ডেবিল লাভার (পর্ব ০৮)
Labina Islam Roja
·
·
·
ড্রয়িংরুমে সকলে বসে কথা বলছে।হুম কিছু নয় আমার আর নাহিদ ভাইয়ার বিয়ের ব্যাপারে কথা হচ্ছে এখানে।যেমন নাহিদ ভাইয়াকে বিয়ে করার ইচ্ছা আমার নাই তেমনই নাদিম ভাইয়াকেও অপছন্দ নয়।কেমন জানি ভালো লাগা কাজ করে আমার।আজকের এমন ব্যবহারের পরেও উনার উপর তেমন রাগ কিংবা বিরক্ত নই আমি।যেন উনার কথাই ঠিক আমার উপর সব অধিকার উনার।আমি শুধু উনারই জন্য সৃষ্টি।মামি মুখভার করে বসে আছেন মামুর পাশে।নাহিদ আর নাদিম ভাইয়া দুজনে পাশাপাশি বসেছেন।তিতলি আপু আসেনি নিজের রুমে আছে তবে তিয়া আপু এসেছে কিছু বলছে না।আমাকে দেখে নিজের কাছে নিয়ে আসলেন মামু।আমার হাত দুটো ধরে চোখের পানি ফেলছেন উনি।ব্যাপারটা মোটেও সহ্য হচ্ছে না ভাইয়ার।অন্যদিকে নাদিম ভাইয়া একনাগারে হেসেই চলেছেন।উনার হাসির কারণটা বোধগম্য নয় আমার কাছে।
.
মারে আমি জানি এই বিয়েতে তোর মত নেই তার কারণটাও আমার অজানা নয় কিন্তু কি করার আমার চোখ এর থেকে ভালো পাএ খুঁজে পাচ্ছে না।তাই তোর কাছে হাত জোর করে বলছি তুই প্লিজ এই বিয়েতে অমত করিস না রাজি হয়ে যা।আমি জানি নাহিদ তোকে খুব ভালো রাখবে।কারো দয়ায় তোকে বাঁচতে হবে না।নিজের স্বামীর টাকায় খাবি পড়বি অন্যকেও তখন দিতে পারবি কারো খোটা শুনতে হবে না।খুব ভালো থাকবি।
.
এত আরাম আয়েশ ভালো থাকার খুব কি দরকার আছে মামু।কে বলেছে আমি ভালো নেই দেখ না আমি তো এরকমই ভালো আছি।তাহলে বিয়ের কি প্রয়োজন বল তো।এখনও পড়াশোনা শেষ হয়নি মাএ ইন্টারে পড়ি আর এখনি বিয়ে।
.
হুম এখনই উপযুক্ত সময় ওইসব লোকেদের দেখিয়ে দেওয়ার যারা তোকে অপমান অবহেলা ধুর চাই করে।একদিন নিজের পায়ে দাড়িঁয়ে তাদের মুখের উপর তোকে যোগ্য জবাব দিতে হবে।বুঝিয়ে দিতে হবে চাইলে কি না পারা যায়।আর সেজন্য কেউ একজনের সাপোর্ট খুব জরুরি।আর সেই সাপোর্ট নাহিদ ছাড়া কেউ তোকে দিতে পারবে না।প্লিজ মা রাজি হয়ে যা আর না করিস না।ভেবে নে না এটাই তোর কাছে তোর মামুর শেষ চাওয়া।।
.
মামু!!
.
হুম তবুও রাজি হয়ে যা!!
.
আজ এসব মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।কারণ কোথাও না কোথাও নাদিম ভাইয়ার জন্য আলাদা একটা ফিলিংস ছিলো আমার। আর আজ যখন জানতে পারলাম উনার মনের কোণে আমার বসবাস তখনই সবটা পাল্টে যেতে হলো মোড় ঘুরে গেলো আমার জীবনটাই বোধহয় এমন খেলা পাতার ঘর।এই ভাঙ্গে তো এই গড়ে।মামুর মুখের উপর না বলার ইচ্ছা নেই আমার।উনার চোখের পানির প্রতিটা ফোঁটা কষ্ট দিচ্ছে আমায়।আবার আমারও ভিতরটা জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু না আমার যতই কষ্ট হউক মামুকে কষ্ট দেওয়া যাবে না।আমার কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি কিন্তু মামুর কষ্ট সহ্য হয় না আমার।তাই বুকে পাথর চেপে বিয়ে তে মত দিলাম।নাদিম ভাইয়ার মুখের হাসি কখনও যাওয়ার নয় উনি এখনও হা হা করছেন।ইচ্ছে করছে সবগুলো দাঁত ফেলে দেই উনার।পাজি ছেলে একটা তখন কত কি বললো আর এখন দেখ হেসে মরছে ইবলিশ শয়তান কোথায়কার।
.
