আমার হৃদয়ে তুমি ২,অন্তিম পর্ব
Tanisha Sultana
সকাল বেলা জিহাত রাইকে নিয়ে হাসপাতালে যায়। ডাক্তার বলে রাই প্রেগন্যান্ট। জিহাত আর দুজনই খুশি হয়। জিহাত রাইকে নিয়ে নিজের বাড়ি চলে যায়। এই খুশির খবরটা জিহাত আগে নিজের মাকে জানাতে চায়। জিহাতের মা ভীষণ খুশি হয়। জিহাত রাই আর জিহাতের মা রাইদের বাড়িতে যায়। রাইয়ের বাবা পুরো পারা,মিষ্টি বিলি করে।
রাতে রাই চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। একটু পর পর বমি আসে। কিছু মুখে দিলেই বমি করে ভাসিয়ে দেয়।জিহাত হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে এসে রাইয়ের পাশে বসে। রাই চোখ খুলে একবার জিহাতের দিকে তাকায়। রাইয়ের দৃষ্টি ক্লান্ত। অতিরিক্ত বমির ফলে শরীর বসে গেছে।
জিহাত রাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়
“খুব কষ্ট হচ্ছে?
রাই ঠোঁট মেলে একটু হেসে বলে
” আপনি আশেপাশে থাকলে আমার সব কষ্ট দুর হয়ে যায়।
জিহাত রাইয়ের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়।
“সবে দুই সপ্তাহ এখনই এই অবস্থা।
” এখনই কষ্ট হবে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
“একটু কিছু খাও
রাই উঠে বসে।
” আপনি খেয়েছেন?
“তোমার খাওয়া শেষে খাবো
রাই আর কথা বারায় না। জিহাত ভাত মাখিয়ে রাইকে খাইয়ে দেয়। কয়েকবার মুখে দেওয়ার পরেই রাইয়ের গা গুলিয়ে আসে।
” তারাতাড়ি শুয়ে পড়ো আর চোখ বন্ধ করে ফেলো
রাই তাই করে। বমির ভাবটা কেটে যায়।
“এবার আপনি খেয়ে আসুন
জিহাত চলে যায়। খাওয়া শেষ করে এসে দেখে রাইয়ের পাশে জিহাতের মা শুয়ে আছে।
” মা তুমি এখানে?
“আমি এখন থেকে রাইয়ের কাছেই ঘুমবো।
জিহাতের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।
” কিন্তু মা
“কোনো কিন্তু না অন্য রুমে গিয়ে শুয়ে পড়।
তখন রাইয়ের মা আসে।
” তুমি গিয়ে তোমার শশুড় মশাইয়ের কাছে ঘুমাও। আমিও আজ রাইয়ের কাছে ঘুমবো
অসহায়ের মতো রাই রুম থেকে বেরিয়ে আসে। এই দুই মায়ের সাথে পারা যাবে না। শশুড়ের রুমে গিয়ে দেখে শশুড় মশাই ঘুমিয়ে আছে। জিহাত পাশে গিয়ে শয়।
চোখ বন্ধ করে আছে জিহাত। ঘুম আসছে না। রাইয়ের বাবা চোখ খুলে জিহাতের দিকে তাকায়। জিহাতের গায়ে চাদর টেনে দিয়ে মাথায় হাত বুলায়। জিহাত বুঝতে পেরে চোখ খুলে না। শশুড়ের ভালোবাসা উপভোগ করে। রাইয়ের বাবা জিহাতের কপালে চুমু দেয়। জিহাত বুঝে যায় এই লোকটা ভীষণ ভালোবাসে জিহাতকে। শুধু মুখে স্বীকার করে না। একটা সময় জিহাত ঘুমিয়ে পড়ে।
এভাবেই দিন কাটে। জিহাত প্রতিদিন শশুড় মশাইয়ের কাছে ঘুমায়। দিনে অফিস করে। রাইয়ের সাথে থাকতেই দেয় না দুইটা মা। রুহিও রাইয়ের ভীষণ খেয়াল রাখে। জিহাত তুহিনকে একটা ছোটমট জব ধরিয়ে দেয়।
আজ শুক্রবার। অফিস ছুটি। জিহাতের মা বাড়ি যেতে চাইছে কিন্তু রাইয়ের বাবা সাফ বলে দিয়েছে ” রাইয়ের বেবি না হওয়ার পর্যন্ত কেউ যেনো এই বাড়ি থেকে না যায়” উওরে জিহাতের মা আর কিছু বলে না।
জিহাত শুধু সুযোগ খুজছে রাইকে একা পাওয়ার। কতোদিন হয়ে গেলো বউকে কাছে পায় না। আলাদা করে দুটো কথা বলতে পারে না। খুব বাজে ভাবে যাচ্ছে জিহাতের দিন কাল। রাইয়ের বুঝি ইচ্ছে করে না জিহাতের সাথে কথা বলার? ওর বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর? জিহাতের তো তেমনভাবে ঘুমই হয় না।
জিহাতের মা গেছে কলেজে। রাইয়ের বাবা বাজারে গেছে। রাইয়ের মা রান্না করছে। জিহাত চুলে যায় রাইয়ের রুমে।
রাই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিজেকে দেখছে। ধবধবে ফর্সা মুখটা অনেকটা কালো হয়ে গেছে। পেটটা বেশ বড় হয়েছে। ঢিলেঢালা একটা মেক্সি পড়েছে রাই। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। ঠোঁট শুকিয়ে গেছে। আগের থেকে বেশ গলুমলু দেখায়। সিল্কি লম্বা চুল গুলো উঠে যাচ্ছে। মাএ আট মাসে নিজের এরকম অদ্ভুত পরিবর্তন দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে রাই। পেটে হাত দিয়ে বলে
“তোর জন্য তোর মা একদম পেত্নী হয়ে গেছে। তোর বাবা এখন আর তোর মাকে ভালোবাসবে না। অফিসের মিনিস্কার্ট পড়া মেয়েদের ভালোবাসবে। তুই কিন্তু একদম তোর বাবার কথা শুনবি না। তোর বাবার কাছে যাবিও না
জিহাত দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিলো। রাই আয়নার সামনে থেকে খাটে যেতে নেয়। পেটটা এতো বড় হয়েছে যে রাইয়ের হাটা চলা করতেও কষ্ট হয়।রাই পেট ধরে হাঁটছে জিহাত ভিডিও করে। বাবু বড় হলে দেখাবে তাই।
জিহাত রাইয়ের পাশে এসে বসে।
“দেখুন এটা কিন্তু আমার একার বেবি না। আমি আপনার বেবিকে নিজের মধ্যে বড় করছি
” তো
“তো আমি সুন্দর না বলে একদম অন্য মেয়েদের পিছু নেবেন না। তাহলে নেইমার আপনার সাথে কথা বলবে না।
” নেইমার কে?
