তোর মায়ায়❤,Part_02
Ariyana Nur
উল্টো করে লটকিয়ে বরফ গলা পানিতে মধ্যে একটি ছেলের মাথা চুবিয়ে রাখা হয়েছে।ছেলেটির মাথা ঠান্ডায় শিরশির করছে তারপরেও মুখে কিছু বলতে পারছে না।
তার সামনে দুটো ছেলে আর তিনটি মেয়ে বসে আছে।কিন্তু কারো মুখে কোন কথা নেই।
পাশের থেকে একজন মেয়ে ভয়ে ভয়ে বলল….
—আশু….
বোন আমার এবার ছেড়ে দে ওকে।
আশু চোখ রাঙ্গিয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল…
—মিথিলা আপু তুমি আবার এই ছাগলটার হয়ে কথা বলছো???দেখলে আজ এই ছাগলটার জন্য কি বিপদে পরেছি।আমার কথা না হয় বাদ দাও জিজু….
জিজুর বিয়ে হয়ে গেলে তখন কি হতো???ভেবে দেখেছো???আর এই সব কিছু হয়েছে এই ছাগলটার জন্য।
মিথিলাঃদেখ বোন তুই তো আমার জন্যই সব করলি।এবার না হয় আমার কথা রাখতে এই ছাগলটাকে ছেড়ে দে???
আশুঃতুমি চুপ থাকো।বেশি কথা বললে তোমার বরকে কিন্তু উল্টো লটকিয়ে ঠান্ডা পানিতে চুবাবো।
আশুর কথা শুনে নিরব কাশতে লাগলো।কাশি থামিয়ে অসহায় চোখে আশুর দিকে তাকিয়ে বলল….
—শালিসাহেবা আমাকে কেনো শাস্তি দিবে???
—এহ আসছে… আমাকে কেনো শাস্তি দিবে।নিজে তো দুধে ধোয়া নিম পাতা।আপনার জন্যই তো সব হলো।
—দেখো বোন আমার কোন দোষ নেই।মিহানেরই ভুল হয়েছে।ও…
আশু তেড়ে এসে বলল….
—বাবা,মার মুখের উপর দিয়ে কথা বলতে পারবেন না তাহলে রিলশনে যাওয়ার আগে তাদের কে আগে বলতে পারেননি মা বাবা আমার একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছে আমি তার সাথে রিলেশনে যেতে চাই।আরে রিলেশন তো ঠিক ছিলো ভিতুর ডিম আমার বোনকে বিয়ে করে আরেক মেয়েকে বিয়ে করতে গেছিলো।শুধু ভুল যায়গায় এন্টি নিয়েছিলাম বলে তা না হলে এই আশু কি জিনিস হারে হারে টের পাইয়ে দিতাম।
ওর কথা শুনে সবাই চুপ করে রইল।কারো মুখে কোন কথা নেই।কারন সবাই জানে একে এখন কিছু বললে হিতে বিপরীত হবে।আর সত্যিতা বললে তো একজনের আরো ব্যান্ড বাজবে।
নিরব ভয়ে ভয়ে বলল….
—বোন ঠান্ডা মাথায় আমার কথা শুনো।তারপরে না হয় তোমার যা হচ্ছে হয় বল।
নিরবের মুখে সব শুনে আশু রেগে সামনের একটা চেয়ারে লাথি মারলো।তারপরে উল্টো লটকানো ছেলেটিকে বলল…
—তোর তো মাথা ঠিকছিলো না।আজ সারা রাত বরফের পানিতে মাথা চুবিয়ে মাথা ঠিক কর তুই।
মিথিলা মনে মনে বলল….
