ছায়া হয়ে থাকবো পাশে_2,Part_12
Ariyana Nur
বিপদ যখন আসে চারোদিক দিয়ে ঘিরে আসে।এক দিকে কুমির আরেক দিকে বাঘ।জলে নামলে কুমিরের ভয় না নামলে বাঘের ভয়।কি রেখে কি করবে বুঝা বড় দায়।
নিলয়ের অবস্থা অনেকটা এমন।নিলয় পারছেনা আশুর এখান থেকে পালিয়ে চলে যেতে তার স্যার এর ভয়ে।আবার এখানে বসে আশুর এই অত্যচারও সহ্যও করতে পাচ্ছে না।বেচারা নিলয় পরেছে ফাটা বাশের চিপায়।
একটু আগে আশু কথা নেই বার্তা নেই নিলয়ের সামনে এসে চেচিয়ে বলল…..
—হাই জিজু।
নিলয় পানি খাচ্ছি আশুর এমন চেচানো কথা শুনে তালুতে উঠে গেল।নিলয় জোরে জোরে কাশতে লাগলো।আশু রুনাকে চোখ দিয়ে ইশারা করতেই রুনা নিলয়ের পিছনে গিয়ে ওর পিঠে ও মাথায় জোরে জোর চাপর মারতে লাগলো।রুনার চাপর খেয়ে নিলয়ের জান যায় যায় অবস্থা।নিলয় কোন মত নিজেকে সামলিয়ে রুনার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই রুনা একটু লজ্জা পাবার ভান করে মিষ্টি হেসে বলল….
—ধন্যবাদ দিতে হইবো না।ওকে…..
নিলয় রুনার এই লাজুক চেহারা দেখে ছোট খাট একটা স্লিপ খেলো।নিলয় রুনাকে ভালোভাবে একবার দেখে নিয়ে মনে মনে বলল….
—মাইয়াডা দেখতে তো ভালোই।কিন্তু হাতে মনে হয় একটু জোর বেশিই।এমন ভাবে চাপর মারছিলো মনে হচ্ছে আমার হাড্ডি মাংস এক সাথে চেপ্টা হইয়া গেছে।
নিলয়কে রুনার দিকে এভাবে তাকেয়ে থাকতে দেখে আশু গলা পরিষ্কার করে বলল…..
—শুধু ঐ দিকে তাকিয়ে থাকলেই হবে না জিজু।এদিকে ও দেখুন।আমিও কিন্তু আছি।
নিলয় আশুর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল….
—জিজু কে???
আশু নিলয়ের মুখোমুখি হয়ে বসে বলল….
— আপনিই তো আমার জিজু।আমার আপুর কল্পনার রাজপূএ।আমার আপু কল্পনাতেই আপনার দিওয়ানী হয়ে গেছে।তাই তো দেখছেন না, না দেখেই আপনাকে কিভাবে চিনে ফেলেছে।এখন আপনার সামনে এসে কেমন লাজ্জা পাচ্ছে।আপু আপনাকে এক পলক দেখেই পুরো ফিদা হয়ে গেছে।(মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে)
(আশু নিলয়কে ঐ ছেলেকে মনে করে কথাগুলো বলল।আর নিলয় আশুর কথা শুনে ভিতরে ভিতরে ফুলে ফুটবল হয়ে গেল।ও মনে করছে রুনা ওকে প্রথম দেখাই ফিদা হয়ে গেছে।কোন মেয়ে একবার ওকে দেখে ফিদা হয়ে সরাসরি ওর সাথে কথা বলতে চলে এসেছে এই খুশিতে নিলয় নিজের হিতাহিত জ্ঞান সব হারিয়ে ফেলল।নিলয় খুশি হয়ে বলল….
—-সত্যিই তিনি আমাকে দেখে ফিদা হয়ে গেছে।
আশু মুচকি হেসে বলল…..
—তা আবার বলতে।বিশ্বাস না হলে আপনিই জিগ্যেস করে দেখুন।
নিলয় রুনার দিকে জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই দেখলো রুনা ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল।
তা দেখেই নিলয় আরো খুশি হয়ে গেলো।মনে মনে বলল….
—আল্লাহ্ আমার দোয়া কবুল করছে।আমি আজকেই মসজিদে ১০০টাকা দিমু।
নিলয় বসা থেকে উঠে রুনাকে একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বলল….
—বসুন বসুন।দাড়িয়ে রয়েছেন কেন?
রুনাও লজ্জা পাবার ভান করে মিষ্টি হেসে চেয়ারে বসে ধন্যবাদ দিন।
নিলয় কিছু না বলে নিজের জায়গায় বসে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।
ওরা কিছুক্ষন টুকটাক কথা বলার পর নিলয় বলল…
—কি খাবেন বলুন।
রুনা মিষ্টি হেসে মাথা নিচু করে বলল….
—না না আমরা কিছু খাবো না।
নিলয় মনে মনে বলল….
—থাক খাওয়া লাগবো না।আমার টেকা বাচবো।
আশু রুনাকে চিমটি কেটে বলল….
—সে কি আপু খাবে না কেন?জিজু এতো করে বলছে,না খেলে তো তার খারাপ লাগবে। তাই না জিজু….(শুর টেনে)
নিলয় আশুর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল….
—আমি তো একবার বললাম।এই মাইয়া কতো বার শুনলো?
আশুঃদেখেছেন জিজু… আপু এখনি আপনার টাকা বাচাতে চাচ্ছে।আপনার কি টাকা কম আছে বলুন?
নিলয় ভাব নিয়ে বলল….
—টাকা বাচানোর কিছু নেই।আমার তো বহুত টাকা আছে।কি খাবে তোমরা শুধু বল।
আশু মুচকি হেসে বলল….
