তোমার মাঝে(২),পর্ব_০৬,০৭

0
3153

তোমার মাঝে(২),পর্ব_০৬,০৭
সারিফা তাহরিম
পর্ব-০৬

“” সাদাফ ভাইয়া””

আনিকার এতো জোরে করে বলা কথায় আমার ধ্যান ফিরে। এতোক্ষণ আমি আমার মাঝে ছিলাম না অন্য কারো মাঝে ডুবে গিয়েছিলাম।আমি মেহরাবের মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম।

কিছুক্ষণ আগে~~~?

পেছনে ফিরে তাকাতেই আমার চোখ আটকে গেল। চকলেট কালার টি-শার্টের উপর ব্ল্যাক কালার জ্যাকেট পড়ে এগিয়ে আসছে মেহরাব। চুলগুলো বাতাসে হালকা উড়ছে আর মুখে লেগে আছে সেই ভুবন ভুলানো হাসি। তার ফর্সা গালের খোচাখোচা দাড়িগুলোর মাঝেও টোলটি স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।উনি এক হাত দিয়ে কান ধরে ঠোঁট কামড়ে ইনোসেন্ট ফেস করে আরাফ ভাইয়া আর আন্টিদের সরি বলছেন। ইশশ! কত্তো কিউট লাগছে উনাকে।

ইচ্ছে তো করছে……

আর কিছু ভাবার আগেই আনিকার “” সাদাফ ভাইয়া “” বলে জোরে চিৎকার আমার ভাবনায় ছেদ ঘটে।

বর্তমান….

আল্লাহ আমি কি সব ভাবছিলাম। তওবা তওবা।আস্তাগফিরুল্লাহ নাউজুবিল্লাহ। এই খাম্বাটার কথা আমি এতো ভাবছি কেন উফফ। এ শুধু আমার উপকারী শত্রু। যে আমায় হেল্প করবে কিন্তু আবার আমাকেই সে শাস্তি দিবে। আর কিচ্ছু ভাবা যাবে তিতলি। এই ব্যক্তির কথা এখনই মাথা থেকে বের করে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।

