আবদ্ধ তোমার মধ্যে,১৪তম পর্ব,১৫ অন্তিম পর্ব

0
4120

আবদ্ধ তোমার মধ্যে,১৪তম পর্ব,১৫ অন্তিম পর্ব
নিয়াজ মুকিত
১৪তম পর্ব

“হ্যালো গাইস,আজকের পার্টিটার মূল উদ্দেশ্য হয়তো সবাই জানেন না।সবাইকে বলে রাখছি আজকের পার্টিটার মুল উদ্দেশ্য আমাদের ডিবোর্স।”নিদ্র এই কথাটা বলার সাথে সাথে উপস্থিত সব মানুষই অবাক হয়ে নিদ্রের দিকে তাকায়।নিদ্র সবার তাকানো দেখে মুচকি হেসে বলে,
–“সবাই অবাক হচ্ছেন এই ভেবে,বিবাহের জন্য পার্টি হয়,বাচ্চার ভাতমুখে পার্টি হয় কিন্তু ডিবোর্সের জন্যও পার্টি।হুম,ডিভোর্স পার্টি।আজকের এই পার্টটার মধ্যে দিয়ে ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে নাম লেখাবো আমি।বড় বড় করে লেখা থাকবে নিদ্র চৌধুরীর নাম।”

নিদ্রের কথা শুনে এখন তাকে সম্পুর্ন পাগল মনে হচ্ছে আমার।শুধু আমার না,স্টেজের নিচে বসে থাকা কিছু মানুষও যে তাকে পাগল ভাবছে সেটা বুঝতে কষ্ট হচ্ছেনা আমার।আমি অবাক হয়ে নিদ্রের দিকে তাকাই।নিদ্রও আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিচ্ছি,তারপর তুমি দেবে।”
আমি কি বলবো উত্তর খুঁজে পাই না।বাবা যে একটা পাগলের সাথে আমার বিয়ে দিয়েছে এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে একটু।স্টেজের নিচের মানুষগুলো{২০-২১জন হবে}তারা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি মাথা নাড়িয়ে বলি,
–“ওকে”

নিদ্র এবার একটা কাগজ আমার দিকে এগিয়ে দেয়।কাগজটার প্রথমেই বড় বড় করে লেখা আছে, ‘ডিভোর্স পেপার’

নামটা দেখে আমি রীতিমতো ভরকে যাই।নিজের অজান্তে চোখের কোণে পানি চলে আসে।সাথে মনের মধ্যে বাসা বাধে একরাশ সন্দেহ।হুম সন্দেহ।আমি বেশ অবাক হয়ে পেপারটার পাতা গুলো ওল্টাতে থাকি আর নিদ্রের দিকে তাকাতে থাকি।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।আমার সন্দেহের কারণ হলো,আমার সামনে আমার অফিস কলিগের ডিবোর্স হয়েছিল এবং সেই পেপারটা আমি দেখেছিলাম।সেখানে এত বড় বড় করে ডিভোর্স শব্দটা লেখা থাকেনা।আমি এবার বেশ মনোযোগ সহকারে পরতে শুরু করি পেপারগুলো।স্টেজের নিচের মানুষগুলো উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

পেপার গুলোতে লেখা আছে,

‘ডিবোর্স পেপার’
**এতদ্বারা জনাবা মিহিমা চৌধুরীকে জানানো যাচ্ছে যে,আজ থেকে নিদ্রের চৌধুরীর সাথে তার সম্পর্ক আরো গভীর হলো।নিদ্র চৌধুরীর সবরকম বায়না,আবদার রাখিতে বাধ্য হইবে মিহিমা চৌধুরী।ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেক লেখা ছিল।

শেষ পৃষ্টায় সবার নিচে লেখা ছিল দুজনের স্বাক্ষর।সেখানে নিদ্রের সাইন দেয়া আছে।আমি মাথা তুলে নিদ্রের দিকে তাকাই।তারপর এক এক করে তার বাবা মায়ের দিকে।সবার মুখে চওড়া হাসি বিরাজ করছে।আমার চোখে আনন্দের অশ্রু বইতে শুরু করে।আমি সাথে সাথে সাইন করে দেই পেপারটাতে।স্টেজের নিচের সবাই ভাবে আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেল।নিদ্র মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

