ডেবিল লাভার (পর্ব ০৫)
Labiba Islam Roja
·
·
·
উবু হয়ে বালিশে হাতের ভর ছেড়ে মোবাইল হাতে হাসছেন উনি।ধীর পায়ে আপুর পাশে বসলাম আমি।ফোন রেখে কিছুক্ষণ আমাকে পর্যবেক্ষণ করে বলে উঠলেন আপু…..
.
কি হয়েছে..?এত মন খারাপ কেন..?কেউ কিছু বলেছে..?
.
আপুর প্রশ্নের জবাবে মাথা নাড়িয়ে না জানালাম আমি!!
.
না তাহলে কি হয়েছে…?ওহহ বুঝে গেছি ভাইয়ার সাথে বিয়েটা মানতে পারছিস না…?
.
চোখ টলমল করছে আমার।মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারছি না তাই মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে নিজেকে আর আটকাতে পারলাম না আমি।আপুকে জড়িয়ে কেঁদে উঠলাম।আপু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টায় আছেন।কাঁদিস না।কিচ্ছু হবে না।দেখ ভাইয়া খুব ভালো আর তোকেও খুব ভালোবাসে আমি জানি ও তোকে খুব ভালো রাখবে।এত দুঃখ কষ্টের পর একটু সুখের মুখ দেখতে চলেছিস তাহলে কেন সেটা এভাবে নষ্ট করবি।
.
কিন্তু আপু আমি উনাকে ভাইয়া ছাড়া কিছু ভাবিন তাহলে….
.
আরে বোকা আস্তে আস্তে ভেবে নিবি।আজ শোন এভাবে একদম কাঁদবি না।দেখি চোখ মুছ।ভাইয়াকে ভালোবাসার মানুষ করে নে না।এমনিতে তো খুব ভালোবাসিস তাহলে….
.
তবুও আজ আমি এতিম আমার কেউ নেই।সেজন্য আজ আমার বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় দয়া করে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন উনি।এবার তুমিই বলো এটা কি ঠিক।
.
ধুর পাগলি দয়া করতে যাবে কেন…?এমনি বিয়ে করছে।তুই দেখে নিস একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।এসব নিয়ে আর ভাবিস না যা হচ্ছে হতে দে।আচ্ছা এবার এসব বাদ দে..!!শোন তোর মিনার ভাইয়া আর আমার জন্য একটা কাজ করে দিবি।
.
হুম কি কাজ বলো!!
.
আগামীকাল ওর বার্থডে!!তাই ওর জন্য একটা গিফট কিনেছি আমি।আমাদের বাসার সামনের টংটায় আসবে ও তুই একটু দিয়ে আসবি।
.
দিতে তো পারবো কিন্তু যদি কেউ দেখে ফেলে তখন…?
.
কেউ দেখবে না।দুপুর বেলায় যে যার রুমে থাকে ওটাই চান্স।তখন দিয়ে আসবি।
.
আচ্ছা..!!
.
.
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে রুমে শুয়ে আছি আমি।তখনই আপু এসে প্রবেশ করলো আমার রুমে।গিফট বক্স হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো….এই বক্সটা ওর হাতে দিয়ে ঠুস করে চলে আসবি।আমিই যেতাম কিন্তু পারছি না।তাই প্লিজ দিয়ে আয় না।এইটুকু উপকার আমাদের কর।
.
ওকে আপু টেনশন করো না!!আমি এক্ষুনি দিয়ে আসছি।
.
ড্রয়িংরুমে যেতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলাম আমি।উফ মাথাটা ফাটিয়ে দিলো ওই কে রে চোখ কি আলমারিতে তুলে রেখেছিস।দেখে হাঁটতে পারিস না।
.
ওই কি বলছিস..?আমি কখন ধাক্কা দিলাম তুই তো আমার মাথাটা ফাটিয়ে দিলি।আমারও সেই কুয়েশ্চন চোখ কি আলমারিতে তুলে রেখেছিস নাকি…!!
.
উনাকে দেখে বক্সটা অরণার পেছনে লুকিয়ে নিলাম আমি।আমি!!আমি কি করে আপনাকে ধাক্কা দিতে পারি।মাথায় এইটুকু বুদ্ধি নেই আপনার তাই না।
.
