আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ৭
Tanisha Sultana
“এই যে দশদিনের শশুড় মশাই আপনার মেয়ে এমন কেন?
” কেমন?
গম্ভীর ভাবে বললেন রাইয়ের বাবা
“কারণ ছাড়াই হাসে কারণ ছাড়াই কাঁদে আবার কারণ ছাড়াই জ্বর হয়।
” তুমি ওকে ধমক দিয়েছিলে?
“হুমম একটা ধমক দিয়ে পাঁচঘন্টা সরি বলছি। সিরিয়াসলি এরকম একটা মেয়ে কে বিয়ে করলাম আমি?
বিরক্তি নিয়ে বলে জিহাত।
” ওর সাথে কেউ কড়া গলায় কথা বললে ও কেঁদে ফেলে আর কাঁদলেই জ্বর হয়।
“ওহহহ গড এইরকম একটা মেয়ে ছিলো আমার কপালে? এবার এনার সেবা যত্ন করতে হবে। যেমন হিটলার বাপ তার তেমন নাকিকান্না করা মেয়ে। ডিজগাস্টিং
বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দেয় জিহাত। ওদিকে রাইয়ের বাবার চিন্তা হচ্ছে। আবার জিহাতকে ফোন দেয় জিহাত রিসিভ করে না।
জিহাত ডাক্তারকে ফোন করে। রাইয়ের পাশে বসে। রাগে নিজের চুল নিজেরই ছিড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। ধমক দিলে কারো জ্বর চলে আসে এটা হওয়ার না কি?
জিহাতের মা উঁকি ধুঁকি মেরে দেখছে এখনও ওরা রুম থেকে বের হচ্ছে না কেনো। জানালা দিয়ে দেখছে পায় রাই গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে। দেখেই মনে হচ্ছে অসুস্থ। উনি দৌড়ে জেসির কাছে যায়। জেসি জিহাতের রুমে নক করে
” দাভাই দরজা খোল
জিহাত মুখ গোমড়া করে দরজা খোলে
“ভাবির কি হয়েছে?
” জ্বর
জেসি রাইয়ের কপালে হাত দেয়।
“এমা এতো অনেক জ্বর। মাথায় পানি ঢালা দরকার।
” পানি এনে দে আমি ঢালছি।
“হুমম
জেসি পানি আর পলিথিন নিয়ে আসে৷ রাইয়ের মাথার নিচে পলিথিন দিয়ে মগ দিয়ে পানি ঢালে জিহাত। জেসি ঢালতে চাইছিলো কিন্তু জিহাত বারণ করে।
” বোন খাবার এনে দে একে খাওয়াতে হবে
দরজার আড়াল থেকে জিহাতের মা এটা শুনে দৌড়ে কিচেনে চলে যায়। ঝাল ঝাল করে নুডলস বানিয়ে জিহাতের রুমে নিয়ে আসে উনি ভুলেই গেছিলো যে জিহাত ওনার হাতে খাবার দেখলে রাইকে খেতে দেবে না।
খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে জিহাতের মা। পানি ঢালায় রাইয়ের একটু ভালো লাগছে। পিটপিট করে চোখ খোলে।
“ওই তো বড় মা খাবার নিয়ে এসেছে। এবার তোরা খেয়ে নে।
জেসির কথা শুনে জিহাতের মা চমকে ওঠে। জিহাত শান্ত চোখে একবার মায়ের দিকে তাকায়। অনেক কথা শুনিয়ে দিতো কিন্তু রাই আবার ভয় পেয়ে যাবে বলে চুপ করে আছে। খাবার আনার বেপারটা দাঁতে দাঁত চেপে সয্য করছে। কেনো জানি জিহাত আর রাইকে ভয় দেখাতে চায় না। জিহাতের মা ছেলের ব্যবহারে বেশ অবাক হয়। উনি খাবার নিয়ে আসলো তবুও রিয়াক্ট করলো না। এতো শান্ত। কি করে? মনে মনে ভীষণ খুশি হয় জিহাতের মা। হয়ত এরকম ভাবে ওনাকেও একদিন ভালোবাসবে জিহাত। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
রাই আস্তে আস্তে উঠে বসে। যদিও জ্বর এক% ও কমে নাই। মাথাটা শুধু একটু হালকা লাগছে। জিহাত বালিশ দেই। রাই বালিশে ঢেলান দিয়ে বসে।
” আন্টি কি এনেছো?
