ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে,পর্বঃ৯

0
1968

ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে,পর্বঃ৯
অরিত্রিকা আহানা

ভ্রমরের বিয়ে ঠিক হয়েছে আগামী মাসের তিন তারিখ। হাতে সময় আছে আর মাত্র বারোদিন। বাড়ি সবাই বিয়ের আয়োজন, কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত! সম্বন্ধটা ভ্রমরের মামা বরকত উল্লাহ্‌ই এনেছেন। ছেলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। ছেলের বাবার বিরাট ব্যবসা। ছেলে পরিবারের সবার ছোট। তাই ছেলের বাবা বউ হিসেবে ছেলের সাথে মানানসই সুন্দরী, শিক্ষিতা একটা মেয়ে খুঁজছিলেন। ছবিতে ভ্রমরকে দেখেই পছন্দ হয়ে যায়। তাছাড়া মেয়ে ডাক্তারি পড়ছে, আর কিছু দেখার প্রয়োজন নেই। দেখতে এসেই ভ্রমরকে আংটি পরিয়ে দিয়ে গেছেন ছেলের মা। বোরহান উদ্দিনও আর অমত করেন নি। ছেলে শিক্ষিত, দেখতে শুনতেও মানানসই। ফ্যামিলিও ভালো। তাছাড়া নাফিসা রহমান বারণ করে দেওয়ার পর ভেতরে ভেতরে বেশ হতাশ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তাদের পারিবারিক ইতিহাসই যে নাফিসা রহমানের বারণ করে দেওয়ার মূল কারণ সেটা আর কেউ না বুঝলেও তিনি ঠিকই বুঝতে পেরেছেন। বরকত উল্লাহ্‌ই চারদিকে লোক লাগিয়ে ছেলের খোঁজখবর নিয়ে সম্বন্ধটা এগিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। ছেলে ভালো দেখে বোরহান সাহেবও আর অমত করেন নি।

বিয়ে ঠিক হওয়ার পর তিন দিনের মাথাতেই নাফিসা রহমানকে ফোন করেন বোরহান সাহেব। ফোন করার কারণ হিসেবে বিয়ের ব্যপারে নাফিসা রহমানের মতামত জানতে চাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। বোরহান সাহেবের ভাষ্যমতে, ভ্রমর যেহেতু নাফিসা রহমানের কাছে কিছুদিন ছিলো তাই, এই ব্যপারে তাঁর মতামত জানাও জরুরি। মুখে যদিও তিনি এই কথা বলেছেন নাফিসা রহমান কিন্তু ঠিকই বুঝলেন। বোরহান সাহেব তাঁর প্রতি রাগ থেকে ফোনটা করেছেন। তথাপি তিনি কিন্তু অখুশি হলেন না। বরঞ্চ খুশিই হলেন! মনে মনে তিনিও চাইছিলেন ভ্রমরের একটা ভালো জায়গায় বিয়ে হোক, মেয়েটা সুখে থাক!
হ্যাঁ! তার নিজের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চান নি সেটা আলাদা ব্যপার। কিন্তু তাই বলে ভ্রমরের খারাপ চাইবার মত মনমানসিকতা তাঁর নেই। ঐ টুকু একটা মেয়ে তার সাথে নাফিসা রহমানের কিসের প্রতিদ্বন্দ্বীতা? নাফিসা রহমান তো কেবল একজন দায়িত্ববান মা হিসেবে নিজের ছেলের ভালো চেয়েছেন। এর বাইরে তিনি ভ্রমরকে যথেষ্ট স্নেহ করেন। তাই অযথা ভ্রমর কিংবা তাঁর পরিবারের কারো সাথে রেষারেষি করার কোন ইচ্ছা তাঁর নেই। বোরহান সাহেবের কাছ থেকে পাত্রর বিবরণ শুনে বেশ তিনি বরং খুশিই হলেন। নিজের মন মত পাত্র পেয়েছেন বোরহান সাহেব। ছেলে শিক্ষিত, চাকরিবাকরি করছে। ভ্রমরও সুখে থাকবে!

