আঁধারের আলো,পর্ব_৬

0
2175

আঁধারের আলো,পর্ব_৬
লেখাঃInsia Ahmed Hayat

রিফাতের মায়ের সামনে বসে আছে আলো। আর তাকিয়ে আছে রিফাতের দিকে। রিফাত এক যায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। ভাবছে এই মেয়ে তার বাসা চিনলো কিভাবে নিশ্চয়ই তার মায়ের কাছে নালিশ করে দিয়েছে। কিভাবে নিজেক বাচাবে তাই ভাবছে। তার ভাবনায় পানি ঢেলে দিলো আলো।

আলোঃরিফাত এদিকে এসো।

রিফাতের মা হাসি মুখে রিফাতকে ডাক দিলো। রিফাতের গা শিউরে উঠলো তার মা হাসি মুখে ডাকছে কেনো নিশ্চয়ই আজ তার খবর আছে।

রিফাত তাদের সামনে গিয়ে আমতা আমতা করছে। আলো রিফাতকে কিছু বলার সুযোগ না বলল

আলোঃ আন্টি আপনার ছেলে এতো ভদ্র।এতো ভালো কি যে বলবো। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করে।আর ওইদিন আমায় সাহায্য করেছে তার জন্য আমি চিরকৃতজ্ঞ। আপনি ভালো শিক্ষা দিয়েছেন তাই আজ এতো ভালো ভালো কাজ করছে রিফাত।

রিফাতের মাঃ আমি আমার ছেলেকে সব সময় বলি মানুষ বিপদে পড়লে সাহায্য করতে। আজ আমি স্বার্থক। সত্যি খুব ভালো লেগেছে তুমি যে এসেছে আমি খুশি হলাম। এভাবে আসা যাওয়া করো। রিফাত যখন তোমাকে বড় বোন বলেছে এই বাড়ি নিজের মনে করো।

রিফাত অবাকের শেষ পর্যায়ে চলে গিয়েছে তার মায়ের আর আলোর কথপোকথন শুনে আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না। তাই সাত পাচ না ভেবে প্রশ্ন ছুড়লো আলোর দিকে

রিফাতঃ আব আপনি কিসের কথা বলছেন আপু আমি বুঝতে পারছি না?(জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)

আলোঃএমা ভুলে গেছো কালকের কথা।

রিফাতের কালকের কথা শুনেই গলাটা শুকিয়ে গেলো। আলো রিফাতের অবস্থা দেখে হালকা হেসে বলল

আলোঃ আরে কালকে না আমাকে কিছু বখাটে ছেলে উত্যক্ত করছিলো আর তুমি আর তোমার বন্ধুরা আমায় বাচালে।আমাকে সুন্দর করে সাবধানে বাসায় পৌঁছে দিয়েছো মনে নেই।

রিফাত আলোর কথা শুনে টাস্কি খেয়ে আছে।

আলোঃ জানেন আন্টি রিফাত যাওয়ার আগে বলল “আপনি আমার বড় বোনের মতো কোনো সমস্যা হলে আমাদের বলবেন আমরা সাহায্য করবো। আপনার ছোট ভাইগুলো আছে চিন্তা করবেন না।” কথা গুলো বলে চলে গেলো। এমন ছেলে কয়জন পায় আন্টি আপনি খুবই ভাগ্যবতী যে এমন একটা ছেলে পেয়েছেন। নয়তো আজকালকার ছেলেরা যেই পরিমান ফাজিল আর লম্পট হচ্ছে মেয়ে দেখলে বাজে কথা বলতে মনে চায়। মেয়ে বড় হোক বা ছোট তাদের যায় আসেনা।তাই না রিফাত।

আলো রিফাতের দিকে তাকালো। রিফাতের মা রিফাতের দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে আছে এই প্রথম তার ছেলে প্রশংসা শোনে বেশ ভালো লাগছে।রিফাতের মাঝে কেমন জানি অপরাধবোদ কাজ করছে সে নিচু হয়ে তাকিয়ে আছে।

