তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি?,পর্ব_১৩,১৪

0
2342

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি?,পর্ব_১৩,১৪
Anika Fahmida
পর্ব_১৩

–তাই নাকি অনু? আমার হাসি দেখলে তোর কলিজায় লাগে? তাহলে তো আমার বেশি বেশি করে হাসা উচিত। যাতে তোর কলিজায় বার বার করে লাগে।

অনু আবারও আদ্রের দিকে ফিরে বলল,

–আমি হঠাৎ করে কথাটা বলে ফেলেছি আদ্র। তুমি কিছু মনে করো না।

আদ্র অনুর দিকে গম্ভীর দৃষ্টি রেখে বলল,

— আমি কিছু মনে করি নি। আচ্ছা আমি গেলাম।

অনু ভয় পেয়ে আদ্রকে বলল,

–কোথায় যাচ্ছো তুমি?

–যেখানে মন চায় সেখানে যাবো।

–আমাকে ফেলে চলে যাবে?

–হ্যা যাবো। আমি তোকে সাথে নিয়ে কেন যাবো? কোথাও গেলে আমি একা যাবো।

–আমাকে ভুত মেরে ফেললেও তোমার কিছু যায় আসে না আদ্র? এতো নিষ্ঠুর তুমি?

আদ্র অনুর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাল। অনু ভয়ে মাথা নিচু করে চুপ করে রইল। আদ্র অনুকে বলল,

–বিছানায় গিয়ে চুপ করে বসে থাক।

অনু মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,

–বিছানায় বসলেও কি হবে? তুমি তো আর ফিরবে না।

আদ্র অনুর সাথে আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চলে গেল৷ অনুর এবার ভয় হতে লাগল। আদ্র যখন অনুকে এখানে নিয়ে এসেছিল তখন অনু আদ্রের কোলে থাকা অবস্থায় এই বাড়ির আশেপাশটা খুব ভালো করে দেখেছিল। প্রচুর ভুতুড়ে দেখতে বাড়িটা। এই বড় বিশাল বাড়িতে কেউ নেই। নিশ্চয়ই একটু পর ভুত এসে অনুকে ভয় দেখাবে। অনু বিছানার উপর বসে গেল। আশেপাশে একটা কাঁথাও নেই যে অনু গায়ে জড়িয়ে নিজেকে আড়াল করবে। অনু মনে মনে বলল,

–আদ্র আমাকে ফেলে চলে গেল! আমি এখন কি করে বাঁচব? আমাকে তো ভুত এসে মেরে ফেলবে।

ভয়ে অনুর কান্না চলে আসল। অনু কোনোরকম বসে রইল। বেশ কিছুক্ষণ পর কিছু একটা জোরে পরার আওয়াজ হলো। অনু ভয়ে আঁতকে উঠল। ভয়ে শুকনো ঢুক গিলল। মাথার উপর ফ্যান চলছে। তবুও অনু ঘামতে লাগল। অনু ভয় পাওয়া স্বরে বলল,

–কে ওখানে?

কিন্তু অনুর কথায় কেউ সাড়াশব্দ দিল না। দরজার সামনে দিয়ে একটা মানুষের আকৃতির ছায়া চলে গেল। অনু এবার চোখ বড়বড় করে সেখানে তাকিয়ে রইল। এ বাড়িতে নিশ্চয় ভুত আছে এটা অনু ভাবছে৷ নাহলে কিসের ছায়া দেখল। একটু পরেই রুমে ভিতর বিশাল সাদা কাপড় পড়ে কেউ একজন ঢুকল। অনু ভয় পেয়ে বিছানার উপর লাফিয়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে উঠল,

–ভুত! ভুত! কেউ বাঁচাও আমাকে। আদ্র কোথায় তুমি?ভুত আমাকে মেরে ফেলল!