কিহহ!!আমার বুদ্ধি নেই আর তুই বুদ্ধির রাণী তাই তো।তো বলে আমি কি বোকার মতো কাজ করলাম।
.
এই যে আপনার হাইট আর আমার হাইট মাথায় আছে আপনার।আমার হাইট আপনার বুক পর্যন্ত আমার পক্ষে কেমনে পসিবল আপনার মাথা ছুঁয়া।একমাএ আপনি যদি আমার মাথায় ধাক্কা না দেন তাহলে আমি আপনাকে কি করে ছুঁতে পারি।তাই ধাক্কাটা আমি নই আপনি দিয়েছেন।
.
চুপ খালি ফালতু তর্ক করিস।আমি যখন বলেছি ধাক্কা তুই দিয়েছিস তার মানে তুই দিয়েছিস।
.
প্রুফ দেখেও এমন ফালতু কথা বলছেন। আসলে নিজের ভুল স্বীকার করার ক্ষমতা টাই আপনার নাই।
.
ওহহ রিয়েলি!!তোর বুঝি আছে…?
.
অভিয়াসলি!!
.
হা হা করে হাসতে লাগলেন উনি।হোয়াট এ্যা জোকস নাদু।কথাটা শুনে মজা পাইলাম।যাইহোক তুই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আকাশ পাতাল ভাবতে থাক আমি আসছি…!!বলে হাসতে হাসতে চলে গেলেন উনি।এমন কি বললাম যে এভাবে পাগলের মতো হাসছেন উনি।
.
টং দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে মিনার ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করছি আমি।মিনার ভাইয়া লোকটা খুবই ভালো। আপুকে খুব ভালোবাসে।আমি জানি আপুকে খুব ভালো রাখবেন উনি।কিছুক্ষণ পর এসে পৌছালেন উনি।উনাকে গিফট বক্স দিয়ে বিদায় নিয়ে বাসায় ফিরে এলাম আমি।বাসায় এসেই অবাক সবাই মুখ কালো করে ড্রয়িংরুমে বসে আছে..!!মামু পায়চারি করতে ব্যস্ত আমাকে দেখেই তিতলি আপু বলে উঠলেন…ওই যে বাবা দেখ তোমার আদরের ভাগ্নী রং তামাশা করে ফিরে এসেছেন।উনার তালে তাল মিলিয়ে মামিও বলে উঠলেন…সেদিন তো আমার নাদিমকে যা তা কথা শুনালে আজকে নিজ চোখে দেখলে তো….এবার যদি বিশ্বাস হয় তোমার।
.
কারো কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না আমি।শুধু অবুঝের মতো চেয়ে আছি।আমার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছেন মামু।আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে মারলেন উনি…..কোথায় গিয়েছিলিস..?
.
আপুর দিকে তাকাতেই ইশারায় কাউকে কিছু বলতে মানা করলেন উনি।তাই চুপ করে আমতা আমতা করে বললাম আসলে মামু আমার কিছু জিনিসপত্র কিনতে ওই মোড়ের মাথায় গিয়েছিলাম।
.
মিথ্যা বলিস না নাদিয়া!!আমি সব দেখেছি।এবার বল ছেলে টা কে…?
.
ককোন ছেলে..?
.
একবার বলেছি মিথ্যা বলবি না তাহলে কেন বলছিস…?ভালোয় ভালোয় বল ছেলেটা কে..?
.
মাথানিচু করে বলে উঠলাম আমি বন্ধু।
.
বন্ধু!!তাহলে বাসায় নিয়ে আসলি না কেন…?ওই টংয়ে কেন দেখা করলি।তাহলে কি নাদিম যা বলেছিলো সেগুলোই ঠিক।নাদু মানতে পারছি না আমি।যেই তোকে এত বিশ্বাস করতাম সেই তুই কিনা আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলি।আমায় মিথ্যা বললো।
.
না না মামু বিশ্বাস করো আমি কিচ্ছু করিনি।ও শুধু আমার বন্ধু এর বাইরে কিছু নয়।আমি কোনো বিশ্বাসঘাতকতা করিনি।প্লিজ বিলিভ মি।
.
