ভালোবাসি ২,পর্ব-২
Tanisha Sultana (Writer)
“আপনি ওভাবে বসে আছেন কেনো?
তুলির কথা শুনে সায়ানের মাথা রাগে ফেটে যাচ্ছে।
” ওভাবে তাকাচ্ছেন কেনো? তবে একটা কথা বলতেই হচ্ছে রাগ করে কপাল ভাজ করলে না আপনাকে জাস্ট ফাটাফাটি লাগে। আমি তো প্রায় ক্রা
সায়ানের দৃষ্টি দেখে তুলি চুপসে যায়।
“বল বল কি বলতে যাচ্ছিলিস। কথা শেষ কর
ভ্রু বাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করে সায়ান
” না মানে
তুলি উঠে দাঁড়ায়।
সায়ান ভালো করে বসে বলে
“না মানে কি?
সায়ানকে ডেঙিয়ে বাইরে যেতে হবে। তুলি দৌড় দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলো। সায়ানও উঠে দাঁড়ায়।
দরজার সাথে লেগে হাত ভাজ করে দাঁড়ায়।
” মানে, জানি না, পারবো না, হচ্ছে না, হবে না, পসিবল না, এই ওয়ার্ড গুলো জাস্ট বিরক্ত লাগে আমার। সো আমার সাথে যখন কথা বলতে আসবি ভুলেও যেনো এই ওয়ার্ড গুলো মুখ থেকে না বের হয়।
“আমি আবার কখন আপনার সাথে কথা বলতে যায় আপনিই তো আসেন
বিরবির করে বলে তুলি।
” ঠিক আছে।
“গুড। সকাল পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠতে হবে।
” ওকে এলার্ম দিয়ে রাইখেন। জেগে যাবেন
“আমি সারে চারটায় ঘুম থেকে উঠি। তোর কথা বলছি।
” আমি পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠবো
অবাক হয়ে বলে তুলি।
“হুম উঠবি।
” আটটার আগে তো ঘুমের জন্য আমি স্বপ্নও দেখতে পারি না। আটটার সময় ঘুমটা হালকা হয় তখন এক ঘন্টা স্বপ্ন দেখি তারপর নয়টায় ঘুম থেকে উঠি।
“স্বপ্ন এভাবে দেখতে হয়।
” কেনো জানেন না
“না তো।
” তা জানবেন কেমনে? যাই হোক নয়টার আগে কেউ যেনো আমাকে ডিস্টার্ব না করে।
সায়ান তুলির দিকে এগোতে থাকে। তুলি ভরকে যায়।
“তিন ফুট দুরত্ব বজায় রাখতে হয় জানেন না? আপনি খালি কথায় কথায় হুট হাট আমার কাছে চলে আসেন। বাচ্চা মেয়ে আমি। মনের মধ্যে কেমন কেমন করে খালি। ভাল্লাগে না। পরে আবার আপনার কথা মনে পরে।
একটানা চোখ বন্ধ করে বলে কথাগুলো। তারপর চোখ খুলে দেখে সায়ান তুলির একদম মুখের কাছে চলে এসেছে। সায়ানের নিশ্বাসের সাথে সিগারেটের হালকা গন্ধ আসছে। মনে হচ্ছে একটু আগেই খেয়েছে।
” কেমন কেমন হয়?
শান্ত গলায় বলে সায়ান।
“জজজানি না
” তুতলাচ্ছিস কেনো?
তুলি চোখ বন্ধ করে স্কার্টটা মুঠো করে ধরে।
“কাল সকাল পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠবি কেমন
কিছুটা অন্য রকম কন্ঠে বলে সায়ান। সায়ান এই নরমাল কথাটায় তুলির বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে তুলি।
সায়ান হাত দিয়ে তুলির মুখের ওপর পরে থাকা চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দেয়।
“উঠবি?
