অচেনা কবি❤,পর্ব-৮

0
1912

অচেনা কবি❤,পর্ব-৮
লেখনীতেঃ কথা চৌধুরী❤

ওয়াশরুম থেকে বের হতে ফোনের টোন শুনতে পেলাম। হাতের তোয়ালে চেয়ারে ছড়িয়ে দিয়ে এবার ফোন হাতে নিলাম। রাজ ভাইয়ার নামটা দেখে জিব কেটে বললাম, “হায় আল্লাহ! উনাকে কল করার কথা তো একদম ভুলে গিয়েছি।” ভাবনার মাঝে কল রিসিভ করতে উনার কন্ঠ নিঃসৃত শব্দ ভেসে এলো, “হ্যালো।”

আমি একটুখানি ভয় আর তাড়া নিয়ে বলতে শুরু করলাম, “ভাইয়া আমি কালকেই তন্নতন্ন করে খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি। আমার ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে তাই আপনাকে জানাতে পারিনি।”

হালকা হেসে, “ঠিক আছে, ঠিক আছে। এত অস্থির হওয়ার কিছু নেই। আমি খুঁজে পেয়েছি। আসলে এটা বাসায় ছিল আর এটা জানাতেই তোমাকে কল করেছি।”

“বাঁদর লোক, ভালো করে না দেখে আমাকে বলেছে কেন? আমি কালকে গরুখোঁজা মতো খুঁজেছি উনার ইয়ারফোন।” মনে এটা বললেও কি আর মুখে বলা যাবে? নিজের কষ্টটা বৃথা হয়েছে ভাবতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, “ওহ আচ্ছা।”

“এত বেলা অবধি ঘুমাও কেন?”

“করার মতো তো কোনো কাজ নেই। তাছাড়া সকালে ঘুমাতে আমার ভালো লাগে।”

“সকালে উঠার অভ্যাস করো কারণ সকালে চা না পেলে কিন্তু দিন শুরু করা অসম্ভব।” বেশ মজা নিয়ে উনি বললেন আর আমার প্রতুত্তর, “কিন্তু আমি তো চা খাই না ভাইয়া।”

“খাও না তাতে কি? এটাও অভ্যাস করে নাও কারণ একসাথে চা খাওয়ার মজা অন্যরকম।”

অবাক হয়ে, “কার সাথে? কীসের চা? ভাইয়া আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”

“থাক তোমায় বুঝতে হবে না। রাখছি এখন।” বলেই কল কেটে দিলেন। বুঝতে পেরেছি রাগ করেছেন উনি কিন্তু রাগের কারণটা ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না আমার। কিন্তু আমার খুব রাগ লাগছে। উনি আমাকে কিনা বিনা পয়সায় কামলা খাটালেন।

১৪.

“সকালে শুরু হোক পাখিদের নিয়ে,
সূর্য উদিত হোক রোদকে নিয়ে।
শুভেচ্ছা পাঠালাম প্রজাপতিকে দিয়ে,
মিস কাব্যু হাসুক মিষ্টি হাসি দিয়ে।
শুভ সকাল মিস কাব্যু।”

সকাল সকাল মিরাজ মহাশয়ের ম্যাসেজ পড়ে মুচকি হাসিতে মত্ত আমি। ভেবেই পাচ্ছি না এমন ম্যাসেজের জবাব কী হতে পারে? মিরাজ মহাশয় বোধহয় অনলাইনে ছিলেন আর আমি উনার ম্যাসেজ দেখেছি সেটাও দেখেছেন। তাই তো নিজে থেকেই আবার ম্যাসেজ দিলেন, “কী মিস কাব্যু? কেমন লাগলো ম্যাসেজটা?”

এবারের ম্যাসেজের উত্তরটা আমার জানা আছে বলে বেশ খুশি মনে জবাব দিলাম, “হুম, বেশ ভিন্ন একটা ম্যাসেজ আর এটা আপনাকে দিয়েই সম্ভব মিস্টার অচেনা কবি।”

“হা হা হা। এই যে, কাব্যপ্রেমী মিস কাব্যু। এটা আমার লেখা না-ও তো হতে পারে।”

“উম, তা হয়ত বা কিন্তু আপনি যেহেতু পাঠিয়েছেন তাহলে অবশ্যই এটা আপনার লেখা।”

“বাহ! বেশ জেনে গেছো দেখছি আমাকে।”

“না, না, একটা মানুষকে তো সারাজীবনেও চেনা সম্ভব নয় কারণ যতদিন যায় ততই মানুষটার অন্য রূপ দেখা যায়। তাই এতো কম সময়ে আপনাকে জানা আমার সাধ্যে নেই।”

“হুম, জানা যায় না তবে চেষ্টা করতে দোষ কী বলো?”

একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “মানে?”

“কিছু না মিস কাব্যু। যা-ই হোক, কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?”

“হুম, আলহামদুলিল্লাহ। ভালো না থাকলেও কারোর জন্য নিজেকে ভালো রাখছি।”

বিস্মিত হয়ে, “কার জন্যে?”