আলহামদুলিল্লাহ তাহলে আগামী শুক্রবার বিয়ের ডেইট ফিক্সড করছি।এখন ঘরোয়াভাবেই বিয়েটা দেবো পরে ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করবো।এখনই ধুমধাম করে দিতাম কিন্তু কিছু লোক আছে যারা নাদিয়াকে সবসময় অপমান আর ছোট করতে চায় সেসব লোক বিয়েতে বহু সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে তাই এখনই এতবড় অনুষ্ঠানের আয়োজন নয় পরে করবো।
.
হুম বাবা ঠিক বলেছো।আমিও চাই না নাদিয়ার আর কোনো অপমান হোক।এবার অন্তত একটু শান্তিতে একটু খুশি নিয়ে বাঁচুক।
.
শান্তি আর খুশী সেটা একমাএ আমিই দিতে পারি ওকে আর কেউ নয়।ও শান্তি পাবে ভালোবাসা পাবে তবে তোমার থেকে নয় ভাইয়া সবটা পাবে এই নাদিমের থেকে।না জেনে অনেক কষ্ট দিয়েছি আর নয়।এখন কোনো কষ্ট পেতে দেবো না ওকে ভালোবাসার রঙে রাঙ্গিয়ে দেবো ওর জীবন।পেছনের করা ভুলের প্রায়শ্চিত্য করবো এবার আমি।
.
সকলে যে যার মতো রুমে চলে গেছে।আমিও বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে আছি।আজকাল নিজেকে বড্ড অসহায় লাগে আমার।পৃথিবীতে কেউ নেই আমার।এমন একটা হাত নেই যে হাত দুটো শক্ত করে ধরে বলবে ভয় কেন পাও আমি আছি তো তোমার।বল দেবে ভালোবাসা ভরসা কোনোকিছু নেই।জীবনে মা বাবা কে নিয়ে অনেক সুখে শান্তিতে ছিলাম কিন্তু ভাগ্যে সুখ সইলো না।অকালে তাদের হারালাম আমি।যাদের নিজের সবচেয়ে আপন ভাবতাম সেই চাচা চাচী আমাকে বের করে দিলো বাসা থেকে আজ যাওয়ার কোনো জায়গা নেই আমার। অন্যের উপর ডিপেন্ডেড আমি।কিন্তু এসব তো আমি চাইনি।বাকি দশটা মেয়ের মতো আমারও দুচোখে অনেক স্বপ্ন ছিলো জানি আর কিছুই পূরণ হবে না আমার।এসব ভেবেই চোখ থেকে পানি পরছে আমার।আজকে বাবা মাকে বড্ড বেশি মিস করছি আমি।আজ যে মিস করা ছাড়া কোনো উপায় নেই আমার।হঠাৎ সামনে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে সামনে তাকালাম আমি।নাহিদ ভাইয়া আপনি….
.
হুম!!এখনও কাঁদছিস…?কেন কাঁদছিস…?
.
মা বাবার কথা খুব মনে পড়ছে তাই..!!
.
আচ্ছা ঠিক আছে বুঝলাম।আজকে মনে হতেই পারে কারণ তোর বিয়েকে কেন্দ্র করে অনেক স্বপ্ন ছিলো ফুপির কিন্তু সেটা পূরণ হয়নি উনার।কোথা থেকে যে কি হয়ে গেলো কে জানে।আচ্ছা যেটা বলতে এসেছি আমাকে বিয়ে করতে সমস্যা আছে তোর…?বিয়ে করতে চাস না…?
.
কোনোকথা না বলে মাথানিচু করে বসে আছি।এই সবগুলো প্রশ্নের উওরই যে নেগেটিভ সেটা কি মানবেন উনি।উনি যদিও মানেন মামু কি মানবেন না তার চেয়ে কষ্টই পাবেন বেশি।
.
কি হলো কথা বল…ঠিক আছে বুঝে গেছি বিয়ে করতে চাস না।চিন্তা করিস না কাঁদিস না আমি এক্ষুণি বাবাকে বলে দিচ্ছি এই বিয়েতে আমার মত নেই।তোর কথা বলবো না কারণ তোর কথা বললে বাবা খুব কষ্ট পাবে।যদি আমার কথা বলি তাও কষ্ট পাবে তবে সেটা বেশি নয় সীমিত যা সহ্য করার মতো আমাকে বকে ধমকে রাগ করে দুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে।
.