সাদা কাপড় জড়ানো ভুতটা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসল। ভুতের মুখটাও সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা। তাই অনু ভুতের মুখটাও দেখতে পারে নি। ভুতটা এগিয়ে আসতে আসতেই জোর গলায় অনুকে বলল,

–আজ তোকে আমি খেয়ে ফেলবো। কোথায় যাবি তুই? হা হা হা। হাউ মাউ খাও। মানুষের গন্ধ পাও।

অনু বিছানা থেকে নেমে রুমের একদম কোণায় দেয়ালের সাথে চেপে দাঁড়াল। অনু চিৎকার করে ভয় পাওয়া স্বরে সাদা কাপড় জড়ানো ভুতটিকে বলল,

–একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না। একদম না। দূরে যাও। প্লিজ আমাকে মেরো না।

কিন্তু সেই সাদা কাপড় জড়ানো ভুতটা ধীরে ধীরে অনুর কাছে আসতেই লাগল। তারপর একেবারে অনুর কাছে চলে আসল। অনু ভয় পেয়ে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে নিলে সেই ভুতটা অনুকে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলে। ভুতটি নিজের শরীর এবং মুখ থেকে সাদা কাপড় টেনে খুলে মাটিতে ফেলে দিল। এবার অনু ভুতের মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল। কারণ এটা কোনো সাদা ভুত ছিল না। সাদা ভুতটা আসলে আদ্র ছিল। আদ্র নিজের শরীরে সাদা কাপড় জড়িয়ে রেখেছিল। অনু কান্না করে দিয়ে আদ্রকে বলল,

–আদ্র তুমি আমার সাথে এমন করলে কেন?

আদ্র অনুর গালে আলতো করে হাত রেখে শান্ত স্বরে বলল,

–আই এম সরি অনু ৷তোকে ভয় দেখানোর জন্য ভুত সেজেছিলাম। তুই ভুত খুব ভয় পাস তোর মুখে শুনে নিজেকে ভুত সাজানো থেকে আটকাতে পারলাম না।
আমি জানতে চেয়েছিলাম ভুত সাজলে তোর রিয়াকশন কেমন হয়৷ কিন্তু আমি জানতাম না তুই ভুত দেখে অসুস্থ হয়ে পড়বি। জানলে এমনটা করতাম না। সরি অনু। এই দেখ আমি নিজের কান ধরছি। আর এমন করব না।

অনু নিজেকে আদ্রের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রেগে গিয়ে বলল,

–তুমি আমার সাথে কথা বলবে না। চলে যাও এখান থেকে। খুব পঁচা তুমি আদ্র।

আদ্র আবারও অপরাধী স্বরে বলল,

–অনু আমি সরি বললাম তো!

অনু আদ্রের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

–তোমার সরি তুমি তোমার কাছে রাখো। তুমি জানো আমি কতটা ভয় পেয়েছিলাম? কত ভয় পেয়েছিলাম জানো? তুমি জানো না।

অনুর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। অনুর শরীর এখনও কাঁপছে। আদ্র অনুকে নিজের কাছে আবারও টেনে নিয়ে অনুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল৷ অনু এবার শব্দ করেই কাঁদতে লাগল। আদ্র শান্ত স্বরে অনুকে জড়িয়ে ধরেই বলল,

–আমি আর কখনো তোর সাথে এমন করব না অনু।

অনু কিছু না বলে চুপ করে কাঁদতে লাগল। বেশ অনেক্ষণ পর অনুর কান্না থেমে গেলে আদ্র অনুকে ছেড়ে দিয়ে হাসিমুখে বলল,

–কিন্তু তোর ভয় পাওয়া চেহারাটা খুব ফানি ছিল অনু।

এই বলে আদ্র মুখে হাত দিয়ে হাসি চেপে রাখল। অনু রাগী দৃষ্টিতে আদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,

–আসলে আমি ভুত সাজার জন্য বাইরে যাই নি অনু। তুই ভাবলি কি করে আমি তোকে একা ফেলে দিয়ে বাসায় চলে যাবো? আমি তোর জন্য খাবার কিনতে গিয়েছিলাম৷ আর ভুত সাজার জন্য আমি তোকে আবারও সরি বলছি। আই এম সরি অনু। আমাকে ক্ষমা করে দে।

