জ্বীনবর_৫?,পর্বঃ১২,১৩

0
1488

জ্বীনবর_৫?,পর্বঃ১২,১৩
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা
পর্ব-১২

জানিনা কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম! মেয়েটা এসে আমাকে জাগিয়ে বলল, বোন, নামাযের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। আপনি কি নামায পড়বেন?
আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে বললাম, এখন কোন ওয়াক্তের নামায?
— মাগরিব।
— আমাকে নামায পড়ার স্থান দেখিয়ে দিন এবং ওযুখানা কোথায় একটু বলুন।
— আপনি আমার সাথে আসুন বোন।
মেয়েটার পিছু পিছু গিয়ে মনোরম ওযুখানায় ওযু করে নিলাম। ওযুখানার সাথেই লাগোয়া নামাযঘর। ভিতরে ঢুকে দেখি এখানে অনেক মহিলা, বাচ্চা মেয়ে। সবাই দাঁড়িয়ে পড়েছে নামাযে, কিছু জিজ্ঞেস করব ভেবেও করলামনা। ওনাদের সাথে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করে নিলাম। নামায শেষে কেউ নড়লনা, চুপচাপ একযোগে যিকির করতে লাগল। এ যেন এক জান্নাতী দৃশ্য! ছোট্ট ছোট্ট মেয়ে বাচ্চাগুলোও তাল মিলিয়ে যিকির করছে, এই বয়সে আমরা দুষ্টুমি করে কাটিয়েছি। আল্লাহ এদের উত্তম শেফাহ দান করেছেন। নামাযঘর টা বিশাল বড়, এর দেয়ালের উচুতে তাকে অনেকগুলো বই-কোরআন থরে থরে সাজিয়ে রাখা আছে। দোয়ালে বিভিন্ন সূরা-কালাম লেখা।
সেই বৃদ্ধ মহিলা তার জায়গা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সামনের পালঙ্কটায় বসলেন। সালাম দিয়ে আরবি ভাষায় অনেক কথা বললেন, যেগুলো আমার বোধগম্য নয়। জ্বীনরা হয়ত আরবিতেই কথা বলে থাকে, কিন্তু যখন উনারা আমার সাথে কথা বলেন তখন স্পষ্ট বাংলা-ই কথা বলেন। ব্যাপারটা ভীষণ অদ্ভুত!
উনার কথা শেষ হওয়ার পর সবাই বেরিয়ে গেল। আমি উঠে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। বৃদ্ধ মহিলা আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন, আল্লাহ তোমার নামায কবুল করুন।
— আমিন।
— এসো আমার সাথে।
উনি আমাকে ডেকে তার পালঙ্কের এক পাশে বসিয়ে বললেন, জ্বীন সম্প্রদায়ের লোকজন জামায়তে নামায পড়তেই বেশী পছন্দ করে। এইজন্য আমরা মহিলা সম্প্রদায় নামাযঘরে একসাথে পড়ি, নামায শেষে ওয়াজ-নছিহত করি। এতে আমাদের জ্ঞান যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমন ই পারস্পরিক সম্পর্ক গুলোও অটুট হয়।
— আপনাদের নিজস্ব জামায়াত থাকতেও আপনাদের পুরুষ সম্প্রদায় মানুষের জামায়াতে মিলিত হয় কেন?
কেন ই বা মাঝরাতে মসজিদে নামায পড়ে?
এগুলো আমার শোনা কথা, সেই সাপেক্ষেই প্রশ্ন করেছি।
— ভালো প্রশ্ন। আমরা জ্বীনরা সবসময় জ্বীনরাজ্যে অবস্থান করিনা, আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রমে মানুষদের সাথেই বসবাস করতে হয়। সেখানেই আমরা নামায পড়ি, নিজেদের দৈনন্দিন কার্যাবলিতে লিপ্ত থাকি।
কিছু মানুষের কাছে আমাদের পরিচয় প্রকাশ হওয়ার ভয় থেকে যাই, তাই নিজেদের আত্মগোপন থাকার স্বার্থে আমরা গভীর রাতে একা নিকটস্থ মসজিদে নামায আদায় করে থাকি।
— বুঝতে পেরেছি।
— কোরআন পড়তে জানো?
— জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ।
— আমাকে একটু শোনাও। মানুষের কন্ঠে সুমধুর কোর আন তিলাওয়াত আমার খুব ই ভালোলাগে।