” হুমমম
চোখ মুখ খিঁচে বলে তুলি। সায়ান বাঁকা হাসে। তুলির গলায় হাত দেয়। তুলির হার্ট জোরে জোরে লাফাচ্ছে। তুলি সায়ানের হাতের ওপর হাত দেয়। মুখটা কালো করে বলে
“প্লিজ
” কয়টায় উঠবি?
“ঠিক পাঁচটায়
” যদি লেট হয়
“হবে না পাক্কা প্রমিজ
“গুড
সায়ান তুলির গলায় থেকে খুলে যাওয়া চেনটা পরিয়ো দেয়। তারপর মুচকি হেসে তুলির মুখে ফু দিয়ে চলে যায়। তুলি ওইভাবেই ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে। সায়ান যাওয়ার সময় সাওয়ার অন করে দিয়ে যায়। তুলির হাতটা আপনাআপনি বুকে চলে যায়।
” কবে যানি হার্ট অ্যাটাক করবো এই লোকটার হুটহাট বিহেব এ।
সায়ানকে বেরিয়ে যেতে দেখে জিসান আর তোহা তুলির কাছে যায়। গিয়ে দেখে তুলি বুকে হাত দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। জিসান তুলির মুখের সামনে দিয়ে হাত নারায়। কিন্তু তুলির খবর নাই
তোহা তুলিকে ধাক্কা দেয়
“এই তুলি
তুলি হকচকিয়ে যায়
” ওহহ তোরা
“কার ভাবনায় বিভোর ছিলি?
জিসান ভ্রু নাচিয়ে বলে
” অনেক কিছু বলার আছে তোদের। তোরা বাইরে যা জাস্ট চেঞ্জ করেই আসছি
তোহা আর জিসান বাইরে গিয়ে পায়চারি করছে
“ওই টুনটুনি বলতো তুলি কি বলবো?
তোহা কোমরে হাত দিয়ে রাগী দৃষ্টিতে তাকায় জিসানের দিকে
” তোহা আমার নাম। তোহা। টুনটুনি না
“ওই একই হলো। টুনটুনিও পাগল তুইও পাগল
” কি বললি তুই
“শুনতে পাস নাই? কালা না কি? পাগল বলছি তোরে।
” তুই পাগল। তোর চোদ্দ গুষ্টি পাগল।
“একদম আমার গুষ্টি তুলে কথা বলবি না
” তুইও আমারে পাগল বলবি না
“দেখা যায় রানু দিদার মতো। আবার কথা বলে
” তোরে হিরো আলমের মতো দেখা যায়।
“সালমান খানরে হিরো আলম বলে বকা দিবি না
ভাব দেখিয়ে বলে জিসান
” ইহহহহহ আইছে সালমান খান। বাঁদর কোথাকার।
“পেতনি
শুরু হয়ে গেছে তুমুল ঝগড়া। তুলি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে। ওদের ঝগড়া টা নতুন কিছু না। পাঁচ মিনিট পরপরই লাগে। তুলি এতে অব্ভস্ত। তাই তুলি চুপচাপ মাথা আঁচড়াচ্ছে।
” থামবি তোরা
তুলির ধমকে ওরা চুপ হয়ে যায়।
“তোদের ঝগড়া এখন আমার বিরক্ত লাগে। আমি মরছি আমার জ্বালায় আর এরা তান্ডব শুরু করছে। ইডিয়েটের দল।
অনেকটা রাগ দেখিয়ে বলে তুলি।
” বল
“তোর ভাই কাল রাতে আমাকে
এইটুকু বলে তুলি খেয়াল করে দরজার বাইরে সায়ান দাঁড়িয়ে আছে।
” এ এখানে দাঁড়িয়ে আছে তো কি? তাও আমি বলবো। সত্যি বলতে তুলি কখনোই ভয় পায় না
মনে মনে সাহস সঞ্চয় করে তুলি।
জিসান আর তোহা হা করে তাকিয়ে আছে শোনার জন্য
“ভাইয়া তোকে কি করেছে?
