আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ৫
Tanisha Sultana
“ভয় পাও আমাকে?
হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে বলে জিহাত। রাই কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে মাথা নারায় মানে হ্যাঁ
” কেনো ভয় পাও?
ভ্রু কুচকে বলে রাই।
“সেদিন আপনি আমাকে কিডনাপ করেছিলেন
জিহাত রাইয়ের দুই গালে হাত দিয়ে বলে
” আমি ছিলাম না
রাইয়ের বিশ্বাস হলো না। তবুও কিছু বললো না। মাথা নিচু করে আছে।
“ইশান তোমার বেস্টফ্রেন্ড
” হুমমম
“আমাকে বেস্টফ্রেন্ড ভাবতে পারো। আর আমাকে এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি তো তোমাকে বকি না তাহলে? আর যদিও বকে থাকি তো আজ থেকে এখন থেকে আর বকবো না প্রমিজ
মুচকি হেসে বলে জিহাত। রাই জিহাতের মুখের দিকে তাকায় না।
” কি হলো রাই? এখনও ভয় করছে?
আসলে আপনাকে তো আমি কখনো কাছ থেকে দেখি নি। কথা হয় নাই। জাস্ট আপির সাথে দুর থেকে দেখতাম। তাই ফ্রী হতে পারছি না। এটাই
“হুমম আমি বুঝতে পারছি। তুমি ফ্রী হওয়ার ট্রাই করলেই তো পারবা তাই না?
” হুমমম
“গুড গার্ল।
রাই একটু হাসে। জিহাত রাইয়ের মুখে পড়ে থাকা ছোট চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দেয়।
“এবার আমাকে বাই বলে যাও
রাই মুচকি হেসে জিহাতকে বাই বলে চলে যায়। রাই চলে যাওয়ার পরে জিহাত একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” দুই বোন দুইরকম। একজন মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলতে ভালো বাসে। আর একজন কি করে কথা বলতে হয় সেটাও জানে না। সরল।
জিহাত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে বাড়িতে যাবে বলে। তখন রুহি আসে। জিহাত রুহিকে দেখে রুহির দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। রুহি জিহাতের সামনে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে
” সরি জিহাত। তোমাকে ঠকানোটা আমার ঠিক হয় নি। আমি তার জন্য অনুতপ্ত।
জিহাত তাচ্ছিল্য হেসে বলে
“তোমার মতো মেয়েরা এমনই হয়। একটা ছেড়ে আরেকটা অরবে এটাই তোমার স্বভাব। বারো জনের হাত ধরার মধ্যে গভীর রাতে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়া কিছুই নেই। আমার তোমার প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। তোমার কোনো। হ্মতিও আমি করবো না। শুধু তোমার বোনকে ঠিক ততোটাই কষ্ট দেবো যতটা কষ্ট তুমি আর তোমার বাবা আমাকে দিয়েছো।
” জিহাত রাইকে কেনো টানছো?
“দরকার আছে তাই।
” জিহাত
“সাট আপ রুহি। আর কোনো কথা শুনতে চায় না
জিহাত রুহিকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। রুহি ধাপ করে বসে পরে।
ক্লাস রুমে বসে ইশান রাই রুমি আর ইরা বিদায় অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করছে। মেয়েরা শাড়ি পড়বে ছেলেরা পানজাবি। রাইয়ের খুশি দেখে কে। শাড়ি পড়তে রাইয়ের অসম্ভব ভালো লাগে।
অনার্স থার্ড ইয়ারের একটা ছেলে অবির ওদের ক্লাসের ওইখান দিয়ে যাচ্ছিলো রাইকে দেখে থেমে যায়। হা করে তাকিয়ে আছে।
গল্প আর হাসাহাসি করতে করতে রাই ইশান আর ইরা হাঁটছে তখন আবির ছেলেটা রাইয়ের সামনে এসে দাঁড়ায়। রাই কিছুটা ঘবড়ে যায়।
“তুৃমি কি রুহির বোন?
আবিরের মুখে রুহির নাম শুনে একটুও অবাক হয় রাই। ওনেকেই মাঝেমধ্যে এসে ওকে রুহির বোন কি না জিজ্ঞেস করে।
” হুমমম
রাই সোজাসাপ্টা বলে। ইশান আর ইরা নির্বাক দর্শকের মতো তাকিয়ে আছে।
“তুমি দেখতে খুব কিউট
” শুকরিয়া ভাইয়া
বলেই রাই পাশ কাটিয়ে চলে আসে। আর মনে মনে বলে আজ আপিকে অনেক কড়া কথা শুনিয়ে দেবো। এতো ছেলের সাথে কেনো রিলেশন করে ও? নাহয় বাবাকে বলে দেবো।
“তোর বোন তো হেব্বি সেলিব্রিটি
মজা করে বলে ইশান।
” হুমম রুহি আপু যেমন সুন্দর তেমন ওনার নামডাক
“থামবি তোরা
কিছু টা ধমক দিয়ে বলে রাই।
রাইয়ের মুডটাই খারাপ হয়ে যায়। চুপচাপ ওদের সাথে হাঁটে। কলেজের গেটের কাছে দেখে জিহাত হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। রাই ওদের বাই বলে এক দৌড়ে জিহাতের কাছে চলে আসে।
“আপনি?
