বৃষ্টি তোমাকে দিলাম❤️,পর্ব-৯
ফাবিহা নওশীন
ফারান স্থির দৃষ্টিতে ইশারার যাওয়ার দিকে চেয়ে রইল। ইশারার এভাবে চলে যাওয়াকে ফারান ভালো চোখে দেখছে না। ফারান নিজেকেই বলছে,
“ইশারা মনে হয় আমাকে ক্ষমা করেনি। ট্রাস্ট মি ইশারা আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না। আমার কি হয়ে গিয়েছিল আমি নিজেও জানি না। নয়তো তোমাকে এভাবে টাচ করার কথা ভাবতেও পারি না। আমি কেন তোমাকে বাজে নজরে দেখব? আমি যে তোমাকে ভালোবাসি। তোমার ওই শান্ত দৃষ্টি, দৃষ্টিতে গোপন ব্যথার প্রেমে পড়েছি। রোজ একটু একটু প্রেমে পড়তে পড়তে হুট করেই ভালোবেসে ফেলেছি। কি করব আমি? তোমার কাছে আবারও ক্ষমা চাইব। ক্ষমা না পাওয়া পর্যন্ত ক্ষান্ত হব না।”
ফারান চোখ বন্ধ করে ইশারার মায়াময় মুখটা ভেসে উঠল। এই মুখটা ওকে তৃপ্তি দেয়। প্রশান্তি বয়ে আনে বুকের মাঝে।
.
ইশারা অহনাকে কল করতে গিয়েও করল না। অহনা হয়তো কাজে ব্যস্ত। ইশারার মাথা ধরে যাচ্ছে। পার্সেলটা কে দিয়েছে বুঝতে বাকি নেই ওর। শুধু ফোন নাম্বারই না অফিসের ঠিকানাও জোগাড় করে নিয়েছে। আর অফিসে ওর জন্য পার্সেল পাঠাচ্ছে। তাহলে সে ইশারার অবস্থান সম্পর্কে সব কিছু জানে।
ইশারা জোরে শ্বাস নিল। পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিল। গলাটা শুকিয়ে গেছে। তারপর চোখ বন্ধ করে নিজেকে স্বাভাবিক করে চোখ মেলল।
“ও আমার আশেপাশেই আছে কিন্তু আমার সামনে কেন আসছে না? কি চাইছে? কি খেলা খেলছে?”
ইশারা পুরোটা দিন আর কাজ করতে পারেনি। ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে একটা জিনিসই। যেকোন সময় যেকোন ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ওকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
অফিস শেষে গেট থেকে বাইরে বেড়িয়ে ইশারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখ একজনকেই খুঁজছে। যদি থাকে আশেপাশে। ডানে বামে রাস্তা ভর্তি অসংখ্য মানুষের ভীড়ে ওর চোখ তাকে কোথাও খুঁজে পেল না।
ইশারা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল। ফারান ইশারাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ি থামিয়ে নেমে এল। ফারান হটাৎ ইশারা বলে ডাকতেই ও চমকে গেল। কেন চমকে গেল বুঝতে পারছে না। এ কন্ঠস্বর তো ওর অচেনা নয়। হয়তো ওর অবচেতন মন অন্য কাউকে খুঁজছিল তাই চমকে গেছে।
ইশারা যথাসম্ভব মুখে হাসি ফুটিয়ে ফারানের দিকে চেয়ে বলল,
“জি স্যার?”
