অভিমানে তুমি,পর্বঃ৭
ফারিয়া আফরিন ঐশী
সায়মা আহমেদ(সাদির মা)হাত -পা,চোখ বাধা অবস্হায় একটা চেয়ারে বসে আছেন।দরজা খুলেই ইশান প্রবেশ করল।তারপর আলো জ্বেলে সায়মা আহমেদের সামনে বসে, তার চোখ খুলে দিয়ে বলল—কেমন আছো চাচিমনি??সায়মা আহমেদ চোখ পিটপিট করে কোনোমতে খুলে কপাল কুঁচকে বলে–ইশান!!!
ইশান–ফাইনালি,,,চিনতে পারলে।।
সায়মা–তুই আমাকে এখানে কেন এনেছিস??
ইশান হেসে বলে–ওমা!!!তুমি জানো না!!!
সায়মা আহমেদ একটু শক্ত করে বলে–কথা ঘোরাবি না।কারণটা বল।
ইশান রেগে পাশে থাকা টেবিল এ একটা বারি দিয়ে সায়মা আহমেদ এর দিকে ঝুঁকে বলে–আমার মা কে মারার প্রতিশোধ নিতে এনেছি।
সায়মা–তোর মা কে আমি মেরেছি মানে??
ইশান চিৎকার করে বলে–হ্যাঁ তোমরা মেরেছো।নিজ হাতে মারোনি কিন্তুু আমার মা কে মরতে বাধ্য করেছো।
সায়মা–তুই সবটা জানিস না ইশান তাই ভুল করছিস।
আমি তোকে সবটা খুলে বলছি।শোন প্লিজ।
ইশান চিল্লিয়ে বলে–সব জানি আমি সব।
বলে পাশের টেবিলটা লাথি দিয়ে ফেলে চলে যায়।রুমের দরজা বন্ধ করে।
আর সায়মা আহমেদ চিৎকার করে বলতে থাকে–ইশান প্লিজ শোন আমার কথা,আমার সাদির কোনো ক্ষতি করিস না প্লিজ।
ইশান সায়মা আহমেদ কে তার পুরাতন একটা গোডাউনে রেখেছে। গোডাউন টা শহর থেকে বেশ দূরে।
ইশান গোডাউন থেকে বেড়িয়ে সিকিউরিটিদের সাথে কিছু কথা বলে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়।
ইশান কার ড্রাইভ করতে করতে ভাবতে থাকে–জানো মা,তোমার ছোট ছেলের আজ একটা পুচকু ছেলে আছে।আমি জানি আমি রুহির সাথে অন্যায় করছি বাট উপায় নেই মা আমার কাছে।আর তিশা, ও আমাকে ধোঁকা দিয়ে ভাইকে বিয়ে করেছিল তার শাস্তি দিচ্ছি ওকে। সবাইকে শাস্তি দিব মা, যারা আমাদের সাথে অন্যায় করেছে।সাদিকে মারব না মা,মিথিকে কষ্ট দিলে সাদি এমনিই মরে যাবে।সাদির কষ্টে ওর মা ও মরে যাবে।বাট মিথিকে ১ম দেখার পর—-
এসব ভাবনার মাঝেই ইশান একটা বেবি কেয়ার সেন্টারের সামনে।ইশানকে দেখেই একজন মাঝ বয়সী সাদা শাড়ি পরা মহিলা এগিয়ে এলেন।মহিলাটি ইশানকে জিজ্ঞেস করলেন–কেমন আছেন স্যার??
ইশান–এইতো ভালো।।ইভান(ইশানের ছেলে)কেমন আছে??
