ছায়া হয়ে থাকবো পাশে_2,Part_04
Ariyana Nur
একাকিত্ব সব সময় মানুষকে কুড়ে কুড়ে খায়।যখন একাকিত্ব চলে আসে তখনি আমরা আমাদের কাছের মানুষের গুরুত্বটা বুঝতে পারি।একাকিত্ব আমাদের কে বুঝিয়ে দেয় ঐ মানুষগুলো আমার জন্য কি ছিল,কতটা জুরে ছিল।
চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে এক দৃষ্টিতে বেডের সামনে ছোট একটা ফ্যমিলি ফটো ফ্রেমের দিকে তাকিয়ে আছে আসফিয়া।অনেক বছর আগে যখন সব ছবি পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলেছিল তখন কিভাবে যেন ছবিটা বাদ পরে যায়।পরে যখন ছবিটা খুজে পায় তখন কি মনে করে যেন ছবিটা নষ্ট না করে নিজের কাবাডের এক কোনে ফেলে রাখে।
বিশাল এই বাড়িতে একা একা থাকতে থাকতে এই কয়দিনেই হাপিয়ে উঠেছে আসফিয়া।সব সময় কেমন একটা শূন্যতা অনুভব করে।বার বার চোখের সামনে আশু আর নুহার মুখ ভেসে উঠে।মন বলে সে তার দুই মেয়েকে মিস করছে।বড্ড মিস করছে।কিন্তু মস্তিষ্ক বলে না।তুই শুধু আশুকে মিস করছিস।নুহার জন্য তোর মনে কোন জায়গা নেই।ওর জন্য তোর মনে আছে শুধু ঘৃণা ।এই ছাড়া কিছু নেই।মন আর মস্তিষ্ক এর কথায় আসফিয়া দোটানায় পরে গেছে।কে যে ঠিক বলছে আর কে যে ভুল আদো সে বুঝতে পারছে না।
_______________________
সকাল থেকেই নুহার মনটা ভালো না।বার বার তার মায়ের কথা মনে পরছে।মনের মধ্যে এক অদ্ভুত ইচ্ছা জাগছে।ও জানে ওর ইচ্ছে কখনও পুরন হবে না।তারপরেও ভাবতে দোষ কি?নুহার ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে ওর মাকে জরিয়ে ধরতে।তার কোলে মাথা রেখে তার সাথে গল্প করতে।কিছুক্ষনের জন্য নুহা তার মাকে নিয়ে ছোটবেলার সেই সুন্দর মূহুর্তগুলোর কল্পনায় চলে গেল।তাতেই তার ঠোটে কোনে চলে আসলো এক চিলতে হাসি।হঠাৎ তার মায়ের অবহেলা,অপমান এর কথা মনে পরতেই হাসিটুকু উধাও হয়ে গেল।নিজের বিয়ের দিনের কথা মনে পরতেই মনের মাঝে চলে আসলো মায়ের জন্য অভিমান,অভিযোগ।কখনও কি এই অভিমান,অভিযোগ শেষ হবে কিনা তা তার জানা নেই।
মিসেস চৌধুরী বেডে বসে ইসলামিক বই পড়ছে।অবসর সময়ে ইসলামিক বই পড়তে তার ভীষন ভালো লাগে।
নুহা এসে মিসেস চৌধুরীর রুমের দরজায় নক করে বলল….
—মা আসবো?
মিসেস চৌধুরী বইটা বন্ধ করে ঠিক করে বসে বলল…..
—না বাহিরে দাড়িয়ে থাকো।
নুহা মুচকি হেসে ভিতরে প্রবেশ করে মিসেস চৌধুরীর পাশে বসে বলল….
—কি করছিলে।ডিস্টাব করলাম না তো…
—দিন দিন বড্ড ফাজিল হচ্ছো।কানের নিচে দুটো দিলে ঠিক হয়ে যাবে।
—আরে রাগ করছো কেন?আমি তো এমনি বলছিলাম।
—এই তো বই পড়ছিলাম।
—ও….
