বৃষ্টি তোমাকে দিলাম❤️পর্ব-৪
ফাবিহা নওশীন
ইশারা ফারানের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আজ বুঝি চাকরিটা যাবেই। ওর ভেতরে যেতে ইচ্ছে করছে না। তবুও যেতে হবে। ও দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বড় করে শ্বাস ফেলল। নিজেকে বুঝাচ্ছে যা হবার হবে, ভেতরে যাওয়া যাক। ইশারা শক্তি সঞ্চার করে ভেতরে যাওয়ার জন্য মনস্থির করল। কপাল আর ঠোঁটের উপর থেকে ঘাম মুছে নিল। পেঁচার মতো মুখটা নিয়ে কিছুতেই ভেতরে যাওয়া যাবে না। ইশারা চায় না নিজেকে দূর্বলভাবে উপস্থাপন করতে। তাই নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে দরজার হ্যান্ডেলে হাত দিল।
ইশারা ভেতরে গিয়ে দেখে ওর আগেই সেই ভুড়িওয়ালা লোকটা হাজির। ভুড়িওয়ালা লোকটার নাম আনিস রহমান। তিনি যে স্যারের কাছে বেশ ভালো করেই ওর নামে নালিশ করেছে জানা আছে। পারুল শিখিয়ে দিয়েছে ইশারাকে কোনো প্রতিবাদ না করে সরি বলে নিও। তবেই চাকরিটা বাঁচবে। একটা চাকরির জন্য কি কি করতে হবে ভেবেই ইশারা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। অপরাধ না করেও সব মেনে নিয়ে সরি বলতে হবে।
ইশারা একবার আনিসের দিকে চেয়ে এগিয়ে গেল। ফারানের দিকে তাকালেই দেখল ফারানের পূর্ণদৃষ্টি ওর দিকে।
ফারান নিজের জায়গায় বসে আছে। ইশারা বরাবর দাঁড়িয়ে বলল,
“জি স্যার, আমাকে ডেকেছিলেন।”
ফারান হাতের কলম নাড়িয়ে বলল,
“আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আপনাকে কেন ডাকা হয়েছে?”
ইশারা মাথা নিচু করে বলল,
“জি স্যার, বুঝতে পারছি।”
ফারান অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে গেল। তারপর বলল,
“আপনি কি তাহলে অপরাধ স্বীকার করে নিচ্ছেন?”
ইশারা তাৎক্ষণিক ফারানের দিকে তাকাল। অপরাধ না বলেই বলছে অপরাধ স্বীকার করছে কি না।
“অপরাধ! আমি কি অপরাধ করেছি?”
আনিস রহমান বসা থেকে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল,
“কি অপরাধ? নাটক করছেন? ক্যান্টিনে এতগুলো মানুষের সামনে আমার অপমান করেছেন, আমার পেট নিয়ে মজা করেছেন। এখন জিজ্ঞেস করছেন আপনার অপরাধ কি? যেন কিছুই জানেন না।”
ফারান, আনিস রহমানের দিকে দৃষ্টি রেখে উনার কথা শুনছিল। উনার কথা শেষ হতেই ইশারার দিকে তাকাল। ইশারার রিয়েকশন দেখার জন্য।
ইশারা চোখ বড়বড় করে বলল,
“ব্যাস! এটুকুই? আপনি কি বলেছেন সেগুলো হাইড করে গেলেন?”
“আমি বলেছি পারুলকে যেমন হেল্প করেন তেমন আমাদেরও তো একটু করতে পারেন। আর আপনি কি বললেন? আপনি কি প্রেগন্যান্ট? ভুড়িওয়ালা এটা সেটা বলে অপমান করেছেন।”
“সাহস থাকলে পুরো ঘটনা বলুন। নিজেকে সেভ করার জন্য যে পয়েন্টগুলো প্রয়োজন শুধু সেটুকুই বলে যাচ্ছেন কেন?”
ফারান দুজনকে তর্ক করতে দেখে বলল,
“স্টপ! একজন একজন করে বলুন। মিস ইশারা আপনি উনাকে এসব বলেছেন?”
