আমার হৃদয়ে তুমি,পর্ব৬
Tanisha Sultana (Writer)
রাফিন বারবার কল দিচ্ছে মারুকে কিন্তু মারু ফোন তুলছে না। খুব কষ্ট হচ্ছে মারুর। এবার মারু ফন ধরে
“মারু কতোবার কল দিয়েছি তোমায়। ফোন কেনো তুলছো না
মারু শান্ত গলায় বলে
” এই পান্ত সেই পান্ত যাকে আমরা সাত বছর আগে পানির সাথে মিশিয়ে বিশ খাইয়ে ছিলাম।
রাফিন মোটামুটি কিছুটা শক খায়
“পান্ত বেঁচে আছে
” হুমমম
“এবার তো তোমাকে ডিরেক্ট বিয়ে করে নিয়েছে। মারু তুমি কালকেই চলে আসো। মিথ্যে সম্পর্কে আর থাকতে হবে না।
” রাফিন কি করে যাবো
“আমি কিচ্ছু জানি না। তুমি আসবে মানে আসবে
রাফিন ফোন কেটে দেয়। মারুফা এবার পান্তর সেই ডাইরিটা হাতে নিয়ে ফ্লোরে বসে। পাসওয়ার্ড মারুফা ইয়াসমিন দেয় খুলে যায়। প্রথম পৃষ্ঠায় মারু পাঁচ বছরের একটা ছবি আঁকানো আর নিচে লেখা
“আজ একটা ছোট্ট পরিকে দেখলাম। আমার পরি। এতো কিউট। দেখলেই মনটা জুরিয়ে যায়।
দ্বিতীয় পৃষ্ঠা উলটানোর আগেই কলিং বেল বাজে। মারু দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। পান্ত একটা নতুন মেয়েকে নিয়ে এসেছে।
মারুকে পাশ কাটিয়ে ওরা ভেতরে ঢুকে। আজকের মেয়েটা সেদিনের চেয়েও বেশি কিউট। ওরা রুমে ঢুকতে যায়
” এক মিনিট
ওরা দাঁড়িয়ে যায়। মারু ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। পান্তর চোখ লাল হয়ে আছে। মনে হচ্ছে জ্বরটা বেরেছে।
“কিছু বলবে
মেয়েটা বলে
” আপনি জানেন পান্ত বিবাহিত। আমি ওর বউ।
মেয়েটা একটু হেসে বলে
ফাজলামি করো না মারু। তুমি পান্তর বোন সেটা আমি জানি।
পান্ত দাঁত কেলিয়ে বলে
“ভাই আর ভাইয়ের হবু বউকে ডিস্টার্ব করো না। যাও আমাদের জন্য খাবার বানিয়ে নিয়ে আসো।
ওরা রুমে ঢুকে। মারুর মুখের সামনে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়।
” আমি বোন। কি রকম ছেলেরে এটা। জ্বালিয়ে মারবে আমায়। আমি একটা সুযোগ চায়। জানি সেটা আমি কখনো পাবো না।
মারু ওদের দুজনের জন্য রান্না বসায়। রান্না শেষ করে ফ্রেশ হতে যায়।
“আমিই মনে হয় একমাত্র মেয়ে যে স্বামীর গার্লফ্রেন্ডের জন্য যত্ন করে রান্না করছি
মারু মনে মনে কথাটা ভেবে হেসে ফেলে
” একটা সময় পাগলা কুকুরের মতো আমার পিছনে ঘুরতো পান্ত। আর এখন
“মারু খাবার সার্ভ করো
পান্তর ডাকে মারু ভাবনা থেকে বেরিয়ে খাবার বেরে দিতে থাকে। আজকে পান্তর গালে হাতে শার্টে লিপস্টিকের দাগ লেগেছে।
মেয়েটা পান্তকে খাইয়ে দিচ্ছে আর নিজে খাচ্ছে। মারু দাঁড়িয়ে দৃশ্যটা দেখছে।
” আপু আপনার লিপস্টিক টা না লেপ্টে গেছে। পেতনি পেতনি লাগছে আপনাকে
মেয়েটা রেগে যায়। পান্তকে ঠিক করে দিতে বলে। পান্ত হাত দিয়ে মুছে ঠিক করে দেয়।