“হা হা হা। আছে একজন, যার মনটা তরতাজা সবুজ কিন্তু সে যে বড্ড অবুঝ।”

“বাহ! কথার মাঝেও ছন্দের সমাহার? মন্দ নয় কিন্তু।”

“এই রে, তোমার হাতের ব্যথার কথা তো একদমই ভুলে গেলাম। ব্যথা কেমন এখন?”

ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে, “আছে, ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে আর কমছে।”

“দেখো, হাতের ব্যথা বাড়লে টাইপ বন্ধ রাখো। আমার সাথে কথা বলার চেয়ে হাত দু’টোর বিশ্রাম প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।”

“ঠিক আছে, আপনি এতো ভাববেন না। সারারাত তো বিশ্রাম নিয়েছে। এখন লিখতে ততোটা কষ্ট হবে না।”

“তবুও আমার জন্য তোমার কোমল হাত দু’খানাকে কেন কষ্ট দিবে?”

হালকা হেসে কিছু লিখতে যাবো তার আগে উনিই আবার ম্যাসেজ দিলেন, “এক মিনিট, তুমি সকালে খেয়েছো?”

“উঁহু।”

“কেন?”

“আসলে, ঘুম থেকেই উঠেছি কিছুক্ষণ আগে।”

“তা নাস্তা না করে ফোন হাতে নিলে কেন?”

ম্যাসেজে মানুষের মনের অবস্থা বুঝতে না পারলেও। উনার ম্যাসেজে খানিকটা উনার রাগ ভেসে উঠল। তাই ভয়ে আমার মন বলে উঠল, “এই রে, এবার কী বলবো?” কিন্তু আমাকে কিছু বলতে হলো না। কারণ উনিই আবার ম্যাসেজ দিলেন, “পনেরো মিনিট সময় দিলাম এর মাঝে খাওয়াদাওয়া শেষ করবে তারপর এসে আমাকে টেক্সট করবে।”

আমি দ্বিমত পোষণ না করে ম্যাসেজ দিলাম, “ঠিক আছে। তাহলে যাই, খেয়ে এসে টেক্সট করবো। আল্লাহ হাফেজ।”

“আল্লাহ হাফেজ।”

ফোনটা রেখে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম মাকে খুঁজতে। রসুইঘরে এসে দেখি মা থালা বাসন মাজার কাজে নিয়োজিত। আমি মা’র কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললাম, “হে মাতঃ, খাদ্যং দেহি মে।”

আমার কথা শুনে মা থালাবাসন মাজা স্থগিত করে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “তুই আবার এইসব চুং চাং ভাষা বলছিস?”

মুখের সবকটা দাঁত বের করে জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললাম, “না মানে, এতো কষ্ট করে সংস্কৃত ভাষাটা শিখলাম এখন যদি সেটার বাস্তব প্রয়োগ না ঘটাই তাহলে তো শেখাটাই বৃথা।”

মা তাঁর নিজের কাজে মন দিয়ে বলতে লাগলো, “তুই প্রয়োগ ঘটা বা অপপ্রয়োগ। কিন্তু আমার সামনে এসব চুং চাং ভাষা একদম বলবি না। ফের যদি এসব বলতে শুনি তাহলে কী যে করব তোকে, সেটা আমি নিজেও জানি না।”

খাবারের প্লেট নিয়ে মোড়া টেনে মা’র পাশেই বসে বললাম, “ঠিক আছে, বলবো না। আমার কথা কেন শুনবে? শুনতে হবে না কাউকে। গ্রুপেও কেউ আমার কথা শুনতে চায় আর কাজ করবে তো দূর।”

“মানুষের কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই? নাকি শুধু তোর গল্প আর গ্রুপ নিয়েই পড়ে থাকবে?”

একটুখানি রুটি সবে মুখের সামনে ধরেছি মুখে পুড়বো বলে কিন্তু মা’র কথা শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। লুকমা আবার প্লেটে রেখে মা’র দিকে তাকিয়ে করুণ গলায় জিজ্ঞেস করলাম, “আমি কি অনেক বাজে লিখি মা?”

“দেখ, তোর লেখা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। লেখালেখিকে ভালোবাসা দিয়ে আঁকড়ে ধর। নিজে মনটাকে স্থির করে দেয় লেখালেখিতে। পরিশ্রম আর চেষ্টা চালিয়ে যা। দেখবি তোর গ্রুপে কাজ করতে একদিন মানুষ তোর কাছে অনুরোধ করবে। আর সবারই নিজস্ব জীবন আছে। তাই কেউ কথা না শুনলে বা কাজ না করলে হতাশ হস নে। তোর গল্প যদি কারোর মন ছুঁয়ে যায়, হৃদয় নাড়া দিয়ে উঠে তাহলে সে অবশ্যই তোকে উৎসাহ দিবে আরও বেশি বেশি লিখতে। এখন দেয় না বলে তুই যদি হাল ছেড়ে দিস তাহলে কখনও সাফল্যের মুখ দেখতে পারবি না মা।… একটা কথা মনে রাখিস, জীবনে উপরে উঠতে হয় একা একাই। কিন্তু সাফল্যের মুখ দেখার পর চারপাশে মানুষের অভাব হয় না। তবে শূন্যে যারা তোর পাশে ছিল, তাদের কখনও ভুলে যাস নে। শূন্যে থাকা মানুষগুলোই তোর জীবনের প্রকৃত সঙ্গী।”