ইশারা ভয় না পেয়ে সোজাসাপটা বলল,
“হ্যাঁ বলেছি তবে এভাবে নয়। অন্যভাবে। উনি ভুল ভাবে উপস্থাপন করছেন।”
ফারান যেন এসব একদমই আশা করেনি ইশারার কাছে। তাই গম্ভীরমুখে বলল,
“উনি আপনার চেয়ে সিনিয়র। উনার সাথে আপনার এভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি। এক কথায় অন্যায় করেছেন।”
ইশারা বুঝতে পারছে ফারান ওর প্রতি রেগে যাচ্ছে। ইশারার নিজেরও লজ্জা লাগছে। আনিস রহমান ওকে ঝগড়ুটে, বেয়াদব মেয়ে হিসেবে উপস্থাপন করছে। ইশারা কন্ঠস্বর নরম করে বলল,
“কেন বলেছি সেটা তো জিজ্ঞেস করুন?”
ফারান দু’হাতের ভর টেবিলের উপর দিয়ে বলল
“আচ্ছা বলুন কেন বলেছেন?”
“উনি পারুল মেমকে আজেবাজে কথা বলছিলেন। উনার প্রেগ্ন্যাসি নিয়ে মজা করছিলেন। বাজে ইঙ্গিত করছিলেন।”
আনিস ক্ষিপ্র হয়ে বলল,
“তাই না-কি? এখন আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন? আমাকে চরিত্রহীন বানিয়ে দিচ্ছেন? স্যার পারুল মেমকে ডাকুন। তাহলেই সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।”
ইশারাও আনিস রহমানের সাথে একমত হয়ে বলল,
“অবশ্যই। আপুকে ডাকুন। তাহলেই সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।”
ইশারা অতি কনফিডেন্সের সাথে বলল।
ফারান পারুলকে ডেকে পাঠাল। পারুল আসতেই ইশারা এগিয়ে গিয়ে বলল,
“আপু লাঞ্চ টাইমে কি হয়েছিল বলুন তো।”
ইশারা আনিসের দিকে তাকাল। আজ তার মুখোশ উন্মোচন হবে। ভালো মানুষের আড়ালে তার যে কুৎসিত রুপ আছে সেটা প্রমাণ হবে আজ সবার সামনে।
পারুল কিছুই বুঝতে না পারান ভান করে বলল,
“কি হয়েছিল ইশারা?”
ইশারা অবাক চোখে পারুলের দিকে তাকাল। পারুলের চোখ মুখ স্বাভাবিক। ও এমন ভান করছে কিছুই জানে না। আর কিছুই হয়নি। সব কিছু স্বাভাবিক আছে।
আনিস রহমান হালকা হেসে বলল,
“আমি নাকি তোমার সাথে বাজে বিহেভ করেছি? আজেবাজে কথা বলেছি।”
পারুল মৃদু হেসে ফারানের দিকে তাকাল। তারপর বলল,
“জি না স্যার। আমরা লাঞ্চ করতে করতে স্বাভাবিকভাবেই গল্প করছিলাম। ইশারার হয়তো বুঝতে ভুল হয়েছে। ওকে ক্ষমা করে দিন স্যার। আনিস স্যার আপনিও ওকে ক্ষমা করে দিন৷ ও ছোট মানুষ বুঝতে পারেনি।”
ইশারার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছে। কি করে এক মুহুর্তে মানুষ বদলে যেতে পারে? কি করে সত্যকে মিথ্যা প্রমাণ করে? মুখের উপরে চোখের দিকে চেয়ে এত সহজে মিথ্যা বলতে পারে?
ইশারা অনেক কষ্ট পায় পারুলের কথা শুনে। যার জন্য এই সিচুয়েশনে এসে দাঁড়িয়েছে সেই এখন লাথি মারছে? ওর ভেতরটা হুহু করে উঠে।
মানুষ চিনতে এত বড় ভুল করল? এভাবে ঠকে গেল?”