আল্লাহ্ আমার এই বোনের কপালে এমন একজন পাঠিয়ো যে ওকে ওর রাগ,জিদ,ছেলেমানুষি সব কিছু দেখেই ওকে পছন্দ করবে আর ওকে সামলে নিবে।
আসল ঘটনা হলো,আজ মিথিলার বর নিরব এর ভাইয়ের বিয়ে ছিলো।মিথিলা আর নিরব পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেছে।মিথিলা আশুর ফ্রেন্ড মিহান এর বড় বোন।মিথিলাকে আশু নিজের বোনের মত মনে করে।মিহান ঘুমের ঘোরে ভুল করে নিরব এর ভাই এর জায়গায় শুনে নিরব এর বিয়ে।তারপর আশুকে ফোন দিয়ে বললে আশু সব প্লান করে কিভাবে বিয়ে ভাঙ্গা যায়।আশু এদিকে ওর সব ফ্রেন্ড দের নিয়ে প্লানিং করতে থাকে কিভাবে বিয়ে ভাঙ্গবে।আর ওদিকে মিহান কে বলে নিরব এর বাড়ির ঠিকানা জোগার করতে।সেখানেও মিহান ভুল করে রোডের ডান পাশের বাড়িকে রোডের বাম পাশের বাড়ি বলে।ব্যস আর কি লাগে….
মিথিলা ভয়ে ভয়ে আশুর সামনে এসে ওর কাধে হাত রেখে বলে….
—আমাদের লোক তো একটু পর সেখানে গিয়েছিলো।কি করে তুই এতোক্ষন ঐ লোকগুলোকে সামলালি????
ফ্লাসব্যাকঃ……..
হল রুমে থমথমে পরিবেশ।মেয়েটির মুখে ইংলিশ শুনে সবাই অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে।আর ঐ বয়ষ্ক মহিলাটির তো মুখ হা হয়ে আছে।মেয়েটি কথা শেষ করে হাতের ফোনটি সজোরে ফ্লোরে ছুড়ে মারল।সাথে সাথে ফোনটা ভেঙ্গে এদিক সেদিক ছড়িয়ে পরলো।কিছুক্ষন আগেও যে চেহারায় একটা বাচ্চা সুলভ,ইনোসেন্ট ভাব ছিলো তা রাগে পরিনতো হয়ে গেছে।মেয়েটির সাথের ছোট মেয়েটি সবার দিকে তাকিয়ে মেয়েটির হাত ধরে ফিসফিস করে বলল…
—মনি…
কি হয়েছে তোমার???এমন করছো কেন???
দেখো সবাই তোমার দিকে কিভাবে তাকিয়ে আছে।
মেয়েটি রাগে দাতে দাত চেপে ফিসফিস করে বলল….
—অনেক বড় ভুল হয়ে গেছেরে।এবার আল্লাহ্ আল্লাহ্ কর যাতে এই সিংহের গুহার থেকে বের হতে পারি।
মেয়েটি ছোট বাচ্চাটিকে চোখ দিয়ে ইশারা করে কিছু একটা বলে।তারপরে মেয়েটি এবার চারোদিকে তাকিয়ে নিজেকে সান্ত করে গুটিগুটি পায়ে নিলাভের সামনে গিয়ে বলল….
—হু আর ইউ??আই মিন আপনার নাম কি???
মেয়েটির এমন প্রশ্ন শুনে নিলাভ অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।নিলাভ মনে মনে বলে….
—বলে কি এই মেয়ে।এতোক্ষন সবার সামনে বলছিলো আমি ওর হাজব্যন্ড এখন আমাকেই প্রশ্ন করছে আমি কে???
ঐ বয়ষ্ক মহিলাটি এবার মেয়েটির সামনে এসে বলল….
—এতোক্ষন তো ওকে নিজের স্বামী বলছিলে এখন নিজেই চিনো না।কি শুরু করলে তুমি???
—উফ….
আন্টি আপনি কেনো এতো হাইপার হচ্ছেন???আরে আন্টি ..বেশি হাইপার হলে আপনার এই সুন্দর মেকআপ গুলো ঘেমে উঠে যাবে।তখন কি হবে ভেবে দেখেছেন???
—তোমাকে তো আমি….?
