ছায়া হয়ে থাকবো পাশে_2,Part_03
Ariyana Nur
আশু আপন মনে পড়ার টেবিলে বসে গুনগুন করছে। আর বই,খাতা, কালার নিয়ে কিছু একটা করছে।নীল চুপিচুপি কখন যে ওর পিছনে এসে দাড়িয়েছে সেদিকে ওর খেয়াল নেই।নীল কিছুক্ষন চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে আশুর কান্ড কারখানা দেখে বলল…..
—তো ম্যাম…পড়ার টেবিলে বসে এই করা হচ্ছে?
নীল এর কথা শুনে আশুর হাত থেকে কালার পেন্সিলটা পড়ে গেলো।তড়িঘড়ি বই,খাতা বন্ধ করার আগেই নীল ঝড়ের গতিতে ওর কাছ থেকে বই,খাতা ছিনিয়ে নিয়ে বেডে আয়েশ করে বসে সেগুলো ওলট পালট করে দেখতে লাগলো।আশু কাদো কাদো ফেস করে বিরবির করে বলল…..
—আশুরে….তু তো গেয়া….
আশু কোন কথা না বলে নীল এর হাত থেকে বই,খাতা ছিনিয়ে নিতে চাইলো।কিন্তু পাড়লো না।তাই সে রেগে বলল….
—আপনি আমার বই,খাতা নিয়েছেন কেন?কানা নাকি?দেখেননি আমি পড়ছিলাম?আমার পড়ায় শুধু শুধু ডিস্টাব করছেন?
—সিরিয়াসলি!তুমি পড়ছিলে?
আশু আমতা আমতা করে বলল….
—হ-হ্যা প-পড়ছিলামি তো….
—এই তোমার পড়া।
নীল বই এর একটা চাপ্টার বের কর আশুকে দেখিয়ে বলল।
আশু এবার ঝড়ের গতিতে নীলের থেকে বইটা ছিনিয়ে নিয়ে বলল….
—আপনাকে বলতে যাবো কেন?হুহ….
নিজের চরকায় তেল দিন।আর আপনি আমার রুমে কোন সাহসে চোর এর মত এসেছেন?
নীল দাড়িয়ে হাত ভাজ করে বলল…..
—আমি আমার নিজের চরকায়ই তেল দিচ্ছি।আর কি যেন বললে,(ভুলে যাওয়ার ভান করে)ওহ মনে পরেছে,কোন সাহসে না?আমার সাহস না বড়াবড়ই একটু বেশিই।এখন বল,পড়াশুনো বাদ দিয়ে এগুলো কি করছিলে?
—আপনাকে বলতে যাব কেন?আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করবো।তাতে আপনার কি?
—ঠিক আছে।তাহলে আমারও যা ইচ্ছা হয় আমিও তাই করবো।এক্ষনি বউমনিকে গিয়ে বলছি তুমি কি করছিলে।
নীল দরজার দিকে পা বাড়াতেই আশু কাদো কাদো হয়ে বলল….
—প্লিজ প্লিজ প্লিজ…..
আপিকে বলবেন না।আপি জানতে পারলে আমাকে বকা দিবে।সাথে কানমলা ফ্রি।
আশুর এই ফেস দেখে নীলের অনেক হাসি পাচ্ছে।তারপরেও মুখে গম্ভীর্য এনে বলল…..
—ঠিক আছে বলবো না।এখন বল পড়া বাদ দিয়ে এগুলো কেন করছিলে ?
আশু কাচুমাচু করে বলল….
—বলতেই হবে?না বললে হবে না?
নীল গম্ভীর গলায় বলল….
—না….
আশু ইনোসেন্ট ফেস করে বলল….
—আসলে পড়তে পড়তে আমি বোর হয়ে গেছিলাম।আর ওরাও তো এক ড্রেস পরে বোর হয়ে যাচ্ছে। তাই আমি কালার দিয়ে ওদেরকে কালারফুল ড্রেস পরাচ্ছিলাম।
নীল আশুর ইনোসেন্ট ফেস দেখে আর ওর এই অদ্ভুত কথা শুনে না হেসে পারলো না।নীল উচ্চ স্বরে হাসতে হাসতে বলল….