সরি নাদু যেখানে একবার বিশ্বাস ভেঙ্গে যায় তাকে দ্বিতীয়বার বিশ্বাস করা যায় না।তোকে বিশ্বাস করে ঠকে গেছি আমি।আজ বুঝলাম নাদিম আর আরিফ যা বলেছে তার সবটাই সত্যি।আমি শুধু শুধু ভুল বুঝেছি ওদের। কাল ওরা এত কথা বললো আর আজ তুই নিজে সেগুলোকে সত্যি বানিয়ে দিলি।আসলে যা সত্যি তা একদিন না একদিন সামনে তো আসবেই।তাই আজকে সেটা সামনে চলে এলো।এখন যাই বলিস না কেন নিজের চোখকে তো অবিশ্বাস করতে পারিনা বলে উপরে চলে গেলেন মামু।
.
আগেই বলেছিলাম এই মেয়ে সুবিধার নয় তখন তো শুনলে না এখন বুঝ মজা।নাহিদ ভাইয়া কোনোকথা না বলে চলে গেলেন।একমাএ নাদিম ভাইয়াই এখানে নেই তার মানে উনি সবাইকে এই ব্যাপারে বলেছেন নইলে মামু জানলেন কি করে আমি ওখানে গেছি সকল যাওয়ার পর আপু এসে পাশে দাড়াঁলেন আমার।সরি বোন আমার জন্য তোকে এত অপমাণিত হতে হলো ক্ষমা করে দে প্লিজ..!!
.
না না আপু এসব তুমি কি বলছো!!অপমাণ তো এমনিতেও হই অমনিতেও হই তাই গায়ে লাগে না।তুমি মন খারাপ করো না।শুধু মাঝখান থেকে মামুকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম।তাই খারাপ লাগছে।আচ্ছা ছাড়ো নাদিম ভাইয়া কোথায় গো…?
.
ও তো বাইরে বেরিয়েছে!!কেন কোনো দরকার..!!
.
হুম খুব জরুরি দরকার আছে আমার।আসুক তারপর দেখা যাবে।
.
রাতে ভাইয়ার রুমের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি কিন্তু ভিতরে কি করে যাবো সেটাই ভাবছি।হঠাৎ করে রুমে ঢুকবো এটাও কেমন লাগছে আমার কাছে।আবার না গিয়েও উপায় পাচ্ছি না।আজনওর সাথে ফাইনাল বোঝাপড়া করতেই হবে আামর। কি চান উনি কেন বার বার সবার সামনে অপমান করছেন আমায় আজ সব প্রশ্নের উওর দিতে হবে আমায়।দরজায় টোকা দেওয়ার আগেই বলে উঠলেন উনি আমার রুমে কেউ আসবে না।ওই নাদু তুই ও না যা এখান থেকে।
.
কেমন শয়তান রে বাবা কেমনে জানলো আমি দরজার ওপাশে আমি।কিন্তু তুই যাই বলসি না কেন আজ তোর সাথে কথা বলতেই হবে আমার।ওর মানার তোয়াক্কা না করে ভিতরে ঢুকে গেলাম আমি।আমাকে ভিতরে আসতে দেখে রুম থেকে বেরিয়ে যেতো চাইছেন উনি।উনি যেদিকে আমিও সেদিকে এভাবে অনেক্ক্ষণ চলার পর রেগে গেলাম আমি স্টপ৷…!! এভাবে পালাচ্ছেন কেন…?আমার আপনার সাথে ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।
.
কিন্তু আমার তোর সাথে কোনোকথা নেই।সরি রাস্তা ছাড়….আমি বেরুবো!!
.
আমার সাথে কথা না বলে কোথাও যেতে পারবেন না আপনি।আজ আপনাকে আমার সব প্রশ্নের উওর দিতে হবে।কেন করছেন এসব…?সবার সামনে আমাকে ছোট করে কি মজা পান…!!
.
তোর প্রশ্নের উওর দিতে বাধ্য নই আমি!!অযথা আমাকে বিরক্ত করিস না।আজকের ঘটনার সাথে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নই আমি।
.
আমি বিশ্বাস করিনা!!কারণ আমি জানি আপনি ছাড়া কারো কোনো দায় নেই আমাকে কারো নিকট ছোট করার।সো যা করেছেন আপনি করেছেন আর সেটা খুব ভালোভাবে জানি আমি…!!
·
·
·
চলবে……..