ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে,পর্বঃ১০

0
1812

ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে,পর্বঃ১০
অরিত্রিকা আহানা

বোরহান সাহেব নিজের ঘরে টেলিফোনে কথা বলছেন। ভ্রমরের বিয়ে উপলক্ষে ভীষণ ব্যস্ত তিনি। একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা! আত্মীয়স্বজন কাউকে বাদ দিচ্ছেন না। সবাইকে দাওয়াত দিচ্ছেন। ভ্রমর দরজায় বাইরে দাঁড়িয়ে একবার উঁকি মেরে দেখলো বোরহান সাহেব কি করছেন। ভেতরে ঢুকার অনুমতি চেয়ে বললো,’আসবো আব্বা?’

মেয়ের গলা শুনে বোরহান সাহেব ফোন কানে রেখেই দরজার দিকে চাইলেন। হাত ইশারায় ভেতরে ঢোকার নির্দেশ দিলেন ভ্রমরকে। কথা শেষ করে ফোন রেখে মিষ্টি হেসে বললেন,’কি গো মা জননী? তোমার মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেন?’

ভ্রমর ধীরে ধীরে খাটের ওপর এসে বসলো। বাবার কথার জবাবে তাৎক্ষণিক কোন উত্তর করলো না। জবাবটা মনে মনে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বললো,’আমি এমবিবিএসটা কমপ্লিট করতে চাই আব্বা!
কাল সারারাত নির্ঝরের কথাগুলো নিয়ে ভেবেছে ভ্রমর! তাতে একটা জিনিস মোটামুটি ক্লিয়ার। পড়াশুনা না করলে নির্ঝরকে পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই ভ্রমরের। নাফিয়া রহমান কোনদিন তাঁকে ছেলের বউ হিসেবে মেনে নেবেন না। অবশ্য পড়াশোনা করলেও যে মেনে নেবেন তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। সেজন্যই হয়ত তো নির্ঝর গতকাল ভ্রমরের প্রশ্নের জবাবটা এড়িয়ে গেছে! কিন্তু তবুও মনের ভেতরে খানিকটা সম্ভাবনার আলো নিয়ে পিতার দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে ভ্রমর! এইমুহূর্তে এই সামান্য সম্ভাবনা টুকু ছাড়া আর কোন সম্বল নেই তাঁর! চারদিক থেকে হতাশা, নিরাশায় রিক্ত শূন্য সে!
তবুও একটাবার চেষ্টা অন্তত করে দেখতে চায় ভ্রমর! বাকিটা ভাগ্যের ওপর!

মেয়ের কথা শুনে বোরহান সাহেব হাসলেন। মোলায়েম কন্ঠে বললেন,’অবশ্যই করবে। কেন করবে না? পড়াশোনা করার জন্যই তো তোমাকে ডাক্তারিতে ভর্তি করিয়েছি? আমার কত আশা আমার মেয়েটা বড় ডাক্তার হবে? আত্মীয়স্বজন সবাই আমাকে ডাক্তারের বাবা বলে ডাকববে। অবশ্যই পড়াশুনা করবে মা!’

কিন্তু ভ্রমরের পরের কথাটুকু বোরহান সাহেবের হাসি গায়েব করে দিলো। পিতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বহুকষ্টে বুকের ভেতরে খানিকটা সাহস সঞ্চয় করলো ভ্রমর। পূর্বের কথার রেশ টেনে বললো,’আপনি এই বিয়েটা ভেঙ্গে দেন! আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। আগে পড়াশুনা শেষ করতে চাই তারপর বিয়ে!’

নিমিষেই হাসি উধাও হয়ে গেলো বোরহান সাহেবের মুখ থেকে। মিনিটখানেক চুপ করে মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে রইলেন তিনি। শান্ত গলায় বললেন,’বিয়ের পরেও তো পড়ালেখা করা যায় মা? তারেকের বাবার সাথে আমার কথা হয়েছে তোমার পড়াশুনা নিয়ে তাদের কোন আপত্তি নেই!’

