ছায়া হয়ে থাকবো পাশে,Part_10

0
1571

ছায়া হয়ে থাকবো পাশে,Part_10
Ariyana Nur

রাতের আধার কেটে একটু একটু করে আলোর রশ্নি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরছে পৃথিবীর বুকে।আস্তে আস্ত বাড়ছে আলোর রশ্নি।সাথে বাড়ছে পাখির কিচিরমিচির শব্দ।পাখিরা তাদের গৃহ থেকে খাবারের খোজে বের হচ্ছে।কেউ গাছের ডালে বসে কিচিরমিচির করছে।সাথে বইছে মৃদু বাতাস।পরিবেশটা একেবারে মন ছুয়ে যাচ্ছে।

ছাদের এক পাশে আশুর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে রয়েছে নুহা।সকালে নামাজ পরেই দু’বোন ছাদে এসেছে।সকালের আবহাওয়া গায়ে মাখার জন‍্য।ছাদে এসে গল্প করতে করতে আশুর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরেছে নুহা।আশু নুহার মুখের দিকে এক ধ‍্যানে তাকিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

মানুষ বলে মায়ের পর যদি মায়ের মত কেউ ভালোবাসে সে হল বড় বোন।কিন্তু আশুর ক্ষেএে তার উল্টো।তার মার থেকেই তার বোন তাকে বেশি ভালোবাসে।মার কাছে সময় কই তাদের আদর করার।স্নেহ মাখা দুটো কথা বলার।আশুর মনে হয় ওরা ওদের মায়ের কাছে বোঝা।ওর মা ওদেরকে আদর করে কখন বুকে আগলে নেয় না।কখন আদর মাখা দুটো কথা বলে না।আশুর মনে পরছে না লাষ্ট কবে ওর মা ওর মুখে খাবার তুলে দিয়েছে।আর বাবা… চাইলেও মার জন‍্য পারে না।ওর কাছে এখন ওর আপিই সব।

ওর বোনই ওকে ছোট থেকে স্নেহ-মমতা, আদর-ভালোবাসা দিয়ে বড় করছে।মা যে ওর সাথে খারাপ ব‍্যবহার করে তা কিন্তু নয়।মার মত মা থাকে ওর মত ও।সারাদিন না খেয়ে থাকলেও বলবে না খেয়েছিস কিনা।জ্বর আসলে রুমের মধ‍্যে পড়ে থাকলে মনে চাইলে উকি দিয়ে একটু দেখে যাবে না মনে চাইলে নাই।আশুর প্রথম প্রথম একটু খারাপ লাগলেও এখন খারাপ লাগে না।এসব ছোট থেকে দেখতে দেখতে অভস্থ হয়ে গেছে।

সবার ভাগ‍্য তো আর ভাল না।সবাই তো সবটা পায় না।ও ওর ভাগ‍্যকে মেনে নিতে শিখেছে।মার আদর না পাক তাতে কি হয়েছে।ওর আপি তো আছে।যে ওকে মায়ের মত করে আদর,শাষন,ভালোবেসে বড় করছে।এতেই তার চলবে।

আল্লাহ এর কাছে আশুর একটাই ফরিয়াদ তার আপি যেন এই বাড়িতে যেই সুখ-সান্তি,আদর-ভালবাসা না পেয়েছে তা যেন তার শশুর বাড়ি গিয়ে পায়।তার আপির জীবনে যেন এমন কেউ আসে যে তার আপিকে সকল বিপদ আপদ থেকে আগলে রাখবে।সব সময় নিজের ভালোবাসা চাদরে মুড়িয়ে রাখবে।আশু নুহার মুখের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবতে ভাবতে একটা র্দীঘ নিশ্বাস ছাড়লো।যাতে এক রাশ কষ্ট মিশে রয়েছে।

সবাই বলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষ বড় হয়।তাদের বুঝ-শক্তি বৃদ্ধি পায়।কিন্তু কিছু কিছু মানুষ পরিস্থিতির কারনেও বড় হয় যায়।যেমন ধরুন আশু….
নিজের আর বয়স কত???কিশরী বয়সের মেয়ে।কোথায় এই বয়সে নিজের মন মত সব করবে।দুচোখে থাকবে মুক্ত পাখির মত আকাশে ডানা মেলে ঊড়ার স্বপ্ন।সব সময় নিজেকে নিয়ে রঙ্গিন স্বপ্ন দেখবে।নিজেকে নতুন রুপে নতুন ভাবে তৈরি করার প্রস্তুতি নিবে।সেখানে সে নিজের কথা না ভেবে বড় বোন এর কথা ভাবছে।দিন রাত বড় বোন এর সুন্দর একটা সংসারের স্বপ্ন দেখছে।কি অদ্ভুত তাইনা???

