ভালোবাসি২,পর্ব-৬

0
3330

ভালোবাসি২,পর্ব-৬
Tanisha Sultana (Writer)

প্রেমে পড়লে ঘুম হারাম হয়ে যায়। আর অপেক্ষার প্রহর সহজে শেষ হয় না। অদ্ভুত একটা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে তুলি। চোখ বন্ধ করলেই সায়ানের স্পর্শের কথা মনে পড়ছে। ভালোই লাগছে। এপাশ ওপাশ করছে।
পাশে একজন ছটফট করলে ঘুমনো খুব কঠিন বেপার। তুলির নরাচরায় তোহার ঘুমটা ভেঙে যায়। তোহা বিরক্তি নিয়ে উঠে লাইট জ্বালিয়ে দেয়। তুলি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ছিলো তোহার উঠে বসা দেখে। লাইটের আলোয় চোখ খুলে উঠে বসে।
তোহা রেগে বলে হাই তুলতে তুলতে বলে
“সারাদিন জ্বালাস আমায়। এখন তো একটু ঘুমতে দে

তুলি অসহায় ফেস করে বলে
” ঘুম আসছে না ইয়ার

“ঘুম না আসলে রুম থেকে বেরিয়ে যা। আমার একদম ডিস্টার্ব করবি না

” এমন করিস কেন বোন

“ঘুমবো আমি। আর একবার যদি কথা বলিস বা নরাচরা করিস তো

তোহা লাইট বন্ধ করে আবার শুয়ে পরে। তুলি চুপচাপ শয়।
ইসস আজ যদি সায়ান তোহাকে এখান থেকে সরিয়ে নিজে আসতো। তুলির পেটের ওপর বালিশ দিয়ে তাতে ভর দিয়ে গভীর ভাবে তুলিকে দেখবে। সায়ানের গরম নিশ্বাসের তুলির মুখে পড়ে অস্বস্তি হলেও তুলি চোখ খুলবে না। সায়ান তুলির ঠোঁটে ঠোঁট মেলালেও তুলি একদম শব্দ করবে না। সায়ানের স্পর্শ অনুভব করবে। কিন্তু আজ সায়ান আসবে না। আসলে আমরা যেমনটা চায় তেমনটা হয় না।

তুলি উঠে বেলকনিতে চলে যায়। কারণ আর একবার নরলে তোহা খুব রাগ করবে। কি দরকার তোহার ঘুমের ডিস্টার্ব করার। তবে হ্যাঁ তোহা যখন প্রেমে পড়বে তখন তুলি এর শোধ নিয়েই ছাড়বে।
বেলকনির গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে ফাঁকা রাস্তাটা দেখছে তুলি। আকাশে থালার মতো চাঁদ উঠেছে। চাঁদের চারপাশে হাজার হাজার তারা মিটমিট করে জ্বলছে। বেশ লাগছে দেখতে। চাঁদের পাশেই দুইটা তারা এক জায়গায় আছে। তুলি মনে মনে বলে ছোট তারাটা তুলি আর বড়টা সায়ান। অনমনেই হেসে ওঠে তুলি। এরকম একটা সুন্দর রাতে সায়ানের কাঁধে মাথা রেখে সময়টাকে উপভোগ করলে মন্দ হতো না।

সাধারণত তুলি খুব ভীতু। অন্ধকারেই ভয় পায়। কিন্তু আজকে ভয় করছে না। ঘড়ির কাঁটার দুইটা বেজে বারো মিনিট। সন্ধা রাতে বৃষ্টি হওয়াতে চারপাশ অদ্ভূত সুন্দর লাগছে। গাছে গাছে হালকা হালকা পানিও রয়ে গেছে। তুলি হাত দিয়ে গ্রিলে লেগে থাকা পানি মুছছে।

