আমার হৃদয়ে তুমি ২,পর্বঃ২৫
Tanisha Sultana
জিহাত একটা ঢোক গিলে বলে
“এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
রাই আবার ল্যাপটপ অপেন করতে গেলে জিহাত ল্যাপটপটা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
” মুভিটা শেষ করতে দিন। ইন্টারেস্টিং একটা মুহুর্ত। প্লিজ
“মুভি দেখতে হবে না। এটা বড়দের মুভি
বলেই ল্যাপটপ নিয়ে উঠে যায়। আলমারিতে তালাবদ্ধ করে রাখে ল্যাপটপটা। রাই হা করে তাকিয়ে আছে জিহাতের দিকে।
” আমার বিয়ে হয়ে গেছে। গুনে গুনে পাঁচমাস পরে আঠারো বছর বয়স হবে। আর এখনও আপনি আমাকে ছোট বলছেন? আর মুভির ওপর কিন্তু লেখা নেই এটা বড়দের মুভি
“পাঁচমাস পরেই মুভিটা দেখো
” আমি এখনই দেখবো। দিন
“রাই জেদ করো না
” জেদ না এটা আমার মুভিটা দেখার প্রবল ইচ্ছা
জিহাত মাথায় হাত দেয়। এরে বোঝানোর হ্মমতা জিহাতের নেই।
” ঠিক আছে বাদ দিলাম এবার বলেন আমাদের ফুলসজ্জা কেনো হলো না? আর ফুলসজ্জার রাতে আমাকে গিফট কেনো দিলেন না?
চোখ ছোটছোট করে বলে রাই। জিহাত এক পলক রাইয়ের দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয়। এই মেয়েটার আজ হইছেটা কি?
“কি হলো বলুন
” ইয়ে মানে আমাদের তো ভালো করে বিয়ে হয় নি তাই
“তাহলে তো আমাদের এক রুমে থাকাও উচিৎ না।
” কেনো?
“ভালো করে বিয়ে হবে তারপর এই রুমে থাকবো আমি। এতোদিন জেসির কাছে থাকবো
রাইয়ের কথা শুনে জিহাতের নিজের মাথা নিজেরই ফাটাতে ইচ্ছে করছে।
” তোমার মাথায় এইসব কে ঢুকিয়েছে।
“এক মুভিটা
দাঁত কেলিয়ে বলে রাই।
জানেন তিথির বর কতো ভালো। তিথিকে গিফট দেয়, সিনেমা দেখাতে হলে নিয়ে যায়, ঘুরতে নিয়ে যায়, কতো কিউট কিউট কথা বলে। আর আপনি?
মুখ গোমড়া করে বলে রাই।
” তিথির সাথে আর মিশবা না। তিথি কি পাগল? তোমাকে এসব কেনো বলে?
রাইয়ের পাশে বসে বলে জিহাত।
“বলবে না? আমি ওর ফ্রেন্ড। তাই বলে আমাকে। আরও অনেক কিছু বলছে।
” আর কি বলছে?
“বলতে পারবো না। আর বরং এক কাজ করি তিথিকে ফোন দেই। ফোন দিলেই ও শুরু করে দিবে।
” থাক। তুমি আর তিথির সাথে মিশবা না
“কেনো?
” আমি না করছি তাই
“আমি মিশবো ওর সাথে। ওর কাছ থেকে কতো কিছু শিখার আছে আছে আমার। মাএ একটু শিখাইছে
” ও তোমাকে কি শেখাচ্ছে?
ভ্রু কুচকে বলে জিহাত।
“বলবো না কি দেখাবো?
” দেখাও
রাই ঠাস করে জিহাতের ঠোঁটে চুমু খায়। জিহাত বড়বড় চোখ করে তাকায় রাইয়ের দিকে। ঘটনাটা এতো তারাতাড়ি ঘটে যে জিহাত ভালো করে বুঝতেও পারে না। যখন বুঝতে পারে রাইকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।
“দশ সেকেন্ড ও হলো না
বলেই রাই এক দৌড়ে রুমে থেকে বেরিয়ে যায়। জিহাতের সামনে থাকার সাহস নেই। রুমের বাইরে গিয়ে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয় রাই।
জিহাত ঠোঁটে হাত দিয়ে মুচকি হাসে। আসলেও পাগল মেয়েটা।
“একি তুমি রুমের বাইরে কেনো?
শাশুড়ী জিজ্ঞেস করে রাইকে। এখানে ওনাকে দেখে কিছুটা চমকে যায় রাই।
” না মানে আপনার কাছেই যাচ্ছিলাম।
“আমার কাছে?
” না মানে জেসির কাছে।
বলেই রাই এক দৌড়ে জেসির রুমে চলে যায়। জেসি ফোনে কথা বলছিলো রাইকে এভাবে ঢুকতে দেখে ফোন কেটে দেয়।
“ভাবি কি হয়েছে?
রাই জেসির বিছানায় শুয়ে বলে
” আমি আজ তোমার সাথে ঘুমবো
“কেনো?
” প্লিজ কেনো কেনো করো না। আমি এমনিতেই লজ্জায় মরে যাচ্ছি।
চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে বলে। জেসি বুঝতে পারে বিষয়টা তাই মুচকি হাসে।
“ভাইয়া কিন্তু রেগে যাবে আমার রুমে থাকলে।
” যাক গে তবুও আমি এখানেই থাকবো।
“ঠিক আছে থেকো। কিন্তু খাবে তো
” সন্ধার আগে খেয়েছি এখন আর খাবো না।
জেসি আর কিছু না বলে নিজে খেতে যায়।
জিহাত অনেকখন যাবত দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। কখন রাই আসবে? কিন্তু রাইয়ের পাত্তা নেই। বিরক্ত লাগছে এবার। রুমের মধ্যে পায়চারি করছে। দরজা খুলে উঁকি দিচ্ছে।
“আমি কি বলেছিলাম আমায় কিস করো বলি নি তো। তাহলে এখন এভাবে পালিয়ে বেড়ানোর কোনো মানে হয়?