ইশারা আহত কন্ঠে বলল,
“বাহ! পারুল আপু। দারুন অভিনয় করতে পারো তুমি। এই তোমার জন্য আমি সহানুভূতি দেখিয়েছি? এই তোমাকে হেল্প করেছি বিনাস্বার্থে? এভাবে আমাকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করলে? আমি তো তোমার জন্যই স্ট্যান্ড নিয়েছিলাম। আর তুমি?”
ইশারার গলা ধরে আসছে। চোখে পানি এসে পড়ছে। মনে হচ্ছে এখুনি বাঁধ ভেঙে অশ্রু ঝড়বে। চোখের পানি কন্ট্রোল করতে পারছে না। তারপর ভাঙা গলায় বলল,
“স্যার, আমার আর কিছু বলার নেই। আপনি যে শাস্তি দিতে চান আমি রাজি আছি। এক্সকিউজ মি।”
ইশারা বেড়িয়ে যেতে যেতে আনিস রহমান বলল,
“স্যার, উনাকে এভাবে ছেড়ে দিবেন?”
ইশারা দরজার সামনে ধমকে দাঁড়িয়ে গেল। ফারান আনিস রহমানের দিকে চেয়ে বলল,
“অবশ্যই নয়। যে অন্যায় করেছে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। এখন আপনারা সবাই আসতে পারেন। আমি আগামীকাল এ নিয়ে কথা বলব। আজকে আমার মিটিং আছে।”
ফারানের কথা শেষ হতেই ইশারা দরজা খুলে বের হয়ে গেল। ফারান এখনো দাঁড়িয়ে আছে। ইশারাকে ও যথেষ্ট ভালো মেয়ে ভেবেছে এতদিন। কিন্তু এখন কি হচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না। মনে হচ্ছে এর মাঝে কোন রহস্য আছে। কিন্তু কি সেটা ধরতে পারছে না।
ইশারা অফিস শেষ করে বেরুতে গিয়ে আনিস রহমানের সাথে দেখা হলো। তিনি লিফটের দরজার পাশে দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইশারা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিল উনার দিকে। উনার কুৎসিত হাসি গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে ইশারার কিন্তু কিছু করার নেই ওর। কিন্তু রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না। এক সময় মাটির মানুষ ছিল ইশারা। রাগ বলতে কোনো শব্দের সাথে পরিচিতি ছিল না। কেউ আদুরি গলায় কিছু বললেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ত। সবকিছু করে দিতে প্রস্তুত ছিল। সেটা যত কষ্টই হোক। কিন্তু এখন প্রচন্ড রাগ হয়। তবে আজকের রাগটা অহেতুক নয়। বিনা অপরাধে অপরাধী হলো। বসের সামনে অসম্মানিত হলো। কারো ভালো করতে গিয়ে অপমানিত হতে হলো। মাথা নিচু করে বেরিয়ে আসতে হলো। আর যে অন্যায় করেছে সে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে নির্দ্বিধায়। আর এখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে।
ইশারা সিড়ি দিয়ে ধপধপ করে নামছে। রাগ যেন সব ইট-পাথরের উপর ঝাড়ছে।
আর বিরবির করে বলছে,
“এইজন্যই মানুষ বলে দুনিয়া ভালো মানুষের নয়। উপকারীকে বাঘে খায়। এইজন্যই কেউ কাউকে আজকাল সাহায্য করতে চায় না। কেননা সাহায্য করার পর নিজেকেই বিপদে পড়তে হয়। আর সেই বিপদে সেই ফেলে যাকে সাহায্য করে। ইশারা যদি তোর বিন্দুমাত্র লজ্জা থাকে তাহলে আর কাউকে কখনো সাহায্য করবি না। আজকের ঘটনা থেকে শিক্ষা নে।”
.