জিসান জিজ্ঞেস করে
তুলি দুইহাত দিয়ে মুখটা ঢেকে বলে
” চুম্মা দিছে
জিসানের কাশি উঠে যায়। তোহা হা হয়ে গেছে। সায়ান পকেট থেকে হাত বের করে ফেলে। আসলে তুলি ওদের সামনে বলবে এটা সায়ান ভাবেই নাই।
“কি দিছে?
জিসান কোনোরকম কাশি থামিয়ে বলে
তুলি লজ্জায় লাল নীল সবুজ হলুদ হচ্ছে
” ধুর লজ্জা পরে পাস এখন বলে
কিছুটা অধর্য্য হয়ে বলে জিসান
“বলার আগেই লজ্জা পেতে হয় গাঁধা তুই জানিস না
জিসানের মাথায় গাট্টি মেরে বলে তুলি।
” ওকে তাহলে তুই আগে পাঁচ মিনিট লজ্জা পেয়ে নে।
“সায়ান ভাইয়া তোকে কিস করছে। এটা তুই স্বপ্নে দেখছিস রাইট?
তুলি তোহাকে কয়েকটা থাপ্পড় মারে
” এটা স্বপ্ন না। এরা রিয়েল। দেখ এখনো আমার ঠোঁটে সিগারেটের গন্ধ লেগে আছে
তুলি ঠোঁট উল্টে দেখিয়ে বলে।
“এরকম স্বপ্ন দেখতে নেই বোন পাপ হবে
তুলি রেগেমেগে ওখান থেকে বেরিয়ে যায়। সায়ান হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছে।
তুলি একেবারে কিচেনে চলে যায়। ওখানে মামনি মানে সায়ানের মা রান্না করছে। তুলি একটা মুরা নিয়ে গাল ফুলিয়ে মামনির পাশে বসে। মামনি এক নজর তাকিয়ে আবার রান্নায় মনোযোগ দিয়ে বলে
” কি রে কি হয়েছে?
“কমু না
বলে আমার মুখটা পেঁচার মতো করে। কিচেনের চারদিকটা তুলি ভালো করে দেখছে। আগেও দেখেছে কিন্তু ভালো করে দেখা হয় নি।
” মামনি এক কাপ কফি পাঠিয়ে দিও আমার রুমে
বলেই সায়ান তুলির দিকে এক নজর তাকিয়ে চলে যায়।
তুলি এখন ভাবছে কফি বানিয়ে নিশ্চয় মামনি আমাকে দিয়েই পাঠাবে ওনার রুমে। এসব ভেবে তুলি এখন ওখান থেকে চলে আসার পথ খুঁজছে।
“মামনি আমি রুমে যায় বুঝলে। সায়ান ভাইয়ার সাথে তো আবার স্কুলে যেতে হবে। আমি বরং এখন গিয়ে রেডি হয়ে নি।
” সবে সাতটা বাজে আর স্কুলে যাবি সেই দশটায়। তো এতো তারাতাড়ি রেডি হতে হবে না। তুই বরং কফিটা সায়ানকে দিয়ে আয়।
তুলি পরেছে আরেক ঝামেলায়।
“কেনো যে রাগ করে এখানেই আসলাম।ধুর ভাল্লাগে না
মামনি কফি বানিয়ে তুলির হাতে ধরিয়ে দেয়।
যা দিয়ে আয়
তুলি বাধ্য মেয়ের মতো কফির মগটা হাতে নিয়ে সায়ানের রুমের সায়নে দাঁড়ায়।
” দৌড়ে রুমে ঢুকবো তারপর টেবিলে এটা রাখবো তারপর আবার ফুল স্পিডে দৌড়ে চলে আসবো। তাছাড়া আমি তো ওনাকে ভয় পায় না। উনিই খালি আমার কাছে আসে ফু দেয় আর কি কি করে। আজ ওনাকে মনে করিয়ে দেবো আমি ওনার ফুপাতো বোন।
এসব ভাবতে ভাবতে তুলি রুমে ঢুকে।
চলবে