রিফাতের মাঃ ঠিক বলেছো আলো আজকাল ভালো ছেলে খুজে পাওয়া মুশকিল আমার ছেলের জন্য অনেক চিন্তা হতো ভাবতাম বাজে ছেলেদের সাথে মিশে যদি খারাপ হয়ে যায় কিন্তু আজ তোমার কথা শুনে আমার গর্ব হচ্ছে। আমার ছেলে আমার বিশ্বাস রেখেছে।আমি সব সময় বলি মেয়েদের সম্মান করবা। আজ তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে সে সত্যি আমার কথা রেখেছে।

আলোঃ আরে আন্টি শুধু আমি না এমন আরো কতো মেয়েদের সাথে এই ব্যবহার করে থাকে ৷ তাই না রিফাত।

এবার রিফাত করুন চোখে তাকিয়ে আছে। অনুশোচনা বোদ কাজ করছে।

আলোঃআচ্ছা আন্টি আমি এবার আসি। আসসালামু আলাইকুম।

রিফাতের মাঃ কি বলো মা খেয়ে দেয়ে যাও।

আলোঃ না আন্টি অন্য একদিন।

রিফায়ের মাঃ তুমি একদম আমার বড় মেয়ের মতো আজ আমার মেয়েটা বেচে থাকলে তোমার মতো থাকতো। ৫ বছর বয়সে মারা যায় আমার মেয়েটা। এরপর অনেক পরে গিয়ে রিফাত হয়। এখানে আসার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।

বলে হালকা জড়িয়ে ধরলো।
আলোঃ আন্টি আমাকে নিজের মেয়ে ভাবতে পারেন। আর রিফাত ভালো কাজ করছে তাই ভাবলাম আপনার সাথেও দেখা করে যায়। একজন মাই তোহ পারে তার সন্তানকে সুশিক্ষা দিতে। আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো।

রিফাতের মাঃ আলো দাড়াও রিফাত তোমায় দিয়ে আসুক।

আলো রিফাতের দিকে তাকালো রিফাত চুপ করে আছে।
আলো মুচকি হেসে বলল
আলোঃ না আন্টি রিফাত অনেক করেছে আর দরকার নেই আমি যেতে পারবো। আসি আন্টি।

রিফাতের মাঃ আচ্ছা যাও মা।

আলো বেরিয়ে গেলো। রিফাত তারাহুরো করে নিজের রুমে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো সাগর আর অনিক ওকে কল দিয়েছে কিন্তু ফোন সাইলেন্ট থাকায় টের পায়নি। রিফাত সাথে সাথে ওদের কল দিলো। কল দিয়ে জানতে পারলো সাগর আর অনিকের বাড়িতেও আলো নামের মেয়েটি একই কান্ড করেছে। ওদের মা তোহ খুশিতে সবাইকে বলে বেড়াচ্ছা। আজ পরিবার থেকে খুব ভালোবাসা পাচ্ছে।

রিফাত খাটের উপর বসল। আলো বাসায় এসে ওদের নামে নালিশ না করে প্রশংসা করে চলে গেলো। তার এমন ব্যবহারে চিন্তায় পড়ে গেলো মাথায় নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। রিফাতের ভাবনার মাঝেই ওর মা এসে ওর পাশে বসলো।

রিফাতের মাঃ রিফাত আজ আমি অনেক খুশি। এই প্রথম কেউ তোমার প্রশংসা করলো। আমি তোমায় নিয়ে অনেক চিন্তিত থাকতাম। তুমি আমার কথা শুনেছো আজ আমি খুবই খুশি রিফাত। আমি জানতাম তুমি কখনো মেয়েদের অসম্মান করবে না।তোমায় সুশিক্ষা দিতে পেরে আমি আদর্শ মা হতে পারলাম।কেউ তোমার দিকে আংগুল তুলে বলতে পারবে না আমি তোমায় শিক্ষা দেই নি। আচ্ছা তোমার বাবাকে কল করে বলে আসি। আজ তোমার পছন্দের খাবার রান্না করবো ভালো কাজ যে করেছো তার জন্য।