সারাবাড়ি খুঁজেও ভ্রমরের কোন খোঁজ পেলো না রেহানা। খুঁজতে খুঁজতে ছাদে গিয়ে হাজির হলো। ছাদের ঠিক মাঝখানে মেঝেতে বসে কাঠাফাটা, তপ্ত রোদে নিজেকে পোড়াচ্ছে ভ্রমর।
টকটকে লাল হয়ে আছে ওর ফর্সা হাতমুখ। রোদের তেজে গালের চামড়া,পিঠ, হাত পুড়ে জ্বালা করছে। গায়ের জামা ঘামে ভিজে চুবচুবে হয়ে গেছে। কপালের ঘাম নাকেমুখে চুইয়ে পড়ছে। রেহানার ডাক কানে গেলো না। যেমনি বসে ছিলো তেমনি বসে রইলো। রেহানা হতবিহ্বল হয়ে কাছে এগিয়ে গেলো। টেনে ওকে মাটি থেকে তোলার চেষ্টা করে বললো,’পাগল হয়ে গেছিস তুই? এই রোদের মধ্যে এখানে বসে আছিস কেন?’

ভ্রমরের মুখে তুলে ভাবীর দিকে চাইতেই চোখেমুখে তারা দেখলো! অনেকক্ষণ যাবত রোদে বসে থাকায় হঠাৎ করে কিছু দেখতে পাচ্ছে না। আগুন লাল চোখজোড়া থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়লো। নিঃশব্দে উঠে দাঁড়ালো সে।রেহানা টেনে সিড়িঘরের দিকে নিয়ে গেলো। গায়ের ওড়না দিয়ে ওর মুখহাতের ঘাম মুছে দিয়ে বললো,’কি হয়েছে তোর? এখানে এভাবে বসে আছিস কেন?’

ভ্রমরের মুখ দিয়ে টুঁশব্দটিও বেরোলো না। বোবার মত চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো সে। ভ্রমরের মুখের দিকে তাকিয়ে ঘাবড়ে গেলো রেহানা। ভ্রমরকে কোন অবস্থাতেই স্বাভাবিক লাগছে না। চোখেমুখে ভয় ফুটে উঠলো রেহানার। খপ করে ভ্রমরের একটা হাত চেপে ধরে দ্রুত ওকে নিয়ে নিচে নামতে শুরু করলো। বসার ঘরে বোরহান সাহেব, বরকত উল্লাহ সবাই বসে আছেন। রেহানাকে তড়িঘড়ি করে নামতে দেখে ছুটে এলেন ভ্রমরের। চিন্তিমুখের জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে? রেহানা জবাব দিলো না। ভ্রমরকে নিয়ে চুপচাপ রুমে ঢুকে গেলো। একটা শুকনো তোয়ালিয়া দিয়ে ওর গায়ের ঘাম মুছে দিয়ে ফুলস্পিডে ফ্যান ছেড়ে দিলো। ভ্রমরের মাথার তালুতে হাত রেখে দেখলেন আগুন বেরোচ্ছে মাথা দিয়ে।
ভাবীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাঁর সাথেই ভাব ভ্রমরের। ভ্রমরকে নিজের ছোটবোনের মত ভালোবাসে সে। ওয়াশরুম থেকে তোয়ালে ভিজিয়ে এনে আস্তে আস্তে ভ্রমরের মাথা, হাত পা মুছে দিতে দিতে নরম গলায় বললো,’কি হয়েছে ভ্রমর? মনের কথা চেপে না রেখে আমাকে বল? ঐ ছেলেটার সাথে কিছু হয়েছে? হলে আমাকে বল, আমি কথা বলবো তাঁর সাথে। কিন্তু তুই এমন পাগলামি করিস না প্লিজ! তোর ভাইয়াকে দিয়ে যেভাবেই হোক একটা কিছু ব্যবস্থা আমি করবো, কথা দিচ্ছি তোকে।’

ভ্রমর তখনো নিশ্চুপ! মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। সাড়াশব্দহীন যন্ত্রমানবীর মত অসাঢ়! উপায়ান্তর না রেহানা স্বামীকে ডেকে এনে ডাক্তার ডাকার পরামর্শ দিলো। রাসেল, স্ত্রীর কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারলো না। রুমে ঢুকে বোনের পাশে বসে খাটে বসলো। সস্নেহে ভ্রমরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,’কি হয়ছে তোর? মন খারাপ? কি নিয়ে মন খারাপ, ভাইয়াকে বল! তুই এমন মন খারাপ করে থাকলে কি ভাইয়ার ভালো লাগে?’