মরিয়ম সযত্নে একটা কোরআন শরীফ নামিয়ে নিল। এর জন্য ওর কোনো কসরতের প্রয়োজন হয়নি। চোখের পলকেই একটু লম্বা হয়ে নামিয়ে আনল।
আমার হাতে দেওয়ার পর বলল, পড়ো তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। তুমি যেকোনো একটা সূরা তিলাওয়াত করো।
আমি কুরআন-শরীফ খুলে সূরা কাহাফ্ব পড়লাম। বৃদ্ধ মহিলাটি চুপ করে শুনলেন। শেষ করার পর জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এই সূরাটি কেন পড়লে?
— প্রতি শুক্রবার আমি এই সূরা তিলাওয়াত করি। কেননা, আল্লাহ পাক বলেছেন যে ব্যক্তি শুক্রবার দিনে বা রাতে এই সূরাটি তিলওয়াত করবে পরবর্তী শুক্রবার অবধি তার গৃহ থেকে মক্কা শরীফ পর্যন্ত নূর প্রজ্বলন হবে এবং ৭০০০০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য তওবা প্রার্থনা করবে।
— মাশা’আল্লাহ।
চলো, এবার উঠা যাক। মরিয়ম তাকে কক্ষে পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এসো।
আমি নামাযঘর থেকে বের হয়ে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলাম। এদিকে কোনো পুরুষ নেই, চারিদিকে ছোট ছোট ছেলে বাচ্চা এবং মহিলারা। বাচ্চাগুলো উঠোনে খেলছে, খেলাচ্ছলে তাদের মা পড়া শিখাচ্ছে।
ভীষণ ভালো লাগছে দেখতে। হঠাৎ থমকে দাড়ালাম, মরিয়ম আমাকে জিজ্ঞেস করল, আপনার কি কিছু প্রয়োজন?
— আচ্ছা বোন, মেহরাব কোথায় আপনি বলতে পারবেন?
— তার জন্য আপনি বড্ড উতলা হয়ে আছেন। কিন্তু আমি এর সম্পর্কে অবগত নয়, আপনি সুযোগ পেলে দাদীমা কে জিজ্ঞেস করে নিবেন।
চলুন, কক্ষে যাওয়া যাক।

কক্ষে এসে বসে রইলাম জানালার পাশটিতে। মনটা এখনো বড্ড ভার। একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি আমি, অগ্নিপরীক্ষা হচ্ছে আমার। এখানে জিতলে রাজপুত্র আমার, হেরে গেলে বন্দিদশা হয়ত হবেনা তবে বিতাড়িত হব এই রাজ্য থেকে। দুজন দুজনের একটু কাছাকাছি আসতেই মাঝখানে ভিন্নতার এক দেয়াল গড়ে উঠে দুজনকে দু’দিকে ছিটকে ফেলে দিয়েছে।
এরপর কি হবে! আল্লাহ ই ভাল জানেন। আমার যতটা করা সম্ভব, আমি করে যাব। তারপর যা হবার হবে।
হঠাৎ কানের কাছে সেই চিরপরিচিত কন্ঠে সালাম শুনলাম।
এক লাফে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,

— মেহরাব আপনি এসেছেন? এতটা সময় আপনি কোথায় ছিলেন? আপনি কি অবগত ছিলেননা, আমি জ্বীনরাজ্যে এসে পৌছেছি!

— হ্যা আমি অবগত ছিলাম। আমি আপনার সামনে আসতে পারবনা, খুব কঠিন আজ্ঞা জারি আমার উপরে। অদৃশ্য হয়ে আপনার নিকট এসেছি আপনার অস্থিরতা দূর করতে। বেশীক্ষণ অবস্থান করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

— আমার বড্ড ভয় হচ্ছে, একাকিত্ব অনুভব করছি আপনার সঙ্গ ছাড়া।

— আমার সঙ্গ ছাড়া আপনি এতদূর এতকিছু মোকাবিলা করে এসেছেন, দাদিমাকে জয়ের আশ্বাস দিয়েছেন সেই আপনি যদি ভয় পান তা কি আশা করা যায়!
আপনি পারবেন ইনশা’আল্লাহ।
আমাদের এক হওয়া খুব সহজ হবেনা মুশায়রা। অনেক বাধা পেরিয়ে নিজেদের প্রমাণ করে তবেই আমরা এক হতে পারব।
দাদিমা খুব আশঙ্কায় আছেন, তাই তিনি ভেবেচিন্তে বিচার করেই আমাদের সম্পর্কটা আবদ্ধ করতে চাচ্ছেন। জানিনা, উনি কি সিদ্ধান্ত নিবেন! যদি আমাদের এক হওয়া না লিখা থাকে তবে আপনি ফিরে যাবেন। আমাদের ভালোবাসা না হয় অপূর্ণ ই থাকবে, কিন্তু আপনার স্থান কেউ কখনো নিতে পারবেনা।
স্বার্থপর ভাববেন না আমায়, আমি জ্বীনজগতের ধরা-নিয়মে অসহায়। এই নিয়মের বাহিরে কিছু করতে গেলে আমার চেয়ে বড় ক্ষতি আপনার হবে। আর সেটা মেনে হওয়ার সামর্থ্য আমার নেই।