–“গাইস,আপনারা ভাবছেন আমাদের ডিবোর্স হয়ে গেল কিনা।তাদের সন্দেহ দুর করার জন্য আমি এখন সবার সামনে মিহিকে প্রপোজ করবো।”
নিদ্রের কথা শুনে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে।এতটা বেলজ্জ মানুষ কেমনে হয়।নিদ্র ভারিক্কি চাল নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে হাটুগেরে বসে পড়ে।আমার দিকে একটা ডায়মন্ডের রিং এগিয়ে ধরে বলে,
–“সারাজীবন আমার স্ত্রী হয়ে থাকতে রাজি আছো তুমি?”

আমার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়তে শুরু করে।মুহুর্ত দেরি না করে জড়িয়ে ধরি নিদ্রকে।নিদ্রও আমাকে জড়িয়ে ধরে কানে কানে বলে,
–“পাগলি বউ আমার,কান্না করো কেন?”
আমি কোনো কথা না বলে তাকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ফেলতেই থাকি।সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা অধিকাংশ মানুষের দৃষ্টি আমাদের দিকে।অনেকেতো ছবি তুলা নিয়ে ব্যাস্ত।

এই মুহুর্তে স্টেজের নিচ থেকে কেউ একজন একটা ব্যাগ ছুড়ে মারে আমাদের দিকে।ব্যাগ থেকে কিছু ছবি বেড়িয়ে আছে।নিদ্র আমাকে ছাড়িয়ে দিয়ে কৌতুহল নিয়ে ব্যাগটা তুলে নেয়।তারপর ছবি গুলো বের করে দেখতে থাকে এক এক করে।আমি লক্ষ্য করছি,নিদ্র যত ছবিগুলো দেখছে ততই তার চোখ লাল টকটকে রং ধারণ করছে।তার এই অবস্থা দেখে বেশ ভয় পেয়ে যাই আমি।কি আছে ছবিগুলোতে দেখার জন্য আগ্রহ জন্মায় আমার মধ্যে।

ছবি গুলো দেখা শেষ করে চোখ লাল করে আমার দিকে তাকায় নিদ্র।তার কাছ থেকে ছবিগুলো নিজের দখলে করে নেই আমি।তারপর এক এক করে ছবিগুলো দেখতে শুরু করি।ও মাই গড,এগুলো কি?আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না।কখন এসব হলো?কিভাবে হলো?ছবিগুলো দেখা যাচ্ছে অনিক আমার উপরে শুয়ে আছে।পরের ছবিটাতে আমি অনিকের গালে চুমু খাচ্ছি।আমি বুঝতে পারছি না এসব কীভাবে হলো?ছবিগুলো দেখে আমার মাথা ঘুড়তে শুরু করে।আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না আমি।ঢলে পড়ে যাই পিছনে থাকা চেয়ারটার মধ্যে।

জ্ঞান ফিরলে নিজেকে আবিষ্কার করি নিজের রুমে।চোখ পিটপিট করে চারদিকে তাকি দেখি আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে নিদ্র,তার বাবা-মা।সবার চোখের মধ্যেই রাগ স্পষ্ট।আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকাই সবার দিকে।আমার তাকানো দেখে রুম থেকে বের হয়ে যায় নিদ্রের বাবা-মা।নিদ্র ধপ করে বসে পড়ে সোফায়।সে আমার দিকে তাকাচ্ছেনা একবারের জন্যেও।আমি খানিকটা ভয় নিয়ে নিদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলি,

–“একটা কথা বলবো শুনবেন?”

আমার এই কথাটা নিদ্রের পুষে রাখা রাগগুলো বের করে আনে।নিদ্র বেশ রেগে সাথে চিল্লিয়ে বলে,
–“কি বলবে তুমি?কি বলবে?ছি আমি ভাবতে পারছি না এসব।তোমরা দুজন যদি এরকমই তাহলে আমাকে মাঝে টানলে কেন?কেন..”
তাকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আমি উঠে বসে কান্না শুরু করে দেই।আমার কান্না নিদ্রের রাগ হালকা কমিয়ে দেয়।আমি কান্না করতে করতে বলি,
–“আমার কথাটাতো শুনেন!”