বিরক্তি নিয়ে বলছে জিহাত।
জিহাতের ফোন বেজে ওঠে। স্কিনে তাকিয়ে দেখে অননোন নাম্বার। ফোনটা রিসিভ করে
” হেলো কে?
ওপাশ থেকে কোনো রেসপন্স নেই
“কথা না বললে ফোন কেনো দিছেন?
বিরক্তি নিয়ে বলে জিহাত।
” জিহাত আমি
ভয়েস শুনে জিহাত বুঝতে পারে এটা রুহি। রুহির নিশ্বাসের শব্দ শুনেই জিহাত ফিল করতে পারতে আশেপাশে রুহি আছে।
“ফোন কেনো দিছো? চাইছো টা কি? নিজের বোনের সংসারে আগুন লাগাতে চাও? আমি তো তোমার কেউ না কিন্তু রাই তো তোমার বোন। সামান্য মনুষ্যত্ববোধ টুকু নেই তোমার মধ্যে। এতো অমানুষ কেনো তুমি?
রুহি জিহাতের কথা গুলো মন দিয়ে শুনছে। চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে। গলা ধরে আসছে। থেমে থেমে বলে
” কাল আমাকে দেখতে আসবে। তাই বাবা তোমাকে আর রাইকে ইনভাইট করতে বলেছে। বাবা কথা বলবে না। বোনকে নিয়ে এসো।
বলেই রুহি ফোন কেটে দেয়। জিহাত ফোনটা আছাড় মারতে গিয়েও মারে না। এটা রাইয়ের দেওয়া ফোন। খাটের ওপর রেখে দেয়।
রাত বারোটা বাজে। এখনো রাই আসলো না। জিহাত বুঝতে পারে রাই আর আসবে না। এবার কথা হলো রাই কার রুমে? জেসির রুমে না কি অন্য কারো?
পা টিপে টিপে রুম থেকে বেরিয়ে জেসির রুমে যায়। দরজা ভেরানোই ছিলো। রুমে ঢুকে দেখে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে রাই। জিহাত আস্তে করে রাইকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে আসে।রুমে এনে শুয়িয়ে দিয়ে নিজেও পাশে শুয়ে পড়ে। রাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে জিহাত। এই মুখটাই জিহাতের পুরো জীবনটাকে পাল্টে দিয়েছে। সুন্দর একটা জীবন দিয়েছে। এই মুখটার মধ্যে লুকিয়ে আছে প্রচুর মায়া।
ঘুমের মধ্যেই রাই ঠোঁট মেলে হাসে। জিহাত রাইয়ের কপালের ওপর পরে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দেয়। তারপর রাইয়ের দিকে তাকিয়ে ঘুমিয়ে পরে।
সকালবেলা ফজরের আজানের শব্দে রাইয়ের ঘুম ভাঙে। নিজের পেটের ওপর ভারি কিছু অনুভব করে। চোখ খুলে দেখে জিহাত রাইয়ের ওপর পা দিয়ে আরামসে ঘুমচ্ছে।
“আমি তো জেসির কাছে ঘুমিয়েছিলাম। তো এখানে আসলাম কি করে?
ভাবছে রাই৷ ভাবতে ভাবতে জিহাত নাক ডেকে ওঠে। রাই সেটা রেকর্ড করে নেয়। তারপর আস্তে করে জিহাতের পা টা সরিয়ে নেমে যায়। পেটটা ব্যাথা ব্যাথা লাগছে। এতো ভারি পা পেটের ওপর রাখার জন্য।
ফ্রেশ হয়ে ওজু করে ফজরের নামাজ আদায় করে নেয় রাই। তারপর বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকে।
জিহাত পাশে হাত দিয়ে দেখে রাই নেই। ধাপ করে চোখ খুলে। বেলকনিতে তাকিয়ে দেখে রাই দাঁড়িয়ে আছে। জিহাত উঠে রাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে। রাই জিহাতের উপস্থিতি টের পেয়েও তাকায় না। কেমন অস্বস্তি হচ্ছে। লজ্জা করছে ভীষণ। রাতে এমনটা না করলেও হতো।
জিহাত রাইয়ের অবস্থা বুঝতে পেরে একটু হাসে
” সেই জন্যই আমি তোমার থেকে দুরে দুরে থাকি। তিথির কাছে জিজ্ঞেস করে দেখো তিথি বরকে জাস্ট একটা পাপ্পি দিয়ে টমেটো হয়ে যায় না তোমার মতো।
রাইয়ের দিকে একটু ঝুকে বলে জিহাত।
রাই নিজেকে সামলে নিয়ে মাথা নিচু করে বলে
“সরি আমার এমনটা করা উচিৎ হয় নি। আসলে তিথি বললো তো তাই আর কি
জিহাত ভ্রু কুচকে তাকায়
” তার মানে তিথি যদি আরও কিছু বলে
জিহাতের কথা শেষ হওয়ার আগেই রাই বলে
“প্লিজ প্লিজ এই কথা বাদ দেন
” কেনো? কারণ বলো
রাই এবার আমতাআমতা করছে। কি কারণ বলবে?
চলবে