আমার হাতে উনার ঠান্ডা স্পর্শ লাগল।
— মুশায়রা, আমাকে যেতে হবে। দাদীমা যদি জানতে পারেন তার আদেশ আমি অমান্য করে আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি তবে উনি কষ্ট পাবেন এবং আপনাকে ভুল বুঝবেন।
অতএব, আমার এক্ষুনি বিদায় নিতে হবে।
আসি তাহলে?

— আসুন। দোয়া করবেন আমার জন্য, যাতে আমি আমাদের ভালোবাসাকে জয়ী করতে পারি। যতটা সম্ভব আমি করে যাব, বাকিটা আল্লাহর হাতে। উনি যা নির্ধারণ করবেন তাই হবে।
মেহরাব চলে গেল, আমি মেঝেতে বসে পড়লাম। মেহরাব থেকে আলাদা হয়ে যাব এটা ভেবেই চোখ ভিজে যাচ্ছে। আমাদের সম্পর্কটা সাধারণ ৪-৫টা সম্পর্কের মত নয়। এ যেন একধরণের খেলা। হারলে সব হারাব, জিতলে সবটুকুই জিতব। জানিনা, আল্লাহ আমাদের জন্য কোনটা ঠিক করে রেখেছেন! সারারাত এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
খুব সকালে সুমধুর আযানের শব্দে ঘুম ভাঙ্গল। উঠে দেখি সবাই আমার আগেই উঠে পড়েছে। একটু বিব্রত লাগল এই ভেবে যে, ওনারা উঠে গেছেন আর আমি তখনো ঘুমাচ্ছিলাম। নামায শেষ করার পর বৃদ্ধ মহিলা আমাকে কাছে ডাকলেন,
— তুমি আমাকে দাদীমা ডাকতে পারো।
তুমি রান্নাবান্না পারো?
— জ্বী। কি রান্না করতে হবে বলুন!
— তোমার পছন্দের কিছু একটা করো। তবে অনেক লোকের রান্না এবং পদসংখ্যা ২২টি থাকতে হবে।
প্রতি মাসের নির্দিষ্ট সপ্তাহে আমাদের প্রাসাদে মিলাদের ব্যবস্থা এবং রাজ্যের সবাইকে খাওয়ানোর আয়োজন করা হয়। যোহর বাদ সবাই একসাথেই খায়।
আমার গোত্রের বউরা এসব করে থাকে। যেহেতু তুমি আমাদের পরিবারের একজন হতে চাচ্ছো, সেহেতু তোমার উপর ভার দিয়ে দেখব কেমন পারো!
এটাকে পরীক্ষা হিসেবে না নিয়ে নিজের দায়িত্ব হিসেবে নিয়ে পালন করো।
আমি মাথা নাড়ালাম।

