ডেবিল লাভার (পর্ব ০৬)
Labiba Islam Roja
·
·
·
বললাম তো আমি কিছু করিনি।তাহলে কেন কথা বাড়াচ্ছিস।ইনোসেন্ট ফেইস নিয়ে বলে উঠলেন ট্রাস্ট মি আমি এসবের কিচ্ছু জানিনা।
.
জানেন সব জানেন আপনি!!এখন না জানার ভান ধরছেন।ট্রাস্ট হাসালেন….ট্রাস্ট আর আপনি হা হা!! যাকেই করা যায় না কেন আপনাকে আর করা যায় না।সেই জায়গাটা অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছেন আপনি।আগে অনেক বিশ্বাস ভরসা ছিলো আপনার উপর কিন্তু এখন নেই।আমার সব বিশ্বাস ভরসা এক নিমিষে ভেঙ্গে দিয়েছেন আপনি।
.
আমি বিশ্বাস ভরসা ভেঙ্গে দিয়েছি আর তুই!!তুই কি করেছিস আমার সাথে আমার বিশ্বাস ভাঙ্গিস নি।বারবার বলছি এসব কিছুই আমি করিনি তাও কেন আজে বাজে কথা বলে আমাকে রাগাচ্ছিস।
.
আজেবাজে কথা আমি বলছি না।বলছেন আপনি!!
.
যা তো এখন আমার সামনে থেকে এমনি মাথাটা গরম আছে খামোখা কথা বাড়িয়ে আমার রাগটাকে দ্বিগুণ করিস না।ভালোয় ভালোয় বলছি চলে যা।
.
না যাব না!!আজ আমার সব প্রশ্নের উওর নিয়ে তবেই যাবো আমি।কেন এত কষ্ট দেন আমায়..?কেন সকলের কাছে বারবার ছোট প্রমাণ করেন..?আমার চরিএ নিয়ে কথা বলেন…?কেন কেন কেন…?(চেচিয়ে)আমাকে যখন কষ্ট দিয়ে মারার এতই ইচ্ছা আপনার তাহলে আমাকে এভাবে তিলে তিলে না মেরে একেবারে মেরে ফেলুন।এসব আর সহ্য করতে পারছিনা আমি।এতদিন আমাকে ছোট করেছেন মেনে নিয়েছি কিন্তু আজ সকলের সামনে মামুকে ছোট করেছেন।মামুর কাছে আমাকে খারাপ প্রমাণ করেছেন সেটা মানতে পারছি না।কেন করছেন এসব বলুন উওর দিন।কি পান আমাকে অপমান অস্বস্তি তে ফেলে। আমাকে ছোট করে খারাপ প্রমাণ করে বলুন।কি ক্ষতি করেছি আপনার যে আপনি আজ আমার সবচেয়ে বড় ক্ষতিটাই করে দিলেন হুম…..
.
তুই জানিস না কি করেছিস!!বলছি তো আজকে কিচ্ছু করিনি আমি।আজ যা করার তিতলি করেছে।আমি তো জানি ওটা আপুর বয়ফ্রেন্ড তাই আমি দেখেছি ওর সাথে তোকে কথা বলতে কিন্তু তবুও কিছু বলিনি কারণটা আমার জানা তাই।কিন্তু তিতলি সবটা জানলেও তোর প্রতি ওর চাপা রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারেনি তাই ইচ্ছে করে সকলের সামনে তোকে চরিএহীণ প্রমাণ করেছে। এই কথাটা কেন বিশ্বাস করছিস না।শোন নাদু আমি খারাপ হতে পারি কিন্তু তোর মতো জঘন্য মিথ্যাবাদী নই।
.
তাহলে এটা তিতলি আপুর কাজ!!ছিঃ আমাকে ছোট করার জন্য এমনটা করতে পারলো।মিথ্যাবাদী কি বলতে চাইছেন আপনি…?আমি মরে গেলেও মিথ্যার আশ্রয় নেই না সেটা খুব ভালো করেই জানেন আপনি।
.
হুহ!!সেটা কোনো একদিন ছিলো কিন্তু এখন নেই।এখন তুই একটা মিথ্যাবাদী।এই মিথ্যাকথার বলেই তো একদিন আমার সাথে অনেক বড় খেলা খেলেছিস তুই।
.
কিহহ!!আমি খেলা খেলেছি।কি খেলা বলুন যদি আজকে বলতে না পারেন তাহলে ভাববো আপনি পঁচে গেছেন নিজেকে পাল্টে মিথ্যাবাদীর খাতায় নাম লিখিয়েছেন।নিজের করা কুকর্মগুলো ঢাকতে আমার গায়ে মিথ্যাবাদীর তকমা লেপে দিচ্ছেন।
.