মারুফার রাগ হয়
“ছোট বোনের সামনে কেউ গার্লফ্রেন্ডের সাথে রোমাঞ্চ করে? কি শিখবে ছোটরা
” আমি তো তোমাকে শেখানোর জন্যই এমন করছি। যাতে তুমি তোমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে এমন করতে পারো
পান্ত বাঁকা হেসে বলে।
“পান্ত ঔষুধ খেতে হবে তোমায়। তোমার ঔষুধ কই
মেয়েটা বলে
” ঔষুধ খেতে হবে না। কই মাছের প্রাণ সহজে মরবো না। তুমি একা যেতে পারবে না কি ড্রপ করে দেবো
“আমি একাই যেতে পারবো। আমি ঔষুধ এনে তোমাকে খাইয়ে তারপর যাবো
” তোমাকে এতো কষ্ট করতে হবে না।
“আমি করবো
” ঠিক আছে আমি সুমাকে দিয়ে ঔষুধ আনিয়ে খেয়ে নেবো হ্যাপি
মেয়েটা মুচকি হেসে বলে
“হুম।
মারু দাঁড়িয়ে কথা শুনছিলো
” একটা বাইরের মেয়ে যাকে পান্ত ব্যবহার করছে। সে কতোটা ভালোবাসে কেয়ার করে পান্তর। আর আমি ওর বউ হয়েও একটুও ভাবি না ওর কথা। সত্যি আমি বেইমান। আমি কখনো হ্মমা পাওয়ার যোগ্য না। কিন্তু হ্যাঁ আমি এখানেই থাকবো। একবার যে অন্যায়টা করছি পান্তর সাথে সেটা দ্বিতীয় বার করবো না।
মারুর চোখে পানি এসে যায়। সাথে সাথে চোখ মুছে ফেলে।
জ্বরে পান্তর গা পুরে যাচ্ছে। তবুও পান্ত মদ আর সিগারেট খাচ্ছে। মারু দরজার বাইরে থেকে পান্তকে দেখছে।
“এরকম একটা ছেলেকে আমি কি করে বিশ খাইয়ে ছিলাম। রাফিনের কথায় এমন করেছিলাম আমি।
” মারু
পান্তর ডাকে মারু দৌড়ে পান্তর কাছে যায়
“আমি সেদিন জানতাম না তোমার সাথেই আমার বিয়ে হচ্ছে। জানলে আমি কখনোই তোমাকে বিয়ে করতাম না। আমি বাঁচতে চাই মারু। মরতে চায় না। স্বাভাবিক একটা জীবন চাই আমার। যেখানে তুমি নামক কোনো বেইমানের গল্প থাকবে না। প্লিজ দ্বিতীয় বার আমার খাবারে কিছু মিশিয়ে আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করো না। তোমার বিষের প্রভাবে এক বছর হাসপাতালে থেকেছি আমি। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লরে বেঁচে ফিরেছি।
পান্ত দম নেয়। মারুর চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে।
” তুমি যদি একবার আমায় বলতে তুমি আমাকে ভালোবাসো না আমি তোমার লাইফ থেকে চলে যেতাম কিন্তু তুমি কি করলে আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করে তোমার অন্য প্রেমিকের সাথে মিলে আমার পানিতে বিষ মিশিয়ে দিলে।
পান্ত মদের বোতলটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেলে। মারু কেঁপে ওঠে।
পান্ত মারুর গলা চেপে ধরে
“এতো বেইমান কেনো তুই? ছেলেদের সাথে মন নিয়ে খেলতে ভালো লাগে। আরে তখন তো তুই ছোট ছিলি। ছোটরা নিষ্পাপ হয় আর তুই ছোট থেকেই খারাপ। ছলনাময়ী, বেইমান