আদ্র কিছুক্ষণ অনুর পাশে বসে রইল। অনু মন খারাপ করে বসে আছে। আদ্র রুম থেকে আবারও বেড়িয়ে গেল। দুই মিনিটের মধ্যে হাতে খাবার নিয়ে আদ্র ফিরে আসল৷ আদ্রের হাতের প্লেটে বিড়িয়ানি।অনু বিছানায় বসে আছে মন খারাপ করে। আদ্র খাবার হাতের মুঠোয় করে মুচকি হেসে অনুকে বলল,

— হা কর।

অনু মুখ অন্যদিকে করে গম্ভীর স্বরে বলল,

–আমি খাবো না।

আদ্র রেগে গিয়ে অনুকে বলল,

–কি বললি তুই?খাবি না? না খেলে তোর হাল যে আমি কি করব তা কিন্তু তুই কল্পনাও করতে পারবি না।ভালোয় ভালোয় বলছি খাবার খেয়ে নে অনু। হা কর।

আদ্র রেগে গেছে দেখে অনু ভয় পেয়ে আদ্রের হাতে খাবার খেতে লাগল৷ অনুর খাবার খেতে খেতে আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,

–তুমি খাবার খাবে না?

আদ্র অনুকে খাইয়ে দিতে দিতেই বলল,

–আমি পড়ে খাবো।

–পড়ে বলতে কখন খাবে?

–নিজেও জানি না। তবে পড়ে খাবো বললাম তো।

–তুমিও আমার সাথে খাও।

আদ্র শান্ত স্বরে অনুকে বলল,

–অনু আমি পড়ে খাবো। তোর জন্য খাবার এনেছি। তাই তোকেই খেতে হবে।

অনু আদ্রের কাছ থেকে খাবার প্লেট কেড়ে নিয়ে বলল,

–তুমি না খেলে আমিও আর খাবো না। আমি তোমাকে খাইয়ে দিবো। হা কর।

আদ্র অনুর দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তারপর হা করল। অনু আদ্রকে খাবার খাইয়ে দিতে লাগল। আদ্র বেশি খাবার খেলো না। অনুর হাত থেকে প্লেট কেড়ে নিয়ে আদ্র বলল,

–অনু তুই আমাকে অনেক খাইয়ে ফেলেছিস। আমাকেই যদি সব খাবার খাইয়ে ফেলিস তাহলে তুই কি খাবি?

অনু অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,

–তুমি কোথায় সব খেলে? অল্পই তো খেলে।

–এই অল্প খাবারও আমি খেতাম না৷ কিন্তু কেন খেয়েছি শুনবি?

–হ্যা বলো শুনি।

–এই খাবারটা তুইও খেয়েছিস তাই ভাবলাম তোর খাবারটা খেয়েই নেই। তোকে যদি না করতাম তাহলে তোর খাবার খাওয়ার এই সুযোগটা হাত ছাড়া হয়ে যেত। আমি এটা হতে দিলাম না।

–আদ্র তুমি ভীষণ দুষ্টু। বলতে গেলে তুমি ভীষণ লুচু।

আদ্র অনুকে খাইয়ে দিচ্ছিল। অনুর কথা শুনে খাবার খাওয়ানো বাদ দিয়ে অনুকে অবাক হয়ে বলল,

–কি বললি তুই? আমি লুচু?

–হ্যা লুচুই তো।

–কিভাবে লুচু হলাম?

–অনেকভাবেই। আমি বলতে পারবো না।

–বল নাহলে তোর খবর আছে।

–এই যে এখন বললে আমি এই খাবার খেয়েছি দেখে তাই তুমি এই খাবার খেলে।

–আর কি কি?

–আবার আমার ঠোঁট তোমার জন্য জ্বলছে। সেই খেয়াল তোমার আছে? খাবারের মরিচ আমার কাটা ঠোঁটে জ্বলছে। লুচু তুমি।

অনুর কথা শুনে আদ্র হাসতে লাগল। অনু আদ্রকে রাগী স্বরে বলল,

–আমার কষ্টে তোমার হাসি পাচ্ছে?

আদ্র হাসি থামিয়ে অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,

–আমি তোকে কষ্ট কখন দিলাম?

