তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি?,পর্ব_২২

0
2719

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি?,পর্ব_২২
Anika Fahmida

আদ্র খুশিমনে গাড়ি ড্রাইভ করছে৷ অনু মন খারাপ করে আদ্রের পাশে বসে আছে। অনুর মন খারাপ দেখে আদ্র অনুকে জিজ্ঞেস করল,

–তোর মন খারাপ কেন অনু?

অনু গম্ভীর স্বরে আদ্রকে বলল,

–পল্লবের জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে আদ্র। আমাকে তো পল্লব সত্যিই খুব ভালোবাসে। তুমি বিদেশ যাওয়ার পর পল্লবই কিন্তু আমার পাশে ছিল। পল্লব এক মুহুর্তের জন্যেও আমার মন খারাপ হতে দেয় নি। সব সময় মজার গল্প করে আমাকে হাসিয়ে পেট ব্যথা করে ফেলত। নিশ্চয়ই এখন পল্লবের খুব মন খারাপ।

আদ্র গাড়ি একপাশে ব্রেক করে থামিয়ে দিল। হঠাৎ আদ্রের গাড়ি থামানো দেখে অনু অবাক হলো। আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে অনুকে রাগী স্বরে বলল,

–তোর সমস্যা কি বলতো আমায়?

অনু ভয় পাওয়া স্বরে অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,

–আমি কি করলাম আদ্র?

আদ্র গাড়ির জানালার বাইরে তাকিয়ে অভিমানী স্বরে অনুকে বলল,

–হঠাৎ এতো পল্লবের জন্য তোর দরদ কেন হচ্ছে? পল্লবকে আবার ভালোবেসে ফেলেছিস নাকি?

অনু মন খারাপ করে মাথানিচু করে আদ্রকে বলল,

–এসব তুমি কি বলছো আদ্র?পল্লবকে আমি ভালো বন্ধু ছাড়া আর কিছু ভাবি না তুমি তো জানো? তাহলে এসব কেন বলছো? আমি পল্লবকে ভালোবাসি না এটা ঠিক। কিন্তু পল্লব আমার খুব ভালো বন্ধু।

আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কঠিন গলায় বলল,

–আমার সামনে পল্লবের নাম তুই একদম নিবি না৷ তুই শুধু আমার। তোর মুখে আমি অন্য কোনো ছেলের নাম শুনতে চাই না অনু। আশা করি তুই আমার কথাটা মাথায় রাখবি।

অনু হতাশ গলায় আদ্রকে বলল,

–আচ্ছা ঠিক আছে। আর পল্লবের নাম নিবো না। কিন্তু আমার পল্লবের জন্য খুব খারাপ লাগছে আদ্র। এই মন থেকে খারাপ লাগাটা কি করে দূর করি?

আদ্র এবার চিৎকার করে অনুকে বলল,

–পল্লবের জন্য মন খারাপ লাগছে? ওকে ফাইন। চল তোকে পল্লবের বাসায় দিয়ে আসি। পল্লব তোর মন ভালো করে দিবে।

অনু চমকে উঠে ভয় পাওয়া গলায় আদ্রকে বলল,

–না, না আদ্র। আমি পল্লবের বাসায় যাবো না। আমি তো তোমার সাথে মজা করছিলাম। তুমি আমার উপর রাগ করো না প্লিজ। আমাকে ক্ষমা করে দাও।

আদ্র গালে হাত দিয়ে ভাবার চেষ্টা করে বলল,

–উমমম…হ্যা তোকে আমি ক্ষমা করতে পারি। তবে আমার একটা শর্ত আছে।

অনু চোখ বড়বড় করে আদ্রকে বলল,

–কি শর্ত?

আদ্র দুষ্টু হাসি দিয়ে অনুকে বলল,

–তোকে এখন আমার সাথে এমন ভিন্ন কিছু করতে হবে যাতে আমি খুশি হয়ে যাই। যা তুই আমার সাথে আগে কোনোদিন করিস নি।

অনু বাচ্চাদের মতো মুখ করে আদ্রকে বলল,

–এমন কি করব আমি তোমার সাথে?

আদ্র দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অনুকে বলল,

–তুই ভেবে দেখ।

অনু অনেকক্ষণ ভাবল কি করা যেতে পারে। কিন্তু মাথায় কিছুই তো আসছে না। আদ্র দাঁতে দাঁত চেপে রাগী স্বরে অনু্কে বলল,

–এতো টাইম লাগছে কেন তোর ভাবতে?