রিফাতের মা চলে গেলো। রিফাতের কেন যেনো অনেক লজ্জা লাগছে যেটা সে করেনি সেটার প্রশংসা পেয়েও মনে শান্তি পাচ্ছে না। মাথা ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে।

পরেরদিন
রিফাত, সাগর, অনিক ওই একই জায়গায় বসে বসে একজনের জন্য অপেক্ষা করছে।

যার জন্য অপেক্ষা করছে তাকে দেখতে পেয়ে উঠে দাড়ালো সে ওদের সামনে আসলো।

রিফাতঃ আলো আপু আমাদের মাফ করেদিন আমরা ওইদিনের আচরণ এর জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃক্ষিত।

অনিকঃ কালকের আপনার প্রশংসার জন্য আমাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে।

সাগরঃ না ঠিক মতো খেতে পারছিলাম আর না ঘুমাতে পারছিলাম।মাথায় একটাই প্রশ্ন আপনি এমনটা কেনো করলেন।

আলো মুচকি হাসলো। তারপর বলল
আলোঃতোমাদের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। নালিশ করে কি হতো তোমাদের মা লজ্জিত হতো এরপর বাবাকে বলতো বাবার হাতে মার খেতে। এরপর এক সময় ভুলে যেতে কিন্তু এতে কি হতো কালকের মতো কি লজ্জাবোধ কাজকরতো। নিজেকে অপরাধী মনে হতো। না হতো না। আসলে তোমাদের প্রশংসাই বড় শাস্তি। জানো কালকের কান্ডে বুঝতেই পেড়েছো তোমাদের বাবা মা তোমাদের উপর কতো বিশ্বাস করে কতো ভালোবাসে। চিন্তা করে দেখো সামান্য মিথ্যা প্রশংসায় তারা কতো খুশি হয়েছে। তোমরা যদি সত্যি সত্যি ভালো কাজ করো তাহলে তারা কতই না খুশি হবে।

তিনজন আলোর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো।সত্যিই তোহ বাবা মা কতো বিশ্বাস করে আর তারা কি না।

আলো আবার বলা শুরু করলো।
আলোঃ সন্তান কোনো দোষ করলে আমরা তাদের নানান কথা বলে ফেলি প্রথমে বলে থাকি পরিবার থেকে শিক্ষা দেয়নি। মা বাবাই মনে হয় এমন।ভদ্র পরিবারের সন্তান হলে এমন করতো না এমনকি আমরা জন্ম নিয়েও কথা তুলে ফেলি। কেন জানো তোমাদের কার্যকলাপের কারনে। আচ্ছা তোমাদের কি পরিবার থেকে সুশিক্ষা দেয়নি বলতে পারবা যে তোমাদের পরিবার তোমাদেরকে ভালো কাজ করার কথা বলেনি। না পারবা না কারন অবশ্যই বলেছে কিন্তু তোমরা সেই শিক্ষা নেওনি। পরিবার থেকে শিক্ষা ঠিকই দিয়ে থাকে কিন্তু কয়জন সন্তান সেই শিক্ষা নিয়ে থাকে। তারপরও সব কিছুর মাঝে বাবা মাকে দোষারোপ করা হয়।বাবা মা অপমানিত হয়। বাবা মা গালি খায় শুধু মাত্র ওই সব সন্তানদের জন্য যারা সুশিক্ষা পেয়েও তা গ্রহন করেনি। পরিবার থেকে শিক্ষা ঠিকই দেওয়া হয় কিন্তু সেই শিক্ষা গ্রহন করে কাজ করা অনেক বড় ব্যাপার। অনেকেই আছে সেই শিক্ষা গ্রহন করে না ফলে তাদের কার্যকলাপে কথা শুনতে হয় পরিবারকে।আমি তোমাদের থেকে বয়সে অনেক বড়। আমি এটাও জানি যে আরো অনেকের সাথে তোমরা এইধরনের ব্যবহার করেছো। আচ্ছা কেন শুধু শুধু বাবা মাকে অপমানিত হতে দিতে চাচ্ছো,কেন বাবা মাকে গালি খাওয়াতে চাচ্ছো। তাদের বিশ্বাসকে কি ধরে রাখতে পারবে না।