এইসব ভেবে আমি আম্মুর পাশে গিয়ে বসলাম।

~~~~~~~~~~~

মেহরাব বাড়িতে ঢুকে দেখে আরাফ অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে।আর মেহরাব মা মেহরাবের দিকে রাগীভাবে চেয়ে আছে। মেহরাব তাদের কাছে গিয়ে এক কান ধরে বলল,,

~”সরি ভাইয়া। সরি আম্মু। একটু দেরি হয়ে গেল।ওই আসলে একটু কাজ পড়ে গেছিলো তো তাই।”

~”কাজ না ছাই। ইচ্ছে করে লেট করে এসেছিস।”(আরাফ)

~”না ভাইয়া সত্যি বলছি। জরুরি কাজ ছিল। কাজের মাঝে কতোটা সময় চলে গেল তা খেয়ালই করি নি। আমার কথা বিশ্বাস না হলে রাকিবকে জিজ্ঞেস করো।”

~”মেহরাব যা বলছে তা কি সত্যি রাকিব?”

আরাফ মেহরাবের পাশে দাড়িয়ে থাকা রাকিবকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলল,,

~”জি ভাইয়া। মেহরাব ভাইয়া সত্যি বলছে। আসলে একটা খুব জরুরি কাজ ছিল। ”

~”হুম তা মেহরাব তুই তো রাকিবকেও তোর মতো ভালোই ব্যস্ত বানিয়েছিস দেখছি। এখন আমার প্রশ্ন হলো তোদের দুই ভাইয়ের এতো ব্যস্ততা কিসের?এখন তো তোদের স্টুডেন্ট লাইফ তাও আবার সিঙ্গেল। আমার জানা মতে সিঙ্গেল স্টুডেন্টদের তেমন একটা ব্যস্ততা থাকার কথা না। কিন্তু তোদের যা অবস্থা দেখছি তাতে তো আমার সন্দেহ হচ্ছে যে তোরা কি আদৌ সিঙ্গেল আছিস নাকি আমাদের না জানিয়ে ভিতরে ভিতরে মিঙ্গেল হয়ে গেছিস। কি? কাহিনীটা কি রাকিব?”৩৪২

~”আরে আরে আরাফ ভাইয়া কিসব বলছেন। আমাদের দ্বারা এসব সম্ভব না। ”

~”কেন? তোরা কি মঙ্গল গ্রহের পুরুষ নাকি যে সিঙ্গেল থেকে মিঙ্গেল হওয়া যাবে না?”

~”আমি আর মেহরাব ভাইয়া এইসব কাজে নাই। আমার মতো ছেলেকে তো কোন মেয়েই পছন্দ করবে না। আর মেহরাব ভাইয়ার পিছে এতো মেয়ে পড়ে আছে কিন্তু ভাইয়া ফিরেও তাকায় না।তাই আমাদের মিঙ্গেল হওয়ার চিন্তা ভাবনা করে কোনো লাভ নেই। ” (কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এই কয়দিনে মেহরাব ভাইয়াও কারো দিকে ফিরে তাকাচ্ছে। খুব গভীরভাবে তাকাচ্ছে, ভাবছে। হুম, তিতলি ম্যাডামের প্রতি হয়তো অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে।)

~”উফফ ভাইয়া তুমিও না কিসব যা তা শুরু করেছ। এখন সব বাদ দাও বলো ভাবি কোথায়?”(মেহরাব)

~”আরে ভাই আর বলিস না। বউ হচ্ছে আমার কিন্তু আমি নিজেই নিজের বউয়ের সাথে কথা বলতে পারলাম না। আম্মু আত্মীয় স্বজনদের সাথে পরিচয় করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঐ যে দেখ (হাত দিয়ে দেখিয়ে)

~ওহ আচ্ছা। তুমি থাকো। আমি ভাবির সাথে দেখা করে আসি।

এই বলে মেহরাব দিয়ার কাছে চলে গেল।
দিয়ার পাশে এখন তেমন মানুষ নেই বললেই চলে। তাই একটু ভালো লাগছে। এমন সময় মেহরাব আসে। মেহরাবকে দেখে দিয়ার মুখে হাসি ফুটে উঠে।মেহরাবের ব্যবহার তার বেশ ভালো লাগে।
মেহরাব এসে আলতো হেসে বলল,,

~”আসসালামু আলাইকুম ভাবি। কেমন করে? ”

~”ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমি ভালো আছি মেহরাব। তুমি কেমন আছো? ”

~”আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি ভাবি।”

~”তোমার এতো দেরি হলো যে?”

~”আসলে ভাবি একটু কাজ পড়ে গেছিল তো তাই।”

~”ওহ আচ্ছা।”

~”ভাবি আপনাকে আজ বেশ সুন্দর লাগছে। মাশাল্লাহ। ”

~”ধন্যবাদ মেহরাব।”

~”ভাবি বাসার সবাই এসেছে?”

~”হুম এসেছে তো। ঐ তো আম্মু।”

মেহরাব বারবার আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে।

~”কি হলো মেহরাব কাউকে খুঁজছো? ”

দিয়ার কথায় মেহরাব থতমত খেয়ে যায়। সে এক অপ্রস্তুত হাসি দিল। আমতা আমতা করে বলল,,

~”কককই নননা তো। কককাকে খু খুজতে যযাব।”

~”তাহলে বারবার আশেপাশে তাকাচ্ছো যে?”

~”আ আসলে ভাবি আমি ওওই আনি..আনিকাকে খুজছিলাম।ওকে দেখছি না তো তাই। আচ্ছা আমি যাই আনিকার সাথে দেখা করে আসি। পরে কথা হবে ভাবি। ”

~”আচ্ছা যাও।”

মেহরাব সেখান থেকে কেটে পড়ল।

~(বাবা রে বাবা আরেকটুর জন্য তো অবস্থা খারাপ হয়ে যেত। কোন মতে আনিকার নাম দিয়ে চলে আসলাম। কিন্তু আমি তো অন্য কাউকে খুজছি। এই মেয়ে কোথায়? উফফ ভার্সিটিতে তো ভালোই তিরিং বিরিং করে।এখানে কোন কোণায় লুকিয়ে আছে। উফ কেন জানি খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। আজ ওকে না দেখা পর্যন্ত মনে শান্তি হচ্ছে না। কোথায় লুকিয়ে আছো তুমি?)৭০৭

মনে মনে এসব ভাবতে ভাবতে মেহরাব চারপাশে তিতলিকে খুজছে।

