আমার হৃদয়ে তুমি,9 অন্তিম পর্ব

0
10436

আমার হৃদয়ে তুমি,9 অন্তিম পর্ব
Tanisha Sultana (Writer)

যে যতোটা পাওয়ার যোগ্য তাকে ঠিক ততোটাই দিতে হয়।মারু হয়ত পান্তর এতো ভালোবাসা এতো কেয়ার পাওয়ার যোগ্যই নয়।

ভালোই ভালোই মারুর একটা মেয়ে হয়। মেয়ে হওয়ার এক সপ্তাহ পরেই মারু পান্তর হাতে ডিভোর্স পেপার ধরিয়ে দেয়। তাও কোনো রিজন ছাড়া। পান্ত মোটেও অবাক হয় নি। কারণ পান্ত খেয়াল করছে মারু কন্টিনিউ রাফিনের সাথে যোগাযোগ রাখতো। মিট করতো।

পান্তও কোনো তর্ক না করে পেপারে সাইন করে দিয়েছিলো। আর যাই হোক জোর করে ভালোবাসা হয় না। জোর করে কারো মন জয় করা যায় না। পান্ত নামের এই ছেলেটি সারাজীবন চেষ্টা করে মারুর মনে যায়গা করে নিতে পারে নি। তবে এতে পান্তর কোনো অক্খেপ নেই। কোনো বেইমানের মনে থাকার কোনো ইচ্ছেও পান্তর নেই।

পান্তর ছোট্ট কুইন পরির আজ পাঁচবছর পূরণ হলো। নিজে হাতে মানুষ করেছে পান্ত মেয়েকে। মা শব্দটার সাথে মেয়েকে কখনো পরিচয় করায় নি। সার্থপর বেইমান মা না থাকাই ভালো।

“পাপা ওঠো ওপাপা ওঠো না

পান্ত ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে
” সোনা আর পাঁচমিনিট ঘুমাতে দাও

“তুমি উঠবা না কি মুখে পানি দেবো

পান্ত উঠে মেয়ের কপালে একটা কিছ করে ফ্রেশ হতে যায়। ফ্রেশ হয়ে মেয়েকে নিয়ে একটা পার্কে যায়। এই পার্কটা পরির ভীষণ পছন্দের।

এদিকে রাফিনের কাছে মারুর কিছু পিক ছিলো। রাফিন সেগুলো দিয়ে মারুকে ব্লাকমেইল করতো। পান্তকে মেরে ফেলার হুমকি দিতো। আর পান্তকে এসব কথা বললে পান্ত মারুকেই ভুল বুঝতো। তাই মারু রাফিনের কথায় ডিভোর্স পেপার দিয়ে চলে গেছিলো। স্বামী সন্তানকে বাঁচতে। তারপর রাফিনকে বিয়ে করে নিয়েছিলো। তাও রাফিন পান্তর ওপর এটাক করে। পরে মারু রাফিনের খাবারে বিষ মিশিয়ে দেয়। যদিও রাফিন বেঁচে যায়। মারুর পাঁচ বছরের জেল হয়ে যায়। আজ জেল থেকে ছাড়া পেলো

পরি পার্কে ছুটাছুটি করছে পান্ত পরিকে আটকানোর চেষ্টা করছে। পরি একটা মহিলার সাথে ঠাক্কা খায়
” আই এম সরি আন্টি ভেরি সরি
পরি এক কানে হাত দিয়ে বলে। মারু মুচকি হেসে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরতে যায়। পরি সরে যায়
“সরি পাপা ছাড়া কেউ আমায় জড়িয়ে ধরে না
মারু মুচকি হেসে গালে হাত দিয়ে বলে
” কি নাম তোমার?
“মাইসা ইবনাত পরি
” খুব সুন্দর নাম।
মারু মনে মনে ভাবে
“আমার মেয়েটাও আজ বার্থডে। আমার মেয়েটাও এতো বড় হয়ে গেছে। ইসস যদি একবার দেখতে পেতাম।