হালকা প্রাতঃরাশ সেরে মরিয়মের সাথে রান্নাঘরে ঢুকলাম। বেশ বড় রান্নাঘর এবং অনেক পরিপাটি। বড় বড় ২টি মাটির চুলা, পাশে ছোট্ট নহর রয়েছে ধোয়ামুছার কাজের জন্য। মরিয়ম এক ঝুড়ি টাটকা শাক-সবজি এনে আমার সামনে রাখল। বিনীতকন্ঠে বলল,
— আপনি কি কি পদ রান্না করবেন বলুন? আমি সবকিছুর যোগাড়যন্ত্র করে দিচ্ছি।
— প্রতিবার কি কি রান্না করো তোমরা?
— প্রতিবার গোস্ত-মাছ থেকে শুরু করে শাক-সবজি সব ই রান্না করা হয়। একেকজনের একেক রকম পছন্দ তো তাই, লক্ষ্য একটাই কেউ যেন অতৃপ্ত হয়ে ফেরত না যায়।
— ২২টি পদের সব ই শাকসবজি এবং মাছ ই হয়?
— নাহ তার মধ্যে ৪-৫ টা পদ আমাদের নিজেদের তৈরী মিষ্টান্ন থাকে। আমরা তো মিষ্টি খেতে বেশ ভালোবাসি তাই। শুনুন, সবকিছুতেই লবণ কম কম দিবেন। লবণ বেশী খেতে পারিনা আমরা। আপনি ঠিক করে নিন কি কি রান্না করবেন আমি চুলা জ্বালিয়ে দিচ্ছি।
— ঠিক আছে বোন।
মনে মনে ছোট্ট একটা লিস্ট তৈরী করে নিলাম। সেই অনুযায়ী কাটাকাটি শুরু করলাম, মরিয়ম ও হাতে হাতে সাহায্য করল। রান্না বসিয়ে দিলাম বড় বড় ডেকচিতে। খেয়াল করলাম, এদের আগুনের তাপ আমাদের আগুনের চেয়ে অনেক বেশী। একটু আচে চামড়া গলে যাওয়ার মত অবস্থা, জীবনে কখনো এত তাপে এতগুলো রান্না একসাথে করিনি।
কষ্ট হচ্ছিল আবার ভয়ও হচ্ছিল। যে গুরুদায়িত্ব আমার উপর পড়েছে তা যদি ঠিকঠাক মত পালন করতে না পারি তবে একদিকে উনারা সবার কাছে ছোট হয়ে যাবেন এবং অপর দিকে আমিও মেহরাবকে হারাব।
অনেক কম সময়ে এতগুলো রান্না করাও খুব প্যারাদায়ক ব্যাপার। লবণ ঠিকমত হয়েছে কিনা চেকে দেখার সময় মরিয়ম বাধ সাধল,
— এই রান্না সকলের পাতে উঠা ছাড়া চেকে দেখার কোনো সুযোগ নেই, দাদীমার কড়া নিষেধ এটা।
এটা শুনে ভয় আরো বেড়ে গেল। কম লবণে এত রান্না করছি না চেকে দেখলে বুঝব কি করে এটা ঠিক হয়েছে কিনা!

যোহরের আযানের কিছু পরেই রান্না শেষ হল। উঠোনের দিকে উকি মেরে দেখলাম সকলে আসতে শুরু করছে। বিশাল পাচটি কক্ষে সবার বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এত জ্বীন একসাথে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। জ্বীনরাজ্যে জ্বীনের সংখ্যা আমাদের দেশের জনসংখ্যার ও পাচগুণ হতে পারে। সবকিছু পরিবেশন করে পাঠিয়ে দিলাম, মনে মনে আল্লাহর নাম জপ করছি সব যেন ভালোই ভালোই মিটে যায়।
আমি গোসল সেরে পোশাক পালটে নামায পড়ে নিলাম। ততক্ষণে সবার খাওয়া শেষ হয়ে গেছে, অনেকে ইতিমধ্যে প্রস্থান করছে। এত তাড়াতাড়ি সবার খাওয়া শেষ!! তবে কি রান্না ভাল হয়নি! জিজ্ঞেস করব এমন কাউকে পাচ্ছিনা, যে কয়েকজন প্রাসাদের সামনে গল্পে মত্ত, ওরাও নিজেদের মধ্যে কিসব বলছে বুঝতে পারছিনা।
আশা ছেড়ে দিয়ে নিজের কক্ষে এসে বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর মরিয়ম আমার জন্য খাবার নিয়ে আসল। আমি তার হাতটি চেপে ধরে বললাম,
— রান্না কেমন হয়েছে বোন?
— দাদীমা আপনাকে জানিয়ে দিবে। আমাদের কিছু বলতে বারণ করেছেন, আপনি বরং খেয়ে নিন।
— দাদীমা কি বলবেন কে জানে! খুব চিন্তা হচ্ছে।
— চিন্তা করবেননা, খেয়ে বিশ্রাম নিন।

খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বসতেই এক অপরুপা সুন্দরী মেয়ে আমার কক্ষের সামনে এসে হাজির হল। সালাম দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইল।
আমি অনুমতি দেওয়া মাত্র সে ভিতরে এসে আমার পাশে বসে বলল, কেন এসেছো তুমি এখানে?
— এই প্রশ্ন করছেন কেন? আপনি কে?
— তুমি বড্ড ভুল করেছো এখানে এসে। সব ধ্বংস করতে এসেছো তুমি। সব এলোমেলো করে দেওয়ার জন্য এসেছো!
— আপনি এসব কি বলছেন?
তেমন কোনো উদ্দেশ্য নেই আমার।
— অবশ্যই আছে। নাহলে জ্বীনের সাথে মানুষে কখনো মিল সম্ভব নয় জেনেও এখানে আসতে না।
— মিল-অমিল সব আল্লাহর হাতে, আমি শুধু চেষ্টা করেই এসেছি।
— কেন বোন? আমার জীবনটা নষ্ট করে তুমি কি চেষ্টা করবে!
— ঠিক বুঝলামনা। আসলে আপনার পরিচয় কি?
— আমি মেহরাবের বাগদত্তা। অনেক বছর ধরেই আমরা প্রণয়ে আবদ্ধ, সামনেই আমাদের বিয়ে হবে।
কিন্তু আপনি এসে সব শেষ করে দিলেন। এ সবকিছু ভুলে আপনাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কেন আমার এত বড় ক্ষতিটা আপনি করছেন বোন?
একজন মেয়ে হয়ে আরেকজন মেয়ের সম্বলটুকু কেড়ে নিচ্ছেন!!
মেয়েটার কথা শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। এসব কি শুনছি আমি! ওর সব কথা কি সত্যি! মেহরাব তো কখনোই আমাকে কিছু বলেনি।