মহিলা–ভালো আছে স্যার।
কথা বলতে বলতে ইশান প্লে হাউসের সামনে চলে আসে। ছোট্ট ইভান তার বাবাকে দেখেই দৌড়ে ইশানের কোলে উঠে পরে। ইশান ছেলেকে কিছুক্ষণ আদর করে।তারপর ঐ মহিলার হাতে ৫০,০০০ টাকার বান্ডিল দিয়ে বলে–ইভানের যাতে কোনো অযত্ন না হয়।
ইশানকে যেতে হবে তাই ইভান কে কোল থেকে নামাতে চায় কিন্তুু ইভান বাবার কোল থেকে নামতে নারাজ।তার আধোস্বরে বাবাকে জানায় যে সে তার বাবার সাথে খেলতে চায়।ইশান ছেলের আবদার ফেলতে না পেরে ছেলেকে নিয়েই প্রবেশ করে প্লে হাউসের ভেতরে।ছোট্ট ইভান বাবাকে পেয়ে তো অনেক খুশি।সে তার সব খেলনা বাবাকে দেখাতে ব্যস্ত।
অপরদিকে,,,,
সাদি মিথিকে নিয়ে বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্হা করছে।কিছুক্ষণ পর সাদি মিথিকে নিয়ে গাড়িতে উঠে।মিথির হাজারটা প্রশ্নে সাদি বিরক্তর চরম লেভেলে পৌঁছে গেছে।মিথি এক প্রশ্ন বারেবারে করছে।।
মিথি–আচ্ছা সাদি ভাই,আমাদের আগে পিছে এতো গাড়ি কেন??
সাদি উত্তর দিচ্ছে না দেখে সাদির হাত ধরে ঝাঁকাতে লাগল।সাদি বিরক্ত হয়ে মিথির কোমড় ধরে কাছে টেনে গলায় বেশ জোড়ে একটা কামড় বসিয়ে দেয়।
মিথি চিৎকার দিতে গিয়েও পারে না কারণ সামনে রিদান ড্রাইভ করছে।সাদি মিথিকে ছেড়ে দিয়ে বলে–আর কোনো প্রশ্ন করবি না,সময় হলে সব জানতে পারবি।
মিথি রাগী চোখে গলায় হাত রেখে সাদির দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়।তারপর মনে মনে বলতে থাকে–শয়তান,বাঁদর,বাজে,বদমাশ লোক।আমার গলা,মুখ,ঠোঁট কি তোর সরকারি মনে হয় যে যা ইচ্ছে করবি।।
মিথির ভাবনার মাঝেই সাদি উত্তর দেয়–হুমম।তুই সরকারি না সাদির পারসোনাল প্রপার্টি।তাই আমার যা ইচ্ছে তাই করবো তোর সাথে।
মিথি রসগোল্লা চোখ করে সাদির দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে যে সাদি বুঝলো কেমনে!!!সাদি সামনের দিকে চোখ রেখেই বলে–তোর গবেট মাথা তে এতো প্রেসার দিস না ফেটে যাবে,ডাফার।
মিথি সাদির থেকে একটু দূরে সরে বসে মনে মনে আয়াতুল কুরছি পড়তে থাকে আর ভাবে যে এই লোক কে অবশ্যই জ্বিনে ভর করেছে।
কিছুসময় পরই সাদি আর মিথি বাড়ি পৌঁছে যায়।
ফ্রেস হয়ে সাদি মিথিকে খায়িয়ে, ওষুধ দিয়ে রেস্ট নিতে বলে সাদি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় রিদান কে নিয়ে।
রিদান–স্যার, আপনি কিভাবে জানলেন যে ম্যাম,রায়পুরের প্লাস্টিক গোডাউনে আছে??
সাদি–মিথিকে খাওয়ানোর সময় ফোন করেছিল আমাদের স্পেশাল টিম মেম্বার।
রিদান–ও ও আচ্ছা।
সাদি আর রিদান গোডাউনে পৌঁছাতেই কিছু ছদ্দবেশধারী অফিসার এসে তাকে স্যালুট করে।
সাদি সহ সকলে বন্দুক তাক করে সামনে এগোতে থাকে।
পুরো গোডাউন তন্ন তন্ন করে খোঁজার পরও সাদি সায়মা আহমেদ কে খুঁজে পায় না।সাদি বুঝতে পারে যে ইশান টের পেয়েই সায়মা আহমেদ কে সরিয়ে দিয়েছে।
সাদি বাইরে বেরিয়ে মাটিতে বসে পড়ে। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে–তুমি কোথায় মা??কেমন আছো তুমি??
রিদান সাদির কাঁধে হাত রেখে বলে –চিন্তা করবেন না স্যার,ইশানকে খুব দ্রুত পেয়ে যাবো।আমাদের অফিস থেকে ফোন ছিল।তিশাকে শাহবাগে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। তিশা এখন আমাদের কাস্টাডি তে আছে।বাট তিশা খুব সিক।সুস্হ হলেই ওর স্টেটমেন্ট নিতে পারব।
সাদি উঠে দাঁড়িয়ে বলে–হুমম।।অফিসে চলো।
সাদি আর রিদান সহ অন্য অফিসাররা অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।
অফিস পৌঁছে সাদি দেখে কাস্টাডির সিক রুমে তিশাকে ডাক্তার চেকাপ করছে।রবিন সাদিকে দেখে বলে–বৌমা কেমন আছে?
