আমার হৃদয়ে তুমি ২পর্বঃ৪
Tanisha Sultana
রুহিকে পাশ কাটিয়ে রাইয়ের হাত ধরে সোজা রাইয়ের রুমে এসে ধরাম করে দরজা বন্ধ করে দেয়। রুহি শুধু হা করে দেখছে। রাইয়ের বাবা মা দৌড়ে আসে কে এসেছে জানতে।
“রুহি রাই এসেছে?
রুহি চোখ বন্ধ করে বলে
” হুমমম
রাইয়ের মায়ের মুখ খুশিতে চকচক করে ওঠে। রাইয়ের বাবার চেহারায় চিন্তার রেখা স্পষ্ট।
“কোথায় রাই?
গম্ভীর ভাবে জিজ্ঞেস করে রাইয়ের বাবা।
” জিহাত ওকে টেনে রুমে নিয়ে গেছে আর দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।
রাইয়ের বাবা হতাশার নিশ্বাস ফেলে। রাইয়ের মায়ের মুখ কালো হয়ে যায়।
“অনেক হয়ে গেছে আর না। তোমাদের বেপার তোমরা মেটাবে এখানে আমার মেয়েকে কেনো টানছো? ছেলেটা যা চাইছে তাই করো তুমি। আমি আমার রাইকে ওই ছেলের সাথে ছাড়বো না।
রাইয়ের মা কান্না কন্ঠে বলে।
” তুমি বুঝতে পারছো না। ছেলেটা ডেঞ্জারাস। ওর লোকদের জামিন দিয়ে দিলে না জানি কি কি করবে
“যা ইচ্ছে করুক আমাদের কি? আমি কিচ্ছু শুনতে চায় না
রাইয়ের মা রাইয়ের রুমের দিকে যায়। রুহি হাত কচলাচ্ছে। রুহি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে জিহাত শুরু মাএ ওর লোকদের লকাবে পুরেছে বলে রাইয়ের সাথে এমন করছে না। জিহাত তো রুহিকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এসব করছে।
” আমি বাড়িতে আসলাম আর বাবা মা আপির সাথে কথা না বলে রুমে বন্ধ থাকবো কেনো?
কিছুটা রাগ মেশানো কন্ঠে বলে রাই। জিহাত সিঙ্গেল সোফায় বসে আরামসে সিগারেট খাচ্ছে। রাইয়ের আবার সিগারেটের ধোঁয়ায় এলার্জি আছে তাই রাই জিহাতের থেকে অনেকটা দুরে দরজার কাছে লেগে দাঁড়িয়ে আছে।
জিহাত উঠে এসে বলে
“বিরবির করে কি বললা?
রাই মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে নাক চেপে ধরে বলে
” কিছু না
জিহাতের মনে পড়ে একবার রুহি বলেছিলো সিগারেটের ধোঁয়ায় রাইয়ের এলার্জি আছে। তাই আর কিছু না বলে আগের জায়গায় গিয়ে বসে।
রাইয়ের মা দরজায় নক করে
“রাই
রাই খুশি হয়ে দরজা খুলতে গিয়েও খোলে না৷ মুখটা কালো করে জিহাতের দিকে তাকায়।
” খোলো
ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে বলে জিহাত। রাই খুশি হয়ে দরজা খুলে দেয়। রাইয়ের মা রাইকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। রাইয়ের বাবা মুখ ঘুরিয়ে চিন্তা করছে। রুহি অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে আছে।
“মা কাঁদছো কেনো? আমি ঠিক আছি।
রাইয়ের বাবা চোখ মুখ শক্ত করে জিহাতের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
” এটা ভদ্রলোকের বাড়ি। এখানে ফাজলামো চলে না
জিহাত সিগারেট টান দিতে গিয়েও থেমে যায়। মেকি হাসি দিয়ে বলে
“এটা ভদ্রলোকের বাড়ি? আমি ভুলে গেছিলাম।
হাত মুঠ করে ফেলে রাইয়ের বাবা। তারপর চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করে বলে
” তোমার লোকদের জামিনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি আমি।
জিহাত সিগারেট ফেলে উঠে দাঁড়ায়।
“গ্রেট
” এবার তুমি আমার মেয়েকে ছেড়ে দাও
জিহাত এক পলক রাইয়ের দিকে তাকায়। রাই জিহাতের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
“আপনার বড় মেয়ে হলে কখনোই ছাড়তাম না। হৃদয়ের মধ্যে আগলে রাখতাম। আপনার ছোট মেয়ের প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই তাই ওকে ধরে রাখার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
জিহাতের কথায় রাইয়ের বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। রুহির বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে। রুহি জিহাতের দিকে তাকায়।
রাইয়ের বাবা খুশি হয়।
” কিন্তু হ্যাঁ ঠিক দশ দিন আপনার মেয়ে আমার সাথে থাকবে।
“কেনো?