~~~~~~~~~~~~~

মেহরাব যাওয়ার পরে দিয়া একাই ছিল।তাই আরাফ দিয়ার সাথে কথা বলতে আসে।দিয়ার পেছনে এসে বলে,

~”দিয়ামণি”

দিয়া বুঝতে পারে যে এইটা আরাফ।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দিয়া আরাফের দিকে ফিরে সালাম দেয়।

~”আসসালামু আলাইকুম। ”

~”ওয়ালাইকুম আসসালাম দিয়ামণি। কেমন আছো? ”

~”আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?”

~”উম…এতোক্ষণ ভালো ছিলাম না। কারণ এতোক্ষণ আমার দিয়ামণির সাথে কথা বলতে পারি নি। এখন কথা বলতে পারছি তাই এখন বেশ ভালো লাগছে।”

দিয়া নিশ্চুপ হয়ে আছে। তা দেখে আরাফ আবার বলল,,

~”আজ আমার দিয়ামণিকে মাশাল্লাহ খুব সুন্দর লাগছে। আমার পরি লাগছে।”

দিয়া এবারও চুপচাপ হয়ে আছে। আরাফ বুঝতে পেরেছে যে দিয়া অস্বস্তি বোধ করছে। তাই সে প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল,,

~”দিয়ামণি, জানো আজ আমার অনেক ভালো লাগছে। আজ এক বছর পরে আমার ভাই আসছে। সাদাফকে ছাড়া সময় কেমন ধীর গতিতে কাটত ভালো লাগতো না। আজ থেকে আবার আমরা দুই ভাই একসাথে থাকতে পারব। সময় কাটাতে পারব। আমার বেশ ভালো লাগছে ওর কথা ভেবে। ওর অনেক ইচ্ছা ছিল তোমার সাথে দেখা করার। আজ দেখাও করতে পারবে আর কথাও বলতে পারবে।”

~”হুম সাদাফের সাথে আমার কথা হয়েছে। আপনিই নাকি নাম্বার দিয়েছিলেন। সাদাফ বেশ মিশুক আর প্রাণোচ্ছল। ”

~”হুম।ঠিক বলেছ।”

এরকমই টুকটাক কথা বলতে বলতে সাদাফ এসে পড়ে।আর তারা সেখানে যায়।

~~~~~~~~~~~~~~

“উফফ কোথায় গেল এই মেয়ে? কতোক্ষণ ধরে খুজছি কিন্তু পাচ্ছি না। ”

মেহরাব তিতলিকে খুজতে খুজতেই আনিকার “”সাদাফ ভাইয়া”” বলে ডাক দেওয়া শুনে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সাদাফ এসে পড়েছে। সাদাফকে দেখে মেহরাব অনেক বেশি খুশি হয়ে যায়। একে তো খালাতো ভাই আবার সেই সাথে বেস্ট ফ্রেন্ড ও। এতোদিন পরে সাদাফকে দেখে মেহরাব সেখানে গিয়ে সাদাফকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে। সাদাফও মেহরাবকে পেয়ে জরিয়ে ধরে। তারা বেশ অনেকক্ষণ গল্প গুজব করে। সাদাফকে পেয়ে মেহরাব কিছুক্ষণের জন্য তিতলির কথা পুরোপুরি ভুলে যায়। তারপর পানি খেতে যাওয়ার সময় আবার মনে পরে। তখন পানি খেয়ে আবার তিতলিকে খোঁজা শুরু করে।

~~~~~~~~~~~~~

অনেকক্ষণ ধরে সবাই গল্প গুজবে মেতে আছে। কিন্তু আমার খুব মাথা ব্যাথা করছে। তাই আমি এক কোণায় এসে বসে আছি।এইখানে কেউ তেমনটা নেই। কিছুক্ষণ পরে একজন মহিলা এসে আমার পাশে বসল। আমি আরেকটু সরে বসলাম। ঐ মহিলা পান চিবুতে চিবুতে এক গাল হাসি দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল,,

~”তোমার নাম কি মা?”

