তোর উঠানে বিকাল ছায়া?,নবম খন্ড (বোনাস)
লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
–নির্ঝর!!
(আঁতকে উঠে কথাটা বলল ছায়া।)
নির্ঝর ছায়াকে হুট করেই এমন ভাবে টেনে তুলেছে যে ছায়া তার দু হাতে বেশ ব্যাথা অনুভব করেছে।
নির্ঝর হটাৎ ই পাগলের মতো করে ছায়াকে বোরখা পরতে বলল,
–বাসায় যাবো।
–নির্ঝর!
–ছায়া প্রশ্ন করো না যা বলছি তাই করো
নির্ঝর রাগ দেখে ছায়া চুপ হয়ে যায়।
নির্ঝর এর কথা মতো তারা রওনা হয়।
কিন্তু নির্ঝর এমন হুট করে কি থেকে কি করলো তা ছায়ার মাথার উপর দিয়ে গেল।
আদনান যখন তার পার্সোনাল প্লেন থেকে নামলো নির্ঝর তখন ছায়াকে নিয়ে তার লেকাল ফ্লাইটে উঠলো।
দু’জন দুজনের খুবই কাছে ছিল কিন্তু কেউ কাউকে দেখতে পেল না।
প্লেনে নির্ঝর এক দম চুপচাপ বসে আছে।
ওকে দেখে ভিশন রাগি মনে হচ্ছে ছায়ার ইচ্ছে হচ্ছে প্রশ্ন করছে কিন্তু নির্ঝর এর রাগ সম্পর্কে ছায়া ভিশন ভালো করে জানে তাই চুপচাপ নির্ঝর এর মতের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে।
,
,
নির্ঝর ছায়া যে রিসর্টে ছিল সেখানের প্রায় সবটুকুই লান্ড ভন্ড করে দিয়েছো আদনান।
–আবার আবার সেই সুবর্ণ সুযোগ হাত ছাড়া করলাম আমরা।
শেষ হয়ে গেল সব।
নির্ঝর দেশে চলে গেছে।
নির্ঝর দেশের মাটিতে পা দিলে কতোটা শক্তিশালী হতে পারে তা শুধু আমি জানি।
আশে পাশে সবাই চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
মজার ব্যাপার হলো নির্ঝর আর ছায়া আদনানের রিসোর্টেই ছিল।
কিন্তু আদনান তা জানত না।
এটাই হলো নির্ঝর ও যা করে তা সব টুকুই আদনানের ব্রেনের এক হাত উপর দিয়ে যায়।
,
,
,
চৌধুরী বাড়িতে পৌঁছাতে দিন কেটে যায়।
ছায়া জার্নি করে ভিশন ক্লান্ত।
ছায়া খেয়াল করে তাদের সেফটির জন্য তাদের সামনে দুটো গাড়ি এবং পেছনে দুটো গাড়ি।
নির্ঝর খুবই ক্লান্ত তাই ড্রাইভার ড্রাইভ করছে।
ছায়া খেয়াল করে নির্ঝর ছায়ার কাঁধে মাথা দিয়ে চুপচাপ বাচ্চাদের মতো চোখ বন্ধ করে আছে।
ছায়া নির্ঝর এর চুল গুলো ছুঁয়ে দিলো।
ছায়া বুঝে না নির্ঝর ঠিক কখন কি করে।
আর কেন ই বা করে।
চৌধুরী বাড়িতে পৌঁছে গাড়ি থামলে নির্ঝর চোখ খুলে।
ছায়া নির্ঝর বাড়ির ভেরতে আসে।
ছায়ার শাড়ির আঁচল টা হটাৎ একটা গাছে বেঁধে যায়।
তাই ছায়া নির্ঝর থেকে একটু দুরে সেটাকে ছাড়াতে ব্যাস্ত হয়ে পরে।
নির্ঝর কে একা বাড়িতে আসতে দেখে তমা দৌড়ে নিচে আসে।
খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলতে থাকে,
–ভাইয়া আপনি এসেছেন।
ছায়া কে কোথায় মাটি দেওয়া হলো।
নির্ঝর তমার মুখে এ কথা শুনে রক্তচক্ষু নিয়ে তমার দিকে তকায়।
তমা বুঝতে পারে সে কি বলে ফেলেছে
তাই হাসি মুখটা চুপসে যায় তার।,
–কি বলছিস আপু।
হটাৎ ছায়া নির্ঝর এর পাশে এসে কথাটা বলে
তমার চোখ রসগোল্লা হয়ে যায় ছায়াকে দেখে
তমার ভিশন রাগ হচ্ছে কিন্তু তমা নিজেকে সামলে ছায়াকে বলে,