বলেই দম নিলো ওরা মাথা নিচু করে আছে।

আলোঃ আমি তোমাদের অনুশোচনাবোধ জাগ্রত করতে চেয়েছি। তোমাদের ভুল গুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্য গিয়েছিলাম। আশা করি আমার কথা গুলো বুঝতে পেড়েছো। আমি আসি আল্লাহ হাফেজ।
লেখনীতেঃInsia Ahmed Hayat

আলো চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াচ্ছিলো।

রিফাতঃ আপু

আলোঃ জিই কিছু বলবা

রিফাত, অনিক,সাগর আলোকে স্যালুট দিলো।

রিফাতঃ অসংখ্যা ধন্যবাদ আপু এতো সুন্দর করে আমাদের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।

অনিকঃ এতো দিন আমরা যা করেছি তা আর করবো না। আপনার কথা গুলো অবশ্যই মান্য করবো। আর আমরা ওয়াদা করছি আমাদের বাবামায়ের বিশ্বাস কখনো ভাঙবো না।

সাগরঃ এই পর্যন্ত যাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি তাদের সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবো। ধন্যবাদ আপু আমাদের ভুল গুলোকে শুধরে দেওয়ার জন্য।

আলোঃ আমাকে তোমাদের বড় বোন মনে করতে পারো। আর ভালো থেকো তোমরা। এক সময় তোমরাই বাবা মায়ের নাম উজ্জ্বল করবে তাদের গর্বের কারন হবে। শুভ কামনা রইলো।

হাসি মুখে আলো চলে গেলো।
রিফাতরাও চলে গেলো আজ ওদের মন হালকা লাগছে অনেক।

আকরাম তার মেয়েকে নিয়ে খুব খুশি। আলোর দাদী যতবার আকরামের মেয়েকে দেখে আর কাদে একদম আলোর মতো দেখতে। মেয়ে হয়েছে বলে ছুয়েও দেখেনি উনি আলোকে। আজ তার আদরের নাতীর ঘরে কন্যা সন্তান হয়েছে।আকরামকে সে অনেক ভালোবাসে আকরাম রাগ করে কথা বলা বন্ধ করে দেওয়ায় খুব খারাপ লেগেছিলো তার। আকরাম প্রতিদিন নতুন করে তার দাদীকে আলো উপর করা জুলুমের কথা মনে করিয়ে দিতো।

এভাবে একটা বছর কেটে গেলো। আধার আলোকে কতো শত জায়গায় খুজেছে। শেষ ফলে হার মেনে নিয়েছে। সে ধরে নিয়েছে তার আর আলোর হয়তো মিল হবে না। আর কোনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছে না৷ সব দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দম নিতেও কষ্ট হচ্ছে তার। নিয়তিতে হয়তো তাদের আলাদা থাকাই লেখা আছে।

দুইদিন পর শীতের সময় একটু দেরি করে দোকানের গেলো আঁধার। চুপচাপ বসে বসে পেপার পড়ছে। আর তার কর্মচারী কাজ করছে। হঠাৎ একজন নারী এসে বলল।

“নাপা দেন তোহ” (ভাঙা গলায় বলল) বুঝা যাচ্ছে ঠান্ডা লেগেছে তার। আঁধার তখনো পেপারে মুখ গুজে আছে।
কর্মচারী ছেলেটা এক পাতা নাপা বের করে দিলো।
তখন সেই নারী বলল
” পুরো পাতা লাগবে না আমাকে দুইটা দেন”
আঁধার মহিলার কথা শুনে পেপার থেকে মুখ তুলে পাশে তাকালো। কে ২ টা নাপা টেবলেট নিতে এসেছে। আঁধার মহিলার দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো।হাত থেকে পেপার পড়ে গেলো মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। তার বুক ধরফর করছে। গা ঘেমে যাচ্ছে এই শীতের মাঝেও।

কর্মচারী ছেলেটি বলছে।
” আপা ২ টা বেচি না”