–আমার ঠোঁটে তোমার জন্য ব্যথা পেয়েছি।

–আমি তো আর ইচ্ছে করে তোকে কিস করতে চাই নি। বিদেশ থেকে এসে তোকে এতদিন পর সামনে থেকে দেখলাম তাও আবার তুই গভীর ঘুমে ছিলি। তাই কিস করে তোকে একটা শিক্ষা দিলাম।

–এটা আবার কেমন শিক্ষা?

আদ্র অনুর মুখে খাবার দিয়ে বলল,

–এটা ভালোবাসার শিক্ষা।

অনু খাবার গিলে আদ্রকে বলল,

–ভালোবাসার শিক্ষা এতো ভয়ংকর হয়?

–হ্যা ভয়ংকর হয়।

–কেন ভয়ংকর হয়?

–চুপ থাক অনু। তুই বেশি কথা বলছিস।

অনু চুপ হয়ে গেল। অনুর খাওয়া শেষ হলে আদ্র অনুর মুখ মুছে দিয়ে রুম থেকে চলে গেল। আদ্র নিজের হাত ধুয়ে আবারও রুমে আসল। আদ্র দেখতে পেল অনু কি যেন ভাবছে। তাই আদ্র অনুর কাছে গিয়ে পাশে বসে অনুকে জিজ্ঞেস করল,

–কি ভাবছিস অনু?

অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,

–ভালোবাসার শিক্ষা এতো ভয়ংকর কেন হয় বলো?

–আবারও একই কথা জিজ্ঞেস করছিস?

–বলো না? খুব জানতে মন চাইছে।

–কাউকে গভীরভাবে ভালোবাসলে এর ফলাফল ভয়ংকর হয় অনু ৷ভালোবাসার মধ্যে একজন হয় শিক্ষক আর একজন হয় স্টুডেন্ট। একজন ভালোবাসার মানেটা খুব বুঝে আর আরেকজন অল্প বুঝলেও অবুঝ হয়। তাই সেই অবুঝকে বুঝাতে হলে ভালোবাসার শিক্ষক হতে হয়। ভালোবাসার শিক্ষা দিতে হয়। আর সেই ভালোবাসার শিক্ষা কখনও সাধারণ হয় না।খুব ভয়ংকর হয়।

অনু হা করে আদ্রের কথা শুনতে লাগল। আদ্র মুচকি হেসে অনুকে বলল,

–এবার বুঝলি অনু?

–একটু একটু বুঝেছি।

–ঐ একটু একটুই তোর জন্য যথেষ্ট।

আবারও সবকিছু নিরব চুপচাপ হয়ে রইল৷ অনু আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,

–আদ্র আমাকে বাসায় যেতে দিবে না?

আদ্র অনুর দিকে গভীর দৃষ্টি রেখে বলল,

–যদি যেতে না দেই তাহলে কি করবি?

–আমার এই ভুতের বাড়িটা ভয় লাগছে।

–এটা ভুতের বাড়ি না। রাজবাড়ী। পুরনো বাড়ি। আর আমি তো তোর সাথে আছিই। তাও ভয় করছে?

–আদ্র বাসায় আমার আম্মু আব্বু চিন্তা করছে। আমার আম্মু আব্বুর কথাও তো একটু ভাবো? আর আংকেল, খালামনি নিশ্চয়ই এতক্ষণে জেনে গেছে তুমি দেশে ফিরে এসেছো। এখনও তুমি তাদের সাথে দেখা করো নি৷ ব্যাপারটা ভালো দেখায় না আদ্র।

আদ্র দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অনুকে বলল,

–ঠিক আছে। আগামীকাল তোকে তোর বাসায় পৌঁছে দিব।

অনু খুশি হয়ে আদ্রকে বলল,

–সত্যি বলছো?

আদ্র হেসে অনুকে বলল,

–হ্যা সত্যি।

অনু আদ্রকে হঠাৎ করেই জড়িয়ে ধরে বলল,

–তুমি খুব ভালো আদ্র।

অনু নিজ থেকে জড়িয়ে ধরায় আদ্র খুশি হলো। আদ্রও অনুকে জড়িয়ে ধরে বলল,

–তোর কাছে যদি মনে হয় আমি ভালো। তাহলে আমি ভালো।

–আমি ভালো বললে তুমি ভালো আর আমি খারাপ বললে তুমি খারাপ? এটা কেমন কথা আদ্র?