“আমার ঘুমটা কেরে নিয়ে উনি কি সুন্দর ঘুমচ্ছে।

মনে মনে বলে তুলি। রাস্তার লেমপোস্টের আলোয় পিচঢালা রাস্তাটা দেখছে তুলি। মাঝেমাঝে দুই একবার কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে। ঝিঁঝি পোকাকা ঝিঁ ঝিঁ করছে। সব মিলিয়ে দারুণ একটা মুহুর্ত। শুধু সায়ানের অভাবটা আছে।

তুলি ফ্লোরে বসে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে। সায়ানের কথা ভাবতে ভাবতে ওখানেই ঘুমিয়ে পরে।

গভীর রাতে সায়ানের ঘুম ভেঙে যায়। খুব করে তুলিকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে তাই তুলির রুমে চলে যায়। ডিম লাইটের আলোতে দেখতে পায় তোহা একা ঘুমিয়ে আছে। তুলি কোথায় গেছে ভাবছে? তারপর দেখে বেলকনির দরজা খোলা। সায়ান বেলকনিতে যায়। দেখে তুলি ফ্লোরে গুটিশুটি হয়ে বাচ্চাদের মতো ঘুমচ্ছে। সায়ানও তুলির পাশে বসে তুলিকে বুকের মধ্যে নেয়। তুলি নরেচরে সায়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সায়ান মুচকি হেসে তুলির মাথায় একটা চুমু দিয়ে দুই হাত দিয়ে শক্ত করে আগলে নেয়।

ফজরের আজানের শব্দে তুলির ঘুম ভেঙে যায়। নিজেকে ভারি ভারি অনুভব করে। কেউ ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে। এই ছোঁয়াটা তুলির খুব চেনা। তাই তুলি মুচকি হেসে সায়ানের বুকের সাথে মুখটা মিশিয়ে দেয়।
বুকে তুলির নিশ্বাস পড়তেই সায়ান জেগে যায়। তুলির নরাচরা দেখে সায়ান বুঝে যায় তুলি জেগে আছে।
সায়ান তুলিকে ছাড়িয়ে উঠতে যায় তুলি শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে বলে

“আমি ঘুমবো ডোন্ট ডিস্টার্ব

সায়ান তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে

“বুঝলি কিভাবে এটা আমি? অন্য কেউ ও হতে পারতো?

” তোমার ছোঁয়াটা আমার খুব চেনা।

“ভালোবাসিস আমায়?

“বুঝতে পারছি না। এটা লাভ না কি এট্রাকশন। বাট যাই হোক তোমাকে আমার চায়। তোমার সাথে থাকতেই ভালো লাগে। ইচ্ছে করে তোমাকে নিয়ে অচেনা একটা শহরে চলে যায়। যেখানে কেউ আমাদের ডিস্টার্ব করবে না।

সায়ান তুলির কথায় মুচকি হাসে। মেয়েটা একটু বেশিই আবেগী। কিন্তু আবেগ দিয়ে তো আর দুনিয়া চলে না।

” তুলি আমাদের এভাবে কেউ দেখে ফেললে উল্টাপাল্টা ভাববে। পবলেম হবে।

তুলি সায়ানকে ছেড়ে দেয়।
সন্ধারাতে তুলি বৃষ্টিতে ভিজেছে প্লাস গোছল করছে তাই চুল বাঁধে নি। তুলির জামাকাপড় ও এলোমেলো হয়ে আছে। ঘুমের জন্য চোখ মুখ ফুলে গেছে। এলোমেলো চুল ফোলা ফোলা চোখ মুখে দারুণ লাগছে তুলিকে। সায়ানের কেমন নেশা নেশা লাগছে।
সায়ান তুলির দুইগালে হাত দেয়। তুলির কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে। চোখ নামিয়ে নেয় তুলি। সায়ান তুলির কপালে গম্ভীর একটা চুমু দেয়। তারপর কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে

“কপালের চুমুতে ভালোবাসা থাকে।

তুলি মুচকি হাসে। রাস্তার পাশে লেমপোস্ট থেকে আসা হালকা আলোতে দেখছে সায়ান তুলিকে। সব ভালোবাসারই তো বিচ্ছেদ হয় যদি সায়ান তুলির ভালোবাসার বিচ্ছেদ হয় তাহলে কি হবে? এটা মাথায় আসতেই সায়ান শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তুলিকে। তুলি একটু অবাক হয়।

সায়ান উঠে দাঁড়ায়। তুলিও দাঁড়ায়।
” নামাজ পড়ো যাও

“তুমি

” আমিও পড়বো

সায়ান যেতে নেয় তুলি পেছন থেকে বলে

“লাভ ইউ

সায়ান পেছনে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে
” টু

তুলি খুশিতে গদগদ হয়ে ফ্রেশ হতে যায়। নামাজ শেষ করে কিচেনে চলে যায়। সেখানে মামনি আর নানু মিলে সকালের নাস্তা বানাচ্ছে। তুলিকে দেখে কিছুটা অবাক হয়

“তুই তাও আবার এতো সকালে কাহিনি কি?
মামনি ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে।

” কিছুই না। আমি আজ রুটি বানাবো তাই সকাল সকাল উঠে পরলাম।

“তোকে কিচ্ছু করতে হবে না। নানু বলে

” আমি রুটি বানাবো মানে বানাবো

তুলি আটা বের করে শুরু করে দেয় রুটি বানানো। কারো কোনো কথা শুনে না। রুটি বানানো শেষ করে চা বানিয়ে ছুটে সায়ানের রুমের দিকে।
সায়ান নামাজ পড়ে সবে একটু ঘুমিয়েছে। রাতে তেমন ঘুম হয় নাই। তুলি সায়ানের খাটের পাশে টেবিলে চা রাখে। তারপর সায়ানের পাশে গোল হয়ে বসে সায়ানকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলে

“ও গো শুনছো তোমার চা। উঠো না গো

এরকম অদ্ভুত ডাক শুনে সায়ান লাফ দিয়ে উঠে বসে। তুলির দিকে তাকিয়ে হা হয়ে যায়। লাল একটা থ্রি পিছ পরে আছে। সায়ান এই প্রথম তুলিকে থ্রি পিছ পড়া দেখলো। অসম্ভব সুন্দর লাগছে। চুল গুলো মুঠো খোঁপা বাধা ছোটছোট কিছু চুল মুখের সামনে ঝুলছে। খোপাটা আধখোলা হয়ে আছে। নাকে ছোট পাথরের নাক ফুল। কানে ছোট রিং এর মতো পাতলা স্বর্নের কানের দুল। শুধু গলা খালি।
সব মিলিয়ে নতুন বউয়ের মতো লাগছে তুলিকে। এক রাতেই কেমন বড় হয়ে গেছে।

সায়ান মুগ্ধ জয়নে তুলিকে দেখে যাচ্ছে। সায়ানের এরকম চাহনিতে তুলি ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে। সায়ান তুলির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে
” ভালোবাসি তোকে খুব

তুলি ছিটকে কয়েক হাত দুরে সরে যায়। বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়। সায়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে

“এভাবে বলো না আমি খুন হয়ে যাবো
বলেই তুলি দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে। সায়ান হেসে তুলিকে টেনে কাছে আনে।

” তুই আমাকে ওগো বললে আর এরকম সাজলে আমিও কিন্তু তোর মাঝেই ডুবে যাবো।
মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে বলে সায়ান।

সায়ান তুলির ঠোঁটের দিকে তাকায়। তুলি ঢোক গিলে বলে
“কাল রাতের মতো করো না প্লিজ।

সায়ান বুঝতে পারে তুলি কিবলছে। ভ্রু কুচকে বলে
” ভালোবাসিস তো তাহলে পবলেম কি?