নিদ্র ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
–“কি,বলো?”
আমি এবার নিদ্রকে সব বলে দেই অনিক এসে কিভাবে আমাকে অজ্ঞান করেছিল।যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে কেমন অবস্থায় আবিষ্কার করি সব।আমার কথা শুনে নিদ্রের মধ্যে এক অন্যরকমের প্রতিক্রিয়া দেখতে পাই।নিজের ভাইকে বিশ্বাস করবে নাকি বউকে।তার চেয়ে বড় কথা অনিক কক্সবাজারে আসলো কেমনে।কিন্তু ছবিগুলাও তো এই রুমের মধ্যেই তোলা।নিদ্র বেশ চিন্তায় পড়ে যায়।কি করবে ভাবতে শুরু করে মনোযোগ সহকারে?

একপর্যায়ে নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“তোমার কথা মিথ্যা হলে,এবার আর ডিবোর্স থেকে রক্ষা পাবে না।”

এই বলে নিদ্র সারা রুমটায় কি যেন খুঁজতে থাকে।একপর্যায়ে তার চোখ আটকে যায় কোণের সিসি ক্যামেরাটার দিকে।সে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।আমি একটু চিন্তায় পড়ে যাই এই ভেবে যে,অনিক যদি ম্যানেজারকে টাকা খাইয়ে সেই সময়ের ফুটেজটা ডিলিট করে দেয় তাহলে আমি শেষ।আর না দিলে তো বেশ।বেশ চিন্তায় পড়ে যাই আমি।কি হবে?শেষ হবো না বেশ থাকবো???

চলবে….

আবদ্ধ তোমার মধ্যে
নিয়াজ মুকিত
১৫ অন্তিম পর্ব

সিসিটিভির ফুটেজ চেক করার জন্য বাহিরে বের হয়ে যায় নিদ্র।একরাশ চিন্তা নিয়ে রুমেই ‌বসে থাকি আমি।এক অজানা ভয় গ্রাস করে রেখেছে আমাকে।ভয়টা এই যে অনিক যদি টাকা খাইয়ে সিসিটিভি ফুটেজ ডিলিট করায় তাহলে সারাজীবন নিদ্রের পরিবারের চোখে কলঙ্কিনি হয়ে বেঁচে থাকতে হবে।মনে প্রাণে আল্লাহকে ডাকছি যেন সব ঠিক হয়।

এদিকে নিদ্র উপর থেকে নেমে ম্যানেজারের রুমে চলে যায়।ম্যানেজার তাকে দেখে বসতে বলে।নিদ্র ধপ করে চেয়ারের উপর বসে ফস করে মুখ দিয়ে নিশ্বাস ছাড়ে।নিদ্রের অবস্থা দেখে ম্যানেজার খানিকটা বিনয়ী গলায় বলে,
–“স্যার!কিভাবে আপনাকে সহায়তা করতে পারি?”
নিদ্র এবার এক দৃষ্টিতে তাকায় ম্যানেজারের দিকে।গোলগাল চেহারা,মাথা ইয়াবড় একটা টাক,গাল দুটো ফুলকো লুচির মতো,বয়স ৩৯-৪০ হবে।নিদ্রের এভাবে তাকানোর ব্যাপারটা বেশ অসস্থি যোগায় তার মধ্যে।তাই পুনরায় বলে,
–“স্যার!কিভাবে সহায়তা করতে পারি?”

লোকটা কথায় ঘোর কাটে নিদ্রের।কড়া দৃষ্টিতে লোকটার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“আজকের সিসিটিভি ফুটেজটা দেখতে চাই আমি।২০২ নাম্বার রুমে কে প্রবেশ করেছিল সেটা দেখতে চাই?”
ম্যানেজার নিদ্রের দিকে তাকিয়ে কম্পিউটারটা অন করে।তারপর চালিয়ে দেয় ২০২ নাম্বার রুমের সামনের ক্যামেরার দৃশ্য।নিদ্র বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে সবকিছু।অনেকক্ষন কেটে যায় কেউ প্রবেশ করছে না রুমে।নিদ্র বেশ চিন্তিত হয় এই ভেবে যে,মিহি কি তাকে মিথ্যা বললো?