সাদি-এখন কিছুটা সুস্হ আছে স্যার।
রবিন–ডোন্ট ওয়ারি!!তোমার মায়ের খোঁজ খুব দ্রুত পেয়ে যাবো।
সাদি–হোপ সো স্যার।
তাদের কথার মাঝেই ডাক্তার কে এগিয়ে আসতে দেখে রবিন বলে–হাও ইজ সি নাও ডক্টর??
ডাক্তার –সি ইজ নট সো ফাইন।পেশেন্ট বেশ অনেকদিন ধরে ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করে না।ওনার ইনজুরি গুলো দেখে ক্লিয়ার বোঝা যাচ্ছে যে কেউ তাকে বেশ শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করেছে।সি নিডস টাইম এন্ড কেয়ার টু বি ওকে।
রবিন ডাক্তার কে বিদায় জানিয়ে সাদিকে বলে–ইশানের ইনফরমেশন এর জন্য তিশাকে সুস্থ করা খুব দরকার সাদি।
সাদি–ইয়েস স্যার।
রবিন–ডোন্ট ওয়ারি,ওকে তো সুস্হ হতেই হবে তাও দ্রুত।তুমি বাড়ি যাও এখন,বৌমা একা আছে।আর মিসেস আহমেদের দিকটা আমি দেখছি।
সাদি–ওকে স্যার।
সাদি অফিস থেকে বেরিয়ে ঘড়িতে দেখে রাত ১১.৩০ মিনিট।গাড়িতে উঠে বাড়ির পথে রওনা হয়।
অন্যদিকে,,
মিথি রাত ৮ টার দিকে ঘুম থেকে উঠে দেখে সাদি বাড়িতে নেই।মেইডকে জিজ্ঞেস করলে জানায় সাদি বেরিয়েছ।মিথি তার বারান্দায় রাখা দোলনাতে বসে আছে আর ভাবছে–আচ্ছা,সাদি ভাই আশেপাশে থাকলে আমার এমন অদ্ভুত ফিল কেন হয়।সাদি ভাই যখন আমায় চুমু দেয় তখনও ইচ্ছে করে না তাকে বাঁধা দিতে।।কেন??!!এমন কেন হয়??আচ্ছা, সাদি ভাই তো বলেছিল যে সাদি ভাই আমায় ভালোবাসে না তাহলে কয়েকবার আমায় চুমু কেন দিল!!!!সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে, ধুর!!!
এরমধ্যেই বেল বেজে ওঠে।মিথি লাফিয়ে উঠে বলে–সাদি ভাই এসেছে নিশ্চয়ই।।
দৌড়ে দরজা খুলতে গিয়ে দেখে মেইড আগে থেকেই দরজা খুলে দিয়েছে।মিথি একটু মন খারাপ করে গাল ফুলিয়ে এককোণে দাঁড়িয়ে থাকে।সাদি বুঝতে পেরে বলে–বুচি,আমার খাবারটা আমার রুমে নিয়ে আয়তো।দ্রুত আসবি।
মিথি খুশি হয়ে দ্রুত টেবিলে গিয়ে মেইডের সাহায্যে সব গোছাতে থাকে।সাদি রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে দেখে মিথি খাবার নিয়ে হাজির।
সাদি–বাহ!!এতো দ্রুত চলে এসেছিস।
মিথি হাসিমুখে উত্তর দেয়–হুমম।।আপনার খিদে পেয়েছে তো।।খেয়ে নিন জলদি।
সাদি খেতে বসে বলে –তুই এখানে বস,কথা আছে তোর সাথে।খেয়ে তারপর বলবো।
মিথি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।সাদির খাওয়া শেষে সাদি মেইডকে ডেকে সব নিয়ে যেতে বলে।মেইড বেরিয়ে যেতেই সাদি দরজা টা একটু চাপিয়ে দেয়।
মিথি –সাদি ভাই,ফুপির খোঁজ পেলে??