এটা অদ্ভুত হলেও এটাই সত‍্যি পরিস্থিতির কারনেই মানুষ পরিবর্তন হয়ে যায়।পরিস্থিতি মানুষকে সব করতেই সক্ষম করে।

?????

আসফিয়া আর আসলাম মুখোমুখি বসে আছে।কারো মুখেই কোন কথা নেই।আসলাম আসফিয়াকে মিঃখান এর কথার সাথে তেল-মসলা মেখে তার কান ভরেছে।আর আসফিয়া আসলাম এর কথা শুনে রাগে আগুন হয়ে বসে আছে।

একটু পর নিরবতা ভেঙ্গে আসফিয়া বলল….

—আসলাম ও তোকে অমানুষ বলেছে???

আসলাম মন খারাপ করে বলল….

—হ‍্যা আপা বলেছে।

— আমার ভাইকে অমানুষ বলা।ওকে আমি হাড়ে হাড়ে দেখিয়ে দিব অমানুষ কাকে বলে।এতোদিন ভাবতাম ওর মেয়েকে কোন একটা রাস্তার ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিব।কিন্তু না… এবার ওর মেয়ের জন‍্য এমন কাউকে বাছাই করব যাকে সবাই খারাপ চোখে দেখে।যাতে সবার কাছে ওর মাথা নত হয়।সমাজে ও মাথা উচু করে চলতে না পারে।

আসলাম অবাক হওয়ার ভান করে বলল….

—আপা এমন মানুষ তো চোর,ছিনতাইকারী,গুন্ডা,মাস্তানরা হয়।তুমি কি এমন কিছু চিন্তা করছো???

—না….এতোক্ষন করিনি।ভালো কথা বলেছিস।এমন কাউকেই ওর মেয়ের জন‍্য খুজে বের কর।

আসলাম অসহায় মুখ করে বলল….

—ঠিক আছে আমি খুজে বের করব।কিন্তু ওমন একজনের কাছে আমাদের ভাগনীকে বিয়ে দেওয়া কি ঠিক হবে???

আসফিয়া রেগে বলল…..

—তোর এতোকিছু ভাবতে হবে না যা বলেছি তা কর।

আসফিয়ার কথা শুনে আসলাম মনে মনে শয়তানী হেসে বলল….

—বোকা বোন আমার।তোর মাথায় কখন কি ঢুকাতে হয় তা আমার ভালো করেই জানা আছে।

?????

দেখতে দেখতে কেটে গেলো কিছু দিন।
এই কয়দিনে সাইফ একবারও তার মায়বী পরির দেখা পায়নি।সারাদিন ব‍্যস্ততার মধ‍্যে তার কথা যেন ভুলেই থাকে।কিন্তু দিন শেষে রাতে ঘুমানোর পূর্বে তার মায়াবী পরির কথা চিন্তা করতে করতেই সে ঘুমের দেশে পাড়ি দেয়।

অফিসে নিজের কেবিনে কাজ করছে সাইফ।কাজের মধ‍্যেই তার ফোনে একটা কল এল।সে কথা শেষ করে ফোনটা সজোরে সামনের দেয়ালে ছুড়ে ফেলল।মুহূর্তের মধ্যে রাগে তার চোখ মুখ লাল হয়ে গেলো।নিজের রাগ কমানোর জন‍্য কেবিনের এটা সেটা ভাঙ্গতে লাগলো।সাইফ এর কেবিনে ভাঙ্গচুরের শব্দে অফিসের সব স্টাফদের মুখে ভয়ের ছাপ চলে আসলো।কেননা তারা সবাই জানে তাদের হিটলার বস রাগলে কি করতে পারে।সাইফ ভাঙ্গচুর করে রাগ কমাতে না পেরে হন হন করে অফিসের থেকে বের হয়ে গেল।
(এর আবার কি হল??)

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here