“তুমি এখনো দাঁড়িয়ে আছো। কোনো সমস্যা? হেল্প লাগবে? ”
“জি না, আমি একটু প্রয়োজনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। কোনো সমস্যা নেই। ধন্যবাদ স্যার।”
ফারান তখনও দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলতে চাইছে। ইশারার মনে হচ্ছে ফারান অন্যকিছু বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে না। ইতস্তত করছে, হয়তো সময় প্রয়োজন।
ফারান কিছুটা সময় নিয়ে বলল,
“তুমি আমার সরি একসেপ্ট করো নি? সেদিন যেমন রিয়েক্ট করলে আর আজ হুট করে বেড়িয়ে এলে। তুমি এখনও আমাকে মাফ করোনি তাই না? আমাকে তুমি অনেক খারাপ ছেলে ভাবছো তাই না? আমার উনত্রিশ বছর বয়সে আমি এমন কাজ কখনো করিনি। কারো পারমিশন ছাড়া তার গায়ে হাত লাগানো জঘন্য অপরাধ। ইশারা আমি অতটাও খারাপ নই তুমি আমাকে যতটা খারাপ ভাবছো।”
ইশারা লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল,
“কি বলছেন এ-সব স্যার? আমি আপনাকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করি। আমি জানি আপনি খুব ভালো মনের মানুষ। সেদিন আমি অহনার উপর রেগে গিয়েছিলাম কারণ ও খুব হাসি-ঠাট্টা করে। আর এ-সব আমার একদম পছন্দ না। হাসি-ঠাট্টার একটা লেবেল থাকে সেটা ও অতিক্রম করে ফেলেছে। ও তো আমার সম্পর্কে সব জানে। সব জেনে…
ইশারা বলতে গিয়েও থেমে গেল। স্যারের সাথে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা কেন বলছে? উনি বস বন্ধু অথবা আত্মীয় নয়। তাই ইশারা আর কিছু বলল না। ইশারা কিছু না বললেও ফারানের কৌতূহল ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে। হটাৎই যেন রেগে গেল। ভয়ানক রাগ হচ্ছে ওর। মেয়েটা এমন কেন? সব সময় অর্ধেক কথা বলে চুপ করে যায়।
ফারান শক্ত কন্ঠে বলল,
“লাইন টা সম্পূর্ণ করো।”
ইশারা ফারানের কন্ঠস্বর শুনে চমকে তাকাল। হটাৎই ওর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। কিছু একটা দেখে স্থির হয়ে গেছে। ওর দৃষ্টি তাই বলছে। ফারান হকচকিয়ে গেল। ইশারা এমন ভয়ার্ত চোখে ওর দিকে চেয়ে আছে কেন? ফারান কিছুই বুঝতে পারছে না। ইশারার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলেও ওর ভাবাবেগ নেই।
ফারান তাই নিজেই কিছুটা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল,
“ইশারা কোনো সমস্যা?”
ইশারা কথা বলছে না। ফারান লক্ষ্য করল ইশারার দৃষ্টি এখনো সেদিকে আঁটকে আছে। ফারান সরে দাঁড়িয়েছে কিন্তু এখনও ইশারার দৃষ্টি সেদিকেই থেমে আছে এর মানে ইশারা ওর দিকে নয় অন্যকিছু দেখছে। ফারান ইশারার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাল৷ একটা ছেলে রহস্যময় হাসি ঠিক রহস্যময় না শয়তানি হাসি দিয়ে দু’হাতে ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে৷ ওর দৃষ্টিও ইশারার দিকে। ছেলেটি হাসিমুখে অথচ ইশারার চোখে মুখে আতংক।
ফারান একবার ইশারার দিকে আরেকবার ছেলেটির দিকে তাকাল। মনে হচ্ছে ইশারা ছেলেটিকে ভয় পাচ্ছে। ফারান কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওই ছেলেটা পকেটে হাত গুঁজে এগিয়ে এল। ফারান ইশারার দিকে না চেয়ে ছেলেটির দিকে তাকাল।
ছেলেটিকে একবার ফারানকে দেখে ইশারাকে
বলল,
“কেমন আছো সুইটহার্ট? উফফ, তোমাকে দেখে তো পাগল হয়ে যাচ্ছি।”
ইশারা প্রতিবাদ না করায় ফারান অবাক হলো। নিজেও কিছু বলতে পারছে না। সে অধিকার ওর নেই। ইশারার রিয়েকশনের অপেক্ষায় আছে ফারান।
ছেলেটি ফারানের দিকে তাকাল তারপর আলতো হেসে বলল,
“কি ছেলেদের সাথে ঘুরে বেড়ানো হচ্ছে? ঘুরে বেড়ানো পর্যন্ত না আরো কিছু?”
ইশারা এবার মুখ খুলল। রেগে গিয়ে বলল,
“মুখ সামলে উনি আমার বস।”
ছেলেটি চোখ বড়বড় করে তাকাল। তারপর আবারো হেসে বলল,
“ওহ মাই গড! বস! বসকেও কব্জা করে ফেলেছো? কি ট্যালেন্ট তোমার? এতদিন এই ট্যালেন্ট কই ছিল? না-কি আগে থেকেই ছিল? আমার বসকে নিয়ে তাহলে তোমার এত সমস্যা কেন ছিল?”
