‘আঠারো বছর বয়সটা প্রেমে পড়ার বয়স, আর তুই কি করলি ইরু! এ বয়সেই কাঁচা মরিচ! মা-বাবা ধরে বিয়ে দিলো আর তুইও ধেইধেই করে বিয়ে করে ফেললি! একটু প্রেমট্রেম করতি, লাইফ এনজয় করতি। প্রেম করলে ক্ষতিটা কি হতো? এখনই তো বয়স, তাইনা?’
আমি চুপচাপ বসে আছি। অভ্র ভাইয়া বিরক্ত কন্ঠে বললেন, ‘কি কথা বলছিস না কেন? ওহহ! তুই তো আবার কথা কম বলিস। যাইহোক, তোর বান্ধবী সারা’র নাম্বারটা দিস তো, কথা আছে।’
আমি অভ্র ভাইয়ার কথা শুনে বোকার মতো তাকিয়ে রইলাম। আজ আমাদের বাসর রাত! সবেমাত্র কাল আঠারো’তে পা দিলাম। আর আজ একুশ বছর বয়সী অভ্র ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিলো ফ্যামিলির লোকেরা। যেন তারা আমার আঠারো বছর বয়সের অপেক্ষা করছিলো। আমি বরাবরই বোকাসোকা, বিয়ে কি আজও বুঝিনা। শুধু জানি বিয়ে হলে স্বামীর কথা শুনতে হয়। অবাধ্য হলে গুনাহ হয়! তাই আমিও ঠিক করেছি, অভ্র ভাইয়ার কথা শুনে শুনেই চলবো।
—“কিরে ইরাম! শুনছিস?”
আমি চমকে উঠলাম। অভ্র ভাইয়া আমার শাড়ির আঁচল টেনে ধরে বললেন, ‘আচ্ছা! বিয়ের সময় শাড়ি পরতে হয় কেন? শাড়ি ছাড়া কি দুনিয়াতে আর পোশাক নেই? তুই এমনিই চিকনি চামেলি, শাড়িতে আরও চিকনি লাগছে। আর পরবি না শাড়ি!’
আমি বললাম, ‘তাহলে কি পরবো? বিয়ের পর তো মেয়েদের শাড়িই পরতে হয়!’
অভ্র ভাই পাত্তা না দিয়ে বললেন, ‘শোন! তোকে বিয়ে করেছি আমি, সো আমার কথা শুনবি!’
আমি বললাম, ‘জ্বি আচ্ছা!’
তারপর ধমক দেওয়া গলায় বললেন, ‘বললাম না, সারা’র নাম্বার দে!’
—“এতোরাতে?”
—“হুম!”
—“কেন?”
—“কাল ব্রেকাপ করেছি তোর বান্ধবীর সাথে। কান্নাকাটি করে অবস্থা কাহিল, এখন দেখি কি অবস্থা!”
—“কিন্তু আমার কাছে তো নাম্বার নেই!”
—“নেই কেন?”
—“আমার তো ফোন নেই!”
অভ্র ভাই রেগে তাকালেন আমার দিকে। বললেন, ‘এবার বুঝেছি! ফোন ছাড়া তো আর প্রেম করতে পারবিনা। চিঠির প্রেম তো এই যুগে নাই। সারা বলেছিলো তো, তোর নাকি একটাও বয়ফ্রেন্ড নেই? তুই নাকি জন্মগত সিঙ্গেল? আচ্ছা, তোর কি প্রেম করতে/ বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতে ইচ্ছা হয়না?’
আমি বললাম, ‘না।’
অভ্র ভাই ভ্রু কুঁচকে বললেন, ‘কেন?’
—“আমার লজ্জ্বা করে!”
অভ্র ভাই নাটুকে গলায় বললেন, ‘অভ্র আহমেদের বউ হয়েছিস এখন লজ্জ্বা বাদ দে। আর শোন, এখন থেকে তুই আমার সাথে সাথে চলবি। যেখানে যাবো তুইও যাবি। তাহলে প্রেম করাটা শিখে যাবি, বুঝলি?’