তারেক ভ্রমরের হবু বর। বিয়ের আগেই বোরহান সাহেব তারেকের বাবার সাথে ভ্রমরের পড়াশুনার ব্যপারে সবরকম কথাবার্তা ফাইনাল করে নিয়েছেন। বোরহান সাহেব না থেমেই বললেন,’আমি জানি বিয়ের পরে পড়াশুনা করাটা হয়ত একটু কঠিন, ঝামেলার ব্যপার! একদিকে সংসারের চাপ অন্যদিকে পড়াশোনা কিন্তু তারেক যদি অশিক্ষিত হতো তাহলে হয়ত একটা ভয় ছিলো, তাঁরা তোমার পড়াশুনা নিয়ে আপত্তি করবে। কিন্তু তেমন তো নয় মা? তারেকের বাবা নিজে শিক্ষিত লোক। তাঁর ছেলেরা সবাই শিক্ষিত, ছেলের বউয়েরাও সবাই শিক্ষিত! অতএব এই ব্যপারে চিন্তার কোন কারণই নেই। আমি হলফ করে বলতে পারি,তাদের ছোট ছেলের বউকেও তারা অশিক্ষিত রাখবে না।’

‘কথা আছে অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকায়!’ ভ্রমরের অবস্থাও ঠিক তাই। নির্ঝরকে পাওয়ার এই একটা মাত্র আশাই ছিলো তাঁর! সেটাও নিরাশা হয়ে গেলো! বাবার যুক্তির বিপরীতে কথা খুঁজে পেলো না সে। চোখভর্তি পানি, আর একবুক হতাশা নিয়ে বোরহান সাহেবের ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। নিজেকে জগতের সবচেয়ে বড় অসহায়, দুর্ভাগা মনে হচ্ছে! কেউ তাঁর আকুলতাটুকু বুঝলো না! কেউ না!

বোরহান সাহেব কিন্তু সবই বুঝলেন! কিন্তু বুঝে লাভ কি? কি-ই বা করার আছে তাঁর। নাফিসা রহমান কোনদিন ভ্রমরকে ছেলের বউ হিসেবে মেনে নেবেম না। তাঁঁর আশা করে থেকে এতভালো একটা পাত্র হাতছাড়া করার কোন মানে হয় না। তাই যে করেই হোক ভ্রমরকে ঐদিক থেকে ফেরাতে হবে!


লম্বা টেবিলের ওপর নানারকমের গুরুত্বপূর্ন কাগজপত্র মেলে রাখা হয়েছে। তার ওপর ঝুঁকে কিছু একটা কোট করছে নির্ঝর। ভ্রমরের উপস্থিতি টের পায় নি সে। নিবিষ্টমনে নিজের কাজ করে চলেছে। আগামীকাল ইংল্যান্ডের একটা অনলাইন পোর্টালে তার লিখা একটা আর্টিকেল জমা দেওয়ার কথা। এই আর্টিকেলের এর ওপর তাঁর ক্যারিয়ারের অনেক বড় একটা অংশ ডিপেন্ড করছে। কালই লাস্ট ডেইট। সুতরাং নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে আর্টিকেলটা যেন পুরোপুরি নিখুঁত, দৃষ্টিপটু এবং ইউনিক হয় সেই চেষ্টাই করছে সে।

ভ্রমর টেবিলের ওপর প্রান্তে এসে দাঁড়ালো। বিয়ের আগে নাফিসা বেগমের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে সে। অনেকদিন এই বাড়িতে ছিলো তাই কর্তব্যের খাতিরে হলেও আসতে হলো তাঁকে। সঙ্গে বোরহান সাহেবও এসেছেন। তিনি এসেছেন দাওয়াত দিতে। বসার ঘরে কিছুক্ষন কথাবার্তার পর পানি খাওয়ার অযুহাতে উঠে গেলো। ডাইনিং এসে চুপিচুপি উপরতলার সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করলো।

নির্ঝরের ঘরের দরজায় উঁকি দিতেই দেখলো টেবিলের ওপর একগাদা কাগজ পত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে কি যেন লিখছে সে। নিঃশব্দে ভেতরে ঢুকলো ভ্রমর! কিন্তু হাতের চুড়ি আওয়াজ রিনিঝিনি করে বেজে উঠলো। অবাক করা বিষয় হলো নির্ঝর এর পরেও টের পেলো না তার সামনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। একা, জনমাবহীন জঙ্গলে মানুষ যেমন গভীর ধ্যানে মগ্ন থাকে তেমনি আর্টিকেল নিয়ে ডুবে আছে সে। ভ্রমর অবাক হলো! তাঁর চুড়ির টুংটাং আওয়াজ কি নির্ঝরের কানে গেছে? বোধহয় যায় নি। গেলে নিশ্চই মাথা তুলে চাইতো?

