তোমার মাঝে,পর্ব_০২

0
4360

তোমার মাঝে,পর্ব_০২
সারিফা তাহরিম

তিতলির ভাবনা জগতের মাঝেই পথ শেষ হলো।আর তিতলি নিজের ভাবগুরু মনকে খানিক বিরতি দিয়ে ভাড়া মিটিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ল।

এবার আসি পরিচয়পর্বে,,

তিতলি ইন্টার ২য় বর্ষের ছাত্রী। মা, বাবা, দাদু ও আদুরে একমাত্র ছোট ভাইকে নিয়েই তার পরিবার।তিতলির বাবা একজন নামকরা বিজনেসম্যান।তিতলি তো বাবার চোখের মণি।

তিতলি লম্বায় ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। দুধে আলতায় গায়ের রঙের নরম তুলতুলে ত্বক। মনে হয় যেন ছুয়ে দিলেই রক্তের ফোয়ারা বয়ে যাবে।ফর্সা মুখে গোলাপের পাপড়ির মতো একজোড়া পাতলা,,গোলাপি ঠোঁট। ঘন কালো পল্লব ঘেরা গোল গোল চোখজোড়া চিত্তাকর্ষক।
হালকা বাকানো সিল্কি চুল গুলো ছেড়ে দিলে কোমড় ছুয়ে যায়।

রূপে যেমন অপরূপা, পড়ালেখায়ও তেমনি ভালো। তিতলি গান গাইতে পারে।৪ বছর গান শিখেছে। তার গানের গলাও বেশ ভালো।তিতলির অনেক ইচ্ছা ছিল গিটার শেখার। কিন্তু পড়ার চাপে সময় বের করা হয়নি।

তাই তিতলি স্বপ্ন দেখে এক সময় সেও গিটার শিখবে।কিন্তু তা আর অন্য কারো কাছে নয়,,তার ভালোবাসার মানুষটির কাছে। গিটারে তোলা প্রতিটি সুর তখন তাদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে থাকবে।
তিতলি আদৌ জানে না এমন কেউ তার জীবনে আসবে নাকি। তবে সে অপেক্ষা করে ঐ মানুষটির জন্য,,যাকে সে ভালোবাসার প্রতিটি মনোমুগ্ধকর সুরে বলতে চায়,,,

ভালোবাসা বুঝতে চাই,
ভালোবাসা শিখতে চাই,,
ভালোবেসে বাঁচতে চাই শুধু ~
“তোমার মাঝে”।

হঠাৎ আজকাল তিতলির কেন জানি মনে হয় এই অপেক্ষার অবসান ঘটবে।আচ্ছা কোনভাবে ব্যক্তিটি কি সাদাফ? নাকি নিয়তির আড়ালে লুকিয়ে থাকা অন্যকেউ??

~~~~~~~~~

এবার বলি সাদাফের কথা।সাদাফ মাস্টার্সে পড়ুয়া ছাত্র। সাদাফ বেশ ভালো গান করে। সাদাফদের গ্রুপ কলেজ ও ভার্সিটির সবচেয়ে বেশি ফেমাস।সাদাফের বাবা ও ভাই রাজনীতিবিদ হওয়ার কারণে তাদের যথেষ্ট খ্যাতি থাকলেও শত্রুরও অভাব নেই।

সাদাফ কিছুটা গম্ভীর প্রকৃতির।কিন্তু বেশ ভালো মনের মানুষ। সাদাফ লম্বায় ৫ফুট ৯ ইঞ্চি। ধবধবে ফর্সা ত্বকে পাতলা ভ্রু আর চোখ বেশ মানিয়েছে।সাদাফের দাড়ি সাধারণ দেখা যায় না। কারণ সাদাফ সবসময় ক্লিন শেভ করে।কিন্তু দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম।

ও হ্যাঁ আনিকার কথা তো বলাই হয় নি।চাশমিস আনিকাও বেশ সুন্দরী। সারাদিন খুব বেশি বকবক করা ও বস্তার বস্তা ক্রাশ খাওয়া তার নিত্যদিনের কাজ। বেশ প্রাণোচ্ছল একটি মেয়ে। সবসময় হাসিখুশি থাকে। আর তিতলির পাশে থাকে। তিতলিও খুব ভালোবাসে তার আনুকে।

আনিকারা ২বোন ১ ভাই।আনিকার বাবা একজন ডাক্তার। তাঁরা ৪ ভাই এক বোন। অর্থাৎ আনিকার একমাত্র ফুপি মিসেস রেহানা চৌধুরী। তাঁরই একমাত্র ছেলে মেহরাব রায়ান চৌধুরী।

মেহরাবরা ২ বোন ১ ভাই। মেহরাবের বাবা নামকরা বিজনেসম্যান মাহফুজ চৌধুরী। মেহরাব মাস্টার্সে পড়ে। বেশ ট্যালেন্টেড স্টুডেন্ট ও অসাধারণ গায়ক। মেহরাবের গিটারের সুর সত্যিই অতুলনীয়। মেহরাব আর সাদাফ বেস্ট ফ্রেন্ড। তাদের দুজনের হাত ধরেই এই গ্রুপের অগ্রযাত্রা হয়।

মেহরাব লম্বায় ছয় ফুট। উজ্জ্বল শ্যামলা ত্বকে খোচা খোচা দাড়ি ও এক জোড়া ঘন ভ্রু। কারো নজর কাড়তে মেহরাবের চোখ জোড়াই যথেষ্ট। মেহরাব বেশ মিশুক ও শান্ত স্বভাবের ছেলে। মেয়েরা মেহরাব বলতে পাগল। হাজারো মেয়ের ক্রাশ মেহরাব রায়ান চৌধুরী।