ইশারার গায়ে যেন কেরোসিন ঢেলে আগুন ছুড়ে মারল। গা জ্বলে যাচ্ছে। ফারান আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছে না। কিন্তু লোকটা যে ওর অপমান করছে সেটা অন্তত বুঝতে পারছে।
ইশারা ঝাঝালো কন্ঠে বলল,
“তোমার এই লো মেন্টালিটি তোমার কাছেই রাখো। সবাই তোমার মতো নয়। তোমাকে আমি কোনো জবাব দিতে বাধ্য নই।”
ইশারা ওকে এড়িয়ে চলে যেতে নিলে হাত ধরে ফেলে। ইশারা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না।
“সোহেল, আমার হাত ছাড়ো বলছি।”
ফারানের মাথায় রক্ত উঠে গেল। ভয়াবহ রেগে গেল। সোহেলের হাত টান মেরে সরিয়ে আঘাত করল৷ সোহেল ছিটকে দূরে পড়ে গেল। ইশারা চারদিকে তাকাচ্ছে। ভয় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সোহেল নিজেকে সামলে ফারানের সামনে এসে দাঁড়াল। ফারান ওর কলার চেপে ধরতে নিলে ফারানের হাত ধরে ফেলে বলল,
“বস, সে অফিসের আমাদের মাঝখানে কেন ঢুকছেন? আমাদের বিষয়টা আমাদের মিটিয়ে নিতে দিন।”
ফারান হাত নামিয়ে নিয়ে বলল,
“হু আর ইউ?”
সোহেল বাকা হেসে বলল,
“সোহেল, ইশারার হাসব্যান্ড।”
হাসব্যান্ড শব্দটা শুনে ফারানের পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে গেল। অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে একবার সোহেলের দিকে আরেকবার ইশারার দিকে তাকাল।
অস্ফুট স্বরে বলল,
“হাসব্যান্ড! ইশারা বিবাহিত?”
ইশারার চোখ ছলছল করছে। মুখ তুলে উত্তর দিতে পারছে না।
সোহেল ইশারার দিকে বিস্ময় নিয়ে চেয়ে বলল,
“আরে তুমি বিবাহিত কাউকে বলোনি? ওহ আচ্ছা! নিজের সৌন্দর্য দিয়ে অন্যকে বশ করার জন্য এই টেকনিক? বিবাহিত হলে তো পুরুষ মানুষ কম পাত্তা দেয় তাই নিজেকে কুমারী মেয়ে সাজিয়েছো? শ্যাম অফ ইউ ইশারা।”
ফারান বারবার চাইছে ও ভুল প্রমাণিত হোক। ইশারা বলুক ও বিবাহিত নয়, ছেলেটা মিথ্যা কথা বলছে। নয়তো ওর সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। ফারানের ভেতরটা হু হু করছে। দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। কারণ ইশারা অস্বীকার করেনি। ওর নীরবতা বলছে সব সত্যি। এতবড় ধোঁকা ইশারা ওকে কি করে দিল? কেন মিথ্যা বলেছে? কেন নিজেকে অনাথ বলেছে?
ফারান নিজেকে সামলে বলল,
“কিন্তু ও যে বলেছে ওর কেউ নেই। ও অনাথ।”
সোহেল চট করে বলল,
“সিম্পেথি পাওয়ার জন্য। ওর বাবা আছে, মা আছে, পরিবার-পরিজন সব আছে। ওর স্বামী মানে আমি আছি। যাইহোক এত কথা বলার প্রয়োজন মনে করছি না। ইশারা, চলো বেবি।”
সোহেল ওর দিকে এগুলে ইশারা দু’কদম পিছিয়ে গিয়ে বলল,
“খবরদার! ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ মি। আমার কেউ নেই। আমার জন্য সবাই মরে গেছে। বিশেষ করে তোমার মতো জঘন্য মানুষকে আমি দাফন করে দিয়েছি।”
ফারান বুঝল কোনো খটকা আছে। বিষয়টা জটিল এবং ঘোলাটে।
সোহেল ইশারার কথায় পাত্তা দিচ্ছে না।
“তোমাকে আমি নিয়ে যাব, কেউ আটকারে পারবে না।”
ফারান ওর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি আঁটকাবো।”
ফারান নিজের রাগ, অভিমান এক পাশে রেখে মানবতার খাতিরে এগিয়ে এসেছে৷
সোহেল ফারানের উপর ক্ষেপে গিয়ে বলল,
“আরে কে আপনি বলুন তো? এত বাড়াবাড়ি কেন করছেন? এখান থেকে সরে পড়ুন। আমি আমার বউকে নিয়ে যাচ্ছি আপনার এত সমস্যা কেন হচ্ছে?”
ইশারা দৃষ্টি নত করে বলল,
“স্যার, আপনি চলে যান।”
“কিন্তু….”