জিহাতের মা খুশি হয়ে তারাহুরো করে খাবারের প্লেট নিয়ে রাইয়ের সামনে এসে বলে
“ঝালঝাল করে নুডলস বানিয়েছি।
” দাও
রাই হাত বারিয়ে নিতে যায়। রাইয়ের হাত কাঁপছে। ওনিতে পারবে না। তাই জিহাতের মা রাইয়ের হাতে দেয় না।
“আমি খাইয়ে দেই?
মাথা নিচু করে ভয়ে ভয়ে বলে। এই বুঝি জিহাত ধমক দিয়ে উঠবে।
” দরকার নেই। আমি আছি তো
জিহাত মায়ের হাত থেকে প্লেট নিয়ে শান্ত গলায় বলে। জিহাতের মা কিছু বলে না। রুম থেকে বেরিয়ে যায়। এই প্রথম বার তিনি তার ছেলের রুমে এতোখন ছিলো। আগে কখনো ঢোকার সাহসই পেতো না। জিহাত যখন বাড়ি থাকতো না তখন লুকিয়ে আসতো। কখনো রুম গুছিয়ে দিয়ে যেতো।
“এভাবে বললেন কেনো?
” রাই এটা আমার শুধুই আমার পারসোনাল বিষয়। প্লিজ ইন্টরফিওর করো না। আমি রেগে যায়। তখন তোমাকে ধমক দিলে তুমি কাঁদবে আবার শরীর খারাপ হবে। সো এই বিষয়টা বাদ।
রাই কিছু বলে না। জেসি না বলেই চলে যায়। ওদের মধ্যে কাবাবের হাড্ডির মতো দেখায় জেসিকে।
জিহাত মরিচ বেছে ফেলে দিয়ে এসে রাইকে খাইয়ে দেয়। জিহাতের মা দুই প্যাকেট নুডলস বানিয়েছিলো যাতে ওরা দুজনই খেতে পারে।
রাই কিছুটা খেয়ে বলে আর খাবে না। জিহাতও জোর করে না। একটা নাপা খাইয়ে দেই। ডাক্তার নাপা খাওয়াতে বলেছে। আসবে না।
জিহাতের খুব ইচ্ছে করছে নুডলস খেতে। কিন্তু মা বানিয়েছে বলে খাচ্ছে না।৷ রাই ঘুমিয়ে গেলে খাবে যাতে রাই না দেখে। রাই এটা বুঝতে পেরে চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরে। জিহাত তারাহুরো করে নুডলসটা খেয়ে নেয়। রাই মুচকি হাসে।
_____________
দুপুরে রাইয়ের বাবা মা আর রুহি আসে। জিহাতের বাবা রাইয়ের বাবাকে দেখে খুশি হয়
“আপনারা?
” আমার মেয়ের জ্বর হয়েছে তাই আসলাম
“খুব ভালো করেছেন। আসুন না প্লিজ
জিহাত ওনাদের দেখে বিরক্ত হয়। বেশি রুহিকে দেখে। হা করে তাকিয়ে আছে জিহাতের দিকে। রাইয়ের বাবা মা রাইকে এটা ওটা বলছে রাই হু হু করছে।
জিহাত বেলকনিতে চলে যায়। রুহিও জিহাতের পেছন পেছন যায়। রাই বেপারটা খেয়াল করে।
” জিহাত
রুহি কন্ঠ শুনে জিহাত পেছনে তাকায় না। ও জানতো রুহি এখানে আসবেই
“বলো
” সবটা নতুন করে শুরু করা যায় না? আবার প্রথম থেকে। প্রমিজ করছি আর কখনো তোমাকে ঠকাবো না। তুমি যা বলবে আমি তাই করবো। তোমার ভালো লাগে না এমন কাজ করবো না। তোমার সাথে রাগ করবো না। প্রতিদিন তোমার সাথে কথা বলবো। তোমার মতো করেই তোমাকে ভালোবাসবো।
রুহির কথা শুনে জিহাত একটু হাসে। তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে
“আমি না ছোট থেকেই খুব বাজে একটা ছেলে।আমি খুব করে চাইতাম ভালো হতে। কিন্তু ভালো হওয়ার রিজন খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমাকে ভালোবেসে বলবে “জিহাত এই কাজটা করো এটা খারাপ কাজ” এই কথাটা বলার মতো কেউ ছিলো না। তারপর তুমি আমাকে প্রপোজ করলে। প্রথম প্রথম শাসন করতে বকতে খুব ভালো লাগতো। তোমার আরো পাঁচটা ছেলের সাথে রিলেশন ছিলো এটা আমি জানতাম তাও কিছু বলতাম না। তুমি আমার সাথে কথা বললেই হলো বাকি আর যাই করো তাতে আমার কিছুই না।
এক নাগারে কথা গুলো বলে জিহাত দম নেয়।
“আমি ভুল মানুষকে চুজ করেছিলাম এটা আমার ভুল। কিন্তু আমি ঠিক মানুষটাকে খুঁজে পেয়েছি। জেদের বসে রাইকে বিয়ে করে ঠিক করেছি আমি।
” জিহাত রাই তোমার থেকে অনেক ছোট। তোমার কি মনে হয় আমার বোন তোমাকে হাজবেন্ড হিসেবে মানবে? আরে কি করে মানবে তোমার আর ওর বয়সের ডিফারেন্সটা প্রায় দশ বছর। তাছাড়া আমার বোনটা এতোটাও বোকা নয় যে বোন যাকে ভালোবাসতো তাকেই ভালোবাসবে।
জিহাতের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। সত্যিই তো রাইতো ওর সাথে যায় না।
“যদি রাই মানে তো ওর জন্য আমি ভালো হবো। কোনো সিক্রেট রাখবো না। আর যদি না মানে তো
” এক সেকেন্ড জিহাত রাইকে ভালো টালো বেসে ফেলো নি তো?
“আমি তো আর রুহি না যে যখন তখন যা কে তাকে ভালোবেসে ফেলবো খুব সহজেই। তবে হ্যাঁ রাই যদি আমাকে ৫% ও ভালোবাসে তাহলে আমি ওকে ভালোবাসবো। আর এসব নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না। তুমি তোমাটা ভাবো। এরপর কি করবে? কার পেছনে দৌড় দেবে।
জিহাত একটু হেসে চলে আসে। রুহির রাগ হচ্ছে। জিহাত হঠাৎ এতো পাল্টে গেলো কি করে? রুহিকে ইগনোর করলো? যে রুহির পেছনে দিন রাত ছুটে বেড়াতো। এটা কি করে পসিবল
রুহি রাগে ফুসতে ফুসতে রুমে আসে। জিহাতের মুখে হাসি দেখে রাই ভেবে নেয় ওদের মধ্যে সব ঠিক হয়ে গেছে। আগের মতো হয়ে গেছে।
রাই গোপনে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। মায়ের বুকে মাথা রাখে। রাইয়ের মা এটা ওটা বলছিলো হঠাৎ রাই জড়িয়ে ধরাতে চুপ করে যায়। মুচকি হেসে মাথায় হাত বুলায়।
” আপির জন্য জিহাতই পারফেক্ট। খুব ভালো মানায় ওদের। খুব সুখি হবে ওরা।
মনে মনে বলে রাই।
জিহাতের মা আর জেসির মা ওনাদের জন্য রান্না করছে। রুহি রাইয়ের পাশে বসে ছটফট করছে। জেসিও ওদের জন্য মুড়ি মাখতে গেছে। জিহাত খাবে বলেছে। জিহাত রাইয়ের আরেক পাশে বসে ফোন দেখছে। রাইয়ের বাবা মা জিহাতের বাবার সাথে কথা বলছে।
“রুহি তোমার বফদের বলে দিও আমার বউকে যেনো ডিস্টার্ব না করে।
ফোন দেখতে দেখতে বলে জিহাত৷ রুহি আর রাই চমকে ওঠে। রাই চমকে ওঠে জিহাত জানলো কি করে এটা ভেবে। আর রুহি চমকে ওঠে হঠাৎ জিহাতের এমন কথা বলাতে।
” আআপনি জানলেন কি করে?
জিহাত রাইয়ের গাল টেনে বলে
“বউ তুমি আমার। কোথায় কি করো সবটা জানি আমি।
চলবে