” যতখন রাই আমার সাথে আছে ততোখন আমি সেভ। এই দশদিনে আপনি আমার লোকদের ছেড়ে দেবেন আর আমিও আপনার নেকা মেয়ের সাথে সব সম্পর্ক চুকিয়ে একদম মুক্ত করে ওকে দিয়ে যাবো।
“এই দশ দিনে যদি
রাইয়ের বাবাকে থামিয়ে জিহাত বলে
” চিন্তা করবেন না। আমি ওকে ছুঁড়েও দেখবো না। জিহাতকে ভালোবাসার মানুষের অভাব থাকলেও জিহাতের ভালোবাসা নেওয়ার মেয়ে অনেক আছে।
রাইয়ের বাবা চুপ হয়ে যায়। রাই এসব নিয়ে ভাবতে চায় না। তাই মাকে বলে
“মা খুব খিদে পেয়েছে কিছু খেতে দাও। কাল থেকে কিছু খায় নি
রাইয়ের মায়ের খুব খারাপ লাগে। মেয়েটা না খেয়ে আছে। অবশ্য রাইদের বাড়িতেও কেউ খায় নি।
খাবার টেবিলে রাইকে ওর মা খাইয়ে দিচ্ছে। রাইয়ের পাশে জিহাত বসেছে জিহাতের মুখোমুখি রুহি বসেছে। রাইয়ের বাবা জিহাতের সাথে বসে খাবে না তাই সে দুরে একটা সোফায় বসে আছে।
রাই খাচ্ছে আর মাকে এটা ওটা অনেক কথা বলছে। জিহাতের বিরক্ত লাগছে। খাওয়ার মাঝে মাঝে রুহির দিকে তাকাচ্ছে জিহাত।
খাওয়া শেষ হতে না হতেই রাইয়ের বেস্টফ্রেন্ড ইশান ঝড়ের গতিতে চলে আসে।
” তুই আজ কলেজে যাস নি কেনো? আমি বই রেখে চলে এসেছি তোকে নেওয়ার জন্য। তারাতাড়ি রেডি হয়ে নে।
কিছুটা হাঁপাতে হাঁপাতে বলে ইশান। রাই পানি খেয়ে উঠে বাবার সামনে দাঁড়ায়।
“হুমম চল
রাই ইশানের হাত ধরে দৌড়ে রুমে চলে যায়। এতে জিহাতের প্রচন্ড রাগ হয়। জিহাত এতোখন পর্যন্ত ভাবতো রাই ওকে প্রচন্ড ভয় পায়। কিন্তু এখন ওর মনে হচ্ছে ভয় পায় না। কিন্তু এভাবে তো চলতে দেওয়া যায় না। রাইকে জিহাতকে ভয় পেতে হবে।
জিহাত খাওয়া শেষ না করেই উঠে দাঁড়ায়।
” কোথায় যাচ্ছো?
রুহি জিজ্ঞেস করে
“তোমার বোন বেশিই উড়ছে। ওর ডানা কাটতে
” ওর বেপারে একটু বেশিই কানসান দেখাচ্ছো। ওকে ওর মতো থাকতে দাও। উড়তে দাও ওকে। ও রাজনীতি বোঝে না। ও ভালো থাকতে জানে। ভালোবাসতে জানে। খুব সাদাসিধা আর সরল আমার বোনটা। তোমার স্বার্থে ওকে বেবহার করছো ঠিক আছে কিন্তু ওর স্বাধীনতা কেড়ে নিও না
রুহির কথা শুনে জিহাত একটু তাচ্ছিল্য হাসি দেয়। তারপর হাত ধুয়ে রুমে চলে যায়।
রাই কলেজ ড্রেস পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল বিনুনি করছে ইশান রাইয়ের বই গোছাচ্ছে।
“রাই একটা জিনিস কিছুতেই আমার মাথায় ঢুকছে না
” কি রে
“তোর বোনের বফ তোদের বাসায় কেনো?
রাই হালকা চমকে ওঠে ইশানের কথায়। বিনুনিটা পেছনে দিয়ে কেচি ঠিক করতে করতে বলে
” ওসব বড়দের বিষয় ওসব নিয়ে ভাবতে হবে না। চল
রাই ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বেরোতে যাবে তখনই জিহাতের সাথে ধাক্কা খায়। তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিলে জিহাত ধরে ফেলে। রাই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে শুকনো ঢোক গিলে
“তোমার নাম?
ইশানকে জিজ্ঞেস করে
” ইশান
“ওহহ ইশান তুমি একটু বাইরে যাও রাই একটু পরেই আসছে।
মুচকি হেসে মিষ্টি করে বলে জিহাত। জিহাতের মিষ্টি কথায় রাইয়ের কেমন লাগছে। কোনোভাবে কোনো ভুল করলাম না কি রাই ভাবছে?
রাই চোখের ইশারায় ইশানকে যেতে না করছে।
” ইশান কি হলো যাও
ইশান রাইয়ের দিকে একবার তাকিয়ে বেরিয়ে যায়। জিহাত দরজাটা ঠেলে দেয় কিন্তু লক করে না।
“আআআমি কি করলাম?
চলবে❤️