তোর উঠানে বিকাল ছায়া?,ষষ্ঠ খন্ড

0
3676

তোর উঠানে বিকাল ছায়া?,ষষ্ঠ খন্ড
লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা

সকালের রোদ মুখে পড়তে ছায়ার ঘুম ভেঙে যায়।
টিপটিপ করে চোখ খুলতে নিজেকে একটা বাশের তৈরি ঘরে আবিষ্কার করে।
মাথাটা কেমন ভার হয়ে আছে।
কেমন অসুস্থ অসুস্থ ফিল হচ্ছে ছায়ার।
কিন্তু সে সব তোয়াক্কা না করে ছায়া দখতে থাকে,
চারিদিকে প্রাকৃতিক ছোয়া।
অপূর্ব দেখাচ্ছে সব কিছু।
কিন্তু ছায়া এখানে এলো কি করে
ছায়ার কাল রাতের ঘটনা মনে পড়তে শুরু করে।
তার পর বিছনা থেকে উঠে নির্ঝর কে খুঁজতে থাকে।
ছায়া রুম থেকে বাইরে বের হতে নির্ঝর এর দেখা পায়।
তারা সম্পূর্ণ একটা ভিন্ন জায়গায় আছে।
বাইরেও সব জায়গায় ফুলের গাছ। আর বালি।
এই বাড়িটার ভেতরে বাঁশের দেয়াল কিন্তু বাইরে দিয়ে তাকে আবৃত করে রেখেছে ইট, সিমেন্ট।
ছায়া কিছুটা অবাক হয়।
তারা কোথায় এটা?
ছায়া নির্ঝর এর কাছে এগোতে গেলে মাথা ঘুরে ওঠে।
পাশের দেয়াল ধরে বসে।
নির্ঝর ছায়ার ক্লান্তি দেখে ছায়াকে ধরে বসে।
নির্ঝর ছায়াকে ধরে বুঝতে পারে ছায়ার জ্বর আসছে।
কালকে রাতে ওভাবে ভিজে অবস্থায় থাকার জন্য হয়ত এসেছে,
–তুমি বাইরে এলে কেন তোমার ত জ্বর আসছে৷
–এটা কোথায়।
–এটা একটা শান্তি ময় জায়গা।
আমার ভিশন পছন্দ।
আমারা কিছু দিন এখানে থাকবো।
–কতো দিন?
–৫-৬ দিন।
–৫-৬ দিন।
ছায়াকে কিছুটা ক্লান্ত দেখে নির্ঝর ছায়াকে রুমে নিয়ে যায়।
নির্ঝর ছায়ার জ্বর মেপে কপালে হাত দেয়,
–১০৩° জ্বর নিয়ে কি করে হাঁটছো ছায়া তুমি।
ছায়া চোখ বন্ধ করে নির্ঝর কে ফিল করছে।
জ্বরও খুব আজব জিনিস যখন আসে তখন মাথার রগ গুলো ছিড়ে নিয়ে আসে।
মনে হয় কিছুই বোধগম্য নয়।
মনে হয় সারা পৃথিবীর ওজন সব মাথার উপর দিয়ে রেখেছে।
ছায়া চোখ বন্ধ করে রইলো।
নির্ঝর ছায়ার মাথায় লবন পানির পটি দিচ্ছে।
মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়াতে ছায়ার ভিশন শান্তি লাগছে।
ছায়ার শরীরের তাপমাত্রা ভিশন তেজে বাড়ছে।
জায়গা টা ভিশন ঠান্ডা ঠান্ডা।
বাইরে আবার বৃষ্টি হচ্ছে।
ছায়া চুপচাপ চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
নির্ঝর কম্বল নিয়ে ছায়ার পাশে ছায়াকে জড়িয়ে শুয়ে পরে।