—সিরিয়াসলি!তুমি ওদের ড্রেস পরাচ্ছিলে?তাও আবার কালার ফুল জোকারদের ড্রেস।তুমি যে এতো টেলেন্টেড তা আগে জানতাম না।তা এতো টেলেন্ট রাখো কোথায়?রাতে কি বালিশের উপরে মাথা দাও না নিচে?কথাগুলো বলে নীল আবার হাসতে লাগলো।
আশু কটমট দৃষ্টিতে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে।ও পারছেনা নীলের মাথা ফাটাতে।
(আশু কি করছিলো তা হয়তো সবাই বুজতে পেরেছেন।না পারলেও সমস্যা নেই।আমি বলে দিচ্ছি।আশু বইএর মধ্যে যে পিকচার গুলো আছে সেগুলোকে কালার দিয়ে আর্ট করে তাদের জামাকাপড় গুলোকে কালারফুল করছিলো।আর বই এর উপরে খাতা রেখে দিয়েছিলো।যাতে কেউ আসলে চটজলদি খাতা দিয়ে লুকিয়ে রাখতে পারে।কিন্তু বেচারীর পোড়া কপাল।শেষ রক্ষা আর হলো না)
______________________
ঘড়ির কাটা ১০টা ছুই ছুই।বিকেল থেকে এতোক্ষন পযর্ন্ত রুগী মানুষের মত বেডে শুয়ে বসে থাকতে থাকতে নুহা বিরক্ত হয়ে গেছে।বিকেলের পর একবারও এই রুম থেকে বের হওয়ার সাহস হয়নি নুহার।নুহার এখন মন চাচ্ছে হাত পা ছড়িয়ে কান্না করতে।কিন্তু আফসোস কান্না করতে পারছেনা।নুহা সামনের থেকে একটা বালিশ নিয়ে বেডের আরেক পাশে ছুড়ে মেরে বলল….
—মিঃখবিস,তাউরা।কিছু হলেই শুধু আমার সাথে চেচামেচি করে।আর কিছু পারে আর না পারে এটা ভালো মত করতে পারে।সামান্য জ্বর আর এই একটু হাত পোড়ার জন্য নাকি কেউ এমন করে?কিন্তু আজ এমন হ্যাৎ মেরে রয়েছে কেন?বিকেল থেকে একটা কথাও বলে নি।আমি কিছু বললেই তার ঐ লাল লাল চোখ দেখিয়ে শুধু ভয় দেখিয়েছে।ধুর….ভালো লাগে না।?
নীল নুহার রুমের দরজায় নক করে বলল….
—বউ মনি আসবো?
—আরে ভাইয়া আসো।অনুমতি নেওয়ার কি আছে।
নীল নুহার সামনে এসে দাড়িয়ে বলল….
—তোমার ঐ হিটলার বর বিয়ের আগেই অনুমতি না নেওয়ার জন্য কথা শুনিয়েছে আর এখন যদি অনুমনি না নেই তাহলে আমাকে আস্ত রাখবে না।
নুহা গাল ফুলিয়ে বলল…..
—আসলেই তোমার ভাই একটা হিটলার।তা না হলে দেখো কাউকে এভাবে একটু হাত পোড়ার জন্য রুমের ভিতর বসিয়ে রাখে?
নীল মুচকি হেসে নুহার সামনে বসে বলল….
—জানো বউমনি!আমার ভাইয়া না সবার থেকে আলাদা।অনেক অন্যরকম।আমরা যেমন আমাদের প্রিয় মানুষদের কাছে নিজের মনের কথা সেয়ার করি কিন্তু তিনি সেটা পারে না।ভাইয়া কিন্তু মা,বড় পাপাকে অনেক স্রদ্ধা করে সম্মান করে আর ভালোও বাসে।কিন্তু তারপরেও তারা তাকে ভয় পায়।কেন জানো?তারা যেনে গেছে ভাইয়া তাদেরকে এতো ভালোবাসে বলেই তাদের একটু কেয়ারলেসে ভাইয়ার সহ্য হয় না।আর আমি, আমার কথা কি বলব,বলতে পারো ভাইয়া আমাকে নিজের একটা অংশ মনে করে।তুমি ভাইয়ার জীবনে যে কি সেটা আমি তোমাকে বলবো না। সেটা না হয় তুমিই বুঝে নিও।আর হ্যা একটু নিজের কেয়ার করো তা না হলে ভাইয়া রেগে গেলে কারো সাধ্য নেই তাকে মানানোর।
নুহা এতোক্ষন মনোযোগ দিয়ে নীলের কথা শুনছিলো।
নিচের থেকে মিসেস চৌধুরীর ডাক শুনতেই নীলাভ উঠে বলল….
—বউমনি বাকি কথা পরে হবে এখন চল মা খেতে ডাকছে।দেড়ি করে গেলে আবার বকা শুনতে হবে।
আশু কাচুমাচু করে বলল….
—আমি নিচে গেলে যদি উনি কিছু বলে।
নীল ঠাট্টা করে বলল….
—তুমি চল আমার সাথে।তোমার উনি কিছু বলবে না।
নুহা মুচকি হেসে বলল….
—ঠিক আছে চল।
_________________________
খাবার টেবিলে সবাই গোল হয়ে বসেছে শুধু সাইফ আর মিঃচৌধুরী নেই।
মিসেস চৌধুরী খাবার সবার প্লেটে তুলে দিতে দিতে বলল…..
—দেখ তাদের কান্ড।সেই কখন থেকে ডাকছি আর তাদের আসার নামও নেই।আমি আর পারিনা তাদের নিয়ে।
সাইফ এসে নুহার পাশে চেয়ার টেনে বসে বলল….