নুহা আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে চুপ করে বসে রইল।
মিসেস চৌধুরী কিছুক্ষন নুহার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল…..
—কি হয়েছে তোমার?শরীর খারাপ?চেহারা এমন দেখা যাচ্ছে কেন?
নুহা মাথা তুলে মিসেস চৌধুরীর মুখের দিকে মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।কিছুদিনের মধ্যেই যে এই মানুষটা নুহাকে এতো আপন করে নিবে তা নুহা ভাবতেও পারে নি।ওর একটু কিছু হলেই মানুষটা অস্থির হয়ে যায়।চেহারায় চলে আসে নানান চিন্তার ভাজ।
নুহাকে কিছু বলতে না দেখে মিসেস চৌধুরী আবার বললেন…
—কি হয়েছে?কিছু বলছো না কেন?
নুহা করুন চোখে তাকিয়ে বলল….
—মা!আমি একটু তোমার কোলে মাথা রেখে শুই।আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিবে?
মিসেস চৌধুরী ইশারায় হ্যা বলতেই নুহা মিসেস চৌধুরীর কোলে শুয়ে পরলো।তিনিও পরম মমতায় নুহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
_______________________
দেখতে দেখতে চোখের পলকে বিয়ের দু’ মাস কিভাবে যে অতিবাহিত হয়ে গেলো তা চার জনের একজনেও বুঝতে পারলো না।এই দু’ মাসে নুহা আর সাইফ এর সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক হলেও আশু আর নীলের সম্পর্কে কোন পরিবর্তন নেই।তারা সারাদিন শুধু টম এন্ড জেরির মত লেগেই থাকে।আশু জন্য নীল এর মনে কি চলছে তা কেউ জানে না।সে তার ফিলিংস আদো বুঝতে পেরেছে কি না সেই ভালো জানে।
নুহা আয়নার সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছে কলেজে যাবার জন্য।সাইফ ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে নুহাকে রেডি হতে দেখে বলল…..
—আজ কি কোন বিশেষ ক্লাশ আছে?
নুহা আয়নায় মধ্যেই সাইফকে এক পলক দেখে বলল….
—না নেই।
—তাহলে আজ আর কলেজে যেতে হবে না।
নুহা সাইফ এর দিকে তাকিয়ে বলল….
—কেন?
সাইফ এর সোজাসাপ্টা উওর….
—আমি বলেছি তাই।
—আপনি বললেই কি আমার ক্লাস বন্ধ করতে হবে নাকি?
আর কারন ছাড়া কেনই বা ক্লাস বন্ধ করবো?
সাইফ কোন কথা না বলে কাবাড থেকে একটা পেকেট বের করে নুহার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল….
—এটা আশু আর নীলকে দিও।আমাদের তরফ থেকে।
—আমাকে দিচ্ছেন কেন?আপনি দিলে বেশি ভালো হতো না।
—কেন?তুমি আর আমি কি আলাদা নাকি?
সাইফ এর এমন প্রশ্নে নুহা চমকে গিয়ে সাইফ এর দিকে তাকালো। তার দিকে সাইফ এর শীতল চোখে তাকানো দেখে সাথে সাথে মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে বলল…
—হ-হঠাৎ গি-গিফ্ট কেনো দিচ্ছেন ওদের।
—বিয়ের পর তো সেভাবে কাউকে কিছু দেইনি।তাই ভাবলাম ওদের টম এন্ড জেরি বিবাহ লাইফের যখন দু’মাস পূর্ব হয়েছে সেই উপলক্ষেই কিছু দেই।
নুহা আবাক হয়ে বলল…..
