ভালোবাসি ২,পর্ব-৪
Tanisha Sultana (Writer)
তুলি আস্তে করে নিজের হাতটা সায়ানের হাতের ওপর রাখে। সায়ান ভ্রু কুচকে তুলির দিকে তাকায়। তুলি মুচকি হাসছে। তুলির হাসি মুখ দেখে সায়ানও হেসে তুলির হাতটা মুঠো করে ধরে।
“এই তুলি
জিসানের কথায় তুলি হাত সরিয়ে নেয়। পেছনে ঘুরে বলে
” হুম বল
“তুই এতো চুপচাপ কেনো বল তো? এমনিতে তো সারাক্ষণ বকবক করিস।
” এক্সজেকলি আমিও অনেকখন ধরে দেখছি
তোহা জিসানের সাথে তাল মিলিয়ে বলে।
“আমি কোথায় যাবো বল তো? বেশি কথা বললে বলিস এতো কথা কেনো বলিস চুপ করে থাকতে পারিস না। বিরক্ত হচ্ছি।
আবার কথা না বললে বলিস কথা কেনো বলছিস না। বিরক্ত হচ্ছি। কোন দিকে যাবো বল তো?
তুলি বিরক্ত নিয়ে বলে
” না মানে সব কিছুরই একটা লিমিট থাকে
“তুই একদম কথা বলবি না আমার সাথে। তোর সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে।
ঝাড়ি মেরে বলে তোহাকে তুলি। তোহা চুপ হয়ে যায়।
তুলি আবার বাইরের দিকে তাকায়।
” গাড়ি থামান
চিৎকার করে বলে তুলি।
“কেনো?
” প্লিজ প্লিজ থামান
সায়ান গাড়ি থামায়। সবার দৃষ্টি তুলির দিকে। তুলি গাড়ি থেকে নেমে জুতো পরে দৌড়ায়। তোহাও তুলির পেছনে দৌড় দেয়। জিসান আর সায়ান হা করে তাকিয়ে আছে।
ফুসকা ওয়ালার কাছে চলে যায় তোহা তুলি।
“মামা বেশি করে ঝাল দিয়ে দুই প্লেট ফুসকা দিন
তোহা চেয়ারে বসতে বসতে বলে।
” দুই প্লেট না তিন প্লেট। তুলি তোহার পাশে বসে বলে
“এক প্লেট কার জন্য
” আমার জন্যই। মামা তারাতাড়ি করেন। জিভে পানি এসে গেছে।
সায়ান আর জিসান আসে। জিসান তোহার পাশে বসে। সায়ান একটু দুরে পকেটে হাত গুজে তুলির দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফুসকা ওয়ালা ফুসকা দেয়। তুলি একটা প্লেট পাশের চেয়ারে রেখে আরেকটা প্লেট হাতে নিয়ে চামজ দিয়ে তাতে টকপানি দিয়ে হাত দিয়ে সেটা মুখে পুরছে। মুখে দিয়েই চোখ বন্ধ করে চিবচ্ছে। সায়ানের বেপারটা খুব ভালো লাগছে।
ঝালে তুলির নাক আর ঠোঁটের চারপাশ লাল হয়ে গেছে তবুও মরিচ না ফেলেই খাচ্ছে। চোখে পানি টলোমলো করছে যেকোনো সময় টুপ করে পরবে।
তোহার প্লেট থেকে জিসান আর তোহা ভাগাভাগি করে খাচ্ছে। তোহা জিসানকে মরিচ বেছে দিচ্ছে। এদের ঘটনাটা কেউ বোঝে না।৷ এই ঝগড়া করছে তো এই কেয়ার করছে।
তুলির এবার সায়ানের দিকে চোখ পরে। তুলির অলরেডি এক প্লেট খাওয়া শেষ। আরেক প্লেটের দুইটা খাওয়া শেষ। তুলি প্লেট নিয়ে সায়ানের কাছে যায়।
“কি এখানে এলে কেনো? ঝাল খেতে পারো না তো খাও কেনো? নাক আর ঠোঁটের অবস্থা কি হয়েছে?