ছায়ার শীররের তাপমাত্রা নির্ঝর এর সহ্য না হলেও নির্ঝর ছায়াকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে।
ছায়ার ও শান্তি লাগছে।
,
,
,
,
সামনে থাকা কাঁচের টেবিল টিভি সব কিছু চেলে উল্টো দিকে ফেলে দিচ্ছে অচেনা সেই আগন্তুক ।
–নির্ঝর ছায়াকে নিয়ে কোথায় সরতে পারে
আমি বলেছিলাম ওদের উপর খেয়াল রাখতে তোরা রাখলি না কেন।
ও কেন আমার ছায়াকে নিয়ে গেল।
কি করে নিতে পারলো
ভিশন বিকট ভাবে চিল্লিয়ে কথাটা বলল আগন্তুক।
–স্যার খুব কড়া সিকিউরিটি সিস্টেম এর মাঝে আমারা খুব কষ্ট করেছি কিন্তু খবর পাই নি।
–নির্ঝর।
তুই আমার ছায়াকে নিয়ে ঠিক করিস নি।
আমি তোকে ছাড়বো না।
কতো দিন লুকিয়ে থাকবি।।
সামনে ত তোকে আসতেই হবে।
নির্ঝর কে যেখান থেকে পারো খুঁজে বের করো।
আমি নিশ্চিত ও এমন কোথাও আছে যেখানে কেউ নেই।
ও আর ছায়া।
এবার ওদের খুঁজে পেলে নির্ঝর কে মেরে ছায়াকে আমি আমার করে নিবো।
তোদের দায়িত্ব ওকে খোঁজা।
অচেনা লোকের চিল্লানোতে সবাই কেঁপে ওঠে।
আর রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
সবাই চলে গেলে লোকটা একটা রুমে চলে আসে।
যেখানে লাইট অন করতে দেখা যায় শুধু ছায়ার ছবি।
পুরো দেয়াল জুড়ে সব জায়গায় শুধু ছায়ার ছবি।
লোকটা দেয়ালে টানানো একটা বড়ো ছবির পাশে যায়,
–তুমি শুধু আমার ছায়া শুধু আমার।
আর কারোর নও।
কারোর হতে দিবো না।
খুব জলদি আমার কাছে নিয়ে আসবো ছায়া।
খুব জলদি।
লোকটা কিছুটা পাগল পাগল করে কথা গুলো বলছে,
,
,
,
ছায়ার জ্বরের ঘোরে আবল তাবল বকার অভ্যাস আছে
নির্ঝর ছায়ার থেকে উঠে আসতে গেলে ছায়া নির্ঝর কে টেনে আবার কাছে নিয়ে আসে,
–যাবে না আপনার শরীরের ঘ্রাণ টা খুব মিষ্টি।
আমার খুব ভালো লাগে আপনার সাথে থাকতে। আপনার কথা শুনতে।
আপনাকে ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়।
কতো ভালোবাসি আপনাকে আপনি যদি জানতেন।
তবে কষ্ট দিতেন না।
নির্ঝর বুঝতে পারে ছায়াকে এখন যা প্রশ্ন করা হবে তার সঠিক উত্তর নির্ঝর পাবে।
তাই সে ছায়াকে বলে,
–সেদিন বিয়েটা কেন করেছিলে ছায়া ভালোবাসো বলে নাকি বাধ্য হয়ে?
–আমি ভালোবাসি খুব আগে থেকে কিন্তু সে দিন বিয়েটা করেছিলাম আপনার মায়ের কথায়।
–মানে!