মেয়েটি আমার পায়ে ধরে বলল, বোন দয়া করে আপনি আমার এত বড় সর্বনাশ করবেননা। এতবছর ধরে একটি আশা বুকে লালন করছি, সেটা আপনি ভেঙ্গে দিবেননা।
তাহলে আমার মৃত্যু ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবেনা।
আমি কি বলব বুঝতে পারছিনা!
মেহরাব এভাবে আমায় ঠকাল! আর কিচ্ছু ভাবতে পারছিনা আমি। মেয়েটা আমার পা ধরে অনবরত কাদছে।
তাকে আমার কি বলা উচিত আমি সত্যিই জানিনা!
.
(চলবে)

জ্বীনবর_৫?
পর্বঃ১৩
লেখিকাঃ আস্থা রাহমান শান্ত্বনা

আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম, উঠুন। আমার কিছু কথা শুনুন।
মেয়েটি আমার পা ছেড়ে উঠে দাড়াল। কান্না করায় তার মুখ-চোখ লালবর্ণ ধারণ করেছে। প্রচন্ড কৌতুহল নিয়ে মেয়েটি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।

— একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সর্বনাশ আমি কখনোই করবনা। দেখুন, আমি অনেক কষ্ট-বাধা মোকাবিলা করে এখানে এসেছি, সবাইকে আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেছি আমি নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারব। এখন যদি আমি এসব মিথ্যে করে চলে যাই আমি উনাদের কাছে ছোট হয়ে যাব। পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে আমি পলায়ন করতে পারবনা।
তাই আমি আগে নিজেকে প্রমাণ করতে চাই।

— জানতাম, আপনার কাছে এসে আমার কোনো লাভ হবেনা। আপনাকে মোহ গ্রাস করেছে, জ্বীনরাজ্য পাওয়ার মোহ, এর উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য আপনি আমার অবস্থাকে আমলে নিচ্ছেননা।
আমার সর্বনাশ ই করতে চাচ্ছেন।

— আমার কোনো মোহ নেই। আমি এতদূর ছুটে এসেছি কেবল মেহরাবের ভালবাসা অর্জনের জন্য, উনাকে আপন করে পাওয়ার জন্য। সেটাই যখন আমার জন্য নয়, তাহলে আমার আর কিসের মোহ থাকবে!
আমি কেবল নিজেকে প্রমাণ করেই চলে যাব, কোনো দাবি থাকবেনা আমার। পরাজয় মেনে আর সবার কাছে নিজেকে ছোট করে আমি এখান থেকে যেতে পারবনা।
তাই বলছি ততদিন অবধি আমাকে সময় দিন, এরপর আমি আপনাদের মাঝ থেকে সরে যাব।

— আপনাকে আমি ভরসা করি কি করে!
আপনি জয়ী হলে আবার মেহরাবকে পাওয়ার মোহ আপনাকে গ্রাস করবে। সব ভুলে গিয়ে আপনি মেহরাব কে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিবেন।
আপনারা মানুষরা বড্ড বেঈমান। নিজের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেন।

— আমি আপনার একটা কথায় বিশ্বাস করতে পারলে আপনি কেন পারবেননা!
মেয়েটি জোরকন্ঠে বলল, আপনি প্রমাণ চাচ্ছেন? আমি আপনাকে প্রমাণ দিতে প্রস্তুত। কি প্রমাণ চান বলুন!
— আমার কোনো প্রমাণের প্রয়োজন নেই।
এখন আপনি যদি চান আমি এখান থেকে চলে যাই, আপনার এই বেঈমান কেই বিশ্বাস করতে হবে।
আমি নিজেকে প্রমাণ করেই এখান থেকে কোনোকিছু দাবী না করেই ফিরে যাব।