—আরে আরে আন্টি রাগছেন কেন???আপনার চেহারায় না রাগ মানায় না।না রাগলে আপনাকে পুরো ববিতার মত আগে।আর রাগলে কি যেন কি যেন?ওহ্ মনে পরেছে…রিনা খানের মত লাগে।
মেয়েটি একা একা বকর বকর করে যাচ্ছে।থামার কোন নাম নেই।আর কেউ কিছু বলতে নিলে তাকে থামিয়ে জ্ঞান দেওয়া শুরু করছে।
নিলাভ মেয়েটির এই ছেলেমানুষী সর্য্য করতে না পেরে চিৎকার করে বলল….
—স্টপ….
এই মেয়ে কি শুরু করেছো তুমি???এখানে কি কমেডি শো চলছে???
মেয়েটি এবার নিলাভ এর সামনে গিয়ে এক হাত দিয়ে কান ধরে ইনোসেন্ট ফেস করে বলল…..
—আই এম সরি।জানি আমার এই সরি বলাতে কিছু হবে না।আমি যা ভুল করেছি তা সরিতে কাজ হবে না।তারপরেও বলছি সরি….দেখুন ঐ আপুটা কিন্তু আপনাকে পছন্দ করতো না।তাই তাকে বিয়ে করলে আপনার পস্তাতে হত।তার থেকে আমি আপনাকে বাচিয়ে দিলাম।আর আপনি যদি……
আর কিছু বলার আগেই সব লাইট আফ হয়ে গেলো।আর এই দিকে মেয়েটি লাইট আফ হতেই ছোট মেয়েটিকে নিয়ে পগার পার।
_________________________
কাঠ-ফাটা রোদের মধ্যে গাছের ছাড়ার নিচে দাড়িয়ে আছে আফিফা।তার সামনের একটা গাছের উপর বেশুরা আওয়াজে একটি কাক কা কা করে যাচ্ছে।আফিফা কাকটার উপর যতটুকু বিরক্ত না হচ্ছে তার থেকে বেশি বিরক্ত হচ্ছে সামনের মানুষটার উপর।কেননা আফিফাকে সে এখানে দাড় করিয়ে নিজে বাইকের উপর শুয়ে শুয়ে হিরোদের মত ভাব নিয়ে চাবির রিং হাতের মধ্যে ঘুরাচ্ছে।আফিফা বিরক্ত হয়ে বিরবির করে বলল….
—এমন একটা ভাব করছে মনে হচ্ছে কোন হিরো।হুহ….
সামনের লোকটি আফিফার কথা শুনে উঠে বসে চাবির রিং ঘুরাতে ঘুরাতে বলল….
—হিরোই তো।তা আবার তোমার।তাই তো তখন ঐ বখাটে লোকগুলোর থেকে বাচালাম।
আফিফা মুখ ভেংচি কেটে বলল….
—হুহ কি আমার বাচিয়েছে।ঐ লোকগুলো তো আপনাকে দেখেই পালিয়েছে।তাহলে আপনি বাচালেন কোথায়???
—ওরা আমাকে দেখে কেনো পালিয়েছে তা কি তুমি বুঝতে পারছো না???
আফিফা লোকটার দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলল….
—মনে হয় আপনি কোন ছিনতাইকারী তাই আপনাকে দেখে তারা পালিয়েছে।
—আমাকে দেখে তোমার ছিনতাইকারী মনে হয়?
আফিফা লোকটিকে আরেকটু ভালো মত পর্যবেক্ষণ করে বলল….
—তাহলে কি আপনি সিরিয়াল কিলার???কথাটা বলেই ভ্যা ভ্যা করে কাদতে লাগলো।
সামনের লোকটি ওর এই কান্না দেখে জোরে ধমক দিয়ে বলল….
—চুপ…..
আর একটুও শব্দ করবে না।এই মেয়ে তোমার সম্যসা কি বলবে???আমার নাম নিয়ে লোকদের ভয় দেখিয়ে এখন আমাকেই চিনছো না।
আফিফা অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল….
—আপনিই তাহলে বড় ভাই,গুন্ডা,বদমাশ জিদান???
জিদান কিছু বলবে তার আগেই মুখের মধ্যে পানির ঝাপটা পরায় ধরফরিয়ে উঠে বসে সামনে তাকিয়ে আবাক হয়ে বলে….
—তুমি????
চলবে…..