–আপনার মা বলেছিল তমা’র বিয়ে হতে দিবে না আপনাকে বিয়ে না করলে।
এই টুকু বলে ছায়া আবার ঘুমিয়ে যায়।
নির্ঝর এর মুখটা ভিশন ফ্যাকাসে হয়ে যায়।
যেন ভিশন বড়ো একটা ভুল করেছে সে।
নির্ঝর ছায়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,
–কিছু হবে না তোমার।
আমি তোমায় আমার থেকে দুরে যেতে দিবো না ছায়া।
কখনো না।
নির্ঝর চোখে মুখে আতঙ্কের ছায়া।
কি করবে কি না করবে বুঝতে পারছে না সে।
এই মুহুর্ত টা তার কাছে সব কিছু।
ছায়ার অস্তিত্ব নিজের বুকের মাঝে ফিল করাটা সব থেকে বড়ো চাওয়া এবং পাওয়া নির্ঝর এর কাছে।
ভালোবাসে খুব বেশি ভালোবাসে ছায়াকে নির্ঝর।
কিন্তু এ কেমন ঝড়।
এ কোন ঝড় যার থেকে নির্ঝর ছায়াকে বাঁচাতে চাইছে কিন্তু ক্রমশ সেই ঝড়ের দিকে চলে যাচ্ছে। এটা কপউ জানে না।
,
,
সকাল গড়িয়ে দুপুর।
নির্ঝর ছায়াকে উঠিয়ে খাবার খাইয়ে দিলো আর ঔষধ,
★★★
নির্ঝর এর এমন খেয়াল রাখাটা আমায় অবাক করছে কিন্তু আমার ভিশন ভালো লাগছে।
তার কাছে আসা তার আদর তার ভালোবাসা।
তাকে ফিল করাটা।
মন থেকে ভিশন ভালো লাগছে।
★★★
ছায়াকে মৃদু হাসতে দেখে নির্ঝর ছায়ার সামনে গিয়ে বসে,
–কি!
–কিছু না।
–এখন একটু ভালো লাগছে?
–হুম।
–সকালে তোমার যা অবস্থা হয়েছিল আমি ত ভয় পেয়ে গেছিলাম।
ভেবেছিলাম হসপিটালে নিতে হবে।
–আমাকে এতো সেবা কেন করছেন।
–কারন তুমি ছায়া আমার স্ত্রী আমার সব থেকে কাছের মানুষ টা তুমি।
–আপনি ত আমাকে সহ্য করতে পারেন না।
–কে বলল।
–আপনি নিজে।
–সব সময় সব কথা সত্যি হয় না। সব সময় সব দেখা সত্যি হয় না মনের দৃষ্টিতে কিছু দেখতে হয় আর মন থেকে কিছু ফিল করতে হয়।
তুমি বুঝবে না এখনো বাচ্চা আছো।
–বললে সব বুঝবো।
–আচ্ছা আগে সুস্থ হও সময় হলে সব বুঝবে।
–আপনি খাবেন না?
–হুম খাবো ত।
নির্ঝর খেয়ে নেয়।
ছায়া শুয়ে পরে।
নির্ঝর ছায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
–জানো কখনো কখনো আপন মানুষ ধোকা দেয়।
–কে কি করেছে?
–নাহ কেউ কিছুই করে নি তুমি ঘুমাও ছায়া।
–ঘুম আসছে না।
–কেন।
–সকালে অনেক ঘুমিয়েছি যে।
–আচ্ছা ঠিক আছে চলো তবে একটা ভিউ দেখাই।
–হুম।
ছায়ার হাত ধরে ছায়াকে দাঁড় করায় নির্ঝর।
তার পর পেছন দিকের জানালাটা খুলে দেয়।
ছায়া সামনে দেখে অবাক।
সামনে শুধু নীল সমুদ্র।
তার মানে তারা সমুদ্রের পাড়ে আছে। কিন্তু এটা বাংলাদেশের সমুদ্র বলে মনে হচ্ছে না।
–আমরা বাংলাদেশ আছি ত নাকি?
–না আমরা মালদ্বীপ আছি।
–কি!
ছায়ার ভ্রু কপালে উঠলো।
–এতো দুর কি করে আসলাম এক রাতে।
নির্ঝর একটা ডেভিল স্মাইল দিয়ে বলে,
–Don’t judge a book by It’s cover.
ছায়া নির্ঝর এর কথা বুঝতে পেরে থ হয়ে যায়।
লোকটা সাংঘাতিক।
.
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here