এইসময় হঠাৎ ক্যামেরায় দেখা যায় একটা মুখ।নিদ্র সাথে সাথে জুম করতে বলে ম্যানেজারকে।ম্যানেজার জুম করলে নিদ্র দেখতে পায় সেটা অনিক।বুঝতে বাকি থাকে না কে সত্য আর মিথ্যা?সে ম্যানেজারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বের হয় রুম থেকে।অনেক খুশি লাগছে তার,অনেক।নাচতে ইচ্ছে করছে।তবেও রাগও হচ্ছে অনিকের প্রতি।প্রচুর রাগ,দেখা হলে তার অবস্থা খারাপ করে দিবে এই প্রতিজ্ঞা নেয় নিদ্র।

নিদ্র লিফট দিয়ে না উঠে সিড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করে।এমন সময় হঠাৎ একটা ভাবনা মাথায় চেপে বসে নিদ্রের।কিন্তু এই ভেবে ভাবনাটাকে বিদায় করার সিদ্ধান্ত নেয় নিদ্র যে,মিহিকে মিথ্যা বললে সে নিজের ক্ষতি করতে পারে।পরক্ষনে আবার মনে করে,চোখে চোখে রাখবো তাকে।শেষ পর্যন্ত নিদ্র সিদ্ধান্ত নেয় মিহিকে মিথ্যা বলবে।আজকের রাতটা,কালকের দিনটা ইগনোর করবে মিহিকে।প্রচুর ইগনোর,পরবর্তি দিনে নিদ্রের জন্মদিন,সেদিন সে মিহিকে মেনে নিবে।সেদিন সম্পুর্ন নিজের করে নিবে মিহিকে।

এসব ভাবতে ভাবতে রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায় নিদ্র।আস্তে করে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে সে।তাকে দেখে শোয়া থেকে উঠে বসি আমি।নিদ্র বেশ গম্ভীর মুখ নিয়ে সোফায় বসে পড়ে।তার মুখ দেখে আমার চিন্তা বেড়ে যায় হরহর করে।যেখানে কিছুক্ষন আগে ৪০% ছিল সেখানে এখন ১৪০% হয়ে যায়।আমি বেশ ভয় ভয় নিয়ে নিদ্রকে বলি,

–“কি হলো?”

নিদ্র মাথা তুলে বেশ রাগী দৃষ্টিতে তাকায় আমার দিকে।আমি আরো বেশি ভয় পেয়ে যাই।নিদ্র কড়া গলায় বলে,
–“ছি.আই ডোন্ট বিলিভ ড্যাট যে,তুমি এত বাজে।তুমি কেন তোমরা দুজনই খুব বাজে?যদি তোমাদের প্লান এরকমই তাহলে শুধু শুধু আমার জীবনটা কেন নষ্ট করলে?কেন আমাকে তোমাদের মাঝে এনে কষ্ট দিলে?”

তার কথা থামিয়ে দিয়ে আমি কথা বলতে ধরলেই সাথে সাথে সে বলে ওঠে,
–“থাক,তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না।সিসিটিভিতে আমি দেখেছি কোনটা সত্য কথা আর কোনটা মিথ্যা?ছি.আই হেট ইউ।ডিবোর্সটা হলেই ভালো হতো।”

এই বলে নিদ্র উঠে ওয়াসরুমে চলে যায়।আমি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি তার যাওয়ার দিকে।শেষ পর্যন্ত নিদ্রও আমাকে ভুল বুঝলো।বিশ্বাস করলো না যে অনিক সত্ত্যিই এসেছিল এখানে।বুক ফেটে কান্না আসছে আমার।আমি সাথে সাথে শুয়ে বালিশ চেপে কান্না করতে শুরু করি।

এদিকে যে নিদ্র লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখছে সেদিকে খেয়াল নেই আমার।আমি মুখে বালিশচাপা দিয়ে একাধারে চোখের পানি ফেলেই চলেছি।নিজেকে খুব একা লাগছে এই মুহুর্তে।কি করবো বুঝতে পারছি না আমি।

নিদ্র ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে পুনরায় সোফায় বসে পড়ে।আমি মাথা ঘুড়িয়ে তাকাই তার দিকে।নিদ্র একবার আমার দিকে তাকিয়ে তারপর অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,
–“ডিবোর্স হবে এবার।একবার ভুল করেছি সেই ভুল দ্বিতীয়বার করবো না।”