চুপ!!তুই জানিস না।কি খেলা খেলেছিস..?এখন নাটক করছিস…?
.
না সত্যি জানিনা!!গড প্রমিজ বলুন কি খেলা খেলেছি।প্লিজ হাত জোর করে বলছি সবটা বলুন আমায়।
.
আচ্ছা ওয়েট বলে চোখ বন্ধ করে ব বড় নিশ্বাস নিয়ে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে বলে উঠলেন….একটা প্রশ্নের সত্যি সত্যি উওর দিবি আমায়…?
.
হুম দেব!!বলুন কি প্রশ্ন আপনার….?
.
সেদিন যখন তোর উপর এ্যাটাক হয়েছিলো আই মিন তোকে কেউ রেপ করার চেষ্টা করেছিলো সেটা কে ছিলো তুই জানিস…?
.
সেদিনের সেই ভয়ংকর রাতের কথা মনে হতে ভয়ে কেঁপে উঠলাম আমি।এই দিনটা ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন।সেই দিনকে আর কখনও মনে করতে চাইনা আমি। না জানিনা!!কারণ সে মুখোসের আড়ালে ছিলো আর রুমটা অন্ধকার হওয়ায় কিছুই বুঝতে পারিনি আমি।আর উনাকে চিনতেও পারিনি।কিন্তু সেদিনের কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন ভাইয়া…?
.
প্রয়োজন আছে!!যদি সেদিন তুই লোকটাকে না চিনে থাকিস তাহলে কেন সেদিন সকলের কাছে বলেছিলিস সেই লোকটা আমি।আমি তোকে ধর্ষণ করতে চেয়েছি।কেন সকলের সামনে আমায় এত ছোট করেছিলিস।কেন আমার বাবা মা ভাই বোন সকলের কাছে আমায় অপরাধী বানিয়ে ছিলিস।আমি তো তোকে ওই মুখোশ পড়া ছেলেটর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলাম তাহলে তুই কেন বলেছিলিস সেই ছেলেটা আমি।তুই বল না তোকে কখনও খারাপ নজরে দেখিছি আমি।না দেখি নি সবসময় ফুপির মেয়ে বলে জেনে এসেছি তাহলে তুই কেন এত বড় নোংরা গেইম খেললি আমার সাথে।কেন নাদু কেন…?
.
উনার কথা শুনে পাথরের মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছি আমি।কি বলছেন এসব ভাইয়া আমি কখন আপনার কথা বললাম।সেদিন লাল শার্ট পড়া একটা ছেলের কথা বলেছি আপনার কথা তো বলিনি।সে কে ছিলো এটাও জানিনা।তবে আমি তো মাহিয়া আপুকে আপনার কথা নয় একটা ছদ্মবেশী ছেলের কথা বলেছি।আর এটাও বলেছি আপনি আমায় বাঁচিয়েছেন নইলে আমার কি হতো নিজেই জানিনা আমি।হয়তো সেদিনই আত্মহত্যা করতাম।কিন্তু আপনাকে কে বলেছে আমি আপনার কথা বলেছি…?
.
কিহহহ!!মিথ্যা কথা বলছিস তুই…?তুই যদি এটা বলতিস তাহলে সবাই আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালো কেন..?কেন ফুপি আমায় কত গুলো কথা বলে আমাদের উপর অভিমান করে তোকে নিয়ে বাসা থেকে চলে গেলো।আর তারপর অভিমান ভাঙ্গানোর আগেই আমাদের ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেলেন উনি।নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার সুযোগও পাইনি আমি।এই যন্ত্রণায় আজও তিলে তিলে মরছি।
.
বিশ্বাস করুন ভাইয়া আমি এসব বলিনি!! যা বলেছি সব সত্যি একটা কথাও মিথ্যা নয়।আমি মাহিয়া আপুকে সবটা খুলে বলেছি লজ্জায় আর কারো সামনে বের হতে পারিনি দরজা আটকে বসে ছিলাম।তাছাড়া অনেক নার্ভাস ও ছিলাম।উনিই বলেছিলেন সবাইকে যা বলার উনি বলবেন।কিন্তু এসব যে বলেছেন জানিনা আমি।কারণ এরপরই আম্মু আমায় নিয়ে চলে গেলেন।
.
নাটক করছিস!!খুব ভালো নাটক করতে পারিস তো।তুই যদি না বলিস তাহলে ওর কি দায় পরেছে সবাইকে আমার নামে মিথ্যা বলার। বিশ্বাস শব্দটা তোর সাথে যায় না নাদু।আমার বিশ্বাস তুই অনেক আগেই ভেঙ্গে দিয়েছিস।
.
