তোর উঠানে বিকাল ছায়া?,পঞ্চম খন্ড
লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
নির্ঝর বেরিয়ে যাবার পর।
সকাল কেটে দুপুর হতে লাগলো ছায়া রুম থেকে বের হয় নি।
বই নিয়ে পড়ছিল।
বই পড়তে পড়তে সময়ের খেয়াল ছিল না তার।
–কিরে মা কি এতো পড়ছিস সারা দিন।
নয়লা বেগমের কথায় ছায়া চশমা টা খুলে বই থেকে মুখ সরিয়ে নয়লা বেগমের দিকে তকায়।
–কিছু না মা আসলে বইটা বেশ মজার তাই শেষ করতে চাইছিলাম।
–ওহ শেষ হয়েছে কি?
–না এখনো একটু বাকি।
–ওহ আয় বাইরে আয়।
–বাইরে যাবো হ্যাঁ মা আসছি।
ছায়া উঠে শাড়ি ঠিক করে নায়লা বেগমের সাথে বাইরে আসে।
তমা বসে বসে টিভি দেখছে,
ছায়াকে দেখে ছায়ার দিকে মুখ ঘুরালো,
–কিরে ছায়া সারা দিন কই ছিলি।
–বই পড়ছিলাম আপু।
–ওহ আচ্ছা
–আয় আঙুর খা।
ছায়া প্রথম হ্যা বলবে তার আগে তার মনে পড়লো নির্ঝর এর বলা কথা,
ছায়া চুপ হয়ে গেল।
–আচ্ছা মা এখানে কি সিসিটিভি আছে?
–হ্যাঁ আমাদের পুরো বাড়িতে আছে শুধু বেডরুমে নেই।
ছায়া কিছুটা ভয় পেয়ে বলল,
–ওহ না আপু তুই খা আমি খাবো না।
–আচ্ছা তাহলে চল খেতে বসি।
–ইয়ে মানে উনি না আসলে খাবো না।
–কেন মা খাবি না কেন ওকে আমি বলে দিবো তুই খেয়ে নে আয়।
–না মা প্লিজ জোর করবেন না।
–আরে বোকা মেয়ে কোন সমস্যা নাই আমি আছি ত।
–মা না।
–তুই কি বেয়দপ রে ছায়া মা এতো করে বলছে আর তুই না না করে চলেছিস।
এই শিক্ষা দিয়েছি তোকে।
অসভ্য।
–বউ মা ওকে রাগ করো না থাক মা সমস্যা নাই (ইমোশনাল হয়ে)
–তোর কথায় মা কষ্ট পেয়েছে ছায়া।
–আসলে আপু।
বোনের কথার উপর ছায়া আর কথা বলতে পারলো না।
সে মিন মিম করে টেবিলে গিয়ে বসে।
তমা শাশুড়ী মা কে নিয়ে
চুপচাপ বসে পরে।
তার পর খাবার সার্ভ করে।
সবাই মিলে খাবার শেষ করে উঠে।
তার পর যে যার রুমে চলে যায়।
কিছু সময় পর নির্ঝর বাসায় ফিরে।
নির্ঝর বাসায় ফেরাতে ছায়ার বুকের মাঝে ধকধক শব্দ হচ্ছে না জানি কি হয়।
নির্ঝর বাসায় এসে সোজা ওয়াসরুমে চলে যায়।
লম্বা একটা সাওয়ার নিয়ে এসে বাইরে চুপচাপ চুল আঁচড়াতে শুরু করে।
ভেজা চুলে নির্ঝর কে যেন একটু বেশি সুন্দর লাগে।
–চলো খেতে চলো।
হটাৎ নির্ঝর কথা শুনে ছায়া কেঁপে উঠলো।
–কি হলো!
–কিছু না।
–তবে।
–চলুন।
ছায়া নির্ঝর কে নিয়ে নিচে আসে।
ছায়া নির্ঝর কে খাবার বেড়ে দেয়।
নির্ঝর খাবার শেষ করে কিন্তু ছায়াকে বসতে বলে না।
ছায়া ভাবছে নির্ঝর এতো নিরব হয়ে গেল কেন।
নির্ঝর এর খাবার শেষে নির্ঝর রেস্ট নিয়ে আবার বাইরে চলে যায়।
ছায়া অবাক হয়ে নির্ঝর এর কাজ দেখে চলেছে।
বিকাল গড়িয়ে রাত হলো।
রাতের খাবার শেষে সবাই যে যার রুমে চলে যায়।
নির্ঝর কাজ করছে।
ছায়া চুপচাপ ছোফায় গিয়ে বসে।
তার এখন কি করা উচিত তা ছায়া জানে না।
আসলে নির্ঝর চাইছে কি।
ছায়া আড়চোখে নির্ঝর এর দিকে তাকায়।
নির্ঝর নিজের মতো কাজ করছে।
ছায়া কিছু না বলে ছোফায় শুয়ে পরে।
৩০ মিনিট পর,
ছায়া গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
নির্ঝর বাথরুমে গিয়ে এক মগ পানি এনে ছায়ার মুখে চেলে মারে।
★★★
হটাৎ ঘুমের মাঝে মনে হলো বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
কিন্তু আমি ত ঘরে আমার মুখে পানি এলো কি করে।
এতোটাই ঘুম আসছে যে পানিকে তোয়াক্কা না করে আবার ঘুমিয়ে গেলাম।
নির্ঝর এবার পুরো এক বালতি পানি এনে ছায়ার উপর ফেলল।
ছায়া ধড়ফড়িয়ে উঠলো।
–কি কি কি সমস্যা কি।
(কাঁপতে কাঁপতে)
–তোমায় এখানে শুতে বলেছি?
