ছায়া হয়ে থাকবো পাশে_2,Part_01
Ariyana Nur
রাস্তা দিয়ে পাগলের মত ছুটে চলেছে আশু।গায়ে তার হলুদের শাড়ি।রাস্তার সকল মানুষ অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে আশুর দিকে।কিন্তু সেদিকে তার কোন ধ্যান নেই।
আজ আশুর গায়ে হলুদ।কিছুক্ষন আগেই আশুকে সুন্দর করে সাজিয়ে স্টেজে নিজে বসিয়েছে নুহা।আশুকে স্টেজে বসিয়ে কিছুক্ষন ফটো সুট করে যেই না আশুকে হলুদ লাগাতে যাবে তখনি নুহার ফোনে একটা কল আসে।নুহা কল রিসিভ করে কানে ধরতেই অপর পাশের লোকের কথা শুনে নুহা ফোনটা আশুর দিকে বাড়িয়ে দেয়।আর চোখের ইশারায় কথা বলতে বলে।আশু ফোন কানে ধরে ধরে সালাম দিতেই অপর পাশের লোক বলে….
—বলেছিলাম না বিয়েতো দূর আমার নামের হলুদ ছাড়া কারো নামের হলুদ তোমার গায়ে লাগতে দিব না।যার নামের হলুদ তুমি গায়ে লাগাতে যাচ্ছো সে এখন তোমাদের বাড়ির পাশের হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পান্জা লড়ছে।একটু পরি তার প্রাণ পাখিটা উরে যাবে।শেষ দেখা দেখবে না তাকে???
কথাটা শুনেই আশুর হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলে।মূর্তির ন্যায় চুপ করে বসে রইল।চোখ দিয়ে নেমে এল নোনা জল।আশুকে এভাবে দেখে নুহা কয়েকবার জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে।কিন্তু আশুকে কিছু বলতে না দেখে নুহা হালকা ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করল….
—কিরে কি হয়েছে তোর?ফোনে কে ছিল?আর এমন করছিস কেন?
নুহার কথায় আশুর টনক নড়ল।সে কোন কথা না বলেই স্টেজ থেকে উঠে বাহিরের দিকে দৌড় লাগাল।
হাসপাতালের সামনে আসতেই কিছু চেনা চেহারা দেখেই আশুর পা থেমে গেল।আশু সে দিকে পা বাড়িয়ে তাদের সামনে গিয়ে কাপা কাপা গলায় বলল….
—ও কোথায়?
তারা সকলেই চুপ করে আছে।কারো মুখেই কোন কথা নেই।তাদের কে চুপ করে থাকতে দেখে আশু চেচিয়ে বলল….
—কেউ কিছু কেন বলছেন না আমাকে? ও..কোথায়?
তাদের মধ্যে একজন বলল….
—নিজেকে শান্ত করো পিচ্ছি।ও আর নেই।আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে।
কথাটা শোনা মাত্রই আশু হাটু গেড়ে বসে চিৎকার করে কান্না করতে লাগলো।
—আশু…..আশু…..তাড়াতাড়ি ওঠ।আর কত ঘুমোবি?দেখ তোকে আমি কিন্তু আর ডাকতে পারবো না।আমার অনেক কাজ আছেরে ভাই।
দরজা ধাক্কানোর শব্দে আশু ঘুম থেকে ধরফরিয়ে উঠে বসে।বড় করে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে চারোদিকে ভালো মত তাকিয়ে বুঝতে পারে ও ওর রুমে আছে।আর এতক্ষন সে স্বপ্ন দেখছিলো।
দরজার অপর পাশ থেকে অবার নুহার ডাক শুনে আশু চেচিয়ে বলল…..