বিশ্বাস করেন না বলেই কি এত ঘৃণা করেন আমায়।এত ছোট করেন,অপমান করেও শান্তি পাননি।আচ্ছা আমার সাথে আর কি করলে শান্তি পাবেন আপনি।
.
আর কিছুই না!!এভাবে তিলে তিলে মারবো তোকে।আমি যতটা কষ্ট পেয়েছি ঠিক ততটাই কষ্ট ফিরিয়ে দেব আমি।
.
এভাবে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলার চেয়ে একেবারে মেরে ফেলুন।এত যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছিনা আমি।প্লিজ মেরে ফেলুন আমায়।
.
মরার তোর খুব শক হয়েছে তাই না।চল আমার সাথে বলেই আমাকে টানতে টানতে ছাদে নিয়ে গেলেন উনি।এইবার মর যা এখান থেকে লাফ দে বিশ্বাস কর তুই বাঁচবি না।মরে যাবি।
.
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি উনার পানে আমি।কি বলছেন এসব আমি এখান থেকে লাফ দেবো।পাগল নাকি মরার কথা বলেছি বলে মরতে হবে।
.
কি হলো লাফ দিচ্ছেস না কেন..?তাড়াতাড়ি কর নইলে কেউ না কেউ চলে আসবে।তখন আর লাফ দিতে পারবি না বেঁচে যাবি। আমি পাহাড়া দিচ্ছি তাড়াতাড়ি কর।
.
ছাদের একদম কিনারে দাঁড়িয়ে নিচে তাকিয়ে ভয়ে আত্মা কেঁপে উঠলো আমার।এখান থেকে ঝাঁপ দেওয়ার কথা ভাবলেই ভয়ে ভিতর শুকিয়ে আসছে বারবার।আবার এটাও ভালো লাগছে যে আমার মরে যাওয়াতেও আজ কারো কিছু যায় আসে না।তাহলে বেঁচে থেকে কি লাভ মরা যাওয়াই শ্রেয়।চোখ মুছে একবার উনার দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম আমি।হঠাৎ হাতে হেচকা টান অনুভব করলাম আমি।একটানে আমাকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন উনি।খুব সাহস হয়েছে তোর তাইনা মরার খুব শখ তাহলে আগে আমায় মার তারপর তুইও মরে যাস কেমন।তুই মরবি বলে কি এতকিছু করছি আমি না তোকে বাঁচাতেই তো এত যুদ্ধ আমার।আর সেই তুই কিনা আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছিস…?তাহলে আগে আমায় মার তারপর নিজে মর।
.
কেন আপনাকে মারবো আমি!আমি পারবো না।আপনার জন্য কোনো সমস্যা নেই আমার কিন্তু আমার জন্য অনেক সমস্যা আছে আপনার তাই আপনি নন আমাকে মারেন।
.
চুপ করবি নাকি গলা টিপে মেরে ফেলবো কোনটা বল।তুই যেটা চাস সেটাই হবে।
.
মেরে ফেলুন আমায় বলে ঢুকরে কেঁদে উঠলাম আমি….বাবা মাও তো চলে গেছে তারা শান্তিতে আছে। এবার আমিও মরে গিয়ে একটু শান্তিতে থাকতে চাই।হুম মরে যাবো আমি সবাইকে শান্তি দিয়ে বাবা মার কাছে চলে যাবো।
.
শান্তি তাই না!!তাহলে আয় বলে আমাকে বাগানের পেছনের পুকুরে নিয়ে গেলেন উনি।সেখান থেকে ধাক্কা দিয়ে আমাকে পুকুরে ফেলে দিলেন….উনার এমন ব্যবহারে অবাক আমি।আরে জানেন তো আমি সাঁতার জানিনা তাও আমাকে এভাবে ফেলে দিলেন।আমি মরে গেলে শান্তি পাবেন কি উনি।আস্তে আস্তে পানির অতলে তলিয়ে যাচ্ছি আমি।আর পুকুরপাড় থেকে তৃপ্তির হাসি হাসছেন উনি।ডেবিল মার্কা স্মাইল দিয়ে কিছু বলে চলেছেন যা প্রথমে কানে না এলেও পরে ডুবতে ডুবতে পানির মধ্যে উনার কথাগুলো কানে এলো আমার….কি রে এখন শান্তি লাগছে।নিশ্চয়ই শান্তি পাচ্ছিস।জানিস তো কারো ইচ্ছা অপূর্ণ রাখি না আমি।তাই তোর ইচ্ছাও অপূর্ণ রাখলাম না।আস্তে আস্তে হাত পা অচল হয়ে যাচ্ছে আমার।চোখ দুটো অসাড় হয়ে যাচ্ছে।নিজেকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টায় আছি কিন্তু ব্যর্থ আমি।
·
·
·
চলবে……