— নিজের কথা ভঙ্গ করবেননা। যদি করেন, তবে আপনি আমার হাত থেকে রেহাই পাবেননা। বিশ্বাসঘাতকদের কোনো ক্ষমা হয়না।
মনে রাখবেন কথাটা। আপনাকে বিশ্বাস করে যেন আমাকে ঠকতে না হয়।
— সেই ঠকে, যে অন্যকে ঠকায়। আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। মেয়েটি আর কিছু না বলে কক্ষ থেকে প্রস্থান করল। খুব খারাপ লাগছে, মেহরাব এমনটা কেন করলেন আমার সাথে! এসব যদি থেকেই থাকে, তবে কি প্রয়োজন ছিল আমাকে আশ্বাস দেওয়ার।
মেয়েটিকে আরো কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল। ছুটে গিয়ে বাহিরে উকি মেরে মেয়েটিকে কোথাও দেখতে পেলাম। কখনো ভাবিনি আমি এতটা আত্মবিশ্বাসী আর সাহসী হয়ে উঠতে পারব, সব ই হয়েছে মেহরাবের প্রতি অগাধ ভালোবাসার কারণে। কিন্তু সেই মেহরাব এভাবে আমাকে ঠকাবেন স্বপ্নেও ভাবিনি।

এমনসময় মরিয়ম এসে বলল, দাদীমা আমাকে ডাকছেন। মরিয়মের সাথে দাদীমার কক্ষে প্রবেশ করলাম। উনি আমাকে দেখে বললেন,
— আমি ভাবতে পারিনি তুমি এটা নির্ভুল এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হবে। জ্বীনজগতে এই প্রথম কোনো মানবী দ্বারা জ্বীনদের সন্তুষ্ট করা সম্ভব হয়েছে।
এই দায়িত্ব পালনের পরীক্ষায় তুমি উর্ত্তীণ হয়েছ।
— আলহামদুল্লিলাহ, সবই আল্লাহর অশেষ রহমত এবং আপনাদের দোয়ায়।
এমনসময় অপর কক্ষের মোটা পর্দার আড়ালে অস্পষ্টভাবে মেহরাবের অবয়ব দেখা গেল। উনি আমার দিকে তাকিয়ে একটু শব্দ করে মুচকি হাসলেন। মূহুর্তেই যেন আমার কষ্ট-মন খারাপ উবে গেল। ভুলে গেলাম সবকিছুই, অপলকে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম।
দাদীমা সেটা খেয়াল করে গলা ঝাড়লেন। আমি লজ্জা পেয়ে দৃষ্টি নিচের দিকে অবনত করলাম।
— নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য তোমার আরেকটি শেষ পরীক্ষা দিতে হবে। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই তুমি মেহরাবকে স্বামী রুপে লাভ করবে এবং তোমাকে জ্বীনরাজ্যের সকলে প্রাসাদের রাণী হিসেবে স্বীকৃতি দিবে।
এই পরীক্ষা তোমার জন্য বড্ড কঠিন হবে।
— আল্লাহ ভরসা। কি করতে হবে বলুন, আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করব!
— কাল খুব সকাল সকাল তোমাকে প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে পড়তে হবে। এমন এক স্থানে যেতে হবে যেদিকে সূর্য কালো-রক্তিম বর্ণ ধারণ করে, যে একই জায়গায় সূর্য উদিত হয় এবং অস্ত যায়। সেই জায়গার থেকে ৩৮ কদম দূরে অনেক বস্তু দেখতে পাবে। সেখান থেকে এমন একটু বস্তু নিয়ে ফিরে আসতে হবে যা দৃশ্যমান বস্তু থেকেও দামী, যার কার্যকারিতা কখনোই ফুরোয়না।
প্রতিটি কাজে এটি ব্যবহৃত হয়। আর এসব কিছু করে তোমাকে ফিরে আসতে হবে সূর্যের উদিত এবং অস্তের ক্ষণ এর দ্বিগুণ সময়ে।
পারবে তো?
— ইনশা আল্লাহ।
অন্ধকারে বসে বসে দাদীমার কথাগুলো ভাবছিলাম। সবটাই যেন একটা কঠিন ধাধা। কোনোটার ই সঠিক উত্তর আমার জানা নেই। ভেবেও পাচ্ছিনা! এমন সময় কেউ আমার পিছনে এসে দাড়াল। আমি টের পেয়ে আলো জ্বালাতে গেলে কন্ঠটি বলে উঠল,
— আমি মেহরাব
— আপনি এতরাতে এখানে! কেউ টের পেয়ে গেলে খুব খারাপ কিছু হবে।
মেহরাব আমার হাত দুটো তার হাতের মধ্যে নিয়ে বলল,
— মুশায়রা, আপনি ই আমার যোগ্য বধু। আপনি ই পারবেন এভাবে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে।
ইনশাআল্লাহ কাল ও আপনি উত্তীর্ণ হয়েই ফিরবেন।
এটা আপনার জন্য হয়ত অনেক কঠিন, কিন্তু আপনার উপর ভরসা আছে।
আমি চুপ করে রইলাম, কি বলব বুঝতে পারলামনা। উনি উনার দুহাত দিয়ে আমার গাল ধরে বললেন,
— আল্লাহ আপনার সহায় হন, ফি-আমানিল্লাহ।
জয়ী হয়ে ফিরে আসুন। আর হ্যা নিজের দিকে খেয়াল রাখবেন।
— আচ্ছা।
— আসি তাহলে? আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম। উনি সামনে আসলে আমি কি হয়ে যায়, আমি সব ভুলে যাই। ভুলে যাই উনি আমাকে ঠকাচ্ছেন।
জানিনা কালকের পরীক্ষায় আমি জয়ী হব কিনা! জয়ী হলেও ফিরে যাব, পরাজিত হলেও ফিরে যাব। আপনার বধু হওয়ার আকাঙখা আপনি শেষ করে দিয়েছেন মেহরাব।
বাকিটা আমি আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলাম, উনি আমার ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন তাই হবে। এতে আমার বিন্দুমাত্র আফসোস নেই।