আজ আকাশ পরিস্কার, মেঘ নেই। হু হু করে দক্ষিণা বাতাস বইছে। ফুরফুরে বাতাসে মন মেজাজ ফুরফুরে করে দেওয়ার কথা কিন্তু চোখের জলে ইশারার মন ভিজছে৷ এই অপমান মেনে নিতে পারছে না। চোখ মুছে বারান্দা থেকে উঠে দাঁড়াল।
তারপর হালকা হেসে আকাশের দিকে চেয়ে বলল,
“যতই ভাগ্য থেকে পালাতে চাই না কেন পালানোর সময় তো ভাগ্যকে সাথেই নিতে হয়। তাই যতই চেষ্টা করি এসব থেকে বাঁচতে, প্রব্লেম এসে দাঁড়াবেই। হতভাগী ইশু। তোর নসিবটাই খারাপ। সুখ তোর কপালে লেখা নেই।”
হটাৎ করেই অভিমানী হয়ে পড়ল ইশারা।
.
পরের দিন শুকনো মুখে ইশারা অফিসে গেল। সবাই কিভাবে ওর দিকে তাকাচ্ছে। ইশারা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের কেবিনে গিয়ে বসল। কারো দিকে আর তাকাবে না। চুপচাপ বসে আছে ইশারা। কাজে মন নেই ওর। এখানে কাজ করা ওর জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অপবাদ নিয়ে কি করে এখানে থাকবে? ইশারা মনে মনে দোয়া করছে যাতে আজ বস ওকে ফায়ার করে দেয়৷ নতুন একটা জব খুঁজে নিবে। যদিও সহজ হবে না। কিন্তু এই অপমানের জীবন মেনে নিতে পারবে না।
টেবিলের উপর মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে ইশারা। আশেপাশের সবাই একটু পর পর ওর দিকে তাকাচ্ছে আর কানাঘুষা করছে।
ইশারার ডাক পড়ল। ফারান ওকে ডেকেছে। ইশারা জোরে শ্বাস নিয়ে বলল,
“জি আসছি।”
ইশারা দু’হাতে মুখ চেপে ধরে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই হাত নামিয়ে উঠে দাঁড়াল। তারপর কোন দিক না চেয়ে হনহন করে হাঁটছে। ওর হিলের শব্দে সবাই বিরক্ত। ইশারা নক করে অনুমতি নিয়ে ভেতরে ঢুকল।
ফারান দু’হাত পকেটে গুজে দাঁড়িয়ে আছে। ইশারাকে বসতে ইশারা করল। ফারান কিছু বলার আগেই ইশারা বলল,
“স্যার, আমি ইস্তফা দেব।”
ফারান ওর কথা শুনে অবাকের শীর্ষে। বিস্ময় কাটিয়ে রাগে গজগজ করছে। দুম করে এসে বলল ইস্তফা দেবে? ফারান চোয়াল শক্ত করে বলল,
“ইস্তফা দিলেই কি দায় মুক্ত হবে? তুমি কি করে বয়সে এত বড় একজনের সাথে এভাবে কথা বলতে পারো?”
ইশারা উঠে দাঁড়িয়ে ভয়হীন গলায় বলল,
“আমি কোনো অন্যায় করিনি। তাই আপসোস আমি করব না৷ এই কাজের জন্য পস্তাবও না। আমি রেজিগনেশন লেটার দিয়ে দেব।”
ফারান ঘুরে এসে ওর সামনে দাঁড়াল৷ ওর চোখগুলো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। রাগে ফেটে যাচ্ছে। ইশারা ওর দিকে তাকিয়ে একটু ভয় পেল। ভয়টা প্রকাশ করতে না চেয়েও প্রকাশ করে ফেলছে। কিন্তু ফারানকে এত হিংস্র রুপে কখনো দেখে নি, আজ অন্য একজনকে দেখছে। ইশারা পিছিয়ে গেল।
ফারান চেঁচিয়ে বলল,