-‘আপনার সাথে আমার কিছু কথা বলার আছে।’

নির্ঝর কপাল কুঁচকে ফেললো। ঘাড়টাকে সামান্য উঁচু করে অবাক হয়ে সম্মুখবর্তিনীর দিকে চাইলো সে। বিস্মিত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে পুনরায় নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। ভ্রমর কেন এসেছে, কার সঙ্গে এসেছে, কিচ্ছু জিজ্ঞেস করলো না।

অপমানিত বোধ করলো ভ্রমর। গলাটা সামান্য উঁচিয়েই বলল,’জরুরী কথা আছে।’

-‘বলো।’

-‘আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?’

প্রশ্নটা শুনে অবাক হওয়ার কথা ছিলো নির্ঝরের কিংবা অবজ্ঞা ভরে খানিকটা হাসার কথা ছিলো। কিছুই করলো না সে! খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললো ‘না।’

-‘কেন?’

-‘কারণ আমি তো এখন বিয়ে করবো না।’

-‘এখন বিয়ে করবেন না নাকি আমাকে বিয়ে করতে চান না?’

-‘দুটোই। প্রথমত, বিয়েশাদীর ঝামেলা আমার একদম ভালো লাগে না। আমি এখ।আমার ক্যারিয়ারের দিকে ফোকাস করতে চাই। এইমুহূর্তে অন্যকোন চিন্তাভাবনা আমার মনোযোগে বিঘ্ন ঘটাবে।’

নির্ঝরকে দ্বিতীয় কারণটা বকতে না দিয়েই ভ্রমর তড়িঘড়ি করে বললো,’আমি আপনাকে কোন যন্ত্রনা করবো না।’

কথাটা বলার পর নিজের কাছেই অনেক বেশি ছেলেমানুষি শোনালো ভ্রমরের। তার সুবাদেই নির্ঝরও খানিকটা ছেলেমানুষির সুরে বললো,’ঠিক আছে আমি ভেবে দেখবো।’

কথাটা সে ভ্রমরকে দ্রুত বিদায় করার জন্যই ইচ্ছে করে বলেছে। কিন্তু ভ্রমর বুঝলো না। কিংবা অবহেলাটুকু গায়ে মাখলো না। মধুর কন্ঠে বললো,’একটা কথা অনেকদিন ধরেই বলবো বলবো করেও বলতে পারি নি। কিন্তু আজ বলবো, কথাটা হয়ত আপনি হয়ত জানেন। আর জানেন বলেই হয়ত আমাকে এতটা অবহেলা করেন,কিন্তু আজকে আমি কথাটা বলতে চাই! আপনার প্রতি আমার অনুভূতিগুলো নিছক আবেগ কিংবা পাগলামি ছিলো না। আমি আপনাকে ভালোবাসি। সত্যিই ভালোবাসি। এতটা ভালোবাসি যে আপনি কল্পনাও করতে পারবে না!’

হৃদপিন্ডটা যেন ধড়াস করে লাফিয়ে উঠলো নির্ঝরের। জ্ঞাত সত্যটাও হঠাৎ মধুর শোনালো আজকে! একখণ্ড ফাল্গুনী বাতাস যেন ছুঁয়ে দিলো তার সমস্ত হৃদয়টাকে! মাথা নিচু রেখেই নিরবে হাসলো সে। এবং অবশ্যই সেটা ভ্রমরের অলক্ষ্যে।
ঠিক তখুনি আবার যেন পাষণ্ড বিবেকটা আবার মাথা চাড়া উঠে উঠলো। কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,’ইউ শুড লিভ হার নির্ঝর! ইউ শুড লিভ হার!’

চোখেমুখে কৃত্রিম বিস্ময় ফুটিয়ে তুলে অবাক হয়ে ভ্রমরের দিকে তাকালো সে। হাতের কলমটা রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ভ্রমর নতমুখে মেঝের দিকে চেয়ে ছিলো। নির্ঝর তাঁর দিকেই চেয়ে আছে বুঝতে পেরে বললো,’আমার বলা ভালোবাসির বদৌলতে ভালোবাসি আপনি বলবেন না সেকথা আমি জানি!’