—উঠে গেছি।তুমি যাও আমি আসছি।
আশুর গলার আওয়াজ পেয়ে নুহা তাড়াতাড়ি “নিচে আয়” বলে চলে গেলো।আশু কিছুক্ষন থ’মেরে বসে থেকে ওয়াসরুমে চলে গেলো।
__________________________
ঘুম থেকে উঠে নুহাকে পাশে না দেখে চেচিয়ে নুহাকে ডেকে চলেছে সাইফ।কাল রাতের বেলা হঠাৎ করেই নুহার অনেক জ্বর উঠে।সাইফ অনেক রাত অব্দি জেগে নুহার সেবা করে। অনেক রাত পযর্ন্ত জেগে থাকার করনে সকালে উঠতে দেরি হয়ে গেছে সাইফ এর। নুহা কিচেনে কাজ করছিলো।সাইফ এর ডাক শুনে হাতে খুন্তি নিয়েই রুমের দিকে পা বাড়ালো।
নুহা রুমে এসে সাইফ কে এভাবে বসে থাকতে দেখে কাচুমাচু করে বলল….
—কি হয়েছে এভাবে ষাড়ের মত চেচাচ্ছো কেন?
কথাটা বলেই সাথে সাথেই নিজের হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো নুহা।কথাটা সে এভাবে বলতে চায়নি।কিভাবে যে মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে সেটা নুহা বুঝতে পারে নি।
সাইফ নুহার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ভালোভাবে ওকে পর্যবেক্ষণ করে গম্ভীর হয়ে বলল…..
—এতোক্ষন কোথায় ছিলে?
নুহা সাইফ এর এমন গম্ভীর কথা শুনে শুকনো ঢোক গিলে কাচুমাচু করে বলল….
—কি-কিচেনে ছিলাম।
—কিচেনে কি করছিলে?
নুহা হাতের খুন্তিটা দেখিয়ে বলল…..
—ব্যাড মিন্টন খেলছিলাম।খেলবেন?
কথাটা বলে আবার সাথে সাথে মুখে হাত দিয়ে সাইফ এর দিকে তাকিয়ে দেখল সাইফ গম্ভীর হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।নুহা মনে মনে নিজেকে গালাগাল করতে করতে বলল….
—তোর আজকে কি হয়েছেরে নুহু।এই রাক্ষস এর সামনে এভাবে কথা বলছিস কেন।আল্লাহ্ এই রাক্ষসের থেকে রক্ষা করো।
নুহার ভাবনার মাঝেই সাইফ আবার গম্ভীর কন্ঠে বলল….
—বাহ্ বেশ ভালো তো।খুন্তি দিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলা যায় আগে জানতাম না তো।
নুহা ভাবনার মাঝেই যে সাইফ কখন নুহার সামনে চলে এসেছে নুহার খেয়ালি নেই।কথা ঘুড়াতে নুহা আমতা আমতা করে বলল….
—কে-কেন ডেকেছেন?
সাইফ কোন কথা না বলে নুহার কপালে হাত ছোয়ালো।হঠাৎ এমন হওয়াতে নুহা বড় বড় চোখ করে সাইফ এর দিকে তাকালো।সাইফ নুহার কপাল থেকে হাত সরিয়ে চোখ গরম করে শান্ত শুরে বলল…..
—এই শরীর নিয়ে তুমি কিচেনে কি করছিলে?
নুহা আমতা আমতা করে বলল…..
—ঐ এ-একটু জ্বর শরীরে।এ-এতটুক জ্বরে আমার কিছু হবে না।
সাইফ রেগে নুহার দুবাহু ধরে চেচিয়ে বলল….
—তোমার কিছু না হলেও আমার অনেক কিছু হবে।কোন সাহসে তুমি এই শরীর নিয়ে রুমের বাহিরে পা রেখেছো?আমাদের বাড়িতে কি কাজের লোক নেই?তোমাকে এই জ্বর শরীর নিয়ে কাজ করতে হবে?
নুহা কাপাকাপা গলায় বলল…..
—আ-আরে আ-আপনি এমন করছেন কেন?আমি ঠিক আছি।
সাইফ নুহাকে ছেড়ে দিয়ে বড় বড় কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে আচমকা নুহাকে কোলে তুলে নিল।নুহা সাইফ এর এমন কাজে শর্কড হয়ে সাইফ এর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইল।নুহা যতক্ষনে ব্যপারটা বুঝতে পারলো ততক্ষনে সাইফ নুহাকে বেডে শুইয়ে দিল।
নুহা শোয়া থেকে উঠতে নিলেই সাইফ ধমক দিয়ে বলল….