~”রওনাক ইসলাম তিতলি।”

~”বাহ তোমার নাম তো দেখি তোমার মতোই মিষ্টি। তা মা তুমি কিসে পড়?”

~”অনার্স প্রথম বর্ষে।”

~”তোমার বাবা কি করেন?”

~”(আমার খোঁজ নিয়ে তুই কি করবি বুড়ি। এমনিতেই মাথা ব্যাথা করছে তার উপর তোর এসব বকবকানি। উফফ) আমার বাবা একজন বিজনেসম্যান।”

এভাবেই মহিলাটি আমার থেকে বেশ কিছু কথা জিজ্ঞেস করছে। আর আমি মহা বিরক্তির সাথে জবাব দিচ্ছি। বুড়ির আমার সম্পর্কে এতো জেনে কি হবে বুঝলাম না। উফফ আমার আর ভালো লাগছে না। এখান থেকে তো যেতেও পারছি না। তিতলি কিছু ভাব কিভাবে এই পান খাউয়া বুড়ির থেকে বাঁচা যায়।

আমি এসব ভাবছি এর মধ্যেই মেহরাব কোত্থেকে ঝড়ের বেগে এসে আমার হাত ধরে দাড় করিয়ে দিল। তার চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। চোয়াল শক্ত হয়ে আছে আর চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করে আছে।

আমার হাজারো ভয়ের মধ্যেও একটু স্বস্তি পেলাম এই ভেবে যে এখন আমার আর এই বুড়ির কাহিনি সহ্য করতে হবে না। পরে যা হবে তা পরে দেখা যাবে।

মেহরাব আমার হাত ধরে টেনে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ঐ মহিলা গর্জে উঠে বলল,,

~”এই ছেলে কি হচ্ছে এসব? এগুলো কোন ধরনের অসভ্যতামি? তুমি তিতলিকে এভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছো কেন? ও কি হয় তোমার?”

মহিলাটির কথায় মেহরাব থেমে গেল। আমার হাত আরো শক্ত করে ধরে মহিলাটির উপর অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,

~”তিতলি আমার সব। আমার অর্ধাঙ্গিনী মিসেস মেহরাব রায়ান চৌধুরী। ”

চলবে……

তোমার মাঝে(২)
পর্ব_০৭
সারিফা তাহরিম

“” বিয়ে করার খুব শখ জেগেছে তাই না? তাই তো ঐ মহিলার সাথে খুব করে কথা বলছিলে। যাতে তার ছেলের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করে তাই না? এমনি তো আমার সাথে সারাদিন বেশ ঝগড়া করতে পার কিন্তু এই মহিলাকে তো কিছুই বলো নি। উনার বাড়ির বউ হওয়ার খুব শখ তাই না?””

মেহরাবের এমন কথায় আমার রাগের মাত্রাটা আরো বেড়ে গেল। চিৎকার করে বলতে লাগলাম,,

~”কিসব ফালতু কথা বলছেন আপনি? আমি কেন উনার বাড়ির বউ হতে যাব। আর একজন মানুষ কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে তার উত্তর দিব ওটাইতো স্বাভাবিক তাই না।কারো সাথে কথা বললেই যে তার বাড়ির বউ হয়ে যায় ওটা কোন সংবিধানে লিখা আছে? আর আমি কার সাথে কথা বলবো না বলবো তা আপনার থেকে কেন জিজ্ঞেস করতে যাব হ্যাঁ? কে আপনি?””

~”আমি কে তা পরে বোঝাব।কিন্তু এখন এইটা বুঝে নাও যে তুমি আর ওই মহিলার সাথে কথা বলবে না। বুঝতে পেরেছো?”

~”কেন বলবো না?””

~”কারণ ওই মহিলার ছেলের তোমাকে পছন্দ হয়েছে। আর উনি তোমার খোঁজ খবর নিয়ে তোমার পরিবারের সাথে কথা বলতো বিয়ের ব্যাপারে।”

~”তো? বললেও বা কি হতো? বললেই তো আর বিয়ে হয়ে যেত না। আর বিয়ে হলেও আপনার কি? আমার কাউকে পছন্দ হলে বিয়ে করতেই পারি এতে আপনার এতো জ্বলছে কেন?””