ভ্রমর নিঃশব্দে ভাইয়ের মুখপানে চেয়ে ডুঁকরে কেঁদে উঠলো। দুহাতে ভাইয়ের গলা জড়িয়ে ধরে বললো,’আমি এখন বিয়ে করবো না ভাইয়া। আপনি আব্বাকে বলে বিয়েটা ভেঙ্গে দিন।’

অবাক হলো রাসেল! হতভম্ভ, প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে স্ত্রীর মুখের দিকে চেয়ে রইলো। ভ্রমরের সাথে নির্ঝরের প্রনয় ঘটিত ব্যপার যে এতটা মারাত্মক আকার ধারণ করছে সেটা ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি সে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,’বলবো। নিশ্চয়ই বলবো। এক্ষুনি গিয়ে আব্বাকে বলবো বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য। তার আগে তুই শান্ত হো।’

রাসেল মিথ্যে আশ্বাস দিয়েছে ভ্রমরকে। বিয়ে ভাঙ্গার পরিকল্পনা তাঁর মাথাতেই নেই! তাছড়া এইমুহূর্তে ছেলেপক্ষকে কোন ভরসায় বিয়ের ভাঙার কথা বলবে তাঁরা? নাফিসা রহমান তো না করেই দিয়েছেন। তাঁর আশায় বসে থেকে এতভালো একটা পাত্র হাতছাড়া করার কোন মানে হয় না। ভ্রমর অবুঝ, এখন হয়তো বুঝতে পারছে না কিন্তু একবার বিয়ে হয়ে গেলে আপনাআপনিই সব ভুলে যাবে। ইশারায় রেহানাকে ভ্রমরের পাশে বসতে বলে নিঃশব্দে উঠে চলে গেলো রাসেল। ভ্রমর তখনো নিঃশব্দে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলো। রেহানা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সান্ত্বনার সুরে বললেন,’তোর ভাইয়া তো বললো বাবার সাথে কথা বলবেন। একটু ধৈর্য ধরে দেখ না, কি হয়?’

ভ্রমরের কি কান্নার শেষ আছে? বাপ ভাইকে কোনভাবে নাহয় রাজি করালো কিন্তু নির্ঝর? তাঁকে কি করে রাজি করাবে? ভ্রমর ছোট বাচ্চাদের মত ফুঁপিয়ে উঠে বললো,’কিন্তু উনি তো ( নির্ঝর) রাজি হবেন ভাবী।’

রেহানা বিরক্ত হলো। রাগত স্বরে বললো,’জানিসই যদি, তবে এমন ছেলের জন্য কান্নাকাটি করছিস কেন?’ ভ্রমর জবাব দিলো না। রেহানা ভুল কিছু বলে নি। নির্ঝরকে তাঁর ভুলে যাওয়া উচিৎ! কম চেষ্টাও করে নি ভ্রমর! কিন্তু লাভ হয় নি! পাষন্ডটা তাঁর হৃদয়ে এমনভাবে গেঁথে গেছে যে প্রতিটা নিঃশ্বাসের সাথে তাঁকে হারিয়ে ফেলার ভয় ভ্রমরের সমস্ত পৃথিবীটাকে অন্ধকার করে দেয়। হৃদস্পন্দন যেন বন্ধ হয়ে আসে! সবকিছু ব্যর্থ মনে হয়!

রেহানা বেশিক্ষণ রাগ ধরে রাখতে পারলো না। ভ্রমরের কান্না দেখেই রাগ পড়ে গেলো। মায়াভরা, মোলায়েম কন্ঠে বললো,’তুই কান্না বন্ধ কর। আমি কথা বলবো তাঁর সাথে! যেভাবেই হোক একটা ব্যবস্থা করবোই।’


রাত বারোটা, পড়াশোনা শেষ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো নির্ঝর। ফোনের রিংটোন বেজে উঠতেই দেখলো আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে।

রিসিভ করে নির্ঝর সালাম দিতেই সালামের উত্তর দিয়ে নিজের পরিচয় জানালেন কলদাতা। বলা বাহুল্য, তিনি আর কেউ নন, ভ্রমরের ভাবী রেহানা! নির্ঝর অবাক হলো! এত রাতে ভ্রমরের ভাবী তাঁকে কেন কল দিয়েছে? নিজের বিস্ময়ভাব চেপে রেখে বিনয়ী কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো ,’কেমন আছেন?’