” পরি তুমি এখানে কি করছো? কোথায় কোথায় খুঁজছি তোমায়
মারু পান্তর কন্ঠ শুনে চমকে পান্তর দিকে তাকায়। পান্তর ও মারুর দিকে চোখ পরে। পরি পান্তর কাছে যায়।
“দেখো না পাপা এই আন্টিটা আমায় জড়িয়ে ধরতে গেছিলো তুমিই বলো তুমি ছাড়া কি আমি কাউকে জড়িয়ে ধরতে দেয়।
পান্ত পরির গালে হাত দিয়ে বলে
” যাও আন্টিটাকে জড়িয়ে ধরো
“কিন্তু পাপা
” এটা তোমার পাপার আদেশ
পরি মারুকে জড়িয়ে ধরে। মারু হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। একজন মাই জানে সন্তানের থেকে দুরে থাকার যন্ত্রণাটা।
“আন্টি তুমি কাঁদছো কেনো
মারু পরিকে ছেড়ে চোখের পানি মুছে বলে
” আমারও তোমার মতো পরি ছিলো হারিয়ে গেছে।
মারু পরিকে ছেড়ে দৌড়ে বেরিয়ে যায়।
“পাপা আন্টিটা এভাবে চলে গেলো কেনো
” জানি না সোনা
পান্ত পরিকে কোলে নিয়ে চলে যায়। মারু আড়াল থেকে দেখছিলো

“আমার ভাগ্য আমাকে কোথায় এনে দাঁড় করালো। পরিবার স্বামী সন্তান সব থেকেও আমার কিছু নেই। জেলে একবার পান্ত গেছিলো দেখতে। মা বাবা একবার খোঁজ ও নেয় নি। কেনো নেবে মারুফা তো খারাপ। কারো হৃদয়ে নেই আমি। কিন্তু পান্ত #আমার হৃদয়ে তুমি ছিলে আছো থাকবে। আমি আমার এই মুখ কাউকে কি করে দেখাবো। কি করে বাবা মায়ের কাছে যাবো। আর কি করেই বা পান্তর কাছে যাবো। সমস্ত সমস্যা সমাধান একমাত্র মৃত্যু।

বাসায় ফিরে পান্ত পরিকে ফ্রেশ করিয়ে ভাবতে বসে
” মারুফাকে কি হ্মমা করবো? কারণ জানতে চাইবো কেনো ও এমন করলো। ও ভালে থাকবে বলে তো কোনো প্রশ্ন ছাড়াই ওকে রাফিনের কাছে যেতে দিলাম। তাহলে কেনো ও রাফিনের সাথে এমনটা করলো যেমনটা আমার সাথে করেছিলো। মারু #আমার হৃদয়ে তুমি ছিলে আছো থাকবে। হৃদয় থেকে তোমাকে এক মুহূর্তের জন্য বের করতে পারি নি। আর জানি পারবোও না। আমার আর পরির তোমাকে খুব প্রয়োজন। ফিরবে তো তুমি। আসবে আমাদের কাছে। ছোট্ট একটা সংসার হবে তো আমাদের। না কি সেখানেও তুমি বেইমানি করবে। বিশ্বাস ভাঙবে।

এসব ভাবতে ভাবতে পান্ত ঘুমিয়ে পরে।
সকালে পরি টিভি চালায়। টিভিতে মারুফার ছবি দেখানো হচ্ছে আর বাড়ির লোকের খোঁজ করা হচ্ছে
“পাপা পাপা
পরি জোরে পান্তকে ডাকে। পান্ত দৌড়ে আসে
” কি হয়েছে
পান্ত টিভির দিকে তাকায়। মারুর রক্তাক্ত মুখটা দেখে দুপা পিছিয়ে যায়। পান্ত টিভি থেকে নাম্বার নিয়ে ওদের বলে পান্ত ওর হাজবেন্ড।

হাসপাতালের করিডোরে বসে আছে পান্তর বাড়ির লোক তার মারুর বাবা মা। পান্ত পরিকে কোলে করে বসে আছে। পরি অনবরত কাঁদছে। পারি জানেও না কেনো ওর এতো কান্না পাচ্ছে। কালকের আগে এই মানুষটাকে পরি দেখেও নাই।
পান্তর চোখেও পানি।