তুলি কি বলবে বুঝতে পারছে না। হাত কচলাচ্ছে। ভুলভাল কিছু বললে যদি সায়ান রাগ করে।
সায়ান তুলির দুই কাঁধে হাত দিয়ে বলে

“তোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমি কিছু করবো না। কিন্তু চোখ তো আর আমার কথা শুনবে না। সে দেখবেই। দেখলে কি পবলেম হবে?

তুলি মুচকি হেসে মাথা ঝাঁকিয়ে না বলে। সায়ানও হাসে।

তুলি সায়ানের বুকে মাথা রাখে। বেশ কিছুখন দুইজনই চুপচাপ।
“চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।

তুলি সরে যায়। সায়ান চা টা হাতে নিয়ে দেখে একদম ঠান্ডা পানি হয়ে গেছে। তুলি অসহায় ফেস করে সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে

” আমি গরম করে এনে দিচ্ছি।

বলে তুলি উঠতে গিয়ে আবার ফিরে আসে। সায়ানের কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে এক দৌড়ে দরজার কাছে যায়

“কপালের চুমুতে ভালোবাসা থাকে তাই দিলাম

বলেই তুলি মুচকি হেসে চলে যায়।

” পাগলি একটা

সায়ান গোছল করে বেরিয়ে দেখে তুলি গিন্নির মতো সায়ানের বিছানা গোছাচ্ছে কোমরে ওড়না গুজে। সায়ান দরজায় হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে দেখছে। সায়ানের জামাকাপড় বিছানার ওপর রেখে চলে যেতে নিলে সায়ান তুলির হাত টেনে ধরে

“তুই এটা কি শুরু করছিস বল তো?

তুলি সায়ানের দিকে এগিয়ে এসে বলে

” নিজের হবু স্বামীর যত্ন করছি।

“সবাই সন্দেহ করবে তুলি।

” করলে করুক আই ডোন্ট কেয়ার

সায়ান তুলির দুই গালে হাত দিয়ে বলে

“আমাদের ভালোবাসাটা সত্যি কিন্তু বয়সটা পারফেক্ট না। আমি চায় না এখনি কেউ আমাদের সন্দেহ করুক। আগের মতোই থাকবো না। যখন আমি জব পাবো তুইও বড় হবি তখন সবাইকে জানাবো। কেমন

তুলি মন খারাপ করে বলে

” সে তো অনেক দেরি

“অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয় বেবি

তুলি সায়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে

” ঠিক আছে। কিন্তু হ্যাঁ। প্রতিদিন আমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে৷ ফুসকা খাওয়াতে হবে। ভালোবাসি বলতে হবে

“হুমমম

” লাভ ইউ

“টু। এবার আমায় ছাড় আর যা এখান থেকে। কেউ চলে আসবে।

” তোমার সাথে থাকতেই ভালো লাগছে। থাকি না আর একটু।

সায়ান কিছু না বলে চুপ করে থাকে।
একটু পরে তুলি ছেড়ে দেয় সায়ানকে।
“তুই এরকম লজ্জা পাস না প্লিজ। তোর লজ্জামাখা মুখটা দেখলে আমার নেশা নেশা লাগে

” যাহহ
তুলি লজ্জা মাখা একটা হাসি দিয়ে চলে যায়।

তোহা আর জিসান চিপস খাচ্ছে আর টিভি দেখছে। তুলিকে এরকম অদ্ভুত সাজে আর মুচকি হেসে দৌড়ে আসতে দেখে ওরা হা করে তাকায় তুলির দিকে। তুলি তোহার পাশে বসে মুচকি মুচকি হাসছে।

“ভুতে ধরছে না কি তোরে?
জিসান জিজ্ঞেস করে

” প্রেমে ধরছে
তুলি হেসে বলে।

“কার প্রেমে পড়ছিস তুই

তুলি বলতে গিয়েও বলে না। মুখ কালো করে বলে

” টিভি দেখছিস টিভি দেখ।

বলেই তুলি চিপস মুখে দিয়ে টিভিতে মনোযোগ দেয়।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here