“প্লিজ স্যার।”
ফারান দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। ইশারার দিকে ছলছল চোখে তাকাল। ইশারা যদি একবার চোখ তুলে চাইত তাহলে দেখতে পেত তার সামনের মানুষটা কতটা বিধ্বস্ত, কতটা কষ্ট পাচ্ছে। কি করে একটা মানুষকে জীবন্ত মেরে ফেলেছে। ফারান ধীরে ধীরে পা ফেলছে। এগিয়ে যাচ্ছে না চাইতেও কালো গাড়িটার দিকে।
সোহেল বিশ্রীভাবে হেসে বলল,
“বলেছিলাম না তোর সামনে এসে দাঁড়াব খুব শীঘ্রই? চলে এসেছি। কথা রেখেছি।”
ইশারা দু’হাতে সজোরে সোহেলকে ধাক্কা মারল। তারপর চোখ মুখ শক্ত করে বলল,
“এতক্ষণ স্যারের জন্য কিছু বলিনি। তুই একটা অমানুষ, জানোয়ার। তুই কিছুতেই আমার নাগাল পাবি না। চেষ্টাও করিস না হাত পুড়ে যাবে। আমি সেই ইশারা নই। আমি নতুন আমি যাকে যত দেখবি অবাক হবি।”
ইশারা ওর দিকে আবারও বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকাল। ওর চোখ যেন আস্ত আগ্নেয়গিরি।
কিছুদূর হেঁটে একটা সিএনজি ধরে সোহেলের দিকে একবার চেয়ে উঠে পড়ল। সোহেল অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
ফারান ড্রাইভ করতে পারছে না। বারবার ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলছে। জীবন যখন ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে সেখানে স্টেয়ারিং আর তেমন কি। একটা সাধারণ মেয়েকে তার অসাধারণত্বে মুগ্ধ হয়ে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে হাজারো স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিল।
হটাৎ করে সব এলোমেলো হয়ে গেল। ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে। ইশারা কি করে ওর একটু একটু করে গড়া তাজমহল ভেঙে গুড়িয়ে দিল? কেন প্রতারণা করল? কেন এতবড় ধোঁকা দিল? কেন মিথ্যা বলল? এত কেন এর কোনো উত্তর পাচ্ছে না। ইশারার কাছে ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে।
.
ইশারা কাঁদছে। সোহেলের জন্য নয়, অজানা কারণে কাঁদছে। কারণটা ধরতে পারছে না ঠিকমত। সোহেলকে এখন আর ওর ভয় লাগে না। ভয় লাগছে আজকে যা দেখল তাতে। যদি ওর সন্দেহ সঠিক হয় তবে নিজেকে মাফ করতে পারবে না।
ইশারা পরের দিন অফিসে যায়নি। কোন মুখে যাবে? কি করে যাবে? মোবাইল অফ করে রেখেছে। নিশ্চয়ই সোহেল অনেকবার কল দিয়েছে। ইশারার কিছু ভালো লাগছে না। মনে মনে কঠিন সিদ্ধান্ত নিল।
পরের দিন অফিসে গেল অনেক সাহস নিয়ে। কারণ ওকে ফারানের মুখোমুখি হতে হবে। এই মানুষটা ওর অনেক উপকার করেছে, ওকে অনেক বিশ্বাস করেছে। সেই মানুষটাকে বড্ড কষ্ট দিয়েছে।
ইশারা নক করে শুকনো মুখে ভেতরে গেল। ফারান দু’হাত কপালে রেখে চোখ বন্ধ করে আছে। ওর মুখটা শুকনো লাগছে। ইশারা খেয়াল করল এই মানুষটা অসম্ভব সুন্দর। কি সুন্দর তার মুখের গঠন। তারপর নিজেকে সামলে নিল। কিছুক্ষণ ছি ছি করল নিজের ভাবনার জন্য।
অনেকটা সময় চলে যাওয়ার পর যখন কারো সাড়াশব্দ পাচ্ছিল না তখন ফারান ধীরে ধীরে চোখ খুলে। ইশারাকে দেখে রীতিমতো চমকে যায়। এখানে ওকে একদমই আশা করেনি।
ইশারার ফারানের চোখে চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে নেয়। ফারান উঠে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে ওর দিকে এগিয়ে আসে।
ফারান ওর সামনে এসে দাঁড়াতেই ইশারা কাচুমাচু করতে থাকে। হাতের কাগজটা ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা হাতে ফারানের দিকে বাড়িয়ে দেয়। ফারান চুপচাপ কাগজটা হাতে নিয়ে পড়ে আলতো হেসে বলল,
“পালিয়ে যাচ্ছো?”