মেহরাব এতোক্ষণ আমার থেকে কিছুটা দূরে থাকলেও আমার কথা শুনে আমার একদম কাছে এসে আমার দুই বাহু শক্ত করে ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন। উনি রাগে চিল্লিয়ে বলল,,

~”শাট আপ। আই সেইড জাস্ট শাট আপ। তোমার এই ফালতু কথাগুলো বন্ধ কর। তোমার মুখে আমি অন্য কোনো ছেলের নাম শুনতে চাই না। আর বিয়ে তো দূরে থাক। ”

উনি এতো জোরে কথাগুলো বলেছেন যে বদ্ধ স্টোর রুমটিতে সেই আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হয়ে আরো ভয়ংকর হয়ে উঠছে। আমি উনার চিল্লানোতে বেশ ভয় পেয়ে গেলেও নিজের ভয়কে প্রকাশ না করে আমার শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে উনাকে ধাক্কা মারলাম।এতে উনি কয়েক কদম পিছিয়ে গেলেন। আমি আরো জোরে চিল্লিয়ে বললাম,,

~”ফালতু কথা আমি বলছি না আপনি বলেছেন? ওই মহিলাকে আপনি কি বলেছেন?আমি আপনার কি? আমি আপনার অর্ধাঙ্গীনি মিসেস মেহরাব রায়ান চৌধুরী। এটাই বলেছেন না? কোন হিসেবে বললেন আমি আপনার অর্ধাঙ্গীনি? আমার কি আপনার সাথে বিয়ে হয়েছে? না। তা হয় নি। তবুও আপনি এই কথা কেন আর কিভাবে বললেন? কিভাবে? শুনে রাখুন মিস্টার মেহরাব রায়ান চৌধুরী, আমি হলাম তিতলি। মিস রওনাক ইসলাম তিতলি। কোনো মিসেস মেহরাব রায়ান চৌধুরী না। আর কখনো হবোও না।অন্য কারো মিসেস হলেও কখনো আপনার মিসেস হবো না। বুঝতে পেরেছেন আপনি?”

আমার কথা শুনে উনি রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,

~”অন্য কারো মিসেস হওয়ার আগেই সেই মিস্টার নাই হয়ে যাবে। আর তোমাকে মিসেস বানাতেও পারবে না। #তোমার_মাঝে কেউ থাকলে তা হব আমি এই মেহরাব রায়ান চৌধুরী। ”

এটুকু বলে উনি থামলেন।তারপর বাকা হেসে বললেন,,

~”তুমি মিসেস মেহরাব রায়ান চৌধুরী হবে কি হবে না তা তো তোমার নিয়তিই বলে দিবে।”

এই বলে মেহরাব আর এক মুহুর্তও সেখানে না দাঁড়িয়ে হনহন করে বেড়িয়ে পড়ল। আর আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

আমি এখন যেই বদ্ধ স্টোর রুমে দাঁড়িয়ে আছি সেটি বাড়ির একদম পেছন সাইডে।স্টোর রুমটি বিশাল বড় বাড়ির বিশাল বড় লিভিং রুম থেকে অনেক দূরে হওয়ায় এখান থেকে ওখানে কোনো আওয়াজ যাবে না কারণ দূরত্ব বেশি সাথে আজ অনুষ্ঠান হওয়ায় অনেক মানুষের আওয়াজও আছে।

তখন ওই মহিলাটির কাছ থেকে টানতে টানতে মেহরাব আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।তারপরের কাহিনি তো জানা ই আছে।

অনেকক্ষণ যাবৎ আমাকে না পেয়ে আমাকে আম্মুরা খুজতে পারে। তাই তারাতাড়ি সেখানে যেতে হবে। এসব ভেবে আমি এখনের কাহিনিগুলো ঝেড়ে ফেলে দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম।

মেহরাব যখন সাদাফের সাথে গল্প করার পরে তিতলিকে খুজছিল তখন একটা জায়গায় দেখে একটা ছেলে ওই মহিলাকে মোবাইলে কোনো একটা ছবি দেখিয়ে বলে,,

