ভালোবাসি ভালোবাসা♥️,part_5
written by Liza Moni
কফি হাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার ব্যস্ত ঢাকা শহর দেখছে সাদাফ। চোখ তার সেদিকে তাকিয়ে থাকলেও মন আর মাথায় চলছে অন্য চিন্তা। গতকাল হিয়ার ওমন ব্যবহার করার কারন তার জানা নেই।
.
হিয়া আমানকে ভালোবাসে সে জন্যই কি ও কাল ওমন বিহেব করেছে? কিন্তু হিয়া যে বলে ছিল আম্মু আব্বু কে রাজি করাতে পারলে সে বিয়েতে কোনো অমত করবে না। তাহলে কালকে ওমন বিহেব করলো কেন? নাকি অন্য কিছু?ওর বিয়ে না করার পিছনে কি অন্য কোনো কারন আছে?
এই সবই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে সাদাফের।
.
আগামী কাল হিয়ার সাথে দেখা করতে হবে। জানতে হবে আসলে হিয়ার কি হয়েছে?
.
.
বিছানায় শুয়ে ছিল হিয়া।ফ্যানের দিকে তাকিয়ে ভাবছে জীবনটা এত বে রঙিন কেন?
হিয়ার রুমে এসে মিসেস সাবিনা হিয়ার মাথার পাশে বসেন। আলতো হাতে হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে জিগ্যেস করলেন,,,
আমাকে বল না মা কি হয়েছে তোর? কেন তুই এই বিয়েটা ভেঙে দিলি?
.
মায়ের দিকে তাকিয়ে হিয়া উঠে বসে। মায়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে হিয়া।
.
মিসেস সাবিনা উত্তরের অপেক্ষায় হিয়ার মুখের পানে চেয়ে রইলো।
.
হিয়া কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি রিয়ান হিয়ার রুমে প্রবেশ করে। উৎকন্ঠা গলায় বলে
.
মা আমানের বাবা ইকবাল আংকেল ফোন করেছিলেন। একটু আগেই আমান এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে যায়।
.
রিয়ানের কথা শুনে হিয়ার বুকের ভেতরটা মোচড়ে উঠে। চোখ থেকে আপনা আপনিই পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। মিসেস সাবিনা হিয়া কে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরলেন। আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছে রিয়ানের উদ্দেশ্য বললেন
.
সাদাফ কে বলেছিস?
.
হুম বললো ও আসছে।
.
ওকে নিয়ে আমানের শেষ কাজটুকু করে আয়।
রিয়ান আর কিছু বললো না।একটু পরেই সাদাফ আসে রিয়ানদের বাসায়।চাতক পাখির মতো চোখ দুটো শুধু হিয়াকেই খুঁজছে। কিন্তু কোথাও হিয়া কে দেখলো না।
.
হিয়া ওর রুমে আছে।দেখা করবে?
মিসেস সাবিনার কথায় সাদাফ মাথা নাড়িয়ে না বললো।
.
আমানের দাফন সম্পন্ন হলে রিয়ানের সাথে আমাদের বাড়িতে আসি ও।
.
ঠিক আছে আন্টি।
রিয়ান আর আমান চলে গেল আমানদের বাড়িতে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে হিয়া। আমি তো কারো ক্ষতি করিনি আল্লাহ। তাহলে কেন এই নির্দোষ মানুষ গুলো এই ভাবে কষ্ট পাচ্ছে ? আমার সাথে কার কী শত্রুতা আছে? আমি কার কী ক্ষতি করেছি আল্লাহ?শতশত অভিযোগ করে যাচ্ছে হিয়া।
.
মিসেস সাবিনা হিয়ার রুমে এসে কোথাও হিয়া কে দেখতে না পেয়ে বেলকনিতে গেলেন। মেঝেতে বসে হিয়া কে কাঁদতে দেখে শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছে দিলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,,
.
আমাদের সবাইকেই এক দিন চলে যেতে হবে। বাস্তবতা মতই কঠিন হোক না কেন আমাদের তা মেনে নিতে হবে। তোর আব্বু যখন আমাদের ছেড়ে চলে গেছিলেন আমরা কি পেরেছি তাকে ফিরিয়ে আনতে? এটা কখনো স্বম্ভব ও না। নিজেকে শক্ত করে মা।জিবন অনেক কঠিন। এই সবের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা কর।
.
আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আম্মু। আমার জন্য শুধু আমার জন্য আমান,জায়ান ভাইয়া ড্রাইবার আংকেল মারা গেছেন। আমি দায়ী। কেন আমি বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম কেন আম্মু কেন?আজ আমার জন্য তাদের মায়ের কোল খালি হয়ে গেল। আমি কিভাবে নিজেকে শক্ত করবো বলো না আম্মু? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আম্মু। আমি এই জন্যই সাদাফ ভাইকে বিয়ে করতে চাই না আম্মু।আমানদের মতো যদি সাদাফ ভাইয়ের সাথে ও এমন হয়? তাহলে আমি মরে যাবো আম্মু।
.
মিসেস সাবিনা শক্ত করে বুকের মাঝে হিয়া কে জড়িয়ে ধরলেন।কি বলে মেয়েকে শান্তনা দিবেন সেই ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।
.
.
রাত তখন প্রায় দশটা বাজে। আমানের দাফনের কাজ শেষ করে রিয়ানের সাথে রিয়ানদের বাসায় আসে সাদাফ।
.
হিয়া কোথায় আম্মু?
.
কাঁদতে কাঁদতে এই মাত্র ঘুমিয়েছে। শরবতের সাথে ঘুমের ওষুধ গুলে খাইছি বলে একটু ঘুমাচ্ছে।
.
রিয়ান আর কিছু বললো না। নিজের রুমে ফ্রেশ হতে চলে গেল। মিসেস সাবিনা ও রান্না ঘরে খাবার গরম করতে চলে গেলেন।সাদাফ আস্তে আস্তে হিয়ার রুমে চলে যায়।লাইট অন করে হিয়ার মুখের দিকে তাকাতেই বুকের বাঁ পাশে চিনচিন করে উঠলো।এই দুই দিনে শরীরের কী অবস্থা হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। কতো দিন যেন ঘুমায় না।সাদাফ হিয়ার পাশে গিয়ে বসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে উঠে আসার সময় হিয়ার পাশে একটা নীল রঙের ডায়রি দেখতে পেল সাদাফ।ডায়রি টা নিতে গিয়ে হাত সরিয়ে নিলো। ইতস্তত করে আবার কি মনে করে যেন ডায়রিটা হাতে নিলো। মানুষের পার্সোনাল ডায়রি দেখতে নেই।ডাইরিটা রাখতে গেলে ডায়রিটা হাত থেকে পড়ে যায় সাদাফের।নিচু হয়ে ডায়রিটা তুলতে গেলে চোখে পড়ে বড় বড় অক্ষরে লেখা
ভালোবাসি ভালোবাসা ♥️
তার নিচে ছোট্ট করে লেখা আমার সাদাফ আহমেদ। লেখাটা পড়ে সাদাফ বিষ্ময়ে কিং কর্তব্য বিমূঢ় হয়ে যায়।
বিড় বিড় করে বলতে থাকে হিয়া আমাকে ভালোবাসে। কথাটা ভাবতেই খুশিতে সাদাফের নাগিন ড্যান্স দিতে ইচ্ছে করছে।ডায়রিটা তুলে রাখতে গেলে সেখান থেকে সেই কাগজের ভাঁজটা পড়ে যায় ফ্লোরে।সাদাফ নিচ থেকে কাগজটা তুলে নিয়ে কাগজের ভাঁজ খুলে সেই লেখাটা পড়ে স্তব্ধ হয়ে যায়।
কাগজটা পকেটে ঢুকিয়ে ডায়রিটা জায়গায় রেখে লাইপ অফ করে সাদাফ হিয়ার রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
মিসেস সাবিনা খাবার খাওয়ার জন্য ডাকলে সাদাফ এখন কিছু খাবে না বলে বাইক নিয়ে বাড়িতে চলে গেল।সাদাফের চলে যাওয়ার কারন আগা গোড়া কিছুই বুঝলেন না মিসেস সাবিনা ইয়াসমিন।
.
.
বাড়িতে এসে সাদাফ কাগজটা পকেটে থেকে বের করে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে রেখে কাভার্ড থেকে টি শার্ট আর আর ট্রাউজার নিয়ে ওয়াস রুমে গোসল করতে চলে যায়।
.
ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে দেখে তার আম্মু বিছানায় বসে আছেন।
.
কিছু বলবা আম্মু?
.
হুম। হিয়া যখন বিয়েটা করছে না তখন অনিমা রং সাথেই তোর বিয়েটা হবে।
.
এসব কী বলছো তুমি?
.
মা বলছি একদম ঠিক বলছি। তোর আব্বু আজ অনিমার আব্বুর সাথে কথা বলেছে এ ব্যাপারে।
.
বাহ্ তোমরা তো দেখছি আমাকে না জানিয়ে অনেক দূরে এগিয়ে গেছো।শুনো আম্মু আমি হিয়া কে ভালোবাসি।যদি বিয়ে করতেই হয় তবে আমি হিয়াকেই করবো।
.
ঐ মেয়েটা কীভাবে গতকাল অপমান করছে দেখিস নি তুই?সবার মুখের উপরে বলেছে এই বিয়ে হবে না। তারপরও তুই এসব বলছিস?
.
আমি হিয়া কে চিনি আম্মু। হিয়া এমনি এমনি ঐ কাজ করেনি। কিছু একটা আছে ওর এই কাজ করার পেছনে।
.
ওহ মায়ের থেকে ঐ মেয়ের দাম বেশি হয়ে গেছে তাহলে। ভালো।
খেতে আয় বলে
মিসেস ফাহমিদা সাদাফের রুম থেকে চলে যান। কিছুক্ষণ পর সাদাফ খাবার খেতে যায়।
.
আব্বু কৈ আম্মু?
.
খেয়ে ঘুমাতে গেছেন।
.
সাদাফ আর কিছু বললো না। চুপচাপ খেয়ে নিজের রুমে চলে গেল। বিছানায় আধশোয়া হয়ে মোবাইল নিয়ে কিছুক্ষণ ফেসবুকের নিউজ ফিডে স্ক্রল করলো। হঠাৎ তার চোখে একটা ভিডিও ভেসে উঠলো।
ভিডিওটা মন দিয়ে দেখে সাদাফ তার অফিসের কলিগ আরিফকে কল দিল।
আরিফ কল ধরতেই সাদাফ জিগ্যেস করলো,,
.
কেমন আছেন আরিফ ভাই?
.
এই তো ভালো। আপনি?
.
হুম আছি এক রকম।
সায়মানের সেই ভিডিওটা ভাইরাল হয়েছে।
.
হুম আমি ও দেখছি। এই ভিডিওটার জন্য সায়মান কে পুলিশে গ্রেফতার করে ছিল।
.
হুম করারি কথা।এত বেয়াদব কোনো পুরুষ হয়?ভরা রাস্তায় একটা মেয়ের গায়ের ওড়না টেনে নিয়ে আবার তার জামা ও ছিঁড়ে দেয়।
মনে পড়লে ইচ্ছা করে মাটিতে পুঁতে ফেলি ঐ মেয়ে খোর টাকে।
.
শুধু মেয়ে খোরি না ঐ সায়মান মানুষ ও খুন করতে একবার ও ভাবে না। কিছু দিন একটা খবর শুনলাম সাদাফ ভাই।
.
কী খবর?
.
ঐ সায়মান নাকি কিছু দিন আগে গাড়ি দিয়ে কোন বর যাত্রীর গাড়িতে মারাত্মক ভাবে ধাক্কা দিয়েছে।তার ফলে বরং যাত্রীর গাড়িটা উল্টে গিয়েছিল।ড্রায়বার তো ঘটনা স্থলেই মারা যায়।
.
সাদাফের কাছে এখন সবটা পরিষ্কার হয়ে যায়।
কি করে জানলেন আপনি?
.
ঐ শিহাব আছে না আমাদের অফিসের পিয়ন।ও নাকি দেখেছে যে গাড়িটা ধাক্কা দিয়েছে সেখানে সায়মান কে দেখেছে।
.
ওহ। আচ্ছা আরিফ ভাই রাখি। ঘুম পাচ্ছে। সকালে অফিসে কথা হবে।সাদাফ কল কেটে দিল।
.
সায়মান আমানকে মারতে গেলো কেন? আমানের সাথে ওর কিসের শত্রুতা? একটা মানুষ কতোটা নিচ হলে মানুষ খুন করে ছি,,,,,
.
চলবে,,,,,,,,