তুলি হাঁপাতে হাঁপাতে বলে
” ঝাল ফুসকা খাওয়ার মজাই আলাদা। এখন হয়ত ঠোঁট নাক লাল হয়ে গেছে পানি খেলেই ঠিক হয়ে যাবে। এখন আপনি হা করেন
তুলি একটা ফুসকা সায়ানের মুখের সামনে ধরে বলে। সায়ান হাত দিয়ে মুখ আড়াল করে বলে
“আমি এসব খাবো না
” খেতে হবে
তুলি জোরাজুরি করে সায়ানের মুখে ফুসকা ঢুকিয়ে দেয়।৷ সায়ান হাঁপাতে হাঁপাতে গিলে ফেলে। ঝালে চোখ মুখের অবস্থা শেষ। তুলি আরো একটা ফুসকা খাইয়ে দেয়। সায়ান এবার এপাশে ওপাশে পানি খুঁজছে। তুলি পানি দেন। ঢকঢক করে পুরো এক বোতল পানি শেষ করে ফেলে সায়ান। পানি খেয়ে একটু শান্ত হয়। তুলি ততোখনে ঘাসের ওপর বসে গেছে। সায়ানও বসে।
তুলি একটা ফুসকা মুখে পুরে কিছুটা চিবিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে
“কেমন?
” খারাপ না
“খাবেন আরও
ফুসকার প্লেট এগিয়ে বলে। সায়ান মাথা নেরে ফুসকা মুখে পুরে নেয়। জীবনে প্রথমবার সায়ান ফুসকা খেলো। দারুণ লাগছে সায়ানের কাছে।
” আপনি বসুন আমি আরেক প্লেট নিয়ে আসি
“আমি আর খাবো না
সায়ান তুলির ঠোঁটের পাশে লেগে থাকা ফুসকার কিছুটা অংশ হাত দিয়ে মুছিয়ে দেয়।
” ওহহহ তাহলে টাকা দেন
“কেনো?
” ফুসকাওয়ালা তো আমার শশুড় হয় না যে ফ্রীতে খাওয়াবে
“ওহহহ
সায়ান টাকা দেয় তুলি টাকা আর প্লেট নিয়ে চলে যায়। বিল দিয়ে দেখে তোহা আর জিসান আবার ঝগড়া শুরু করছে।।আর এখন ওদের ঝগড়ার মুল কারণ হলো লাস্টের ফুসকাটা তোহা খেয়েছে তাই।
তুলি আস্তে করে ওখান থেকে চলে যায়। ওদের ডাকে না। ওদের ডাকলে গাড়িতে বসেও ঝগড়া করে তুলি আর সায়ানের মাথা খাবে।
সায়ান ঘাসের ওপর বসে সিগারেট ধরায়। একটান দেবে তার আগেই তুলি কেরে নেয়।
” নিলা কেন?
“আমিও খাবো
” পারবা না
“ট্রাই তো করতেই পারি
তুলি সিগারেট মুখে নিয়ে একটা টান দেয়। তুলির কাশি উঠে যায়।
” যা পারো না তা করতে যাও কেনো?
সায়ান রাগী কন্ঠে বলে তুলির দিকে পানি এগিয়ে দেয়। তুলি একটু পানি খায়।
“বিশ্ব বিখ্যাত ঝগড়াটিয়ারা কই?
” ওদের রেখে আসছি
“কেনো?
” আবার ঝগড়া শুরু করছে
“ওহহহ। তো এখন কোথায় যাবে?
” জানি না
সায়ান উঠে দাঁড়ায়। তুলিও। গাড়িতে গিয়ে বসে। তুলি ইচ্ছে করেই ছিট বেল্ট লাগায় না। সায়ান নিজের ছিট বেল্ট লাগিয়ে তুলির দিকে তাকায়। সায়ান বুঝে গেছে তুলি ইচ্ছে করেই করেছে।
“ছিট বেল্ট
তুলি বিরক্তি নিয়ে সায়ানের দিকে একটু তাকিয়ে পরে নেয়।
” আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?
তুলি এইসময় এই প্রশ্নটা শুনে সায়ান ধপ করে তুলির দিকে তাকায়।
“কেনো না থাকলে গার্লফ্রেন্ড গিফট করবি না কি?
” করতেও পারি
“কিন্তু আমার এখন প্রেম করার ইচ্ছে নেই। সবে অনার্স সেকেন্ড ইয়ার। অনার্স শেষ করে প্রেম করবো তার মাস্টার্স শেষ করে বিয়ে।
” ওহহহ
“তুই?
” এসএসসির পরে প্রেম বা তার আগেও হতে পারে আর এইচএসসির পরে বিয়ে করবো। এটা আমার ড্রিম বাকিটা বাপির ইচ্ছে।
“ভেরি গুড
সায়ান তুলির হাতটা নিয়ে আঙুলে আঙুল রেখে শক্ত করে ধরে।
” তোর হাতটা ধরে রাখতে খুব ভালো লাগে।
তুলি একটু মুচকি হাসে। সায়ানও একটু হাসে। সায়ান এক হাতে তুলির হাত আরেক হাত দিয়ে ডাইভ করছে। দুপুর হয়ে গেছে। সায়ান এক মনে ডাইভ করেই যাচ্ছে।
“কোথায় যাচ্ছি আমরা?