~”মা তুমি না পুত্র বধু চেয়েছিলে? আমি তোমার পুত্রবধূ পেয়ে গেছি। এই মেয়েটিকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই মা।”

~”বাহ মেয়েটি তো ভারি মিষ্টি। আচ্ছা আমি মেয়েটির সাথে কথা বলে ওর পরিবারের সাথে কথা বলবো। আমার সোনার টুকরা ছেলেটার জন্য রাণী করে আনব।”

তারা মা ছেলে আরও কিছু বলছিল কিন্তু মেহরাব সেদিকে কান না দিয়ে তিতলিকে খুজতে থাকে।অনেকক্ষণ খোঁজা খোজির পরে তিতলির পাশে সেই মহিলাটিকে বসে থাকতে দেখে মেহরাবের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে ছেলেটি তিতলির কথা বলছিল। এই মহিলাও বলেছে তিতলিকে তার ছেলের রাজরানী করে আনবে। এসব ভেবে মুহুর্তেই মেহরাবের মাথায় রাগের আগুন ধরে গেল। সে তিতলিকে কখনোই অন্য কারোর ভাবতেই পারবে না। তিতলি শুধুই মেহরাবের। তাই তো মহিলাটিকে সে বলেছিল যে তিতলি তার অর্ধাঙ্গীনি। তিতলির নামে নিজের নাম জুড়ে বলেছে মিসেস মেহরাব রায়ান চৌধুরী।

বিকেলের হালকা বাতাস চারপাশ মনোরম করে তুলছে এর সেই বাতাসকে আরো স্নিগ্ধ করে তুলছে বেলি ফুলের সুবাস। আমি বারান্দায় মেঝেতে বসে শুভ্র বেলি ফুলগুলো আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছি। দিয়াপু আমার পেছনে একটি টুলে বসে আমার চুলের মধ্যে বিলি কেটে আরাম করে দিচ্ছে।

~”প্রজাপতি, অনেক হয়েছে আরাম দেওয়া। আর না। আমার আবার মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। তাই এবার বিনুনি করে দেই।”

~”আচ্ছা ঠিক আছে। এখন যেহেতু ফাঁকি দিচ্ছ সেহেতু আজ রাতে তুমি আমায় বিলি কেটে আরাম দিয়ে ঘুম পারাবে। ঠিক আছে। ”

~”যো হুকুম মেরে আকা।এবার যাই তাহলে।”

~”আচ্ছা ঠিক আছে যাও। আল্লাহ হাফেজ। ”

~”আল্লাহ হাফেজ।”

দিয়াপু চলে যাওয়ার পরে আমি সেখানেই বসে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলাম। পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজে মনটা ফুরফুরে হয়ে যাচ্ছে। আমি প্রকৃতি দেখছি এমন সময় আমার ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম “Anika” নাম জলজল করছে। এই মেয়েটি খুব মিশুক। একদিনের পরিচয়ে কতোটা আপন করে নিয়েছে।আমি মুচকি হেসে কল রিসিভ করে বললাম,,

~”আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো আনু?”

~”ওয়ালাইকুম আসসালাম। আসসালামু আলাইকুম আপুনি। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? ”

~”ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। বাসার সবাই ভালো আছে?”

~”হুম ভাইয়ু ছাড়া সবাই ভালো আছে। ”

~”(ঐ খচ্চরটার আবার কি হয়েছে? যা হবে হোক আমার কি? এর থেকে যতো দূরে থাকা যায় ততই ভালো।) ওহ।”

~”ওমা সে কি! তুমি জিজ্ঞেস করবে না ভাইয়ার কি হয়েছে? ”

~”(ওই লোকের যা হবে হোক আমার কি। তবুও এখন ফর্মালিটি মেন্টেইনের জন্য জিজ্ঞেস করতেই হবে।?) হুম কি হয়েছে উনার?”