মহিলাটি হালকা চিন্তা করে বলল
“ঠিক আছে পুরো পাতা দিয়ে দিন।এখানে যেই ঠান্ডা আবার দরকার পড়তে পারে হাহাহা”

কর্মচারী ছেলেঃআপা আপনি এখানে নতুন নাকি আগে দেখিনি।

মহিলাটিঃ ১ বছর ধরে আছি এখানে আসিনি তোহ তাই দেখেননি।

আধার এখনো চুপ করে আছে।সে তার চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না তাহলে কি ভাগ্যে তাদের এক হওয়া লেখা আছে। সব দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নতুন দরজা খুলে আলোকে দেখতে পেলো।হ্যা আলো এই সেই আলো। এযে আঁধারের_আলো।

আঁধার উঠে দাড়ালো। আলো একবার আঁধারের দিকে চেয়ে ঔষধ নিয়ে হাটা ধরলো। হয়তো চিনতে পারেনি তার ভালোবাসার আঁধারকে। আঁধার সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। কর্মচারীর ডাকে হুস আসলো।আর কিছু না বলে আলো পেছনে দৌড় দিলো। আঁধার আলোর পেছন পেছন হাটছে।কেন যে সামনে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। খুব ইচ্ছে করছে সামনে গিয়ে বলতে যে আলো আমি তোমার আঁধার। কিন্তু সব শেষ এ একট প্রশ্ন থেকে যায় আলো কি আঁধারকে মেনে নিবে।আপন করে নতুন সম্পর্কে জড়াবে। এই কিন্তুর কারনে সামনে যেতে পারছে না আঁধার। আঁধার আলোর পেছন পেছন ওর বাড়ি পর্যন্ত এসে থেমে গেলো। বাড়িটা চিনে উলটো পথে হাটা ধরলো আর নিজের বুকের বাম পাশে হাত রেখে বলল
আঁধারঃ আঁধারের_আলো তুমি আমার এতো কাছে থেকেও আমি তোমায় সারা দেশের আনাচে কানাচে খুজেছি এখন যখন পেয়ে গিয়েছি। তখন আর দূরে যেতে দিবো না।

আঁধার নিজের বাসায় গেল যাওয়ার আগে মিষ্টি কিনে নিয়ে গেলো। খুশির খবর মিষ্টি ছাড়া কি হয়। সবাইকে সুসংবাদ শুনিয়ে দিলো৷ আঁধারের বড় ভাই দেশে আসার ব্যবস্থা করছে। দেশে এসে নিজের ভাইকে বিয়ে করাবে।

আঁধার আকরামকে খুশির খবর জানাতে চাচ্ছিলো কিন্তু তার আগে সে একটা জিনিস জানতে চায়। সেটা যে করেই হোক জানবেই।

আঁধার আলোর ব্যাপারে সব খোজ নিয়েছে আলো কি করে না করে সব।
শীতের সময় আলো পিঠা বিক্রি করে নিজের ঘরের সামনে। আধার রোজ সকালে আলোকে দেখার জন্য পিঠা কেনার বাহানায় চলে যায়। দুই একবার কথা বলার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু আলো তেমন কথা বলে না। আঁধারের বড্ড ইচ্ছে করে নিজের পরিচয়টা দিয়ে দিতে কিন্তু তা যে সে পারছে না। নিজের চোখের সামনে প্রিয়তমাকে দেখছে। এই অনুভূতি কেমন তা বলে বুঝানো যাবে না।
একদিন আলো পিঠা বানাচ্ছিলো ওই দিন প্রচুর কোয়াশা আশেপাশে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না আঁধার এসে পিঠা কিনে। আলো কখনো টাকা হাতে নেয় না পাশে একটা ঝুড়ি রেখেছে সেখানে টাকা আর একটা প্যাকেট রেখে দ্রুত পায়ে হাটা দেয় আধার আলো টাকা নিয়ে প্যাকেট এর দিকে চেয়ে আশেপাশে চোখ ভুলায় হয়তো কেউ ভুলে রেখে গিয়েছে। আলো দুটানায় পড়ে যায় প্যাকেটটা নিবে কি না। অনেক ভেবে চিনতে প্যাকেট টা হাতে নিলো। খবরের কাগজ দিয়ে মোড়ানো যা দেখে বেশ অবাক হয় আলো।কারন আলো সব সময় মানুষকে উপরহার দিতে গেলে খবরের কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে দেয়। এটা তোহ তার কাছের মানুষ ছাড়া কেউ জানে না। আলো হালকা ঘাবড়ে যায় যলদি প্যাকেট খুলে ফেলে।