” তুই বল কোথায় যাবি?
“জানি না
” তাহলে আর কি করার এভাবেই ঘুরতে থাকি।
“হুমম
সায়ান তুলিকে নিয়ে সায়ানের ভার্সিটিতে যায়। পুরো ভার্সিটিটা তুলির হাত ধরে ঘুরে ঘুরে দেখায়। তারপর ভার্সিটির পেছনে কাঠ বাগানের গিয়ে দুজনে বসে
“কি কেমন দেখলি?
” হুমম ভালো
“তোর ফিউচার ভার্সিটি
” হুমমম। আমি যখন ভার্সিটিতে প্রথম দিন ক্লাস করতে আসবো তখন আপনি আমার সাথে আসবেন
“তিন বছর পরে। সে দেখা যাবে
আরও কিছুখন ঘুরে তুলি আর সায়ান বাড়িতে যায়। দিনটা খুব ভালো লেগেছে তুলির।
নাচতে নাচতে রুমে ঢুকে দেখে তোহা আর জিসান রেগে বম হয়ে আছে।
” তোরা এমন ফুলে আছিস কেনো?
তুলি কানের দুল খুলতে খুলতে বলে
“আমাদের রেখে কেনো চলে গেছিলি?
দাঁত কটমট করে বলে জিসান
” তোদের ঝগড়া শোনার মুড ছিলো না। আর তাছাড়া আর আর সায়ানের মাঝে তোদের দুজনকে হাড্ডি হাড্ডি মনে হচ্ছিলো তাই ঝেড়ে ফেলে গেছি
“স্বপ্ন দেখা বন্ধ করো
তোহা বলে
” তুই প্লিজ আমার সাথে কথা বলিস না। তোর কথা আমার তিতা লাগে
বলে তোহাকে ভেংচি কেটে ড্রেস নিয়ে ফ্রেম হতে যায়। ফ্রেশ হয়ে কিচেনে চলে যায়। মামনি ভাত তরকারি রান্না শেষ করেছে রাতেন জন্য। এখন শুধু রুটি বাকি আছে। সায়ান আর নানু সকাল আর রাতে রুটি খায়। মাগরিবের আজান দিয়েছে।
“মামনি তুমি যাও নামাজ পড়ো আমি রুটি বানাচ্ছি।
” তুই পারবি না
পারবো তুমি যাও তো
তুলি জোর করে মামনিকে পাঠিয়ে দেয়। তারপর ভাবছে কি করে রুটি বানাবে। আটার মধ্যে লবন দিয়ে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পানি কতোটা দেবে বুঝতে পারছে না। সায়ান পানি নিতে এসেছিলো রান্না ঘরে এসে দেখে তুলি গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
” আসলে বুঝতে পারছি না কতোটা পানি দেবো আটাতে।
সায়ান পানির জগ এনে তুলির হাতে দেয়।
“তুই ঢাল আমি বলে দেবো
তুলি সায়ানের কথা মতো পানি দেয়। আটা তুলি আর সায়ান দুজন মিলে মাখায়। এখন ঘটনা হলে তুলি রুটি গোল করতে পারছে না।
সায়ান তুলির পেছনে দাঁড়িয়ে তুলির ঘাড়ে থুতনি রেখে তুলির দুই হাতের ওপর হাত রেখে রুটি বানানোর জন্য আটা গোল গোল ভাগ করে দিচ্ছে। তুলির মন আপাতত রুটির দিকে। ওর সাথে কি হচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই। গোল করা হয়ে গেলে রুটি বেলাটাও সায়ান ওইভাবে শিখিয়ে দেয়।
তুলি এবার খেয়াল করে সায়ান ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছে। সামান্য ধাক্কা দেয় সায়ানকে সায়ান সরে যায়। আর তখনই মামনি চলে আসে।
তুলি ভাবছে ইস দেখে ফেললে কি হতো?
সায়ান পানি নিয়ে চলে যায়।
তুলিও এক দৌড়ে চলে যায়। মামনি বোকার মতো তাকিয়ে আছে।।এরা দুজন এভাবে চলে গেলো কেনো বুঝতে পারছে না।
চলবে