খুব ভোরে উঠে প্রাসাদ থেকে বের হয়ে গেলাম। এখনো রাতের প্রহর পুরোপুরি কাটেনি, সূর্য উঠবে উঠবে করছে। দাদীমার কথাগুলো মনে মনে আরেকবার বিশ্লেষণ করে নিলাম। সূর্য এর কালো-রক্তিম বর্ণ কোন দিকে দেখা যায়? পূর্ব নাকি পশ্চিম! সুর্য যখন উদিত হয় তখন হালকা রক্তিম বর্ণ ধারণ করে, যখন অস্ত যায় তখন আধারের সাথে কিছুটা কালো-রক্তিম বর্ণ ধারণ করে।
তার মানে দাদীমা পশ্চিম দিকের কথা ই বলেছেন। আল্লাহর নাম নিয়ে পশ্চিম দিকে হাটা দিলাম। চলতে চলতে জ্বীনরাজ্যের জনপদ ফেলে নির্জন দিকে চলে এসেছি। এটা বোধহয় জ্বীনরাজ্যে শেষ সীমানার খানিক অংশ।
এখানে দুটো পথ দুইদিকে বেকে গেছে, দুইদিকে জঙ্গল। একদিকে ঘন আরেকদিকে ছোট ঝোপালো। দাদীমা বলেছিল এমন এক জায়গা যেখানে সূর্য উদিত ও হয় এবং অস্ত ও যায়।
ছোট ঝোপালো জঙ্গলের প্রান্তে বিশাল উচু উচু পাহাড় দেখা যাচ্ছে। আচ্ছা পাহাড়ের মাথায় তো সূর্য উদয় এবং অস্ত দুটোই দেখা যায়! তাহলে পাহাড়ের চুড়া ই সেই জায়গা। আমি আমার ধাধার উত্তর পেয়ে গেছি। আল্লাহর নাম নিয়ে জঙ্গলের দিকে ঢুকলাম।
পাহাড়ের পাদদেশে হাটতে হাটতে দেখলাম পাহাড়গুলো একদম খাড়া, সিড়ির ভাজ গুলোও খাড়া ভাবে কাটা। জঙ্গলের শেষ প্রান্তে পাহাড়ের কাছাকাছি আসতেই আমাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি তীর ছোড়া আরম্ভ হল।
ছোট ছোট ঝোপের ভিতরে লুকিয়েও রক্ষা পেলামনা, একটা তীর শা করে আমার বা হাতের পাশ দিয়ে চলে গেল। এতে আমার হাত অনেকটা ছড়ে গেছে, একটুপর হাতটা নীলবর্ণ ধারণ করা শুরু করল এবং অবশ হয়ে গেল। তীরগুলো খুব বিষাক্ত বিষ লাগানো ছিল।
বিষ টা আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ছিল, যতটুকুতে ছড়াল ততটুকুই সম্পূর্ণ অবশ হয়ে যাচ্ছিল। দেরী না করে ওরনার এক অংশ ছিড়ে ক্ষতস্থানের উপর শক্ত করে বেধে দিলাম, এতে বিষ ছড়ানো আটকানো গেল। কিন্তু আমার বাম হাতটা সম্পূর্ণ অবশ হয়ে গেল। পূর্বের আকাশের দিকে তাকালাম, সূর্য সবচেয়ে উচু পাহাড়ের চূড়ায় উকি দিচ্ছে। পাহাড়টা সবচেয়ে উচু এবং একদম খাড়া। এইদিকে আমার বাম হাত সম্পূর্ণ অবশ, এক হাতের সাহায্যে আমি কিভাবে এই খাড়া পাহাড়ে চড়ব?