-‘আছি আলহামদুলিল্লাহ! আপনি কেমন আছেন?’

নির্ঝর আন্তরিক গলায় হাসিমুখে বললো,’ভালো আছি।’
তারপর টুকটাক কিছু সৌজন্যমূলক কথাবার্তার পরে রেহানা আজকে দুপুরের ঘটনা সব খুলে বললো নির্ঝরকে। নির্ঝর চুপ করে মন দিয়ে শুনে গেলো। একটা কথাও বললো না। রেহানার কথা শেষে চোখ বন্ধ করে নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরলো সে। গম্ভীর গলায় বললো,’এই ক্ষেত্রে আমার করণীয়?’

অবাক হলো রেহানা। নির্ঝর কি সত্যিই বুঝতে পারছে না তাঁর কি করণীয়? নাকি সব বুঝেও না বোঝার ভান করছে! এতটা নিষ্ঠুর একটা মানুষ হয় কি করে? ভ্রমরের দিকে চাইলেন। মেয়েটা মুখ হাত চাপা দিয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে। রেহানা থমথমে গলায় বললেন,’ও কেন এমন পাগলামি করছে তুমি বুঝতে পারছো না?’

-‘পারছি। কিন্তু সব পাগলামিকে প্রশ্রয় দেওয়া আমি মোটেও যুক্তিযুক্ত মনে করি না!’

নির্ঝরের এমন যুক্তির বিপরীতে রেহানা উত্তর খুঁজে পেলো না। যুক্তিতে না পেরে ক্ষেপে গেলো সে। আক্রোমণাত্বক ভঙ্গিতেই চেঁচিয়ে উঠে রাগত স্বরে বললো,’এত অহংকার কিন্তু ভালো নয়। লেখাপড়া আমিও কমবেশি করেছি।’

নির্ঝর হতাশভাবে নিঃশব্দে হাসলো! রেহানা কত সহজেই রেগে গেলো তাঁর ওপর! শান্ত গলায় বললো,’জি। সেটা আপনার কথা শুনেই আমি বুঝতে পেরেছি। তাই আমার ধারণা আমার সমস্যাটা আপনি বুঝবেন। আপনার ননদকে বুঝিয়ে তো কোন লাভ নেই, সে বুঝবে না। তাঁর ধারণা রূপ দিয়েই সে, সমস্ত পৃথিবীকে জয় করে ফেলতে পারবে।’

রেহানা জবাব দিলো না। ভ্রমর ফুঁপিয়ে উঠলো। নির্ঝর চুপ করে শুনে গেলো গেলো ঐ পাশের মানুষটার ফোঁপনোর শব্দ! নিজের কথার সমাপ্তি টেনে বললো,’এসব কথা এখন আর বলতে চাইছি না। আপনার ননদ বোধহয় কাঁদছেন, আপনি বরং তাঁর দিকে নজর দিন! আশাকরি আপনার যা বলার ছিলো বলা হয়ে গেছে? ‘

শান্ত হওয়ার বদলে উলটো ক্ষেপে গেলো রেহানা। গলাটা আরেকটু চড়িয়ে বললো,’আমার ধারণা আপনি খুব বেশি পড়াশোনা করলেও ভালো মানুষ হতে পারেন নি। একজন ভালো মানুষ কখনো এতটা আবেগ অনুভূতিহীন হতে পারে না।’

এবারেও অপমানটা খুব সহজেই হজম করে নিলো নির্ঝর। দীর্ঘশ্বাসটা ছাড়তে গিয়ে চেপে গেলো। মুচকি হেসে বললো,’আপনি খামোখা আমার ওপর রেগে যাচ্ছেন!’

-‘রাগবো না। আপনি আমাদের মেয়েকে দিনরাত কষ্ট দিয়ে বেড়াবেন আর আমরা আপনাকে পুঁজো করবো?’