নিদ্রের কথা শুনে আমি স্লান হেসে বলি,
–“একবার ডিবোর্সের কথা শুনে অনেক কষ্টে নিজেকে ঠিক রেখেছি।কিন্তু আরেকবার ঠিক রাখতে পারবো না।”
আমার এই কথাটা শুনে ঝট করে আমার দিকে তাকায় নিদ্র।আমি বুঝতে পারছি না আমি এটা কি বললাম?এটা কেমন কথা বললাম।কি করতে পারবো আমি?আত্মহত্যা?কিন্তু সেটা মহাপাপ।একালে সুখ না পেলেও পরকালে দুঃখ পেতে চাই না।মুখ বুজে সারাজীবন সহ্য করবো আমি তবুও আত্মহত্যা করবো না।

সেদিনের মতো ঘুমিয়ে পড়ি আমি।নিদ্র কোথায় ঘুমিয়েছে সেটা জানতে পারি না আমি।জানার চেষ্টাও করি না।

পরেরদিন একটু দেরি করেই ঘুম ভাঙ্গে আমার।তারাতারি করে উঠে বসি আমি।চারদিকে তাকিয়ে নিদ্রকে খুঁজতে থাকে আমার চোখ দুটো।পর মুহুর্তে মনে পড়ে কালকের কথা গুলো।মনটা নিমিষে খারাপ হয়ে যায় আমার।আস্তে করে উঠে খুড়িয়ে খুড়িয়ে ওয়াসরুমে যাই।ফ্রেস হয়ে বের হই একেবারে।বের হয়ে দেখি সোফায় বসে আছে নিদ্র।তাকে উদ্দেশ্য করে বলি,

–“এই হোটেলের কি ছাঁদ আছে?থাকলে আমাকে একটু পৌঁছে দেবেন?”

নিদ্র বেশ খানিকক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“ওকে,আসুন।”
এই বলে নিদ্র আমাকে নিয়ে আগাতে থাকে।লিফটে করে একেবারে ছাদে উঠে যাই আমরা।অনেক সুন্দর করে সাজানো রয়েছে সবকিছু।ছাদে উঠেই নিদ্র আমাকে ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে যায়।আমি আরেকদিকে এগোতে থাকি।এগোতে এগোতে একেবারে কোণায় চলে যাই আমি।আর এক পা আগালেই মৃত্যু নির্ঘাত।এমন সময় পিছন থেকে কেউ একজন টান দেয় আমাকে।কিছু বুঝে ওঠার আগেই পরপর দুইটা থাপ্পড় পড়ে আমার গালে।ব্যাক্তিটার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠি আমি।নিদ্র।নিদ্র সাথে সাথে আমাকে বুকে জড়িয়ে নেয়।সাথে বলতে শুরু করে,

–“আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিলে কেন?আমি তোমাকে ভালোবাসি,তুমি চলে গেলে কাকে ভালোবাসবো বলো?”

আমি কিছু বুঝতে না পেরে মাথা তুলে বলি,
–“মানে?”

এবার নিদ্র আমাকে জড়িয়ে ধরে প্রথম থেকে সব কাহিনী বলতে শুরু করে।কিভাবে অভিনয় করেছে সেটাও?সবশেষে আমি তাকে বলি,
–“আপনি একজন বিরাট অভিনেতা মি.নিদ্র।এটা কি আপনি জানেন?”

নিদ্র আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
–“দেখতে হবে না কার বর?”

আমিও এবার নিদ্রকে জড়িয়ে ধরে বলি,
–“আমি আজ চলে গেলে কেমন হতো?”

নিদ্র আমার ঠোটের কাছে নিজের ঠোট নিয়ে এসে বলে,
–“চলে যাবে?যেতে দিলে তো,চাইলে যেতে পারবে না।কারন তুমি যে আবদ্ধ আমার মধ্যে আমি আবদ্ধ তোমার মধ্যে।এই বাধন কখনো ভঙ্গুর নয়।সারাজীবন দুজন দুজনের মধ্যে আবদ্ধ থাকবো।”

এই বলে ঠোটের সাথে ঠোট মিলিয়ে দেয় ‌নিদ্র।

সমাপ্ত..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here