পান্ত মারুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ভাঙা কাঁচের ওপর মারুর হাত আর মুখ পরে। হাতে আর কাঁচ বিধে। কপালেও একটা কাঁচ ফুটে যায়।
পান্ত চোখ বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই ভুলতে পারছে না। মারুর হাত আর মাথা থেকে রক্ত ঝরছে সেদিকে মারুর খেয়াল নেই। “শরীরের ব্যাথার চেয়ে মনের ব্যাথাটা বেশি কষ্ট দেয়”
সকালে মারু চোখ খুলে দেখে বিছানায় শুয়ে আছে। হাতে মাথায় ব্যান্ডেস করা। মারু একটু মুচকি হাসে
“পান্ত এখনে আমাকে ভালোবাসে
” ভুল
মারু ড্রেসিং টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখে পান্ত মাথা আচরাচ্ছে।
“পান্ত তোমাকে ভালোবেসে না। পান্তর ভালোবাসার মানুষের অভাব নেই। কাল বাড়ি যেতে হবে তিশার বিয়ে তাই ঔষুধ লাগিয়ে দিয়েছি। যাতে হ্মতটা একটু কমে। তুমি আমার সাথে যেটা করেছো আমি সেটা আমার বাড়ির কাউকে জানাতে চাই না। ওদের বিশ্বাস ভেঙে যাবে। আশা করি তুমি অন্তত আমার বাবা মায়ের বিশ্বাস ভাঙবে না। আর হ্যাঁ প্রেমিকের সাথে দেখা করতে বা কথা বলতে চাইলে আজকে দিন রাত বলো বাট কাল থেকে তিন দিন কোনো যোগাযোগ করবে না। আমার বউ কালনাগিনী এটা আমার বাড়ির কেউ যেনো না জানে। তিশার বিয়ের শেষে তুমি মুক্ত। চলে যেও। কেউ তোমায় আটকাবে না। দয়া করে এই কটা দিন কোনো বেইমানি করো না
পান্ত চলে যায়। মারুর আবার কান্না পায়।
” নাহয় আমি ভুল করেছি তাই বলে এতো কথা শুনতে হবে
মারু ফ্রেশ হয়ে কিচেনে যায়। আজ পান্ত না খেয়েই চলে গেছে। রোজ রোজ তো আর রান্না করার জন্য কাউকে ডেকে দেওয়া যায় না। মারুর এবার নিজের ওপর নিজের ই খুব রাগ হচ্ছে
“কোনো কাজের না আমি। রান্না করে ওকে খেতেও দিতে পারলাম না।
মারু আর রান্না করে না। পান্তর ডাইরি নিয়ে বসে।
” ছোট থেকেই মারুফাকে পছন্দ করতো পান্ত। পাগল ছিলো মারুফার জন্য। দিন রাত পিছনে ঘুরতো। মারু যখন ক্লাস এইটে পড়ে তখন পান্তর প্রপোজ এক্সেপ্ট করে। দুই মাস পান্তর সাথে প্রেম করে। রাফিনের সাথে মারুর সেভেন থেকে রিলেশন। রাফিনের বুদ্ধিতেই মারু পান্তকে এক্সেপ্ট করে। মারু ভেবেছিলো কিছুদিন প্রেম প্রেম খেলে পান্তকে না করে দিলে পান্ত মারুর পিছু ছেড়ে দেবে। কিন্তু হয় এর উল্টোটা পান্ত আরও বেশি করে মারুর পেছনে ঘুরে। একসময় অতিষ্ঠ হয়ে যায় মারু। রাফিন পানির সাথে বিষ মিশিয়ে মারুকে আবোলতাবোল বুঝিয়ে পান্তকে ওই পানি খাওয়াতে বলে। মারু খাইয়ে দেয়।
এটুকু ভাবতেই মারুর মাথা ব্যাথা শুরু করে।
“কি করে পারলাম আমি এটা? আমি কি করেছিলাম
মারু চিৎকার করে কান্না করে। কিন্তু আজ মারুর কান্না শোনার মতো বা শান্তনা দেওয়ার মতো কেউ নেই। নিজের করা পাপের শান্তি নিজেই ভোগ করছে।
চলবে