—চুপ চাপ শুয়ে থাকো।তা না হলে পা ভেঙে এখানে ফেলে রাখবো।
সাইফ এর ধমক শুনে নুহা গুটিশুটি হয়ে বিড়াল ছানার মত শুয়ে রইল।সাইফ নুহার শরীরে ব্লাংকেট দিয়ে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ালো।
________________________
জেলের এক কোনে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে আছে আসলাম।এই কদিন এই পরিবেশে থেকে কেমন যেন আরো হিংস্র হয়ে গিয়েছে।সারাক্ষন মাথার মধ্যে আরো শয়তানী বুদ্ধি ঘুরপাক করছে।
—আঙ্কেল….
পরিচিতো এক কন্ঠ স্বর কানে আসতেই আসলাম সামনের দিকে তাকালো।সামনের মানুষটাকে দেখেই দ্রুত উঠে সামনের মানুষটার কাছে গিয়ে খুশি হয়ে বলল….
—বাবা তুমি এসেছো?দেখো আমার কি অবস্থা হয়েছে।আমি জানতাম আমার এই বিপদে কেউ আমার পাশে না থাকলেও তুমি থাকবে। প্লিজ বাবা আমাকে এখান থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাও।
সামনের লোকটি কোন কথা না বলে কিছুক্ষন আসলাম এর দিকে তাকিয়ে থেকে আচমকাই আসলাম এর গলা চেপে ধরল।আসলাম তার হাত থেকে ছোটার জন্য ছটফট করতে লাগলো।কিন্তু কিছুতেই ছুটতে পারলো না।একটু পর লোকটা নিজেই আসলামকে ছেড়ে দিল।আসলাম লোকটার হাত থেকে ছাড়া পেয়ে গলা ধরে কাশতে লাগলো।আসলাম নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে লোকটার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল….
—এসবের মানে কি?তুমি এমন করছো কেন?পাগল হয়ে গেছো নাকি?
লোকটি হালকা চেচিয়ে বলল…..
—হ্যা হ্যা আমি পাগল হয়ে গেছি।আপনি কি করে নুহাকে ঐ সাইফ চৌধুরীর হাতে তুলে দিলেন?ইচ্ছে তো করছে আপনাকে জ্যন্ত পুতে দিতে।
আসলাম লোকটার কথা শুনে আবাক হয়ে লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।লোকটার কোন কথাই যেন আসলাম এর মাথায় ঢুকছে না।
______________________
নীল আশুর স্কুলের গেটের সামনে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আশুর জন্য অপেক্ষা করছে।বার বার হাত ঘড়ির মধ্যে সময় দেখছে।অন্য সময় হলে হয়তো এতোক্ষনে বিরক্ত হয়ে যেত।কিন্তু সেদিনের পর থেকে কেন যেন আশুর প্রতি বিরক্ত কাজ করে না।সেদিন আশুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নীলের চোখই লেগে গিয়েছিল।যখন চোখ মেলে তাকালো তখন দেখনো আশু গুটিশুটি মেরে বাচ্চাদের মত শুয়ে আছে।আশুর ঐ চেহারার দিকে নীলের চোখ আটকে গেছিলো।সেদিনের পর থেকে আশুর ঐ মায়াবী চেহারার দিকে তাকালেই নীলাভের সকল রাগ,বিরক্ত নিমিষেই কেমন যেন শেষ হয়ে যায়।কেন এমন হয় ঐ উত্তর নীলের অজানা।
নীলাভের ভাবনার মাঝেই আশু ওর সামনে এসে দাড়ালো।আশু নীলাভের সামনে এসে যা করলো তার জন্য নীলাভ মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।আশুর কাজে নীলাভ অবাক হয়ে আশুর দিকে তাকিয়ে রইল।
চলবে
(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)