অনু ভয় পেয়ে শুকনো ঢুক গিলে আদ্রকে বলল,

–ভিন্ন কিছু করতে হবে তাই না?

আদ্র বিরক্তি স্বরে কপালে হাত দিয়ে অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,

–হ্যা ভিন্ন কিছু।

অনু মনে মনে বলল,

–কি এমন ভিন্ন কিছু করব আমি? মাথায় তো কিছুই আসছে না। এমন কি করা যেতে পারে যাতে আদ্র সাথে সাথেই খুব খুশি হবে? তাড়াতাড়ি ভেবে করতে হবে। নাহলে আদ্র আবারও আমার উপর রাগ দেখাবে।

আদ্র এবার ধমক দিয়ে অনুকে বলল,

–কি হলো অনু তাড়াতাড়ি করছিস না কেন?

অনু আদ্রের মুখের দিকে তাকাল ৷ আদ্রের মুখটা কিছুটা গরমে ঘেমে গেছে। আদ্রের ফর্সা মুখটা লাল টকটকে হয়ে আছে রাগের কারণে। চিকন নাকটাও একটু লাল হয়ে আছে। লালচে ঠোঁট দুটো এমন ভাবে চেপে রেখেছে মনে হচ্ছে খুব বিরক্ত হচ্ছে আদ্র। আদ্রের কপালের সামনের সিল্কি ঘন চুলগুলোও অল্প ঘেমে কপালের সাথে লেপ্টে আছে। গাড়িতে এতো ফুল বলিয়মে এসি ছাড়ার পরেও আদ্র এতো ঘামছে কেন কে জানে! আদ্রের শার্টের বোতামগুলো হালকা খোলা। আদ্রের গলার বামপাশে একটা ছোট্ট কালো তিল স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। অনু আদ্রের গলার কালো ছোট তিলটা আজ প্রথম দেখল। চোখ সরাতে চেয়েও যেন পারছে না। অনুর মাথা এলোমেলো হতে লাগল। অনুর মাথায় একটা ভয়ংকর চিন্তা এলো। ভীষণ ভয়ংকর চিন্তা। অনু আদ্রের কাছে এগিয়ে আসতে লাগল। আদ্র এখনও অনুর দিকে তাকিয়ে আছে। অনু ঠিক কি করতে চাইছে বুঝতে পারছে না। অনু আদ্রের আরও কাছে চলে আসলো। এখন আদ্র আর অনুর দূরত্ব মাত্র এক ইঞ্চি। অনু আদ্রের শার্টের কলার পাশে সরিয়ে দিয়ে আদ্র সেই গলার তিলের জায়গায় গভীর চুমু দিল। আদ্র অনুর কাজে স্তব্ধ হয়ে গেল। আদ্রের পুরো শরীর কেঁপে উঠল। অনুর এই কাজে আদ্রের ভীষণ ভালোও লাগল। অনু এমনটা করবে তা আদ্রের ধারণার বাইরে ছিল। একসময় আদ্রের গলায় অনু হালকা কামড়ও দিল। আদ্র শান্ত স্বরে চোখ বন্ধ করে অনুকে বলল,

–কি করছিস অনু? ভাম্পায়ারের মতো আমার গলায় কামড় দিচ্ছিস কেন? ব্যথা পাচ্ছি তো!

অনু যেন এবার ঘোর থেকে বের হলো। আদ্রের গলার দিকে তাকিয়ে অনু নিজেও স্তব্ধ হয়ে গেল। অনু দেখল আদ্রের বামপাশের গলায় অনুর কামড়ের দাগ বসে লাল হয়ে গেছে। আদ্রের ফর্সা গলা এখন লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। অনু মনে মনে বলল,

–হায় হায় এটা আমি কি নির্লজ্জের মতো কাজ করলাম? আদ্র আমাকে খারাপ ভাববে নাতো?