~”আরে কি বলবো। ভাইয়া একটা মেয়েকে খুব পছন্দ করে। পছন্দ করে বললে ভুল হবে বলতে হবে ভালোবাসে। খুব বেশি ভালোবাসে। তার জন্যই ভাইয়া আজ সকাল থেকে অস্থির হয়ে যাচ্ছে।”

আনিকার কথা শুনে আমার বুক ধক করে উঠল। আমি কান থেকে ফোনটা নামিয়ে কিছু না বলেই কল কেটে দিলাম। কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে। সব কান্না গলায় দলা পাকিয়ে আসছে। মেহরাব অন্য কাউকে ভালোবাসে? তাহলে আমার জন্য তার এতো কাতরতা, এতো অস্থিরতা কেন? কেন এতো অধিকার বোধ? বারবার কেন আমায় বাচিঁয়েছে? কেন এতো কেয়ারিং হয়েছে? এটা কি শুধুই সাহায্য ছিল? শুধুই অসময়ে বাড়িয়ে দেওয়া হাত ছিল?

যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে কেন আমার এতোটা কেন এসেছে? কেন তার প্রতি আমার মনে অনুভূতি জাগিয়েছে? প্রকাশ না করলেও আমার মধ্যে যে আপনার জন্য অনেক ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছে। হ্যাঁ, গতকাল আপনার ওই কথাটি আমার মধ্যে অদ্ভুত ভালো লাগা সৃষ্টি করেছে। আমার মনেও খুব করে ইচ্ছে করেছে আপনার হয়ে থাকতে। মিসেস মেহরাব রায়ান চৌধুরী হয়ে থাকতে। কিন্তু না, ওগুলো তো আপনি রাগের বসে বলেছেন। বাস্তবে তো কখনোই হবে না। আপনি আমাকে সহ্যই করতে পারেন না।শুধু সাহায্য করেছেন আমায়।

সাহায্য করলেও আপনি খারাপ। খুব খারাপ আপনি। আমার মনে নিজের মিথ্যে অনুভূতির মাধ্যমে জায়গা করেছেন। আমি আপনার সামনে আর যাব না। কক্ষনও না।

এসব ভেবে আমি দেয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে দিলাম। চোখ বন্ধ করতেই উনার প্রতি সকল অভিমানের এক ফোটা শুভ্র চিহ্ন গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল।

~~~~~~~~~~~~~~

মেহরাব বাসায় ফিরতেই দেখল সাদাফ সোফায় বসে আছে। মেহরাবকে আসতে দেখে সে বলল,

~”কিরে ভাই কার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলি? সেই কখন থেকে বসে আছি তোর জন্য। কিন্তু তোর তো আর আসার নামই নেই। আমার জন্য কোন ভাবি জুটাইলি নাকি হ্যাঁ? (ফাইজলামি করে বলল সাদাফ)

~”না এখনো জুটাই নি তবে খুব কম সময়ের মধ্যে জুটে যাবে।”(খানিক বাকা হেসে বলল মেহরাব)

~”মানে?”

~”মানে টানে কিছু না। এইখানে বসে থাকিস না। আমার রুমে আয় ওখানে বসে এক বছরের সব গল্প করব।”

~”হুম চল।”

সাদাফ আর মেহরাব রুমে চলে গেল। মেহরাব ফ্রেশ হয়ে এসে সাদাফের সাথে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করতে থাকল। হঠাৎ মেহরাবের খেয়াল গেল সাদাফের হাতের দিকে। সাদাফের টিশার্টের হারা কনুইয়ের খানিকটা উপরে উঠে থাকার কারণে কোন ট্যাটুর একটু অংশ দেখা যাচ্ছে। মেহরাব দেখতে পেল যে এই ট্যাটু ঠিক তেমনটাই গভীর যতোটা গভীর ওই ছেলেগুলোর ট্যাটুগুলো। কিন্তু সাদাফের ট্যাটুটা তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। তাই সে সাদাফের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,,

~”এইটা কি সাদাফ? তুই ট্যাটুও করেছিস?”

~”আ আরে ননা ততেতেমন ককিছু না। এমনিই এএকটা আ আর্ট।”(তুতলিয়ে বলল সাদাফ)

মেহরাবের কেমন সন্দেহ হলো। তাই সে জোর করে সাদাফের হাতাটা বাহুর কিছুটা উপরে উঠিয়ে সাদাফের হাতের ট্যাটু দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেল।

চলবে……..

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here