-‘তো?’

ভ্রমর কিছুক্ষন সময় নিয়ে বললো,’এই বিয়েতে আমার মত নেই। আমি পড়তে চাই, কিন্তু কেউ আমার কথা শুনছে না!’
জবাবে নির্ঝর গম্ভীর গলায় বললো,’তোমার কেন মনে হলো আমি তোমার কথা শুনবো?’

অবাক হলো ভ্রমর। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,’কারণ আমার মনে হয়েছিলো আপনি আমাকে ভালোবাসেন!’

-‘মনে যখন হয়েছে তখন আর কি করা? আমি তো আর তোমার মনে হওয়াটাকে বদলে দিতে পারবো না। সেই ধৈর্যও আমার নেই। আমার সময়ের দাম আছে। তোমার হয়ত কোন কাজকর্ম না থাকতে পারে কিন্তু আমার আছে। এইমুহূর্তে প্রতিটা সেকেন্ডের মূল্য আমার কাছে অনেক বেশি। তাই প্লিজ তুমি এখন এইখান থেকে যাও! এসব ফালতু বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর মত সময় আমার নেই, আমাকে আমার কাজটা শেষ করতে হবে।’

এইকথার জবাবে ভ্রমর নিরব, কাতর নয়নে চেয়ে রইলো কেবল! নির্ঝর আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করে দিয়ে তার হৃদয়টাকে! ঝাপিয়ে আসা কান্নাটাকে চেপে রেখে বললো,’আপনি এত করে বলেন কিন্তু তারপরেও কেন আমি আপনার কথাগুলো বিশ্বাস করতে পারি না বলুন তো? এতকিছুর পরেও কেন আমার মনে হয় আপনি আমাকে ভালোবাসেন?

নির্ঝর চশমাটা খুলে টি-শার্টের কোনা দিয়ে পরিষ্কার করতে করতে বললো,’কারণটা সেদিন তোমার ভাবীকেও বলেছি। তুমি যখন শুনতে চাইছো আবার বলছি। তোমার এমন মনে হওয়ার একটাই কারণ! তুমি ভেবেছো তোমার শরীরের সুন্দর সুন্দর কার্ভগুলো দিয়েই সমস্ত পৃথিবীকে জয় করে ফেলতে পারবে তুমি!’

ভ্রমর অবাক হয়ে বললো,’আপনি এভাবে আমাকে অপমান করছেন?

-‘তোমার অপমানবোধ আছে বলে তো আমার মনে হয় না।’

ভ্রমর জবাবে কিছু বলতে যাচ্ছিলো নির্ঝর তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,তোমার বিয়ের যেন আর কয়দিন বাকি?’

-‘তিনদিন।’

নির্ঝর বিজ্ঞের মত মাথা দুলিয়ে বললো,’হুম! তিনদিন। মানে তিনটে রাত! এখনো অনেক দেরী! তো? প্ল্যান কি তোমার?’

প্রশ্নটার আগাগোড়া কিছুই বুঝলো না ভ্রমর। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো নির্ঝরের মুখের দিকে। মনে মনে ভ্রমরকে কিছু অশালীন কথাবার্তা বলার প্রস্তুতি নিয়েই প্রশ্নটা করেছিলো নির্ঝর। কিন্তু ভ্রমরের সহজ, সরল, অবুঝের মত মুখটা তার সমস্ত কিছু ওলটপালট করে দিলো। এবার যেন তাঁর বিবেকটাই তাঁকে বাধা দিয়ে বললো,’এত বেশি নিষ্ঠুর হয়ো না নির্ঝর! এর দায়ভার যে তোমাকে টানতে হবে!’ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,’বেরিয়ে যাও ভ্রমর! দোহাই তোমার! বেরিয়ে যাও!’
বেরলো না ভ্রমর! জ্বলজ্বল করে উঠলো তাঁর চোখজোড়া। সক্রোধে দুপা এগিয়ে গেলো নির্ঝরের দিকে।
ততক্ষণে নিজেকে আবারো সামলে নিয়েছে নির্ঝর। বিন্দুমাত্রেও পিছে সরলো না সে। জায়গায় দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ভ্রমরের দিকে চেয়ে রইলো। ভ্রমর কতটা এগোতে পারে দেখতে চায় সে! তার কঠিন দৃষ্টির দিকে চেয়ে আর এগোতে সাহস হলো না ভ্রমরের। থমকে গেলো! জায়গায় দাঁড়িয়ে ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো,’আপনার চোখ বলছে আপনি আমাকে ভালোবাসেন! কিন্তু আপনি কেন বলছেন না?