—বলেন নি আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি শুয়েছি আর কিছু। (রেগে)
–হ্যাঁ আরও অনেক কিছু চুপচাপ গিয়ে শাড়ি চেঞ্জ করে খাটে শুয়ে পরো।
–শুবো না।
-;তাহলে এ রুমে তোমার জন্য যায়গা নাই।
–ঠিক আছে।
ছায়ার প্রচন্ড রাগ হয়ে যায়।
উঠে সে ভেজা কাপড়ে বেলকনিতে চলে যায়।
–পেয়েছে টা আমাকে যা ইচ্ছে নিজের মতো করবে।
সব সময়।
আমি কি পুতুল নাকি।
জানে আমার ঘুমের মাঝে কেউ ডাকলে আমার শ্বাস কষ্ট হয়।
আমার হার্টবিট বেড়ে যায়।
ভয় হয়।
তাও এমন করেছে তাও পানি ফেলেছে।
জাহান্নামে যাক ও আর ওর সংসার।। দেখতাম না কিছু।
আমার সাথেই এমন করবে সব সময়।
আল্লাহ আমাকে নেয় ও না।
মরলেও হয়ত শান্তি পেতাম।
,
ছায়া বকবক করছে নির্ঝর হাতে বালতি নিয়ে এখনো দাঁড়িয়ে
নির্ঝর নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে ইয়ার্কি টা একটু বেশি হয়ে গেছে
এমনটা করা উচিত হয় নি।
বাচ্চা মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে।
সংসার কি তা আসলে ছায়া বোঝে না।
সে নিজের খেয়াল রাখতেই বোঝে না তো কি করে বাইরের কথা বুঝবে।
নির্ঝর কিছু সময় দাড়িয়ে থেকে পানি গুলো পরিষ্কার করে বারান্দায় চলে আসে।
ছায়া ফুপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে।
নির্ঝর গিয়ে ছায়ার সামনে হাঁটু ভাজ করে বসে।
নির্ঝর কে দেখে ছায়া মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
–সরি।
–লাগবে না।
–সরি প্লিজ।
কান ধরে
নির্ঝর কে কান ধরতে দেখে ছায়া বেশ অবাক হয়।
কিন্তু মনে মনে ভালো ও লাগে।
নির্ঝর ছায়ার মনের ভাব বুঝতে পেরে তাকে কোলে তুলে নেয়।
ছায়া চুপচাপ থাকে।
নির্ঝর একটা শাড়ি দিয়ে ছায়াকে পাঠায়।
ছায়া শাড়ি পাল্টে রুমে আসে।
নির্ঝর ছায়াকে শুইয়ে দিয়ে তার মাথায় বিলি কেটে দেয়।। এটাও এক প্রকার সরি।
নির্ঝর জানে ছায়ার মাথায় কেউ বিলি কেটে দিলে ছায়ার সমস্ত রাগ ভালোবাসায় পরিনত হয়।
–ছায়া। –
–হুম।
–তুমি কি জানো।
–কি(ঘুমের ঘোরে)
–তুমি #আমার_উঠানে_বিকাল_ছায়া
–হু(ঘুমের ঘোরে)
ছায়া প্রায় ঘুম এ অবস্থায় সে কিছুই বুঝতে পারবে না নির্ঝর এর কথা।
তাই নির্ঝর ছায়াকে ভালোবাসার কথা গুলো বলল।
ছায়া চুপচাপ ঘুমিয়ে পরে নির্ঝর এর বুকে
আর নির্ঝর ছায়াকে বুকের মাঝে নিয়ে ঘুমিয়ে যায়।
এ এক অপরুপ চিত্র যা আমার মতো ক্ষুত মানুষ লিখে প্রকাশ করতে পারবে না।
এই ত পরম শান্তি।
এই ত রহমাত।
,
,
,
একট রুমের মাঝে কিছু ছেলেকে বেঁধে রাখা হয়েছে।
তাদের সামনে নিল শার্ট এ সেই আগের ব্যাক্তি টা দাঁড়িয়ে।
–তোদের বলেছিলাম ছায়ার উপর নজর রাখতে।
–জি স্যার।
–তো রিপোর্ট দে এখন।
–স্যার ক্ষমা করবেন। নির্ঝর চৌধুরী এমন ভাবে ছায়া ম্যামকে আবৃত করে রেখেছে ছায়া ম্যামের ধারে কাছে যাওয়া সম্ভব না।
–আমি তো তোদের থেকে কৈফিয়ত চাই নি আমি চেয়েছি রিপোর্ট।
–স্যার সরি স্যার আর হবে না।
–এই ওদের ব্যাবস্থা নে
কিছু লোক এসে লেক গুলোকে নিয়ে যায়
–ছায়া ছায়া ছায়া তুমি শুধু আমার তুমি অন্য কারোর হতে পারো না ছায়া কখনো না।
তুমি আমার না হলে তুমি সত্যি কারোর না।
কারোর হতে দিবো না।
অন্য কারোর না।
,
,
,
চলবে