–জানি না।

অনু আদ্রকে জড়িয়ে ধরা থেকে ছেড়ে দিয়ে আদ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। আদ্র অনুকে জিজ্ঞেস করল,

–এমন করে কি দেখছিস?

–তোমাকে দেখছি।

–যেমন করে দেখছিস যেন মনে হচ্ছে আমাকে এর আগে কখনো দেখিস নি।

–তুমি ভীষণ পাগল আদ্র।

আদ্র অনুর কপাল থেকে চুল সরিয়ে দিয়ে বলল,

–তোর জন্যই তো পাগল হয়েছি।

–নিজে তো পাগল হয়েছো সাথে আমাকেও পাগল বানিয়েছো।

–তারমানে তুই বলতে চাইছিস আমার জন্য তুই পাগল হয়েছিস অনু?

–হ্যা তোমার জন্যই তো পাগল হয়েছি।

অনুর কথা শুনে আদ্র হাসতে লাগল। অনু আদ্রকে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,

–হাসছো কেন আদ্র?

আদ্র হাসি থামিয়ে দিয়ে অনুকে বলল,

–এমনি।

–এমনি এমনি কেউ হাসে?

আদ্র অনুর হাত নিজের মুঠোয় ধরে বলল,

–এই গভীর রাতে আমার সাথে এখন বাইরে যাবি অনু?

অনু আদ্রের কথা শুনে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,

–এতো রাতে বাইরে যাবো কেন? যদি রাস্তায় ভুত থাকে?

–কোনো ভুত নেই। আর যদি কোনো ভুত থাকে তাহলেও কি হবে? আমি আছি তো তোর সাথে৷ আমাকে দেখে সব ভুত পালাবে।

অনু আদ্রের কথা শুনে হেসে ফেলল।

চলবে…

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি?
পর্ব_১৪
Anika Fahmida

গভীর রাতে আদ্র এবং অনু পাশাপাশি হেঁটে চলেছে। আদ্র গম্ভীরভাবেই অনুর হাত ধরে হাঁটছে। অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে শুধু মুচকি হাসছে। আদ্র অনুর দিকে হঠাৎ করে তাকালে অনু মুচকি হাসি থামিয়ে দিল। অনুর হাসি থামানো দেখে আদ্র অনুকে বলল,

–তোর হাসিটা ভালোই তো লাগছিল। আবার মুখটা এমন করলি কেন?

অনু মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,

–তুমি তো আমাকে বকা দিবে। বলবে আমি বোকার মতো কেন এতো হাসছি? পাগল হলাম কিনা!

আদ্র হেসে অনুকে বলল,

–বাহ্ অনু। তুই তো আমাকে ভালো বুঝে ফেলেছিস দেখছি। তোর এতো উন্নতি কিভাবে হলো?

–তোমাকে ভালোবাসি আর তোমাকে বুঝবো না এটা কি করে হয়? আগে অবশ্য তোমাকে বুঝতাম না। এখন বুঝতে পারি।

আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,

–কিন্তু তুই আমাকে এখনও বুঝতে পারিস নি অনু।

অনু আদ্রকে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,

–কেন? আমি তোমাকে বুঝতে পারি নি?

–না, পারিস নি। তোর হাসি আমার কাছে কখনো বোকার মতো মনে হয় না বরং তোর হাসি আমার কাছে ভালো লাগে। একটু বেশিই ভালো লাগে।

আদ্রের কথা শুনে অনু খুশি হলো। কিন্তু কিছু বলল না।রাতের আকাশে মস্ত বড় ঝলমলে চাঁদ উঠেছে। চাঁদের চারিপাশে তারাগুলো ঝিকমিক করছে। হালকা শীতল বাতাস বয়ে যাচ্ছে। সেই বাতাসের সাথে অনুর খোলা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখের সামনে এসে পড়ছে। এতে অনু বেশ বিরক্ত হচ্ছে। রাস্তার আশপাশে কেউ নেই। সব নিরব, নিস্তব্ধতায় ছেয়ে আছে। আদ্র নিজের বাম হাতের সিলভার ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখল ২ঃ২৩ বাজে। আদ্র অনুর হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতেই অনুর দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে অনুকে ডাক দিল,

–এই অনু?

অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

–হ্যা বলো আদ্র।

–আমি তোকে আগে গান শুনালেও, তুই আমাকে কখনও গান শোনাস নি। একটা গান শোনাবি?

অনু আদ্রকে অসহায় মুখ করে বলল,

–কিন্তু আমি তো গান গাইতে পারি না আদ্র। কিভাবে তোমাকে গান গেয়ে শোনাবো?

–তোর যেই গানটা বেশি ভালো লাগে। ঐ গানটাই আমাকে গেয়ে শোনা। তুই গান গাইতে না পারলেও কি হয়েছে? একবার গান গেয়ে চেষ্টা তো করতে পারিস? অন্তত আমার জন্য।

অনু কিছুক্ষণ ভেবে ঘাবড়ে গিয়ে বলল,

–ঠিক আছে আদ্র। কিন্তু আমার গানের গলা যদি ভালো না হয় তাহলে কিন্তু তুমি হাসতে পারবে না। প্রমিস করো হাসবে না?

আদ্র মুচকি হেসে অনুকে বলল,

–হ্যা প্রমিস করলাম। হাসবো না। এবার গান গেয়ে শোনা। আমি অপেক্ষা করে আছি তো।

অনু আদ্রের হাত আরও শক্ত করে ধরে আদ্রের দিকে তাকিয়ে গান গাইতে লাগল,

Tuu aata hai seene mein
Jab jab saansein bharti hoon
Tere dil ki galiyon se
Main har roz guzarti hoon
Hawaa ke jaise chalta hai tu
Main ret jaisi udti hoon
Kaun tujhe yun pyar karega
Jaise main karti hoon
Ho ho ho ho….

আদ্র এতক্ষণ অনুর সাথে হাঁটলেও এবার থেমে গেল। আদ্র হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ায় অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে বলল,

–গান ভালো হয় নি? তাই না? আমি জানতাম।

আদ্র মুগ্ধ হয়ে অনুকে বলল,

–তুই জানিস অনু তুই কত ভালো গেয়েছিস?

–না, জানি নাতো। অবশ্য তোমার জন্য গান গেয়েছি তাই হয়তো ভালো হয়েছে।

আদ্র খুশিমনে অনুকে বলল,

–মন থেকে গান গাইলে গান গাওয়া কখনো খারাপ হতে পারে না অনু। চাইলেও খারাপ হতে পারে না।

অনু লাজুক হেসে আদ্রকে বলল,

–গানের প্রতিটা লাইন কিন্তু আমি তোমার জন্য গেয়েছি আদ্র। শুধু তোমার জন্য।

–হ্যা আমার জন্যই তো গাইবি। আর কার জন্য গাইবি? নাকি পাশের বাসার আন্টির জন্য গাইবি? হুম?

অনু রাগী দৃষ্টিতে আদ্রের দিকে তাকিয়ে আদ্রকে বলল,

–তুমি এভাবে আমাকে বলতে পারলে আদ্র?

আদ্রের হাসি পেলেও হাসি চেপে রেখে অনুকে বলল,

–তোকে কি বলতে পারলাম?

অনু মন খারাপ করে বলল,

–এই যে তোমার জন্য না গেয়ে পাশের বাসার আন্টির জন্য গান গেয়েছি কিনা!

আদ্র অনুর কথা শুনে এবার শব্দ করে হেসেই বলল,

–মজা করছিলাম অনু। মন খারাপ করিস না। অবশ্য আমার অনু মন খারাপ করে মুখ ফুলিয়ে রাখলে চেহারাটা দেখতে একদম গোল আলুর মতো লাগে।

অনু চোখ বড়বড় করে আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,

–কি আমি গোল আলু?

–হ্যা তা নয়তো কি?