-‘তো কে বলেছে তাঁকে কষ্ট পেতে? আমি বলেছি? একটা অমানুষের জন্য কেন সে কষ্ট পাচ্ছে? এসব কষ্ট পাওয়ার নাটক না করে নিজেকে প্রমাণ করার যদি সামান্যতম চেষ্টাও করতো তাহলেও অন্তত বুঝতাম শুধু রূপই নয় খানিকটা গুণও আছে। কিন্তু সে কি করছে? কেঁদে কেটে বুক ভাসিয়ে ফেলছে, মাঝরাতে আমার ঘরের দরজায় এসে চেঁচামেচি করছে, রোদের মধ্যে ছাদে বসে থেকে নিজের ভালোবাসা প্রমাণ করতে চাইছে। এসব আমাকে সমর্থণ করতে বলছেন আপনি?’
এইটুকু বলে দম দিলো নির্ঝর! জোরপূর্বক নিজেকে শান্ত করে নরম, অসহায় গলায় বললো,’কেঁদেকেটে দুনিয়াশুদ্ধ লোককে দেখালেই প্রমাণ হয়ে যায় না কে কাকে কতটা ভালোবাসে। যাইহোক, এই ব্যপারে আমি আর কিছু বলতে চাই না। আপনাদের মেয়ে কি করবে না করবে সেটা একান্তই আপনাদের ব্যপার! এখানে আমার বলার কিছুই নেই। আমি শুধু নিজের কথা বলেছি। এসব ফালতু ইমোশনে আমি মোটেও বিশ্বাসী নই।’
কথাগুলো ফেলে দিতে পারলো না রেহানা। নির্ঝর তো একবর্ণও মিথ্যে বলে নি? এবার তাঁর সমস্ত রাগ গিয়ে পড়লো ভ্রমরের ওপর! রাগে ক্ষোভে ফোন কেটে দিতে চাইলো। ভ্রমর ইশারায় বারণ করতেই ফোনটা তাঁর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,’বেহায়া! নির্লজ্জ!’ কথাগুলো নির্ঝরের কানেও গেলো। ভ্রমরের অপমানটাও নিরবে হজম করে গেলো সে। ভ্রমর ফোন কানে নিয়েই হ্যালো বলতেই গম্ভীর গলায় বললো,’এসব পাগলামির মানে কি? কি চাও তুমি? আমি সব ছেড়েছুঁড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যাই?’

ভ্রমর উত্তরের কিছু বলতে চাইলে তাকে বাধা দিয়ে বললো,’না। একদম আমার সঙ্গে কোন কথা বলবে না তুমি। পাগলছাগলের সাথে আমি কোন কথা বলবো না।’

ভ্রমরের বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসতে চাইছে। একটু আগে কান্না নিয়ে এত কথা শোনার পর নির্ঝরের সামনে কাঁদার সাহস হলো না তাঁর! ভয়ে মুখে হাত দিয়ে কান্না আটকে নিলো। শুকনো ঢোক গিলে বললো,’আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে?’

এবারেও নির্ঝর নিরাশ করলো তাঁকে। গম্ভীর গলায় বললো,’পড়াশোনা যখন করবে না তখন তোমাকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানোর চেয়ে তো বিয়ে দিয়ে দেওয়াই ভালো। ঠিক কাজই করছেন তোমার বাবা মা!’
ভ্রমর রাগলো না। অভিমানও করলো না! ছোট বাচ্চাদের মত আদারের সুরে বললো,’আমি যদি পড়াশোনা করি তবে কি আপনি আমাকে ভালোবাসবেন?’
এই কথার জবাবে, কি উত্তর দেবে নির্ঝর? সে কি বলবে ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি ভ্রমর! ভীষণ ভালোবাসি! তুমি আমার ধ্যান,জ্ঞান সমস্ত সত্তায় মিশে আছো!’ কিন্তু তারপর? গলাটা নরম হয়ে এলো তাঁর! ছোট করুণ গলায় বললো,’পড়াশোনার যদি কেবল আমার জন্য হয় তাহলে সেই পড়াশোনার কোন দরকার নেই। পড়াশোনা করতে হবে নিজের জন্যে! কেউ যেন তোমাকে ছোট করতে না পারে, তোমাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে না পারে তারজন্যে!’ কিন্তু এই জবাবে কি মন ভরে ভ্রমরের?
.
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here