“আমার বেবির নাম রাখবো জুনিয়র নেইমার।
” কিহহহহহহ
“চিল্লান কেন?
” যদি মেয়ে হয়
“মেয়ে হবে না। ছেলে হবে। আর নাম হবে নেইমার। আর আমার নেইমার বড় হয়ে নেইমারের মতো ফুটবল খেলবে। বিশ্ব কাপ জিতবে
জিহাত মাথায় হাত দেয়
” আমার ছেলের নামটা এতো জঘন্য হবে
বিরবির করে বলে
“কিছু বললেন?
রাই ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে।
” না হ তো
“অন্য কারো দিকে তাকালো চোখ গেলে দেবো
” পরির মতো একটা বউ থাকতে অন্য মেয়েদের দিকে তাকাবো কেন।
রাই জিহাতকে জড়িয়ে ধরতে যায় জিহাত বাধা দেয়। জিহাত রাইকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে
“খুব ভালোবাসি আমার বউটাকে
” আমিও। আপনাকে ছাড়া ঘুম আসে না
“আমারও। তবুও একটু কষ্ট করো। ঘুমের মধ্যে হাত পা ছোড়ার অব্ভাস আমার। যদি তোমার লেগে যায়? আর কয়েকমাস
” হুমমম
পাঁচ বছর পরে
রাই খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে এদিক ওদিকে ছোটাছুটি করছে আর ডাকছে
“নেইমার সোনা না খেলে তোমার বসের মতো খেলবে কি করে?
বাবুটা বল নিয়ে ছুটছে তো ছুটছেই
” আমার বস এরকম মাছ ভাত খায় না। আমি বেয়ার খাবো
পিচ্চির কথা শুনে রাই দাঁড়িয়ে যায়। এটা আমার ছেলে তো
জিহাত অফিস থেকে ফিরে দেখে রাই গালে হাত দিয়ে বসে আছে।
“রাই রোহন কোথায়?
রোহন দৌড়ে এসে একটা ভাব নিয়ে বলে
” একদম রোহন বলবা না। আমি নেইমার। জুনিয়র নেইমার আমার নাম
জিহাত ভ্রু কুচকে বলে
“তুমি রোহন। প্রতিবন্ধি
রাই লাফ দিয়ে উঠে বলে
” যেটা বলতে যাচ্ছিলেন ওইটা বললে আমি আর নেইমার আপনার চুল ছিড়ে ফেলবো
রোহনও তাল মেলায়। জিহাত মাথায় হাত দিয়ে বসে।
“ঠিক আছে আমি চুপ করলাম
জিহাতের মা শরবত এনে দেয় জিহাতকে। এক ঢোকে শরবত গিলে ফেলে জিহাত।
” রোহন খেয়েছে
রাই প্লেট দেখিয়ে বলে
“পাক্কা দুই ঘন্টা ওর পেছনে দৌড়ে দুই লোকমা ভাতও খাওয়াতে পারি নি। জানেন কি বলে
” কি বলে
“নেইমার না কি ভাত খায় না। ও বেয়ার খাবে
জিহাত মুখ টিপে হাসে। জোরে হাসলে আবার কপালে শনি আছে
” যেমন মা তেমন ছেলে
বিরবির করে বলে জিহাত।
তারপর মোবাইলে গেমন বের করে দিয়ে রোহনকে খাইয়ে দেয় জিহাত। আর জিহাতের মা মাছের কাটা বেছে দেয়। রাই মুখ বেকিয়ে বলে
“তিনটা বল দিলাম তাও খাইলো না। এই ছেলে আবার বিশ্ব কাপ জিতবে
রোহন খাওয়া শেষে বলে
” বাবা তুমি বলেছিলে আমাকে এখন ড্রিংক এনে দেবে।
রাই বড়বড় চোখ করে তাকায়। জিহাত মামপটে দুধ ভরে রোহনের সামনে যায়।
“তোমার বেয়ার
” এটা তো দুধ
“নেইমার বড় খেলোয়াড় তো তাই দুধ কে বেয়ার বলে
” ওহহহ
বলে রোহন দুধ খেতে থাকে। জিহাত রাইকে চোখ মেরে বলে
“এভাবে খাওয়াতে হয়।
” জানি জানি
জিহাত মুচকি হাসে। এই মেয়েটা স্বীকার করবে না যে ও রোহনকে সামলাতে পারে না। জিহাত রোহনকে বুকে জড়িয়ে ল্যাপটবে কাজ করে। রাই এসে জিহাতের পিঠে মাথা রেখে বসে।জিহাত চোখ বন্ধ করে বলে “আলহামদুলিল্লাহ ”
সমাপ্ত