অনু আদ্রের কাছ থেকে সরে আসতে নিলে আদ্র অনুর হাত চেপে ধরে নিজের কাছে এনে বলল,

–আমার গলায় তুই চুমুর সাথে লাভ বাইটও দিলি অনু? বাহ্ অনু তুই তো দেখছি অনেক দুষ্টু হয়ে গেছিস। কিন্তু তোর এই ভিন্ন কাজে আমি খুব খুশি হয়েছি। হ্যা গলাটা একটু জ্বলছে। কিন্তু এই জ্বালার মধ্যেও একটা শীতল ভালোলাগা অনুভব হচ্ছে।

অনু লজ্জায় আদ্রের দিকে তাকাতে পারছে না। অনু চোখ বন্ধ করে অপরাধী স্বরে বলল,

–আমি ভুল করে এটা করে ফেলেছি। তুমি কিছু মনে করো না। আমার কি যে হলো আমি বুঝতে পারি নি।

আদ্র হেসে অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

–আমি কিছুই মনে করি নি অনু। আমি তো তোরই। তুই আমার সাথে যা ইচ্ছে করতেই পারিস। আমার দিকে চোখ খুলে তাকা অনু।

অনু চোখ বন্ধ করা অবস্থায় মাথা নাড়িয়ে বলল,

–আমি তোমার দিকে তাকাতে পারব না।

আদ্র অনুকে জিজ্ঞেস করল,

–কেন তাকাতে পারবি না?

অনু চোখ বন্ধ রাখা অবস্থায় মুচকি হেসে বলল,

–আমার লজ্জা লাগছে।

আদ্র দুষ্টুমি স্বরে অনুকে বলল,

–আমার দিকে এখন না তাকালে আমি কিন্তু তোকে আরও লজ্জায় ফেলবো অনু। ভেবে দেখ তুই কি করবি।

আদ্র কি করতে পারে অনুর জানা আছে। তাই অনু সাথে সাথে আদ্রের চোখের দিকে তাকাল। আদ্রের এই দুই চোখে তাকালে যে অনু অন্য জগতে হারিয়ে যায় তা কি আদ্র বুঝতে পারে না? অনু বেশিক্ষণ আদ্রের চোখের দিকে তাকাতে না পেরে সাথে সাথে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,

–আর আমাকে লজ্জা দিও না প্লিজ আদ্র।

আদ্র অনুর বাম গালে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে ছেড়ে দিয়ে হাসতে লাগল। অনু গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে নিজেও নিঃশব্দে হাসল। ঠিক সেইটুকু সময়ে পল্লবের চিন্তা অনুর মাথা থেকে চলে গেল। অনুর মন ও মস্তিক জুড়ে শুধু আদ্র ঘুরতে লাগল।

আদ্র অনুকে নিয়ে আদ্রের বাসায় গেল। আনোয়ার হোসেন মন খারাপ করে টিভি দেখছিলেন। আদ্র আর অনুকে আসতে দেখে আনোয়ার হোসেন বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। তিনি অবাক হয়ে বললেন,

–আদ্র বাবা কিছু বলবি?

আদ্র মন খারাপ করে গম্ভীর স্বরে বলল,

–আই এম সরি বাবা। তোমার সাথে না জেনে অনেক খারাপ ব্যবহার আমি করেছি। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও বাবা।

আনোয়ার হোসেন অবাক হয়ে বললেন,

–তারমানে তুমি সব জেনে গেছো?

আদ্র আনোয়ার হোসেনকে বলল,

–হ্যা আমি সব জেনে গেছি।

আনোয়ার হোসেন আদ্রকে বললেন,

–আদ্র তুই যেহেতু সব জেনেই গেছিস তাই তোর ভালোর জন্যই বলছি অনুকে তুই ভুলে যা বাবা। নাহলে পল্লব তোকে মেরে ফেলবে।

আদ্র আনোয়ার হোসেনকে হেসে বলল,

–আর কোনো ভয় নেই বাবা। পল্লব আর তোমাকেও ভয় দেখাবে না। আর আমাকেও মারতে চাইবে না। পল্লব আমার আর অনুর জীবনে বাঁধা হয়েও আসবে না তা পল্লব আমাকে নিজে বলেছে। পল্লব বুঝতে পেরেছে যে জোর করে ভালোবাসা আদায় করা যায় না।

আনোয়ার হোসেন খুশি হয়ে আদ্রকে বললেন,

–তুই সত্যি বলছিস আদ্র?

আদ্র হেসে আনোয়ার হোসেনকে বলল,

–হ্যা বাবা। এবার তুমি অনুর সাথে আমার বিয়ে দিতে আপত্তি করবে নাতো?