মা’র কথাগুলো মন দিয়ে শুনলাম। মা’র প্রতিটা কথাই নিঁখাদ সত্য। তাই তো মা’র উপদেশগুলো মান্য করার জন্য মনস্থির করলাম। মা আবার বলতে লাগলো, “এখন মন মরা হয়ে বসে না থেকে খাওয়া শেষ কর।”

হালকা হেসে বললাম, “ঠিক আছে।”

১৫.

সকালের নাস্তা শেষ করতে আধঘন্টা পার হয়ে গেল। মিরাজ মহাশয় আমাকে পনেরো মিনিট সময় দিয়েছিল কিন্তু আমি সেটা ভুলে গিয়েছি গ্রুপ আর গল্পের চক্করে। হাতে ফোন নিয়ে ডাটা অন করতেই ম্যাসেজের নোটিফিকেশনে ফোন টুংটাং করে উঠলো। ফোনের টুংটাং শব্দে আমার হঠাৎ-ই মনে পড়লো উনার কথা। উনার কথা মনে পড়তেই মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠলাম, “হায় আল্লাহ!”

চটজলদি ইনবক্সে ঢুকে দেখি উনি ম্যাসেজ দিয়ে রেখেছেন, “মিস কাব্যু পনেরো মিনিট তো পার হয়ে গেছে। এতো সময় লাগে খেতে?”

কিঞ্চিৎ ভয় নিয়ে জবাব দিলাম, “আসলে মা’র সাথে গ্রুপ নিয়ে কথা বলছিলাম বলে দেরি হয়ে গেছে। এরজন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।”

“আহা! সমস্যা নেই, অপেক্ষা জিনিসটা বিরক্তিকর হলেও বিশেষ করার জন্য অপেক্ষা করতে বড্ড ভালো লাগে।”

“কিন্তু কষ্টও তো পাওয়া যায়।”

“তা ঠিক তবে সেই কষ্টটা যে মধুর মনে হয়।”

“মানে?” বুঝতে না পেরে।

“কিছু না, তা খাওয়াদাওয়া শেষ?”

“হুম।”

“মেডিসিন নিয়েছো?”

“উপস, একদম ভুলে গিয়েছি।”

“ঠিক আছে, এখন মেডিসিন নিয়ে এসো।”

“আচ্ছা।”

উনার কথা মতো মেডিসিন নিয়ে নিলাম তারপর এসে টেক্সট করলাম, “নিয়েছি।”

“গুড গার্ল।”

“হয়ত বা।”

“হয়ত কেন?”

“উম, জানি না।”

“জানো না, সেটা কেন?”

“সেটাও জানি না।” এটা লিখে নিজের অজান্তেই হেসে উঠলাম। উনি আবার ম্যাসেজ দিলেন, “তুমি বোধহয় চঞ্চল, তাই না?”

“সে কি! আপনি কী করে জানলেন?”

“জানি জানি,
তোমার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি।
মানি মানি,
তোমাকে আমার বন্ধু মানি।”

“বন্ধু! আমি আপনার বন্ধু কী করে হবো? আপনি বোধহয় আমার চেয়ে বয়সে বড়।”

“হা হা হা।”

উনার হাসি দেখে বিস্ময় নিয়ে জানতে চাইলাম, “হাসছেন কেন?”

“এখন আমি যদি বলি জানি না, তখন?”

“আমি জানি আপনি বলবেন না কারণ আপনি জানেন।”

“কী জানি?”

উনার প্রশ্নে আমার মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি ঘুরপাক খেতে শুরু। তাই হালকা হেসে ম্যাসেজ দিলাম, “জানি না।”

“হা হা হা।” আবার ম্যাসেজ দিলেন, “তা আন্টির সাথে কী নিয়ে কথা বলছিলে?”

“পেইজ আর গ্রুপ নিয়ে কথা বলছিলাম।”

“কোনো প্রবলেম হয়েছে কি?”

“আসলে, গ্রুপের সদস্য অনুযায়ী রেসপন্স একদমই পাই না। আবার পেইজের অবস্থাও বড্ড করুণ। আমি জানি, আমার লেখার মান ভালো নয়। তাই এমন করুণ অবস্থায় কাউকে কিছু বলার মন-মানসিকতা পোষণ করতে পারি না। কারণ কিছু বলতে গেল হয়ত সবাই লেখার মান টেনে বলতে পারে যে, লেখার মান ভালো নয় তাহলে আমাদের থেকে কেন রেসপন্সের আশা করছেন? এমন প্রশ্ন করলে অবশ্যই জবাব দেওয়ার মতো কিছু থাকবে না আমার।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here