–কিছু না তুই কই সেটাই প্রশ্ন করেছিলাম
ভ ভেতরে আয়।
কথাটা বলে তমা চলে গেল।
ছায়া কিছুই বুঝতে পারলো না।
নির্ঝর ছায়ার হাত ধরে তাদের ঘরে নিয়ে আসে।
–ছায়া।
–হুম বলুন।
–আমি ভিশন ক্লান্ত।
–গোসল করুন।
–হুম একটা আবদার করবো।
–হুম।
–রান্না টা তুমি করবে।
নির্ঝর এর করুন শুরে কথাটা বলে।
কারন সে জানে ছায়াও ক্লান্ত।
কিন্তু এই মুহুর্তে এই বাড়ির কারোর হাতের খাবার তার পেট দিয়ে নামবে না।
তাই না চাইতে ও ছায়াকে কথাটা বলে,
–হুম আমি এখনি নিয়ে আসছি।
ছায়া নিচে চলে যায়।
নির্ঝর এর জন্য ভাত আর মাংস তৈরি করতে শুরু করে।
ছায়াকে কিচেনে দেখে তমা চোখ ঘুরিয়ে ঘরে চলে যায়।
ছায়া তমাকে ডাক দিবে তখন।
ছায়া বুঝতে পারে না তমার কি হলো।
তমা চলে যাওয়াতে ছায়া আবার একা একা কাহ করতে শুরু করে।
ছায়াকে দেখে তমার ভিশন রাগ হচ্ছে কিন্তু ছায়াকে সেটা বুঝতে দিলে হবে না।
তমা রুমে এসে কাচের ফুলদানি টা ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেয়।
–কি করে হলো এটা কি করে হলো। (চিৎকার করে)
কতো স্বপ্ন দেখেছিলাম সব এভাবে মাটি হয়ে গেল।
কি করে হলো।
তমা পুরোই পাগল হয়ে গেছে রাগে।
,
,
ছায়া খাবার সাজিয়ে টেবিলের সাথে থাকা চেয়ারে বসে পরে।
ভিশন ক্লান্তি গ্রাস করেছে তাকে।
উঠে নির্ঝর কে ডাকবে সেই শক্তি টুকু নেই।
আশেপাশে কোন সার্ভেন্ট ও নেই।
এই রাতে কারোর থাকার কথা না।
সার্ভেন্ট থাকলে হয়ত ছায়াকে এগুলা করতে বলত না নির্ঝর।
ছায়া শিড়ি বেয়ে উঠতে যাবে তখন নির্ঝর নিচে আসে।
–যাও ফ্রেশ হয়ে এসো ছায়া।
ছায়া নির্ঝর কে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে সাওয়ার নিতে চলে যায়।
নির্ঝর এসে টেবিলে বসে।
তখন তমা রুম থেকে বাইরে বের হয়।
নির্ঝর কে বসে থাকতে দেখে দৌড়ে আসে,
–ভাইয়া আপনি ত কিছু খান নি রান্না করে আনছি আমিও না এক দম পাগল সব কিছু ভুলে যাই।
–তার প্রয়োজন নেই ভাবি আপনি বসুন৷
আজ প্রথম নির্ঝর তমাকে ভাবি বলল।
এর আগে তমা বলে ডাকত।
তমা বেশ অবাক হয়।
–আমাকে ভাবি কেন বলছেন ভাইয়া।
–ভাই এর স্ত্রী কে ভাবি বলে ভাবি।
–রান্না না করলে খাবেন কি।
–আমার স্ত্রী রান্না করেছে।
–ওহ এগুলা এগুলা ত আমি রান্না করেছি ভাইয়া ছায়া ত রান্না পারে না।
(ডাহা মিথ্যা কথা৷)
–ভাবি রান্না যদি আপনি করতেন তবে আবার রান্না করার কথা বলতেন না।
তমার পুরাই হাতে নাতে ধরা পরে বিভ্রান্তি তে পরে যায়।
ছায়া নিচে চলে আসে।
নির্ঝর কে খেতে দেয়।
আর আবির ও আসে।
–ভাইয়া আপনিও বসুন (ছায়া)
–হ্যাঁ আমিও সকাল থেকে কিছুই খাই নি।
আবির ফ্রেশ হয়ে খেতে বসে।
–কেন ভাইয়া খান নি।
–তোমার আপু রান্না ই করে নি।
নির্ঝর খাওয়া ছেড়ে এক বার তমার দিকে তাকায়।
নির্ঝর বেশ ভালো বুঝতে পারছে কি হচ্ছে।
–আবির ছায়া বেশ সুন্দর রান্না করে খেয়ে দেখ।
–হুম।
আবির খাবার মুখে দিয়ে ছায়ার প্রসংশায় পঞ্চমুখ।
তা দেখে তমা সেখান থেকে রাগী মুড নিয়ে উঠে যায়।
চলবে,