সাদি–হুমম পেয়েছি।পরশু রাতেই মা বাড়িতে চলে আসবে।
মিথি খুশি হয়ে বলে –এ তো খুব ভালো কথা।
সাদি এবার মিথির দিকে এগোতে এগোতে বলে –হুমম,তা তো।তোকে এতো ভালো খবর দিলাম,এবার আমাকে কিছু দে।
মিথি পিছতে পিছতে বলে-আপনার তো সবই আছে,আমি আবার কি দিবো??
মিথি দেয়ালে গিয়ে বেঁধে গেলে সাদি ২ হাত দিয়ে মিথিকে আটকে ধরে।
সাদি–কে বললো তোকে সব আছে আমার??
মিথি–সবই তো আছে।।আর কি চাই বলুন।আমি চেষ্টা করবো দেওয়ার।
সাদি–ওকে।এখুনি আমার ঠোঁটে ২ বার চুমু দিবি।তাও ওইরকম ফালতু ভাবে না।আমি যেভাবে ২ বার দিয়েছি ঠিক সেভাবে।
মিথি চোখ বড়বড় করে বলে-কি!!!!
সাদি–তুই চাইলে আমি ডেমো দেখিয়ে দিতে পারি এখন আবার।
মিথি কাঁদোকাঁদো আওয়াজে বলে–আমি পারবো না সাদি ভাই,প্লিজ ছেড়ে দাও আমায়।
সাদি–চুমু না দিলে কোনো ছাড় নেই।ফাস্ট কর।
মিথি বহু চিন্তা করে সাদি মুখ দুহাতে আঁকড়ে ধরে ১ম চুমু দেয়।তারপর সরে আসে।২য় বার দিয়ে সরে আসতে গেলে সাদি মিথির ঠোঁট আঁকড়ে ধরে,কোমড় ধরে মিথিকে আরও কাছে নিয়ে আসে।কিছুক্ষণ পর মিথির ঠোঁট ছেড়ে মিথির গলাতে কামড় দেওয়া জায়গায় চুমু দেয়।মিথিও যেন কোনো এক ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছে। কিন্তুু সাদি আবার তার গলাতে কামড় দিতেই মিথি জলদি সরে আসে সাদির থেকে।দেখে সাদি হাসছে আর মিথি গলায় হাত দিয়ে বলে –কি বাজে তুমি সাদি ভাই??এভাবে কেউ কামড়ায়??
সাদি–আমি কামড়াই এভাবে।আর তোকে সব সহ্য করতে হবে।বলেই মিথিকে আবার কাছে টেনে নেয় আবারো আঁকড়ে ধরে মিথির ঠোঁট। এবার সাদি মিথির ঠোঁটে কামড় দিলেও চুপ করে তা সহ্য করে নিচ্ছে মিথি।
মিথি নাম না জানা অনুভূতি বলছে তাকে সাদির সব কথা মেনে নিতে।।
প্রায় ১০ মিনিট পর সাদি মিথিকে ছেড়ে দেয়।ছাড়া পেয়ে মিথি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। সাদি মিথিকে জড়িয়ে ধরে বলে–সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নেই মিথিপাখি।কিছুকিছু অনুভূতির নাম না জানাই ভালো।
সাদির কথা শেষ হতেই মিথিও সাদিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।এভাবে কতক্ষণ জড়িয়ে ধরে ছিল তা সাদির জানা নেই।তবে মিথি তার বুকের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে।সাদি কোনোমতে মিথিকে কোলে নিয়ে তার বেডে শুয়িয়ে দেয় তারপর ফোন আর সিগারেট হাতে ব্যালকোনিতে চলে যায়।মিথি আশেপাশে থাকাতে কয়েকদিন সিগারেটই খাওয়া হয়ে ওঠেনি তার।
তবে ব্যালকোনিতে এসে সিগারেট ধরিয়ে মুখে নিয়ে ২ বার টান দিতেই তা সাদির কাছে পানসে লাগে।সিগারেট ফেলে সাদি পা দিয়ে পিসে বলে–এই মেয়েটা একেবারে নেশা ধরিয়ে দিয়েছে আমায়।ওর নেশাতে এখন সবই পানসে লাগে আমার।।
হঠ্যাৎ সাদির ফোন বেজে ওঠে।রিসিভ করতেই ওপরপাশের ব্যক্তি বলে—-
চলবে