আমি শুধু মাথা নাড়ালাম। বাধ্য বউয়ের বাধ্য আচরণ! ইনি অভ্র আহমেদ ফারবিন, আমার মামার একমাত্র ছেলে। পাড়ার বখাটে ছেলে হিসেবে যার নামডাক। এলাকায় এমন কোনো মেয়ে নেই, যে অভ্র ভাইয়ার বখাটেপনার শিকার হয়নি। মুখের উপর তর্ক করা যার স্বভাব! উচিৎ কথা মুখের উপর বলে দিয়ে অভ্র ভাই যেকোনো ভয়ংকর পরিস্থিতিও মোকাবেলা করে ফেলেন। তবে কখনো কারোর ক্ষতি করেননি বরং সাহায্য করেছেন। পড়াশোনায় ভালো। এবার ইঞ্জিনিয়ারিং দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে, তবে যখন ইচ্ছে বাসা থেকে বের হয়ে যান। একমাস-দুমাসের জন্য হাওয়া হয়ে যান। তখন যে কোথায় থাকে সেটা সবার অজানা। বাপের টাকা উড়ানো আর পাড়ায় পাড়ায় একদল গুন্ডাপান্ডা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো ওনার একমাত্র কাজ। তবে দেখার মতো চেহারা, একবার তাকালেই মেয়েরা কুপোকাত হয়ে যায়।
ছেলের এই উড়নচণ্ডী ব্যাপারটা মামা-মামানি মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই অল্প বয়সেই বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে দেন। তবে ওনার এতে কোনো মাথাব্যথাই নেই। ওনি আছেন নিজের মতোই! সারাক্ষণ গার্লফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড করে আমার মাথা খাচ্ছেন।
রাত প্রায় বারোটা। অভ্র ভাই কাউচে শুয়ে শুয়ে মোবাইল স্ক্রল করছেন। আমি বিছানায় এলোমেলো ভঙ্গিতে শুয়ে আছি, দুরু দুরু বুকে ভাবছি অভ্র ভাই যদি আমাকে বিছানায় না থাকতে দেন, তাহলে?
ভাবনার মাঝেই হুট করে অভ্র ভাইয়া জোরে চিৎকার করে বলে উঠলেন, ‘ইরু! এদিকে আয়। দেখ জব্বর একটা মেয়েরে পটায়া ফেলসি। শিগগির আয়।’
আমি লাফিয়ে উঠলাম। নিজেকে সামলে নিয়ে ধীরেধীরে বিছানা থেকে নেমে অভ্র ভাইয়ার কাছে যেতেই উনি একটানে নিজের উপর ফেলে দিলেন। আমার চুলগুলোতে মুখ গুঁজে বললেন, ‘এতো আস্তে আস্তে চলাফেরা করিস কেন? এবার থেকে পাখির মতো চলাচল করবি, যেন ডাকার আগেই তোকে আমার সামনে পাই!’
আমি সোজা হতে হতে বললাম, ‘জ্বি আচ্ছা!’
অভ্র ভাই ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। তারপর থুতনিতে হাত রেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা! তোর চুলের স্মেল এতো কিউট কেন? কি ইউজ করিস চুলে?’
আমি বড়বড় চোখ করে তাকালাম ওনার দিকে। কপাল কুঁচকে আসলো আমার। অভ্র ভাই তা দেখে বললেন, ‘তোকে তো বেশ কিউট লাগছে! এভাবে তাকানো দেখলে সাব্বির তোর প্রেমেই পড়ে যাবে।’
আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘সা সাব্বির আবার ক কে কে?’
অভ্র ভাইয়া বললেন, ‘আমার জানের জিগার। আজ পর্যন্ত একটা মেয়েকেও পটাইতে পারেনাই। আমি শিওর, তোকে দেখলে ও তোরে পটায়া ফেলবে। বিকজ তুই ও নিরামিষ। আর দুই নিরামিষ মিলে এবার আমিষ হয়ে যাবি।’
আমার মাথা ঘুরছে। কি সব বলছেন ওনি? নিজের বউকে কেউ এসব বলে? প্রেম করার শিক্ষা দেয় কেউ? ওনি কি পাগল নাকি অদ্ভুত? বুঝতে পারছিনা আমি।
?”এটি এমন একটি মহা গ্রন্থ যার মধ্যে সন্ধেহের কোনো অবকাশ নেই,যা মুওাকীদের জন্য হেদায়েত।”
~ সূরা বাকারা :আয়াত ১- ২
তুমিময়_অসুখ ২
পর্ব-১
#লেখনীতে-ইশরাত জাহান ফারিয়া
চলবে…ইনশাআল্লাহ! বেশি পর্ব হবেনা।