এসব বলে চলে যাচ্ছেন উনি।না উনাকে মামুর নিকট খারাপ করার কোনো অধিকার নেই আামর।আমার ভালোর জন্য উনাকে কষ্টে ফেলতে চাই না।তার চেয়ে আমিই নাহয় একটু কষ্ট সহ্য করি সেটাই উওম।ভাইয়া..
.
আমার ডাক শুনে দাঁড়িয়ে পড়লেন উনি।কিছু কি বলবি
.
ভাইয়া যা হচ্ছে হতে দিন এতে আমার কোনো আপওি নেই।আর যদি আপনার লাইফে অন্যকেউ থেকে থাকে তাহলে আমাকে বলুন আমি মামুকে বুঝিয়ে বলছি।
পাগলি (মুচকি হেসে) আমার লাইফে যদি অন্য কেউ থাকতো তাহলে ফার্স্টেই বলে দিতাম।আমার লাইফে তো শুধু তুই আছিস ।এটা শুনে খুশি হলাম তুই বিয়েতে রাজি।
.
মানে…!!
.
মানে আবার কি… এখন তুই আর আমি কি আলাদা।তুই মানেই আমি আর আমি মানেই তুই।দুজনেই একে অপরের জন্য। তুই ভালো থাকলেই আমি ভালো তুই যখন চাইছিস বিয়েটা হোক তাইলে তাই হবে।আর যদি বলিস না তাহলে সেটাও না করে দিতাম আমি।আমি চাইনা তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু হোক।যদি মন থেকে মানতে পারিস তাহলেই হবে ।
.
সত্যি লোকটা কত ভালো মানুষকে বুঝে।মানুষের মব খারাপ ভালো থাকা মন্দ থাকা সবটাই বুঝার চেষ্টা করে।নিজে খারাপ হয়েও আমার জন্য মামুর কাছে বকা খেতেও রাজি।এনাকে দেখলে কে বলবে ওই ডেবিল এরই ভাই।দুজনে কত তফাৎ উনার ধারেকাছেও উনি নেই।উনি তো উনিই।আর ডেবিল তো ডেবিলই।না ভাইয়া আমি মামুর ইচ্ছাটাকেই সমর্থন করছি।উনার ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা।
.
ঠিক আছে তাহলে তাই হবে!!অনেক রাত হয়ে গেছে ঘুমিয়ে পর।নইলে শরীর খারাপ হবে।তাছাড়া আর সময়ই নেই মাএ কদিন পরেই বিয়ে।তোর ঠিক থাকাটা জরুরি।
.
.
ভাইয়া চলে যাওয়ার পরে বিছানায় শুয়ে আছি আমি।ঘুমানোর চেষ্টা চালাচ্ছি কিন্তু পারছিনা।কিছুতেই ঘুম আসছে না আমার।কি থেকে কি যে হয়ে গেলো।একদিনেই পাল্টে গেল আমার জীবন।শুধু আশপাশ করছি।কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি নিজেও জানিনা আমি।সকালে ডেবিলের চেঁচামেচি শুনে ঘুম ভাঙ্গলো আমার।এই সাত সকালে ডেবিল আমার নাম ধরে ডাকছে কেন…?কিছু কি করেছি।ধুর আমিও কি করে কি করবো আমি তো মাএ ঘুম থেকে উঠলাম উফফ আমিও পাগল হয়ে যাচ্ছি।তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে ডেবিলের দোয়ারে পৌছালাম আমি।মামির একগাদা মুখ ঝাম্টা শুনে রুমের ভিতরে গিয়ে দাঁড়ালাম।ডেবিলকে দেখে ভয়ে হাত পা কাঁপছে আমার।এতটা রেগে থাকার কারণ কি…?আমি ঢুকতেই চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন উনি।এখন উঠার সময় হয়েছে তোমার নবাবজাদি।আমার কফি কোথায়…?
.
মামিঃএই খেয়াল কি ওর আছে।এখন ভাবছে বাড়ির বউ হবে তাই সাপের পাঁচ পা দেখেছে।এখন কেন কাজ করবে বাবা।
.
না না মামি এমন কিছু নয়!!আমার ঘুম থেকে….
.
স্টপপ!!মা তুমি যাও আমি ওকে মজা দেখাচ্ছি।বাড়ির বউ হলেও কাজ করতে হবে।সব বুঝিয়ে দিচ্ছি আমি।খুশিতে গদগদ হয়ে চলে গেলেন উনি।এবার আমাকে কি করবে এই ডেবিল….আল্লাহ বাঁচাও আমায়…!!
·
·
·
চলবে…….