটা চেয়েছি!!না কোনোদিনও না।আমি কোনোদিন এটা চাই নি।উনাকে আমি নিজের ভাই ছাড়া….
.
থাম তো!!কান ঝারতে ঝারতে এই এক কথা বলে আমার কানের পোকা খাস না তো।যা তাড়াতাড়ি বিয়েটা করে নে।আর হুম আমার কি ক্ষতি করেছিস জানতে চাইছিলিস না…সকালে ঠাস করে আমার এই গালে একটা থাপ্পড় মেরেছিলিস তখনই বলেছিলাম এর শোধ আমি নেবো।দেখ কিভাবে নিলাম।তুই মারলি বন্ধ দরজার আড়ালে আর আমি ফেরত দিলাম খোলা দরজার বাইরে ইন্টারেস্টিং না বলে হাসতে লাগলেন উনি।
.
আবারও কাঁদতে লাগলাম আমি।এইটুকু থাপ্পড়ের শাস্তি এভাবে নিলেন..? সকলের সামনে আমাকে ছোট করলেন তো করলেন সাথে সাথে আপনার পরিবার মামু উনার কথা একবারও ভাবলেন না।মামু আজ কতটা কষ্ট পেলো অপমানিত হলো সেটা ভাবলেন না।
.
না ভাবিনি!আমি এখন নিজের ছাড়া কারো কথা ভাবিনা।তুই আমাকে পদে পদে অপমান করেছিস এখন সবগুলো অপমানের বদলা নেওয়ার পালা।খুব মজা লাগতো না আমাকে সকলের কাছে ছোট করে।এবার বুঝ সকলের সামনে ছোট হতে মিথ্যা অপবাদ মাথায় নিয়ে কথা শুনতে কেমন লাগে।
.
আমি আপনাকে পদে পদে অপমান করেছি মানে।আমি কবে কোথায় কখন আপনাকে অপমান করলাম,ছোট করলাম।
.
আহারে সাধু!!যাকগে তোর মাথার ঠিক নেই আগে মাথাটা ঠিক কর।সামনে তোর মনের মানুষের সাথে বিয়ে কত কাজ। যা কাজগুলো সেড়ে নে আমি আসি।একটা আপেল লুফে নিয়ে চলে গেলেন উনি। অবাক হয়ে ভাবছি আমি মনের মানুষ।ভাইয়া আমার মনের মানুষ এটা কি করে ভাবলেন উনি।আমি তো কখনও নাহিদ ভাইয়া বা উনাকে সেই নজরে দেখিনি।তাহলে কেন আজ এতগুলো কথা বললেন উনি।মিথ্যা অপবাদ কথা শুনা ঠিক বুঝতে পারছি না আমি।
.
.
রাতের সকলের খাওয়া শেষে সবকিছু গুছিয়ে নিজের রুমে চোখ বন্ধ করে আধশোয়া হয়ে আছি আমি।সকালের ঘটনাটা কিছুতেই ভুলতে পারছি না।এখন কি হবে কি করো আটকাবো এই বিয়ে আমি।আমি তো এমনটা চাইনি।নাহিদ ভাইয়াকে বড় ভাইয়ের মতো দেখি কখনও উনাকে স্বামী হিসাবে ভাবতো হবে কল্পনাও করতে পারিনি আমি।আচ্ছা যদি এই বাড়ি থেকে চলে যাই তাহলে কেমন হবে।ভালো হবে কি….হুম সেটাই ভালো হবে।বাড়ি থেকে চলে গেলে কোথায় থাকবো আমি। কে দেবে আশ্রয় না বাড়ি থেকে যাওয়া যাবে না।আবার উনাকেও বিয়েটা করা যাবে না।এসব আকাশ পাতাল ভাবতে আর ভালো লাগছে না আমার তাই ছাদে গিয়ে বসে আছি…..হাওয়া এসে উপছে পড়ছে আমার গায়ে।আজকে কেমন প্রাণহীন হয়ে গেছি কিছুই ভালো লাগে না।বসে থাকতে থাকতে দুই লাইন গান ধরলাম আমি।এমনিতেও খুব ভালো গানের গলা আমার স্কুলের সকল অনুষ্ঠানে ফার্স্ট হতাম কিন্তু আজ গুণ গুণ করারও সময় পাই না।আজ খুব ইচ্ছে করছে গান গাইতে নিজের কষ্টগুলোকে গানের মাধ্যমে প্রকাশ করতে। তাই উদাস মনে গান ধরলাম আমি….

.
এক পৃথিবীর কষ্ট আমার বুকের ভিতরে
বিরীহ যন্ত্রণা না পাওয়ার বেদনা….
মন ধুকে মরে বোঝাবো কি করে…!!
.
গান গাইতে গাইতে কখন যে চোখে পানি চলে এসেছে নিজেই জানিনা আমি।চোখ মুছতেই কারো হাততালির আওয়াজ কানে এলো আমার।গাড় ফিরে তাকাতেই নাহিদ ভাইয়াকে সামনে দেখতে পেলাম।আপনি…
.
হুম খুব সুন্দর গান গাইতে জানিস জানতাম কিন্তু এতটা মিষ্টি গলা জানতাম না।তবে আমার যেটা খারাপ লেগেছে সেটা হলো তুই কষ্টের গান গাইছিলিস…কেন এত কষ্টের গান গাইছিস..?আমি জানি তোর খুব কষ্ট হচ্ছে।একবার বিশ্বাস কর আমায় তোর জীবন সুখের রঙে রাঙ্গিয়ে দেব আমি। কি দিবি না আমায় একটা চান্স…
.
দদেখুন ভাইয়া আমি আপনাকে ভাইয়া ছাড়া আজ পর্যন্ত কিছু ভাবিনি।তাই আপনাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
.
কেন সম্ভব নয়!!পাগলি মেয়ে আগে ভাবিস নি তো কি হয়েছে এখন ভাববি।কত ছেলে মেয়ে এভাবে বিয়ে করছে তারা কি পারছেনা সংসার করতে!!পারছে তো।তেমনি তুই আর আমিও পারবো।
.
এই মুহূর্তে কোনোকথা বলতে ইচ্ছা করছে না আমার।উনি তো ঠিকই বলছেন কিন্তু আমি তো মানতে পারছি না।কিছুতেই মনকে বুঝাতে পারছি না।তাই চুপচাপ মাথা নিচু করে নিচে নেমে গেলাম।নিচে নামেই বেখেয়ালে হাঁটায় তিতলি আপুর সাথে ধাক্কা খেলাম আমি।উনি ইচ্ছে মতো কথা শুনালেন আমায় কথাগুলো আজ কানে আসছে না আমার।আজ মনটা বড্ড অশান্ত কার কাছে গেলে একটু শান্তি পাবো আমি।কেউ কি নেই যে আমায় বুঝবে।হাঁটতে হাঁটতে কেন জানিনা তিয়া আপুর রুমের সামনে গিয়ে পা দুটো আটকে গেলো আমার।হুম উনার কাছে একটু শান্তি পেতে পারি।
·
·
·
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here