ইশারা ঢোক গিলে মাথা তুলে বলল,
“পালাব কেন? আমি চুরি কিংবা ডাকাতি করিনি।”
ফারানের চোখ আর মুখের আকৃতি শক্ত হয়ে এল। কিছুটা চেঁচিয়ে বলল,
“এর চেয়ে বড় অন্যায় করেছো। প্রতারণা করেছো। মিথ্যা বলেছো। এটা অন্যায় নয়? কেন বলেছো?”
ইশারা ফারানের চিৎকারে একটু কেঁপে উঠলেও নিজেকে সামলে বলল,
“ওটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। আমি হাইড করতেই পারি।”
“বাট হোয়াই?”
“সে-সব বলতে গেলে দিন ফুরিয়ে রাত হয়ে যাবে। আমি বলতে চাই না। আমার একান্ত বিষয়গুলো একান্তই থাক।”
ইশারা পিছ ঘুরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে ফারান শীতল কন্ঠে বলল,
“আমার সাথে এত বড় অন্যায় কেন করলে? তুমি কি জানতে না? তুমি কি বুঝোনি?”
ইশারা থমকে গেল। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। ইশারা এই বিষয়টা এড়িয়ে যেতে চাইছিল কিন্তু পারল না। ফারান ওকে ঠিক থামিয়ে দিল।
ইশারা ফারানের চোখের দিকে তাকাল। সে চোখে ব্যথা ফুটে উঠেছে৷ এমন ব্যথা আজ পর্যন্ত কারো চোখে দেখেনি ইশারা।
ইশারা ঠোঁট চেপে দাঁড়িয়ে আছে। ফারান ওর কাছে এসে মুখোমুখি দাঁড়াল। আবারও শীতল কন্ঠে বলল,
“আমার অনুভূতি নিয়ে কেন খেলা করলে? আমি তো তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম৷ তুমি কি জানতে না? কখনো বুঝতে পারোনি?”
ইশারার পৃথিবী দুলে উঠল। গতকাল যা আন্দাজ করেছে তাই হলো। ইশারা চাইছিল ওর অনুমান যেন মিথ্যা হয়। কিন্তু না! কান্নায় ভেঙে পড়ল। দু’হাতে মুখ চেপে ধরল। কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“সরি স্যার। আমি বুঝতে পারিনি। আমি জানতাম না। বিশ্বাস করুন আমি সবটাই বন্ধুত্ব কিংবা সহানুভূতি মনে করতাম। কিন্তু গতকাল…..”
“গতকাল কি?”
ইশারা কিছুক্ষণ থেমে বলল,
“আমি গতকাল আপনার চোখে অন্যকিছু দেখতে পেয়েছি। আমি আগে বুঝতে পারলে সবটা ক্লিয়ার করে দিতাম। তাহলে কিছুই গোপন করতাম না। আমাকে মাফ করে দিন স্যার। আমি চাইনি আমার জন্য আপনি কষ্ট পান৷ আমি আপনাকে অনেক সম্মান করি। আমি জানি আপনি অনেক ভালো মনের মানুষ। আমি আপনাকে এই আমি এতটা কষ্ট দিলাম, নিজেকে কখনো মাফ করতে পারব না। আমি চলে যাব৷ অনেক দূর চলে যাব। আর কখনো আপনার সামনে আসব না।”
ফারান তখনও শান্ত। শান্ত কন্ঠেই বলল,
“কোথায় যাবে? স্বামীর কাছে?”
ইশারা কান্না থামিয়ে ফারানের দিকে অবাক চোখে চেয়ে রইল। তারপর গাল থেকে পানি মুছে বলল,
“ও আমার স্বামী নয়৷ ও একটা জানোয়ার। আমি মরে যেতে রাজি আছি কিন্তু ওর কাছে ফিরব না। কিছুতেই না।”
ফারান ইশারায় ওকে বসতে বলল। ইশারা একটা চেয়ার টেনে বসল। যাবার বেলায় অন্তত যা বলতে চায় একটু শুনে যাক।
ফারান ইশারার বরাবর বসে বলল,
“আমার কাছে তোমার জন্য অফুরন্ত সময় আছে। দিন রাত পাড় হয়ে যাক তবুও শুনতে চাই তোমার যন্ত্রণার কথা।”
ইশারা থমথমে মুখে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে বসে আছে।
চলবে…..!