অনু আদ্রের পিঠে জোরে কিল দিল৷ আদ্র ব্যথা পেয়ে পিঠে হাত দিয়ে বাচ্চার মতো মুখ করে অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,

–অনু তুই আমাকে এভাবে মারলি? জানিস কত ব্যথা পেয়েছি।

অনু হাসতে হাসতে আদ্রকে বলল,

–বেশ করেছি।

অনু খুশিতে লাফাতে লাফাতে হাঁটতে লাগল৷ কিন্তু অনুর পায়ে হাই হিল পড়ে থাকায় অনু হোচট খেয়ে পড়ে যেতে লাগলে আদ্র অনুকে সাথে সাথেই শক্ত করে চেপে ধরল। আদ্র অনুকে ধমক দিয়ে রাগী স্বরে বলল,

–এতো লাফাচ্ছিলি কেন অনু? আরেকটু হলেই তো পড়ে গিয়ে ব্যথা পেতি।

অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,

–আমি পড়ে যেতে নিলেও তুমি আমাকে ধরে ফেলবে এই আশায় তো কোনো দ্বিধা ছাড়াই লাফাচ্ছিলাম৷

–আমি যদি তোকে না ধরতাম তাহলে কি হতো?

–কি আর হতো? পড়ে গিয়ে ব্যথা পেতাম। কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল তুমি আমাকে ধরে ফেলবে।

আদ্র অনুর কথা শুনে অনুর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আর অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল। আদ্র অনুকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিল।এমন সময় আদ্রের ফোন বেজে উঠল।আদ্র ফোনটা পকেট থেকে বের করে দেখল আদ্রের বাবা ফোন করেছে। অনু আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,

–কে ফোন করেছে আদ্র?

আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,

–বাবা ফোন করেছে।

–আংকেল ফোন করেছে তাহলে ফোনটা ধরো।

–ধরতে ইচ্ছে করছে না।

–আদ্র আংকেল নিশ্চয়ই তোমাকে নিয়ে চিন্তা করছে। ফোন ধরে দেখো তিনি কি বলেন।

আদ্র অনিচ্ছা নিয়েই ফোনটা রিসিভ করে বলল,

–হ্যালো বাবা, কি বলবে বলো।

আদ্রের বাবা আনোয়ার হোসেন গম্ভীর স্বরে বলল,

–তুমি দেশে ফিরে এসেছো আদ্র?

–হ্যা বাবা আমি দেশে ফিরে এসেছি।

আনোয়ার হোসেন অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,

–কই আমাকে তো একবার জানালে না। আর তোমার তো আরও তিন বছর পর দেশে আসার কথা। এতো তাড়াতাড়ি চলে এলে কেন? তোমার পড়াশোনার যে কি পরিমাণ ক্ষতি হবে তা তোমার কোনো ধারণা আছে?

আদ্র তার বাবার কথা গুরুত্ব না দিয়েই বলল,

–ধারণা থাকলেও আমার কিছু যায় আসে না বাবা। আমার লন্ডনে ভালো লাগছিল না। তাই আমি চলে এসেছি। এখানে এতো কথা বলার কি আছে আমি বুঝতে পারছি না।

আনোয়ার হোসেন এবার কঠোর স্বরে আদ্রকে বলল,

–তুমি দেশে এসেছো ভালো কথা। কিন্তু তুমি অনুকে তুলে নিয়ে গিয়ে কোথায় গেছো? অনুর মা-বাবা কত চিন্তা করতে পারে তুমি জানো না? অনুর মা-বাবার কাছে আমি লজ্জায় কিছু বলতেও পারছি না। আমার ছেলে কিনা তার কাজিনকে বিকেল বেলা কাউকে না বলে তুলে নিয়ে গেল!

আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে তারপর আনোয়ার হোসেনকে শান্ত স্বরে বলল,

–অনু ভালো আছে বাবা। অনুর জন্য তোমরা চিন্তা করো না। আমি কাল সকালে অনুকে ওর বাসায় পৌঁছে দিবো।

আনোয়ার হোসেন অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,

–কাল সকালে মানে? আদ্র তুমি এসব কি বলছো? অনু তোমার কাজিন হয়। একটা অবিবাহিত মেয়েকে তুমি তুলে নিয়ে চলে গেলে৷ লোকজন শুনলে কি বলবে?