আনোয়ার হোসেন হেসে আদ্রকে বললেন,

–একদমই না। আমার অনু মায়ের সাথে আমার আদ্র বাবার বিয়েটা এবার আমি জলদি দিয়ে দিব। আজই আমি অনুর বাসায় গিয়ে অনুর বাবাকে তোমাদের বিয়ে দেওয়ার কথা জানাব।

আদ্র আনোয়ার হোসেনকে খুশি হয়ে বলল,

–লাভ ইউ বাবা।

আনোয়ার হোসেন হেসে আদ্রকে বলল,

–লাভ ইউ টু আমার কিউট সোনা ছেলে।

আনোয়ার হোসেন এবার অনুকে শান্ত স্বরে বললেন,

–অনু মা এতোদিন তোমার সাথে আমি অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দেও মা। আমি খুব নিরুপায় হয়ে তোমাকে অপমান করতে বাধ্য হয়েছিলাম। নাহলে পল্লব ছেলেটা আমার আদ্রের ক্ষতি করে ফেলতো। তুমি আমার উপর রাগ করে নেই তো ?

অনু হেসে আনোয়ার হোসেনকে বলল,

–আমি আপনার উপর একটুও রাগ করে নেই আংকেল। আপনি আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে আমাকে লজ্জিত করবেন না আংকেল। আপনার তো কোনো দোষ ছিল না। আমার মনে কোনো রাগ নেই।

আনোয়ার হোসেন হেসে অনুকে বলল,

–শুনে খুব খুশি হলাম। মনটা আমার হালকা হলো।

রেহেনা পারভিন রান্নাঘর থেকে সব শুনেছে। তাই তিনি ড্রইংরুমে এসে খুশি হয়ে আনোয়ার হোসেনকে বললেন,

–যাক অবশেষে তুমি আমার ছেলের বিয়েটা অনুর সাথে দিতে রাজি হলে। আমার যে কি খুশি লাগছে।

আনোয়ার হোসেন রেহেনা পারভিনকে বললেন,

–হুম এবার তুমিও খুশি হও। যেই রাগ আমার উপর দেখাচ্ছিলে! আমি তো কত কষ্ট পেয়েছিলাম তোমার রাগ দেখে। যাক এবার তোমার মুখে হাসি ফুটল।

আনোয়ার হোসেনের কথায় রেহেনা পারভিন হেসে উঠলেন। রেহেনা পারভিন অনুকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,

–আমার বোনের মেয়েটা আমার ছেলের বউ হবে আমার যে কি ভালো লাগছে! আমি অনুর সাথে বসে সারাদিন গল্প করব। আমরা অনেক জায়গায় ঘুরতে যাবো। ইশ ভাবতেই মনটা ভালো লাগছে।

অনুও রেহেমা পারভিনকে জড়িয়ে ধরে খুশি হয়ে বলল,

–তুমি আমার মিষ্টি শাশুড়ি হবে ভেবেই আমার খুব খুশি লাগছে খালামনি।

রেহেনা পারভিন হাসিমুখে অনুর মাথায় বুলাতে লাগলেন। আদ্র এবার বিরক্তি স্বরে বলে উঠল,

–তোমাদের সবার কথা শেষ হয়েছে? কথা শেষ হলে আমি কি এবার আমার রুমে অনুকে নিয়ে যেতে পারি? অনুর সাথে আমার অনেক কাজ আছে।

রেহেনা পারভিন নিজের গালে ডানহাত রেখে অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,

–আমার ছেলে দেখছি ভীষণ বেশরম হয়ে গেছে! মা- বাবার সামনে বলছে হবু বউয়ের সাথে কাজ আছে! আদ্র তোর কি একটুও লজ্জা নেই?

আদ্র হেসে রেহেনা পারভিনকে বলল,

–অনুকে সামনে পেলে আমার সব লজ্জা জানালা দিয়ে পালিয়ে যায় মা।

রেহেনা পারভিন আদ্রের কথা শুনে হাসতে লাগলেন। আনোয়ার হোসেনও হেসে নিজের রুমে চলে গেলেন। আদ্রের কথা শুনে অনুর গাল লজ্জায় লাল হয়ে গেল। আদ্রের কথা শুনে অনু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে মুচকি হাসল। আদ্র অনুর লজ্জা পাওয়াটা বেশ উপভোগ করল।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here