জঙ্গল থেকে ছোট ছোটশক্ত শিকড় এবং লম্বা ডাল জোগাড় করলাম। শিকড়গুলো একটার সাথে আরেকটা বেধে ডালের সাথে শক্ত করে বেধে নিলাম। পাহাড়ে চড়ার আগে শিকড়ের দড়ি কোমড়ে পড়ে নিলাম, এবার শক্ত ডালটা একহাত দিয়ে উপরের শক্ত জায়গায় পুতে অল্প অল্প করে সিড়ি বাইতে লাগলাম। এই পাহাড় থেকে নিচে তাকালে মনে হয় নীচে বড় একটা খাদ আছে।
তাকালেই শরীরে কাপুনি উঠে। উঠতে অনেক কষ্ট হচ্ছে কিন্তু জিরিয়ে নেওয়ার উপায় নেই। একটু অমনোযোগী হলেই পা পিছলে নিচে পড়ে যাব, পাহাড়ের গায়ে শ্যাওলা জনে অনেক জায়গা পিছল হয়ে আছে।
দু-একবার পিছলে পড়ে যেতাম, কিন্তু কোমড়ে শিকড় বাধা থাকায় আল্লাহর রহমতে বেচে গেলাম। এদিকে সকাল শেষ হয়ে আসছে।
দাদীমার কথা অনুযায়ী দুপুর বিকাল হওয়ার আগেই ফিরে যেতে হবে। পাহাড়ে উঠার সময় তাড়াহুড়ো করলেও প্রাণ যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাই অনেকটা সময়ের পর ধীরে সুস্থে পাহাড়ের চুড়ায় উঠলাম। পাহাড়ের চূড়ায় তিনটি গুহা। তিনটিই দেখতে একইরকম, এর একটিই অনেকগুলো বস্তু রয়েছে। এখন কোনটায় ঢুকব বুঝতে পারছিনা।
প্রথমে বামদিকের গুহার সামনে এগিয়ে গেলাম, তারপর না ঢুকে আগের জায়গায় ফিরে এলাম। আবার ডানদিকের গুহার সামনে গিয়ে ফিরে এলাম। মাঝখানের টা সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লাম, এটাই সঠিক গুহা। এটাই ৩৮ কদম দূরে অবস্থিত। বাকিগুলোতে সাড়ে-সওয়ার মত পার্থক্য।
খুব সুক্ষ্মভাবে খেয়াল না করলে বুঝা যাবেনা।
আল্লাহর নাম নিয়ে গুহার ভিতরে ঢুকলাম। অতটা অন্ধকারাচ্ছন্ন নয় গুহাটা। কোন একটা ফাক দিয়ে প্রচুর আলো ঢুকছে, অনেকটা ভিতরে ঢুকার পর দেখলাম ৩টি বড় সিন্দুক খোলা রয়েছে। সবগুলো ক্রমান্বয়ে স্বর্ণ, রৌপ্য এবং মাণিক্য দিয়ে পরিপূর্ণ। স্বর্ণের সিন্দুক পেচিয়ে বসে আছে তিন মাথাওয়ালা একটা বিশাল সাপ, রৌপ্যেরটা এক বিশাল আকৃতি ধারালো নখ-ঠোটওয়ালা শকুন আর মাণিক্যের টায় বিশাল বিশাল জোক গজগজ করছে।
এর মধ্যে কোন বস্তুটি আমি নিব এবং কিভাবে!
কিছুই কথায় আসছেনা, হাতটা খানিকবাদে ভীষণ ব্যথা করে উঠছে।
দাদীমার কথা অনুযায়ী তিনটি হাত দিতে যাওয়ার কথা ভাবতে ওইগুলো আমার দিকে তেড়ে এল। উপায়ান্তর না দেখে আমি বেরিয়ে এলাম গুহা থেকে, এরাও গুহা থেকে বেরিয়ে আমাকে তাড়া করা শুরু করল।
আমার যে অবস্থা তাতে দৌড়ে তাড়াতাড়ি এমন খাড়া পাহাড় থেকে নামা সম্ভব না।
আর কোনো উপায় না দেখে চূড়া থেকে লাফ দিলাম। ভেবে নিলাম যা থাকে কপালে, আল্লাহ সহায়।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here