হাঁপাতে হাঁপাতে বলে রাই।
” তোমাকে নিতে আসলাম
রাই মুখ গোমড়া করে বলে ওহ।
জিহাত রাইয়ের মন খারাপের কারণ বুঝতে পারে না। জিহাত হেলমেট পড়ে রাইকে উঠতে বলে। রাই জিহাতে বুকের ওপর হাত রেখে বসে।
“মন খারাপ রাই?
রাই জিহাতের বুকের ওপর থেকে হাত সরিয়ে কাঁধে রাখে। জিহাতের প্রশ্নের উওর দেয় না। জিহাতও আর কথা বলে না।
” বলছিলাম আজকের দিনটা আমাদের বাড়িতে থেকে যেতাম।
“দশ দিন পর তো পার্মানেন্টলি থাকতে পারবা
রাই চুপ করে যায়।
জিহাতের ফোন বেজেই যাচ্ছে বেজেই যাচ্ছে।
” বাইক থামিয়ে ফোন ধরেন।
“ইমপটেন্ট কল না।
” গার্লফ্রেন্ড রা কল করছে বুঝি
জিহাত একটু হাসে। রাই ওর হাসিটা দেখতে পারে না।
জিহাত রাইকে নিয়ে সোজা জিহাতদের বাড়িতে চলে আসে। বাইক থামাতেই রাই নামে
“তুমি বাসায় যাও। আমি সন্ধার দিকে আসবো
বলেই জিহাত বাইক ঘুরিয়ে চলে যায়। রাই বাড়ির দরজার কাছে এসে কলিং বেল বাজায়। আবার ওই মহিলাটি দরজা খুলে দেয়। রাই ভেতরে ঢুকে। মহিলাটি দরজার বাইরে উঁকি মারে
” ও আসে নি
রাই বুঝতে পেরে বলে। মহিলাটি একটু হাসে।
“আপনি কে হন ওনার?
হাসিমুখে জিজ্ঞেস করে রাই।
মহিলাটি মুখ কালো করে বলে
” ওর মা আমি
রাই ওনার মন খারাপ বুঝতে পারে
“তাহলে আপনি আমার আন্টি। এবার চট করে বাড়ির সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিন তো আমায়।
জিহাতের মা খুশি হয়ে সবাইকে ডাকে। জিহাতের পরিবারে। জিহাতের মা বাবা কাকা কাকি জিহা আর কেউ নেই। রাই সবার সাথে একে একে পরিচিত হয়। জিহাতের বাবা রাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলে
” জিহাত কোথায় গেছে?
“জানি না তো। জাস্ট বললো সন্ধায় আসবে।
” তুমি কি কলেজ থেকেই এসেছো? জিহার মা বলে।
“হ্যাঁ
” হাতমুখ ধুয়ে এসো খাবার বেরে দিচ্ছি।
রাই হাত মুখ ধুতে যায়। এবাড়ির সবাইকে রাইয়ের ভীষণ ভালো লেগেছে। সবাই কতো ভালো। আর উনি কারো সাথে ঠিক করে কথাই বলে। ভীষণ বদমাইশ লোকটা।
রাই খুশি খুশি মনে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখে জিহার রুমে ঢুকছে। গাম জড়ানো শরীর। প্রচুর ক্লান্ত দেখাচ্ছে। জিহাত সোফায় শুয়ে পড়ে। রাই জিহাতের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
“আপনার এই অবস্থা কেনো?
” ফ্রীজের পানি দিয়ে খাবার স্যালাইন বানিয়ে এনে দাও তো
ফ্রিজের পানি দিয়ে কেউ স্যালাইন খায় সেটা রাই প্রথম শুনলো
“স্যালাইন পাবো কোথায়?
জিহাত এক পলক রাইয়ের দিকে তাকালো। কিন্তু কিছু বললো না।
” রাই চিন্তা করতে লাগলো উনি গিয়েছিলো কোথায়? কি এমন কাজ ওনার? কোনো খারাপ কাজের সাথে যুক্ত উনি? তাই হয়ত বাবা ওনার লোকদের ধরে নিয়েছিলো।
এসব ভেবে রাই বাইরে চলে যেতে নেয়। ও এখন খাবে। ফালতু ফালতু জিহাতকে নিয়ে গবেষণা করার ইচ্ছে ওর নেই।
“কোথায় যাচ্ছো?
চোখ বন্ধ করেই জিজ্ঞেস করে জিহাত।
” আপনার মা আমার জন্য খাবার বেরেছে খেতে যাচ্ছি। আপনি যাবেন? আপনারও তো খাওয়া হয় নাই। চলুন সবাই মিলে একসাথে খাবো। কতো মজা হবে। আপনাদের বাড়ির সবাই কতো ভালো। সবাই মিলে কতো হইহই করে থাকেন আপনারা।
খুশি হয়ে বলে রাই।
মুহুর্তেই জিহাতের চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। কপালের রগ ফুটে ওঠে। রাইয়ের হাসি মিলিয়ে যায়। হঠাৎ উনি রেগে গেলো কেনো বুঝতে পারছে না রাই।
চলবে