ভ্রমরের কথার জবাবে নির্ঝর কিঞ্চিৎ তীরস্কারের সুরে বললো,’তারপর? আর কিছু নেই? এটুকুই? কেন আমি তোমাকে ভালোবাসি সেটা বলবে না?’
তারপর ভ্রমরের উত্তরের অপেক্ষা না করে সে নিজেই দুপা এগিয়ে গেলো ভ্রমরের দিকে। ভ্রমরের পা থেকে মাথাপর্যন্ত একঝলক তাকিয়ে বললো,’কি হলো কথা বলছো না কেন? আমি যদি ভুল না হই, তবে উত্তরটা নিশ্চয়ই তোমার শরীরের এই সুন্দর সুন্দর কার্ভগুলো? তোমার নব যৌবন? সেই জন্যই তো মাঝরাতে আমার ঘরে ছুটে এসেছিলে তাই না? কি ভেবেছিলে আমি হামলে পড়বো?’

মাথা নিচু করে ফেললো ভ্রমর। সীমাহীন লজ্জায় তাঁর সমস্ত শরীর পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে! অসহায় অশ্রুসজল কন্ঠে বললো,’দয়া করে আর নিজেকে ছোট করবেন না প্লিজ? আমি জানি আপনি আমার ভালো চান। কিন্তু তাই বলে নিজেকে এতটা ছোট করার দরকার নেই! আমি বেরিয়ে যাচ্ছি!’

দাঁতেদাঁত চেপে ধরলো নির্ঝর। তাঁর সমস্ত চেষ্টা বিফল! এতকিছুর পরেও, এত জঘন্য কথাবার্তা বলার পরেও ভ্রমর কেন তাঁকে ভুল বুঝলো না? কেন? এতকিছুর পরেও কি করে সে নির্ঝরের ভেতরটাকে অকপটে পড়ে নিলো? রাগত স্বরে বললো,’আমি মোটেও নিজেকে ছোট করছি না। যা বলেছি একদম ঠিক বলেছি! নতুবা বিয়ের তিনদিন আগে কোন সাহসে তুমি আমার ঘরে এসেছো?’ কথা শেষ করে সজোরে ধমক দিলো সে। ভ্রমরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ইশারায় তাঁকে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বললো,’যাও বেরোও। আউট!’
ধমকের সাথে কেঁপে উঠল ভ্রমর! হতভম্ভ, বিস্ফোরিতে নয়নে চেয়ে রইলো নির্ঝরের কঠিন মুখখানার দিকে চাইলো। চোখের পানি আপনাআপনি গড়িয়ে পড়লো। নির্ঝর পুনরায় ধমক দিয়ে বললো,’কি হলো কি বলেছি শুনতে পাও নি? বেরোতে বলেছি না তোমাকে?’
ভ্রমর বেরিয়ে যাওয়ার সময় ছলছল চোখে একবার নির্ঝরের মুখের দিকে চেয়ে বললো,’ঠিক আছে যাচ্ছি! কিন্তু এই শেষ! জীবনে কোনদিন আর আপনার কাছে আসবো না আমি! মরে গেলেও না! আপনি একটা নিষ্ঠুর! আপনার হৃদয় বলে কিচ্ছু নেই।’
নির্ঝর নিজের জায়গা থেকে একপাও নড়লো না। শান্ত, গম্ভীর গলায় ইশারায় দরজা দেখিয়ে বললো,’আউট!’
বেরিলো গেলো ভ্রমর! সে বেরিয়ে গেলে চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো নির্ঝর! কিন্তু পারলো না! মাথায় আগুন জ্বলছে! রাগে টেবিলের কাগজপত্র সব ছুঁড়ে ফেলে বললো,’আমি তোমাকে খুন করবো ভ্রমর!’
.
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here