—সো সুইট জিজু।
____________________________
নুহা সাইফ এর মেসেজ পেয়ে গেডের সামনে আসতেই দেখে সাইফ দাড়িয়ে আছে।নুহা সাইফকে দেখে দূত পায়ে সাইফ এর সামনে চলে আসে।সাইফ এর দিকে এক পলক তাকিয়ে সাইফ এর সাথে কোন কথা না বলেই গাড়িতে উঠে বসল।নুহার এই কাজে সাইফ অবাক হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে নুহাকে জিগ্যেস করল….
—কি হয়েছে তোমার?শরীর ঠিক আছে তো?
নুহা কোন কথা না বলে ঝড়ের গতিতে সাইফ এর গলা জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।নুহার এমন কান্না দেখে সাইফ নুহাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইল।কিন্তু কোনভাবেই নুহাকে নিজের থেকে ছাড়াতে পারলো না।সাইফ নুহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল…..
—কি হয়েছে বলবে তো?না বললে আমি বুঝবো কিভাবে কি হয়েছে তোমার?এভাবে কান্না করছো কেন?
নুহা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে করতে বলল…..
—আপনি যাবেন না।আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবেন না।
—আমি কোথাও যাচ্ছি না।তোমার কাছেই তো আছি।হঠাৎ এমন কথা কেন বলছো?
—ঐ লোকটা বলেছে আপনাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিবে।
—কে বলেছে?কি হয়েছে বলো আমায়?
নুহা সব বলতেই সাইফ এর চেহারা রাগে লাল হয়ে গেলো।তারপরেও নুহার সামনে নিজেকে যথেষ্ঠ সাভাবিক রেখে নুহাকে দু হাতে আগলে ধরে বলল….
—কেউ তোমার কাছ থেকে আমাকে কেড়ে নিতে পারবে না।এমনকি আমিও কোথাও যাচ্ছি না তোমাকে ছেড়ে।কান্না অফ করো তুমি।
সাইফ এর কথাশুনে নুহার কান্না কিছুটা কমলেও সেই আগের মত বসে রইল।ওর মনে হচ্ছে সাইফকে ছেড়ে দিলেই হারিয়ে ফেলবে।
নুহার কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছেন না তো?চলুন তাহলে ফ্লাসব্যাক থেকে ঘুরে আসি।
ফ্লাসব্যাকঃ
নুহা তার বান্ধবীদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে।আড্ডার মাঝেই তার ফোনটা বেজে উঠলো।নুহা অপরিচিত নাম্মার দেখে কপাল কুচকে কিছুক্ষন নাম্মারটার দিকে তাকিয়ে রইল।নুহা ফোন রিসিভ করে সালাম দিতেই অপর পাস থেকে একজন বলল….
—কেমন আছো সান্তরানী??
নুহার লোকটার কথা শুনেই হাত, পা কাপতে লাগলো।কেননা নুহার ফোনের অপর পাশের লোকটি কোন সাভাবিক মানুষ নয়।একজন মানুষিক রুগি,সাইকো।যে নুহাকে বিয়ে করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল।কিন্তু আসফিয়া ছেলেটার সম্পর্কে সব জানার পর মানা করে দিয়েছিল।নুহা কেন যেন এই ছেলেকে অনেক ভয় পায়।কেনো এতো ভয় পায় তা সে জানে না।
নুহা কাপা কাপা গলায় বলল….
—আ-আপনি???
লোকটা মুচকি হেসে বলল….
—তাহলে চিন্তে ভুল হয়নি।তা দিনকাল কেমন যাচ্ছে?বাসার সবাই ভালো তো?
নুহা একটু সাহস জুগিয়ে বলল….
—কেন ফোন করেছেন?
—তুমি কবে আমার কাছে আসবে তা জিগ্যেস করার জন্য।
—মানে???
—এতো মানে মানে করছো কেন?ভুলে যাচ্ছো আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম আমি তোমাকে আমার রানী করবো।
—বাজে বকা বন্ধ করুন।আমার বিয়ে হয়ে গেছে।আর বিয়ে না হলেও আপনার মত ঐ রকম একটা পাগল, সাইকোকে আমি কখনো বিয়ে করতাম না।
সাইকো কথাটা শুনে লোকটি হাসতে হাসতে বলল….
—খুব সাহস বেড়েছে না তোমার?তা এই সাহসের কারন কি তোমার ঐ চিটার জামাই?যে তোমাকে চিটারি করে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে।নেহাৎ তখন আমি দেশের বাইরে ছিলাম।তা না হলে কখনো ঐ চৌধুরী তোমার ধারের কাছে আসতে পারতো না।আমার আবার সবাইকে কষ্টে দেখতে ভালো লাগে।তাইতো তোমাকে আমার এখানে নিয়ে আসতে চাচ্ছি।তুমি যদি চলে আসো তাহলে চৌধুরী অনেক কষ্ট পাবে।তাতেই আমার সান্তি।তা না হলে এই সান্ত কোন সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস নিজের কাছে রাখে না।
—উনার সাথে আপনার কিসের শক্রতা?
—তা তোমার না জানলেও হবে।এখন বল তুমি আমার কাছে আসবে কি না?
নুহা শক্ত গলায় বলল….
—না…..
—ঠিক আছে তাহলে আমি তোমার উনাকে তোমার কাছ থেকে সরিয়ে দেই।তাহলে এক ঢিলে আমার দুই পাখি মারা হয়ে যাবে।
কথাটা বলেই সান্ত লাইন কেটে দিল।নুহা কিছুক্ষন থ’মেরে বসে থেকে সাইফ কে ফোন করে আসতে বলল।
চলবে