~~~~~~~~~

সেদিন অনুষ্ঠানের পর থেকে তিতলি আবারও তার পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কারণ সামনে তার এইচ.এস.সি পরিক্ষা। দেখতে দেখতে পরিক্ষা শেষ হয়ে যায়। তারপর আবার শুরু হয় ভর্তি যুদ্ধ। অবশেষে তিতলি চান্স পেয়ে যায় তার স্বপ্নের ভার্সিটিতে।তিতলির অনেক দিনের ইচ্ছা সে এই ভার্সিটিতে পড়বে। কারণ ঢাকার টপ ইউনিভার্সিটিগুলোর মধ্যে এটি একটি। আর তার ইচ্ছা পূরণ ও হলো।তিতলির সাথে আনিকাও চান্স পেয়ে যায়। দুজনেই একসাথে ভর্তি হয়।তিনদিন পর থেকে তাদের ক্লাস শুরু হবে।

তিন দিন পর…..?

একপাশে গাছপালা আর অন্যপাশে কিছু বড় দালানের মাঝে সাপের মতো ধূসর রঙের রাস্তাটি দিয়ে গাড়ি ছুটে চলেছে। সকালের মিষ্টি রোদ তার পরশ দিয়ে সবকিছু আলোকিত করছে। তিতলির মুখেও এসে পড়ার ইচ্ছে প্রকাশ করতেই তিতলি তাদের মাঝে দেয়াল হয়ে থাকা গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দিয়ে তার অনুমতি দিয়ে দিল। সাথে সাথে রোদ্দুর মামা যেন খুশি হয়ে তার মুখেও মিষ্টি পরশ এঁকে দিল। সামনে মুখ এগিয়ে তিতলিও সেই পরশ ও কোমল হাওয়াকে সাদরে গ্রহণ করে নিল।

তার পাশে কানে হেডফোন গুঁজে বসে আছে আনিকা। আজ দুজনেই একসাথে ভার্সিটি যাচ্ছে। জীবনে কলেজ নামক শিক্ষা স্তরের ইতি টেনে ভার্সিটি নামক নতুন ধাপে পদার্পন করতে যাচ্ছে তারা দুজন। এই নিয়ে তিতলির পড়ালেখা বিষয়ক উত্তেজনা থাকলেও আনিকার উত্তেজনা তার ক্রাশ নিয়ে। ভার্সিটিতে গিয়ে কয়জনের উপর ক্রাশ খাবে,,কতো কতো চকলেট বয় আছে,,কার পছন্দ কি আরও ইত্যাদি ইত্যাদি। এই মেয়ে জীবন অগণিত হারে ক্রাশ খেলেও আজ অব্দি প্রেম করতে পারে নি। ক্রাশের সামনে গেলে সব হাওয়া ফুস হয়ে যায়।

আনিকার ভাষ্যমতে তারা ভার্সিটিতে ঢুকার সাথে সাথেই তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়বে একদল সিনিয়র গ্যাং এর ভয়ানক র‍্যাগিং। বেশিরভাগ গল্প সিনেমাতে তা ই হয়। কিন্তু তিতলি এ বিষয়টি মানতে বরাবরের মতোই নারাজ। তিতলির কথা হলো “এটি কোনো গল্প বা সিনেমা না। এটা হলো বাস্তবতা। আর বাস্তবতায় এমন কিছু হয় না।” অগ্রাহ্য করলেও র‍্যাগিং নামক বিষয়টিকে তিতলি মনে মনে বেশ ভয় পায়। এসব কথা কাটাকাটির মধ্যেই রাস্তার সমাপ্তি ঘটে।