সবাই আজ মারুর কাছে এসেছে অথচ কেউ একটু সুপারিশ করলে মারুকে এতোদিন জেল খাটতে হতো না। জীবন্ত লাশের কেউ খোঁজ রাখে না কিন্তু মৃত লাশকে দেখতে জোনে জোনে মানুষের ভীর হয়।

রাস্তায় এলোমেলো ভাবে দৌড়াতে গিয়ে মারু এক্সিডেন্ট করেছে। ভেতর থেকে ডাক্তার বেরিয়ে আছে। পান্ত এগিয়ে যায়
“ও কেমন আছে
” ওনার হাতে বেশি সময় নেই। মেয়েকে দেখতে চাচ্ছে।

পান্ত ধীরে পায়ে পরিকে কোলে করে মাটুর কাছে যায়। টুল টেনে বসে। মারু কাঁপা কাঁপা হাতে পরির গাল স্পর্শ করে
“একবার মা বলে ডাকো না
পরি পান্তর দিকে তাকায়
” ও তোমার মা পরি
পরি কি বুঝলো কে জানে মারুর পাশে শুয়ে মারুর বুকে আলতো করে মাথা রাখে
“তোমার গায়ে রক্ত কেনো মা? ও মা
সবার মা সবাই কে কোলে নেয় আদর করে তুমি কেনো আমাকে কখনো আদর করলে না। কোলে নিলে না। খাইয়ে দিলে না। তুমি খুব বাজে মা খুব বাজে।
পরি ফুপিয়ে কাঁদছে আর বলছে। মারু পান্তর হাতটা খামচে ধরে
” মারু কি হয়েছে বলো আমায় মারু
মারু হাত ছেড়ে দেয়।
“মা ও মা কথা বলছো না কেনো ওমা

মারু আর কথা বলবে না। সারাজীবনের মতো চুপ করে গেছে। সবার সেই বিরক্তির কারণ মারু সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে। যেখানে কোনো রাফিন থাকবে না পান্ত থাকবে না। যেখানে কেউ মারুকে ছলনাময়ী বেইমান বলবে না। আবার কেউ ভালোবেসে বলবে না #আমার হৃদয়ে তুমি। ছোট বেলার একটা পাপ মারুকে সারাজীবন কষ্ট দিলো।

মারুকে কাফনে মুড়িয়ে খাটিয়ায় শুয়িয়ে রাখা হয়েছে। সবাই কাঁদছে। রাফিনও এসেছে মারুকে দেখতে। আজ আর রাফিন বলছে না মারু তুমি আমার সাথে চলো। থাকবে না এখানে। পান্ত একটু দুরে বসে মারুফাকে দেখছে। শেষ দেখা। আর কখনো দেখতে পাবে না। পরি এতোখন কাঁদলেও এখন বাবার কোলে বসে মাকে দেখছে শেষ দেখা। মায়ের আদর ভালোবাসা কিছুই জুটলো না পরির কপালে। মারুরও সময় হলো না মেয়েকে আদর করার। হারিয়ে গেলো আজানা দেশে।

এখন পরির দশ বছর। মাকে পরি ভুলে গেছে। তবুও বাড়ির সামনের কবরে প্রতিদিন ফুল দেয়। পান্তও সময় পেলে কবরের পাশে বসে থাকে।

” জানো মারু তোমাকে ভালোবাসাটা আমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল ছিলো। কখনো শান্তি পেলাম না। না তুমি ভালো থাকলে না আমি ভালো থাকলাম। কেনো এমন হলো বলো তো? আমরা কি খুব পাপী ছিলাম? আমারও ইচ্ছে করে তোমার ডান পাশে শুয়ে পরার কিন্তু আমাদের পরিটার জন্য পারি না। আমাদের পরিটা বড় হয়ে গেলে ওকে বিয়ে দিয়ে তোমার কাছে চলে যাবো। তখন একটু ভালোবেসো আমায়। আমার হাতটা ধরে বলো আমার হৃদয়ে তুমি। বলবে তো মারু। সেখানে কোনো রাফিন থাকবে না। আমি আর তুমি থাকবো। খুব তারাতাড়ি আসো আমি তোমার কাছে। ভালোবেসে বলবো আমার হৃদয়ে তুমি।
মারুর কবরের পাশে বসে পান্ত বলছে।

_________সমাপ্ত _______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here