—কি!আমাদের বিয়ের দু’মাস পূর্ন হয়ে গেছে?আমি ভাবতেও পারছিলা।এই দু’টো মাস কি করে আমি আপনার মত একটা হিটলার,বজ্জাত,খবিশ,তাউরার সাথে কাটিয়ে দিলাম। কংগ্রেস নুহু।তোকে তো নোবেল ছুড়ে মারা দরকার।
সাইফ হাত ভাজ করে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে নুহার দিকে।নুহা এক বারে গরগর করে কথাগুলো বলা শেষ করতেই সাইফ গম্ভীর গলায় বলল….
—তোমার মনে হয় না তুমি একটু বেশি বেশি বলছ?
সাইফ এর এমন গম্ভীর কথা শুনে নুহা কোন কথা না বলে এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে নিচে চলে গেলো।কিচেনে গিয়ে ঢকঢক করে কয়েক গ্লাস পানি খেয়ে বড় বড় করে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে নিজের মাথায় নিজেই গাট্টা মেরে নিজেকে গালাগাল করতে লাগলো।
___________________________
ওয়াসরুমে সাওয়ারের নিচে বসে অঝড়ে কান্না করছে নুহা।কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই মাথায় ঢুকছে না।কি করে ও এমন একটা কাজ করতে পারলো।যেই মানুষটা সবটা দিয়ে ওকে আগলে রাখছে সেই মানুষটাকে কিভাবে কষ্ট দিতে পারলো ও।নুহা চিৎকার করে কান্না করতে করতে বলল….
—কি করে পারলাম আমি তাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলতে।এতোটা সার্থপর আমি কি করে হলাম।কিভাবে,কোন মুখ নিয়ে আমি তার সামনে দাড়াবো।কথাগুলো বলে আবার চিৎকার করে কান্না করতে লাগলো নুহা।
ফ্লাসব্যাকঃ
বিকেলে সাইফ,নুহা,আশু, নীল মিলে ঘুরতে বের হয়েছে।আশু তো ঘুরতে এসে ফড়িং এর মত ছোটাছুটি করছে।আশুকে এমন তিড়িং বিড়িং করতে দেখে নীল আশুর হাত ধরে এক পাশে টেনে নিয়ে গিয়ে বলল….
—সমস্যা কি তোমার?এমন ব্যাঙ এর মত লাফাচ্ছো কেন?
আশু নীল এর কথায় কোন উওর না দিয়ে উল্টো নীলের হাত ধরে ঝাকিয়ে বলল….
—ঐ দেখুন ঝালমুড়ি।প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ আমাকে ঝালমুড়ি কিনে দিন।আর সাথে দুটো হাওয়াই মিঠাই।ভাইয়ারা তো সামনে চলে গেছে তা না হলে ভাইয়াকেই বলতাম।(ঠোট উল্টিয়ে)
আশুর এই বাচ্চামো কাহিনী দেখে নীল রিয়েক্ট করতেই ভুলে গেলো।নীল আশুকে বকবে না কি ওর এই বাচ্চামো দেখে হাসবে তা ভাবতে লাগলো।
সবাই মিলে ঘোরাঘুরি করতে করতে সন্ধ্যা নেমে এলো।নুহা আর সাইফ হাটতে হাটতে অনেকটা সামনে চলে গিয়েছিলো।বাড়ি ফেরার জন্য নীল ফোন করতেই সাইফ জানায় ওরা যেখানে আছে সেখানেই যেন থাকে।ওরা ফিরে আসছো।
আশু আর নীল রাস্তার এক পাশে দারিয়ে আছে।আশু এদিক সেদিক তাকিয়ে আশেপাশের পরিবেশটা দেখছে।নুহা আর সাইফ টুকটাক কথা বলতে বলতে আশুদের অনেকটা সামনে এসে পরেছে।হঠাৎ নুহা চিৎকার দিয়ে বলল…..
—আশু……
চলবে,
(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।সিজন-১এর পর থেকেই সিজন-২ শুরু হয়েছে।ধন্যবাদ)