প্রথম ক্লাসগুলো ঝামেলাবিহীন শেষ হয়।এই সময়ের মধ্যে তাদের তিনজন বন্ধুও হয়ে যায়। টিফিন টাইমে তারা ক্যান্টিনে গিয়ে বসে। বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে তারা। এর মাঝেই ক্যান্টিনে আগমন ঘটে সাদাফদের গ্রুপের।

সাদাফরা গিয়ে বসে তিতলিদের সামনের বাম পাশের একটি টেবিলে।সাদাফ কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে ফোনের দিকে। সে অনবরত কাউকে ফোন দিয়েই চলেছে কিন্তু অপর পাশের ব্যক্তিটি ফোনই ধরছে না।সাদাফ এবার তার কুঞ্চিত ভ্রুযুগল আরেকটু কুঞ্চিত করে বলে উঠে,,,

“এই মেহরাব আবার কোথায় হাওয়া হয়ে গেল….ফোনও রিসিভ করছে না।”

কথাটি বলেই সাদাফ ফোন থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাল। তখনই সাদাফের চোখ যায় আনিকার দিকে। এর আগেও সে মেহরাবের বাসায় কয়েকবার দেখেছে আনিকাকে। কিন্তু কখনো কখনো কথা বলা হয়ে ওঠে নি। আগে দেখার কারণে সাদাফ আনিকাকে চিনে ফেলে। তাই সে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বলে,,

“ওহ হ্যালো মিস,,,,কাম হিয়ার।”

সাদাফের কথায় আনিকা, তিতলিসহ তাদের বন্ধুরাও ঘুরে তাকায়। এতোক্ষণ আনিকা তার ক্রাশের কাহিনি বলতে আর বাকিরা কাহিনি শুনতে এতোটাই ব্যস্ত ছিল যে সাদাফরা যে ক্যান্টিনে এসেছে তা খেয়ালই করেনি। নাহলে আনিকার তো ক্রাশের কাহিনি বাদ দিয়ে সাদাফদের চৌদ্দ গুষ্ঠির লেকচার শুরু হয়ে যেত। আর তিতলি।সে তো আনিকার কোন কথা কানে না নিয়ে আনিকার পাশে বসে ফেসবুক স্ক্রল করছিল।কারণ আনিকার বস্তার বস্তা ক্রাশ খাওয়ার গল্প শুনতে শুনতে কান পচে যাওয়ার উপক্রম।আর সাদাফদের যেহেতু সে খুব একটা চিনে না,,তাই তারা আসার পরেও কোন রকম কিছু না বলে আগের মতোই ফেসবুক স্ক্রল করতে থাকে।

এদিকে সাদাফের কথা শুনে আনিকা একবার আশেপাশে তাকিয়ে বলে,,

“জি ভাইয়া,, আমাকে বলছেন?”

সাদাফ আনিকার দিকে তাকিয়ে বলে,,

“হ্যাঁ তোমাকে বলছি।”

আনিকা এবার মনে মনে বেশ খুশি হয় কারণ আজ সে তার ক্রাশ বয় সাদাফের সাথে কথা বলতে পারবে।কিন্তু কিছুটা নার্ভাসও লাগছে এই ভেবে যে সাদাফ তাকে কি বলবে।আর সে কি সাদাফের কথার ঠিকঠাক জবাব দিতে পারবে।এইগুলো ভেবেই আনিকা সাদাফদের টেবিলের সামনে এগিয়ে গেল।আর তিতলি সেদিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো।

আনিকা কিছুটা নার্ভাসনেসের সাথে বলল,,,

“জি ভাইয়া বলুন।”

~”তুমি মেহরাবের কাজিন আনিকা। রাইট?”

~”জি ভাইয়া।”

আনিকা ছোট করে জবাব দিল।

~”তোমাকে আমার কিছু কথা বলার ছিল। একটু জরুরি। ”

সাদাফের কথায় আনিকা অবাক চোখে সাদাফের দিকে তাকিয়ে রইলো। এমন কি জরুরি কথা বলবে সাদাফ?এদিকে তিতলিও ভ্রুজোড়া কিঞ্চিৎ কুচকে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। সাদাফের কথা শোনার জন্য আগ্রহ নিয়ে তাদের পানে চেয়ে রইল।

চলবে…..

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ ?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here