–লোকজনের কথা আমি পাত্তা দেই না বাবা। এখন ফোনটা রাখি।

আনোয়ার হোসেন আদ্রকে জোর গলায় বলল,

–আদ্র আমার কথা শুনো?

আদ্র ফোনটা কেটে দিল। অনু আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,

–আংকেল কি বললো আদ্র?

আদ্র মুখটা গম্ভীর করেই অনুকে বলল,

–কিছু না৷ চল ফিরে যাই।

–কোথায় যাবো? আমাকে বাসায় দিয়ে আসবে?

–আমি কি একবারও এই কথা তোকে বলেছি?

–তাহলে কোথায় যাবো?

–পুরনো রাজবাড়ী। তোর মতে সেই ভুতের বাড়ি।

আদ্রের কথা শুনে অনু ভয়ে শুকনো ঢুক গিলে বলল,

–আমার ঐ বাড়িটা ভয় লাগে। অন্য কোনো বাসায় চলো না আদ্র? কোনো নরমাল বাড়ি?

আদ্র অনুর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,

–একদমই না। ভুতুড়ে বাড়িরটায় তোর সাথে থাকতে আমার ভালো লাগছে। যেই ভালো লাগা অন্য বাড়িতে পাওয়া যাবে না।অসম্ভব।

আদ্রের কথা শুনে অনুর শরীর কাঁপতে লাগল। অনুর শরীর কাঁপছে দেখে আদ্র বুঝতে পারল অনু আর হাঁটতে পারবে না। তাই আদ্র অনুকে কোলে তুলে নিল৷ অনু অবাক হয়ে আদ্রের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল। আদ্র অনুকে নিয়ে আবারও সেই রাজবাড়ীতে চলে গেল। অনুকে আগের রুমের বিছানায় বসিয়ে দিয়ে আদ্র অনুর পাশে বসে সিগারেটে আগুন ধরিয়ে সিগারেট খেতে লাগল। অনু কাশতে লাগল। কাশতে কাশতেই অনু বড়বড় চোখ করে আদ্রের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল,

–আদ্র তুমি তো আগে কোনোদিন সিগারেট খেতে না। তাহলে এখন সিগারেট খাচ্ছো কেন?

আদ্র অনুর দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকাল। তারপর সিগারেট খেতে খেতেই অনুকে শান্ত স্বরে বলল,

–তোর থেকে দূরে থাকার পর এই সিগারেটটাই আমার একমাত্র সঙ্গী। এখন আমি সিগারেট ছেড়ে কি করে থাকি বল তো অনু? আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।

আদ্রের কথা শুনে অনুর ভীষণ কান্না পাচ্ছে। এদিকে আদ্র সিগারেট খাচ্ছে এটা অনু নিজ চোখে দেখে অনুর সহ্য হচ্ছে না। অনু আদ্রের হাত থেকে খপ করে সিগারেট কেড়ে নিয়ে মাটিতে ফেলে দিল। আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে জিজ্ঞেস করল,

–সিগারেটটা ফেলে দিলি কেন অনু?

অনু রেগে গিয়ে আদ্রকে বলল,

–তুমি আর কোনোদিনও সিগারেট খাবে না আদ্র। কোনোদিনও না। তখন তোমার কাছে আমি ছিলাম না। তাই তুমি সিগারেটকে নিজের সঙ্গী বানিয়েছিলে। কিন্তু এখন আমি তোমার কাছে আছি। তাই তোমাকে আমি সিগারেট খেতে কিছুতেই দিব না।

–কিন্তু এতোদিনের অভ্যাস কি করে ছাড়বো?

–সিগারেট তোমার দুই বছরের অভ্যাস কিন্তু আমি তোমার কত বছরের অভ্যাস আদ্র? আমার জন্য সিগারেট খাওয়া ছাড়তে পারবে না?

আদ্র অনুর দিকে তাকিয়েই বলল,

–তুই আমার ছোটবেলার অভ্যাস অনু। বছরের পর বছরের অভ্যাস। যেই অভ্যাসকে আমি চাইলেও ছাড়াতে পারবো না। সিগারেট ছাড়তে পারবো কিন্তু তোকে কখনো ছাড়তে পারবো না।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here