হতবম্ভ হয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষন চেয়ে থেকে উঠে দাড়িয়ে একটু সামনে গেলো। চারপাশে কাউকে খুজছে কুয়াশার কারনে দেখা যাচ্ছে না কিছু। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে চলে এলো। আজ আর পিঠা বানাতে ইচ্ছে করছে না সব কিছু গুছিয়ে নিজের ঘরে মেঝেতে বসলো। আলো গা থরথর করে কাপছে।

আলো প্যাকেট এর দিকে তাকালো। তার মধ্যে একটু বিস্কুট এর প্যাকেট আছে যেটা ১৫ বছর আগে একজনকে উপহার দিয়েছিলো। হালকা ঘোলাটে হয়ে আছে প্যাকেট এর উপরের লেখা গুলো। ভেতরে বিস্কুট গুলো হালকা গুড়ো হয়ে আছে। এই জিনিসটা এতো বছর ধরে কেউ যত্ন সহকারে রাখবে ভাবতে পারেনি আলো। প্যাকেটটা দেখে মনে করার চেষ্টা করলো। যাকে দিয়েছে তার সেই ১৫ বছর আগের চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। বিস্কুটের প্যাকেট এর সাথে একটা চিরকুট পেলো। চিরকুটটা খুলল তাতে লেখা

” মনে আছে কি নিজের শেষ বলা কথাগুলো”
আলো চিরকুট টা পড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলো চোখ দিয়ে আপনা আপনি নোনা জ্বল গড়িয়ে পড়ছে। মুখ দিয়ে অস্পষ্ট একটি শব্দ বের হলো।

আলোঃআ..আধার

আলো এবার নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো। এই কান্না কারো কানে পৌছাবে না। কিছুক্ষন কেদে নিজেকে শান্ত করল। দুই হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে বলল

আলোঃ হ্যা মনে আছে ১৫ বছর আগে আমার বলা শেষ কথা গুলো মনে আছে কিন্তু আমি যে আমার কথা গুলো রাখতে পারিনি আঁধার। এতো বছর পর তুমি যে আমায় খুজে বের করবে তারও আশা ছিলো না। তুমি আমার আশেপাশেই ছিলো আমি বুঝতে পারিনি। আমি তোমার জীবনে আসতে পারিনি। নিজের শেষ কথা গুলো রাখতে পারিনি আঁধার। পারলে ক্ষমা করে দিও।

আলো বসে বসে বিস্কুটের প্যাকেট এর দিকে তাকিয়ে আছে। মনে পড়ে গেলো ১৫ বছর আগের কথা

তখন সবে মাত্র প্রাইমারির গন্ডি পার করে হাইস্কুলে উঠেছে দুজন। দিনকাল ভালো যাচ্ছিলো একই স্কুলে পড়তো আলো ও আঁধার। হঠাৎ শুনলো আঁধাররা চলে যাবে একেবারের জন্য । কথাটা শুনে খুবই মন খারাপ হলো।নিজেকে গুটিয়ে নিলো। আঁধার আলোর সাথে দেখা করতে এসেছিলো শেষ বারের মতো কিন্তু আলো করেনি।
পরেরদিন যখন আঁধার চলে যাবে তখন আলো দৌড়ে আঁধারের কাছে গিয়ে খবরের কাগজে মুড়ানো একটা প্যাকেট ধরিয়ে দেয়। আর বলে