—বাবার সাথে একটা মিটিং এর ব্যপারে কথা বলছিলাম।তাই দেড়ি হয়ে গেলো।
মিসেস চৌধুরীঃঅফিসে কাজ করে তো তোদের হয় না এখন বাড়িটাকেও অফিস বানাতে হবে।তোদের বলা যা না বলাই তা।কিছু বলবো না আর আমি।আমার কথা তো শোনাতেই পারি না।
মিসেস চৌধুরী নুহার প্লেটে খাবার দিতে নিলেই সাইফ তাকে বাধা দিয়ে বলল….
—ওর প্লেটে দিয়ো না।ওর হাত পুড়ে গেছে।হাত দিয়ে খেতে পারবে না।
মিসেস চৌধুরী উওেজিত হয়ে নুহার হাত ধরে বলল….
—কোন হাত পুড়েছে?কিভাবে পুড়েছে?আমি একটু বাসায় ছিলাম না তার মধ্যেই অঘটন বাধিয়ে ফেললে।
নুহাঃমা আমি ঠিক আছি।বেশি পুড়ে নি।ঐ একটু লেগেছে।মলম লাগিয়েছি।ঠিক হয়ে যাবে।প্লিজ মা তুমি আর বকো না।এমনিই অনেক বকা খেয়েছি।(কাদো কাদো ফেস করে)
মিসেস চৌধুরী নুহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল….
—একটু সাবধানে কাজ করবে তো।তোমার কিছু হলে আমাদেরও তো কষ্ট হয় বল?আর একজনের তো মনে হয় কলিজায় গিয়ে বিধে।
মিসেস চৌধুরী কথা শুনে সাইফ কাশতে লাগলো।আর এদিকে সবাই মিটমিট করে হাসছে।
সবাই খাবার খাচ্ছে।এদিকে নুহা চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে।ও ওর জন্য নিজের প্লেটে খাবার নিতে নিলেই সাইফ খাবারের প্লেট সরিয়ে ওর দিকে রাগি চোখে তাকায়।তাতেই নুহা দমে যায়।কিছু বলার আর সাহস পায় না।নুহা মনে মনে সাইফকে গালাগাল করতে করতে বলল…
—জানি তো,সব আমায় না খাইয়ে সাস্তি দেবার ধান্দা।খেতেই যখন দিবে না তাহলে এখানে সর্পিসের মত বসিয়ে রেখেছে কেন।হুহ ঢং কত।কত দরদ আমার জন্য আমার হাত পুড়ে গেছে আমি হাত দিয়ে খেতে পারবো না।ব্যটা বজ্জাত!আমি কি বাম হাত দিয়ে খাই নাকি।বেশি দরদ দেখাতে গিয়ে ভুলেই গেছে আমার কোন হাত পুড়েছে।
সাইফ খাবার তুলে নুহার মুখের সামনে ধরে বলল….
—হা কর….
নুহা তড়িঘড়ি মাথা তুলে অবাক হয়ে সাইফ এর দিকে চোখ বড় বড় করে হা করে তাকিয়ে রইল।সাইফ নুহাকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজের হাতের খাবার নুহার মুখে পুরে দেয়।নুহা খাবার মুখে নিয়ে একবার সবার দিকে চোখ বুলিয়ে মাথা নিচু করে রাখলো।সবাই যে মুচকি মুচকি হাসছে তা আর বুঝতে বাকি রইলো না নুহার।
সবাই চুপচাপ খাচ্ছে।কারো মুখে কোন কথা নেই।কিছুক্ষন পর মিসেস চৌধুরী,মিঃ চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলল….
—ছেলের থেকে কিছু শেখো?
মিঃ চৌধুরী অবাক হয়ে বলল….
—কি শিখবো ছেলের থেকে?
মিসেস চৌধুরী রাগ দেখিয়ে বলল….
—কি শিখবে মানে?বহুত কিছু শেখার আছে তোমার ছেলের কাছ থেকে।
—আরে…বলবে তো কি শিখবো?তুমি কি বলছো আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।
—তা পারবে কেন।তুমি তো শুধু তোমার পেটের চিন্তা কর।আমার ছেলে, তার বউ এর বাম হাত পুড়ে গেছে তার পরেও কত আদর করে খাইয়ে দিচ্ছে।আর তুমি তো কখনও আমার ডান হাত পুড়লেও খাইয়ে দাও নি।(গাল ফুলিয়ে)
মিসেস চৌধুরী এমন কথা শুনে নীল আর আশু মুখ টিপে হাসতে লাগলো।মিঃ চৌধুরী নিজের বউ এর মুখে এমন বাচ্চামো অভিযোগ শুনে ফ্যলফ্যল করে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।সাইফ এমন ভাব করছে মনে হচ্ছে এখানে কিছুই হয়নি।আর নুহা সে তো পারছেনা এখান থেকে উঠে দৌড়ে চলে যেতে।নুহা মাথা নিচু করে মনে মনে বলছে…..
—আল্লাহ দড়ি ফালাও।আমি উইঠা যাই।
চলবে
(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)