“আমি তোমাকে এখানে ডেকেছিলাম কিছু কথা বলতে। আর তুমি আমাকে ইস্তফা দেখাচ্ছো? এতবড় কোম্পানিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছো? তোমাকে আমি একদম অন্য রকম ভেবেছিলাম। একদম স্বচ্ছ ঝিলের মতো। নম্র, ভদ্র, উদার মনের একজন। যে কখনো কাউকে অসম্মান করতে পারে না। যে কাউকে কষ্ট দিতে পারে না। কিন্তু না তুমি তো……
ফারান থেমে গেল। ফারান কথা বলতে বলতে ওর দিকে আগাচ্ছিল তাই ইশারা বাধ্য হয়েই পিছাচ্ছে।
ফারান ওর একদম কাছে গিয়ে রক্তচক্ষু নিয়ে শক্ত গলায় বলল,
” আমি গতকাল মিটিংয়ের জন্য বিষয়টি খুঁটিয়ে দেখতে পারিনি। কিন্তু রাতে ঠিক করে ঘুমাতে পারিনি। আমি তোমার এই আচরণ মেনে নিতে পারিনি। আমার মনে হয়েছে আমি তোমাকে যতটুকু চিনেছি তাতে তুমি এমন নও। আমার মনে হয়েছিল তোমার সাথে অন্যায় হচ্ছে৷ কিন্তু তুমি তো জোর গলায় বলছো তুমি অন্যায় করো নি।”
ইশারা মাথা নিচু করে কাঁদছে। ফারানের কথা শেষ হতেই চিৎকার করে বলল,
“আমি কোনো অন্যায় করিনি। জোর গলায় বলতে পারছি কারণ আমি অন্যায় করিনি। আমার সাথে অন্যায় হয়েছে। পারুল আপু মিথ্যা বলেছে। কেন বলেছে জানি না। তবে ওই লোকটা ভদ্রতার আড়ালে একটা জানোয়ার। একটা মেয়ে খুব সহজেই একটা পুরুষের কুৎসিত উদ্দেশ্য, রুপ বুঝতে পারে।”
ফারান ওর কথা শুনে একটু দূরে সরে দাঁড়াল। ইশারার এত কাছে চলে গেছে খেয়ালই নেই। তার উপর ইশারা কাঁদছে। আর ইশারার বলা কথাগুলো ফারানকে আবারও নাড়িয়ে দিল। যেমনটা গতকাল অফিসে, বাড়িতে ফিল করেছে। অস্থিরতায় ভুগেছে।
ফারান টেবিলের উপর থেকে টিস্যু নিয়ে ইশারার দিকে বাড়িয়ে দিল। ইশারা চোখ মুছছে। ফারান চেয়ার টেনে ওকে বসতে দিল। ইশারা বসার পর টেবিলের উপর থেকে পানি নিয়ে ইশারাকে খেতে বলল।
ইশারা পানি খেতে খেতে ফারান আরেকটা চেয়ার টেনে ওর খুব কাছে মুখোমুখি বসল। ইশারা একটু স্বাভাবিক হলে ফারান বলল,
“পুরো ঘটনা আমাকে খোলে বলো। একটা ওয়ার্ডও যেন বাদ না পড়ে। আই ওয়ান্ট টু নো এভ্রিথিং।”
ইশারা ওকে প্রথম থেকে সবকিছু বলল। কোন কথার পেছনে কি বলেছে, কিভাবে বলেছে, উনার দৃষ্টিভঙ্গি, পারুলের ভীত হয়ে পড়া, ইশারাকে ওয়ার্ন করা, সবার সামনে এসে সরি বলা এভ্রিথিং।
সব শুনে ফারান ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ল। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পাইচারি করছে। নিজের রাগ কমানোর চেষ্টা করছে। কপালে আঙুল দিয়ে ঘষছে। ইশারা চুপচাপ বসে রাগান্বিত ফারানকে দেখছে।
ফারান ইশারার দিকে ঘুরে বলল
“গতকাল কেন বলোনি?”
ইশারা শুকনো মুখে ভয়ে ভয়ে বলল,
“সুযোগ পাইনি। তাছাড়া পারুল আপুর মিথ্যা কথায় অনেক হার্ট হয়েছি। তাই চেয়েও বলতে পারিনি।”
ফারান ঠাস করে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। ইশারা বসা থেকে উঠে ভয়ার্ত ভঙ্গিতে দাঁড়ায়। তারপর ফারানকে অনুসরণ করে। ফারান যেভাবে রেগে আছে কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলতে পারে।
চলবে…..