” আমি আঁধারের আলো হয়ে থাকবো চিরজীবন। ভুলে যেয়ো না আমায় সৃতি হিসেবে আর কিছু দিতে পারিনি তোমায়। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। আশা করি তুমিও আমার জন্য অপেক্ষা করবে। আমি যে এই আঁধারের_আলো। আমি তোমারি আছি তোমারি থাকবো।♥)

বলে ওইদিন ওইসময় পেপারে মুড়ানো প্যাকেট আঁধারের হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে যায় আলো একবারও পিছু ফিরে তাকায় না। এতোদিন একসাথে থেকে আজ চলে যাচ্ছিলো বহুদূরে আজীবনের জন্য। যেটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো।

আলোর ভাবনা জগত থেকে বেরিয়ে আসে দরজার কড়া নাড়ার শব্দে। দরজা খুলে দেখলো মনিরা আপু হাতে বাটি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। এইমানুষ টা এতো ভালো কেন রোজ কিছু না কিছু নিয়ে আসবে আমার জন্য। তাকে ঘরে ডুকালাম। দুজনে মেঝেতে বসলাম। সে আমার দিকে বাটিটা এগিয়ে দিয়ে বলল
আলোঃ গরুর মাংস রান্না করেছি। গরুর মাংসের ঝোল দিয়ে চিতই পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। এই নেও খেয়ে নিও আমি অফিসে যাবো দেরি হচ্ছে। আলো মনিরাকে কয়েকটা পিঠা দিয়ে দিলো।
খাবারের প্লেট সাইডে রেখে ভাবছে।

আলোঃ এর মানে কি আঁধার তার জন্য অপেক্ষা করেছে বা এখনো করছে না এটা কিভাবে সম্ভব আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে তা শুনে তোহ বিয়ে করে ফেলা উচিত ।সেটা কি সে করেনি। তার উপর দাদী বলেছে আধার আর আসবে না। নাকি সত্যি আমার শেষ বলা কথা গুলো রেখেছে।

কথাগুলো ভাবতেই বুকটা ধুক করে উঠলো। প্রচন্ড শীতেও আলো ঘেমে যাচ্ছে। আলো কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। এতো বছর পর আঁধার তার সামনে এসে প্রশ্ন করলে কি জবাব দিবো। নিজের বলা কথা গুলো রাখতে পারিনি। সে কি বুঝবে আমি পরিস্থিতির শিকার। হয়তো বুঝবে সেতো এসেছিলো আমাকে নিজের করে নিতে কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি। কিন্তু আজ সে এসেও এলো না। প্রচুর ভাবাচ্ছে আলোকে।

যেদিন সে এসেছিলো দাদী আমাকে ঘরে বন্দী করে দিয়েছিলো। এক নজর দেখার ইচ্ছে ছিলো এই বড় আঁধার দেখতে কেমন। তা আর হলো কোথায় জানিনা দাদী কি এমন বলেছে বা করেছে যে আধারে চলে গিয়েছে। আমাদের ভাগ্য এক হওয়া লেখা ছিলো না তাই হইনি। কিন্তু আঁধারের চিরকুট দিয়ে কি বুঝাতে চাচ্ছে আমি যে আমার কথা রাখিনি তা নাকি সে আমার কথা রেখে আমার জন্য আজও অপেক্ষা করছে ।

প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে আর কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে না এখন তার ঘুমের প্রয়োজন আলো দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

আজ সারাদিন ঘরে বন্দি করে রেখেছে নিজেকে আলো।

সন্ধ্যায় দরজায় কড়া পড়লো আলো তোহ ভয় পেয়ে গেল কে হতে পারে। দরজা খুলতে ভয় করছে। ভেতর থেকে ২,৩ বার জিজ্ঞেস করলো কে কোনো উত্তর পেলো না। কিন্তু দরজার কড়া বার বার নরছে বাধ্য হয়ে দরজা খুলে কিছু বলবে।

দরজা খুলে বাহিরে তাকিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি পড়ছে আলোর।
দরজার বাহিরে আর কেউ নয় তারই আপনজন দাঁড়িয়ে আছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here